এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • অকূলের পারে

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩৬৫ বার পঠিত
  • ‘প্রিয় সম্পাদক, আমার নীচের লেখাটি যদি মানসম্পন্ন মনে হয়, তাহলে প্রকাশের …’

    অফিস থেকে ফিরেছে আধ ঘণ্টা, অথচ একটিবারের জন্যও গলা জড়িয়ে ধরেনি রূপকথা, একটা দূরত্ব বজায় রেখে চলছে,  মনে হয়, তার রাজকন্যাটির কোন অসুখ করেছে, ক্ষুদে চামচ দিয়ে জল খাওয়ানোর চেষ্টা করছিল, যদিও মেঝেতে গড়িয়ে পড়ছিল তার প্রায় সবটুকু… মাঝে মাঝে  কপাল ছুঁয়ে দেখছিল, আর শংকিত নয়নে তাকাচ্ছিল এদিক ওদিক! শোকাহত মেয়েকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ল্যাপটপটা যখন হাতে নিয়েছে রুম্পা, তখনই চোখে পড়ল প্রায় অবধারিত এই আর্তি, যদি মানসম্পন্ন হয়, তাহলে….। মোরসালিন মারুফ কি আজব একটা লোক! প্লট নেহায়েত মন্দ নয়, কিন্তু বিন্যাস ও ভাষার দৌর্বল্য প্রকটভাবে উপস্থিত, আর একটা লেখা পাঠিয়েই শিশুদের মত ব্যাকুল হয়ে পড়ে। কিন্তু ধৈর্য হারায় না রুম্পা, এই লেখাগুলোও যেন এক একটি রূপকথা! কেন জানি, কোন সুদূর গল্পের গন্ধ শোঁকার জন্য ব্যাকুল থাকে সেও!
    ‘আমার গাড়ি ও মেয়েটির রিক্সা এমন ভাবে মুখোমুখি…আর কেউ দেখছে না… শুধু আমরাই আছি … একে অন্যকে দেখার জন্য। সবকিছু…পুরো পৃথিবী পেছনে পড়ে আছে আমাদের’। ‘বাহ্‌’ - বেরিয়ে এল রুম্পার কণ্ঠ থেকে। এ যেন একজন ছাত্রের ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার মুহূর্ত যে কিনা হতাশ করেই যাচ্ছিল কোন দিদিকে। সহজ জিনিস জটিল করে লেখার ঝোঁক আছে মোরসালিন মারুফের মধ্যে, আর এটা ভাল না মন্দ, সে ভার পাঠকের উপরই ছেড়ে দিতে ইচ্ছুক রূম্পা। কে বলতে পারে, একটুখানি প্রশ্রয় পেলে এই মোরসালিন মারুফই হয়ত একদিন দিকপাল লেখক হয়ে বেরুবে!
    ‘আমার গাড়িটার পেছনে অবস্থান নিয়েছে আরো অনেক গাড়ি, অন্যদিকে মেয়েটির রিকশার পেছনে অগণিত রিকশা - তবু আমার দৃষ্টিসীমায় শুধু সে আর তার রিকশাটাই আছে এই মুহূর্তে। যেমন তার দৃষ্টিসীমায় রয়েছি শুধু আমি, যদিও রিকশা ও গাড়ির অসংখ্য দালান-কোঠা তারও আছে সামনে, গেঁথে রয়েছে মাটির সাথে শক্ত করে, কিন্তু সেগুলোতে কে আছে, কি করছে - একদমই জানছে না সে। হ্যাঁ, অনেক কিছু ঘটছে বটে ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পিছনে… কিন্তু অদৃষ্ট আজ এই মুহূর্তটিতে আমাদের দৃষ্টির সীমানায় রেখেছে শুধু আমাদেরকেই। এই সময়ে, পৃথিবীর এই অংশটুকুতে, কোন এক অলৌকিক ইশারায় তৈরী হয়েছে এক টুকরো ইডেন গার্ডেন, যেথায় আমরাই একমাত্র মানব-মানবী।’
    তাহলে ছেলে-মেয়েদুটোর বাঁয়ে কিছু ছিল না? রাস্তাটার দুই তীরে শূণ্য ধু ধু মাঠ? হেসে ফেলল রুম্পা। মোরসালিন মারুফ এমনটিই করে, মাঝে মাঝেই দীর্ঘ বর্ণনা দেয়, কিন্তু শেষমেশ এমন ফাঁক থেকে যায়! আচ্ছা, রাস্তাটা নিশ্চয়ই অপ্রশস্ত যেহেতু দুটো মাত্র লাগোয়া সারির ইংগিত রয়েছে গল্পটিতে। আবার অনেক অনেক গাড়ি অবস্থান নিয়েছে রাস্তাটিতে, তার মানে, ঘুমকাতুরে পাড়ার মধ্যে আটকে পড়ে ঝিমিয়ে থাকা বান্দা নয় সে। তবে যানের তুবড়ি ছোটানো রাজপথও বলা যাচ্ছে না তাকে। বরং, মাঝারি গড়নের একটি রাস্তা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী তার, যে কিনা রাজপথ থেকে নেমে পাড়া-মহল্লার নিবিড়তায় গলে যেতে পারে আর কোলে তুলে নিতে পারে স্বল্প মেদসম্পন্ন ভদ্র স্বভাবের যানেদের।
    তাহলে বহু দোকানপাটও রয়েছে রাস্তাটিতে, অন্তত এক পাশে তো বটেই, যদিও অফিস-আদালত তেমন নেই বোধহয়। ধরা যাক, এক পাশে রয়েছে কংক্রিট দেয়ালের সারি, ধরা যাক তা ছেলেটির পাশেই। তাহলে মেয়েটির পাশেই হাঁ করে দাঁড়িয়ে দোকানপাটগুলি? নাহ্‌, তা হবে না, কারণ বলা হয়েছে, ছেলেটির দৃষ্টিসীমায় শুধু মেয়েটি ও তার রিকশাই আছে। হতে পারে আজ ছুটির দিন অথবা হরতাল। কিন্তু সেক্ষেত্রে গাড়িঘোড়া কোমর বেঁধে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কথা না।
    হঠাৎ চিন্তাটা মাথায় খেলে গেল রুম্পার, হয়ত মেয়েটির অবস্থান কোন কলেজ গেটের পাশে, যেখানে রকমারি দোকান বসানোর অনুমতি নেই। মেয়েটি তাহলে ঐ কলেজেরই ছাত্রী? মোরসালিন মারুফ কলেজ গেটের ঐ রাস্তা দিয়ে অফিস যাচ্ছিল? আরে ধুর, মোরসালিন মারুফ এল কোথা থেকে? সে তো লেখক এই গল্পের! কিন্তু পরক্ষণেই ঠেলে দেয়া চিন্তাটা ফিরে আসে… হলই বা মোরসালিন মারুফ, তাতে কার কি-ই-বা লোকসান হচ্ছে! আর লোকটাও যে  আত্মকাহিনি নামাচ্ছে একের পর এক, সে কে না বুঝতে পারে!  যদিও বিষয়টা আড়ালে চেষ্টার কমতি নেই, কিন্তু যতই নায়করাজ ঢাকছেন নিজেকে, আরো বেশী করে চিহ্নিত হচ্ছেন!  আপন মনে হেসে উঠে রূম্পা।
    “…’ভেবেছিনু মনে মনে, দূরে দূরে থাকি, চিরজন্ম সঙ্গোপনে পুজিব একাকী, কেহ জানিবে না ...’ আমি তাকাতে পারছিলাম না তার দিকে…কী ভাববে সে আমাকে? অবশ্য না তাকিয়েও তাকে দেখছিলাম একটি ধুসর পর্দার মধ্যে, সেই স্বর্গ অরণ্যে…  এরপর একবার চকিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যখন সে চোখ ঘুরিয়ে নিল, পর্দাটা সরে গেল … জানি কেউ দেখছে না এখন আর আমায়, অসভ্য অপবাদ দেয়ার কেউ নেই এখানে, তাই দেখলাম তাকে…. জীবনের দীর্ঘতম দৃষ্টি মেলে …. একটি সাদা রং কামিজের অবগুণ্ঠন,  এক চিলতে শ্যামল মৃত্তিকা, পলির বিপুল অথচ নিঃশব্দ আলোড়ন পথের বাঁকে বাঁকে… পুরো ক্যানভাস জুড়ে নীল পদ্মের সরোবর, ধূসর মেঘের মত ওড়নার উদ্বাহু নৃত্য হৃদের টলটলে জলের উপরে… উর্ধাকাশে জ্বলজ্বল করছিল লুব্ধক। এইটুকুই, ব্যস্‌, এটুকুই। কিছুই মাখানো নেই আর, সারা দেহে অনুপস্থিত অলংকারের এমনকি ছিটেফোঁটা কোন সংকেত। সেজন্যই কি চোখে-মুখে আশ্চর্য এক সন্ধ্যা, বেহালার নির্ভার প্রশান্তি? যেন সব কিছু জানে সে, সব বোঝে, সব তার নিয়ন্ত্রণে – কেন জানি, সবে যোগদান করা কোন স্কুল শিক্ষয়িত্রী মনে হয় তাকে।“
    এই রে সেরেছে, মেয়েটি তাহলে ছাত্রী নয়, শিক্ষিকা! মোরসালিন মারুফ তাহলে প্রেমে পড়তে যাচ্ছেন এক স্কুল শিক্ষিকার? অন্য আর দশটা পুরুষের মত কলেজের সুইট সিক্সটিন তার পছন্দ নয়? যতই এগুচ্ছে, অদ্ভুত এক চরিত্রে রূপ নিচ্ছে গল্পের উত্তম পুরুষ!  আচ্ছা, মোরসালিন মারুফ লোকটা কি করে? সেও কি সদ্য জয়েন করা কোন শিক্ষক? নাকি, অফিসার? অথবা উঠতি বিজনেসম্যান? বয়স কত হবে? অন্তর্জাল ছবি দেখে তো মনে হয় আঠারো বছরের বালক। নিশ্চিত বয়স আরো বেশী, কিন্তু সেটা কত?
    একটা লেখা পাঠানোর পর এক দ্বণ্ড তর সয় না… যেন জগত সংসারে কারো কোন কাজ-কর্ম নেই,  সবাই তার কাহিনি পড়ার জন্য অধীর প্রতীক্ষায় বসে আছে!  … আর এমন করে বলে লোকটা, মুখ ফেরালেও বুকের মধ্যে খচখচ করে! অন্য সময় হলে কি করত জানে না রূম্পা, তবে এবার ভীষনভাবে ইগনোর করল।
    ‘সামনে নিশ্চিত কোন দূর্ঘটনা হয়েছে, এ স্বাভাবিক কোন জ্যাম নয়, এতটা সময় ধরে নিথর দাঁড়িয়ে থাকার কথা নয় গাড়িগুলোর। এমন করে গায়ে গা লাগিয়ে আছে গাড়ি ও রিকশাগুলি যে আমরা কেউ নেমে এগুতে পারি, তার উপায় নেই। যাত্রাপথে বিলম্ব সাধারণত ভীষন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে আমার মধ্যে। কিন্তু আজ এই বিলম্বটুকুর জন্য তৃষ্ণার্ত ছিলাম, মনে-প্রাণে চাইছিলাম এর বিস্তার, অনন্তকালের জন্য হলেও ক্ষতি নেই যেন! ইতিমধ্যে সে মুঠো ফোনে চোখ-মুখ সব গুঁজে দিয়েছে! … কিন্তু এত মনোযোগ দিয়ে কী পড়ছে? কোন বার্তা? কোন প্রিয়জনের? নাহ্‌, তা হবে কেন? এমন কঠিন মুখ করে কেউ অমন কারো লেখা পড়তে পারে? তাহলে কোন কবিতা-টবিতা? কে জানে, হয়ত সাহিত্যের ছাত্রী সে… তার শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে যে সাংস্কৃতিক আন্দোলন – বিচিত্র সব ঢেউ, কিন্তু তাও একটি সরল সমীকরণের সূত্রে গাঁথা,  তাতে তো  তেমনি মনে হয় তাকে যে, ভার্সিটির ক্লাস থেকে বেরিয়ে সামনের বারান্দায় ঝুঁকে পড়তো, আর লম্বা বেণী দুলিয়ে রবীন্দ্রনাথ বা শেক্সপিয়ারের লাইনগুলো আওড়াত, শব্দগুলো নীচের মধ্যবয়সী কৃষ্ণচূড়া গাছের গায়ে সামান্য মৃদু টোকা দিয়ে আরো নীচের ঝকঝকে দূর্বাঘাসে কি এক অজানা শিহরণে লুটোপুটি খেতো!  কিন্তু সাহিত্য কেউ এত সিরিয়াস হয়ে পড়ে? … নির্ঘাৎ আজকের ক্লাসের জন্য যে লেকচার শিটটা রেডি করেছে গত রাতে, তাতে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে শেষবারের মত! ছাত্রদের চেতনার দ্বারে ঠিকঠাক পৌঁছে দিতে জ্ঞানের নির্যাসটুকু … এই সময়ে, এই মাঝারি গড়নের রাস্তাটিতে যে কিনা সুযোগ পেলেই ধোঁয়া-ধূলো ছড়ানো বিকট রাজপথ থেকে গলে যায় নিঝুম মহল্লার নিবিড়তায়, পৃথিবীর এই এক টুকরো ইডেনে- সে যেন মরিয়া একটি মুহূর্তও নষ্ট না করতে!  আচ্ছা,  সে কি তার ছাত্রদের কান মলা দেয়? যেমন দিত আমায়, স্কুল মেমরা… যখন তারা মুচড়ে দিত, কেমন একটি অপূর্ব গন্ধ এসে লাগতো নাসারন্ধ্রে…. ।’
    কেঁপে উঠে রূম্পা। অনেক ভেতর থেকে একটি তেতো স্বাদ পাক দিয়ে দিয়ে উঠতে থাকে। হঠাৎ অনেকগুলো মেয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে তার শান্ত-নির্জন ঘরটিতে… ফুরফুরে একটা চঞ্চল হাওয়ার ঝাপটা এসে লাগলে ছেলেটি মুখ ফিরে তাকায়…সে আগেই এসেছে, প্রতিদিনই তাই আসে, আর সারি দিয়ে রাখা বেঞ্চগুলোর প্রথমটিতে ব্যাগটি রাখে, অবশ্য  কাঁধ থেকে নামানোর সময় প্রায়ই ঠোকাঠুকি লেগে যায় তার কাঁধ আর বেঞ্চের কাঠের মধ্যে, সে সময় সামান্য কেঁপেও উঠতে দেখা যায় তাকে। তবে দ্রুতই সামলে নিয়ে বসে পড়ে তার সরু দেহখানা, আর বেঞ্চের উপর থেকে নীচের পা-জোড়ার মধ্যে সঁপে তার ব্যাগখানা। এরপর মেম আসার ফিসফিসানি প্রতীক্ষার মধ্যে সে একটুও না নড়ে-চড়ে বেঞ্চের সাথে মিশে যায়। এক সময় কয়েটি বই হাতে নিয়ে ধূসর পাড়ের শাড়িতে মেম কক্ষটিতে প্রবেশ করলে, ছেলেটির সম্বিৎ ফিরে, সবার মত সেও উঠে দাঁড়ায়। এরপর  পড়ন্ত চশমার ফাঁক দিয়ে মেম ‘গিফট অব ম্যাজাই’ পড়াতে শুরু করলে, ব্যাগ থেকে  খাতাটি বের করে প্রবল এক আগ্রহ নিয়ে  সে লিখতে শুরু করে। ছেলেটির ব্যাগটি যেন এক রহস্যের ঝাঁপি, অনেক দিন ভেবেছে রুম্পা ও তার বন্ধুরা, সেটিতে হানা দেবে; কিন্তু ছেলেটা এক মুহূর্ত সরে না তার ব্যাগ থেকে, অতন্দ্র প্রহরীর মত জেগে থেকে সে সামলায় তার যক্ষের ধন! তবে মেম চলে যাওয়ার পর আজ রুম্পা অনেকটা ছোঁ মেরেই নিয়ে নিয়েছিল সেই ঝাঁপির প্রধান আকর্ষন, মানে, সেই মন্ত্রপূত খাতাটি, যার লেখাগুলো একটুও কষ্ট হল না পড়তে, মুক্তো মত অক্ষর, বস্তুত মেম- এর কোন কথাই বাদ রাখেনি সে… সারাটা সময় ধরে তার কান শুনেছে, আর হাত লিখেছে… আর কিছু ছিল না, কেউ ছিল না মাঝখানে।
    মেমের প্রাইভেট ব্যাচের একমাত্র ছেলে সদস্য, যে ভয় পেত খুব, মুখ নীচু করে থাকতো, রোগা পাতলা ছিল, কিন্তু ভাঁজ করা মুখখানিতে তার অনেক কথা ছিল।  একদিন বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে শংকায় নীল হয়ে গেল যেন! ছেলেটি মামার বাসায় মানুষ হচ্ছিল, যদিও কেমন মামা সে খবর জানার উপায় ছিল না।  মেট্রিক পরীক্ষায় এমন একটি রেজাল্ট সে করলো যাতে একেবারেই অভ্যস্ত ছিল না তার গ্রামের মানুষেরা, সে শহরে এল, যে কলেজটিতে ভর্তি হল, অত খ্যতনামা না হলেও পরিবার তো বটেই, এমনকি  গ্রামের মানুষের কাছে সে হয়ে দাঁড়িয়েছিল শহরের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, কত যে আশা-ভরসা তাদের তার উপর! 
    রুম্পাদের পাঁচটে বিল্ডিং পরেই ছিল সেই বাসা। রূম্পা তাদের তিনতলার বাসা থেকে প্রায়ই দেখতে পেত ছেলেটি শামুকের গতিতে হাঁটছে মাথা নীচু করে। একদমই স্মার্ট নয়, তার গায়ে ঘুরেফিরে দুটো শার্টই দেখতে পেত, আর কাঁধে ঝোলানো সেই একটি ব্যাগ। তার সাথে একই কলেজে পড়ত সে, তবে বিজ্ঞান শাখায়। রুম্পার থেকে বেশী নাম্বার ছিল তার, তা নয়; কিন্তু কলেজটি যখন বিজ্ঞান পড়তে আগ্রহী ছাত্রের খরায় ভুগছিল, তখন ছেলেটির ইচ্ছের কথা জেনে প্রায় কোলে-পিঠে করে নিয়ে গিয়েছিল   ব্যাচ কোর্ডিনেটর। কিন্তু বিজ্ঞানের সেই স্বল্পসংখ্যার গ্রহেও সে দৃশ্যমান ছিল না মোটেই, খুঁজেপেতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আশ্রয় নিতে হত!  
    একদিন তাকে পথের মধ্যে পেয়ে গিয়েছিল রূম্পা, ভুগোল ক্লাসের পর আর কোন ক্লাস ছিল না সেদিন, সে ঠায় দাঁড়িয়ে ছিল অনেকক্ষন একটি রিকশার জন্য, সেইসময় সামনে নিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটি তাকে না দেখেই। দ্বিধাদ্বন্বের বোঝাপড়ায় পেরে না উঠে এক সময় রুম্পা ডেকে বসল তাকে, ভাঙা ভাঙা বেসুরো বিশৃঙ্খল কণ্ঠে, ‘আমায় একটা রিকশা করে দেবে?’ ছেলেটি প্রথমবারের তাকিয়েছিল সরাসরি, আশ্চর্য হল, ভয়, ভীতি, উদ্বেগ – কিছুই ছিল না সেখানে। কিন্তু ক্ষণিকের জন্যই ছিল চোখের সেই উন্মোচন, অনেক কথা, আর গল্প পথের ধারে রেখে যেয়ে সে হাঁটতে শুরু করেছিল। এবং এক সময় মিলিয়েও গিয়েছিল। অনেকটা সময় পর ভাগ্যদেবী রুম্পার প্রতি যেন সহায় হয়েছিল, একটি রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া ফাইনাল করে উঠতে যাচ্ছিল, কিন্তু সেই সময়ই কোথা থেকে ভোজবাজির মত হাজির হল সে একটা রিকশা নিয়ে। রিকশাটা ভাঙাচোরা ছিল, আর চালক ছিল এক হাড়জিরজিরে বুড়ো। রুম্পার সামনে রিকশাটিকে দাঁড় করিয়ে সে নেমে পড়ল, আর মাথা নীচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো।
    ‘চাচা, নিউমার্কেট যাবেন?’ -  রুম্পার প্রশ্নটা শুনে রিকশাওয়ালার থেকেও অবাক চোখে তাকাল ছেলেটা, কিন্তু সেরকমই একটি মুহূর্তের উন্মোচন এবং পরক্ষণেই নিষ্পলক চোখে মাটির দিকে তাকিয়ে থাকা।
    ‘মাত্র ঘন্টাখানেক লাগবে, উঠে পড়, সাজ্জাদুর রহমানের বইটা নিউমার্কেট ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না’ – রুম্পার কণ্ঠে কি তখন কোচিংয়ের সেই মেম ভর করেছিল? না হলে, কোন কথা নেই, প্রশ্ন নেই, বাদানুবাদ ছাড়াই রাস্তার অপর পারে যেখানে এক হোটেল কর্মচারী সময়ের আগেই আজ শুরু করে দিয়েছিল দলাইমলাই, সেদিকে তাকাতে তাকাতে ছেলেটি উঠে পড়েছিল রিকশায়। এবং সেই দলাই মলাই পেরিয়ে  অফিসের নেমপ্লেট, বাড়ির নকশা, নৃত্যপর গাড়ির বাঁধানো নিতম্ব,  দেয়ালের পোস্টার, মসজিদের মিনার – সব কিছু রাস্তার ওপারের – তাকাতে তাকাতেই পাড়ি দিচ্ছিল পথ। অনেক পুরনো হয়েছিল পথ, মাঝে-মধ্যেই ছিল বড়সড় গর্ত, সেসবের উপর পড়ে রিকশা যখন ডানে বায়ে ডুবতে বসছিল প্রায়, সে তখন রুম্পা ও তার মাঝের অতি সামান্য গ্যাপটিকে বাঁচাতে শরীরের সবটুকু সামর্থ্য ঢেলে দিচ্ছিল!
    এই পুরো ভ্রমনে রুম্পা অবশ্য ‘ঐ মেমটা কি ভীষণ রাগী, ঐ স্যারটা কত সুন্দর পড়ায়, তাই না, এই সাবজেক্টটা এত বোরিং, কবে যে শেষ হবে, আর ভাল লাগে না এইসব পড়াশুনো’ … এমন অনেক কথাই বলেছে আর ছেলেটিও  ‘হ্যা, তাইতো, ঠিকই’ ইত্যাদি টুকটাক বের  করেছে - একদম নিশ্চুপ থেকেছে বলা অন্যায় হবে। এরপর ছেলেটি যখন ফেরার পথে রুম্পাদের বাসা থেকে পাঁচটে বিল্ডিং আগে নেমে যায়, আর মাথা নীচু করে সেই একই রকম করে ধীর পায়ে হেঁটে অদৃশ্য হতে থাকে, রুম্পা ক্রমশ সাতরে উঠতে থাকে ডাঙ্গায়।
    “…‘তুমি যেয়োনা এখনি… আজি যাব অকুলের পারে’ … তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, তার গন্ধ এসে লাগলো, ভোরে ফোটা টগরের। সে কি শুনতে পেল আমাকে? সে কি বুঝেছে কিছু? এই তো মাত্র দুটো হাতের দূরত্ব আমাদের, আমরা দুজনই তো মানুষ এখন এই ধরণীতে… ‘পথ বিজন, তিমির সঘন, কানন কণ্টক, তরু গহন।‘ সে তাকালো…স্বর্গলোকের এই উদ্যানে…দ্বিতীয়বারের মত….আমার পানে। মনে হয় খুব অবাক হয়েছে, কিছু বলতে চাইছিল হয়ত। পরে মাথাটার উল্টো দিক কিছুটা কৌণিক রেখে আমার দিকে, সে চোখ মেলেছিল অনন্তে যেখানে ধু ধু করছিল রিকশা ও গাড়ির বিশাল চর।”
    আহা…কি ভীষন ক্ষিদে একটু স্পর্শের, কোন এক ব্যাখাতীত বেদনা নাড়িয়ে যায় রুম্পাকে! এখনো কেউ নেই মানুষটির? এতটা বছর পরেও? কিন্তু কেন? কেন? মোরসালিন মারুফ, একজন গল্প লেখক, এ ছাড়া কি আর কোন পরিচয় থাকবে না তার? আচ্ছা, তার গল্পের পেছনেও কি কোন গল্প আছে? মিস করে গেছে রুম্পা? নাহ্‌, পুরোটা শেষ করার পর আবার পড়তে হবে। দরকার হলে বারবার পড়বে।  তাকে জানতেই হবে মোরসালিন মারুফের গল্পটা, সে কেন গল্প লেখে,সেই গল্পটাও। আশেপাশের সব ধ্বনি, ধরা, জরা থেকে অনেক কষ্টে-সৃষ্টে নিজেকে মুক্ত করে সে ফের আলতো ডুব দিল লেখাটিতে, কিন্তু পেছন থেকে বিপুল আর্তনাদ করতে করতে তাকে টেনে তুলল ফোনের স্পিকার বাটন। সুব্রতের কল, আবার। কি হল সুব্রতের! সে তো কাজে ডুবে থাকা মানুষ, রাতে স্ত্রীকে নিয়ম করে ফোন করা সময় নিয়ে – এও সম্ভব সুব্রতকে দিয়ে, বিশেষতঃ যখন বিশাল সব দায়িত্বের অবিরাম ঝাপ্টানো  পংখিতে চেপে  শহরের বাইরে পাড়ি জমায় সে! সুব্রত তরতর করে উঠছে, রুম্পার অবদান সে স্বীকারও করে, এক হাতে সংসারটা সামলাচ্ছে, রূপকথাকে নিয়ে তো একটুও ভাবতে হয় না তাকে। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে যখন সে দুদিনের জন্য ফিরে আসে ঘরে, তখন উৎসব আনন্দ হাসি তামাসার হিল্লোল প্রতিধ্বনিত হতে থাকে বিশাল ফ্ল্যাটের দুয়ারে দুয়ারে, পুরো বাড়ি ঘেমে নেয়ে উঠে নেচে,  এক সময় ফাঁকা হলে মধ্য রাতের নির্জনে একান্তে নিভৃতে রুম্পাকে কত কথা বলে যায় সুব্রত, তার ভালবাসা, স্বপ্ন। এক সময় ভোর হলে যখন পাশের জায়গাটা ফাঁকা দেখতে পায়, তখন রুম্পা অবশ্য আবার নতুন উদ্যমে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে, নতুন একটি পরীক্ষা আসার আগে যে তৃপ্তিটুকু তার পাওনা ছিল তাকে উপভোগের অবসর কমই মেলে। …কিন্তু আজ কিছু হয়েছে সুব্রতর? এত ঘনঘন ডাকাডাকি কেন? ফোনটি ধরতে গিয়ে কেটে গিয়েছিল। এরপর সে বার কয়েক কলব্যাক করতে চেষ্টা করল, কিন্তু একবার ভগ্ন সেকেন্ডের জন্য কথা কয়ে উঠলেও পরে আর রিসিভই  হল না। নিশ্চিত এমন কোন জায়গায় পৌঁছেছে, যেখানে হয় টাওয়ার নেই, অথবা, থাকলেও তার যত্ন করার কেউ নেই, হয়ত বড় ধরনের গোলমাল বাঁধিয়ে বসে আছে।     
     ‘’তুমি কিছুই শুনতে পাচ্ছ না, আর কি করে বলতে পারতাম?’’ চমকে উঠে রুম্পা, স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাইরের জানালার দিকে। সে-ই ছেলেটিকে ফোন দিয়েছিল যখন তার বাবা মারা যায়…সেদিন সেই খুব ভোরে, ৪টা হবে হয়ত, যখন তার বাবার মুখ ও নাক থেকে যন্ত্রগুলো খুলে নিয়েছিল কয়েকজন ডাক্তার, সে তাকিয়েছিল তাদের মুখের দিকে, সে আর কখনো এমন দৃশ্য দেখেনি, কিছু মানুষ অন্য একজন মানুষের অন্তিম দৃশ্য রচনা করছিল, আর কি আশ্চর্য স্বাভাবিক ছিল কাজকর্ম। তখন সে সবার মত বাবার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েনি, নীরবে বেরিয়ে গিয়েছিল কক্ষ থেকে অন্যদের জায়গা করে দিয়ে, সিড়ির কোণে যে বিশাল গ্লাস ছিল, তাকিয়েছিল তার বাইরে, কতক্ষণ এক নাগাড়ে তাকিয়ে থেকেছিল মনে নেই, এক সময় এক দৌড়ে যেয়ে বাবার কেবিনের পাশের টেবিলটির উপর রাখা সেল ফোনটা নিয়ে এসেছিল ভীড় ঠেলে এবং  একটুও না তাকিয়ে বাবার দিকে, হন্তদন্ত হয়ে সিড়ির কোণাটায় পৌঁছে সে কল লিস্ট হাতড়াতে শুরু করেছিল। ছেলেটির মোবাইল ছিল না, মামার বাসায় অবশ্য একটা এনালগ সেট ছিল। তাতেই ফোন দিতে লাগল, পরপর কয়েকবার, এক সময় একটি মেয়ে কণ্ঠ ফোন রিসিভ করে, সম্ভবত ছেলেটির মামী। এই নিশুতি রাতে একটি মেয়ে তার কলেজ পড়ুয়া ভাগ্নেকে ফোনে চাইছেন,  ভীষণ অবাক হওয়াটা তাকে খুব মানাতো, কিন্তু তিনি বিষ্মিত হওয়ার ছিটেফোঁটা লক্ষণও প্রকাশ করলেন না, এমনকি কোন প্রশ্নও করলেন না, ডেকে দিলেন ছেলেটিকে। …. আর কাউকে না, তাকেই জানিয়েছিল শুধু রুম্পা…এসেওছিল সে সৎকারে, সারাদিন অনেক খাটাখাটুনি করেছিল সেদিন সে, দর্শনার্থীদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, যত্ন করা,  মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়ি আনা, বাড়ি থেকে শ্মশানঘাটে নিয়ে যাওয়া, দাহের ব্যবস্থা …সব কিছুতে ছিল সে। তবে সব শেষ করে সে ফিরেও গেল, কাউকে কিছু না বলে, কারো দিকে না তাকিয়ে।  বেশ কিছুটা সময় গুম মেরে থাকে রুম্পা, পরে সেও ফিরে আসে, পৃথিবীর ছক বাঁধা নিয়তিকে মেনে।
     ‘আচ্ছা, কি হয়েছে তোমার, বলোতো? এত বিচলিত দেখাচ্ছে কেন? কোনও তাড়া আছে? ক্লাসে যেতে দেরী হচ্ছে বলে টেনশান হচ্ছে? ছাত্ররা অধৈর্য হয়ে পড়বে? ক্লাসে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে? শিক্ষায় বিঘ্ন ঘটবে? একদিন না হয় ঘটুক বিঘ্ন… থাকুক না হয় এই গাড়ির জট আরো কিছুটা ক্ষণ, এখুনি কেন ভেঙ্গে দিতে হবে সবকিছু? সবকিছুই ছকে বাঁধতে হবে কেন? ….. তুমি… তুমি… কি একটিবারের জন্যও তাকাবে না আমার দিকে? আবার ভাল করে দেখ, আমার তোমার মাঝে এই এতটুকু দূরত্ব, সেখানে কোন কালিমা নেই, সেখানে শুধু ফুলের সুরভি, তুমি কি একটুও টের পাচ্ছ না? তুমি কি বুঝতে পারছ না, এই ইডেন আমাদের জন্য, এখানে তৈরী হয়েছে, আমাদের অজান্তে, শুধুই আমাদের জন্য? এগুলোর কোনই অর্থ নেই তোমার কাছে? এই জনশূণ্য উদ্যান তোমার পছন্দ নয়?  তোমার ভয় এখানে? আমাকে? এই আমাকে? আমাকে?’’
    স্ক্রীনের পর্দা তখন ঘোলাটে হয়ে উঠেছে, ঘন বাষ্প ছেয়ে ফেলেছে তার পিক্সেল, কেঁপে কেঁপে উঠছে লেখাগুলো, ‘’আমার যে খুব কষ্ট, নিজের কোন কাজই করতে পারি না, সকালে এক কাপ চা… ব্যাগটা গুছিয়ে দেবে না? সব কিছু এলোমেলো আমার, যেথা আমি যাই নাকো, তুমি প্রকাশিত থাকো…’’
    নাহ্‌, এ কোন স্বাভাবিক মানুষের শব্দ নয়, ভীষন জ্বরগ্রস্ত কেউ যেমন বকে। এই বিশাল পৃথিবীতে মোরসালিন মারুফ একা! ঐ মেয়েটির হয়ত কোথাও ঠিক হয়ে আছে সব, একদিন সেও হয়ত মাথা নীচু করে জানাবে সবকিছু… তাহলে মোরসালিন মারুফও একদিন অনেক রাত করে ঘুমোবে আর ঘুমোতেই থাকবে সকাল, দুপুর, রাত ছাড়িয়ে …?
    শিউরে উঠে রূম্পা, আর এগুতে পারে না… থর থর করে কাঁপতে থাকে, এক অলৌকিক কুয়াশায় ছেয়ে যেতে ঘর দুয়ার বিশ্বচরাচর। সম্পাদনা নীতিকে লঙ্ঘন করে প্রথমবারের মত মাঝপথেই লিখে দেয়, ‘দুঃখিত! গল্পটি মনোনীত হয়নি’।
     
    (সমাপ্ত)
    ……………………………………………………………………………………………………………..
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৩৬৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • :|: | 2607:fb91:8831:4285:e0f0:ac91:57bc:***:*** | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:২৬540246
  • শিরোনাম
  • পাপাঙ্গুল | 103.87.***.*** | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:৪০540250
  • বেশ yes
  • প্রতিভা | 2409:40e0:11b4:50c2:9ca:99fe:7764:***:*** | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ২৩:১০540289
  • গল্পটা খুব মনোযোগ দাবি করে।
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪১540713
  • @প্রথম মন্তব্যকারীঃ ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। 
    @পাপাঙ্গুলঃ অনেক ধন্যবাদ। 
    @হীরেন সিংহরায়ঃ অসংখ্য ধন্যবাদ,হীরেনদা। 
    @প্রতিভাঃ অসংখ্য ধন্যবাদ প্রতিভাদি! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন