এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অসীম নন্দনের উপন্যাস: বেঁচে থাকাটাই লিরিক্যাল ( ৬ষ্ঠ পর্ব) 

    asim nondon লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৩ জুলাই ২০২৫ | ২০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • এই চলতি জীবন ঘটনাবহুল
     
    বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে প্রতি বছরই নদী-ভাঙন আর বন্যার কবলে মানুষেরা ভিটেমাটি হারায়। পানির অপর নাম জীবন। ছোট সময়ে প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় আমরা সবাই এই কথা মুখস্থ করি। অথচ পানির অপর নাম যে মরণও হতে পারে তা কখনোই আমাদের বলা হয় না। এমন কি একজন সুস্থ মানুষ যদি খুব অল্প সময়ে মাত্রারিক্ত পানি পান করে, তবে হাইপনেত্রেমিয়া হয়ে সে মারা যেতে পারে। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ঘণ্টায় সর্বচ্চো আড়াই লিটার পানি পান করতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলে সমস্যা দেখা দেবে। অর্থাৎ মাত্রারিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়।  
     
    ভৌগলিক কারণেই বাংলায় প্রতিবছর বন্যার মতন দূর্যোগ আসে। প্রচুর ধান আর জানমালের ক্ষয়-ক্ষতি করে , তবে পানি নেমে যায়। মানুষ যে প্রকৃতিকে জয় করতে পারেনি, এই শিক্ষাটা দিতেই বোধয় এইরকম বন্যা হয়। অথচ বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মানুষ কমাতে পারতো, যদি মানুষ মন থেকে চাইতো। কিন্তু মানুষ তো লোভী। গাছ কেটে উজাড় করে ফেলছে সব। গাছ মানুষের পরম বন্ধু। এই কথাও স্কুলে আমাদের মুখস্থ করানো হয়। তবে ঐ মুখস্থ পর্যন্তই। কারণ আমরা তো সেই জ্ঞানকে কখনো প্রায়োগিক ভাবে ব্যবহার করি না। আমরা পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাই এবং মুখস্থকৃত সকল পড়া পরীক্ষার খাতায় বমি করে দিয়ে এসিডিটি থেকে নিজেদের উদ্ধার করি। সেই কত কাল আগে প্রমথ চৌধুরী 'বই পড়া' প্রবন্ধে লিখে গিয়েছিলেন, এই শিক্ষাব্যবস্থার দুর্বলতার কথা। তা এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারি নাই। 
     
    তবে শোনা যাচ্ছে আগামী বছর থেকে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে। ব্যাপারটা আশা-জাগানিয়া হলেও, কিছুটা কিন্তু থেকে যায়। কারণ আগেই বলেছি,  প্রায়োগিকক্ষেত্রে আমাদের দুর্বলতা অপরিসীম।  
     
    তো এবারও বন্যা হয়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে প্রায় এক দশকের মাঝে রেকর্ড পরিমাণে বৃষ্টির কারণে সেই ঢলের পানি নদীপথে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। আর তাতেই তলিয়ে গেছে বাংলাদেশের  কুড়িগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা এইসব এলাকা। বন্যার কারণে মানুষ বিদ্যুৎ থেকে বিচ্ছিন্ন, মোবাইল নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন মানে মোদ্দাকথা প্রায় সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।  
     
    স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠীর লোকেরা মহা উৎসাহে চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্বে অবতীর্ণ হয়েছে। মানে ত্রাণ সংগ্রহের কাজ আরকি। এরকম ফান্ড রেইজিংয়ে সৎ কর্মঠ হৃদয়বান মানুষ যেমন আছে, ঠিক তেমনি কিছু গোষ্ঠী আছে যারা স্রেফ ধাপ্পাবাজ। আমার একবার মনে হয়েছিল, অন্তত ৫ কেজি চালের টাকা কোনো একটা গ্রুপে পাঠাই। ফেসবুকে এরকম হাজার হাজার গ্রুপ নজরে পড়ছে। কিন্তু ধাপ্পাবাজীর ভয়ে এখনো পাঠাইনি। তবে দুইটা অথেনটিক গ্রুপ পেয়েছি। মনে হয়েছে এরা হয়তো ধাপ্পাবাজি করবে না। তার মধ্যে একটা গ্রুপ হচ্ছে ‘বিদ্যানন্দ’। এই গ্রুপ অনেক বছর ধরে নানান স্বেচ্ছাসেবী কাজে নিয়োজিত আছে। তবে এদের কোনো মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম না থাকায় আমি বিপদে পড়েছি। কারণ আমি পাঠাবো খুবই সামান্য পরিমাণ টাকা। সেই টাকাটা ব্যাংক একাউন্টে পাঠাতে নিজের কাছেই নিজেকে ছোট লাগে। ইনফেরিওর কমপ্লেক্স আরকি। আর ব্যাংকারগুলা যেমন গরিবের প্রতি জাঁদরেল আচরণ করে, তাতে অপমানিত হবার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না। যদিও নিজেই একসময় ব্যাংকে চাকুরি করেছি! যাক সে কথা। পরে অবশ্য ‘বিন্দু’ নামে একটি গ্রুপকে খুঁজে পেয়েছি, যাদের মোবাইল ব্যাংকিং অপশন আছে। আগামীকাল সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা পাওয়ার কথা, সেই টাকাটা পেলেই ভাবছি পাঠিয়ে দিব। 
     
    আজ সকালবেলাতেই মনটা বিষন্ন হয়ে গিয়েছিল। বেলা দশটা নাগাদ চা-সিগারেট খেতে চা স্টলে গেলাম। পথিমধ্যে দেখি একটি বিড়ালছানাকে ঘাতক গাড়ি চাপা দিয়ে চলে গেছে। বিভৎস-ভাবে ছড়িয়ে আছে ডেডবডিটা। আর একটা মা-বিড়াল সেই ডেডবডিটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ মা-বিড়ালটা ডেডবডিটাকে পর্যবেক্ষণ করলো। বার কয়েক ডেডবডিটা কেন্দ্র করে চক্কর মারলো। গন্ধটা শুঁকে দেখলো। পা দিয়ে স্পর্শ করলো। তারপর চলে গেল। হয়তো সে বুঝে গেছে, মায়া করে লাভ নেই ; যে একবার যায় সে আর কখনো আগের মতো ফিরে আসে না। এক্ষেত্রে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্'কে ভেঙচি কেটে বিড়ালটি হয়তো তার ভাষায় মিঁউ মিঁউ করে বলবে, 'চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান, চলে যাওয়া মানেই বিচ্ছেদ'! বিড়ালটি গেলে আমিও তখন টঙ-দোকানে গেলাম। তবে চা খেতে রুচি হলো না, আর আজকে চায়ের দোকানে পাবলিকের আড্ডা শোনাতেও আগ্রহ পেলাম না। তাই কয়েকটা সিগারেট নিয়ে বাসায় ফিরলাম।  
     
    সারাটা দিন কিছুতেই মন বসাতে পারলাম না। খালি সেই মা-বিড়ালের চক্কর মারার দৃশ্যই বারবার ভেসে উঠছিল। নিজেকে বোঝালাম এই বলে, যে পৃথিবীতে মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নাই সেখানে বিড়ালছানাকে নিয়ে মন খারাপ করা সমীচীন না। এত বেশি সেন্সিবল হলে এই দুনিয়াতে টিকে থাকা কঠিন হবে। সন্ধ্যায় সাকুরা বার এন্ড রেস্টুরেন্টে ১টা মিটিং আছে। একজন প্রকাশকের সাথে মিট করবো। আরো হয়তো কয়েকজন লেখক-সাহিত্যিক থাকবেন। তাদের সাথে কিছুটা ড্রিংক করবো। মদ্যপান এবং ছোলাবুট-বাদাম-চিকেন এগুলা সাবাড় করবো। এটাই প্ল্যান। বার হিসাবে সাকুরা তেমন ক্লাসি নয়। অনেক বেশি ভিড় লেগে থাকে। তবে বাঙাল মধ্যবিত্ত কবি-সাহিত্যিকেরা এই সাকুরাতেই বেশি জমায়েত হয়। বারে যাবার পথে বারডেমের সামনে দেখলাম, একজন পাগল রাস্তার পাশে ছটফট করছে। সে যন্ত্রণায় ছটফট করছে নাকি বোঝা গেল না। লোকটার সারা গায়ে ধূলা  আর কাদা। পরনে একটা ছেড়া লুঙ্গি। সেই লুঙ্গিটাকে সে বুক থেকে পা পর্যন্ত ঢাকার কাজে ব্যবহার করছে। লোকটা বারবার রাস্তার দিকে যেতে চাচ্ছে। বারডেম হাসপাতালের সামনে দিয়ে বারবার যাওয়া আসা করছে। আর বড় কোনো গাড়ি দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গভঙ্গি করছে এবং বিড়বিড় করছে আপন মনে। দেখে আমার মনে হলো, পাগল লোকটা মনে হয় সুইসাইড করতে চাইছে। সাকুরার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে আমি মগজ থেকে পাগল লোকটা সম্পর্কে সকল ভাবনা ঝেড়ে ফেলে দিলাম। একটা পাগলকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নাই। আর পাগলরা সুইসাইড জিনিসটা কতটুকু বোঝে, তা নিয়েও আমার সন্দেহ হলো। ড্রিংক করতে করতে প্রকাশককে আমার উপন্যাসের প্লট সম্পর্কে বললাম। বানিয়ে বানিয়ে অনেক কথা  বললাম। উপন্যাস লেখা প্রায় শেষের দিকে তাও বললাম। আলিমের গল্পটা শুনে প্রকাশক একটু শঙ্কিত ভাবে তাকালেন আমার দিকে। বললেন একটু সেন্সর করে লিখতে। চটিবই লিখলে তিনি ছাপতে পারবেন না। আমি তর্কে গেলাম না। আমি শ্লীলতা অশ্লীলতার সংজ্ঞাও কী সে বিষয়েও প্রশ্ন তুললাম না। আমি তাকে আশ্বাস দিলাম, সেরকম কিছু হবে না। তাকে বোঝালাম শব্দচয়নের ব্যাপারে যত্নশীল হবো। প্রকাশক উপন্যাসের অন্যান্য চরিত্রের কথা জানতে চাইলেন। অন্যান্য চরিত্রের কথা তাকে আমি কীভাবে বলবো? খুব বেশি চরিত্র তো আমি ক্রিয়েট করি নাই।
     
    চট করে বিড়ালছানা আর পাগলের কথা মাথায় এলো। আমি বানিয়ে বানিয়ে একটা সুইসাইডাল গল্প কোনো মতে বললাম তাকে। শুনে প্রকাশক ঠোঁট উল্টালেন। প্রকাশক আমাকে উপন্যাসটায় একটু ন্যাকা টাইপের প্রেম ভরে দিতে বললেন। মানে কলেজের পোলাপান কলেজ লাইফের প্রেমের গল্প পড়তে বেশি লাইক করে। এইসব খুন আর সুইসাইড দেখলে তো কলেজের পোলাপানগুলা বই কিনবে না। আমি প্রকাশককে আশ্বাস দিলাম, প্রেমের গল্পও হালকা মশলা আর অল্প আঁচে থাকবে আমার উপন্যাসে। 
     
    রাত ১১টা নাগাদ পুরো মাতাল অবস্থায় রাস্তায় নামলাম। নেমেই প্রকাশক আর অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্যে ভদ্রভাবে উচ্চস্বরে 'বোকাচন্দ্র' বলেই, মনে মনে একটা বাজে গালি দিয়ে লোকাল বাসের জন্য কিছুক্ষণ দাঁড়ালাম। কিছুক্ষণের মাঝেই বুঝে গেলাম বাস পাবো না। তাই হেঁটে বারডেমের সামনে গেলাম। রিকশা বা অটো পাবার আশায়। বারের সামনে থেকে অটো/রিকশা নিলেই ওরা বেশি ভাড়া হাঁকে। মানে ওরা বুঝতে পারে মাতালকে ঠকানো সহজ।  
     
    বারডেম হাসপাতালের সামনে যেতেই দেখলাম পাগলটাকে। নিথর পড়ে আছে রাস্তায়। মগজটা ছড়িয়ে গেছে। বিভৎস এক দৃশ্য আবারো। মাতাল হবার কারণে কিনা জানি না, আমার চোখ ছলছল করে উঠলো। বিচলিত হলাম কিছুটা। হয়তো মাত্রই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। কয়েকজনকে দেখলাম ডেডবডির কাছে ছুটে আসতে। ভিড় জমতে থাকলো। আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রিকশা/অটোর আশা বাদ দিয়ে মোবাইল বের করে একটা উবার বাইককে কল করলাম। বাইকটা হয়তো মাত্র ১০/১৫ ফুট দূরে ছিল। লোকেশন বলতেই চলে এলো। আমিও বাইকে উঠে বসলাম। কোনো কথা নয়। শুধু নির্বাক একবার পিছন ফিরে তাকালাম। শুধু দেখলাম, ছায়া ছায়া শহরের রাস্তার বুকে অচেনা নিশীথের মতো মানুষের জটলা।  
     
    আচ্ছা, পাগলটা কি সত্যি সত্যি জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে সুইসাইড করলো? আচ্ছা বিড়ালছানাটাও কি সুইসাইড করেছিল। অস্বস্তি হতে থাকলো। মদ না খেলে হয়তো এতটা অস্থির হতাম না। সস্তা কেরুতে অনেক বেশি নেশা হয়। দামী ব্র্যান্ড খাওয়ার মতন তো টাকা নেই। তাই দেশি কেরুতেই সেটিসফাই হতে হয়। ত্রাণের যে টাকাটা পাঠাতে চেয়েছিলাম, সেই টাকা দিয়ে মদ খেয়ে উড়িয়ে দিয়েছি। হয়তো ত্রাণে সাহায্যের টাকা আর পাঠানোই হবে না। টাকা ম্যানেজ হলেই তো উল্টাপাল্টা কীভাবে যেন খরচ করে ফেলি। নিজেকে কেমন নর্দমার কীট বলে মনে হয়। প্যারাসাইটের মতন। 
     
    এই চলতি জীবন ঘটনাবহুল ২ 
     
    বাসায় ফিরে মনে হলো নেশা বেশি চড়ে গেছে। এরকম হলে আজকে রাতে তো লেখালেখি করা যাবে না। ফ্ল্যাটমেটের কাছে জানতে চাইলাম, তার কাছে বাবা আছে কিনা। বাবা মানে ইয়াবা। এইটাকে আদর করে বাবা বলা হয়। মারাত্মক ড্রাগসগুলোর মধ্যে অন্যতম। মেথঅ্যামফিটামিন নামক একরকম কেমিক্যাল থেকে ইয়াবা তৈরি করা হয়। প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে এর মধ্যে। তাই বাবা খাওয়ার পর ঘুম খিদা সব চলে যায়। কিছুটা কোকেইনের মতন। বলা যায়, গরীবের কোক! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধরত সেনাদলকে জাগিয়ে রাখার জন্য, চাঙা রাখার জন্য এবং হিংস্র করে তোলার জন্য এই ড্রাগসের উদ্ভব ঘটায় হিটলারের দেশের রসায়নবিদেরা।  
     
    আমার ফ্ল্যাটমেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে নাকি ডাক্তারি পড়ে, তা ভুলে গিয়েছি। আসলে এসব পড়ালেখার মতন বিরস ব্যাপারে আমার ফ্ল্যাটমেট কখনো কথা বলতে চায় না। ফ্ল্যাটমেটের কাছে সবসময় বাবা থাকে, তা আমি জানি। 

    বাবার কথা বলতেই ফ্ল্যাটমেট বললো, আরে বস কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু কয়টা টেকাপয়সা দিয়েন। 
     
    আমি জানালাম, টাকাপয়সা নিয়ে কোনো সমস্যা নাই। কালকে সুমন ভাইয়ের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকা ম্যানেজ হবে। তখন দিয়ে দেয়া যাবে। সুমন ভাই বলে আদতে আমার কেউ নাই। তবে টাকার অভাবে পড়লে আমি সবাইকে বলি, সুমন ভাই টাকা পাঠাবে। এখানে সুমন বলে আমার জানা মতে এমন কোনো দয়ার সাগর নেই, যিনি আমাকে বিপদের সময় টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন! কিন্তু এই অজুহাত আমার মুদ্রাদোষ। ঢাকায় পরিচিত প্রায় সবাই জানে, সুমন আমার গ্রামের বোকাসোকা লোক। যার কাছে চাইলেই টাকা পাওয়া যায়! 
     
     ফ্ল্যাটমেটের ঘরে গিয়ে দেখি ফুয়েল কর্ক সব প্রস্তুত। তার মানে সে আসলে খাওয়ার মধ্যেই ছিল। আমি জানি ফ্ল্যাটমেট হালকা পরিমাণে বাবা বিক্রি করে। খুবই রিস্কি ব্যাপার। এটাও হিটলারের যুদ্ধের একটা ইফেক্ট। ফ্ল্যাটমেটকে জানিয়ে দিতে হবে, এভাবে চলতে থাকলে নিশ্চিত একদিন পুলিশ রেইড মারবে। হয় সে বাসা ছাড়ুক নয়তো আমি ছেড়ে দিব। 
     
    যাক, বাবাকে প্রথমে ফুয়েলপ্যাপারে রাখতে হয় তারপর নিচ থেকে লাইটার মেরে তাপ দিলে ধোঁয়া বের হয়, সেই ধোঁয়া পাইপ দিয়ে সিগারেট টানার মতো টানতে হয়। ভীষণ প্যাচালো এবং কঠিন একটা প্রক্রিয়া। কিছুটা হেরোইনের স্টাইলে তাপ দিয়ে গলাতে হয়। এবং অবশ্যই মারাত্মক আসক্তি এই বাবা। কত কত মানুষ যে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এই ড্রাগস শারীরিকভাবে এবং মানসিকভাবে মানুষকে এক অপরিণামদর্শী ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু আজকে রাতে আমাকে কাজ করতেই হবে। তাই ফ্ল্যাটমেটের কাছ থেকে ১টা ক্লান্তি তাড়ানো বাবা খেয়ে পুরো চার্জ নিয়ে নিজের ঘরে আসি।  
     
    ক্যাফেইনের প্রভাবে নেশাটা কেটে গেছে। ল্যাপটপটা নিয়ে বসি। আর লিখতে শুরু করি। তুখোড় গতিতে একটা প্রচন্ড এনার্কিস্ট গল্প। এই দুনিয়াতে এখন কেবল এনার্কি আর স্বৈরতন্ত্রই কায়েম আছে। এমন একটা ন্যারেটিভ গল্প লিখবো যা বাঙালি হজম করতে পারবে না। আবার গলা'র থেকে নামাতেও পারবে না। এতটাই নৈরাশ্যবাদী নৃশংস গল্প হবে এইটা। তো আলিমের গল্পটা এখনো শেষ হয়নি।  
     
    ---( আলিমের গল্প) ---  

    আলিমের পরশুদিন মানিকগঞ্জের ঘিওরে যাবার কথা। শিকারে যাবার আগে সে অলি মিয়ার টেকে পীর-বাবার সাথে দেখা করতে যায়। বউকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না তার।  
     
    কিন্তু বউ জোর করে বললো, সে যাবেই। অগত্যা আলিম বউকে সঙ্গে নিয়ে পীর-বাবার দরবারে গেল। ঠিক আগের মতন এইবারও আলিম দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলো। আর পীর-বাবা তার বউকে সৎপরামর্শ দিতে লাগলো। এইবার দরজার বাইরে থেকে আলিম চৌকির ক্যাচক্যাচ শব্দ আর ফিসফাস শব্দ শুনতে পেল। এক পর্যায়ে গোঙানির শব্দ বাড়তে থাকলো। আলিমের মাথা দপদপ করছিল। মনে হচ্ছিল পীর-বাবার যন্ত্রই সে কেটে নেবে। আবার সে লক্ষ্য করলো তার মেশিনটা অন হতে চাচ্ছে। অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে দরজার বাইরে থেকে আলিম একসময় লম্বা লম্বা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনতে পেল। এরকম প্রায় আধ ঘণ্টা পর আলিম ঘরের ভিতর থেকে ডাক পেল। ভিতরে গিয়ে দেখলো আগেরবারের মতন এইবারও দুইজনের মুখ কপাল ঘামে চিকচিক করছে। পীরবাবা আলিমকে দোয়া-আশীর্বাদ করে দিল। ফুঁ দিয়ে দিল। আর আশ্বাস দিল, আলিম যদি শিকার না করতে পারে তাতেও সমস্যা নাই। ঢাকা মেডিকেলের মর্গের সাথে তার কন্টাক্ট আছে। ব্যবস্থা করা যাবে। কিছু টাকা লাগবে আরকি। আলিম মনে মনে ভাবে, ঢাকা শহরের প্রায় সব মর্গের ডোমের সাথেই সে যোগাযোগ করেছে। ডোমগুলা আলিমের চাহিদার কথা শুনে হাসে। ওরা মনে করে আলিম পাগল৷ তারপর দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয় তাকে। সে ভাবে, শিকারটা পেয়ে গেলে তো ভালোই। না পাওয়া গেলে, এই পীর-বাবার মেশিনই সে কাটবে। পীর-বাবা আলিমকে বুঝিয়ে বলে, মর্গের থেকে মেশিন কালেকশন করার চেয়ে নিজে শিকার করে মেশিন আনলে বেশি কার্যকরী হয়। শিকার করলে তাগড়া যৌবন লাভ হয়। মর্গের জিনিস ঐরকম হয় না। বাসায় ফিরেই মেশিন বের করে আলিম তার বউকে পিছন দিয়ে সৎপরামর্শ দিলো। বউ পিছন দিয়ে পরামর্শ নিতে চায়নি। কিন্তু আলিম জোর করেই পরামর্শ দেয়। ২/৩মিনিট দেবার পর মেশিন অফ হয়ে যায়। পরামর্শও শেষ হয়ে যায়। 
     
    বউ বলে, তুমি এইরকম কেন? তোমারে কত কইরা কইলাম পুটকি দিয়া পরামর্শ নিতে কষ্ট হয়। কিন্তু তুমি কোনো কথাই শুনলা না। পীরবাবা কিন্তু এমুন না। সে খুব ধীরস্থির হইয়া পরামর্শ দেয়। যেইটা মানা করি সেইটা করে না। আমার কথা শোনে।
     
    আলিম জানে, বউয়ের তেমন কষ্ট হয় না। এইবারই তো আর প্রথম না, এর আগেও সে পুটকি দিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। আর গোসল করার সময় আলিম নিজেই নিজের পেছনে তর্জনী আর মধ্যমা ঢুকিয়ে দেখেছে, তেমন কষ্টের কিছুই ঘটে না।
     
     সে ভাবে, বউটা তাকে অবহেলা করতেই এমন কথা বলে। আলিমের নিজেকে পীরবাবার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয়। নিজের গল্পে নিজেকেই ভিলেন মনে হয়। 
     
    সে চিৎকার করে, চুপ কর শালি খানকি মাগী। পরামর্শ মারাও? আর যদি পীরবাবার কাছে চোদা খাইতে গেছিস, তোর খবর আছে।
     
    আলিমের এরকম স্বভাবের জন্যই তাদের এতদিনেও সন্তান হলো না। এখন শিকার করে আসার পর যদি আলিম ঠিকঠাক পরামর্শ দিতে পারে, তবে হয়তো কিছু একটা ঘটবে। 

    দুজনের মাঝে আর কথা হয় না। দুজন দুদিকে মুখ করে শুয়ে থাকে। ভোরবেলা আলিম মানিকগঞ্জের দিকে শিকারের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। শুয়ে থেকে আলিমের ঘুম আসে না। কিশোর বয়সের কথা মনে পড়ে। তখন বয়স আর কতই হবে? ১৭ কি ১৮ থেকে বেশি হবে না। তখনও তো বিয়ে করেনি। ঢাকায় রিকশা চালানো শুরু করেছে নতুন নতুন। আলিমের জীবনে প্রথম পায়ুকামের স্মৃতি।
     
    একদিন গভীর রাতে রিকশা নিয়ে সে আনন্দবাজারের বস্তিতে ফিরছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে কিছুটা এগোতেই সে দেখল, শাড়ি পরা একটা মহিলা হেঁটে যাচ্ছে রাস্তার ফুটপাথ ধরে। আলিম মনে মনে ভাবলো, দিনের শেষ কাস্টোমার। প্যাডেল চালিয়ে সে পথচারীর পাশে গিয়ে বেল বাজিয়ে জানতে চাইলো, যাইবেন নি?  
     
    পথচারীর জবাবে কণ্ঠস্বর শুনেই আলিম বুঝল, এ আসলে মহিলা নয় হিজড়া। হিজড়া জানায়, তার কাছে রিকশা ভাড়ার টাকা নাই। আজকে তেমন আয় রোজগার নাই। রিকশাওয়ালা যদি তাকে মাগনা নেয় তো সে যেতে রাজী আছে।  
     
    আগে আলিম শুধু শুনেছেই মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে নিশি রাতে হিজড়ারা ভাড়া খাটে। সেদিন সে নিজের চোখে দেখেও ফেলল। সে ভাবে তার গন্তব্যের দিকে হলে মাগনাই নিয়ে যাবে। তাই জিজ্ঞেস করে, যাইবা কই?  
     
    হিজড়াটা জানায়, সে আনন্দবাজারের দিকে যাবে। তখন আলিম তাকে রিকশায় উঠতে বলে। সে জানায় , মাগনাই নিবে। যেতে যেতে এ-কথা সে-কথায় হিজড়াটা জানতে চায়, আলিমের কোন প্রেমিকা/বউ আছে কিনা। 

    আলিম লজ্জায় লাল হয়ে বলে, অইরম কপাল কি আর আছে? প্রেম/বিয়া করতে কপাল লাগে। গরিবের আবর প্রেম!  

    হিজড়াটা বলে, আইচ্ছা গরিবের প্রেমের ভাগ্য নাই মানলাম। তা কুনোদিন কাউরে লাগাইছ?  
     
    কথাটা শুনেই আলিমের মেশিনটা লুঙ্গির ভিতরেই কেঁপে উঠে রিকশার রডে হালকা ঘষা খায়। আলিম বলে, নাহ সেই কপাল কখনো হয় নাই।  
     
    আলিমের কথাটা শুনেই হিজড়াটা খিলখিল করে হাসে। এতে আলিম একটু মন খারাপই করে। এরপর তারা দুজনেই অনেকক্ষণ চুপ থাকে।  

    আনন্দবাজারের কাছাকাছি চলে এলে হিজড়াটা বলে, আজকে থিকা আমি তুমার গার্লফ্রেন্ড। আজকেই তুমার খাতা খুলব। দেখব নে তুমার মেশিনে কতটা গিরিজ আছে! রিকশা ভাড়ার টেকা তো দিতে পারুম না। এই ভাড়ার বদলে তুমারে আজকা অন্য রকমের সুখ দিব।  
     
    কথাটা শুনেই লুঙ্গির ভিতরে ঝুলতে থাকা আলিমের মেশিনটা কেমন যেন ফুঁসে উঠে। এরপর আনন্দবাজারেরই একটা কন্সট্রাকসন বিল্ডিঙয়ে আলিমকে নিয়ে আলিমের প্রেমিকা ঢুকে। রিকশাটা রাস্তার এক পাশে রেখে যায় আলিম। আকাশে তখন দ্বাদশীর চাঁদ। ল্যাম্প পোস্টের আড়াল থেকে কৃত্রিম আলো  তখন  চাঁদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।  
     
    পুরানো প্রেমিকার কথা ভাবতে ভাবতেই আলিমের মোবাইলে এলার্ম বাজে। বিছানা থেকে নেমে হাতমুখ ধুয়ে সে মিশনের জন্য প্রস্তুত হয়।  

    ভোর ৩টায় আলিম গাবতলি থেকে লেবু আর জামালের সাথে একটা পিকাপ ভ্যানে করে ঘিওরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ওরা ৩ জন ছাড়াও অপরিচিত আরো ৫ জন ছিল সেই পিকাপের ছাদে। 
     
    আলিম শোনে হেল্পার ড্রাইভারকে বলছে, ওস্তাদ আদমের ট্রিপ ভালো লাগে না। জ্ঞানের ট্রিপ পাইলে, জ্ঞান খাইতে খাইতে যাওয়া যাইতো। 

     ড্রাইভার হেসে বলে, আজাইরা কথা বাদ দে। ঐদিকের প্যাকেটে দেখ একটা রোল করা জ্ঞান আছে। ঐটা ধরায়া আমারে দে। 
     
    হেল্পারটা একটা সিগারেট ধরানোর পর গন্ধে আলিম বুঝতে পারে, ওরা আসলে গাঁজাকে আদর করে জ্ঞান বলে ডাকছে। ভোর হতেই ওরা ঘিওরে পৌঁছে যায়। তারপর আদাজল খেয়ে ধান কাটার কাজে নেমে পড়ে। কাজের মাঝে একবার একটা ঝোপের আড়ালে প্রস্রাব করতে গিয়ে আলিম লেবুকে দেখে। অন্য একটা ঝোপের আড়ালে লেবু মেশিন কচলাচ্ছে। আলিম মনে মনে টার্গেট করে নেয়। লেবুকেই শিকার করতে হবে। কিন্তু ফাঁদটা কী হবে?
     
    দুপুরের খাওয়া শেষে সবাই যখন আয়েশ করে পান-বিড়ি খেতে খেতে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিচ্ছিল, তখন গল্পে গল্পে লেবু বলে, বিয়ের আগে সে হিজড়া আর কচি ছেলেদের সাথে পরামর্শ করেছে। লেবুর বয়স হবার পর থেকেই নাকি খাই খাই বেশি। সে টানবাজার, দৌলতদিয়া ঘাট, টাংগাইলের বেবিস্ট্যান্ড, ময়মনসিংহের গাঙ্গিনাপাড় সব জায়গাতেই গেছে। তবে হিজড়া আর কচি পোলাগুলার সাথে পরামর্শ করায় তার মেশিন নাকি বেশি সতেজ হয়েছে। এইটা লেবুর বিশ্বাস, লেবু  হিজড়াদের সাথে অন্তত এক-দুইবার পরামর্শ করতে সবাইকে উৎসাহ দেয়। এইসব কথা শুনে আলিমের মাথায় একটা ফন্দি আসে। 
     
    তারা সবাই যে মাঠে ধান কাটছে, সেই মাঠের খুব কাছেই একটা পাটক্ষেত আছে। আলিম ভাবে, লেবুর যেহেতু অভ্যাস আছে তাই তাকে নিয়ে পাটক্ষেতে যাওয়ার টোপ লেবু গিলে ফেলতে পারে। সবাই যখন বাকী ধান কাটার কাজে লেগে গেল, তখন খুব চিকনে আলিম লেবুকে ইশারায় টোপ দিল। 
     
    ধানকাটার চুক্তি হয়েছে, দুই দিনে সব ধান কেটে দিতে হবে তাদের। তাই আজকে রাতে ওরা সবাই জমির মালিকের বাসার উঠানেই রাত্রিযাপন করবে। আলিম তার পরিকল্পনার কথা লেবুকে বলে। সন্ধ্যার পর সবাই বিশ্রাম আর আড্ডায় ব্যস্ত হয়ে গেলে তখন ওরা সেই পাটক্ষেতে যাবে। লেবু এক পায়ে রাজি। বিয়ের পর থেকে যদিও লেবু এখন আর ছেলেদের সাথে পরামর্শ করে না। কিন্তু আজকে তো এইখানে তার বউটাও নাই। 
     
    সন্ধ্যার পর আলিম এবং লেবু নিকটবর্তী বাজারে চা-বিড়ি খাওয়ার অজুহাতে পাটক্ষেতে যায়। আলিম আগে থেকেই সব বন্দোবস্ত করে এসেছে। প্রথমে ভেবেছিল, ক্লোরোফর্ম নিয়ে আসবে। কিন্তু তাতে বিপদ ছিল। কোনোরকমে শিশি ভেঙে গেলে নিজেই বিপদে পরার সম্ভাবনা আছে। তাই সে মলম এনেছে। মলমটা লেবুর চোখে ডলে দিতে পারলেই লেবু কিছুক্ষণ বেকায়দায় পড়ে যাবে। তখন লেবুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলতে হবে আর গামছাটা দিয়ে মুখ বাঁধতে হবে। তা নাহলে চেচামেচিতে সবাই টের পেয়ে যাবে। প্রয়োজনমতো সবকিছু আলিম এনেছে। কাস্তে, মলম, দড়ি আর গামছা। 
     
    পাটক্ষেতে যেতে যেতে লেবু বারবার আলিমের গায়ে হাত দেয়। আলিমের কিছুটা ঘিন্না লাগে। কিন্তু শিকার করতে হলে তো এটুকু সহ্য করতেই হবে। মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। পাটক্ষেতে যাবার পর আলিম লেবুকে মাথা মালিশ করে দিতে চায়। লেবুর অবশ্য মাথা মালিশে তেমন আকাঙ্খা ছিল না। সে কেবল ঝটপট পরামর্শটা করে গিয়ে ঘুমাতে চায়। অনেক খাটুনি গিয়েছে সারাদিন। আরাম দরকার। আর তাছাড়া পাটক্ষেতে মশা অত্যাধিক, অন্য বিষাক্ত পোকামাকড়ও থাকতে পারে। তবে আলিমের জোরাজোরিতে লেবু রাজি হয়।  
     
    মাথা মালিশের নামে আলিম মলমটা লেবুর চোখে কচলে দেয়। চোখের জ্বালাপোড়ায় লেবু হম্বিতম্বি শুরু করে। এর মাঝেই লেবুকে দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধে আলিম। আশ্বাস দেয় এইটা পরামর্শ করার নতুন টেকনিক। লেবু অবশ্য নীল সিনেমায় দেখেছে কয়েকবার। অনেকে এরকম বেঁধে পরামর্শ করে। এদিকে লেবুর মেশিন অন হতে শুরু করে। আর আলিম লেবুর হাত-পা-মুখ সব বেঁধে ফেলে। তারপর তাবুর মতন উঁচু হয়ে থাকা লুঙ্গিটা সরিয়ে মেশিনটাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখে সে। বেশ খাসা জিনিস, এরকমটাই আলিম খুঁজছিল। কয়েক সেকেন্ড বাম হাতে মেশিনটা কচলিয়ে ডান হাতে কাস্তে নিয়ে এক পোঁছে মেশিনটা কেটে ফেলে আলিম। লেবু গগণবিদারি চিৎকার করে। কিন্তু কেউ তার চিৎকার শোনে না। মুখ তো গামছা দিয়ে বাঁধা। রক্তে আলিমের হাত চিটচিটে হয়ে যায়। আলিম এরপর অন্ধকারে লেবুর বিচিটা হাতড়ে আন্দাজে খুঁজে পায়। আর তারপরে সেই বিচি দুইটাও সে কেটে নেয়। 
    ( চলবে )  
     
    এই চলতি জীবন ঘটনাবহুল ৩ 
     
    আলিম খুব ঠান্ডা মাথায় তার টার্গেট হ্যাক করে ঠিকই, তবে হ্যাকিং হয়ে যাবার পর সে ঘাবড়ে যায়। এইটা তো আর কবুতরের মাথা একটানে আলাদা করার মতন ব্যাপার নয়। একটা মানুষকে চোখের সামনে কবুতরের মতো ছটফট করতে দেখলে এমনিতেই বিচলিত হতে হয়। অনেকক্ষণ ছটফট করার পর লেবু নিস্তেজ হয়ে গেল। নাকের কাছে হাত দিয়ে আলিম দেখলো, এখনো লেবুর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। এইভাবে ধুঁকে ধুঁকে না মেরে একবারে গলা টিপে দিলেই হয়তো ভালো হতো, আলিম ভাবে। একবার ভাবে এখন গলা টিপে দিলে কেমন হয়? কিন্তু যা কিছু যন্ত্রণা সব পেয়ে তো লেবু এখন অজ্ঞান হয়ে আছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাঁচতেও পারে। হাসপাতালে নিয়ে যাবে নাকি সেই ব্যাপারে এক মুহূর্ত ভাবে সে। তারপর মাথা থেকে সেই ভাবনা তাড়িয়ে দেয়। হাসপাতালে গেলেই পুলিশের হাতে পড়তে হবে। লেবুকে পাটক্ষেতে সেভাবেই বেঁধে রেখে বড় রাস্তায় আসে আলিম। একটা কালো পলিথিনে মেশিনটা আর বিচিটা নিয়ে সে দ্বিধায় পড়ে যায়। এখনই ঢাকায় ফিরে যাবে নাকি রাতটা সে জামালদের দলের সাথে সেই জমির মালিকের উঠানে কাটাবে? এই কথা ভাবতেই আলিমের মনে পড়ে, ওরা সবাই লেবু এবং আলিমকে একসাথে বাজারে যেতে দেখেছে। এখন তো প্রথম সন্দেহ আলিমকেই করবে। ফিরে গেলে তো সবাই লেবুর কথা জানতে চাইবে। এদিকে হাতটা রক্তে চিটচিট করছে। কেমন একটা গন্ধও লেগে আছে। রাস্তার পাশের এক জলায় গিয়ে আলিম উলঙ্গ হয়ে ডুব দেয়। ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকে। মাথাটা ঠান্ডা করতে চায়। ভয় দূর করতে চায়। কিন্তু মাথা এলোমেলোই লাগে। তাই আলিম জলা থেকে উঠে কোনোরকমে লুঙ্গিটা দিয়ে গা মুছে, লুঙ্গিটা পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রাত কয়টা বাজে? আলিম বুঝতে পারে না। মোবাইলে দেখলেই সময় জানা যায়, কিন্তু শার্টের পকেটে যে মোবাইলটা আছে আলিম সেই কথাও ভুলে যায়। অন্ধকার পথে সে হাঁটতে থাকে। আলিমের মনে হয়, সারাজীবন সে এই অন্ধকার পথেই রয়ে যাবে। কোনোদিন এই রাস্তা ফুরাবে না। এমন সময় আলিমের মোবাইলে কল আসে। বউ কল করেছে। আলিম ফোন ধরে। বউ আপডেট জানতে চায়। আলিম কেবল কোনো রকমে বলে, সে ঢাকায় ফিরছে, সে অন্ধকার রাস্তায় ঢাকায় ফিরে আসছে। 
     
    এমন সময় পিছন থেকে একটা মালবাহী ট্রাক আসতে দেখে আলিম সিগন্যাল দেয়। ট্রাক থামে। আলিম ড্রাইভারকে ঢাকায় পৌঁছে দেয়ার অনুরোধ জানায়। ড্রাইভার ২০০টাকা দাবি করে। কিছুটা দর কষাকষির পর ১২০টাকায় রফা হয়। আলিম ট্রাকে চেপে বসে। মাথার ভিতর যেন সব ফাঁকা হয়ে গেছে। ড্রাইভার একটা গাঁজার স্টিক ধরায়। গাঁজা টানতে টানতে গাড়ি চালায়। স্টিক হাত বদল হয়। হেল্পার টানার পর আলিমের হাতে সে গাঁজা ধরিয়ে দেয়। স্টিকটা নিতে গিয়ে আলিম দেখে, তার নখের মাথায় রক্ত লেগে আছে। সে পাত্তা দেয় না। হেল্পার জানতে চাইলে সে পান-খয়েরের দাগ বলে কাটিয়ে নেয়। স্টিকে টান দেবার পর আলিমের দুনিয়া কেঁপে উঠে। এই প্রথম যে সে গাঁজা খেয়েছে তা নয়, আগেও খেয়েছে তবে এমন নেশা হয়নি কখনো। রাস্তার অন্ধকারে আরো জমে যায় সে। তার মনে হয়, এতক্ষণে নিশ্চিত জামালরা তাদের অনুসন্ধানে বের হয়েছে। লেবুও হয়তো এখন একদম ঠান্ডা নিথর হয়ে গেছে। ওরা কি পুলিশে খবর দিয়েছে? রাজ্যের ভাবনায় আলিম ঠান্ডা হয়ে যায়।  
    গাবতলি পৌঁছাতে পৌঁছাতে ফজরের আযান হয়ে গেল। আলিম ট্রাক থেকে নেমে সোজা নিজের বাসায় হেঁটে গেল। অনেকটা পথ। গাবতলি থেকে আনন্দবাজার। তবু আলিমের কাছে এই পথটা কিছুই মনে হলো না। হাঁটার মাঝেই লেবুর ফোন নম্বর থেকে আলিমের ফোনে কল এলো। একটা শীতলপ্রবাহ আলিমের শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো। ভয়ে আলিম ফোন ধরলো না। বাসায় পৌঁছে বউকে কালো পলিথিনটা দিয়ে সোজা গোসলখানায় চলে গেল সে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত তিব্বত ৫৭০ সাবান ঘষে ঘষে গোসল করলো।  
     
    গোসল করে বের হতেই বউ মিটমিটি হাসি দিয়ে বললো, তুমি তো আসলেই কামেল লোক। মেশিন তুমি শিকার কইরাই আনলা। রাইতের ভাত আছে, পান্তা খাবা? খিদা লাগে নাই? 
     
    আলিম তেমন কোনো কথা বলে না। কেবল মাথা নেড়ে খাবার দিতে বলে। আর মনে মনে সূরা ইয়াসিন পড়ে। এই একটাই সূরা সে ছোটবেলায় মুখস্থ করেছিল। এইটাই বিপদে আপদে তোতা পাখির মতো মুখস্থ আওড়ায়। এই সূরা নাকি বিপদআপদ কাছে ঘেঁষতে দেয় না। বউ পান্তা দেয়। সরিষার তেল, লবণ, কাঁচা মরিচ আর পিঁয়াজ দিয়ে আলিম এক থালা পান্তা খায়। খাওয়া শেষে একটা বিড়ি ধরিয়ে বউকে রেডি হতে বলে। অলি মিয়ার টেকে যেতে হবে। বেশি দেরি করলে মেশিনটা পঁচে যেতে পারে। ফ্রিজেও তো রাখার কোনো বন্দোবস্তো নাই। তাই ওরা দুজনে কালো পলিথিনটা নিয়ে সকাল ৮টা নাগাদ অলি মিয়ার টেকে পীরবাবার দরবারে গিয়ে পৌঁছায়। 
     
    আলিমের মনে হয়, কাটা মেশিনটা দেখে পীরবাবা কিছুটা ঘাবড়ে গেছে। কিছুক্ষণ আমতা আমতা করে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে বলে পীরবাবা। রাতের অমাবস্যায় তান্ত্রিক সাধনায় বসা হবে। আলিমকে সারাদিন রোজা রাখার কথা বলা হয়। যদিও সকালবেলাতেই সে পান্তা খেয়েছে। তবে সারাদিন আর কিছু না খেলেই চলবে। সারাদিন আলিম মড়ার মতো দরবারের মেঝেতে শুয়ে থাকে। বারবার লেবুর যন্ত্রণাকাতর মুখের ছবিটা তার চোখে ভাসে। আলিম কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? 
     
    রাতের অন্ধকারে সকল আয়োজন নিয়ে তন্ত্রসাধনায় বসে পীরবাবা। আলিম এবং পীরবাবা মুখোমুখি। মাঝে একটা পাত্রে মেশিনটা রাখা। পচনের গন্ধ ছড়াচ্ছে। একদম ন্যাতন্যতা আর রক্তে মাখা। প্রথম দেখায় সেই রক্তের কালো দাগে ভরা কালো মেশিনটা যে মানুষেরই কোনো প্রত্যঙ্গ তা বোঝা যায় না। হঠাৎ দরবারে পুলিশের রেইড পড়ে। আলিম দেখে পুলিশবাহিনীর সাথে জামালও এসেছে। দরবার থেকে আলিম আর পীরবাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এবং দরবারকে সীলগালা করে বন্ধ করে দেয়। 
     
    আলিম বুঝতে পারে না পুলিশ কীভাবে দরবারে এলো? এমনিতেই আলিমের মাথা শিকারের পর থেকে কেমন উলটপালট হয়ে গেছে। চোখের সামনে সে মাঝেমাঝেই জ্বীন-ভূত দেখতে পাচ্ছে ।  তার মনে হচ্ছে সে তন্ত্রসাধনায় সফল হয়ে গেছে। হয়তো যৌনসক্ষমতাও বেড়েছে। কারো সাথে পরামর্শ করতে পারলে বোঝা যেত। পীরবাবা এবং আলিমকে একই সেলে রাখা হয়েছে। আলিমের নজর পড়ে পীরবাবার উপর। শয়তানটা তার বউকে পরামর্শ দিয়েছে। সুযোগ বুঝে আলিম কারাগারের ভিতরেই হিংসায়, ক্রোধে, কামে পীরবাবাকে বলাৎকার করে। এই রকম লজ্জাজনক কথা পীরবাবা কাউকে বলতেও পারে না। শুধু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটে। 
     
    ইন্টারোগেশন রুমে আলিম প্রথমদিকে কোনো কথাই বলে নাই। যে পুলিশ অফিসারটি তাকে প্রশ্ন করছিল, তার পাশেই আলিম একটা জ্বীনকে দেখতে পায়। জ্বীন আলিমকে ইশারায় মুখ খুলতে মানা করে। ঠোঁটে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলে। আলিমও চুপ থাকে। এদিকে আদালত থেকে পুলিশ রিমান্ডের অনুমতি পায়। পুলিশ আলিমকে দ্রুত ধরতে পারার কারণ মোবাইল। আলিম তার মোবাইলফোনটি অন রেখে নিজের সাথেই রেখেছিল। আর পুলিশ ট্রাকিং সিস্টেমে দরবারের ঠিকানা পেয়ে সেইখানে রেইড মারে। রিমান্ডে আলিমকে বেধড়ক মার দেওয়া হয়। মার খাওয়ার সময় আলিম দেখে সেই আগুনের তৈরি জ্বীনটা ইন্টারোগেশন রুমেই উপস্থিত আছে। ভয়ে মুখ খুলে না সে। তারপর যখন ডিম-থেরাপি দেয়ার প্রস্তুতি নেয় পুলিশ, ঠিক তখন আলিম হড়বড় করে সব অপরাধ স্বীকার করে নেয়। পুঙ্খানুপুঙ্খ সবকিছুর বর্ণণা দেয় আলিম। সে তার জবানবন্দিতে এটাও বলে, তার সাথে এখন জ্বীনের কথা হয়।  
     
    দেশের নিউজ মিডিয়াগুলোতে এখন আলিমের খবরে সয়লাব হয়ে গেছে। আলিমকে তারা উন্মাদ, অশিক্ষিত, মূর্খ, বর্বর, যৌনলিপ্সু ইত্যাদি আরো নানান ট্যাগ দিচ্ছে। অথচ এই আলিমের আসলে কীভাবে মেটামরফোসিস ঘটলো, তা নিয়ে কেউ কথা বলে না। সিস্টেমই কি আলিম এবং পীরবাবা সৃষ্টি করছে না?  

    ----(শেষ)----   
     
    আলিমের গল্পটা এর থেকে বেশি আর টানতে পারছি না। প্রচন্ড ঘিনঘিনে গল্প। অনেকটা অসংলগ্নও। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশ কি আর এত দ্রুত আসামী ধরে কেস সমাধান করতে পারে? তাও আবার সমাজের খেঁটে খাওয়া গরিব মানুষের প্রতি পুলিশ কি বাস্তবিকই এমন সচেতন থাকে? এখন নিজেকেই মাঝে মাঝে আলিমের ছায়া মনে হয়। মনে হয় আলিমের মনস্তত্ত্ব সম্পর্কে এতকিছু আমি জানলাম কীভাবে? আমার মাঝেও কি অবচেতনে আলিম আছে নাকি। যাক, আলিম ধরা পড়েছে, পুলিশ আর আদালত মামলা-মোকদ্দমার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এটাই স্বস্তি। অনেকেই বলবে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হোক। তবে আমার মতে, আলিমের মানসিক চিকিৎসা দরকার। গুরুতর অপরাধের সাথে যারাই জড়িত হয়, তাদের সবাইকে মানসিক চিকিৎসা করানো উচিত। পৃথিবীর কোনো একটা দ্বীপে তাদেরকে রেখে নিয়মিত মেন্টাল থেরাপি দেয়া উচিত। দেশ-জাতি নির্বিশেষে সকলের জন্য একটাই রিহ্যাভ সেন্টার থাকবে। দেশে দেশে এত এত টাকা খরচ করে কারাগার না বানিয়ে, পৃথিবীর সকল রাষ্ট্র মিলে কারাগারের বদলে সম্মিলিতভাবে কয়েকটা রিহ্যাভ সেন্টার করলে ব্যাপরটা কেমন হতে পারে, তা ভেবে দেখা যায়। রিহ্যাভ সেন্টার হবে কয়েক স্তর বিশিষ্ট। অনুশোচনা হবার আগ পর্যন্ত একটা টাইপের রিহ্যাভে থাকবে। অনুশোচনা হবার পরে আরেক স্তরের রিহ্যাভ সেন্টার থাকবে ক্রিমিনালদের জন্য। আর বাধ্যতামূলক ভাবে সেই সব রিহ্যাভে ভালো বই-পড়া, ভালো সিনেমা দেখা, শরীরচর্চা, হস্তশিল্পের কাজ ইত্যাদি নানান কর্মকান্ডের মাধ্যমে ক্রিমিনালদের মধ্য থেকে অপরাধের প্রবণতাকে একদম জিরো লেভেলে নিয়ে যাওয়া হবে। 
     
    [আগামী রবিবারে আসবে পরের পর্ব। সবুর করুন! হ্যাপী ব্লগিং] 
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন