এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • মধুবাতা ঋতায়তে

    শারদা মণ্ডল
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • ছবি - Imagen 3


    মেঘের পালক চাঁদের নোলক - সোহরা

    সোহরা মানে আমাদের চিরচেনা চেরাপুঞ্জি - বাঙালি কবি যার থেকে গোবি সাহারার বুকে মেঘ ধার চেয়েছিলেন। তবে বিদেশে গোবি সাহারা অবধি না গিয়ে স্বদেশে থর মরুভূমির জন্যও চাওয়া যেত। ভারতবর্ষের ভূগোল পাঠে পুব পশ্চিমে এক অদ্ভুত ডাইকোটমি। অক্ষাংশ এক, কিন্তু দেশটার পুব দিকে মেঘালয় মালভূমিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি, কিন্তু পশ্চিম দিক বর্ষা না পেয়ে পেয়ে একেবারে রুখুশুখু মরুভূমি - অবাক কান্ড। আসল কারণটা জানলে অবিশ্যি অবাক হবার কিছু নেই। দেশের দক্ষিণ দিকটা যে উপদ্বীপ, নীল সাগরের জল দিয়ে তিন দিকে ঘেরা। সেই সাগর পেরিয়ে আসে জল ভরা দখিন - পশ্চিমা মৌসুমী বাতাস। তার একভাগ আরব সাগরের ওপর দিয়ে ঢুকে পড়ে রাজস্থানে গুজরাটে, একটু আড়া আড়ি কোন পাহাড় থাকলেই বৃষ্টি হত ঝমঝমিয়ে। কিন্তু হায় কপাল পোড়া। আরাবল্লী আছে ওখানে, তবে কিনা বাতাসের অভিমুখের সঙ্গে সে পাহাড় সমান্তরাল। তাই একশো শতাংশ জলীয় বাষ্পে টাপুটুপু বাতাস বয়ে গেলেও, পাহাড়ের সঙ্গে ঠোকাঠুকি হল কই? ধাক্কাধাক্কি হবে , ঢাল পেরোতে না পেরে পাহাড়ের গা বরাবর হাওয়াটা ওপরে উঠবে, ঠান্ডা হবে , বাষ্প ঠান্ডায় ঘন হয়ে বড় বড় জলের ফোঁটা বানাবে, তবে না বৃষ্টি হবে! ধাপ অনেকগুলো। এদিকে পুব দিকে মৌসুমী বাতাসের আর একটা শাখা বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে গিয়ে সোজা ধাক্কা দেয় তিনটে পাহাড়ে - গারো, খাসি, জয়ন্তীয়ায়। ব্যাস সেখানে কেবল আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই - থামার নামটুকু নেই। আর সেখানেই আছে সেই সোহরা, যদিও আমি নিজে চোখে দেখিনি, ক্লাসে স্যারেরা বলেছিলেন, বৃষ্টির ফোঁটার সংখ্যা ওখানে এতটাই বেশি, যে আলাদা করে ফোঁটা বোঝা যায়না - সব মিলে একটা পাতের মত হয়ে যায়। না জানি সে কেমন বৃষ্টি! একবার উড স্ট্রীটের সার্ভে অফ ইন্ডিয়া থেকে কলেজের জন্য টোপোশীট কিনে, আমরা আবার অভিযানে গিয়ে ডেকার্স লেনে চিত্তদার চিকেন স্টু খেলাম। সরকারী আপিসে নানান কর্ম পদ্ধতি, সই সাবুদের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে সময় অনেকটাই লাগে, সবার খুব খিদে পেয়ে গিয়েছিল। পার্ক স্ট্রীটে অত পয়সা দিয়ে খাবে কে? তাই ডেকার্স লেন। কিন্তু সেই খাওয়াই কাল হল। কলকাতার আকাশে কুচকুচে কালো কিউমুলো নিম্বাস মেঘ ঘনিয়ে এল। মেঘের রঙ সাদা থেকে হঠাৎ কালো হয় কেন, এ এক ধাঁধা বটে। আসলে যে মেঘের ভেতর দিয়ে সূর্যের আলো মাটিতে আমাদের চোখে পড়ে, সেই মেঘকে আমরা সাদা দেখি। সাদা মেঘ আসলে পাতলা মেঘ। কিন্তু বিশাল মেঘের স্তূপ যখন ওপরের আকাশে ট্রোপোপজ অবধি ছুঁয়ে যায়, তখন সেই পুরু মেঘ ভেদ করে রবির কিরণ আমাদের চোখে আর আসতে পারেনা। তাই আঁধার - অর্থাৎ কালো মেঘ মানে পুরু আর অন্ধকার মেঘ। যা হোক, সেদিন কার্জন পার্কের সেই ইঁদুরভরা রেলিংটুকু সম্বল করে উথাল পাথাল বৃষ্টিতে ভিজলাম আমি আর একজন জুনিয়র কলিগ ভাস্কর। ছাতা একটা ছিল আমার, কিন্তু দুজনে মিলে ঘূর্ণি হাওয়ার তান্ডবে ছাতা আর তার তলায় ম্যাপের রোলটা কীভাবে যে বাঁচালাম, মনে পড়লে আজও শিউরে উঠি। মনে হচ্ছিল আজ এখানেই আমার শেষ, ম্যাপটা আর কলেজ অবধি পৌঁছবেনা। আর না যদি পৌঁছোয়, এ জীবনের দামটা আর রইল কী? কত কষ্ট, আবেদন, নিবেদন, রাগ ঝাল করে টাকার অনুমোদন, স্টুডেন্টদের দেওয়া আশ্বাস - চিন্তা কোরোনা, ম্যাপ চলে আসবে - সবই তো শেষ হয়ে যাবে। এখন হলে আর এত চিন্তা করতাম না, কারণ আবহাওয়া দপ্তরের স্থানীয় বুলেটিন দেখেই দিন স্থির করতাম। কিন্তু তখন কাঁচা বয়েস, অভিজ্ঞতা কম, সদ্য তৈরী হওয়া ভূগোল বিভাগ, চাকরিতে পা দিয়েই বিভাগীয় প্রধান, অনেক স্বপ্ন সত্যি করার লড়াই, কলকাতার কলেজে পরীক্ষা দিতে গিয়ে হ্যাটা খাওয়া গ্রামের ছাত্রছাত্রীর চোখে অবুঝ বেদনা - সে এক অন্যরকম ঝড় বৃষ্টির দিন ছিল বটে। - আবেগ দু কূল ছাপিয়ে যখন তখন বন্যা হত। যাক গে যাক, নদী যদি বন্যায় পাড় ভাঙতেই না পারলো তবে গড়বে কেমন করে?

    আমরা ছিলাম সোহরায়, সেখানেই বরং মনোযোগ দিই। ঘটনা হচ্ছে সায়েন্স কলেজের ক্লাসে চেরাপুঞ্জির কথাটা বলেছিলেন আমাদের এস সি এম স্যার - সুভাষ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের জয়যাত্রার আর এক সেনাপতি, যাঁকে দেশ বিদেশের পন্ডিত মানুষেরা শ্রদ্ধা করতেন। স্যার ছিলেন অমায়িক, স্নেহশীল, ছাত্রছাত্রী অন্তঃপ্রাণ, আমাদের বন্ধু আবার অভিভাবক। স্যার একটা অদ্ভুত কথা বলেছিলেন যে ওখানে রামকৃষ্ণ মিশনের স্কুল দেখতে গিয়ে ওনারা দেখলেন তালা ঝুলছে, ইস্কুল বন্ধ, আর গেটে একটা নোটিস মারা আছে - অতিরিক্ত জল-সংকটের জন্য কিছুদিন ইস্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। এই কথা শুনে আমরা তো তাজ্জব। যেখানে সত্যিকারের ধারাপাত, মানে ফোঁটা না হয়ে পাতের মত ধারা - শীট রেন, সেখানে জল সংকট? স্যার বললেন যে, ওনারা চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন, ঘাসগুলো সবুজ নেই, ঝলসে হলদে হয়ে গেছে। আসলে গারো, খাসি, জয়ন্তীয়া - এই তিনভাই পাহাড় ধেয়ে আসা জলভরা বর্গী বাতাসের দিকে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়, তার দস্যিপনাকে বশ করে নিংড়ে জল ঝরায় - সবই সত্যি। তবে কিনা জায়গাটা তো আর সমতল নয়, ওই ধারাপাতের জল পাহাড়ী ঢাল বরাবর দৌড়ে যায় কর্তব্যের ডাকে - তাকে যে নিচের পলিমাটিতে ফসল ফলাতে হবে, বসতিগুলোকে সাহায্য করতে হবে। মোদ্দা কথা হল বৃষ্টি অনেক হলেও চেরাপুঞ্জি সেই জল নিজের কাছে ধরে রাখতে পারেনা, তাকে বিলিয়ে দিতেই হয়, তাই নিজে শুষ্ক থাকে। স্যার চলে গেছেন আজ অনেকদিন হয়ে গেল - মাথার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল চেরাপুঞ্জির কথাটা। এত বছর পর চেরাপুঞ্জিতে পা দিয়ে আমার চোখ গেল ঝলসানো হলদে ঘাসের দিকে। স্যার তবে এরকমই দেখেছিলেন? আমি বোধহয় আরও বেশি ঝলসানো দেখছি। স্যারের দেখা আর আমার দেখার মাঝে প্রায় চার দশকের ফাঁক। এর মধ্যে কত বন যে কাটা পড়ল, কত ঝোরা শুকিয়ে গেল, রাস্তা বানাতে ডিনামাইটে কত পাথুরে শিরা নেই হয়ে গেল, কে তার হিসেব রাখে? পৃথিবীর গায়ে জ্বর এ কবছরে বেড়েছে বই কমেনি, তার ওপর আবার শুনছি বঙ্গোপসাগরের পৃষ্ঠ উষ্ণতা বাড়ায় এদিকে বৃষ্টিও আগের থেকে কমতি। ভারতভূমির পাঁজরের ভেতরে তাপ উঠবে গনগনিয়ে, হু হু করে গরম বাতাস পাড়ি জমাবে মেঘের ওপারে, তবে না সেই ফাঁক পূরণে ছুটে আসবে সাগরের ঠান্ডা ভেজা বাতাস। গরম বাতাসের ইঞ্জিন যত জোরে ঐ হাওয়াটাকে ওপরে তুলতে পারবে ততটাই বেগে ছুটে আসবে দস্যি জলের হাওয়া মৌসুমী ফসলের খবর নিয়ে। এমনটাই তো হয়ে এসেছে এতকাল। এখন যদি সাগর আবার মস্তানি করে গরম হয়ে ওঠে, ডাঙা আর জলের তাপের ফারাক, বায়ুর চাপের ফারাক যদি কমে, ইঞ্জিনের দফারফা। তাপ বাড়তি, বৃষ্টি কমতি - তারপর নাও - পেটে কিল মেরে বসে থাকো সবাই, অনাবৃষ্টি, দুর্ভিক্ষ। গাড়ির জানলা দিয়ে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়েছিলাম হলদে ঘাসের দিকে। ঘাসও মাঝে মাঝে ফাঁকা, আবরণহীন ঐ পাথুরে গা যেন ব্যাঙ্গ করছে আমাদের। কিন্তু এই অনাবৃত জায়গাগুলো কেমন যেন অন্যরকম, মনে হচ্ছে কালো আর ছাইরঙা কোন গুঁড়োতে ঢাকা। কোথা থেকে আসছে এই গুঁড়োগুলো? দৃষ্টি একটু দূরে রাখতেই চোখে পড়ল পাহাড়ের গায়ে অদ্ভুত আকৃতির গুহা, নাকি বড়সড় গর্ত! একটা নয়, খানিক দূরে দূরে একই দৃশ্য। দলের সব কটা গাড়ি দাঁড় করাতে বললাম। হাতে ওই কালো ধুলো কুড়িয়ে নিয়েই বুঝলাম, যা ভেবেছি তাই - কয়লা। আমাদের ছেলেমেয়েরা কয়লা চেনেনা। মানে বইতে দেখেছে, চোখে দ্যাখেনি। ওদের খুব আগ্রহ দেখার। গুহার দিকে এগিয়ে গেলাম। ছাইরঙা ধুলোর মাঝে লরির চাকার দাগ স্পষ্ট। প্রাকৃতিক গুহা নয়, এ হল এই এলাকার কুখ্যাত র‍্যাট হোল মাইনিং - মানে বেআইনি সুড়ঙ্গ খুঁড়ে কয়লা কাটা হয়। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসব জায়গায় বেশিক্ষণ সময় কাটানো ঠিক নয়। চটপট কিছু স্যাম্পেল কুড়িয়ে নিয়ে আমাদের গাড়ি আবার দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলল মৌসমাই গুহার দিকে।

    তবে গুহায় পৌঁছনোর আগেই একটা রেলিং ঘেরা বিস্তীর্ণ ফাঁকা জায়গায় আমাদের গাড়িগুলোকে দাঁড় করানো হল। গুহায় যাবার পথে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো এখান থেকে দেখা যাবে। আমাদের ট্রাভেল এজেন্ট বিদ্যুৎ বাবু বললেন একটু এগোলেই একটা চমৎকার ঝর্না আছে - নহকালিকাই ফলস। গুগল বলছে এটা ভারতের সবচেয়ে উঁচু প্লাঞ্জ জলপ্রপাত, মানে ঝোরাটা ১১১৫ ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথা থেকে বাধাহীন উল্লম্ব ভাবে সটান আছড়ে পড়ছে নীচের উপত্যকায়, মেঘতো এখানে আছেই, তার ওপরে পাথরের ওপরে পড়ার ধাক্কায় ছিটকে ওঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় কুয়াশা হয়ে থাকে। তাই বেশির ভাগ সময়েই এই প্রপাত মেঘে আর কুয়াশায় পুরোপুরি ঢেকে যায়, দেখতে পাওয়া যায়না। কপাল ভালো থাকলে লটারি লেগেও যেতে পারে। এই প্রপাতের গল্পটা পড়েছিলাম আগেই। খাসি উপজাতির এক বধূর করুণ পরিণতির কাহিনী মিথ হয়ে মুখে মুখে চলে এসেছে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। বলেই ফেলি গল্পটা।

    এ গল্প লিকাই নামের এক তরুণী বিধবার যে তার শিশু কন্যাকে আঁকড়ে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু নারীর রূপ যৌবন বড় বালাই। অন্য এক খাসি যুবক লিকাইকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে আবার বিয়ে করল। নতুন সংসারেও লিকাইয়ের ধ্যান জ্ঞান সবই তার মেয়ে। দ্বিতীয় স্বামীর মনে মেঘ জমে। কাজ কর্মের ফাঁকে লিকাই কেবল তার মেয়েকে নিয়ে পড়ে থাকে। তবে কি প্রথম স্বামীর স্মৃতি নিয়েই লিকাই জীবন কাটাবে, দ্বিতীয় স্বামীর কি কোনও অধিকার নেই। মেঘ জমে জমে এক দুর্লঙ্ঘ্য পর্বত তৈরি হয় ঈর্ষার সবুজ রঙে রাঙা, লিকাইয়ের সম্পূর্ণ অজান্তে। একদিন সকালে লিকাই যখন কামিন খাটতে গেছে একটু দূরের মুলুকে, ঈর্ষায় উন্মাদ সেই খাসি যুবকটি শিশুকন্যাটিকে হত্যা করে, তার দেহটা টুকরো টুকরো করে রান্না করে ফেলে মশলা দিয়ে কষে। দিনভর হাড় ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্ত লিকাই ঢাকা দিয়ে যত্ন করে রাখা সেই খাবার খেয়ে ফেলে। তারপর পান খেতে গিয়ে দেখে ঝুড়িতে তার মেয়ের আঙুল পড়ে আছে। লিকাইয়ের বুঝতে বাকি থাকেনা কী ঘটেছে। শোকে উন্মাদ লিকাই ছুটে যায় বনের ভিতর। বনদেবীকে সাক্ষী রেখে বিচার চেয়ে সে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঐ প্রপাতের মাথা থেকে।

    আজ আমাদের কপাল ভালো নোহকা - লিকাই প্রপাত পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য প্রপাতের মত শীর্ষে একাধিক ধারা মিশে একটি হয়নি, কোন খাঁজ বা ধাপও নেই। মেঘ আর কুয়াশার আবছা ওড়না দিয়ে ঘেরা এ ধারা, চুপ করে দাঁড়ালে জলের একটা ঝিমধরা একটানা গুনগুন শব্দ কানে কেমন যেন বিষণ্ণ শোনায়। মানুষের জীবনেও আপিসে যার চেয়ার যত উঁচু, সে ততটাই নিঃসঙ্গ। নোহকা - লিকাই প্রপাতও যেন অনেকটা সেরকম। সেই উত্তুঙ্গ শৈলশিরা থেকে নিচের ঘন সবুজ উপত্যকায় ঝরে পড়তে পড়তে সে দুঃখিনী লিকাইয়ের গল্প শোনায়, মনটা খারাপ লাগে।

    নহকালিকাই ফলসের কাছেই আছে বাংলাদেশ ভিউ পয়েন্ট। স্থানীয় আদিবাসী মেয়েরা গাছ থেকে সংগ্রহ করে আনা দারচিনি বিক্রি করে ঝুড়ি ভরে। কিনে এনেছিলাম বেশ খানিকটা। তখন রসস্থ ছিল। বছর দুয়েক জারে ফেলে রাখার পর শুকিয়ে এল। অপূর্ব গন্ধ। বাজার থেকে কেনাগুলো অমন হয়না। যা হোক, নিঃসঙ্গ নহকালিকাই প্রপাত যেখান থেকে দেখলাম, তার অদূরেই অন্য দিকে চোখ রাখলে এক অদ্ভুত বৈপরীত্য। নিচে দেখা যায় মৌসমাই গ্রাম, তারই ধারে পূর্ব খাসি পাহাড়ের উল্লম্ব ঢাল - চুনাপাথর দিয়ে তৈরি। সেখানেই চূড়ার সাতটা খাঁজ ধরে ঝাঁপ দিয়েছে সাতটা প্রপাত - যেন আমাদের রূপকথার সাত ভাই চম্পা - এক মন, এক তান হয়ে। উচ্চতা হাজার ফুটের সামান্য বেশিই হবে। সাতটি সমান্তরাল ধারা থাকার জন্য এ প্রপাত চওড়াতেও অনেকটা - প্রায় আড়াইশো ফুটের কাছাকাছি হবে। তবে ইংরেজিতে নামের অর্থ সামান্য বদলে যায়। কারণ ইংরেজিতে বলা হয় সেভেন সিস্টার ফলস। অর্থাৎ এরা সাত ভাই চম্পা নয়, বরং ইংরেজিতে এরা ক্ষান্ত বুড়ির দিদিশাশুড়ির পাঁচ নয়, সাত বোন। হাল্কা কুয়াশার চাদর থাকলেও দিনের আলোয় সাতটি ধারাই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সূর্যের আলোয় দীপ্তিময়। এখান থেকে পর্যটকেরা অস্তরবির কিরণ গায় মেখে সন্ধ্যার মায়া চাদরে মাটির ঢেকে যাবার দৃশ্যটুকু উপভোগ করেন। এখন সকালবেলা, তাই এইসব অভিজ্ঞতা আর ঝুলিতে ভরা হলনা। তাড়াও কিছুটা আছে বটে, আমরা এগিয়ে চললাম মৌসমাই গুহা অভিযানে।



    চলবে...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ | ১৭৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:২৩737288
  • সাদা মেঘ কালো মেঘ পাহাড়ের আঘাতে বৃষ্টি! একই অক্ষরেখার একূল ওকূল!
     
    এতো সহজে বোঝালেন! ধন‍্য হই সবাই। 
     
    আমাদের স্কুলে যদি এমনি কেউ পড়াতেন!
  • Sara Man | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৬737308
  • থ্যাঙ্ক ইঊ, হীরেনদা।
  • kk | 103.218.***.*** | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:০০737343
  • মেঘবৃষ্টির কথা আমি ভূগোলে পড়তে খুব ভালোবাসতাম। এখানেও পড়ে খুব ভালো লাগলো। কিন্তু কী ভয়ানক লিকাইয়ের গল্পটা!! মৌসমাই গুহার বাকি গল্প শোনার জন্য বসে রইলাম।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন