এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অসীম নন্দনের উপন্যাস: বেঁচে থাকাটাই লিরিক্যাল (৩য় পর্ব) 

    asim nondon লেখকের গ্রাহক হোন
    ২২ জুন ২০২৫ | ৭৩ বার পঠিত
  • কত সুখ পাওয়া হয়ে গেল

    কবি-লেখকদের মূল উদ্দেশ্য আসলে কী? নাম? যশ? খ্যাতি? নাকি অমরতার তৃষ্ণা? আমি দেখলাম, আমার সময়ের অনেক লেখকরাই অলরেডি দুই-চারটা পদক/সনদ/পুরষ্কার বাগিয়ে নিয়েছে। আমার তো এসব হলো না। অবশ্য আমার তো এখনও কোনো বই প্রকাশিত হয় নাই। শুধুমাত্র ভাবনার বেড়াজালেই আটকে আছি।
    নজরুল লিখেছিলেন 'ভাব ও কাজ'। মানে ভাবনাকে কাজে পরিণত করাটাই আসলে চ্যালেঞ্জ। আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এখনও সেরকমই। অনেকে বলে, পুরষ্কার-টুরষ্কার খুবই ক্লিশে জিনিস। মানে আতেল-টাইপ লেখকরা তাই মনে করে। তবে আমার মনে হয় পুরষ্কারের প্রয়োজনীয়তা আছে। এটলিস্ট রিকগনিশন পাওয়া যায় আর কি। যদি রবিঠাকুর নোবেল না পেতেন? তবে কি তাকে এতটা মহান ভাবা হতো? এটলিস্ট এখন যতটা রিকগনিশন করা করা হয়, নোবেল না পেলে তা হতো না। তার মানে আমাকে এমন কিছু লিখতে হবে যাতে রিকগনিশন পাওয়া যায়। আর এইটা হয়ে গেলেই দেখা যাবে কিছু একটা ক্রান্তি আমি করে ফেলছি। আমাদের জমানায় কত লেখকই তো লেখক হতে এসে বড় সাংবাদিক হয়ে গেল। কেউ হলো একাডেমি। আবার কেউ হয়ে গেলো একাডেমির গোলাম।অবশ্য এই ব্যাপার আগের জমানাতেও তো একই রকম ছিল। তখন রাজসভার কবি হওয়াটাই কবি-লেখকদের এইম হতো। এখন তো রাজসভা নাই। তবে রাষ্ট্র আছে।আরো আছে নানান প্রতিষ্ঠান। আর ঠিকঠাক পলিটিকাল লিংকাপ করা গেলে সরকারি খরচে কবি-লেখক হয়ে বিদেশ-টিদেশ যাওয়া যাবে। তার জন্য একটু আপোষ করা লাগবে। এই আরকি।  
    আজকে খবরের কাগজে দেখলাম, একটা লোক যৌনশক্তি বাড়াতে খুন করেছে; এই ঘটনাটা নিয়ে যদি ফিকশন লিখি তবে কেমন হবে? বাঙাল পাঠক কি এরকম গল্প হজম করতে পারবে?
     
    (আলিমের গল্প ১ম পর্ব) 

    ধরা যাক। আলিমের মনটা খুবই খারাপ। প্রতিরাতেই ব্যাপারটা একইরকম ঘটে। বউটাকে যখনই পরামর্শ দিতে যায়, তখনই এই হতাশা আঁকড়ে ধরে আলিমকে।  
    বউ তাকে বলে, কেমন ব্যাটামানুষ তুমি? উপ্রে উইঠাই ন্যাতায়া যাও? আমার তো আগুন জ্বলে। কুয়া তো এহন গাঙ হইয়া গেছে। একটু বড় মেশিন দরকার।আর একটু বেশিক্ষণ পরামর্শ চাই। আমারে কি এই বয়সে অন্য ব্যাটা ধরতে কও তুমি? 
     
    আলিম কথা বলে না। চুপচাপ ইয়াং বয়সের কথা ভাবে। তখন নয়া নয়া বিয়ে হয়েছে। সারারাত আলিম বউয়ের উপরেই থাকতো। একটা জিনসিন খেয়ে সারারাত ৪/৫বার পরামর্শ দিতো। উদ্দাম নৃত্যের মতো। পাগলা কুত্তার মতো। ইস।  
    বউটা তখন শুধু বলতো, যন্ত্র তুমার একটা। তুমি কি মেশিন নাহি? সারারাইত এইরম করলে সকালে কাজ করমু কেমনে? সারাদিন আমার খালি ঝিমানি আহে। শরীল ম্যাজম্যাজ করে। আমি এত আর নিতে পারমু না। তুমি মাগীপাড়ায় যাইয়া কইরা আসবা। 
     সেইটাও একটা সময় ছিল। আর আজ সেই বউ তাকে ধ্বজভঙ্গ বলে।  
    আলিমকে চুপচাপ থাকতে দেখে বউ বলে, শুনো, মন খারাপ কইরো না। বয়স কত হইছে খিয়াল আছে? এই ভাদ্দর মাসে ৫৫ হইবো তুমার। এহন তো আর আগের লাহান পাইবা না। তয় কুলসুমের মা হেইদিন এক পীরের কথা কইলো। পীরবাবায় নাহি খুব ভালা। তুমি যাইবা নাহি একবার? 
     
    শুক্রবার দিন ,আলিম জুম্মার নামাজের পর অলি মিয়ার টেকে যায়। এইটাই সেই পীর বাবার আস্তানা। পীর বাবার সাগরেদকে ১০০০টাকা নজরানা দিতে হয়। সাগরেদ তাকে অপেক্ষা করতে বলে। আলিমের সিরিয়াল নম্বর ৬৯। এখন চলতেছে ৫০ নম্বর। অনেক অপেক্ষার পর আলিমের সিরিয়াল আসে। 
    পীরবাবার ঘরটা ধোঁয়া ধোঁয়া। বিকট সুবাস। আগরবাতি আর আতরের গন্ধ মিশে একটা অদ্ভুত সুবাস ছড়িয়েছে। কেমন নেশা নেশা লাগে। আলিম একটু ইতস্তত করে, তারপর লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিজের সমস্যার কথা পীরবাবাকে বলে।   
    পীরবাবা সব শোনার পর বলে, হুম বুঝছি। বয়সকালে থাকতে আকাম কুকাম বেশি করছো। আর তাই এহন যন্ত্র অচল। যাক। পরের শুক্কুরবার বউকে নিয়া আসবি। আর বউকে বলবি, ভালা কইরা গোসল কইরা আইতে। নাপাক যেন না থাকে।  
    পরের শুক্রবারে আলিম আবারো যায়। বউকে নিয়ে যায়। এইবার অবশ্য সিরিয়াল আগেই পেয়ে যায়। পীর বাবা আলিমকে দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। আলিমের বউ পীর বাবার ঘরে একা থাকে। অনেকক্ষণ পর আলিমের ডাক পড়ে। ঘরে গিয়ে দেখে পীর বাবা আর তার বউ দুজনেই একদম ঘামে ভিজে চিকচিক করছে। আলিম বুঝতে পারে এতক্ষণ কী ঘটনা ঘটেছে বন্ধ ঘরের ভিতরে!  আলিমের মাথা ভন ভন করতে থাকে।  
    পীর বাবা নিজের কপালের ঘাম মুছতে মুছতে মুচকি হেসে বলে, বাড়িত যাইয়া বউরে জিগাইস কেমন সৎ-পরামর্শ দিছি! তুইও আবার পারবি একদিন। আর শোন, তোর সমস্যার একটাই সমাধান আছে। একটা তাগড়া ধোন আর বিচি লাগবো। ২০/২১ বছর বয়স্ক পোলার যন্ত্র। একটা অমাবস্যার রাইতে তুই যদি এমন ধোন আর বিচি কেটে আমার কাছে আনতে পারস, তাইলেই তুই আবার জোয়ান হইতে পারবি। 
    আলিম আর তার বউ বাড়িতে ফিরে শলাপরামর্শ করে। পীর বাবা যে কথা বললেন তা সত্যি সত্যি সম্ভব কিনা।  
    আলিম জিজ্ঞেস করে, কেমুন লাগলো বলতো? পীর বাবা কি খুব সুখ দিছে? 
    বউ লজ্জায় বেগুনি হয়ে বলে, ইস! আমার শরম করে! ব্যাটার যন্ত্রটা তুমি যদি দেখতা না একবার? কালা কুচকুচা আর এই হোতকা। শুনো, তুমি ঠিক ঐরম একটা কালা হোতকা যন্ত্র কাইটা নিয়া পীর বাবার কাছে যাবা নাহি? 
    আলিমের ঈর্ষা জাগে। সে মুখ ঝামটা দিয়ে বলে, ইহ মাগীর আবার শরমও লাগে! চিত হওয়ার সময় তো সব ভুইলা গেছিলি। খানকি কুনহানকার! 
    বউ মুখ নিচু করে থাকে। তার সত্যি সত্যি লজ্জা লাগে। কিন্তু ঐসময় পীর বাবা এমনভাবে কথাগুলা বলছিলো যে, সে আর লোভ সামলাতে পারে নাই। আর যখন ঐরকম হোঁতকা একটা মেশিন তার সামনে লকলক করছিল তখন সত্যিই অন্য সব কিছুর কথা সে ভুলে গিয়েছিল। সতীত্বের যে গর্ব তার ছিল, সেই সতীত্ব কীভাবে যে হাওয়ায় মিলায়ে গেল!  
    বউ বলে, এহন ঐসব কথা বাদ দেও। তুমি কি আমাবইস্যার রাইতে পীর বাবার কাছে যাইবা? 
    (চলবে)  
    এই পর্যন্ত গল্প লেখার পর কাল ঘুম পেয়ে গিয়েছিল। লিখতে ভালো লাগছিল। একটা থ্রিল পাচ্ছিলাম। ফজরের আযান শুনে ঘুমাতে গেলাম। ভাবলাম বাকীটা পরে লিখবো।  
    ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখি আলিম বিড়ি টানতে টানতে আমায় বলছে, বাকীটা কহন লেখবেন? সকাল হয়া গেছে তো। তাড়াতাড়ি শুরু করেন। 
     আমি ঘুমের মাঝেই বিড়বিড় করে বললাম, কী ব্যাপার আলিম? তুমি রিকশা চালাতে না গিয়ে এইখানে কেন? যাও কাজ কর।  
    আলিম বলে, রিকশা বাইর করতে মন চাইতাছে না স্যার। একটা মেশিনের খোঁজ করতাছি। আপনে তো সবই জানেন। তাই না? তা আপনের মেশিনটা কেমন স্যার? হারবালের বিজ্ঞাপনে যেমুন কয় আগা মোটা গোড়া চিকন; ঐরম নাকি?  
    কথাটা বলেই আলিম ফিচফিচ করে হাসতে লাগলো।  
    আমার নিজের কাছেই বিষ্ময়কর লাগলো। আমার বানানো চরিত্র আমাকেই স্বপ্নে টার্গেট বানাচ্ছে নাকি। গল্পের এত ডিপে চলে গেলে তো বিপদ। এত ডিপে গেলে পরে গল্পের জীবন থেকে আর বের হওয়া যাবে না। চরিত্রগুলা কল্পনার থেকে উঠে এসে আমার বাস্তবিক জীবনে ঢুকে যাবে। ঘুমের মধ্যে থেকেই আমার গলা শুকাতে থাকলো। আমি আমার ফোনের রিংটোন শুনতে পাচ্ছি। ধীরে ধীরে তীক্ষ্ণ হচ্ছে।  
    আমি আলিমকে বললাম, তুমি তোমার স্রষ্টাকে অসম্মান করতে পারো না। আমার কথার বাইরে তুমি এক পা-ও যেতে পারবে না।  
    আলিম দাঁত বের করে হেসে বলে, ইহ! স্রষ্টা মারাইছে। গরিব মাইনষের আবার খোদা আছে নাহি? আর তাছাড়া আমি তো ইবলিশ!  
    ঠিক এসময়ই আমার ঘুম ভেঙে গেল। সচেতন হতেই দেখি মা ফোন করেছে। ঘড়িতে পৌনে ১১টা বাজে। হাই তুলতে তুলতে মায়ের ফোন ধরলাম। দেরি করে ঘুম থেকে উঠার জন্য একটু বকাঝকা খেতে হবে। জানা কথা। বাসি মুখে বকা খাওয়ার অভ্যাস সেই ছেলেবেলা থেকেই রপ্ত হয়ে গেছে। ফোনের কথা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে লিখতে বসলাম। গল্পটা শেষ করা লাগবে। কেমন যেন একটা কিক দিচ্ছে ফিকশনটা। দেখি গল্প তার ডালপালা কোনদিকে মেলে ধরে।   
    (আলিমের গল্প ২য় পর্ব)  
    আলিম প্রতিদিন রিকশা নিয়ে বের হয়। রিকশা চালায় আর টার্গেট খোঁজে। তার মাঝে একজন আদিম শিকারী তাকে উন্মাদ করে তোলে। আনন্দবাজার এরিয়াতে তেমন ভালো টার্গেট পাওয়া যায় না। এখানে নিরিবিলি নাই। কংক্রিটের দালানে ঘেরা ঘুপচি অলিগলি রাস্তা। ক্ষ্যাপ মারার পাশাপাশি রাস্তার পাশের টঙ-দোকানগুলাতে বসে বসে চা-বিড়ি খায় আর অন্য কাস্টোমারদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে। দিন যায়। সপ্তাহ যায়। টার্গেট মেলে না। একদিন বিকেলে রোদ পড়ে গেছে তখন। আলিমের ডিউটি-টাইম শেষ হয়েছে। সে রিকশাটা গ্যারেজে জমা দিয়ে এসে টঙ দোকানে বসলো। সে ভাড়ায় রিকশা চালায়। শিফটিং হিসেবে ভাড়া নেয়। ভোর ৬টা থেকে বিকেল ৩টা। মালিককে প্রতি শিফটে ভাড়া বাবদ দিতে হয় ২৫০ টাকা। কপাল ভালো থাকলে পকেটে কোনো কোনো দিন ৫০০/৭০০ টাকা থাকে। আর মন্দ হলে সারাদিনের খোরাকি ২০০/২৫০ টাকা মেলে। তো আলিম বসে বসে একটা পাইলট সিগারেট টানতে লাগলো। চায়ের পানি হতে টাইম লাগবে। চুলা মাত্রই ধরানো হয়েছে। জ্বালানির দাম বেশি হওয়ায় দুপুরের দিকে দোকানের চুলা বন্ধ রাখা হয়। এই সময় আলিমের পাশে বসা দুইজন কথা বলছে। আর আলিম নিবিড় আগ্রহে সিগারেট টানতে টানতে তা শুনছেে। কথা শুনে বোঝা গেল, বক্তা দুইজনই রিকশাচালক। একজনের হালকা গোঁফ আছে। আর আরেকজন উষ্কখুষ্ক দাঁড়ি। কথার ভাবে আলিম বুঝলো গোঁফওয়ালার নাম জামাল আর উষ্কখুষ্ক দাঁড়িওয়ালাটা হলো লেবু।  
    লেবু জামালকে বলল, আর কী কমু কও তো? বাজারে তো আগুন লাগছে। দাম শুনলেই মাথাডা ঘুরে। আমরা আর কি বেশি কিছু চাই নাহি? এই মুটা ভাত মুটা কাপড় পাইলেই তো খুশি। কিন্তু সেই মুটা ভাতের চাউলের কেজি ৫৫ টেকা। তাইলে গরিবে খাবো কী? মাছ, ডিমের দাম দেখলেও জ্বর আহে। গোস্তর কথা তো বাদই দিলাম। এই শরীলডা টিকায়া রাখবার চাইলে তো দৈনিক ১টা ডিম লাগে। কিন্তু ডিমের হালি ৫০টেকা। বাল, ডিউটি সাইরা ঘরে গিয়া যে বউরে একটু লাগামু, তাও পারি না। প্যাটে কিছু না থাকলে তো চ্যাটেও জোর পায় না। গরীবের আছে কী? এই প্যাটটা আর চ্যাটটাই তো! 
     জামাল উত্তর দেয়, হ মিয়া। খুবই খারাপ অবস্থা। যন্ত্রডা তো শুকায়াই যাইতাছে। তা এগুলা আলাপ পরে হইবো নি। ধান কাটার মৌসুম তো চইলা আসলো। গ্রামে যাবা নাহি? আমি যামু পরশু। কয়েকদিন কামলা দিয়া আহিগা লও। কয়ডা দিন গ্রামেও থাকা যাইবো। কয়ডা টেকা পকেটেও আইবো। 
     লেবু জামালের কথায় সম্মতি দেয়। গ্রামে যেতে হবে এই বিষয়ে সহমত পোষণ করে।  
    আলিম মাঝখান থেকে টার্গেট খুঁজে পাওয়ার ভীরু সম্ভাবনায় জানতে চায়, তুমগো গ্রামে কামলার খোরাকি কত কইরা এই সিজনে?  
    যেন আলিমও কামলা দিতে আগ্রহী। যেন প্রতি বছর সে-ও এইরকম কামলা দিতে যায় এমন একটা ভাব নিলো সে।  
    জামাল উত্তর দিলো, দৈনিক ১০০০ টেকা আর একবেলা খাবার। তুমারও যাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি? 
     আলিম জানতে চায়, জায়গাটা কুনহানে? 
     লেবু বলে, মানিকগঞ্জ। ঘিওরে। 
     এই সময় চা হয়ে গেল। দোকানি সাবাইকে কনডেন্সড মিল্কের দুধ চা দিল। চায়ে চুমুক দিয়ে আলিম বললো, ওহ আইচ্ছা। যাওন যায়। মানিকগঞ্জে তো আমি কুনোদিন কামলা দিতে যাই নাই। আমার বাড়ি সিরাজগঞ্জ। ঐদিকেই গেছি সবসময়। অইদিকে খোরাকি কম। তাইলে তুমরা যদি নিতে রাজি থাকো আমি যামু। তয় থাকার ব্যবস্থা হইবো কেমনে? 
     জামাল বলে, আরে এগলা নিয়া টেনশন নাই। তুমি তাইলে তুমার ফুন দিয়া আমারে একটা কল দেও। আমরা পরশুদিন গাবতলি থিকা রওনা দিমু। ভোর ৩টার দিকে যামু। রেডি থাইকো। 
    আলিম জামালের ফোন নম্বর নেয় এবং বিদায় নিয়ে বাজারে যায়। কাঁচাবাজার থেকে আলু, পিঁয়াজ, মসুরডাল, মিষ্টি কুমড়া আর হাঁসের ডিম কিনে, তারপর বাসায় যায়। মিষ্টি কুমড়া দিয়ে হাঁসের ডিম অতি সুস্বাদু খাবার। খাবারের কথা ভাবতেই আলিমের খিদে আরো বেড়ে যায়। 
    (চলবে)  
     
    এই বিভক্ত পৃথিবীতে  

    ইউনিসেফের কর্মী হিসেবে লিনা প্রথম বাংলাদেশে আসে। পুরো নাম লিনা কস্টেনকো। বাবা-মা কবিতা ভালোবাসতেন। শখ করে তাই একজন প্রতিভাবান ইউক্রেনিয়ান কবির নামে তার নাম রাখা হয়। যদিও কবিত্বের তেমন বিকাশ তার মাঝে কখনো ঘটেনি। লিনা এসেছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে। কক্সবাজারের উখিয়া শরণার্থী শিবির তার কর্মস্থল। সেখানকার পিছিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা মানুষগুলোকে স্বাস্থ্যসচেতন করে তোলা ছিল ইউনিসেফের প্রোজেক্টগুলোর একটি। এই প্রোজেক্টেই লিনা ফটো জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করে ।  
    পৃথিবীর সবচেয়ে নিগৃহীত জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হিসেবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ঘোষণা করেছে ইউনিসেফ। সেই ১৯৭০ সাল থেকেই মায়ানমার সরকার তাদের উপর জুলুম করে আসছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসে মায়ানমারের সামরিক জান্তা রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু করে। সেই গণহত্যা থেকে রেহাই পেতে প্রায় ১১লাখ থেকেও বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। 
     
    লিনা সারাদিন ক্যাম্পে কাজ করে। সন্ধ্যে নাগাদ প্রচন্ড ক্লান্তি নিয়ে সমুদ্রে গিয়ে বসে। একটা চিলড বিয়ার খেতে খেতে সমুদ্রের গর্জন তাকে সারাদিনের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়। লিনা'র নস্টালজিক লাগে। ধীরে ধীরে ফেলে আসা জীবনের কথা মনে পড়ে। লিনার জন্ম লভিভ এর এক শহরতলিতে। তার বাবা কৃষক। তাদের প্রচুর কৃষিজমি আছে। প্রচুর গমের চাষ হয়। বিশ্বের কাছে তার দেশ ইউক্রেন আদতেই 'রুটির ঝুড়ি' নামে পরিচিত। সমুদ্রের ঢেউয়ে চেপে কত কত ছেলেবেলার স্মৃতি ভেসে আসে তার কাছে। অথচ পরিবার থেকে কত কত দূরে আছে সে। ভিন্ন দেশ ভিন্ন ভাষা ভিন্ন ভিন্ন সব। খুব বেশি আবেগে পেলে মা-কে হোয়াটসঅ্যাপ করে। মা জেগে থাকলে হঠাৎ হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কল আসে। কিছুক্ষণ এটা সেটা কথা হয়। এভাবেই চলছিল। মাঝে একবার ছুটি নিয়ে লিনা দেশে গিয়েছিল। দিন ১৫ থেকে ফিরে এসেছে।  
    উখিয়া ক্যাম্পে কাজ করতে করতে সেখানকার রোহিঙ্গাদের দলনেতা ইদ্রিসের সাথে লিনার পরিচয় ঘটেছে। ইদ্রিসের কাছ থেকে সে জানতে পারে, একটা বিশেষ মহল ক্যাম্পের মধ্যে মাদক এবং নারীপাচার ব্যবসা শুরু করেছে। অভাবের মধ্যে কত বিধ্বংসী হতে পারে মানুষের জীবন! লিনা ভেবেছিল, এইসব বন্ধ করতে হবে। ভাবতে ভাবতেই একদিন খবর পায় ইদ্রিসকে হত্যা করা হয়েছে। লিনা সতর্ক হয়ে যায়। ভিন্ন দেশে কাজ করতে এসেছে সে। বেশি জড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। এখানকার তো হালহকিকত তেমন বোঝে না সে। তাই সে তার রুটিনমাফিক কাজগুলোতেই আবার মনোযোগী হয়। অথচ এই পেশাতে লিনা এসেছিল মার্থা গেলহর্ন'কে ভালোবেসে। মার্থা ইতিহাসের প্রথম নারী যুদ্ধ-সাংবাদিক। মার্থা ছিল একসময় লিনার অনুপ্রেরণা। এখনও লিনা অনুপ্রাণিত হয়। মার্থা, যে কিনা স্প্যানিশ সিভিল ওয়্যার থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এমনকি ভিয়েতনাম যুদ্ধকেও কভার করেছিল ; একজন অসমসাহসী নারী, যিনি মৃত্যুকে ভয় পেতেন  না। মার্থা ইতিহাসের এমন এক নারী যে কিনা ক্যামেরা নিয়ে ঢুকে গিয়েছিলে কনসেনট্রেশান ক্যাম্প আর ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের সুরঙ্গের ভিতর; আর সত্যকে তুলে এনেছিল পৃথিবীর মুখোমুখি। অথচ লিনা মৃত্যু-ভয়ে ভীত হয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আনটোল্ড স্টোরিগুলো স্রেফ এড়িয়ে যায়। মাঝে মাঝে লিনার খারাপ লাগে। মেরুদণ্ডহীন লাগে। অথচ এভাবেই দেখতে দেখতে কীভাবে যে তিন বছর কেটে গেছে , লিনা সময়ের এই পাগলা ঘোড়াকে মেলাতে পারে না।  
     
    লিনার বয়ফ্রেন্ড ইভান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। লিনার পথ চেয়ে আছে সে। কবে লিনা আবার লভিভে ফিরে যাবে সেই অপেক্ষাতেই আছে। অপেক্ষা ফুরায় না। অপেক্ষা যেন পাথরের মতো নিশ্চল। বরফের মতো শীতল। গলতে চায় না। খুব ধীরে ধীরে গলে অপেক্ষার বরফ। ইদানিং অধৈর্য হয়ে উঠেছে ইভান। যখনই হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়, তখনই জানতে চায় কবে ফিরবে লিনা? কোনো কিছু মানতে চায় না। চাকরি ছাড়তে হলে ছেড়ে দিতে পারে লিনা। ইউনিসেফ যদি তাকে বাংলাদেশেই আটকে রাখতে চায়, তবে লিনা এই চাকরি ছেড়েই দিক। ইভান নিজে তো কাজ করছে। কিছুদিন ইভানই চালিয়ে নিতে পারবে। তারপর না-হয় লিনা নতুন কোনো চাকরিতে ঢুকে যাবে। এইসব কথা শুনে লিনার মন ছুটে যায়। লিনাও মনস্থির করে ফেলে। যদি ট্রান্সফার না হয় তবে ছেড়েই দিবে। আর কন্ট্রাক্ট রিনিউ করবে না। তার কন্ট্রাক্ট শেষ হবার সময়ও হয়ে এসেছে। ফেব্রুয়ারি মাসটা শেষ হলেই চুক্তি শেষ হবে। এদিকে ইউক্রেনের অবস্থাও উত্তপ্ত। মহামারীর ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া চোখ রাঙাচ্ছে। রাশিয়া চায়, আমেরিকা এবং ইউরোপের গণতান্ত্রিক সিস্টেম থেকে ইউক্রেনকে বাইরে রাখতে; ন্যাটো থেকে দূরে রাখতে; আর নিজেদের সাথে ইউক্রেনকে যুক্ত করে নিতে। তবে ইউক্রেন তা চায় না। রাশিয়া বেশ কিছু সময় ধরে সীমান্ত-এলাকা নিয়েও ঝামেলা করছে। প্রতিবেশী দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভীষণ বৈরি-ভাব চলছে। তবে এই সময় বিশ্বের কেউই যুদ্ধ চায় না। এই ভরসাতেই লিনা ভাবছে, রাশিয়ান বিগ শট হম্বিতম্বি যতই করুক যুদ্ধ হয়তো লাগাবে না। লিনা তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে মেইল করে। ইউক্রেনের অফিসেও মেইল করে। সে জানায়, বাংলাদেশে কাজ করার চুক্তি শেষ হলে সে আর চুক্তিটা রিনিউ করতে চায় না। যদি ইউক্রেনের অফিসে কোনো সুযোগ থাকে, তবে সেখানেই সে জয়েন করতে চায়। মেইলটা দেয়ার পর কেমন একটা অবসাদ লাগে লিনার। যেন বুকের উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেল। এখন কেবল ফিরতি মেইলের অপেক্ষা করা। আর ধীরে ধীরে দেশে ফিরে যাবার প্রস্তুতি। প্রতিদিনই ইভান এয়ার-টিকেটের দাম দেখে ওয়েবসাইটে, আর লিনাকে হোয়াটসএপে জানায়। আগে আগে কেটে রাখলে খরচ একটু কম হবে। কখনো কখনো বিশেষ অফারও পাওয়া যায়। ইকোনমি ক্লাশের একটা টিকেট হলেই হলো। এদিকে ২১ তারিখ চলে গেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। লিনার ভাবতে অবাক লাগে। এই কালো কালো অলস বাঙালিগুলো কীভাবে ভাষার জন্য এমন সংগ্রাম করলো? এই যে ২১ ফেব্রুয়ারি সারাবিশ্বে এখন পালন করা হয়, এই মানুষগুলো যদি সেই মুভমেন্ট না করতো, তবে কি আর ভাষার এই মহিমা এভাবে প্রচারিত হতো? লিনার একটাই বাংলা গান ভালো লাগে। মাঝেমাঝে একা একা গুনগুন করে সে গায়। বাঙলা যদিও পরিষ্কার বলতে পারে না। তবু গুনগুন করে। "ওরা আমার মুখের কথা কাইড়া নিতে চায়"। এই একটা লাইনই। লিনা বলে,"ওরা আমা মোকের কটা  কাড়া নিতে চায়।"
     
    লিনার বাঙালি সহকর্মীরা ওর মুখে এই গান শুনলে খুশি হয়। একদিন এক সহকর্মীর কাছ থেকেই সে গানটার লিংক পেয়েছিল। সন্ধ্যার পর সেইদিন লিনার সাথে সেই সহকর্মীও সমুদ্রে গিয়েছিল। দুজনেই চিলড বিয়ার খেতে খেতে সেই গান শোনে। তারপর থেকেই লিনা এই গানের ভক্ত। গুগল অনুবাদে গানের লিরিকের মানেও সে জেনে গেছে। জানার পর আগ্রহ তার আরো বেড়েছে। কিন্তু ২১তরিখ তো চলে গেলো। এখনো কেন্দ্রীয় অফিস থেকে মেইল এলো না। আর এক সপ্তাহ আছে। তাকে তো এয়ার-টিকেট ম্যানেজ করতে হবে। অস্থির লাগে লিনার।  
    এদিকে বাংলাদেশের সরকারপক্ষ রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা আরো একটা সুসজ্জিত ক্যাম্প গড়ে তুলেছে। সেই ক্যাম্পের জন্য শরণার্থী সংগ্রহের কাজ চলছে। নিজের দেশ না থাকলে যে কীভাবে জীবন চলে, তা এই রোহিঙ্গাদের না দেখলে লিনা কোনোদিন বুঝতো না। তার নতুন রকম বোধদয় হয়েছে এখানে এসে। 
     
    (চলবে...)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন