এরকম একটা অনুভূতি থেকেই হয়ত সেদিন রাজ্যের সব সামগ্রী সদাই করে বাসায় ঢুকেছিলাম মৌসুমের প্রথম ইফতারটার জন্য। কিন্তু ডাইনিং রুম ও রান্নাঘরের সংযোগস্থলে যে এক চিলতে জায়গা আছে, সেখান থেকে একজন বৃদ্ধার মুখ ভেসে উঠতেই পিত্তি জ্বলে উঠল আমার! এমন নয় যে, ঐ বৃদ্ধার গায়ে ঘা-পাঁচড়া-পুঁজ লাগানো! বা, তার চেহারায় ভয়ঙ্কর কিছু বিদ্যমান! বা, তার সাথে আছে পূর্ব কোন অমধুর স্মৃতি! একান্তই নিরীহ গোছের একটি চেহারা, আর কাঁচুমাচু বসার ভঙ্গি! ... ...
বলতে কী, একটা নিশ্চিত ধ্বংসের প্রতীক্ষা করছিলাম যেন আমি! কিন্তু সুখনকে কোন ঋণের দরখাস্ত জমা দিতে দেখা গেল না আমার টেবিলে। উল্টো অফিসে তার কাজের মনযোগ ও গতি দুই-ই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে লাগল। আর এরই মাঝে একদিন বদলী আদেশ চলে এল আমার। ... ...
সেলিমকে কড়া ধমক লাগিয়ে ভেবেছিলাম, এতেই কাজ হবে। তাছাড়া, চাইলেই কি আর ম্যানেজ করতে পারবে! বিশেষত কোম্পানির হিসেবনিকেশ এসব ক্ষেত্রে যখন খুবই কড়া! কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই বিশাল পলিপ্যাকে করে একটি সদ্যোজাত হাতি হাজির হল আমার টেবিলে। সারাদিন ছুঁয়ে না দেখলেও দিনশেষে বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম জিনিসটা, সেলিমের কাঁদো কাঁদো মুখের দিকে আর তাকানো যাচ্ছিল না! ... ...
এবার আর ভুল হয়নি, গেল শীতেই তো ডেকে এনেছিলেন, আর হ্যান্ডশেক করতে করতে বলেছিলেন, “কঠিন রাজনৈতিক কলাম বাদ দিয়ে ভূতের গল্পও তো লিখতে পার!“ ... ...
তাহলে ছেলের অনুরোধটা রাখছেন না কেন – এ কথা আর আমি জিজ্ঞাসা করতে গেলাম না তাকে। কারণ এখন মনে হচ্ছে, মরণের আগ পর্যন্ত এই ব্যবসা ছাড়বেন না তিনি। জমিগুলো যেমন সবসময় এক রকম না – কখনো তৃণের দখলে চলে, কখনো পুড়ে যায়, কখনো ঝুরঝুর করে পড়তে থাকে, আবার, কখনো দুফাঁক হয়ে যায় বুক চিরে, উঁচু পাহাড় হয়… তেমনি জমির ক্রেতা-বিক্রেতার জীবনেও আসে পরিবর্তন, তারাও জলে বা বাতাসে এক সময় প্রস্তর হয়। জমির সাথে যেন তার ক্রেতা-বিক্রেতার একটা সমান্তরল জীবন, যা অন্তহীন ও অনিঃশেষিত। আর জগতদা মনে করেন, পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র জমির ব্যবসাটা বোঝেন এবং তিনি না থাকলে ব্যবসাটা যখন আর থাকবেই না, ... ...
এলাকাটা ইতিমধ্যেই ভুতুড়ে আকার ধারণ করেছে! এই দাবদাহেই বিদ্যুতটা দরকার সব থেকে বেশী, অথচ প্রতি বছর এই সময়েই লোডশেডিংয়ের ভূতটা চেপে বসে! কর্তৃপক্ষ অবশ্য হরহামেশাই ‘সীমিত সম্পদ’ কার্ডটা ছেড়ে দেয় বাজারে! কিন্তু মাটির নীচে ও উপরে এত সম্পদ আছে আর কয়টা দেশে? ... ...
আর এই দৃষ্টিকোন থেকেই সম্ভবত ইসলাম-পূর্ববর্তী আরব উপদ্বীপের ভাষাগত পরিস্থিতির উপর পশ্চিমা আরব-তাত্ত্বিকদের মতামতে বড় ধরণের গরমিল দেখা যায়। অধিকাংশ পশ্চিমা আরব-তাত্ত্বিকদের মতে, জাহিলিয়ার অন্ধকার যুগে গোত্রগুলোর দৈনন্দিন কথ্যভাষার সাথে কোরান ও কাব্যসাহিত্যের ভাষার একটি প্রণিধানযোগ্য পার্থক্য ছিল। পরবর্তী ধরণটিকে সাধারণত আখ্যায়িত করা হত ইসলাম-পরবর্তী উপভাষা বা ‘পোয়েটিকো-কোরানিক কোইন’ হিসেবে। আর আরব সম্প্রদায়গুলোর মুখের কথ্যভাষাকে ফেলা হত ‘ইসলাম পূর্ববর্তী’ উপভাষার শ্রেণীতে। আর উপরোক্ত তাত্ত্বিকদের ভাষ্য অনুসারে, এই কণ্ঠ নিঃসৃত উপভাষাগুলো ইতিমধ্যেই হারাতে শুরু করেছিল ধ্রুপদী আরবীর অল্পস্বল্প বৈশিষ্ট্য, বিশেষ করে, কারক সমাপ্তির মত বিষয়গুলোতে। ... ...
লুবনার মুখখানা তখন পুরো সেলাই হয়ে আছে সংকোচে! আর এই সংকোচটা ছোট থেকেই ছিল লুবনার। যখন প্রাইমারিতে পড়ত, তখন থেকেই ছেলেদের সহ্য করতে পারত না সে! আর এজন্যই কিনা স্কুলের প্রেমের অফারের মত ফিরিয়ে দিয়েছে অসংখ্য বিয়ের প্রস্তাব! ... ...
রেখা ঢাকায় থাকে, স্বামী একটি বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির প্রডাকশান ম্যানেজার। উন্নত বাসা, সিকিউরিটির চোখ সর্বত্র, বাসায় সাহায্যকারী লোকেরও নেই অভাব। তারপরো এক ফোঁটা চোখ বোঁজা আর দম নেয়ার অবকাশ নেই রেখার! ওর কেবলি মনে হয় এই বুঝি ছেলেটাকে কেউ ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গেল! অথবা, এই বুঝি সে কোন অ্যাকসিডেন্ট করল! ... ...
হ্যাঁ, আমার এরকম একটা ঘটনা আছে, এবং এখন পর্যন্ত আমি ছাড়া পৃথিবীর আর কারোরই তা জানা নেই। তবে এই অবিশ্বাসী ও অর্বাচীন ডাক্তারটিকে সে কথা জানানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। শৈশবের দিনগুলিতে বার্ষিক পরীক্ষার পরপরই নানুবাড়ি যাওয়া ছিল আমাদের জন্য রুটিন ওয়ার্কের মত। নানুবাড়ির পেছনে একটা জংগলের মত ছিল - সেখানে আমরা কাজিনরা সবাই দল বেঁধে আউটিং করতাম, বিভিন্ন রকম এডভেঞ্চারে মেতে উঠতাম। এমনি এক আউটিংয়ে দলের লোকজন একটু বেশীই ছিল, আর জংগলটাও খুব ভরতি হয়ে ছিল গাছে-লতায়-পাতায় যাদের বাঁধন টুটে সামনে এগোনো কিছুটা চ্যালেঞ্জিং ছিল! কিছুটা এগুনোর পর হঠাৎ একটা অদ্ভুত দেখতে অচেনা বুনো ফুল আমার চোখে আটকে দেয়; এতটাই বিভোর হয়ে যাই যে খেয়ালই করিনি কখন দলছুট হয়ে গিয়েছি। ... ...