এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • ছেঁড়া দ্বীপ

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০৯ মে ২০২৫ | ১০১ বার পঠিত
  • ১.

    ধাতব আঙুলগুলো হঠাৎ থেমে গেল, এতক্ষণ উন্মত্তের মত খুঁড়ে চলেছিল তাদের ধারালো ফলাগুলো। দু’শো ফিট লম্বা চোঙ্গার মত নল থেকে বেরিয়ে তারা পৌঁছে গিয়েছিল ডুবো গিরিখাতটির বুকে, এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে সকাল থেকেই লেগে রয়েছে কাজে। কিন্তু এইমাত্র যার স্পর্শ এসে লেগেছে তাদের কিঞ্চিত জং ধরা টিস্যুতে, তার কোন সংকেত বা ছবি ধরা ছিল না তথ্যভান্ডারে!  উপরের কন্ট্রোল রুমে বসে লক্ষ্য রাখতে রাখতে ঘুমে চোখ জড়িয়ে এসেছিল মিশন কোঅর্ডিনেটরের। যখন নীচের এই বিচিত্র আর অভূতপূর্ব ঘটনাটার খবর এসে পৌঁছুলো তার কাছে, আঙুলগুলো জমে গেছে ততক্ষণে, একটুও নড়বার শক্তি নেই তাদের!
     
     
    ২.

    খট! খট! খট!

    মাঝরাতে বিছানা থেকে প্রায় অবশ শরীরটা নামিয়ে যখন দরজার দিকে পা বাড়াল দীপ, শব্দের স্বর বদলে গেছে ততক্ষণে, ধামধাম বাড়ি পড়তে শুরু করেছে সেগুনের কোমল বুকে! এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে খেয়াল হয়নি বিষয়টা,কিন্তু এখন ভয় করতে শুরু করে তার! কে হতে পারে! এই ট্যুরিস্ট লজটা একদমই আদিম আকৃতিতে বাঁশ ও কাঠের চেহারায় গড়ে তোলা হয়েছে, উপরে অ্যাসবেসটসের ছাউনি। যন্ত্রের ছোঁয়া এড়াতে গিয়ে এমনকি কলিং বেলেরও জায়গা হয়নি। আবার, লুকিং গ্লাস দিয়ে চেক করবে, সেই সুযোগও নেই। দু’বার ‘কে’ ‘কে’ আওয়াজ তুলেছিল অবশ্য, কিন্তু দরজার চিৎকারই বেড়েছে শুধু, কোন সাড়া আসেনি ওপার থেকে।

    ঘাড় ঘুরিয়ে দীপ একবার বিছানাটার দিকে তাকালো। বেঘোরে ঘুমুচ্ছে বাপ্পি, সঙ্গে চলছে নাকের একটানা হোস হোস! একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে দরজাকে ধাওয়া করা স্বরে কান পাতে। আচ্ছা, লজের কোন কর্মচারী নয়তো? কোন দুর্ঘটনা? আগুন-টাগুন? দীপের হৃদপিন্ডটা সজোরে লাফাতে থাকে! সেই অবস্থাতেই সে ‘যা আছে কপালে’ মন্ত্র পাঠ করে ছিটকানিটা একটানে নামিয়ে দরজাটা সামান্য ফাঁক করে। আর আবছামত যে অবয়বটা তখন ফুটে উঠে, তাকে দেখে ইতিমধ্যে বিস্ফোরন্মুখ ভয়ের জায়গাটা দখল করে বিরক্তি!

    মাথা নীচু করে মাটির দিকে চেয়ে আছে এখন মূর্তিটা! দরজাকে না সরিয়ে দীপ যখন শরীরটাকেই কাছে নিয়ে আসে, আর কড়ায় হাত রেখে প্রশ্নমাখা চোখে তাকায়, শুভর খটখটে কণ্ঠটা থেকে যেন অনেকটা দুমড়ে-মুচড়ে বেরোয়, ‘এই … … ভাবলাম …একটু আড্ডা-টাড্ডা দিয়ে আসি তোদের সাথে!’

    বিরক্তিটা চলে গিয়ে দীপের মুখে এরপর ভর করে বিষ্ময়  এবং তাও বিস্ফোরন্মুখ! একে তো এই মাঝরাতে আড্ডার আবদার, তার উপর সদ্য বিয়ে করা বউকে একলা ঘরে রেখে আসা! আচ্ছা, উজবুকটা কি মানুষ, না অন্য কিছু! অথচ ওর বিয়ের খবরটা যখন প্রথম শুনেছিল, কী খুশিই না হয়েছিল তখন! ওর গার্জেনদের কোটিবার সেলাম করেছিল! ভেবেছিল এই বেলা ঘিলু-টিলু কিছু জন্মাবে গর্দভটার মাথায়!  

    এমনকি বিয়ের সপ্তাহখানেক পর যখন আবদার করল, হানিমুনে একা যেতে পারবে না, তখনো খুব অদ্ভূতুড়ে প্রস্তাবটায় রাজী হয়ে গিয়েছিল দীপরা; ভেবেছিল, একটু সময় তো লাগবেই! সে, শুভ ও বাপ্পি, তারা তিনজন একত্রে কাটিয়েছে পুরো ভার্সিটির সময়টা- একসাথে পড়েছে, খেয়েছে, খেলেছে, ঘুমিয়েছে। পাস করে বেরুনোর পরও তারা এক সাথে ছুটি ম্যানেজ করে নিয়ে দু’মাস পর পরই ট্যুরে গিয়েছে। আজ এই সময় বন্ধুকে একা ছেড়ে দিতে তাদেরও যেন মন কেমন কেমন লাগছিল!

    প্লানমতই একই লজের দু’কোণে দু’টো ঘর বুকিং করেছিল তারা। আর যাতে হানিমুনের প্রাইভেসি নষ্ট না হয়, সেজন্য কিছু নিয়ম-কানুন বেঁধে দেয়া হয়েছিল শুভ’র জন্য। শুধু লাঞ্চের সময় দেখা হবে তাদের। এছাড়া কোন সাইট সিয়িংয়ে শুরুটা এক সাথে হতে পারে, কিন্তু মাঝপথে দীপ ও বাপ্পি উধাও হলে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না, তাও স্থির হয়েছিল। 
    গাইডবুক ও ইউটিউব দেখে জায়গাটা বাছাই করেছিল দীপই। ঝাউবনে ছাওয়া একটি ক্ষুদে প্রবালদ্বীপ। যদিও শীতকাল ও উৎসবের দিনগুলিতে ট্যুরিস্টে বোঝাই থাকে, এই অফসিজনে দ্বীপটা প্রায় জনশূন্য। আর তা-ই আকৃষ্ট করেছিল দীপকে বাহারি ডিসকাউন্টের অফারগুলিকে ছাপিয়ে। হানিমুনের জন্য একদম স্বর্গ!

    জাহাজ থেকে এক সাথেই নেমেছিল তারা, কিন্তু এরপরই শুরু হয়ে গিয়েছিল দীপের অনুশাসন। দুপুরে খাওয়ার সময়টা বাদে পুরো দিনটাই সে আর বাপ্পি অদৃশ্য হয়ে রইল শুভদের কাছ থেকে। বিকেলে বৌদ্ধ মন্দির দর্শন শেষে মন্দিরের পাশেই গড়ে উঠা চালা ঘরে সমুদ্র দেখতে দেখতে ডিনারের আয়োজন ছিল। শুভর সাথে সাথে তানিয়াও অনুরোধ জানিয়েছিল থাকতে। কিন্তু শোনেনি দীপ, এ যেন তার এক কঠিন মিশন বন্ধুকে নতুন জীবনবৃত্তে দাঁড় করিয়ে দেয়ার! 

    কিন্তু সেই বন্ধু এই মাঝরাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে! এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না ব্যাপারটা সে! আচ্ছা, তানিয়ার সাথে আবার ঝগড়া-টগড়া বাঁধিয়ে আসেনি তো? কী বলতে কী বলে ফেলেছে, কে জানে! এতদিনের দোস্তি, ওরাই অনেক সময় বুঝতে পারে না শুভর কথাবার্তা, আর তানিয়া তো সবে এসেছে! উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দীপের হার্টবিট বেড়ে যায়, চোখটা ঘোলাটে আকার ধারণ করে!

    যেন দীপের চোখের প্রশ্ন পড়তে পারে শুভ, তাই নীরবতা ভেঙে বলে উঠে ‘আরে! তানিয়া ঠিক আছে! ঘুমুচ্ছে! সারাদিন যা ধকল গেল! এদিকে আবার আমার যা সিগারেটের তেষ্টা …!’

    দরজা মেলে দেয় দীপ। কিন্তু বন্ধুকে ঘরের আলোতে ভাল করে দেখার পর তার অসস্তি বাড়ে বই কমে না! কেমন একটা শূন্য দৃষ্টি শুভর চোখে-মুখে! যেন যুদ্ধ ময়দান থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে এসেছে! এখনো ভুলতে পারছে না সেই বিভীষিকা! এরপর বালিশের পাশে রাখা সিগারেটের প্যাকেটটা যখন হাত বাড়িয়ে দিতে যায় বন্ধুকে, শিউরে উঠে সে - ঠান্ডায় জমে গেছে শুভর পুরো শরীরটা! নিশ্চিত কিছু ঘটেছে! তাহলে কি যা ভেবেছিল, তা-ই? হানিমুনেই হাঙ্গামা? নতুন জীবনটা মনে হয় কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছে না শুভ! একটা বুক-তড়পানো লম্বা শ্বাস বেরিয়ে আসে দীপের মধ্য থেকে! পুওর শুভ! বন্ধুদের মধ্যে শুভই সব থেকে প্রিয় তার, আর ওকে এই সমস্যা থেকে বের করবেই সে!  কিন্তু এ নিয়ে এখন ঘাটাঘাটি না করে আগে স্বাভাবিক করা প্রয়োজন ওকে। সে চিন্তা থেকেই কিনা, দীপ অনেকটা লাথিগুতো মেরেই বাপ্পিকে জাগায়। তারপর তিন বন্ধুতে মিলে শুরু করে জম্পেস আড্ডা। সিগারেট ও তাসের সাথে সাথে কখন রাত পার হয়ে যায়, তাদের কারোই খেয়াল থাকে না!
     
     
    ৩.

    সকালে শুভকে ঘরে পাঠিয়ে  ফ্রেস হয়ে নিতে বাথরুমে ঢুকেছিল দীপ। কিন্তু বেরুতেই দেখতে পায় শুভ বসে রয়েছে বাপ্পির মুখোমুখি, দুজনেরই চোখে-মুখে উদ্বেগের কালো ছায়া! তানিয়াকে না কি পাওয়া যাচ্ছে না! ঘর, হোটেল বা সংলগ্ন সৈকত - কোথাও নেই।  

    দীপের মাথা ও শরীর থেকে তখনো জল ঝরছিল, তোয়ালেটা হাতে ধরা ছিল। সে অবস্থাতেই হ্যাঙ্গারে ঝুলোনা শার্টটা গা গলিয়ে নেয় দীপ, ‘দ্বীপটা ছোট, পুরোটা চক্কর দিতে সময় লাগবে না, চল দেরী না করে বেরিয়ে পড়ি।‘

    তবে পুরো দ্বীপ চক্কর দিতে হয়নি। পাঁচশো গজ পূবে ঝাউবনকে পিছনে রেখে একটি নতুন দ্বীপ জেগে উঠেছিল মূল দ্বীপটার পাশেই। দ্বীপ না বলে এক খন্ড ভূমি বলাই শ্রেয়, মূল দ্বীপ থেকে একটি সরু সুতোর মত নালা পেরিয়ে যেতে হয় বলে লোকে নাম দিয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ। সেখানেই রক্তবর্ণ শিফনের কানাটা সৈকতের বালুতে চিক্‌চিক্‌ করছিল।
    দীপের চোখেই পড়েছিল প্রথম; সঙ্গে সঙ্গে সে শুভকে ইশারা করেছিল এগিয়ে যেতে। কিন্তু শুভর পা দুটো যেন নীচ থেকে কেউ টেনে ধরেছে, মুখ রক্তশূন্য! এরপর কথা না বাড়িয়ে হন হন করে হাঁটতে শুরু করে দীপ, আর সমুদ্রটা যতই এগিয়ে আসতে থাকে, ততই হাত-পা ছড়িয়ে থাকা একটি নারীমূর্তি গড়ে উঠতে থাকে বেলাভূমিতে। ওদিকে সমুদ্রপাড়ের বাতাসের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস বইতে থাকে দীপের বুকজুড়ে!

    নরম বালুর বুকে আঁকিবুকিতে নিমগ্ন ছিল মেয়েটি।  দীপ কয়েক হাত পেছনে থাকতে হঠাৎ সে মুখ ঘোরায়, আর এমন স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাসতে থাকে যেন সে দীপের জন্যই অপেক্ষা করছিল! এদিকে দীপও এই প্রথম খুব কাছ থেকে নিবিড় করে দেখতে পায় তানিয়াকে - বিশাল সমুদ্রের বুকে উঠা সূর্যের সব রং যেন মাখানো তার মুখমন্ডলে! তার কাটাকাটা চোখের দ্যুতিতে বালিয়াড়ি জুড়ে চলছে অদ্ভুত এক আলোড়ন!   

    কিন্তু সেই চোখেরই নীচে আবার কালি! নির্ঘুমের চিত্র স্পষ্ট! তাহলে শুভ মিথ্যে বলেছিল? হঠাৎ দীপের কপালের রগগুলো ফুলে উঠে রাগে, আর মেয়েটির জন্য মায়া হয়! না জানি, কী দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করে আছে মেয়েটির জন্য সামনের দিনগুলিতে!

    ‘’জায়গাটা খুব সুন্দর, তাই না?’’ অনেক কথা সামনের ঢেউয়ের মত করে গড়াগড়ি খাচ্ছিল তার বেলাভূমিতে, কিন্তু এর বেশী বলা সম্ভব হল না দীপের।

    তানিয়া চোখের পেখম মেলে তাকায়; তার ওড়নার লেজগুলো উড়তে থাকে, কাছেই উড়ে যাওয়া সিগালটিকে ধাওয়া করতে করতে। আর সেই দৃষ্টি দেখে কেমন বিহবল হয়ে পড়ে দীপ!  এক অদ্ভুত শিহরণ কাঁপিয়ে দিতে থাকে তাকে, চেনা দুনিয়া নিমিষেই উধাও হয়ে যায় সামনে থেকে! প্রায় ধ্যানগ্রস্তের মত তাকিয়ে থাকে সে তানিয়ার দিকে!  

    এক সময় বাপ্পিকে সামনে দেখতে পেয়ে অবশ্য ধ্যান ভাঙে দীপের, আর এরপর সে বাপ্পিকে নিয়ে আবার সারাদিনের জন্য উধাও হয়ে যায়, এমনকি রাতেও আর দরজা খোলে না আগেরদিনের মত, খটখট শব্দগুলো আবার আবির্ভূত হলে প্রবলশক্তিতে অগ্রাহ্য করে।
     
     
    ৪.

    পরবর্তী দিন। আকাশ ধুয়ে মুছে স্বচ্ছ আয়নার মত ঝলমল করছিল! আর ব্রেকফাস্ট সেরে লজের সামনের লনে রোদ পোহাচ্ছিল দীপ। সেইসময়ই মেয়েটিকে সে আবার দেখতে পায়! শুকতারার মত দাঁড়িয়ে ছিল সে, কেমন একটা অপসৃয়মান ভঙ্গি! 

    “শুভ কোথায়? তুমি একা কেন?” একটা সুঘ্রাণ যা মাতাল করে দিচ্ছিল, তাকে ভোলার মরিয়া চেষ্টাতেই কিনা আপাত অভদ্র প্রশ্নটা করে ফেলে দীপ।

    ‘ও তো ঘুমুচ্ছে।‘ বলেই হাঁটতে শুরু করে তানিয়া, আর একটা তেরছা চোখের হাসি ছড়িয়ে দিতে দিতে ফটকের বাইরে মুহূর্তের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায়!   
      
    তানিয়া তার সামনে এসে দাঁড়াল কেন, আর চলেই বা গেল কেন – এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে লন থেকেই কোনার ঘরটার দিকে চোখের প্রখর আলো নিক্ষেপ করে দীপ। শুভ ও তানিয়ার জন্য বরাদ্দ ঘরটির দিএক এক নাগাড়ে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে সে! তারপর কী মনে হতেই তড়াক করে উঠে পড়ে সে ডিভান থেকে আর ফটকের দিকে দ্রুত পা চালাতে শুরু করে।  
    সেই ঝাওবনের সাথের বেলাভূমিতেই তানিয়াকে পাওয়া যায়, তবে আগের দিনের মত আঁকিবুকিতে না। আজ সে নামতে শুরু করেছিল জলে। তানিয়ার পায়ের ছাপগুলো মুছে দিয়ে ঢেউ তার বুক বেয়ে গলা পর্যন্ত পৌঁছুতে শুরু করেছিল!

    দীপকে দেখতে পেয়ে তানিয়ার মুখে আবার ফুটে উঠে সেই চেনা অথচ রহস্যময় হাসি! আর কী হয় দীপের - তার সারা শরীরকে বিদ্যুতস্ফুলিঙ্গের মত ঝাঁকিয়ে দিতে থাকে! অচিরে চেনা পৃথিবীর সব কিছুকে ভুলে সেও নেমে পড়ে জলে! এরপর ঢেউয়ের রোলার কস্টারে গড়াগড়ি খেতে থাকে তারা দুজন অনর্গল। এই একটি ঢেউকে ধরে ডুব দেয় তানিয়া, তো উল্টোদিকে আরেকটিকে ধরে ভেসে উঠে দীপ।  

    এরই মাঝে একটা স্রোত দীপকে কিছুটা দূরে নিয়ে যায়, কিন্তু স্রোতকে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিয়ন্ত্রণে এনে  ফিরে আসে সে! তার বীরত্বব্যাঞ্জক কাজটি তানিয়ার নিশিত মিস্‌ হয়নি, ভাবতেই দীপের মনে অন্যরকম এক পুলক জাগে! কিন্তু চোখটা জলের উপর তুলতেই বুকটা ধড়াস করে উঠে তার! তানিয়া নেই কোথাও! দীপের ভেসে থাকার সময়টুকু এত অল্পসময়ের যে, তানিয়ার লজে ফিরে যাওয়ার কথা না! তাহলে? তবে কি স্রোতের টানে তলিয়ে ….! আর ভাবতেও পারে না দীপ! ভেজা শর্টসেই সে সৈকতে বসে ঘামতে থাকে দরদর করে!  

    কতক্ষণ বসে ছিল এভাবে মনে নেই, হঠাৎ একটা একটা ভুস্‌ভুস্‌ শব্দ প্রথমে মৃদুমন্দ ও পরে জোরাল আঘাত করে দীপের কানে। উৎসে চোখ মেলতেই বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় তার! প্রবল ঘূর্নি তুলে সমুদ্রের মধ্য থেকে উঠে আসছে একটি নারীদেহ!  

    তানিয়ার সবকিছু আগের মতই ছিল।  কিন্তু তার চোখে-মুখে এমন অদ্ভুত এক ছায়া ভর করেছিল যে, তাকে একদম ভিন্ন এক মানুষ, না, ভুল হল, এক প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী মনে হচ্ছিল!
    সূর্যের আলো যেন হঠাৎ করেই পড়ে গিয়েছিল। এমনকি পাখিরাও বুঝি লুকিয়ে পড়েছিল কোন এক চাপা আতঙ্কে। সাগরের উন্মুক্ত জল ও আকাশের সামনে থেকেও দীপের যেন কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছিল, ভয়ংকর আর মৃত্যুশীতল এক নিস্তব্ধতা  যেন পিষে ধরছিল তাকে চতুর্দিকে থেকে! কাছের ঝাউবন ও দূরের পাহাড়ের সারি ছাড়া আর কোন দর্শক ছিল না ঘটনাটার।

     
    ৫.

    এতটা সময় জলের তলায় কী করছিল তানিয়া? আর কী করেই বা থাকল, ওর তো আর মাছের মত ফুলকা নেই! আর  ওর এই পিলে চমকানো রূপ! আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে কখন বেলাভূমিতেই গড়িয়ে পড়েছিল মনে নেই দীপের। যখন চোখ খুলল, দেখতে পেল - বাপ্পির উদ্বিগ্ন মুখটা ঝুঁকে রয়েছে সোজা ওরই দিকে!

    ‘এই একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলাম রে! আচ্ছা, শুভ কোথায় আছে, বলতে পারিস?’ উঠে বসতে বসতে বলল দীপ,  মুখে জোর করে ফোটানো হাসি, নিঃশ্বাসে বর্শাবিদ্ধ নাবিকের চাপা গোঙ্গানি।
    ‘ওরাই তো আমায় পাঠাল। আজ না আদিবাসী পল্লিতে এক সাথে লাঞ্চ করার কথা?’ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল বাপ্পি, বন্ধুকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল!
    ‘ওরা মানে?’ যেন রোমকূপ পর্যন্ত শিউরে উঠে দীপের!

    ‘শুভ ও তানিয়া ছাড়া আবার কারা হবে? বুঝতে পারছি, তোর মাথাটা গেছে! চল, লাঞ্চ সেরে একটু ঘুমাবি!’ বাপ্পির কণ্ঠে ক্ষিদের তাড়া!

    কিন্তু দীপ সেই লাঞ্চে যোগ না দিয়ে লজে ফিরে গেল, আর সোজা ল্যাপটপটা নিয়ে বসল। ‘জলে মানুষের অবস্থানের রেকর্ড’ লিখে গুগল করতেই চলে এল এক গাদা নথি, মূল বিষয়ের সাথে লেজ হয়ে এল এমন আরো কিছু, শিহরিত করে ফেলল দীপকে। পাতার পর পাতা উল্টাতে লাগল সে, আর চোখ মুখ বড় হয়ে উঠতে লাগল তার।

    একটা সময় দরজায় আবার সেই ঠকঠক শব্দটা হতে ল্যাপটপ থেকে মাথা ঘোরাল দীপ, আর বাইরের আকাশটা চোখে পড়ল -ইতিমধ্যেই সেখানে জোট পাকাতে শুরু করেছে অন্ধকার। এখনো ঘন পর্দার মত ঢেকে দেয়নি সবকিছু; তবে দূরে দূরে থাকা আঁধার কণাগুলো একে অন্যকে কাছে টানছে, আর মাঝের ম্লান যেটুকু আলো তাকেও মুছে দিতে শুরু করেছে!  

    ভেতরে এসে আজও শুভ একটা সিগারেট চাইল। এ এক বিচিত্র স্বভাব তার। বউয়ের সামনে তো খাবেই না, এমনকি নিজে কিনে খেতেও দ্বিধা তার। সিগারেট ধরানোর সময় অবশ্য আজ সমানে কাঁপছিল শুভর আঙুলগুলো।

    “একটা কথা জিজ্ঞেস করব, শুভ। একদম ঠিক ঠিক উত্তর দিবি কিন্তু। আচ্ছা, গত রাতে কী হয়েছিল তোদের মধ্যে?” এক নাগাড়ে চেয়ে থাকার পর কিছুটা থমথমে গলায় জিজ্ঞাসা করে দীপ।
    “কী হবে আবার! কিছুই না! তোদের সাথে আড্ডা …’’ 

    “ফালতু কথা ছাড়! আচ্ছা, সত্যি করে বল তো, তানিয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু আছে কিনা!”

    শুভর পুরো শরীরটা যেন বুলেটবিদ্ধ ডলফিনের মত ঝাঁকুনি খেল ক্ষণিকের তরে!   দীপের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সে মাথাটা নীচু করে ফেলল, তারপর সেই অবস্থাতেই মৃগী রোগীর মত স্বর বেরুলো তার মধ্য থেকে, “তার মানে… তোর চোখেও পড়েছে …জানিস, ওকে আমি এখনো স্পর্শ করতে পারিনি! ও শুধু একা থাকতে চায়, কাউকে কাছে দেখলেই ওর গায়ে মনে হয় জ্বালা ধরে! ভাবলাম, বৈবাহিক সম্পর্কটা নিয়ে ওর ভীতি আছে, বেড়াতে এলে কেটে যাবে। দ্বীপটিতে ঢোকার পর ওর চোখেমুখে অন্য রকম খুশীর ভাব দেখে মনে হয়েছিল, বরফ গলতে শুরু করেছে। কিন্তু বিশ্বাস কর, সে খুশী ওর নিজের কাছে! ও যেন আমায় আরও ঘেন্না করতে শুরু করেছে!  তাছাড়া, আর …আর একটা… ব্যাপার …’ শেষ করতে পারে না শুভ, এদিক ওদিক তাকায় ভয়ে ভয়ে,  মনে হয়, কেউ শুনে ফেললে নেমে আসতে পারে রোজ কেয়ামত!
     

    ৬.

    পরদিন। পর্যটনের সরকারী অফিসটাতে সকাল থেকে বসে রয়েছে দীপ। হঠাৎ তার মোবাইলটা বিপুল আর্তনাদে কাঁপিয়ে দেয় প্রায় জনশূন্য অফিসটাতে। মূলত জরুরি একটা ফোনের জন্যই সে এসেছিল। গত রাত থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছিল; কিন্তু নেটওয়ার্কে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে গোলমাল, এমনকি নেটে ঢুকতে গেলেও বের করে দিচ্ছে। পর্যটন অফিসের টাওয়াটাই এখন ভরসা। এখানে এসেও অবশ্য কল ঢুকছিল না, এনগেজ দেখাচ্ছিল বারবার।

    “আমি শুভর বন্ধু দীপ বলছি। ওর কাছ থেকেই আপনার নাম্বারটি পেয়েছি।  আচ্ছা, আপনি তো তানিয়ার মামা! … একটা প্রশ্ন করার ছিল আপনাকে। জেনেশুনে একটা মানসিকভাবে অসুস্থ মেয়েকে কেন আমার বন্ধুর ঘাড়ে গছিয়ে …” শুভর কাছ থেকে কায়দা করে নাম্বারটি নিয়ে নিয়েছিল দীপ, তানিয়ার এই দূর সম্পর্কের মামাই ছিল ওদের সম্বন্ধটার প্রথম প্রস্তাবক।
    “না, না, মানসিকভাবে অসুস্থ হতে যাবে কেন? আর একজন থার্ড পার্সন হয়ে আপনি আমাকে এ ধরণের প্রশ্ন করার স্পর্ধা পেলেন কোথায়?” ওপাশ থেকে তানিয়ার মামার উত্তেজিত কণ্ঠটা বের হওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে ক্রোধের ফুটন্ত সব  কণা!

    কিন্তু গায়ে বিধতে দেয় না দীপ, বরং কণ্ঠটাকে কয়েক ধাপ মোলায়েম করে জিজ্ঞাসা করে, “দেখুন, শুভই আপনার নাম্বারটা দিয়েচে আমাকে।  শুভ ও তানিয়া – দুজনেই বড় একটা বিপদে পড়েছে। পরে আপনাকে সব খুলে বলব। এখন আপনি তানিয়ার সমস্যাটা নিয়ে কিছু বলুন আমায়। হয়ত আপনার দেয়া তথ্য ওদের বিপদ থেকে উদ্ধারে সাহায্য করবে আমায়!’

    কী বিপদ, তা জানতে ব্যাকুল ছিলেন ভদ্রলোক। কিন্তু দীপের স্বরে এমন একটা কিছু ছিল যে, এ নিয়ে এনকোয়ারি করতে আর সাহস হল না। একটু সময় নিয়ে বলতে শুরু করলেন তিনি, “হ্যাঁ, অস্বীকার করব না যে, তানিয়া একটু চাপা স্বভাবের! কিন্তু চুপচাপ থাকাটা নিশ্চয় কোন মানসিক রোগের লক্ষণ না? আমার ভাগ্নির মত কোমল স্বভাবের মেয়ে দুনিয়াতে একটাও নাই!  তবে সব সময় কিন্তু তানিয়া এমন ছিল না। ছোটবেলায় একবার জলে ডুবে গিয়েছিল ও! সেই যাত্রা প্রায় অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় আমার ভাগ্নিটা! কেউ একজন ওকে তলিয়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে দেখতে পেয়েছিল, আর  উদ্ধার করে ডাঙ্গায় তুলে দিয়েছিল! কিন্তু সে মহানুভব মানুষটি কে ছিল, তা আজ অবধি তানিয়ার পেটেই রয়ে গেছে! আমরা হাজারবার জিজ্ঞেস করেও জানতে পারিনি। আর  সেই ঘটনাটার পর থেকেই ও খুব চুপচাপ হয়ে যায়! আর জল দেখলে তো শত হাত দূরে …” হঠাৎ করেই লাইনটা কেটে  যায়, নেটওয়ার্ক সমস্যাটা এখানেও ফণা তুলতে শুরু করেছে!  

    ফোনটা রেখে দিয়ে নেটে ঢুকে দীপ, আর গত বিকেলের আধ-পড়া একটা আর্টিকেলে চোখ বুলোতে শুরু করে। কিন্তু মাঝপথেই টেলপে ফুটে উঠা একটি এলার্ট নিউজ দেখে পায়ের নীচের মাটি সরে যায় তার! শেষ মুহূর্তে একটি সাইক্লোনের নাক আশ্চর্যজনকভাবেই না কি ঘুরে গিয়েছে , আর এই প্রবাল দ্বীপটি অবস্থান করছে নতুন লক্ষ্যস্থলের একেবারে কেন্দ্রভাগে!
     

    ৭.

    একটানা বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া মাথায় করেই লজে ফিরতে শুরু করে দ্বীপ। সবাইকে জানাতে হবে খবরটা, ওখানে নেটওয়ার্কের গোলযোগের কারণে নিশ্চিত খবরটা পায়নি কেউ!  
    সাগর আস্তে আস্তে ফুঁসে উঠছিল, বিধ্বংসী হুংকারে জানান দিচ্ছিল এখন তারই দিন! লজের থেকে আধা কিলোমিটার দূরে ছিল সে।  এ সময়ই হঠাৎ মনে হল, একটি শিফনের কানা তার চোখের সামনে ঝিলিক মেরেই উধাও হল! আর দীপের অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল! ওর মনে হল, এই বুঝি মেয়েটি ওর সামনে দিয়ে চলে গেল; কিন্তু বৃষ্টির ঘোলা কাঁচ ভেদ করে তার চোখ অনেক দূর ও দিক তাকিয়েও তাকে দেখতে পেল না। কী মনে করে দীপ দৌঁড় দিল ঝাউবনের সেই বেলাভূমিটি ছাড়িয়ে ছেঁড়া দ্বীপের পানে!

    কিন্তু সেখানেও নেই তানিয়া। তন্ন তন্ন করে চষে ফেলল সে চল্লিশ গজ দৈর্ঘ্যের দ্বীপটা! দীপের কেবলই মনে হতে লাগল, তার কিছু একটা ছিঁড়ে পড়ে রয়েছে এই নতুন জেগে উঠা ভূখন্ডে! যতবার  পা বাড়াল মূলভূখন্ডের দিকে, সেই কিছু একটা যেন টেনে ধরতে লাগল তাকে!

    এক সময় দৈত্যাকৃতির একটা ঢেউ এগিয়ে আসতে থাকলে সে ফিরে যেতে উদ্যত হল। আর তখনই চোখে পড়ল সেই দৃশ্যটা, সেই ভয়াল, ভয়ঙ্কর, বর্ণনাতীত, স্নায়ুবধকারী, কলজে উপড়ানো,  রক্তহিম করা …মানুষের রূপকে হার মানানো সেই মানবী … পৃথিবীর সব রূপ যেখানে জড়ো হয়েছে … দৈত্য ঢেউটির মাথায় করে উঠে আসছে সেও!

    মাথাটা সম্পূর্ণই ঘুরে গেল দীপের, অস্থিমজ্জাগুলো দলা পাকিয়ে এক নতুন ভূপৃষ্ঠ যেন গড়ে উঠল সেখানে! স্থান-কালের সব সূত্রকে বিস্মৃত হয়ে দু বাহু বাড়িয়ে দিল সে সেই বিক্ষুদ্ধ বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে! এই মানবীর জন্যই বুঝি তার অপেক্ষা যুগযুগ, এর জন্যই তার গড়ে উঠা! কামনার ডাকে তার রক্তকণিকারা অতিক্রম করতে লাগল গলনাঙ্ক! শুধুমাত্র আর কয়েক সেকেন্ডের অপেক্ষা, তারপরেই সে পুরো মিশে যাবে তার প্রণয়ীর নরম বেলাভূমিতে!

    কিন্তু এ কী! তানিয়াকে ছুঁয়ে দিতেই সে বদলে গেল পুরো! এক তাল তরল মাংসে পরিণত হল সে! সেখানে শুধুই স্ফটিকের স্বচ্ছ দানাদার বস্তু! ঢেউয়ে ভেজা ছেঁড়া দ্বীপের জলরাশিতে সেই অদ্ভুত আকৃতিটা গড়াগড়ি খেতে লাগল!

    দীপের বাসনা হঠাৎ বাঁধা খেয়ে যেন আরও শক্তি সঞ্চয় করল, আর সাইক্লোনের মতই ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইল ঐ আকৃতিটার উপর! ঠিক তখনই এখন পর্যন্ত যতটুকু চেনা ছিল পৃথিবী, তাও যেন বদলে গেল! ঐ বীভৎস আকৃতিটা ঘুরপাক খেতে লাগল ক্রমাগত, আর তার ভেতর থেকে বেরুতে লাগল একের পর ওরকম আরো আকৃতি, অগণিত।  ওরকম আকার, রং ও রূপের!
     

    ৮.

    দেড়শ বছর পুরনো একটি মানুষের দেহ আবিষ্কার নিয়ে পুরো পৃথিবীতে হইচই পড়ে গেছে। ২১৭০ সনের এই পৃথিবীতে মানুষের দেহ আবিষ্কার হলেই আনন্দের রোল পড়ে যায় সর্বত্র। প্রযুক্তি ও প্রতিহিংসার হাত ধরে পৃথিবী এখন রোবটদের দখলে, মানুষ বিলুপ্তির পথে। তবে এই আবিষ্কারটি ছাড়িয়ে গেছে আগের সব আগ্রহ, উৎসাহকেও! একটি জ্বলজ্যান্ত যৌগিক মানুষের রক্তে পাওয়া গেছে এককোষী প্রাণীর ডিএনএ! যদিও প্রমানিত হওয়ার অপেক্ষায়, এক দল বিজ্ঞানী দাবী করছেন, মানুষটি বহুকোষ থেকে এককোষীতে রূপান্তরের পর্যায়ে ছিল, যা প্রাণের ইতিহাসে নিশ্চিতরূপেই এক নতুন ঘটনা! এককোষী থেকে বহুকোষীতে রূপান্তরের কাহিনি জানা থাকলেও এর বিপরীত কাহিনি জানা ছিল না কারোই।

    অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে প্রাণ সৃষ্টির সময়কার ঘটনাগুলোর উল্টো কিছু ঘটছিল? আর ব্যাপারটা কেমন হত, যদি পৃথিবীটা আবার এক কোষী হত! তাহলে কি স্থায়ী হত প্রাণের ইতিহাস? পৃথিবী যে একদিন আবার জলে ডুবে যাবে, তার জন্য জল-অভিযোজনে প্রকৃতির কোন প্রচেষ্টা ছিল না আবার ঘটনাটা?

    মানুষটি স্ত্রীপ্রজাতির, সে বিষয়ে নিঃসন্দেহ হওয়া গিয়েছে। আর তার পাশে তার এক পুরুষ সঙ্গীকেও পাওয়া গেছে। কিন্তু কিভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না! কেউ কেউ ধারণা করছেন, এক বিশাল প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়ত তাদের ঠিক কেন্দ্রে ধেয়ে এসেছিল! এখন যেখানে বডি দুটো পাওয়া গেছে, এক সময় না কি সেখানে ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বদ্বীপের অবস্থান।  এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে  খুবই ইন্টারেস্টিং আরো একটা তথ্য মিলেছে জায়গাটিকে নিয়ে - এখানেই না কি উৎপত্তি ঘটেছিল পৃথিবীর প্রথম প্রাণের! 
     
    (সমাপ্ত)
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০৯ মে ২০২৫ | ১০১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বাবর - upal mukhopadhyay
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 115.187.***.*** | ০৯ মে ২০২৫ ১৫:৫০731187
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন