রুমির কবিতা: রেসপন্স টু ইওর কুয়েশ্চন
নিউজপেপার থেকে লিনা জানতে পারলো, রুশ এক সাংবাদিক নিজের নোবেল পুরষ্কার নিলামে বিক্রি করে দিয়েছেন। নিলাম থেকে অর্জিত টাকা তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধগ্রস্ত শিশুদের শিক্ষাখাতে খরচ করেছেন। লিনা বুঝতে পারে মানুষের মাঝে এখনও কিছুটা মানবিকতা অবশিষ্ট আছে। মানুষ এখনও মানুষকে ভালোবাসে।
গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে কেউই যুদ্ধের পক্ষপাতি নয়। বিশ্বের বহু রাষ্ট্রের মতন রাশিয়ার একটা বিশাল অংশের জনগণও এই যুদ্ধকে নিন্দা জানিয়েছে। প্রটেস্টও করেছে। যুদ্ধ থামাতে করেছে মানববন্ধন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রনায়কেরা এরকম একটা ক্রান্তিকালে মানুষের নিরাপত্তাকে জুয়ায় লাগিয়ে অমানবিক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো উন্মাদও তো আসলে পৃথিবীতে যুদ্ধ কামনা করে না; শান্তি চায়। অথচ ফ্যাসিস্ট আর সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীরা তো উন্মাদ নয়, তবে তারা আদতে স্বার্থলোভী। যেকোনো যুদ্ধের সময়ই নানান প্রোপাগান্ডা চালানো হয়। রাষ্ট্রনায়কেরা নিজ নিজ দেশের নেগেটিভ ফ্যাক্টগুলোর তথ্য গোপনে বিনষ্ট করে। যাতে জনগণ আসল বিপদ সম্পর্কে আন্দাজ করতে না পারে, জনগণ প্যানিক না করে, যাতে রাষ্ট্রে বিভক্তি না আসে, গোপনে যাতে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা যায়, এরকম ভাবনার থেকেই তারা জনগণের নেতা থেকে শাসকে পরিণত হয়। যুদ্ধের কারণে কিয়েভ এবং মস্কোর স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রম থেকে বেছে বেছে লেখকদের বাদ দেয়া হয়েছে। কিয়েভ বাদ দিয়েছে মস্কোর লেখকদের। আর মস্কো বাদ দিয়েছে কিয়েভের লেখকদের। লিনা এইসব তথ্য থেকে যুদ্ধের মূল বাজারটা ধরার চেষ্টা করে। লিনার মনে পড়ে তাদের স্কুল-কলেজের পাঠ্যক্রমে ছিল দস্তয়েভস্কি, পুশকিন, তলস্তয় এঁদের লেখা। লিনা সেইসব সাহিত্য পাঠ করেছে, আর মনের ভিতরের নানান জগতের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে কৈশোর থেকে যৌবনে। আর এখন সেইসব বিশ্বনন্দিত লেখকদের সাথে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের পরিচয় হতেও বাঁধা। আসলে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করে রাষ্ট্রনায়কেরা সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী প্রপাগান্ডা চালাতে পারে। ইতিহাসকে ম্যানুপুলেট করা হয় এইভাবেই। একটা প্রজন্মের তথ্যভান্ডার ভিন্নরকম তথ্যে সমৃদ্ধ করে তোলার সবচেয়ে কার্যকরি রাস্তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় শিক্ষাক্রম। এই এডুকেশন সিস্টেমটা দিয়ে জাতির চেতনার বিকাশ ঘটানো যায়, আবার জাতির চেতনাকে নাশও করা যায়। যে কোনো যুদ্ধ কিংবা ফ্যাসিবাদী সময়ে এরকম করা হয়ে থাকে। লিনা নিজের ল্যাপটপ থেকে এই সম্পর্কিত একটা রিসার্চ করা শুরু করে। সার্চ করে করে নানান আর্টিকেল পাঠ করে। বিভিন্ন যুদ্ধের সময়কার ঘটনাবিন্যাসগুলো নোট করে। সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে। যেন আকাশের মাঝে ফুটো হয়ে গেছে। বাংলাদেশে বৃষ্টি মানে অলস সময়। সকল কাজেই একটু ঢিলেঢালা ভাব। সকালে ক্যাম্পে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে যাওয়া বন্ধ হয়েছে। কথা হয়েছিল বৃষ্টি থামলে বিকেল নাগাদ ক্যাম্পে যাবে। কিন্তু বৃষ্টি তো থামছে না। লিনা তাই সকাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের যুদ্ধাবস্থা নিয়ে রিসার্চ করছে। সময়গুলোকে এক সুতোয় বেঁধে লিনা দেখতে চাইছে। সার্চ করতে করতে ১৯৭১ সাল আসে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। লিনা খুব আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভ থেকে পাঠ করে। এখানেও লিনা দেখে, পাকিস্তানিরা যুদ্ধের সময় ফ্যাক্টগুলো থেকে জনগণকে অন্ধকারে রেখেছে। শিক্ষাক্রমে বদল ঘটিয়েছে। সংবাদমাধ্যমকে ভুল পথে ব্যবহার করেছে। যুদ্ধের শেষে যখন বাংলাদেশ জন্ম নিল, তখনও পাকিস্তান মূল ফ্যাক্টগুলো ডিসকোর্স করেনি। জয়ী রাষ্ট্র এবং পরাজিত রাষ্ট্র জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমের চেতনাকে কাজে লাগিয়েছে। তাই দুই দেশের জনগণই জাতিবিদ্বেষী হয়ে উঠেছে। যুদ্ধে শহীদ হওয়া বাঙালির সংখ্যা এবং জেনোসাইডে বাঙালির সংখ্যা মানে ডিজিট-ফিগারটাকে পাকিস্তান ম্যানুপুলেট করতে চেয়েছে। এছাড়া পাকিস্তান জেনোসাইড মানে গণহত্যার দায়কে অস্বীকার জানিয়েছে। তাতে যে সত্য চাপা থেকেছে, তা নয়। বাংলাদেশ গত ৫০ বছর যাবত স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছে। বিশ্বব্যাপী জনমত চাইছে। জাতিসংঘের মতামত চাইছে। তবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দ্বারা সংগঠিত গণহত্যার বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি এখনও বাংলাদেশ পায়নি। যেহেতু জাতিসংঘের কাছে স্বীকৃতি চাওয়া হচ্ছে আর সেই জাতিসংঘ আদতে আমেরিকারই আড়াই চালে মাত করা পোষ্য ঘোড়া। সেকারণেই স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এই রহস্য এখনও আলোর মুখ দেখতে পেলো না। কারণ ১৯৭১ সালে আমেরিকা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। যদি জাতিসংঘ ১৯৭১ সালের সেই নির্মম সত্যকে, পাকিস্তানের নৃশংস অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়ে দেয় তবে আমেরিকার মুখের সেই মানবিকতার মুখোশ টুক করে খসে পড়বে কিনা । এজন্যই দিন যায়, মাস গড়ায়, বছর শেষ হয় কিন্তু জাতিসংঘ বর্ণচোরার মতন কিছুই জানে না কিছুই বোঝে না, আর বাংলাদেশ চিনে জোঁকের মতন লেগে থেকেও তার প্রাপ্য অধিকার আদায় করতে পারে না। লিনা নিজের দেশের কথা ভাবে। দেশের মানুষের কথা ভাবে। আগামী পরশু লিনা পোল্যান্ড চলে যাবে। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেছে। পরিবারের সাথেও লিনার কথা হয়েছে। লিনার বাবা-মা পোল্যান্ডের কোন জায়গায় আছে সেই ঠিকানাও লিনা পেয়েছে। লিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করবে না। তবে যুদ্ধের ময়দানে আহতদের সেবা করবে। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের মতন।লিনার ভাবনাচিন্তায় অনেক পরিবর্তন ঘটেছে রুমির কবিতা পড়ে। জালালুদ্দিন রুমি। সাহিত্যের জগতের এক মায়েস্ত্রো। কিছুদিন যাবৎ লিনা রুমির কবিতা পড়ছে। আগেও পড়েছে, কিন্তু এতটা গভীরভাবে পাঠ করেনি। রিসার্চের কাজটায় একটু বিরতি দিয়ে লিনা কবিতার বই থেকে কবিতা আওড়াতে শুরু করলো। রুমির কবিতা...
"If you want what visible reality can give,
you're an employee.
If you want the unseen world,
you're not living your truth.
Both wishes are foolish,
but you'll be forgiven for forgetting
that what you really want is
love's confusing joy."
অদ্ভুত। আশ্চর্যময়। সোলেমান বার্কস'কে অসংখ্য ধন্যবাদ যে, তিনি এত সুন্দর করে রুমিকে সাজিয়ে দিয়েছেন ইংরেজি ভাষায়। কথা এবং ভাবের এমন অপরূপ প্রকাশ, আর সেই ভিনদেশী টেক্সটকে অনুবাদ করে দুনিয়ার সামনে একটা মধুর ভান্ডারকে উন্মোচিত করা সহজ কাজ ছিল না, ব্যাপারটা দারুণ করেছেন সোলেমান বার্কস। মাঝে মাঝে মনে হয় রুমির আত্মা এসে সোলেমানকে এসব লেখায় সাহায্য করেছে। গত তিন মাস লিনা কেবল রুমির কবিতাই পড়েছে। তিন মাসে সে নিজেকে অন্যরকম মানুষে পরিণত করে ফেলেছে। সে আরো বেশি সেন্সিবল হয়ে উঠেছে। আর মাত্র একদিন। তারপরই সব প্রিয়জন আর প্রিয় দেশের কাছে ফিরে যাবে লিনা। গিয়ে মানুষকে সেবা করবে। মানুষের উপরে ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধে একটা কন্ঠস্বর হয়ে উঠবে লিনা।
তার চোখে ভাসে বিপ্লবের আগুন। একটু একটু করে বুকের ভিতর বারুদ জমেছে। সেই বারুদ এখন সুবাস ছড়াচ্ছে। স্বপ্নের ভিতরে ফুটে উঠছে নিজের দুঃখিনী মাতৃভূমি। নিজের মানুষের জন্য বুক কেঁপে উঠছে। একরকমের হাহাকার। বিতৃষ্ণা-হতাশা-স্বপ্ন-ভালোবাসা-কৌতূহল এরকম বিভিন্ন অনুভূতিগুলো একইসাথে মাথার ভিতর ফেটে পড়ছে। যেন কর্টেক্সের ভিতর লক্ষ লক্ষ কাঁচের কুচি বিঁধে মগজকে ফালি ফালি করে ফেলছে।
মাথায় হাড় নাই, চাপ দেবেন না প্লিজ
সচরাচর এরকম ভোরবেলা শামীমের ঘুম ভাঙে না। তবে আজ ঘুম ভাঙলো। পেটের মধ্যে মোচড় দিচ্ছে। টয়লেটে যাওয়া দরকার। কিন্তু রাধারমণের এই কোচিংয়ে তো টয়লেটের ব্যবস্থা নাই। কাজটা সম্পন্ন করতে শামীমকে ৫/৭ মিনিটের হাঁটা-পথ দূরে লোকাল মসজিদের ওয়াসরুমে যেতে হবে। কিছুটা গড়িমসি করে শামীম বিছানা থেকে নামলো। পাশের ঘরে গিয়ে দেখে রাধারমণ যোগাভ্যাস করছে। চটের বস্তার উপর সুখাসনে বসে প্রাণায়াম করছে। দরজা খোলাই আছে। শামীম দরজার দিকে যেতেই রাধারমণ চোখ বন্ধ রেখেই বললো, "কোথায় যাচ্ছো?" শামীম বললো, "ওয়াশরুমে"। বলেই সে বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাধারমণ বললো, "ফেরার পথে, মসজিদের সামনে যে কিনু গোয়ালার ভাতের হোটেলটা আছে, সেইটা খোলা পেলে খান দশেক রুটি পাঠিয়ে দিতে বলো তো। দাম দিতে হবে না। মাসকাভারি চুক্তি করা। দেরি হলে তোমার হাতে করে আনতে হবে না। দোকানের বয় ভোলাকে বললেই, সে নিয়ে আসবে।" কথা শেষ হতেই শামীম শুধু হ্যাঁ-সূচক একবার 'হুম' বলেই হাঁটতে শুরু করলো।
ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। শামীমকে ওয়েট করতে হয়নি। ভোরবেলা বলেই হয়তো ওয়াশরুম ফাঁকা ছিল। তাছাড়া ফজরের ওয়াক্ত অনেকক্ষণ আগে শেষ হয়েছে। পেটের চাপ থেকে মুক্তি পেয়ে শামীমের মেজাজটা বেশ ঝরঝরে লাগলো। ঘুম ভাঙার পর থেকে বেশ একটা শীতল টেনশনের বেগ গেছে। চাপমুক্তির পর ওজুখানা থেকে হাত-মুখ ধুয়ে মোবাইলের ঘড়িতে দেখলো, ৫টা ৫৫ বাজে। রোদ ঝলমল করছে চারদিকে। পাখিগুলো কিচিরমিচির করছে গাছে গাছে। কিনু গোয়ালার দোকানটা খোলাই আছে। তবে চুলা বন্ধ। শামীম এগিয়ে গিয়ে রুটির কথা বলতেই, হোটেল-বয় ভোলা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললো। কাস্টোমার নেই বলে রুটির চুলা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলে চুলা জ্বালিয়ে রুটি ভেজে দেবে গরম গরম।
ভেজে রাখা রুটি কতকগুলো হটপটে তোলা আছে। কিন্তু মাস্টারসাহেবকে হটপটের রুটি দেয়া যাবে না। আর যদি অপেক্ষা করতে মন না চায়, শামীম চলে যেতে পারে। ভোলা নিজে কিছুক্ষণ পর গিয়ে রুটি দিয়ে আসবে। অপশন দুইটাই খোলা। শামীম কোনটা চয়েজ করবে, তা শামীমের ব্যাপার। শামীম প্রথম অপশন বেছে নিলো। রুটিগুলো ভেজে প্যাকেট করে রাখতে বললো সে। কিছুক্ষণ হেঁটে এসে শামীমই নিয়ে যাবে, ভোলাকে তাই জানিয়ে গেলো। গ্রামের একটা রাস্তা। তেমন আহামরি কিছু নয়। দিগন্তের পর দিগন্ত জুড়ে আবাদের জমি। এখন অবশ্য বর্ষা চলছে। তাই আবাদ শুরু হয়নি। বিগত ফসলের গোড়াগুলো রয়ে গেছে মাঠে। আর মাঝে মাঝেই পানি জমে আছে। পানির থেকে কখনো কখনো ব্যাঙ ডাকছে। মাঝে মাঝে কয়েকখানা চারচালা ঘর। একটা পুকুরের সামনে গিয়ে শামীম দেখে, সেই পুকুরে হাঁসেরা মনের সুখে সাঁতার কাটছে। প্যাকপ্যাক করছে আর জলকেলি করছে। গ্রামদেশের এর থেকে সাধারণ দৃশ্য আর কী হতে পারে? শামীম বহু বহুবার দেখেছে এই দৃশ্য। তবু সে হাঁসগুলোকে দেখে । পুকুরটার পাশেই এক গৃহস্থ চারচালা ঘর। সেদিকে চোখ যেতেই শামীম দেখে, একটা মেয়ে। সালোয়ার-কামিজ পরা মেয়েটা দাঁত ব্রাশ করতে করতে রাস্তায় এলো। বয়স বেশি না। হাইস্কুলে পড়ুয়া মেয়েদের বয়সী। দাঁত ব্রাশ করতে করতেই মেয়েটা রাস্তা দিয়ে কিছু দূর হেঁটে এসে পুকুরের ধারে দাঁড়ালো। হাঁসগুলোকে দেখার জন্যই হয়তো। নাকি শামীমকে দেখার জন্য? কথাটা ভাবনায় আসতেই শামীমের ঝটকা লাগলো। লজ্জাও করলো। এরকম অপ্রাপ্তবয়স্ক একটা গ্রাম্য মেয়েকে নিয়ে এরকম ফ্যান্টাসিতে ভোগা, অবশ্যই লজ্জাজনক। এইটা তো বিদেশি কোনো থ্রিলার সিনেমা না। 'লিওন' নামের একটা সিনেমায় শামীম দেখেছিল, দুই অসমবয়সী'র প্রেম। মেয়েটার বয়স হয়তো সিনেমায় ১৩/১৪ ছিল। আর হিরোর বয়স ছিল ৩৫/৪০। যাক, মেয়েটার সাথে চোখাচোখি হতেই শামীম কিনু গোয়ালার দোকানের দিকে হাঁটতে শুরু করলো। মেয়েটার চেহারা তেমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নয়। বেণি করে রাখা চুল। শ্যামবর্ণের মুখ। মুখের মধ্যে ব্রাশ থাকায় গালের এক পাশটা একটু উঁচু। টুথপেষ্টের কিছুটা ফ্যানা লেগে আছে ঠোঁটের ফাঁকে।
শামীমের মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। মেয়েটা কেন পুকুরপাড়ে এলো? অথচ এর উত্তর খুব সহজ। পুকুরপাড়টা মেয়েটার দৈনন্দিন অভ্যাসের জায়গা। এছাড়া নতুন মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌতুহলে মেয়েটা নিজেদের পুকুরপাড়ে আসতেই পারে। কিন্তু শামীমের মাথায় তো গ্যাংস্টার, সার্প সুটার সেই সিনেমার লিওন ঘুরপাক খাচ্ছিল। উলটপালট চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে ভোলার কাছ থেকে রুটিগুলো সংগ্রহ করে কোচিংয়ে এসে শামীম দেখে, রাধারমণ যোগাভ্যাস শেষে চা তৈরি করে বসে আছে। সকাল থেকে যে এই বেলা সাড়ে সাতটা নাগাদও এক কাপ চা খাওয়া হয়নি তা কেবল মনে পড়ে শামীমের। রাধারমণ এরই মাঝে বালতিতে নিয়ে আসা জমানো পানি দিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিয়েছে। বিশুও হাতমুখ ধুয়ে চা নিয়ে বসেছে। রুটিগুলো আনতেই রাধারমণ সবাইকে আবার চা ঢেলে দিল। চা আর রুটি খেয়ে সকালের নাস্তা করতে হবে।
রাধা জানালো, খেতে বেশি সমস্যা হলে ঘরে গুড় আছে। গুড় দিয়ে রুটি মন্দ লাগে না।
শামীম কিছুটা গুড় দিয়ে রুটি খেলো। খেতে খেতে রাধাকে বললো, রুটির প্যাকেটে যে কোনো তরকারি বা ডাল দেয় নাই তা আমি বুঝি নাই। চেক করা উচিত ছিল।
রাধা বলে, না ঠিক আছে। গিল্ট হইতে হবে না। ভোলা জানে,আমি গুড় দিয়ে রুটি খাই। তাই মনে হয় সে-ও দেয় নাই। আর আমারো খুলে বলা উচিত ছিল।
কিন্তু শামীম তো রুটির জন্য গিল্টি ফিল করে না। সে নিজেকে অপরাধী বোধ করে হাঁসগুলোর জন্য, অই পুকুরটার জন্য আর সেই মেয়েটার জন্য; যার ঠোঁটের কোণায় টুথপেষ্টের ফ্যানা লেগেছিল। এই অপরাধবোধের কথা তো সে কাউকে বলতে পারবে না।
মাথায় হাড় নেই, চাপ দেবেন না প্লিজ ২
রাধারমণ পুরাতন পত্রিকাগুলো গুছিয়ে বান্ডিল করছে। এমনিতে ২/৩ মাসের পত্রিকা জমে গেলে, তা একত্রে বিক্রি করে বেশ কিছু টাকা পাওয়া যায়; সেই টাকা দিয়ে বেশির ভাগই সে বই কেনে। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি পুরাতন পত্রিকার দাম ৪২ টাকা। এইবার অবশ্য রাধারমণ বই কিনবে না। সে ভেবেছে এই টাকাটা বন্যার্তদের তহবিলে দান করবে। যদিও খুবই সামান্য পরিমাণে টাকা, তারপরও ৭/৮ কেজি পত্রিকা হলে তো মোটামুটি ৩০০টাকার বেশি পাওয়া যাবে। কুড়িগ্রামের 'বিন্দু' নামে একটা স্বেচ্ছাসেবী দলের সাথে তার যোগাযোগ হয়েছে। এই সামান্য টাকায় অন্তত ৫/৬ কেজি চাল তো হবে কিংবা চিড়ামুড়ি হবে প্রায় ১০ কেজির মতন। এটাও মন্দ নয়।
বান্ডিল করা হয়ে গেলে শামীম জানতে চায়, কী হবে এইসব পুরাতন পত্রিকা দিয়ে? রাধারমণ নিজের অভিপ্রায়ের কথা জানায়।
শামীম বলে, তুমি আমার সাথে অনলাইনের ব্যবসাটায় জয়েন কর। ভালো প্রফিট আছে।
রাধা বলে, নাহ, ঐ লাভের সব টাকা পিঁপড়া খেয়ে ফেলবে। দরকার নাই। তুমি আমার কথা ছাড়ো। তোমার উচিত এইটার সাথে রিলেটেড অন্য কিছু ভাবা।
শামীম জিজ্ঞেস করে , যেমন? এইটার সাথে রিলেটেড কেমন জিনিস?
রাধারমণ বলে, ইনফরমেশন বিজনেস করতে পারো। ফেসবুক, গুগল এইসব কোম্পানিগুলা এই বিজনেস করে কোথা থেকে কোথায় চলে গেল, দেখছো? ইনফরমেশন দিয়ে তুমি অনেক কিছু ম্যানুপুলেট করতে পারবা। এখন তো তোমাদের ক্যাশেপে ভিপিএন সিস্টেমের দরকার হয়। মানে পুরাটাই ডার্ক ওয়েবে ঘটে। যদি ভিপিএন কেউ ইউজ না করে, তবে তোমরা বিজনেসটা করতেই পারবা না। তার চেয়ে এমন একটা জেনারেল প্ল্যাটফর্ম বানাও কিংবা এপ বানাও যাতে তুমি কনজিউমারের বেডরুমে ঢুকে যেতে পারো। কনজিউমার জানতেই পারবে না, সে নিজের মোবাইলে নিজের খরচে একটা সামান্য এপ্লিকেশন ইউজ করে সকল ডাটা তোমার কাছে জমা করে দিচ্ছে। জিনিসটাকে এমন ভাবে ডেভেলাপ করতে হবে, যাতে অডিও ভিডিও সকল রকম ডাটাই কনজিউমার তোমাকে দিয়ে দেয়। আর তুমি সেই ডাটা বিক্রি করতে পারো।
শামীমের সাথে সাথে বিশুও ভীষণ উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে। বিশু বলে, এইরকম কিছুও পসিবল নাকি, বস?
রাধা হেসে বলে, অবশ্যই পসিবল। গুগল করতেছে না? আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে কাজে লাগিয়ে গুগল আমাদেরকে জিম্মি করে ফেলছে তো। তুমি হয়তো এখন মনে মনে ভাবতেছ, তোমার একটা ঘড়ি কেনা দরকার। কিংবা তুমি হয়তো ফোনে তোমার বন্ধুকে ঘড়ির কথা বলছো। তুমি লক্ষ্য করলে দেখবা, তোমার স্মার্টফোনে ঘড়ির বিজ্ঞাপন চলে আসছে। তাছাড়া ডাটা নিয়ে তো ফেসবুকও কেলেঙ্কারিতে জড়ায়া গেলো কয়েক বছর আগে। এই সিস্টেমে তুমি একটা দেশের মানুষকে সবদিক থেকে পরিচালিত করতে পারবা। তুমি ভোটিং সিস্টেম থেকে সরকার কিংবা মানুষের ব্যক্তিগত চয়েজ আর চাহিদাকেও ম্যানুপুলেট করতে পারবা। অরওয়েলের '১৯৮৪' উপন্যাসটাতে যে বলা হইছিল, বিগ ব্রাদাররা দেখতেছে সব। সেইটা তো এখন পুরাপুরি বাস্তব হয়ে গেছে। '১৯৮৪' বইটা পড় নাই তোমরা?
বিশু এবং শামীম দুজনেই না-বোধক ঘাড় নাড়ে। রাধা হেসে বলে, সমস্যা নাই। বইটা পড়ে দেইখো। আর ইনফরমেশন বিজনেসের কথাটাও ভেবে দেখো। আচ্ছা, তোমরা তো ফান্ডামেন্টালিস্ট দলের হয়ে রাজনীতি কর, তাই না?
বিশু চোখ বড় বড় করে বলে, এইটা আবার কী? আমরা হইলাম প্রাচীনপন্থী-পার্টি, এইটাই জানি কেবল। আমাদের দলের শ্লোগানটাও জানি। পরিবর্তন নয় প্রপাগাণ্ডাই প্রগতি। নারায়েতকবির... আল্লহুআকবর...
রাধা একটু মুচকি হেসে বলে, ঐ দলই বর্তমানে এইদেশে ফ্যানাটিক। মানে একটু বেশি রক্ষণশীল আরকি। যদিও এই দেশে পুরাপুরি সেকুলার কেউ নাই। এই দেশের রাজনীতি শুরুই হইছিল তো রক্ষণশীল মানসিকতা থেকে। তোমরা দেখো, দেশের সবচেয়ে পুরাতন পলিটিকাল পার্টি যেইটা, সেইটা কিন্তু ধর্মীয় পরিচিতি থেকেই জন্ম নিছিল। মানে চেতনাবাদী-পার্টির কথা বলতেছি আরকি। তারপর অবশ্য এই পার্টি কিছুটা সেকুলার হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে খুব বেশি যে সফল হইছে তা না। এরা আসলে মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে। ডান, অতি ডান, বাম সবাইকেই চেতনাবাদী’রা আপন করে নিছে। এখন দেখো, ইনফরমেশন টেকনোলজি বিষয়টা কেমন আশ্চর্যজনক বিষয়। ওরা কিন্তু ক্ষমতায় টিকে আছে এই ইনফরমেশন টেকনোলজি দিয়েই। সারাবিশ্বে ওদের একরকম গুড-উইল তৈরি করছে এই ইনফরমেশন ছড়িয়ে। আচ্ছা আরেকটা জিনিস দেখাই তোমাদের।
এই কথা বলে রাধা কয়েকটা পুরাতন পত্রিকা খুলে দেখালো, প্রত্যেকটিতে একটা পুরো পাতা জুড়ে বিশেষ ধর্মীয় প্রচারণা। কেবল একটাই ধর্ম সম্পর্কে লেখা। নানান নিয়ম-কানুন এবং ধর্মীয় নীতি। পত্রিকা থেকে কোটেশন করা একটা লাইনও পড়ে শোনালো।
" আল্লাহ কখনো কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে।"
সুরা আর রাদ: ১১ থেকে পত্রিকায় কোটেশন করা হয়েছে।
রাধা বলে, দারুণ একটা কথা। আমার সত্যিই খুব ভালো লাগছে কথাটা। মানুষকে সত্যিই নিজের অবস্থার পরিবর্তন নিজেকেই করতে হয়। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ গীতার মূল ম্যাসেজটাও ঠিক এইটাই। এখন দেখো পত্রিকাগুলা কিন্তু সেকুলার না। তারা নির্দিষ্ট একটা ধর্মকে প্রমোট করতেছে। সেকুলার হইলে কিন্তু অন্য ধর্মগুলার কথাও একই পাতায় জায়গা পেতো। কিন্তু পায় নাই। কারণ কনজিউমার বেশি কোন ধর্মের? সেইটা পত্রিকাওয়ালারা জানে। একই রকম ঘটনা অন্য সকল ফ্যাসিবাদী দেশে ঘটতেছে। ভারতেও ঘটতেছে। তাছাড়া এই রকম প্রচারণার আরেকটা দিক হলো, তুমি অন্য ধর্মের হইলেও কিন্তু তোমার সামনে ইনফরমেশন চলে আসতেছে। তুমি কিন্তু কোনো না কোনোভাবে একটু হইলেও ম্যানুপুলেটেড হইতেছ। যেমন আমিও হইতেছি। যেমন আমার নাম রাধারমণ হইলেও আমি নিয়মিত পত্রিকা থেকে ধর্মীয় বিশ্লেষণ পড়ি। এইভাবেই শামীম তুমিও একটা ইনফরমেশন টেকনোলজি'র কথা ভাবতে পারো। হয়তো একদিন এরকম ঘটতে পারে যে, এই দেশের সরকার তোমার ইনফরমেশনে বায়াসড হয়ে যাবে। তুমি যেভাবে দেশ চালাইতে চাও, দেশের প্রধানমন্ত্রী না হয়েও তুমি হয়তো সেইভাবেই দেশটা চালানোর কাজ করতে পারবা।
আড্ডার মাঝেই দূরের মসজিদ থেকে যোহরের আযান শোনা গেল। আর এই সময়ই একটা নেড়ি কুকুর রাধারমণের দরজার সামনে এসে দাঁড়াল। শামীম খেয়াল করেছে, এইখানে আসার পর প্রায় প্রতিদিনই এই গেরুয়া রঙের কুকুরটা এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়। আর রাধা তখন কুকুরটাকে খাবার দেয়। খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে চলে যায়। হয়তো রাতের খাবার অন্য কোথাও থেকে জোগাড় করতে চলে যায়। বিষয়টা শামীমের কাছে অদ্ভুত লাগে। অথচ বিষয়টা খুবই ন্যাচারাল। কুকুরদের টাইম সেন্স খুবই তুখোড় হয়। এছাড়া এরা খুব বিশ্বস্তও হয়। সকালের খাবার থেকে বাঁচিয়ে রাখা দেড়টা রুটি রাধা কুকুরটাকে দেয়। শুধু রুটি। অথচ কী যে ভীষণ তৃপ্তি নিয়ে কুকুরটা খাওয়া শেষ করে! দৃশ্যটা দেখে মন ভরে যায়।
কুকুরটাকে খাবার দেয়ার পর রাধা বলে, এই দেখো আড্ডার ধান্দায় রান্না চড়াতে দেরি হয়ে গেলো। চারটা নাগাদ আবার স্টুডেন্টগুলা পড়তে চলে আসবে। এক কাজ করি। আলুভর্তা, ভাত আর ডাল রান্না করি। বেশিক্ষণ লাগবে না। ভালো ঘি আছে স্টকে। আলুভর্তা ঘি দিয়ে মেখে খেতে অমৃত লাগে। খাইছো না ঘি দিয়ে আলুভর্তা?
শামীম বললো, তুমি যেমন খুশি কর। এমনিতেই আমরা দুইজনে তোমারে ভালো প্যারায় ফেলছি!
শামীমের কথা শেষ হতেই বিশুর ফোনে রিঙ বাজতে লাগলো। বিশু ফোনটা ধরে কথাবার্তা শেষ করে শামীমের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বললো, ওস্তাদ কুইক যাইতে হবে। বকুলতলা। সেইখানে হেভি ফাইট লাগছে। চেতনাবাদী-পার্টির ছাত্রসংগঠন নাকি আমগো সংগঠনরে তুলাধুনা করতেছে।
এইসব মারামারি কাটাকাটি শামীমের ভালো লাগে না। তবুও হাই কামান্ডের নির্দেশ। যেতেই হবে। বিগ ব্রাদাররা শামীমকে এইভাবেই ম্যানুপুলেট করে যাচ্ছে দিনের পর দিন। রাধাকে দুপুরের জন্য খাবার রান্না করতে মানা করে শামীম বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল। হাতে একটা কাঁচা বাঁশের লাঠি নিয়ে ওর সাথে বিশুও গেল।
শামীম এবং বিশু চলে যাবার পর, রাধারমণ নিজের জন্য কেবল ভাত আর আলুভর্তা করার প্রস্তুতি নিল। মান্ধাতার আমলের কেরোসিনের স্টোভটায় আগুন ধরাতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে। প্রতিমাসেই রাধা ভাবে, আর নয়! আগামী মাসে নিশ্চয়ই একটা সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবস্থা করতে হবে। এলপি গ্যাসের বর্তমান বাজারে যে দাম, তার জন্যই আর কেনা হয় না। ছোট্ট একটা চুলা আর গ্যাস কিনতে কম করে হলেও হাজার ৪/৫ টাকা লাগবে। এই টাকাটাই ম্যানেজ হচ্ছে না। কেরোসিনের স্টোভ জ্বালিয়ে চাল আর আলু ধুয়ে আগুনে তুলে দিতে দিতে রাধারমণের গতকাল স্বপ্নের কথা মনে পড়লো। খুবই লজ্জাজনক স্বপ্ন। গত রাতে স্বপ্নে রাধা তার ছাত্রীকে দেখেছে। ছাত্রীকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা অপরাধ নয়। তবে রাধার স্বপ্নটা খুবই লজ্জাজনক ছিল। এটাকে অপরাধের মধ্যেই ফেলা উচিত। ছাত্রীটি কেবল ৯ম শ্রেণিতে পড়ে। মানে এখনও নাবালিকা। অবশ্যই নাবালিকা কোনো মেয়েকে নিয়ে স্বপ্নে ফ্যান্টাসিতে ভোগা অপরাধ। এটা প্রথম পর্যায়ের অপরাধ। রাধার এটাই মনে হয়। ছাত্রীর নাম সুলতানা। নামটা মনে পড়লেই রাধার বেগম রোকেয়ার কথা মনে পড়ে। সুলতানা'স ড্রিম নামে রোকেয়ার একটা বই সে পড়েছে। দারুণ একটা বই। সুলতানা প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর রাধারমণের কোচিং-এ এসে ইংরেজি এবং গণিতের ডাউটগুলো সম্পর্কে পড়াশোনা করে। মেয়েটার পড়াশোনায় খুব আগ্রহ। সুলতানার বাবা একজন সবজি-বিক্রেতা। নিজেদের বাড়ির এক চিলতে উঠানে সবজি চাষ করে। সুলতানাও মাঝে মাঝে সাহায্য করে। 'আমার বাড়ি আমার খামার' প্রোজেক্টের সরকারি সহায়তায় 'পারিবারিক পুষ্টিবাগান' করেছিল সুলতানার পরিবার। সেইটাই এখন একমাত্র আয়ের উৎস হয়ে গেছে। আগে সুলতানার বাবা অন্যের জমিতে কামলা দিত। কিন্তুু এখন সেই কাজ করা ছেড়ে দিয়েছে। সুলতানার পড়ালেখার খরচ চলে সরকারি উপবৃত্তির টাকা দিয়ে। মাঝে মাঝে রাধাও খাতা কলম কিনে দিয়ে সাহায্য করে। তবে সরাসরি টাকা কখনোই সুলতানা নেয়নি। বেশ আত্মসম্মান আছে মেয়েটার। সুলতানাও মাঝে মাঝে নিজেদের সবজিবাগান থেকে লাউ শশা বেগুন কুমড়া লালশাক ডাঁটাশাঁক হেলেঞ্চাশাক ইত্যাদি তরকারি রাধাকে উপহার দেয়।
[ পরবর্তী পর্বের জন্য দয়া করে অপেক্ষা করুন]
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।