এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • সেই দিন সেই মন - পর্ব ২৭

    অমলেন্দু বিশ্বাস
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৩ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত

     
    টেগোর সেন্টার ও আমার রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর 

    টেগোর সেন্টার

    শক্তি ভট্টাচার্যের আমন্ত্রণে টেগোর সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি বক্তৃতা দিয়েছিলাম। সেই প্রথম দিন থেকে আমি টেগোর সেন্টারের সদস্য। কর্মসূত্রে তখন আমাকে নিয়মিত ইংল্যান্ডের বাইরে থাকতে হত সেজন্য সক্রিয়ভাবে টেগোর সেন্টারে সময় দিতে পারতাম না, যদিও ইংল্যান্ডে থাকলে ওদের অনুষ্ঠানে ও বাৎসরিক সভায় যেতাম। কিছুকাল পরে কল্যাণ কুণ্ডুর আহ্বানে আমি চেয়ার পার্সন বা সভাপতির পদ গ্রহণ করি। 

    কল্যাণ সরকার, শক্তি ভট্টাচার্য ও কল্যাণ কুণ্ডুর উদ্যোগে টেগোর সেন্টারের জন্ম। কল্যাণ সরকার টেগোর সেন্টারের প্রথম চেয়ার-পার্সন বা সভাপতি। রবীন্দ্রনাথের নামে বহু মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে এগিয়ে এসেছিল। রবীন্দ্র অনুরাগী মানুষের অর্থসাহায্যে, বদান্যতায় ও পরিশ্রমে ক্রমে ক্রমে টেগোর সেন্টারের কলেবর ও খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকল। অচিরে সদস্য সংখ্যা প্রায় দু’শ-য় পৌঁছল। অল্প কিছুকাল পরে শক্তি ভট্টাচার্য টেগোর সেন্টার ত্যাগ করে চলে গেলেন। কল্যাণ কুণ্ডুই সেই থেকে টেগোর সেন্টারের প্রধান ও একমাত্র পরিচালক। কল্যাণ এই সংস্থাকে সযত্নে লালন পালন করে। কল্যাণের ইচ্ছা অনিচ্ছা, পরিকল্পনামত এই সেন্টার চলে। একটা কার্যকরী সমিতি (Executive Committee) আছে কিন্তু সেটা প্রায় নামে মাত্র। আমি তিরিশেরও অধিক বছর নিরবিচ্ছিন্নভাবে টেগোর সেন্টারের কার্যকরী সমিতির সভ্য ছিলাম কিন্তু কোনদিন কাউকে কল্যাণের প্রস্তাবের সমালোচনা করে প্রশ্ন করতে দেখিনি। কল্যাণের কথাই শেষ কথা। অবশ্য এ কথাও সত্য যে সে পরিকল্পনা রূপায়িত করার দায়িত্বও কল্যাণই নিত। 

    অ্যালেক্সান্ডার পার্ক লাইব্রেরীর উপর তলায় টেগোর সেন্টার স্থাপিত হল। অবশ্য এর জন্য হ্যারিঙ্গে কাউন্সিলকে সামান্য ভাড়া দিতে হত। এখানেই আমাদের প্রায় সাড়ে চার হাজার বই, রবীন্দ্র স্মারক ও ছবি সহ এক সংরক্ষণশালা ক্রমে ক্রমে গড়ে উঠেছিল। এই ঘরের মাঝখানেই কিছু জায়গা করে নিয়ে একটা ছোট মঞ্চ ও অডিও-ভিস্যুয়াল সহ সভাঘর তৈরি করা হয়েছিল যেখানে প্রায় তিরিশ চল্লিশ জনের বসার ব্যবস্থা ছিল। যতদূর মনে পড়ে প্রথম সেমিনার হয়েছিল নভেম্বর ১৯৮৫ সালে। প্রথম সেমিনারের বক্তা অমলেন্দু বিশ্বাস। লন্ডনের এক পত্রিকার খবর নীচে দিলাম। 

     



    “টেগোর সেন্টার ইউকে গত সপ্তাহে ইহার প্রথম সেমিনার করে। অ্যালেক্সান্ডার পার্ক লাইব্রেরী, লন্ডনের এই সেমিনারের বিষয়বস্তু ছিল ‘টেগোর - ভারতীয় নবজাগরণের সন্তান’। 
    মুখ্য বক্তা শ্রী অমলেন্দু বিশ্বাস বলেন যে ইউরোপে যে নবজাগরণ ইতালিতে শুরু হয়ে ফ্রান্স জার্মানি ও অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে তা ভারবর্ষের বাংলাতেও শুরু হয়। ভারতীয় নবজাগরণের এই মনীষীরা রবীন্দ্রনাথকেও প্রভাবিত করেছিল।”

    পরে এই ঘরে নিয়মিত রবিবার দুপুরে আলোচনা সভা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। এছাড়াও বাইরে বড় প্রেক্ষাগৃহ ভাড়া নিয়ে রবীন্দ্র সম্মেলন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটক করা হত মাঝে মাঝে। এই সূত্রে দেশ ও বিদেশের কত গুণী মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে ও মত বিনিময় হয়েছে। সে এক সুদীর্ঘ তালিকা। এঁদের মধ্যে আছেন- রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, কবি, সাহিত্যিক, অঙ্কনশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, বিজ্ঞানী, রাজনৈতিক নেতা, অধ্যাপক, রাষ্ট্রদূত, দার্শনিক, সাংবাদিক, নাট্যকার, চিত্র পরিচালক। এঁদের সবার সঙ্গে আন্তরিক সান্নিধ্যে এসে নিজেকে ধন্য মনে করেছি এবং এঁদের সঙ্গে আলোচনায় আপন মননে সমৃদ্ধ হয়েছি।

    দুএকটি স্মরণীয় অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। ২০০০ সালে আমরা লন্ডন ইউনিভার্সিটি সেনেট হলে ‘Rabindranath Tagore: A Creative Unity’ শিরোনামে দুদিন ব্যাপী এক সিম্পোসিয়ামের আয়োজন করেছিলাম। 

     



    পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এই আলোচনা সভায় অংশ গ্রহণের জন্য। এই সময় আমার বন্ধু কবি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন লন্ডনে। সুনীলের ফিরে যাওয়ার দিন ছিল সিম্পোসিয়াম শুরু হওয়ার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে। আমি সুনীলকে অনুরোধ করলাম সিম্পোসিয়ামে প্রধান অতিথি রূপে যোগদান করতে। সুনীল রাজী হলেন এবং আমাদের বাড়ীতে কিছুদিন থেকে গেলেন। এই সভায় আমন্ত্রিতদের মধ্যে অধ্যাপক শিবনারায়ণ রায়ও ছিলেন। বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শর্মিলা রায়ও ছিলেন। ইংল্যান্ডবাসী ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশের মানুষ বসে ছিলেন দর্শকের আসনে।

     



    ছ’বছর পরে এঁদের বক্তৃতাসংকলন প্রকাশিত হয়। সেই প্রকাশনে সুদীপ্ত কবিরাজের একটি দীর্ঘ ও উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ আছে। কিন্তু এখন মনে পড়ছে না সে অধিবেশনে সুদীপ্ত কেন যোগদান করেনি এবং নিজে সেই প্রবন্ধ পাঠ করেনি।

    এই সকলনের নাম: 
    Rabindranath Tagore – A Creative Unity
    Editors: Amalendu Biswas
    Charles Gordon-Graham 

    ২০০২ সালে টেগোর সেন্টার হ্যারো স্কুল হলে দুদিন ব্যাপী টেগোর ফেস্টিভ্যাল করে। তদানীন্তন ভারতীয় এম্বাসাডর মাননীয় রণেন সেন এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। কলকাতা থেকে রমা মণ্ডল, পারিস থেকে শর্মিলা রায় পোমো ও আমেরিকা থেকে বনানী ঘোষ প্রমুখ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সহ অনেক নামী শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। 

     


    প্রবাসী আনন্দবাজারে প্রকাশিত রিপোর্ট – ১৫ ডিসেম্বর ২০০২। 


    টেগোর সেন্টারে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হত। কিন্তু নিয়মিত একটা অনুষ্ঠান হত যা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সে অনুষ্ঠানটি Sunday Event বা রবিবাসরীয় আসর। প্রায় প্রতি সপ্তাহে এই আসর বসত -বক্তৃতা, গান বাজনা, সেমিনার, আলোচনা সভা, সম্বর্ধনা ইত্যাদি। একটা নমুনা দিলাম নীচে। সাংবাদিক সুমিত মিত্র দ্বারকানাথ ঠাকুরের জীবন নিয়ে আলোচনা করেন। সেই সভায় লর্ড কুমার ভট্টাচার্য সভাপতিত্ব করেছিলেন। 

     


    অমলেন্দু বিশ্বাস, সুমিত মিত্র, লর্ড কুমার ভট্টাচার্য 




    রক্তকরবী


    তখন বোধহয় আমার বয়স কুড়ি একুশ। মনে আছে এক সকালে কলকাতায় নিউ এম্পায়ার মঞ্চে বহুরূপীর রক্তকরবী দেখতে গিয়েছিলাম। সে এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। অসাধারণ প্রযোজনা! ভূমিকায় ছিলেন শম্ভু মিত্র (রাজা), তৃপ্তি মিত্র (নন্দিনী), সবিতাব্রত দত্ত (বিশু পাগল), কুমার রায় (সর্দার)। তৃপ্তি মিত্রের প্রাণবন্ত উচ্ছলতা যেন এক ঝলক বসন্তবাতাস এলো খোলা জানালা দিয়ে। পর্দার আড়াল থেকে শম্ভু মিত্রের গুরুগম্ভীর কণ্ঠ আর স্বতঃস্ফুর্ত সবিতাব্রতর গান ‘ওগো ঘুম ভাঙ্গানিয়া, তোমায় গান শোনাবো’, আমাকে অভিভূত করেছিল এবং আমাকে প্রচণ্ড ভাবে নাড়া দিয়েছিল। তারপর আমি সম্ভবতঃ আরো চার পাঁচ বার বহুরূপীর রক্তকরবী দেখেছিলাম। 

    বহুকাল পরে লন্ডনে টেগোর সেন্টারের সঙ্গে আমি যুক্ত হলাম। রক্তকরবী আমার মনে এক গভীর দাগ ফেলেছিল যা আমার হৃদয়ে ঘুমিয়ে ছিল। আমি ইংরাজিতে রক্তকরবী, Red Oleander, প্রযোজনা করার কথা চিন্তা করছিলাম। এমন সময় টেগোর সেন্টার স্কটিশ শাখা আমাকে আমন্ত্রণ জানায় ওদের বাৎসরিক অনুষ্ঠানে রক্তকরবী উপস্থাপনা করার। আমি তাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করলাম। আমি আনন্দ লালের রক্তকরবীর অনুবাদ Red Oleander বেছে নিলাম। বহু পরিশ্রমে প্রায় একক প্রচেষ্টায় আমি রক্তকরবীর শুধু চারটি চরিত্র, রাজা নন্দিনী বিশু ও কিশোরকে, নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রক্তকরবী প্রযোজনা করি। অভিনয়ে ছিল, সমুদ্র (রাজা), নিবেদিতা (নন্দিনী) ও শিশির (বিশু)। অভিনয় ছাড়া সব কিছুই আমি – পরিচালনা, স্টেজ, আলো ইত্যাদি। আবহাওয়া সংগীত নিয়েছিলাম, আলি আকবর ও নিখিল ব্যানার্জীর রেকর্ড থেকে। নিবেদিতা, সমুদ্র ও শিশির উচ্চমানের অভিনয় করেছিল। দর্শকদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক তপন রায়চৌধুরী। তিনি বাহবা দিয়েছিলেন। আমার ধারণা সেটাই ব্রিটেনে ইংরাজীতে রক্তকরবীর প্রথম প্রযোজনা। সেটা সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথের ১৫০তম জন্মবাষিকী। 

    আমার একটা আফসোস। লন্ডনে আমি Red Oleander মঞ্চস্থ করতে পারিনি। টেগোর সেন্টারের কর্তৃপক্ষ আমাকে সে সুযোগ দেয়নি। 

    আমার রবীন্দ্রনাথ

    রবীন্দ্রনাথ আমার চিরসখা, আমার পথের দিশারী, আমার সকল প্রেরণার উৎস। রবীন্দ্রনাথ আমার জীবনকে যেমন ভাবে প্রভাবিত করেছে তার একটা উদাহরণ পাওয়া যাবে আমার একটা কবিতা থেকে। নীচে দিলাম ---

    পঁচিশে বৈশাখ: আমার রবীন্দ্রনাথ।।

    পঁচিশে বৈশাখ আমার একান্তই ব্যক্তিগত।
    এদিন এক বিশেষ দিন, আমার একান্ত আপন উৎসব।
    পঁচিশে বৈশাখের এই মানুষ আমার প্রাণের মানুষ
    আমার পথ চলার চিরসঙ্গী।

    আঁকা বাঁকা বিচিত্র পথ দিয়ে জীবন চলেছে
    আপন গতিতে।
    সরু মেঠো পথ, কত ঘরের আনাচ কানাচ পেরিয়ে 
    নদীর পাড় বেয়ে, 
    ধ্যান আর কর্তব্যের টানাপোড়নের শরিক হয়ে 
    দীর্ঘ অভিসারে চলেছে জীবন।

    পিচঢালা প্রশস্ত রাস্তা 
    পিষ্ট করেছে সাহসী অথবা ভীরু পদতল --
    সরীসৃপের মতো অন্ধকার গলি 
    হারিয়েছে নিয়ন আলোর ঝলমলে হট্টগোলে।
    হে সখা, সঙ্গে আছো তুমি।

    উদাস প্রচ্ছন্ন প্রদোষে একাকী উদ্দেশ্যহীন পথচলা 
    প্রিয়জনের মৃত্যুশোক, না পাওয়ার হতাশা,
    সাগরের হাতছানিতে আকাঙ্ক্ষাকে ছুঁতে চাওয়া --
    হে সখা, সে বৃত্তের বলয়ে আছো তুমি।

    বিষাদে যখন মৃয়মান অথবা তীব্র তীক্ষ্ণ যন্ত্রণায় 
    পঙ্গু হয়েছে শরীর মন 
    তখনো মনে মনে তুমি।

    আমার পৃথিবী যখন ভরে উঠেছে কৃষ্ণচূড়ার রঙে, 
    স্বর্ণচাঁপার কোমলতায়, রজনীগন্ধার সুবাসে,
    তখনো আমার চেতনার প্রকাশে সেই তুমি।

    অনেক বৈশাখ পার হয়ে এসেছি, সহস্র সূর্য ডুবেছে। 
    জোৎস্নায় আকাশ ভরেছে কতবার।
    বৈষম্য, অনাচার, মহামারী, হিংস্র যুদ্ধের দূর হাওয়া 
    ঝড় তুলেছে আমারও বিশ্বে।
    দিশাহারা বাকহীন জগতে আমার 
    হে সখা, হে প্রিয়তম, তোমার আনাগোনা আমার চির ভরসা।

    আমার সকল অনুভূতির প্রকাশে তুমি 
    আমার দ্বন্দ্বে তুমি, আমার দ্বিধায় তুমি,
    সোহাগ বিরহ প্রেমে তুমি, ঘৃণার অভিশাপেও তুমি,
    তুমিই দিয়েছো আমায় পরবাসী মননে সাহসী স্পর্ধা।

    বৈশাখের এই বিশেষ দিনে
    আমায় সুরে ভরে দাও 
    আমাকে গানে ভরে দাও 
    প্রাণ ভরে উঠুক গানে গানে।।

    লন্ডন, ৮ মে ২০০৮

    আমি সারা জীবন রবীন্দ্রনাথকে বোঝার চেষ্টা করেছি। যত বুঝি তত বুঝি না। যত জানি তত জানি না। বুঝেছি রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ছোঁয়া যাবে না। তাঁর সৃষ্টির বিভিন্ন রূপ। তা দিয়ে তাঁকে বিশ্লেষণ করা যায় কিন্তু মানুষ রবীন্দ্রনাথকে চেনা যায় না বোধ হয়। আমার মনে হয় মানুষ হিসেবে তিনি আমার কাছে ধরা দিয়েছেন তাঁর দুটি সত্তার মাধ্যমে। একটি তাঁর চিঠি পত্রে, অন্যটা তাঁর গানে। 

    চিঠি পত্র তাঁর নিজস্ব, একান্তই নিজস্ব। তার পাঠক একজনই। (অন্ততঃ যখন তিনি লিখতেন তখন তিনি তাই জানতেন )। সেখানে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। নিজের মনের কথা লিখেছেন অকপটে প্রাপককে। তাঁর চিন্তার কথা, তাঁর ভাবনার কথা, তাঁর ইচ্ছা অনিচ্ছার কথা। তাঁর দ্বন্দ্ব, তাঁর ক্ষোভ, আফসোসের কথা। চিঠি তাই তাঁর মনের আয়না। সেই আয়নায় চোখ রেখে তাঁর মনের অন্দর মহলে প্রবেশ করা যায় বোধ হয়। রবীন্দ্রনাথের পত্রসমগ্র একটি রত্ন ভাণ্ডার। এখানেই পেয়েছি আমি রবীন্দ্র মনের কিছু হদিশ। একটা উদাহরণ দিই:

    আমি একটা ছোট প্রবন্ধ লিখেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম- অলস রবীন্দ্রনাথ?

    কোন মানুষের মস্তিষ্ক সম্পুর্ণ বিকৃত না হলে সে বলবে না রবীন্দ্রনাথ অলস ছিলেন। ঊনত্রিশটি বিশাল খণ্ডে তাঁর বাংলা রচনা, আরও তিন খণ্ডে তাঁর ইংরেজি রচনা; পাঁচ মহাদেশের ত্রিশটি দেশে তিনি ভ্রমণ করেছেন, কোন কোন দেশে একাধিকবার; বিশ্বের শতাধিক কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, দেশনেতা, শিল্পী ও অন্যান্য বিখ্যাত ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বিশ্বভারতীর মত এক অসাধারণ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেছেন। নিজের নাটক নিজে পরিচালনা করেছেন এবং তাতে নিজে অভিনয় করেছেন। ভুলে গেলে চলবে না যে পরিণত বয়সে তিনি সংখ্যাতীত ছবি এঁকেছেন। এবং এই কর্মব্যাস্ত জীবনে তিনি আরও সহস্র চিঠি লিখেছেন। 

    সুতরাং বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যক্তি ছাড়া রবীন্দ্রনাথকে কেউ ‘অলস’ বলবে না। কিন্তু স্বয়ং কবি নিজেই বলছেন তিনি ‘অলস’। অমিয় চক্রবর্তী ও রাণী চন্দকে লেখা তাঁর চিঠিতে দেখতে পাই, তিনি বলছেন-

    ছেলেবালা থেকেই তাঁর স্বভাব কাজকে এড়িয়ে যাওয়া। চিঠিপত্র লিখতে তাঁর আর ভালো লাগছে না। এক দারুণ আলস্য তাঁকে আচ্ছন্ন করেছে। আজকাল আলস্য তাঁকে পেয়ে বসেছে। সকাল থেকেই মনে হচ্ছে ‘আজ আমার রবিবার’ ‘আজ আমার রবিবার’। 

    অথচ আমরা যে অর্থে ‘হলিডে’ বা ছুটি বলি সে অর্থে রবীন্দ্রনাথ কোন দিন ছুটি নেননি। চিরদিন তিনি অবিরত কাজ করে গেছেন। অসুস্থ শরীরে আরোগ্যলাভের জন্য তিনি যখন পদ্মা নদীর উপর নিজস্ব বজরায় অবসর নিচ্ছিলেন তখনও তিনি গীতাঞ্জলির গীত রচনা বা অনুবাদে ব্যস্ত ছিলেন। বন্ধুর বাড়িতে ছুটি কাটাতে গিয়ে তিনি অসাধারণ প্রেমের উপন্যাস ‘শেষের কবিতা’ লিখেছিলেন। সারা জীবন তিনি নিরলস কাজ করে গেছেন। আমার মনে হয় তিনি ছুটি নিতে অপারগ ছিলেন। তাই যখন তিনি বলেন ‘ আজ আমার রবিবার ’ তথন তিনি তা অন্তর থেকে বলেন না। আসলে আমার মনে হয় তিনি তাঁর মনের গহন গভীরে যে সৃষ্টির সত্তা আছে তার সম্পূর্ণ অধিকারী ছিলেন না। সৃষ্টির যে প্রেরণা আসে তা অজান্তে; আহ্বানের অপেক্ষা রাখে না। তাঁর শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সেই সৃষ্টি প্রকাশের এক মাধ্যম মাত্র। সে তাঁর সৃষ্টির সত্তা। তাঁর জীবনদেবতা। 

    আমার প্রাণের ‘পরে চলে গেল কে, বসন্তের বাতাসটুকুর মতো।
    সে-যে ছুঁইয়ে গেল নুয়ে গেল রে, ফুল ফুটিয়ে গেল শত শত।।

    রবীন্দ্রনাথের অন্য আর যে সত্তা আমাকে স্পর্শ করেছে সেটা তাঁর গান। আমার সারা জীবন তাঁর গান আমাকে উদ্দীপিত করেছে, আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, তাঁর সকল কর্ম যদি লুপ্ত হয়ে যায় তাহলে তাঁর বিশ্বাস তাঁর গান চিরদিন বেঁচে থাকবে। যত দিন বাংলা ভাষা বেঁচে থাকবে, তত দিন বেঁচে থাকবে তাঁর গান। তবে তিনি তাঁর গানের শুদ্ধতা বজায় রাখতে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। শান্তিদেব ঘোষকে তিনি একদা বলেছিলেন শান্তিদেব যেন লক্ষ্য রাখেন তাঁর গানের বিকৃতি কখনো না হয়। 

    রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিঠি পত্রে ও গানে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন; নিজেকে ধরা দিয়েছেন। তাই রবীন্দ্রনাথের এই দুই সত্তাই আমার কাছে অনন্য।

     



    প্রায় পঁচিশ বছর লন্ডনের টেগোর সেন্টারের সঙ্গে নিবিড় ভাবে জড়িত ছিলাম, এর দশ বছর ছিলাম এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ার পার্সন বা সভাপতি। সেই সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বহু রবীন্দ্র অনুরাগী, রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতদের সংস্পর্শে আসার সুযোগ হয়েছিল। তাঁদের সংখ্যা অনেক, দীর্ঘ তালিকা। সকলের কথা, ইচ্ছা থাকলেও বলা হবে না; সে সব অভিজ্ঞতা অন্য কোনো আর এক গ্রন্থের জন্য জমা থাকল। আজ শুধু দুচার জনের কথা বলব। যাঁরা রবীন্দ্র উৎসাহী বা রবীন্দ্র চর্চা করতেন তাঁরা যখন লন্ডনে আসতেন তখন তাঁদের কর্মসূচীতে নিশ্চয় টেগোর সেন্টারের নাম থাকত। তাঁরা কোন না কোন সময়ে টেগোর সেন্টারে বক্তৃতা দিয়েছেন বা সেমিনার করেছেন। আমাদের অনেক উদ্দ্যশ্যের মধ্যে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর সব দেশে যাঁরা রবীন্দ্র চর্চা করছেন এবং যাঁরা রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং তাঁদের আমাদের আন্তর্জাতিক সিম্পোসিয়ামে অংশগ্রহণে আমন্ত্রণ করা বা তাঁদের প্রবন্ধ বা রচনা আমাদের এন্থোলজিতে প্রকাশ করা। সুখের কথা যে আমাদের আমন্ত্রণ কেউ কখনো প্রত্যাখান করেন নি। সেই সূত্রে বহু খ্যাতনামা রবীন্দ্র ব্যাক্তিত্বের সঙ্গে আমার পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।

    ২০১১ সালে টেগোর সেন্টার সার্ধশতজন্মবার্ষিকী পালনের এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ঠিক হল সেই উৎসব তিন ভাবে পালিত হবে।

    এক, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রবীন্দ্র গবেষক ও অনুরাগীদের রচনা সমৃদ্ধ এক রবীন্দ্র স্মারক (A Tagore Anthology) গ্রন্থ প্রকাশন। 

    দুই, লন্ডন ইউনিভারসিটি সেনেট হলে দুদিন ব্যাপী ভারত ও বিশ্বের রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞদের অধিবেশন। 
    তিন, লন্ডনের গর্ডন স্কয়ারে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি স্থাপন।

    ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় দিল্লীর এক অনুষ্ঠানে টেগোর সেন্টার প্রকাশিত Rabindranath Tagore: A Timeless Mind উদ্বোধন করেন। আমরা তিনজন, আমি, ক্রিস্টিন মার্স ও কল্যাণ কুণ্ডু বইটির সম্পাদনা করি। আমার উপর সম্পাদকীয় লেখার দায়িত্ব ছিল। সাহিত্য সংসদের কর্নধার দেবজ্যোতি দত্তর সহায়তায় আমি কয়েক সপ্তাহ কলকাতায় থেকে এর প্রকাশনা সম্পন্ন করা দেখি। এই গ্রন্থের লেখক লেখিকার মধ্যে বেশিরভাগেরই মাতৃভাষা বাংলা নয়। রবীন্দ্রনাথ এঁরা পড়েছেন প্রাথমিক বা তৃতীয় ভাষার অনুবাদের মাধ্যমে। এবং যে ইংরেজি ভাষায় তাঁরা লিখছেন সেটাও তাঁদের মাতৃভাষা নয়। সুতরাং সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে আমাদের বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছিল তাঁদের বক্তব্যকে যথাযথভাবে রূপ দিতে। অনেক বর্জন, সংশোধন ও পরিবর্তন করতে হয়েছিল। 

     



    Rabindranath Tagore: A Timeless Mind
    BY AMALENDU BISWAS, CHRISTINE MARSH AND KALYAN KUNDU

    উইলিয়াম রাদিচি 

    বাংলা যার মাতৃভাষা নয়, ভারতবর্ষ যার দেশ নয় এমন যে কতিপয় মানুষ রবীন্দ্রনাথের ভাষায় রবীন্দ্রনাথ পড়েছে ও রবীন্দ্রনাথকে ভালবেসেছে তাদের মধ্যে উইলিয়াম রাদিচি একটি অন্যতম নাম।
    উইলিয়ামের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় শরত একাডেমিতে। সেটা বোধ হয় আশী দশকের মাঝামাঝি বা নব্বই দশকের প্রথমে।
     



    লেখক একটা প্রবন্ধ পাঠ করছেন; উইলিয়াম রাদিচি মঞ্চে বসে, প্রধান অতিথি। 

    উইলিয়াম রাদিচি ছিলেন টেগোর সেন্টারের শুভাকাঙ্ক্ষী,
    পেট্রন ও সদস্য। আমাদের সেন্টারের বিশেষ সভ্য, কনফারেনস ও সিম্পোসিয়ামে নিয়মিত সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতেন। সেই সব সভায় বা একান্তে বহুদিন বহু ঘন্টা আমার কেটেছে উইলিয়ামের সঙ্গে গল্প করে, রবীন্দ্র আলোচনা করে। উইলিয়াম নিজে কবি ও লেখক – দুই ভাষাতেই – ইংরেজী ও বাংলায়। অক্সফোর্ড থেকে ইংরেজী সাহিত্য শিক্ষা শেষ করে সোয়াসে (SOAS – School of Oriental and African Studies, Univarsity of London) ডঃ তারাপদ মুখার্জির কাছে বাংলা শিক্ষা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ অনুবাদ করেছিলেন মূল বাংলা থেকেই। একবার বেশ কিছুদিন শান্তিনিকেতনে কাটিয়েছিলেন গীতাঞ্জলি অনুবাদের কাজে। তখন এক দুর্ঘটনায় তাঁর হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল। ই-মেলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল সে সময়। একটা ইমেল তুলে দিলাম।

     



    রিচার্ড ব্লারন্টন

    ২০০৬ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, কিউরেটর, রিচার্ড ব্লারন্টন-র(Curator, Richard Blurnton) তত্ত্বাবধানে বাংলার পটশিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে একটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করে। এই প্রকল্পের জন্য এরা লন্ডনের উভয় বাংলার কয়েকজন বাঙ্গালী নিয়ে একটি উপদেষ্টা সমিতি গঠন করেছিল। আমি সেই সমিতির সভ্য ছিলাম। রিচার্ড প্রত্নতত্ববিদ ও দক্ষিণ এশিয়া বিশারদ। বাংলার পট শিল্প নিয়ে গবেষণা করেছেন ও গ্রন্থপ্রকাশ করেছেন। বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিশেষ পাণ্ডিত্য আছে। নিয়মিত কলকাতায় যাতায়াত করতেন ও কলকাতার সুধী সমাজের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। রিচার্ডের উদ্যোগে ব্রিট্রিশ মিউজিয়াম পাঁচমাস ব্যাপী দুর্গোৎসব, পটশিল্প প্রর্দশনী, সঙ্গীত ও বক্তৃতার অনুষ্ঠান এবং রবীন্দ্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল।

     


    Myths of Bengal 
     



    ব্রিটিশ মিউজিয়াম আয়োজিত ‘Voices of Bengal’ প্রদর্শিনীতে আমি আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমি আর অনু প্রতিদিন প্রতিটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। দিনগুলি খুব আনন্দে কেটেছিল। আমরা খুব উপভোগ করেছিলাম। 
     


     



    কলকাতার কুমারটুলি থেকে শিল্পী এনে কাঠামো থেকে শুরু করে চক্ষু অঙ্কন পর্যন্ত তিলতিল করে বৃটিশ মিউজিয়ামের প্রাঙ্গণে গড়ে উঠেছিল দুর্গা প্রতিমা। ঘটা করে কলকাতার শিল্পীদের নিয়ে মহালয়ার সঙ্গীতসহ চণ্ডীপাঠের অনুষ্ঠান হয়েছিল। চারদিন ধরে শাস্ত্রমতে পূজা হয়েছিল। যথারীতি বিসর্জনও হয়েছিল সেই প্রতিমার পাটনি ব্রিজের ধারে টেমসের জলে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের ইতিহাসে সেই প্রথম দুর্গার আগমন ও বিসর্জন। 

    আমার আমন্ত্রণে রিচার্ড এসেছিলেন টেগোর সেন্টারে রবীন্দ্র স্মারক দেখতে যদি আমাদের কোন দ্রষ্টব্য বস্তু ওঁদের রবীন্দ্র প্রদর্শনীতে রাখা যায়। রিচার্ড আমাদের সেন্টার থেকে তিনটি দর্শনীয় বস্তু নির্বাচন করেছিলেন। এক, রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন নাটকের ইংরেজি অনুবাদের প্রথম সংস্করণ (first edition of ‘Sacrifice’ in English); দুই, রবীন্দ্রনাথ ও গান্ধী সহ রবীদ্রনাথের কয়েকটি ফোটোগ্রাফের একটি অতি মূল্যবান এ্যালবাম। এই ফোটোগুলি রবীন্দ্রনাথের ফোটোগ্রাফার শম্ভু সাহার তোলা। সেই শম্ভু সাহা যিনি রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতনের উপর স্থির তথ্যচিত্রের জন্য বিখ্যাত। তৃতীয় বস্তুটি মনে করতে পারছি না।

    এই প্রদর্শনীতে ছিল ব্রিটিশ মিউজিয়ামের নিজস্ব সদ্য আবিষ্কৃত রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি ছবি। প্রদর্শনীর আগে রিচার্ড এই ছবিগুলি কয়েকজন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও চিত্রশিল্পীকে দেখিয়ে তাদের মতামত জানতে চাইছিলেন। আমাকেও আমন্ত্রণ করলেন ছবিগুলি দেখতে। কল্যাণ তখন কলকাতায়। আমি একা একা এই ছবিগুলো দেখতে চাই নি, তাই বললাম আমার সহকর্মী কল্যাণ কুণ্ডু ফিরে এলে দুজনে একসঙ্গে দেখতে যাব। কল্যাণ ফিরে এলে আমি আর কল্যাণ গেলাম ছবিগুলি দেখতে। 

    রিচার্ড নিজে আমাদের মিউজিয়ামের সংগ্রহশালায় নিয়ে গেলেন। মিউজিয়ামের অমূল্য সম্পদ সব কি দারুণভাবে সুরক্ষিত করে রাখা থাকে তা দেখে আশ্চর্য না হয়ে পারিনি। রিচার্ডের হাতে একগুচ্ছ চাবি। একটার পর একটা দরজা খুলে, মনে নেই কতগুলো, মিউজিয়ামের অন্দরমহলে একটা ছোট ঘরে গিয়ে আমরা বসলাম। এই ঘরে কতকগুলো উঁচু ঢালু লম্বা টেবিল পাতা। প্রত্যেক টেবিলের উপর এক বিশেষ ধরণের আলো, ছবি বা চিত্রশিল্প দেখার জন্য; বেশী উজ্বল নয়, অনেকটা স্তিমিত দিনের আলোর মত। 

    আমরা বসার পর রিচার্ডের সহকারী ছবিগুলো নিয়ে এলো। প্রত্যেকটি পরতের পর পরত বিশেষ কাগজে ঢাকা, সবশেষে কাপড় দিয়ে মোড়া। আমাদের হাতে পরতে হল কাপড়ের দস্তানা। রিচার্ড ছবিগুলো সযত্নে মোড়ক থেকে খুলে টেবিলের উপর রাখলেন। আমি অবাক চোখে দেখতে লাগলাম। মিউজিয়াম এগুলো কোন ব্যক্তির সংগ্রহ থেকে কিনেছে, অক্সন হাউস বা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে নয়। সুতরাং এগুলো রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি কি না তা শপথ করে বলা যাবে না। আমি রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ নই, চিত্রশিল্পীও নই। রিচার্ড আমার মতামত জানতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি রিচার্ডকে কোন মতামত দিই নি। একটা চিত্র ছিল রবীন্দ্রনাথের কল্পিত জন্তুর। গাড় নীল রঙের, মনে হল যেন সদ্য অংকিত। আমি স্পর্শ করলাম। এক অদ্ভুত অবিশ্বাস্য অনুভূতি আমাকে রোমাঞ্চিত করল। ঠিক আরও একবার আমার এমন হয়েছিল যখন আমি শান্তিনিকেতনের সংগ্রহশালায় রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা কবিতার নোটবই হাতে নিয়েছিলাম। আমি এক বিরল প্রতিভা স্পর্শ করছি। সে এক অভূতপুর্ব অভিজ্ঞতা; যেন আমার সারা শরীর দিয়ে বিদ্যুৎ বয়ে গেল। চিত্রগুলোর সব ক’টাতেই রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষর ছিল দুএকটি ছাড়া। 

    রিচার্ডের সঙ্গে আমার যোগাযোগ অক্ষুণ্ণ ছিল। একটা ইমেল দিলাম নীচে। 

     



    কয়েক বছর পর গর্ডন স্কয়ারে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন অনুষ্ঠানে রিচার্ড ব্লারন্টনকে আমন্ত্রণ করেছিলাম। রিচার্ড এসেছিলেন এবং অনুষ্ঠান শেষে টেগোর সেন্টারের নামে একটা তিন অঙ্কের চেক আমার হাতে দিয়ে বললেন, “এটা রাখো”। সেই আমাদের শেষ সাক্ষাৎ।

    কেতকী কুশারি ডাইসন 

    অনেক পূর্বপরিচিত রবীন্দ্রপ্রেমীদের সঙ্গে নতুনভাবে পরিচয় গড়ে উঠল আবার। এমনিই একজন কেতকী কুশারি ডাইসন। এই গ্রন্থ সম্পাদনা সূত্রে রবীন্দ্রসাহিত্য আলোচনায় কেতকীর সঙ্গে মুখোমুখি ও দূরভাষে বহুঘন্টা কেটেছিল আমার। রবীন্দ্র কবিতা ও গানের ছন্দ ও শব্দের ব্যবহারের উপর কেতকীর গবেষণা ও গভীর জ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করেছিল। এই গন্থ প্রকাশিত হওয়ার কিছু দিন পরে এক সুইস প্রকাশক কোম্পানির কাছ থেকে আমি আরও একটি রবীন্দ্র অ্যান্থলজি সম্পাদনা করার আমন্ত্রণ পাই। আমি তা প্রত্যাখ্যান করে কেতকীর নাম প্রস্তাব করি। কেতকীও সে দায়িত্ব নিতে রাজী হন নি। 

    বিভিন্ন দেশের রবীন্দ্র শিক্ষাবিদদের সমাবেশে লন্ডন উনিভারসিটিতে দুদিন ব্যাপী অধিবেশন অত্যন্ত সফল হয়েছিল। এই অধিবেশনে ডঃ কেতকী কুশারি ডাইসন সভাপতিত্ব করেন।

    কেতকীর সঙ্গে প্রায়ই আমার টেলিফোনে কথা হত। কখনো কখনো দীর্ঘ সময় ধরে, ঘণ্টা পার হয়ে যেত। কয়েক বছর পর ইন্দ্রনাথ চৌধুরী লন্ডনে এসেছিলেন ভারতীয় বিদ্যাভবনের আমন্ত্রণে মহালয়ায় কিছু বলবার জন্য। অবশ্যই ইন্দ্রনাথ আমাকে ডেকে নিয়েছিলেন। ইন্দ্রনাথ বলেছিলেন অনেক দিন কেতকীর সঙ্গে দেখা হয় নি। যদি আমি কোথাও সকলে মিলে একটা নৈশভোজনের ব্যবস্থা করতে পারি তবে খুব ভাল হয়। আমি রবার্টের (কেতকীর স্বামী) সঙ্গে যোগাযোগ করে পশ্চিম লন্ডনের এক ভারতীয় রেস্টুরেন্টে মিলিত হওয়ার ব্যবস্থা করি -- ইন্দ্রনাথ, কেতকী, রবার্ট ও আমি। সুস্বাদু খাদ্যের সঙ্গে গল্প আলোচনায় আড্ডাটা অতি মনোরম হয়ে উঠেছিল। কেতকীর সঙ্গে সেই আমার শেষ দেখা। 

    রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি 

    পরিকল্পনা মত বিশেষ নিরাপত্তার মধ্যে প্রিন্স চার্লস গর্ডন স্কয়ারে রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মূর্তি উদ্বোধন করেন। সে দিন আকাশ ছিল মেঘলা; মাঝে মাঝে খুব হালকা বৃষ্টির ফোটা। প্রিন্স চার্লসের অফিস থেকে জানানো হয়েছিল নিরাপত্তার কারণে বেশি মানুষকে আমন্ত্রণ করা যাবে না। সুতরাং, আমাদের ইচ্ছা সত্বেও, এ অনুষ্ঠান সর্বসাধারণের জন্য অবারিত ছিল না। শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক নিমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সেই অনুষ্ঠানের সাক্ষী। সে দিন গর্ডন স্কয়ার নিরাপত্তা রক্ষী ও পুলিশ দিয়ে ঘেরা ছিল। আমার মনে আছে রবীন্দ্রনাথের মূর্তি উন্মোচন করে প্রিন্স চার্লস একটি আন্তরিক ও হৃদয়স্পর্শী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। 

     


    অমলেন্দু বিশ্বাস ও প্রিন্স চার্লস 
     


    গর্ডন স্কয়ারে টেগোরে সেন্টার স্থাপিত রবীন্দ্রনাথের আবক্ষ মুর্তি 


    মহা সমারোহে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবার্ষিকী উদযাপিত হল। ২০১২/১৩ সালে দেখা গেল টেগোর সেন্টারের ভাণ্ডার প্রায় কপর্দকশূন্য; অনেক দিনের ভাড়া বাকী আছে। সে ভাড়া দেওয়ার মত অর্থ নেই ভাণ্ডারে আর। এই সময় কল্যাণ কুণ্ডু টেগোর সেন্টারের চেয়ার-পার্সন এবং মুখ্যতঃ কল্যাণ কুণ্ডুর নেতৃত্বেই এই মহাযজ্ঞ সমাপন হয়েছিল এবং সকলেই এতে যোগদান করেছিল। আমিও যথারীতি আগের মতই সব কর্মকান্ডে প্রাণপণ সাহায্য করেছিলাম। 

    রবীন্দ্রনাথের মূর্তি স্থাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে স্ত্রী পুত্র আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব পরিচিত অপরিচিত সকলের কাছে বহুদিন ধরে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম। অনেক সহৃদয় মানুষ আমার ঝুলি ভরে দিয়েছিল। সেই টেগোর সেন্টারের ভাণ্ডার আজ শূন্য- তা আবিষ্কার করে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। টেগোর সেন্টারের সভাপতি হিসেবে কল্যাণ কুণ্ডু সে কথা নিশ্চয়ই জানতেন কিন্তু কার্য্যকরী সমিতিকে কখনো সেকথা জানাননি। আমি যখন জানলাম তখন আমি কল্যাণকে এই নিয়ে কার্য্যকরী সমিতির সঙ্গে আলোচনা করতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু প্রায় দুবছর ধরে অনেক চেষ্টা করেও কল্যাণকে রাজী করাতে পারিনি। শেষ পর্য্যন্ত প্রায় নিরুপায় হয়ে আমি সব সভ্যকে ইমেল করে আমার বক্তব্য জানাই। এতে কল্যাণ ও তার পৃষ্ঠপোষকরা আমার উপর যার-পর-নাই ক্ষুব্ধ হয়। তাদের কাছে আমি প্রায় ব্রাত্য হয়ে পড়ি। কল্যাণ আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ ছিন্ন করে দিল; এমন কি কথাবার্তাও বন্ধ করে দিল। টেগোর সেন্টারের এই অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণ জানার জন্য সভ্যদের কোন উৎসাহ দেখা গেল না। অনেক পুরানো সভ্য ও কার্যকরী সমিতির সকলেই বলতে শুরু করল “যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। এবার ও সব ভুলে যাও।” আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করে অন্য কোন মানুষ এগিয়ে এলো না। 

    টেগোর সেন্টারের এই নিদারুণ দুর্দিনে কল্যাণ কুণ্ডু ও তার অনুগামীরা টেগোর সেন্টার বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে এলো। আমি আবার টেগোর সেন্টার বাঁচিয়ে রাখার জন্য অর্থসংগ্রহে মেতে উঠলাম। আমার সঙ্গে আরও কয়েকজন যোগ দিল। ভাণ্ডারে কিছু অর্থ এলো। হ্যারিঙ্গে কাউন্সিলের সঙ্গে নতুন চুক্তি করলাম। টেগোর সেন্টার পুনর্জীবিত হল। এতকাল যারা টেগোর সেন্টার তুলে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল তারাই এখন কার্য্যকরী সমিতি অধিকার করল। যারা টেগোর সেন্টার তুলে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল তারাই ভেক বদল করে সেন্টার চালাতে লাগল। হাস্যকর পরিস্থিতি! তাই না?

    আমি কার্য্যকরী সমিতির সভ্যপদ ত্যাগ করলাম। দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছরের সম্পর্ক অপ্রীতিকরভাবে শেষ হয়ে গেল। যদিও আমি এখনো সাধারণ সভ্য আছি। 

    দু'বছর পর কল্যাণ কুণ্ডুর উদ্যোগে ও তৎপরতায় টেগোর সেন্টারের লাইব্রেরী ও সব সম্পদ ও-সি-এইচ-এস ( Oxford Centre for Hindu Studies )-এ দান করে দেওয়া হল। 

    বিদ্যাসাগর

    বাবা মা, পরিবেশ, মনুষ্য সঙ্গ, ও জীবনের নানা অভিজ্ঞতা আমার চরিত্রকে গড়ে তুলেছে। কিন্তু যে দুজন মনিষী আমার চরিত্রকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করেছেন তার একজন রবীন্দ্রনাথ আর অন্য জন বিদ্যাসাগর। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টি দিয়ে; বিদ্যাসাগার তাঁর জীবনকর্ম দিয়ে। তবে ব্যাপ্তি ও গভীরতায় আমার চরিত্রে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব অনেক বেশী। 

    বিদ্যাসাগরের অতুলনীয় কর্মজীবন ও সংগ্রাম আমাকে ধ্রুবতারার মত পথ দেখিয়েছে। বিদ্যাসাগর এক অসামান্য পুরুষ – অক্লান্ত যোদ্ধা, নির্ভিক সৈনিক, পাশ্চাত্য জ্ঞানে ঋদ্ধ। তাঁর প্রগতিশীল সমাজচিন্তা, সমাজসংস্কার, নীতিবোধ ও নীতিরক্ষা, শিক্ষাচিন্তা, চরিত্রের দৃঢ়তা আমাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছে। আমার দুর্বল মুহূর্তে আমাকে সেই প্রতিকুল অবস্থায় যুদ্ধ করার মত দুর্লভ শক্তি যুগিয়েছে।

    ক্রমশঃ 

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | ৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • তপতী বিশ্বাস, সিংগাপুর। | 27.125.***.*** | ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৩২735264
  • চমৎকার লাগল এই পর্ব টা।.. কত কি যে জানলাম।.. ছবি গুলো ও খুব সুন্দর হয়েছে।.. রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশে লেখা টা খুবই ভাল লাগল।.. 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন