এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • অসীম নন্দনের উপন্যাস: বেঁচে থাকাটাই লিরিক্যাল (শেষ পর্ব) 

    asim nondon লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ আগস্ট ২০২৫ | ৬৬ বার পঠিত
  • পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত মানুষের বিবেক
     
    বড় ঈদের নামাজ শেষ করে সৈকত বাড়ি ফিরছে। ফেরার পথে রাস্তার পাশের এক জলার মধ্যে সৈকত দেখলো, অনেক শাপলা ফুটে আছে। জাতীয় ফুল শাপলা। পিঙ্ক কালারের শাপলা। সৈকত ভাবলো, আচ্ছা পিঙ্ক কালারটাই তো গোলাপি রঙ? একটা প্রশ্নবোধক মনের মধ্যে নিয়ে সৈকত বাড়ির পথে হাঁটে। 
     
    রাস্তার দুইপাশে দিগন্তরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত আবাদি জমি। আব্বা মারা গেছেন, এক বছর হয়ে গেছে। গত বছর তো সৈকত ঈদের নামাজেও যায়নি। এবার অবশ্য সেই দুঃখবোধটা বেশ হালকা হয়ে গেছে।আব্বা বেঁচে থাকাকালীন সময়ে সৈকতের ঈদ প্রতিবার কেটেছে গ্রামের বাড়িতে। এবারও গ্রামের বাড়িতেই সৈকত ঈদ কাটাচ্ছে। সবাই আছে গ্রামের বাড়িতে। চাচারা, ফুফুরা, দাদী, মা সবাই আছে। কেবল আব্বা নেই। 
     
    ছেলেবেলার কথা সৈকতের মনে পড়ে। প্রতি ঈদে আব্বার সাথেই সৈকত ঈদের নামাজে যেত। বাপ-বেটা দুইজনে সকালবেলায় গোসল সেরে পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে জায়নামাজ হাতে চলে যেত ঈদগাহ মাঠে। এই বছর থেকে সৈকত একাই যাওয়ার অভ্যাস করছে। দুনিয়া এমনই এক পাঠশালা, যেখানে মানুষ ধীরে ধীরে একা চলতে শিখে নেয়।
     
    সৈকত এখন আর হাই-স্কুলের ছাত্র নয়। কলেজের ছাত্র। গতবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে, সে এখন একটা কৃষি ইনস্টিটিউটে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর যুব-উন্নয়নের একটা সংগঠন থেকে কৃষিতে শর্ট-কোর্সও করেছে। আব্বার রেখে যাওয়া অল্প জমিতেই অন্য বর্গাচাষীদের সাথে ধানের সিজনে সৈকত কৃষিকাজে লেগে যায়। এই দেশে অনেক জাতের ধানের চাষ হয়। ধীরে ধীরে সে শিখছে।
     
    জমি তো আসলে খুব আদরের জিনিস। ফসল ফলাতে হলে আদরে সোহাগে জমিকে তৈরি করতে হয়। আব্বার মৃত্যুর পর পৃথিবী তাকে টিকে থাকার লড়াই শিখাচ্ছে। অভিজ্ঞতার সাথে সাথে সৈকতের পাতলা ফিনফিনে গোঁফের রেখা ঘন হয়ে উঠেছে। ক্ষেতে কৃষিকাজে অভ্যস্ত হবার কারণে শরীরটাও কিছুটা পেশিবহুল হয়ে উঠেছে। আলাদা করে জিমে গিয়ে ব্যায়াম করার দরকারই হয়নি। ব্যায়াম বলতে সৈকত কেবল ভোরবেলা ৫/৬ কিলো হাঁটাহাঁটি। এতে মনটা চনমনে থাকে। শরীরের পেশির গাঁথুনি যতটুকু ভেসে উঠেছে তা ঐ কৃষিকাজের ফলাফল! কোদাল দিয়ে মাটি নিড়ানি, ফসল বোনা, পানি দেয়া, ফসল কাটা এই কাজগুলো পুরোপুরি কায়িকশ্রমের মধ্যে পড়ে। এতে পেশিতে জোরও বাড়ে! 
     
    ছোটবেলা থেকেই সৈকত দেখতো, আব্বা কোনোদিন বড় ঈদে কোরবানি'র কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতেন না। তিনি নাকি রক্ত দেখতে পারতেন না। রক্তের লাল তাকে ভীত করে তুলতো। তাই অন্যান্য শরিকের সাথে ভাগে কোরবানি দিতে যে-টাকাটা লাগতো তা তিনি দিয়ে দিতেন। সেই আব্বার মৃত্যু হলো কিনা ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে রক্তাক্ত হয়ে। কী দুঃসহ ভয় আর যন্ত্রণা মৃত্যুর সময় আব্বার চেতনাকে গিলে ফেলেছিল, সেই কথা ভাবতেই সৈকতের গায়ে কাঁটা দেয়।
     
    এদেশের আইন-ব্যবস্থার খুবই করুণ অবস্থা। সড়ক দূর্ঘটনা এদেশের সিস্টেমে যেন কোনো ব্যাপারই নয়। ঘাতক ট্রাক এবং সিএনজি চালক দূর্ঘটনা ঘটিয়েই স্পট থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। কেউ আটকাতে পারেনি কিংবা কেউ গাড়ির নম্বর মনে রাখেনি। এই কথাগুলো ভাবনায় এলে এখনও সৈকতের মনে হয়, অনন্তকাল ধরে নিরবচ্ছিন্ন এক দুঃস্বপ্নের হিমাগারে সে আটকে গেছে। হিমাগারের হিম থেকে নিস্তারের পথ কোথায়? বাড়ির পথে হাঁটতে হাঁটতে সে দেখে রাস্তার পাশে একটা ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাকের সামনে উপরে লেখা 'আল্লাহ'র নামে চলিলাম'। নিচে লেখা 'পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আদালত মানুষের বিবেক'। 
     
    কথাটা সুন্দর। ইদানিং যে-ট্রাকই দেখে সেই গাড়িকেই ঘাতক মনে হয় সৈকতের। এই ট্রাকটাও তো সেই দিনের কালপ্রিট হতে পারে। সে কি কোনোদিন তার আব্বার মৃত্যুর জন্য দায়ী সেই ট্রাক-চালককে ক্ষমা করতে পারবে? ধর্মের অনুষঙ্গে তো ক্ষমাই মহান ধর্ম! পৃথিবীর বহু ধর্ম মতে, ক্ষমা ১টি ভালো অভ্যাস। ধর্মের অনুষঙ্গের বাইরেও ক্ষমা ১টা বিশেষ গুণ। তবে এক্ষেত্রে সে জানে না, বুকের ভিতর যে প্রতিশোধস্পৃহা জেগেছিল, তা সময়ের আবর্তে কৃষ্ণগহ্বরে লীন হয়ে যাবে কিনা। সৈকত বাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাবে। নামাজের খুতবায় হুজুর বললেন, মনের পশুকে কোরবানি দিতেই এই বড় ঈদ পালন করে মুসলিম সমাজ। কিন্তু সত্যিই কি মানুষ মনের পশুকে কোরবানি দেয়?
     
    শুধু তো কোরবানি দেওয়া পশুর মাংস ভাগ-বাটোয়ারা করে, আর রান্না করেই মানুষের সময় চলে যায়। মনের পশুকে তো কোরবানি দেয়ার সময়ই নাই মানুষের। তাদের চেতনা থেকেই হয়তো মনের পশুর ধারণা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।  যদি সত্যিই মানুষ এত বেশি সৃষ্টিকর্তার আদেশ অনুসরণ করতো, তবে তো এই দেশে এত অন্যায়-অবিচার হতো না। পৃথিবীর কোনো ধর্মের কোনো সৃষ্টিকর্তা কি কখনো অন্যের প্রতি হিংস্রতা করার অনুমতি দিয়েছে? সৈকতের খুব জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই গ্রামের মসজিদ গুলোতে যে ইমাম সাহেবগণ খুতবা পাঠ করেন, তাদের কাছে এই রকম প্রশ্ন করা যাবে না; এই ব্যাপারটাও সে বুঝে গেছে। এরকম প্রশ্ন এই ইমামদের করলে তাকে 'নাস্তিক' ট্যাগ খেতে হবে ; যা বাংলাদেশের সমাজে ভয়াবহ ব্যাপার। এদেশে নাস্তিকদের সাথে যা খুশি করা যায়। বকধার্মিক আর জঙ্গি গোষ্ঠীর মুমিনেরা নাস্তিক ট্যাগ দিয়ে অনেকগুলো হত্যাকান্ডকে সমাজের সামনে জায়েজ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আইনের দুর্বলতা এক্ষেত্রে প্রকট। 
     
     ছেলেবেলা থেকেই সৈকত লক্ষ্য করেছে, মা-খালাদের কোনো ঈদ নেই। বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের আছে। পুরুষদেরও কিছুটা ঈদ আছে। বাচ্চা-ছেলেমেয়েরা নতুন জামা পরে সকাল-সকাল দলবেঁধে বেরিয়ে যায়। ঈদের দিনে সালামি আদায় করাতেই সবচেয়ে বেশি আনন্দ। বাল্যকালে সালামির টাকা দিয়ে চকলেট-আইসক্রিম খাওয়া যেত। পছন্দের খেলনাও কেনা যেত। বল, ক্রিকেট-ব্যাট, ব্যাটমিন্টন কতকিছু কেনা যেত। সবচেয়ে মন খারাপ হত, যখন আব্বা-আম্মা সালামির টাকাটা নিজেদের কাছে নিয়ে নিত আর বলতো, 'জমা রাখলাম। যখন খুশি চেয়ে নিস।' 
     
     বাড়ির পুরুষেরা সকাল সকাল ঈদের নামাজ শেষ হলেই, সারাদিন অবসর পায়। বড় ঈদের সময় অবশ্য পশুজবাই এবং মাংস কাটার কাজে লাগতে হয়। কিন্তু বাড়ির মেয়েদের কাছে ঈদ মানে রান্নাঘর। নতুন কাপড়টা হয়তো পরা হয় তাদের। তাছাড়া বিশেষ বেশি কিছু না। হয়তো আত্মীয়-বাড়ি ঘুরতে গেলে একটু অবসর পাওয়া যায়, তবে ঈদের দিন তো ছুটি নেই, ঈদের দিন কেউ নিজের বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়ি ঘুরতেও যায় না, তাদের জন্য একটু অবসর নিয়ে আসে ঐ ঈদের পরের দিন অথবা অন্য কোনো একদিন যদি আত্মীয়বাড়ি ঘুরতে যাওয়া হয়।
     
    কিন্তু ছোটবেলা থেকেই সৈকত দেখেছে। ঈদের দিন ভোরবেলা গোসল সেরে আম্মা রান্নাঘরে ঢুকে। বাড়ির অন্য মেয়েরাও তাই। আর সারাদিন ফিরনি-সেমাই-মাছ-মাংস-পোলাও-কোর্মা এসব রান্না করতে করতেই মেয়েদের ঈদের দিন শেষ হয়ে যায়। সংসারের জন্য এই যে তাদের ত্যাগ, এটাই হয়তো আসল কোরবানি। 
     
    এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই সৈকত বাড়ি পৌঁছে যায়। বাড়িতে ঢুকতেই আম্মা এক বাটি সেমাই নিয়ে এসে সৈকতকে দেয়। সৈকতের হাতে বাটিটা ধরিয়ে দিয়েই আম্মা আবার রান্নাঘরে ছুটে চলে যায়। বাঙালি মেয়েদের জীবন এভাবেই চুলার আঁচে অল্প অল্প করে সিদ্ধ হয়ে ওঠে।
     
    হাতের বাটি থেকে সেমাই খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম্মা লুচি আর আলুর দম নিয়ে আসে। সেমাইয়ের বাটি নিয়ে লুচির থালা হাতে ধরিয়ে দিয়ে আম্মা আবার রান্নাঘরে চলে যায়। সেখানেই দাদী-ফুফু-চাচীরা একত্রে রান্নার কাজ করে আর গল্প করে। সৈকত লুচি খেতে খেতে দেখে বাড়ির মেয়েরা ঈদের দিনের রান্না-বান্না নিয়ে ব্যাপক উৎকন্ঠায় আছে।
     
    নামাজ শেষ হয়ে গেছে। এখন বাড়ির পুরুষেরা নাস্তা খেতে আসবে। নাস্তা শেষে পুরুষেরা যাবে পশু কোরবানি দিতে, কোরবানি শেষে মাংস কাটা-বাছা করে সেগুলোকে আবার সমান অংশে ভাগ করে বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। তখন বাড়ির মেয়েদের সবচেয়ে বেশি কাজ, সেই মাংসকে ধুয়ে রান্না করা, মাংস সংরক্ষণ করা ইত্যাদি নানান কর্মতৎপরতায় বাড়ির মেয়েদের ঈদের দিন কেটে যাবে।  
     
    সৈকতের লুচি খাওয়া শেষ হতে না হতেই আম্মা পানি এবং চা নিয়ে আসে। সেগুলো ঘরের এক কোণের টেবিলে রেখে আম্মা শুধু বলে, বাবু তোর চা।
     
    এই বলেই আম্মা আবার রান্নাঘরে চলে যায়। সৈকতের কাছে মনে হয়, মেয়েরা বোধহয় হিন্দুদের দুগ্গাঠাকুরের মতনই হয়। বিশেষত মায়েরা। মায়েদের কাছে দুগ্গাঠাকুরের মতন দশখানা হাতই বোধহয় আছে আর হয়তো তৃতীয় চোখও আছে। বাকী আটটা হাত ও তৃতীয় চোখ অদৃশ্য, দেখা যায় না। তা না হলে এত কাজ, এত কাজের ফাঁকে আবার সবদিকে সমান লক্ষ্য রাখা তো সম্ভব হতো না।  
     
    নাস্তা সেরে চা খেয়ে সৈকত একখানা গল্পের বই নিয়ে বসে। শরৎচন্দ্রের গল্পসংগ্রহ। বহুবার পড়া থাকলেও আজকে আবার 'মহেশ' গল্পটা পড়তে মন চাইছে। সৈকত বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়ে। বইপড়া এবং ঘুমানো ছাড়া ঈদের দিনে তেমন কোনো কাজ সৈকতের নাই। অবশ্য টিভি দেখা যেতে পারে। স্টার-মুভিজে মাঝে মাঝেই এভেঞ্জারস সিরিজের মুভি দেখায়।
     
    ঘুমের মধ্যেই সৈকত ভাবে, একটু ঘুমিয়ে নিয়ে পরে মুভি দেখা যাবে। ঈদের দিনে এগুলাই কাজ তার। পশু-জবাই এবং অন্যান্য কাজ সৈকতের ভালো লাগে না। কেমন যেন একটু অমানবিকই লাগে। কেন এরকম লাগে, তা সৈকত জানে না। 
     
     
    ম্যান ইজ অ্যা পলিটিক্যাল এনিমেল 
     
    ভোরবেলার সৌন্দর্য অনেকটা সন্ন্যাসীদের আশ্রমের মতন। যেন পৃথিবীটা এই-সময় বিপুল মনাস্টেরি হয়ে ওঠে। নিরবতার মধ্যে হঠাৎ হয়তো কোথাও পাখি ডেকে ওঠে। কোনো এক গাছের ডালে বসে পাখি হয়তো স্বাগতম জানায় পুরাতন পৃথিবীর নতুন আড়ম্বরকে। লিনা আজকে চলে যাচ্ছে পোল্যান্ডে। ভোরবেলাতেই সে রওনা হয়েছে ঢাকার উদ্দেশ্যে। ট্যাক্সির জানালা দিয়ে ভোরের নির্মল সৌন্দর্য দেখতে দেখতে সে যাচ্ছে কক্সবাজারের এয়ারপোর্টে। ৬টা ৪০এ ঢাকার ফ্লাইট ধরবে লিনা। ঢাকার এয়ারপোর্ট থেকে তারপর পোল্যান্ডের ফ্লাইট। সকাল ১০.১৫ তে সেই ফ্লাইট। যেতে যেতে কেন যেন বাংলাদেশের প্রতি মায়া লাগছে।
     
    মায়া খুবই অদ্ভুত একটা অনুভূতি। মানুষের মনে খুব সন্তর্পণে মায়া ডালপালা ছড়ায়। এই যে চাকরি করার উদ্দেশ্যে প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বাংলাদেশে সে এসেছিল, তখন তো পুরোপুরি অপরিচিত ছিল এই দেশ, দেশের মানুষ। তারপর এই তিন বছরের অধিক সময়ে ধীরেধীরে পরিচয় ঘটেছে অনেকের সাথেই। জেনেছে এই দেশকে। দেশের মানুষের সম্পর্কে জেনেছে। হতদরিদ্র একটা দেশ। অর্থনৈতিক ভাবে সক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
     
    অবশ্য সমস্যার কোনো শেষ নেই এই দেশে। অথচ এই দেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে স্বাধীন করেছিল এই দেশটাকে। স্বপ্ন দেখেছিল। স্বপ্ন মানুষ দেখে ঠিকই। তবে তা পূরণের জন্য যতটা কাঠখড় পোড়াতে হয়, একসময়ে সেই কাঠখড় পোড়ানোর তাগিদ মানুষ হারিয়ে ফেলে। 
     
    গতকাল বাংলাদেশি এক প্রাক্তন কলিগের সাথে অনেক কথা হলো। হ্যা এখন প্রাক্তনই, কারণ লিনা চাকরিটা ছেড়ে এইদেশ ছেড়ে তো চলেই যাচ্ছে । দেশ বিষয়ক ভাবনা নিয়ে কথা হলো। স্বপ্নের কথা। ইতিহাসের কথা। লিনা কলিগের কাছে জানতে চেয়েছিল, রওশান আরার কথা সে জানে কিনা। 
     
    কলিগ বললো,"রওশান আরা কে?" 
     
    তখন লিনা তাকে সব গুছিয়ে বলেছে। একটা দারুণ আর্টিকেল লিনা পড়েছে বেশ কতকদিন আগে। রওসান আরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে থাকা একটা নাম। নাম ছাড়া আর কিছুই না। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের মাঝে প্যানিক ছড়ানোর জন্য মাঝেমাঝেই মিথ্যা খবর ছড়ানো হতো। সেইরকমই একটা খবর এই রওশান আরা।
     
    লিনা যখন প্রথমে আর্টিকেলটা পড়তে শুরু করেছিল, তখন তার কাছে মনে হয়েছিল রওশান আরা এক মহান দেশপ্রেমিক। কারণ শত্রুদের ঘায়েল করতে সে নিজে মানববোমায় পরিণত হয়েছিল। অথচ পুরো আর্টিকেল পড়ার পর সে হতবাক। রওশান আরা নামে আসলে যে খবরটা প্রচার করা হয়েছিল, তা ছিল ভুয়া। এটাও নাকি যুদ্ধের একটা পলিসি। মিথ্যা প্রপাগান্ডার মাধ্যমে শত্রুর মনোবল ভেঙে দিতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল অটুট রাখতে এরকম বহু খবর ছড়ানো হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়।
     
    রওশান আরা'র খবরটা তখন সবচেয়ে বেশি চর্চিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় রোডিওতে চরমপত্র পাঠের একটা অনুষ্ঠান হতো। এম আর আখতার মুকুল চরমপত্র পাঠ করতেন। সেই প্রোগ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যদের নাস্তানাবুদ হবার খবর দারুণ উদ্যোমের সাথে প্রাচারিত হতো। এরকম প্রচারেও শত্রুপক্ষের মনোবলে আঘাত করা হতো। 
     
    এসব কথা শুনে কলিগ লিনাকে জিজ্ঞেস করলো, সো ইউ আর স্টাডিং অন লিবারেশন ওয়ার অফ বাংলাদেশ? আর ইউ গোয়িং টু জয়েন ইন ওয়ার অফ ইওর কান্ট্রি? 
     
    প্রশ্নের জবাবে লিনা কেবল মাথা নেড়ে হ্যা-বোধক উত্তর জানিয়েছে। যুদ্ধ খুবই ভয়াবহ ব্যাপার। সভ্যতার এই যুগেও যে মানুষেরা যুদ্ধে জড়াচ্ছে, তা কেবলই অপরিণামদর্শীতা। এবং এরকম যুদ্ধ আদতে ক্ষমতার দ্বান্দ্বিক মেরুকরণ। রাশিয়া ইউক্রেনের সকল সমুদ্রসীমা দখল করে নিচ্ছে। আর সমুদ্রসীমা দখল করার মানে হচ্ছে অর্থনৈতিকভাবে বিপক্ষকে দুর্বল করে ফেলা। একটা দেশকে দখল করার সবচেয়ে মারাত্মক ষড়যন্ত্রের একটি হলো, দেশটির উপর অর্থনৈতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা। বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক আগ্রাসনই ক্ষমতার প্রধান উৎস। আর রাশিয়া ইউক্রেনের উপর সেই কৌশলটাই নিয়েছে।
     
    এইসব কিছুর ব্যাপারেই কলিগের সাথে লিনা নিজের ভাবনা শেয়ার করেছে। তবে লিনার খুব অবাক লাগে, শিক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও তার কলিগের নিজস্ব কোনো ভাবনা নেই, কোনো মতামতই সে জানাতে পারে না। অনেকটাই ইন্টেলেকচুয়ালি নাম্ব অবস্থা তার। এমনকি নিজের দেশের ইতিহাস সম্পর্কেও তার কলিগ অনেকটাই দ্বিধাগ্রস্ত। লিনা'র কলিগ এখনও মুক্তিযুদ্ধকে ভারতের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বলে বিশ্বাস করে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের জনমনে এই যে ৭১'কে নিয়ে দ্বিধা রয়ে গেছে, এটাই এই দেশের মানুষের মাঝে বিভক্তির অন্যতম রাজনৈতিক বয়ান। 
     
    ট্যাক্সি থেকে নেমে লিনা ঢাকার ফ্লাইট ধরে। মাত্র ৪০ মিনিটের উড়াল শেষে ঢাকায় পৌঁছে যায় ফ্লাইটটি। হাতে বেশ অনেকটা সময় আছে। তাই লিনা একটু ফ্রেশ হয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরেই একটা ক্যাফেজোনে বসে নাস্তা সেরে নেয়। তারপর সেখানকার একটা বুকস্টলে কিছুটা সময় কাটায় সে। বই অবশ্য কেনে না। একটু উল্টেপাল্টে সময় কাটিয়ে লাউঞ্জে গিয়ে ডিপার্চারের অপেক্ষা করতে থাকে। সাথে শুধু একটা ব্যাকপ্যাক নিয়েছে সে। এই সাড়ে তিন বছরে যে ছোট্ট সংসার গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশে, সেই সংসারের সকল কিছু পিছনে ফেলে চলে যাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে লিনা। পৃথিবীর সকল কিছুই যেন খুবই অপ্রত্যাশিত। তবুও মানুষকে এর মধ্য দিয়েই লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। আসলে তো এই লড়াইটা আর কারো সাথে নয়, এইটা আসলে নিজের ভেতর নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার লড়াই।
     
      লিনা এখন পুরোপুরি ডিটারমাইন্ড। সে জানে, পোল্যান্ডে গিয়ে তার কী কী কাজ করতে হবে, কাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে, মোটামুটি একটা নোট সে মোবাইলে করে ফেলেছে। কন্টাক্ট নম্বরগুলো গুছিয়ে নিয়েছে মোবাইলে। লিনা সরাসরি যুদ্ধ করতে পারবে না। যুদ্ধ আসলে লিনার দার্শনিক মনস্তত্ত্বের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই সে ঠিক করে নিয়েছে, শরণার্থীশিবিরগুলোতেই সে কাজ করবে। এছাড়া যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক বিষয় নিয়েও সে কাজ করবে। যুদ্ধ যাতে খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়, সেজন্য সে জনমত গঠন করবে এবং বিশ্বমত গঠনের চেষ্টা করবে। নিজ হাতে মানুষ খুন করা লিনার পক্ষে সম্ভব নয়। তার চেয়ে ব্লগিং করে এবং শরণার্থী-শিবিরে কাজ করে শান্তির এবং প্রেমের দর্শন প্রচার করবে সে। 
     
    যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব আরো ঘনীভূত হয়। বাংলাদেশে কাজ করে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কে ঘাটাঘাটি করে, যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক চাপের বিষয়ে অনেককিছু লিনা জেনেছে। তার সকল জ্ঞান প্রয়োগ করে বিগ-ব্রাদারদের হাত থেকে নিজের দেশে শান্তি-প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই লিনা চলে যাচ্ছে। হয়তো আর কোনোদিন দেখা হবে না এই বাংলাদেশের আকাশ। আবার হয়তো হতে পারে যু্দ্ধের শেষে লিনা ফিরে আসবে এই মায়াঘন দেশে। আগামী দিনে কী আসছে পৃথিবীতে তা তো জানে না মানুষ। অথচ যে কোনো যুদ্ধেই আমেরিকা শেষমেশ লাভবান হবেই। আমেরিকাই রিয়াল স্টেক হোল্ডার। 
     
    এসব কথা ভাবতে ভাবতেই লিনা শুনতে পেলো তার নাম ঘোষিত হচ্ছে। ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে। লিনা ব্যাকপ্যাকটা নিয়ে এগিয়ে গেল বিমানের দিকে। তার চোখে ইউক্রেনের ব্রাউন গমের শস্যক্ষেত ভেসে উঠলো। আনচান করতে লাগলো বুকের ভিতর। 
     
    বিমান টেইক অফ করার পর লিনা আপন মনে ভাবলো, হিস্ট্রি ইজ একচুয়ালি অ্যা বিচ। বাংলাদেশ ছেড়ে সে চলে যাচ্ছে। এই বাংলাদেশ জন্মের পেছনে যাদের সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল, তাদেরকেই বাঙালগুলো ক্ষমতার নেশায় চুর হয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে।
     
    বাংলাদেশে চাকরির সময় হঠাৎই ইতিহাস জানার প্রতি খুব আগ্রহ জন্মানোর কারণে লিনা বাংলাদেশ জন্মের পেছনের ধারাবাহিক ইতিহাস সম্পর্কে বেশ কিছু ব্যাপার ঘেঁটে জেনেছে। এবং সেখানেই সে পেয়েছে, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘৃণ্য ক্ষমতার লড়াই হয়েছিল। ঘৃণ্য কারণ ৭১'র আগের লড়াইটা ছিল ভিন্ন-ভাষার-ভিন্ন-সংস্কৃতির মানুষের বিরুদ্ধে, অথচ ৭৫'র ঘটনা সবই বাঙালদের মাঝে ঘটেছিল। এর মাঝে অবশ্য আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও জড়িত ছিল। অনেকগুলো সামরিক ক্যু সংগঠিত হয়েছিল সে-সময় এবং হত্যা করা হয়েছিল স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বপ্রদানকারী অনেক সূর্যসন্তানদের। তৎকালীন সরকারের রাষ্ট্রপতিসহ বিভিন্ন মন্ত্রীবর্গকে খুন করেছিল সামরিক জান্তারা।
     
    কথায় বলে, এবসোলিউট পাওয়ার করাপ্টস এবসোলিউটলি। সহজ কথায় বললে, সর্বময় ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতিগ্রস্ত করবেই। সামরিক জান্তারা বাঙলাদেশের জাতির স্থপতি এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে তো নিজস্ব বাসভবনে গিয়ে হত্যা করেছিলই; এছাড়া কারাবন্দী অবস্থায় হত্যা করেছিল জাতীয় চার নেতাকে। অথচ সেই সময় বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ এই অন্যায়ের তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিবাদই করেনি।
     
    যুদ্ধ জয়ের পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের জনগণ যেন স্বপ্নের সাথে বাস্তবতার ব্যবধানে দারিদ্র্যে আর হতাশায় দিগভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের উত্তাপে মানুষের বিবেকের যে ক্ষয় সাধিত হয়েছিল, তা যেন এই ৫০ বছরেও বাঙলাদেশিরা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ভালো-মন্দের মাঝে যে সূক্ষ্ম তফাৎ, একটা যুদ্ধ সেই বিবেচনাবোধকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বাঙলাদেশ যেন সেরকমই একটা উদাহরণ।  
     
    যে কোনো যুদ্ধের পেছনেই রাশিয়া এবং আমেরিকাকে মদত দিতে কিংবা সরাসরি অংশ নিতে দেখা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যেমন রাশিয়া ছিল বাঙলার পক্ষে আর আমেরিকা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে, সেখান থেকে লিনার মনে হয় আসলে উচ্চ সুদে ঋণদান এবং অস্ত্র ব্যবসা-ই এইসব ক্ষেত্রে এই বিগ-শট দেশগুলোকে করে তুলেছে কান্ডারি। ইউক্রেনের এই যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে যে দেশটি সেই-টি হলো আমেরিকা। এতসব ভাবনার ভিড়ে লিনা খেই হারিয়ে ফেলে। দিগভ্রান্ত লাগে। জানালার থেকে উড়ন্ত মেঘ দেখতে দেখতে একসময় লিনা ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের মধ্যে সে একটা শান্তিপূর্ণ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে।
     
     
    বেঁচে থাকাটাই লিরিক্যাল 
     
     
    “এইটা সত্যিকার অর্থেই স্যাড সার্কাজম; যখন মানুষদেরকে ঈশ্বরের ঘরে গিয়েই খুন হতে হয়। এবং তাদেরকে হত্যা করে একদল তথাকথিত মৌলবাদী ধর্মভীরু 'বিশ্বাসী' মানুষ। আমরা হত্যাকারীকে বলি জঙ্গি। কিন্তু 'জঙ্গি' ধারণা আসলে কোথা থেকে আসে? এবং 'বিশ্বাসী'রা কেন 'বিশ্বাসী'দের হত্যাকারী হয়? মানুষ মিথ্যে করে বলে, সৃষ্টিকর্তার নামে ধর্মকে অবক্ষয়ের হাত থেকে বাঁচাইতে হবে। এর থেকে বড় বাটপারি আর কিছু নাই। ধর্মের নামে যুদ্ধ। ধর্মের নামে হিংসা। এগুলা আদতে ফুটা পয়সার মতনই অচল। সবকিছুই ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার ধান্দা!  যারাই এরকম কথা বলে তাদেরকেই সন্দেহ করতে হবে। তাহলে বলা যায় ধর্ম হচ্ছে সেই প্রতিষ্ঠান, যে প্রতিষ্ঠান তাদের নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা দিতে অসক্ষম হইতেছে। আরেকটা ব্যাপার হইলো পুলিশ/এলিট ফোর্স যখন দেশপ্রেমের ঝান্ডা দেখায়া গুলি চালায়, এইটা কোনো আইনেই সুষ্ঠু বিচার নহে। জঙ্গি হইলেও তার তো বাঁইচা থাইকা, আদালতের সামনে দাঁড়ানোর অধিকার আছে নাকি?  দিস ইজ রিয়েলি স্যাড সার্কাজম ফর হিউম্যানিটি।”  
     
     
    লেখাটা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছিলাম গতকাল। গতকাল ছিল শুক্রবার , জুম্মাবার।  সাধারণত এরকম চিন্তা পোস্ট করা থেকে আমি দূরে থাকি। কিন্তু গতকাল কী ভেবে যে কাজটা করেছি জানি না। সন্ধ্যার পর থেকে পোস্টটা ভাইরাল হতে শুরু করে। কমেন্টের পর কমেন্ট আসতে লাগলো। বুলিং করতে শুরু করল পাব্লিক। আমি হতবাক। আমি কোন কমেন্টেরই জবাব দেইনি। রাত ৯টা নাগাদ পোস্টটা ১০হাজার বার শেয়ার হয়ে গেছে। আমি তখন পোস্টটা ডিলেট করি। 
     
     
    কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাত দেড়টা নাগাদ বারেকমোল্লা মোড়ের ঘুপচি গলিতে আমার ভাড়া বাসার সামনে হাজার খানেক তৌহিদি জনতা ভিড় জমিয়েছে। তারা সবাই আমার কল্লা চায় , ফাঁসি চায়। মোল্লারা ভীষণ ক্ষ্যাপা। স্লোগানে স্লোগানে সয়লাব চারদিক। গগণবিদারী চিৎকার। শুধু চিৎকারেই তারা থেমে নেই। ইট পাটকেলও ছুড়ছে। ১টা ইটের টুকরা তো জানালার কাঁচ ভেঙ্গে একদম আমার মাথার পাশ দিয়ে চলে গেল। আলিমের গল্পটা হয়তো আর প্রকাশ করা হবে না। খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম। যদি গল্পটা প্রকাশের পরেও এই ঘটনা হত , নিজেকে বুঝ দিতে পারতাম। 
     
     এরকম পরিস্থিতিতে আমি মিরপুর-২ থানায় ফোন করলাম। অনেকক্ষণ রিং হবার পর একজন ফোন ধরে জানালো, ভোর হবার আগে তারা কিছুই করতে পারবে না। আমি ভীষণ ভয়ে ভয়ে ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। এর মাঝেই ১টা স্বনামধন্য পাবলিকেশন থেকে মেইল পেলাম। তারা আমার বইটা ছাপাতে চায়। বুঝতে পারলাম, আমার ভাইরাল পোস্ট তাদের নজরে পড়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে এখন বইটা বের করলেই হুর হুর করে বিক্রি হবে। সবার কৌতুহল হবে। কেননা আমি তো আজকে ভাইরাল! 
     
    ভোরের আযান হতেই ধীরে ধীরে চারপাশে আলো ফুটতে শুরু করল। পুলিশ এসে আমাকে সাইবার আইন অমান্য এবং দেশদ্রোহীতা করার কারণ দেখিয়ে এরেস্ট করে নিয়ে গেল। আমি যখন পুলিশের পেছনে আসামীর মতো বাসা থেকে বের হচ্ছি,  তখন ভোরের নরম আলো আমাকে মাতাল করে ফেলেছে। পুলিশ আমাকে গার্ড দিয়ে হাজারো তৌহিদি জনতার লকলকে হিংস্র মারমুখী চোখের সামনে দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে গাড়িতে তুলল।  
     
    আমার তখন বাহ্য কোন জ্ঞানই ছিল না। আমি ভাবছিলাম , ভোরের আলো কী নরম মধুর হয় আহা! সারারাত যে আমি টিকে থেকেছি ,তাতেই আনন্দ। এই ফ্যানাটিকরা যদি একবার আমায় পেত , তবে নিশ্চয়ই ছিঁড়ে ফেলত। এই যে বেঁচে আছি , এই তো জীবন , এই তো গান। আমার আর কিছুই চাই না। নাম, যশ,  খ্যাতি, টাকা কিছুই না। কেবল এরকম মিঠে মধুর ভোরবেলাতে মুক্ত আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বুক ভরে শ্বাস নিতে চাই... 
     
     
     
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন