

১ বইপাড়া ভাসছে
একদিন হঠাৎ দেখি,
আমার শিরায় বইছে গঙ্গা।
পাতার অক্ষরগুলো মাছ হয়ে সাঁতার কাটছে।
বই পাড়া আর “কলেজ স্ট্রিটে নেই,
সেটা এখন নদী—
যেখানে প্রতিটি স্টল আজ নৌকা
প্রতিটি দোকানদার আজ মাঝি মল্লার।
একজন মাঝি আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি কি জানো, অক্ষর ডোবে না?
তারা আকাশে উড়ে বেড়ায়
পাখিদের মতো।”
আমি তাকিয়ে দেখলাম—
ভিজে যাওয়া অভিধান থেকে
শব্দ উড়ছে,
ভেসে যাচ্ছে অদৃশ্য কোনো দ্বীপে,
যেখানে আবার জন্ম নেবে কবিতা।
২ জলের শহরে বই
কলকাতা ডুবে গেছে জলে—
হাঁটু সমান, কোমর সমান, বুক সমান জল;
তবু এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে বইপাড়া,
যেন বৃষ্টিভেজা কিশোরী,
চোখে তার শেষ আশার দীপ্তি।
ভিজে যাওয়া মলাট থেকে উঠে এল
শব্দের অদ্ভুত গন্ধ—
যেন ভিজে চুলে লেগে থাকা প্রেম
আমি শুনলাম,
একটা পুরোনো উপন্যাস ফিসফিস করে বলছে
“আমাকে পড়ো, আমি এখনো বেঁচে আছি।”
বইপাড়া তখন মানুষ নয়,
একটা প্রেমিকা,
যার ঠোঁটে কাদা,
কিন্তু বুকের ভেতর এখনো লুকিয়ে আছে
আগুনের অক্ষর।
৩ অক্ষরের বন্যা
বইপাড়া ডুবে গেছে বলে
কেউ কেউ দুঃখ পেয়েছেন,
কেউ কেউ বলছেন আমাদের সর্বনাশ,হয়ে গেল। কিন্তু
আমি বলছি , একটা মজার ব্যাপার!
যা আপনারা দেখতে পাননি আমি দেখতে পেয়েছি
অভিধানের ভেতর থেকে
“ব” আর “ই” অক্ষর ভেসে যাচ্ছে।
একটু পরে হয়তো দেখা যাবে—
“বিড়াল” সাঁতার কাটছে,
“বিজ্ঞান” ঝাঁপ দিচ্ছে ডুবসাঁতারে,
“বিপ্লব” ছিটকে পড়ছে মানুষের হাতে।
ভাবুন তো!
জল যদি সব বই ভাসিয়ে নিয়ে যায়—
তাহলে কি সাহিত্য ভিজে যাবে?
না, সাহিত্য তো শুকনো মেঘের মতো,
শব্দের হাওয়ায় উড়ে যায়।
তাই বলছি, বন্ধুরা—
বইপাড়া মরবে কেন?
এখন থেকে শুরু হলো—
জলে ভাসা অক্ষরের উৎসব!

