পনির বাড়ির চৌহদ্দিতে দেওয়ালের লেখা ঢুকে পড়লো
ক্রমশ দেওয়ালটা বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে এলো। সে দেওয়ালে কেউ লিখে গিয়েছিল। পার্টির কথা সেখানে ভোটের প্রতীক সহ লেখা ছিল । সে সব দেখা গেল বাড়ির মধ্যে ঢুকে এসেছে। আগে দেওয়ালে বৃষ্টি এসে লাগতো , বৃষ্টির ঝাঁট আর তাতে সে ভিজে গিয়ে তার ওপরের যাবতীয় লিখনকেও ভিজিয়ে ছাড়তো। এখন ওসব কিছুই হয় না। দেওয়ালের মাথার ওপর ছাদ হয়েছে তাতেই বৃষ্টি পড়ে প্রচুর শব্দ হচ্ছে আর দেওয়ালও তা শুনছে। এখন দেওয়াল দিয়ে বড্ড জোর বৃষ্টির জল গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে। নানা রকমের আওয়াজ হয় তাতে। সেটা হতেই থাকে , হতেই থাকে একঘেঁয়ে আর কিছুক্ষণ পর শোনার ইচ্ছে চলে গেলে বোঝাই যায়না কখন থেমে গেলো আওয়াজ -মানে আর বৃষ্টি পড়ছে না অথবা এমন জোরে পড়ছে যে জোরটাই বোঝানো যাচ্ছে না।
সেই ভিজে ভিজে দেওয়াল দেখতে দেখতে পনি বাড়ির ভেতরে বসে বসেই ভোটের প্রতীক দেখতে পেলে কেমন হয় ? শিল্প বা সম্ভবনা কোনটাই নয় , সম্ভবনার শিল্পও নয় - এটাই হচ্ছে । পনি দেওয়ালই দেখছে যেখানে পার্টির কথা ভোটের প্রতীক সহ লেখা আছে । পনির বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গাটা ঘিরে গ্যারেজ হয়েছে , সেখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে , সেখানেও ঝাপটা আসে জলের তবে তাতে গাড়ি ভেজে না , তার গা পিছল আর তাতে জল পড়লে নীচে নামতে নামতে কোথায় যে চলে যাবে কে জানে ? তবে গাড়ি আর দেওয়ালের তফাৎ আছে , গাড়ির গা পেছল তার গায়ের রঙ পাকা ।দেওয়ালের লেখা পাকা রঙে নয় তাই চৌহদ্দির মধ্যেও গ্যারেজের টিনের ছাদের ফাঁকে বৃষ্টির জলও সেখানে পড়ে একটু একটু করে পার্টির কথা আর ভোটের প্রতীককে আবছা করে দিচ্ছে ।বেশ কিছুদিন হলো দেওয়ালটা বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে এসেছে তার মানে অনেকটা সময় গেছে ভাবছে পনি । কত দিন যে হ লো বলে হাওয়ায় ছেড়ে দেওয়ার কিছু নেই , কতদিন হ লো তা পনি জানে । বেশ কিছু বছর আগেই গ্যারেজটা বানানো হলো ফলে বাইরে থাকলে যে দেওয়ালের লেখা কবে হাপিস হয়ে যেত চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে সে এখনো দিব্বি ডাঁটো রয়েছে । ভোটও কবে মিটে গেছে কিন্তু ভোটের প্রতীকেরা পরিস্কার পরিছন্ন হয়ে আছে । তাতে না পড়েছে বাইরের প্রবল জল ঝাপটা না পড়েছে অন্য ভোটের চুনকাম , যে প্রতীক ছিল তেমনটাই রয়ে যাওয়ায় কেমন যেন লাগে ।দেওয়ালের ভেতরে দেওয়াল ঢুকে এলে এমনটাই হয় ।
বাইরে দেওয়ালটা অবশ্য এমন করে দেওয়া হয়েছে যে সেখানে কোন পার্টি আর দেওয়াল লিখতেই পারে না । তার গায়ে গায়ে এবড়োখেবড়ো করে স্টোন চিপস বসিয়ে দেওয়া আছে । না লিখতে পেরে তারা , পার্টির ছেলেরা , তখন গ্যারেজের দেওয়ালের ওপর উঠে ঝাণ্ডা লাগিয়ে যায় প্রতি ভোটে । ঝাণ্ডা এক থেকে দুই হয়ে তিন বা আরো বেশি হতে পারে । সেগুলো বাইরে থেকে ঝুলে ঝুলে রোদ জল খেয়ে কুঁচকে বিবর্ণ হয়ে খসে পড়ে সে এক বিচিত্র অবস্থা হয় ঝাণ্ডার ।প্রতীকের দফা গয়া হলে পার্টিরও দফা গয়া হয় ।আবার কবে নতুন ভোট এসে ঝাণ্ডা নতুন করবে সেই প্রতীক্ষায় বসে থাকা ছাড়া পার্টিদের আর কিছু করার থাকে কি ? পনি ভাবছিল তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ালো ? তারা বাড়ির সামনের চৌহদ্দিটাকে বাড়ির আওতায় নিয়ে এলো , গ্যারেজ বানা লো তাতে এই এক দেওয়াল আর তার লিখন মানে পার্টির কথা ভোটের প্রতীক সহ সেটা চিরতরে রয়ে যাবে তাদের বাড়ির ভেতর । কেমন অদ্ভুত কথা ।এইভাবে পার্টির কথা বাড়ির ভেতরে বসে বসে দেখতে দেখতে অনড় অচল লাগে সময়কে ।সময় থমকে থমকে গেলে অনন্ত জায়গা খুলে যায় আর পনি গাড়ি চালিয়ে বাড়ির বাইরে যাবার জন্য তৈরি হয়ে পড়ে । গাড়ির চাকা গড়াতে আরম্ভ করলে গ্যারেজের চাপা দেওয়ালেরা কিছুই করতে পারে না । তারা আর সময়কে আটকে রাখবে কী করে ? গাড়িও হুস করে বেরিয়ে যেতে যেতে চৌহদ্দির মধ্যে একান্ত আটকে পড়া কোন একসময়ের বাইরের দেওয়াল আর সেখানে কোন কালে লিখে রাখা এক পার্টির কথা ভাবতে ভাবতে উধাও হয়ে যায় ।গাড়ি চালাতে চালাতে পনি অফিস চলে গেল। অফিস যাবার আগে সে খেয়েছিল। চান টান করেছিল। চান করলে দেহ ঠাণ্ডা হয়ে আসে আর পনি বলল ,'' আঃ। '' এই বলে তার খেয়াল হলো ক্রমশ সে বেশ ঠাণ্ডা একটা কিছুর মধ্যে এসে পড়েছে তাতে চারদিক থেকে কোন আওয়াজ আসার সম্ভবনা চলে গেছে। আওয়াজ কিছু আসছে তবে তা অনেক দূর থেকে , খুবই অস্পষ্ট সেসব আওয়াজ। প্রায় শোনাই যাচ্ছে না এমন আওয়াজ । সেকি জঙ্গলের মধ্যে এসে পড়েছে ? চারপাশে কেউ নেই যাকে পনি জিজ্ঞেস করতে পারে তাই সে হাওয়ার সঙ্গে কথা বলতে লেগেছে ,'' আমি কি জঙ্গলের মধ্যে এসে পড়লাম ?'' এটা বলার পর তার মনে হলো কেউ যেন উত্তর দিতে পারে তাই সে বলে ওঠে ,'' কেউ একজন উত্তর দেবেন কি ? মনে হলো যেন কেউ উত্তর দিলেন ? দিয়েছেন কি কেউ উত্তর ?' এতোগুলো প্রশ্ন পর পর করে পনি চুপচাপ থাকে।
সঞ্চালিকা আর রাণু তেওয়ারি
সঞ্চালিকা -নমস্কার , জয় জোহার এন্ড ভেরি গুড মর্নিং টু অল অফ ইউ।আপনারা জানেন ইয়ুথ উইংস এখন বস্তারে , এখানে আমরা নকশালদের ব্যাপারে খবর করছি আর এখানের জীবনশৈলীর খবরও করছি মানে লোকে কেমন আছে আরকি। আজ আমরা তার থেকেও জমাটি কিছু আপনাদের জানাবো। আপনারা জানেন, আমরা দেশের নামজাদা সাংবাদিকদের নিয়েও এক অনুষ্ঠান করি। এইরকমই একজন যাঁর সামনে নিজেদের খুবই ছোট মনে হয় ,হ্যাঁ রাণু ভাইয়া , আমরা সব সাংবাদিক যাঁকে ভালোবেসে রাণু ভাইয়া বলি, যাঁর করা খবরে দেশে শুধু নয় বিদেশেও বাওয়াল হয়ে যায় , যিনি বলতে থাকেন বস্তার শুধু নকশালদের জন্য বিখ্যাত নয় , তার অপার সৌন্দর্যও যে কারও মন টানবে। রাণু ভাইয়া আপনাকে স্বাগত।
রাণু তেওয়ারি -ধন্যবাদ , এতো মহান কিছু লোক নই যে এতো বড় ভূমিকা করতে হবে। এখন তো এতো বড় ভূমিকা শুনে নিজেকে কেউকেটাই মনে হচ্ছে। ধন্যবাদ।
সঞ্চালিকা- ওনার করা খবরগুলো আমরা বস্তার টকিজ চ্যানেলে দেখি। এছাড়া বড় বড় চ্যানেল বস্তারের ব্যাপারে ওনার মতামতে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভাইয়া , আপনার যাত্রা শুরু নিয়ে কিছু বলুন।
রাণু তেওয়ারি -কিসের যাত্রা ? সাংবাদিকতার নাকি ……
সঞ্চালিকা -ধরুন , সাংবাদিকতার।
রাণু তেওয়ারি - একদম সত্যিটাই বলি , জীবনে এটাসেটা অনেক কিছু করেছি দু আড়াই বছর ট্রাকও চালালাম -ড্রাইভারি। সব কাজে ধেড়িয়ে। আড়াই বছর কাঠ বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আপনি জানেন সাংবাদিকতায় পরিচিত মুখ প্রসাদজি, আমাকে তিনিই নিয়ে এলেন এই লাইনে । প্রথমে আমার ধারণা ছিল আরটিআই করব , টাকা কামাবো ,আরামে কাটবে -কোন ইনভেস্টমেন্ট নেই। অনেককে দেখেওছিলাম আরটিআই করে , অফিসারদের থেকে টাকা নিয়ে আরামে জীবন কাটাচ্ছে। সাংবাদিকতায় পয়সা আসে এসবে। শুরুর পরপরই ধীরে ধীরে একটা জিনিস বুঝতে আরম্ভ করি , কালকেও আপনাকে বলছিলাম না , যে লোকে সাংবাদিকের ওপর খুব ভরসা করে। প্রথমেই লোকে সাংবাদিকের কাছে আসে বলে ," ভাইয়া , থানায় লিখছে না। ভাইয়া , রেশন কার্ড হচ্ছে না , ভাইয়া এ কাজ হচ্ছে না সে কাজ হচ্ছে না -আপনি একটু বের করুন না খবরে।‘ মামলার ব্যাপারে কোন খবর ছাপা হলে তারও একটা প্রভাব পড়ে কোর্টে। কোনটা ঠিক ভুল - তাতে ন্যায়বিচার পেতে পারে। লোকে খুব ভরসা করে এটা আমি ধীরে ধীরে ধীরে বুঝতে পারি। লোকে বলে ‘আপনার পেশা কী ? না, আমি ব্যবসা করি , আপনি ? আমি সাংবাদিক। অনেক পরে আমি বুঝতে পারলাম , সাংবাদিকতা শুধু পেশা নয় সাধনাও বটে। আপনি অন্যের জন্য করছেন। এটা কবে থেকে বুঝতে পারলাম বলতে পারব না। আমি সৎভাবে বলছি কিনা তার গ্যারান্টি দিতে যাচ্ছি না কিন্তু চেষ্টা করছি লোকের এই যে প্রত্যাশা - তা পূরণ করতে। ২০১৪ তে অনেকটা কাকতালীয়ভাবে সাংবাদিকতায় আসার পর টাকাপয়সা নিয়ে টিয়ে অনেকদিন চলেছে -ধীরে ধীরে মন দিয়ে কাজ করা শুরু করি -লোকের প্রত্যাশাপূরণের কাজ। এই করতে করতে -সাংবাদিকতা আপনি কোথায় করবেন –কোনো একটা চ্যানেলে তো -আমিও করছিলাম। কিন্তু প্রত্যেক চ্যানেলেরই বাধ্যতা আছে , নিজস্ব লোচা আছে , অনেক জায়গায় চাকরি করলাম। এইভাবে এন এম ডি সির ( ন্যাশনাল মিনারেলস ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন ) খবর করছি -কত ভালোভাবে সব চলছে তার খবর। গ্রামের লোক বলে ,’কী সব বলান আমাদের দিয়ে স্যার , সব ঠিক আছে টাছে ! কোথায় ঠিক !’ বলি ,'ভাই ! কী করি ! চাকরির দায় ! 'একদিন রাতে কী খেয়াল হলো , আমার এক সিনিয়র আছেন , সতীন স্যার , ওনাকে ফোন করলাম ,বললাম ,"ভাবছি চাকরি ছেড়ে দেব। ' উনি বললেন ,'কেন ?' আমি বললাম ,' লোকে নামের জন্য, পয়সার জন্য চাকরি করে। চাপ দিয়ে টাকা পয়সা তুলছি না -পয়সাও হচ্ছে না আর এসব বানানো গল্প লিখতে হচ্ছে -নাম হচ্ছে না। ' উনি বললেন , 'নিজের মতো কিছু করতে চাও তো ইউটিউব চ্যানেল বানাও ,তাতে যা ইচ্ছে দেখাও। ' বানিয়ে ফেললাম এক চ্যানেল -বিকাশ তেওয়ারি নাম দিয়ে। তাতে একটা দুটো স্টোরি করেছি ,একদিন শ্রদ্ধেয় সৌরভজি ফোন করলেন , লাল্লনটপের সৌরভ দ্বিবেদীজি , বললেন ,'একটা কথা বলো, বিকাশ তেওয়ারি এতো কেউকেটা কেউ কি যে লোকে নাম ধরে গুগুল করবে ? ' আমি বললাম ,'মোটেই নয়। ' উনি বললেন ,'কেউকেটা যদি নাই হও তবে চ্যানেলের নাম বদলাও। ' আমি বলি ,' একটা নাম ঠিক করে দিন না। ' উনি বলেন , 'বস্তার টকিজ রাখো।আমি বললাম ,'ঠিক আছে। ' তখন উনি বললাম ,' ভেবে দেখ।‘ আমি বলি ,' ভাবার কিছু নেই , ওটাই ঠিক আছে। 'ওই সময় থেকে একতিরিশে জানুয়ারি দুহাজার একুশে বস্তার টকিজের যাত্রা শুরু হলো।
সঞ্চালিকা - আর তবে থেকে বস্তার টকিজ শুধু বস্তারের সমস্যা নিয়ে নয় , হসদেওর( উত্তর ছত্তিসগড়ের হসদেও জঙ্গলে কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলন ) মতো জ্বলন্ত সমস্যাকেও সামনে নিয়ে আসছে ,নিরপেক্ষভাবে বলে চলেছে জ্বলন্ত সব সমস্যা নিয়ে। এমন দাঁড়িয়েছে যে বাইরে থেকে যদি বস্তারের সমস্যাকে বুঝতে চান তবে এই প্ল্যাটফর্মই ভরসা। ভাইয়া, এতো গেল শুরুর কথা , সবাই বলে এই যে বস্তার মানেই ভয়ঙ্কর নকশালদের এলাকা কিন্তু আপনি বলেন বস্তারকে ভয়ঙ্কর নকশালদের এলাকা বানিয়েছি তো আমরাই .......
রাণু তেওয়ারি -ঠিক কথা।
সঞ্চালিকা -বানিয়েছি এই সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত লোকেরাই, এইভাবে ছবিটা তুলে ধরা হয়েছে।
রাণু তেওয়ারি -নানা , দেখুন ব্যাপারটা হলো কী , সবচেয়ে বড় কথা হলো কী এই যে ভয়ঙ্কর মাওবাদী এলাকার কথা -সেটা যা আছে তাতো আছেই , সে এলাকায় কোন ঘটনা যদি ঘটে তবে যা ঘটেছে তার খবর তো আপনি করবেনই ,কিন্তু ব্যাপারটা এরকম নয় যে আমরা বস্তারের সাংবাদিকরা সব জীবন বাজি রেখে খবর করে ফাটিয়ে দিচ্ছি। কাকতালীয় ভাবে অনেক কিছু ঘটতে পারে যে কোন এলাকায় ,যা কিছু হোক ঘটতে পারে ,কিছুদিন আগে আমি ইন্দ্রাবতী টাইগার রিজার্ভের ভেতরে একটা গ্রাউন্ড রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম , একটা গাছের পাশ দিয়ে যাবার তিন সেকেন্ডের মধ্যেই আগুনে জ্বলসে যাওয়া গোটা গাছটাই ধমাস করে পড়ে গেল। রিপোর্ট করতে করতে আমি দেখাতে থাকি - দেখুন তিন সেকেন্ড আগেই গাছটা পার হয়েছি , এই ওটা পড়ে যাচ্ছে। এটা শেয়ার করার সময় আমি বলতে থাকি দেখুন কাকতালীয়ভাবেই ঘটনাটা ঘটেছে জীবন বাজি রেখে কিছু করিনি আমি। লোকে বলে -ধরো আই ই ডি ( ইন্ডিজেনাস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ) বোমে পা পড়ে গেল ,আমি বলি -মানছি আই ই ডি বোমে পা পড়ে যেতে পারে, শহরে বাইক নিয়ে ঘর থেকে বেরোলেন হতে পারে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মেরে দিলো -সেটাও একই রকম বিপজ্জনক। যে রকম কাকতালীয় ভাবে আপনি শহরে মরে যেতে পারেন সেরকমই। শহরে আপনাকে প্ল্যান করে মেরে দিতে পারে , এই তো ইউপিতে মেরে দিলো। সবচেয়ে ঝুঁকি রয়েছে ইউপি আর বিহারের সাংবাদিকদের। আপনি যদি বেআইনি বন্দুকের কারবারীদের বিরুদ্ধে লেখেন , এরকম হতেই পারে আপনাকে ওই বন্দুকের গুলিতেই মেরে দিলো।কিন্তু এখানে ওসব হয় না। এখানে লোকে ভাবে মাওবাদীরা ওরকম বিপজ্জনক কিন্তু ওরা সাংবাদিকদের পক্ষে বিপজ্জনক নয়। কেউ ভাবতে পারে মাওবাদীরা আমাকে তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিয়েছে বলে বলছি , কিন্তু কথাটা ঠিক নয়। খোলা মন নিয়ে যদি জঙ্গলে ঢোকেন , বেশি চালবাজি না দেখিয়ে , আসলে মাওবাদীদেরও সাংবাদিকদের দরকার। ওদের তো নিজেদের কথা শোনাতে হবে , আদিবাসীদেরও তাদের কথা শোনাতে হবে -সেই সাংবাদিকদের মাধ্যমেই শোনাতে হবে। তাই আপনার জীবনের ভয় নেই। এখন কাকতালীয়ভাবে যদি আই ই ডি বোমে পা পড়ে যায় তবে হই হে সই জো রাম রচি রাখা -সকলই রামের ইচ্ছে ।
জঙ্গলে ওদের সঙ্গে পনি
অনেকখানি দিগভ্রষ্ট হলে তবেই কেউ অফিস যাওয়ার পথে বা অফিস থেকে ফেরার পথে জঙ্গলের মতো কোন জায়গায় গিয়ে পড়ে। এমন জায়গা যেখানে গাড়ি যায় না তাই পনি অনেকগুলো প্রশ্ন পরপর করতে থাকে ফলে সে সঞ্চালিকার নজর এড়াতে পারে না ।
সঞ্চালিকা -আপনি এখানে কীভাবে এলেন ?
পনি - বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম তারপর
সঞ্চালিকা - তারপর কী ?
পনি - তারপর কী যে হতে থাকে ……
সঞ্চালিকা -কী হতে থাকে ?
পনি -অনেক কিছু একসঙ্গে হতে থাকে। হয়ত ঘুম পেয়ে যায় ।গাড়ি চালাতে চালাতে এমন হতেই পারে । হতে পারে নাকি ?
রাণু তেওয়ারি -সেদিন একজনের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সে বলছিল ,'ভাইয়া , যবে বস্তারে নক্সালবাদ শেষ হয়ে যাবে না , লাল আতঙ্ক , বস্তার শান্ত হয়ে যাবে। ' আমি বললাম ,'শান্তির পরিভাষা কি ? শান্ত হয়ে যাবে বলে কী বোঝাতে চাইছ ? তোমার বাড়ি কোথায় ?' সে বলল ," রায়পুর ,' বললাম ,'কাল কথা হবে। 'পরের দিন আমি কিছু পরিসংখ্যান জোগাড় করলাম , রাজধানী রায়পুরের অপরাধের পরিসংখ্যান দু হাজার চার থেকে দু হাজার একুশ অবধি আর সুখমার পরিসংখ্যানও পেলাম , সেখানে তখন টিকলগুড়াম ঘটনায় বাইশজন জওয়ান শহীদ হয়েছে -লাল আতঙ্কের বড় ঘটনা সেই মাসেই হয়েছিল। এই দু জেলায় জনঘনত্ব আলাদা আবার অপরাধের ধরণ আর মাত্রায় বিস্তর ফারাক।সুকমায় সব থেকে বড় টিকলগুড়াম আক্রমণের ঘটনায় বাইশজন জওয়ান শহীদ হচ্ছে , এছাড়া সেখানে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি যা রায়পুরে হরদম হয়।ওই টিকলগুড়াম এলাকার কথাই ধরেন সেখানে নারী নিপীড়ণের ঘটনা - ধর্ষণের ঘটনা নেই ,সাইবার ক্রাইম নেই , ছিনতাই নেই , লুটমার নেই , ঠগ -ডাকাতি নেই যা সব কিছুই রায়পুরে হয়। সেটা তো সবচেয়ে উন্নত জেলা , মুখ্যমন্ত্রীর অফিস সেখানে , ডিজির অফিস সেখানে। আমি বলব টিকলগুড়ামের মতো এমন অনেক দূরের গ্রাম আছে সেখানে একজন যুবতী হাতে লণ্ঠন নিয়ে রাতে হেঁটে পুরো গ্রাম ঘুরে নিশ্চিন্তে ফিরতে পারে। একবার তার মনেও আসবে না কোন ভয়ের কথাই । আজকের দিনে রায়পুরের অন্ধকার কোন গলিতে একটা মেয়ে বেরিয়ে দেখুক -ছ বছরের বাচ্চাকে পর্যন্ত ধর্ষণ করে দিচ্ছে । তাই সুরক্ষিত এলাকা কোনটা ? রায়পুর না পুরভাতি -হিডমার ( মাওবাদী কম্যান্ডার মাধভি হিডমার কথা বলছেন ) গ্রাম ? হ্যাঁ , এটা ঘটনা যে মাওবাদীদের জন্য বস্তারের একটা আতঙ্কবাদী পরিচিতি হয়ে গেছে ,ওদের সমর্থনে বলছি না । সেটা বাদে বস্তারের যে পরিবেশ তা খুবই শান্তিপ্রিয়। এটা অশান্ত করছে কিছু অতি চালাক, যাদের নিজের নিজের ধান্দা আছে , সে জন্য বস্তারকে নিয়ে যে যা পারছে বলে যাচ্ছে।
সঞ্চালিকা -আচ্ছা একটা কথা যা নিয়ে লোকে আজকাল আলোচনা করছে সেটায় আসি -পানডুম হয়ে গেছে ? বস্তারের পানডুম হয়ে গেছে , এখন শুধু খাওয়া বাকি।
রাণু তেওয়ারি -হ্যাঁ , কথাটা সবার আগে আমার মনেই এসেছিল ,এখানে বীজ পানডুম পালন করা হয়। বীজ পানডুম উৎসব বলতে বোঝায় যে যখন কোন নতুন বীজ -ফলের সময় আসে , খাওয়ার আগে একটা মূলবাসী সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া চলে পূজা পাঠের। সবার আগে দেবতাকে অর্পণ করে তবেই সেসব খাওয়া হয় -একেই পানডুম বলে। সেরকমই এখন বস্তার পানডুম চলছে , আমার মনে এলো বস্তারের পানডুম ? বস্তারকে খাওয়ার আগে পানডুমের সময় চলছে। দেখুন মাওবাদকে খতম -মানে যে কেউ বারবারই একথা বলবে -আমি জানি লোকে কমেন্ট দেবে -এ লোকটা মাওবাদী সমর্থক যা আমি নই মোটেই। আমি আড়াই -তিন ঘন্টা অপেক্ষা করি ভোট দিতে -আমি গণতন্ত্রের পক্ষে আর মাওবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। সেসব সত্ত্বেও আমি অন্য একটা দৃষ্টিতে দেখছি -এখন চারটে খনি আছে ,পঞ্চাশ লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে আরো খনি হবে , আরো অনেক কিছু শোনা যাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে ম্যানুভার রেঞ্জের (সেনার প্রশিক্ষণের আর যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির সমতুল্য টেরেনে মহড়ার জন্য কনফ্লিক্ট জোনে -সংঘর্ষের এলাকায় কৌশলগত বিশাল এলাকা ) কথা - যদিও আমার কাছে এর সপক্ষে প্রমাণ কিছু নেই। এসব কিছুই বস্তারের মূলবাসী জীবনে খারাপ প্রভাব তো ফেলবেই। মাওবাদী নিয়ে যদি এতোই সমস্যা , দুহাজার চোদ্দতেই এসব করা হলো না কেন ? আমি যখন এ কথা বলছিলাম কেউ একজন বললো - তখন তো রাজনাথ সিং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন , কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন তাতে কী এসে যায় , বিজেপিই ক্ষমতায় ছিল। চোদ্দতে কেন্দ্রে আর রাজ্যে দু জায়গাতেই বিজেপি ছিল -রমন সিংজি । ওঁদের ইচ্ছেশক্তিতে এসব হলো না কেন যা এখনকার ইচ্ছেশক্তিতে হচ্ছে। অন্য কিছু কারণ আছে। সেসব এখনই বলাটা আগে বলা হবে , বললেও কিছু এসে যাবে না কারণ কিছু বদলাবে না , কারণ এক্ষেত্রেও হই হে সই জো রাম রচি রাখা -রামের ইচ্ছেতেই হবে। আমার তো মনে হয় রাম চাইছেন খনি হোক কারণ রামের পার্টিই তো আছে। এজন্য এই জন্য পানডুম চলছে , বস্তারকে খাওয়ার তোড়জোড় চলছে -বীজ পানডুমের পর বস্তার পানডুম।
পনি – আপনারা ঠিক কী নিয়ে আলোচনা করলেন ?
সঞ্চালিকা -আমাদের আলোচনা শেষ হয়নি ।
পনি - হয়নি ?
সঞ্চালিকা -চলছে।
পনি –চলছে ?
সঞ্চালিকা – হ্যাঁ ।
পনি -ও , আচ্ছা। তবে খাওয়ার কথা কী যেন বললেন ?
সঞ্চালিকা -খাওয়ার তোড়জোড় চলছে।
পনি - এখনো ?
সঞ্চালিকা -এখনো।
পনি -ঠিক আছে।
সঞ্চালিকা - কী ঠিক আছে ?
পনি - না এমনি বললাম।
সঞ্চালিকা - তো বস্তারকে খাওয়ার তোড়জোড় চলছে। আপনারা জানেন বস্তার শুধু অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মাওবাদীদের জন্য শুধু নয় তার বিশাল খনিজ সম্পদের জন্যও বিখ্যাত। নানা ভাবে উত্তোলন করা যায় একরকম সব খনিজ সম্পদ বস্তারে আছে বিপুল পরিমানে। ওই কারণেই জল জঙ্গল জমিনের অধিকারের কথা এখানে ওঠে। সে নিয়ে লাগাতার তর্ক বিতর্কও চলছে। মানবাধিকার কমিশনও এসেছিল , নানা মতবাদের লোক বস্তারকে নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত। আচ্ছা , এই নকশালরা আপনাকেই শুধু ডেকে নেয় কেন ?
রাণু তেওয়ারি –ডেকে নেয় না , এবারই প্রথম ডাকলো ।
সঞ্চালিকা –প্রথম বার ?
রাণু তেওয়ারি -আপনি এমন বলছেন , আমাকে নকশালি মুখপত্র না বানিয়ে দেন !
সঞ্চালিকা – ওরা তো যাকে তাকে ধারে কাছে ঘেঁষতে তো দেয় না ।
রাণু তেওয়ারি - সবাইকেই দেয়। আপনার মনে আছে ইংল্যান্ডের ওই ছেলেটার কথা -সাইকেলে আসছিল। সুকমায় মাওবাদীরা ধরলো। ও গুগুল ম্যাপ দেখে আসছিল , লোকেশনে যা দেখিয়েছে -ঢুকে পড়েছিল মাওবাদী এলাকায়। মাওবাদীরা ওর কোন ক্ষতি করেনি , সতর্কতার জন্য তিন চারদিন কথাবার্তা বলে নিঃশর্তে ছেড়ে দিয়েছিল। আপনিও যেতে পারেন , বলছিলাম না , খোলা মনে যান , মনে প্যাঁচ কষলে ঝামেলা আছে। সবচেয়ে বড় কথা , কাল আপনাকে বলছিলাম না ,যেটা নিয়ে আপত্তি ওঠে , তাতে আমি একমত যে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে কী হবে ? সমাজের জন্য তারা করেছেটা কী ? কিস্যু করেনি। লোকে বলবে বেশি জ্ঞানী হয়ে গেছে। ওর বস্তার টকিজ রমরমিয়ে চলছে -চার ছ লাখ সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেছে -এখন এসেছে বাবা জ্ঞানচাঁদ হয়ে। সত্যিটা বলুন না - ওরা সমাজের জন্য কী এমন করেছে যে সাক্ষাৎকার নিতে হবে ? সবাই বলবে -আজ এই যেখানে এসেছি তার পেছনে এক কাহিনি আছে , সফল হলে সেটা কাহিনি আর ধ্যাড়ালে ধ্যাড়ানি। আমাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে কী হবে ? আমরা যদি সৎ ভাবে কাজ করতাম , সমাজের এই হাল হতো না। আমি তো এই কাজটা বেছে নিয়েছি। আমি বলছিলাম না এটা পেশা নয় তপস্যা। এই তপস্যার পথে এগিয়ে আপনি কাজের সঙ্গে বেইমানি করবেন আর আজ আপনি সাক্ষাৎকার দিতে এসেছেন। আমিও তো অনেক ক্ষেত্রে বেইমানি করেছি , তাই কেউ জিজ্ঞেস করলেই বলি - আমার শুরু চাপ দিয়ে টাকা আদায় করে, যাতে কেউ দোষ না দেয় যে তুমি কোন গঙ্গা জলে ধোয়া। আমি এটাও বলি যে আজকের দিন পর্যন্ত আমি সৎ আছি, জানি না কাল থাকব কিনা। হতে পারে কেউ এমন দাম দিল যে আমি বিক্রি হয়ে গেলাম । যতদিন ঠিক আছি বলে যাব , বিক্রি হয়ে গেলে বলা বন্ধ করে দেব।
পনি –আমি কি জঙ্গলে এসে পড়েছি ?
সঞ্চালিকা - কী মনে হয় ?
পনি -জঙ্গল আর কোথায় ?
সঞ্চালিকা –কাটার তোড়জোড় চলছে ।
পনি -মনে হয় কাটা হয়ে গেছে। শুধু কিছু ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে। সেখানে চলে এসেছি আর পরপর বেশ কিছু প্রশ্ন করেছিলাম যার প্রতিটা উত্তর দেয়ার জন্য কেউ ছিল না , ছিল কি ?
সঞ্চালিকা -তবে আমি শুনতে পেয়েছিলাম।
পনি - কি জানি ?
সঞ্চালিকা -তবে এলাম কী ভাবে ?
পনি -জানি না বাবা কী ভাবে এলেন ! কে যে কী ভাবে ……
সঞ্চালিকা -শুনেই এসেছি আর কিছু নয়।
পনি – ও ।
সঞ্চালিকা - আমাদের যে ভয়ের পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে -সব কিছুর ঊর্ধে উঠে বলাটা ঠিক নয় -এসব কিছু মাথায় রেখে যে লোকের প্রত্যাশাপূরণের জন্য কাজ করে যেতে হবে -ভয়ের পরিবেশও কিছুমাত্রায় থেকে যাচ্ছে , আপনি বলছিলেন না। লোকের কাছে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে আবার টাকাপয়সার ব্যাপারটাও আছে , চ্যানেলের কিছু বাধ্যতা থাকছে কী দেখাবে , কী দেখাবে না এনিয়ে - এর বাইরে গিয়ে আপনি তো নিজের ইউটিউব চ্যানেল বানিয়েছেন - এখন কেমন চলছে ?
রাণু তেওয়ারি - আপনার ?
সঞ্চালিকা - মানে আমরা যা দেখছি সেসব দেখানোর চ্যালেঞ্জ কেমন ?
রাণু তেওয়ারি - খুব ছোটছোট আর অনেক বড় বড় সব চ্যালেঞ্জ। কখনো এমন হচ্ছে যে ডিজেলের পয়সা নেই , কখনো মনে হচ্ছে অন্যের সঙ্গে একসাথে গেলে বাজেট ম্যানেজ হবে ,কখনো এমন হচ্ছে যে ক্যামেরা ধরার লোক নেই , কখনো সেলফি মোডে শুট করতে হচ্ছে। খবরটা বড় কিন্তু সেলফি মোডে নিজেই তুলছি যেমন হিডমার গ্রামে গিয়ে ওনার ছেলেবেলার বন্ধুকে পেলাম , যিনি ওঁর সঙ্গে গরু চরাতেন। ওটা পুরো সেলফি মোডে শুট করা , এই তো হালেই করলাম।
সঞ্চালিকা -হ্যাঁ।
রাণু তেওয়ারি - বিরাট চ্যালেঞ্জ নয় এসব কাজেরই অঙ্গ। চ্যালেঞ্জ বলাই ঠিক নয় -কাজের অঙ্গ ,চ্যালেঞ্জ বলে এটাকে বিক্রি করা উচিত নয়। চ্যালেঞ্জ আছে , চ্যালেঞ্জ আছে বলা বন্ধ করুন।
সঞ্চালিকা - চ্যালেঞ্জ থাকলে করছ কেন ।
রাণু তেওয়ারি - করছ কেন বাবা ! আমার বাড়িতে কেউ হত্যে দিয়ে বলেছিল - ভাইয়া আপনি বস্তার টকিজ করে আমাদের উদ্ধার করুন ! আজ বন্ধ করে দিলে , কাল থেকে দর্শক দেখাও বন্ধ করে দেবে । দিন তিনেক মনে রাখবে, আহা কত ভালো খবর করতো। পাঁচ দিনের মাথায় ঘরের ডাল -ভাত -আলু চচ্চড়ির চিন্তায় ডুবে যাবে। কেউ মনে রাখবে না। যে যার ইচ্ছেয় করছে , বলছে কত কামাবো - সব কিছু কমিয়ে যান -কেউ নাম কামাবে , কেউ পয়সা কামাবে। আমি বস্তার টকিজ করছি লোকে বলছে -আপনি কী দারুণ খবর করেন। মানুষ তো , ভেতরে ভেতরে গদগদ হয়ে যাই। সে শুনে প্রাণিত হয়ে আরো ঝুঁকি নিয়ে ভালো খবর করতে ছুটছি। এই যে করেগুট্টার পাহাড়ে এনকাউন্টার হলো , কেউ যেতেই পারছিল না , লুকিয়ে চুরিয়ে চলে গেলাম -গুলির আওয়াজ আসছে -কী দরকার এতো ঝুঁকি নেওয়ার ? শুধু এজন্যই - দর্শককে দেখাতে হবে আমি কত ঝুঁকি নিতে পারি।
সঞ্চালিকা - হুম।
রাণু তেওয়ারি - ওই এলাকায় বার বার যাচ্ছি -জানি যে জওয়ানরা যাচ্ছে -আই ই ডি বিস্ফোরণ হয়ে তারা ঘায়েল হচ্ছে -ডিটেক্টরই নেই ওসব এলাকায় , তবু যাচ্ছি পাগলের মতো। যখন যা কিছু হয়ে যেতে পারে। এই তো সে দিন অবুঝমাড়ের বড়গাঁও যাচ্ছিলাম , সেদিন মাথায় এক লাইন এলো -ইন্দ্রাবতী নদী শুখিয়ে গেছে -হিডমার গ্রামে গিয়ে দেখলাম কাটা কাটা গাছ পড়ে আছে -ফেসবুকে দু এক লাইন লিখে রাখি কখনো কখনো।মাথায় কটা লাইন এলো :
শুখতি নদীয়া
উজড়তে জঙ্গল
বস্তার মে সব
মঙ্গল মঙ্গল
সঞ্চালিকা -হুম।
রাণু তেওয়ারি - ভাবি এ কবিতার সঙ্গে একটা ছবি তুলে দিই । বড়গাঁওতে ইন্দ্রাবতী নদীর ধারে পাথরের ওপর বসে ফটো তুললাম।ওপরে উঠে মহিলা সংঘর্ষ সমিতির সভাপতি সরস্বতী বৈয়ামের সঙ্গে দেখা। যখনই যাই খুব আদর যত্ন করেন উনি -হাত মিলিয়ে বলেন ,'জোহার স্যার। '' খাওয়ান নিজের হাতে- ভাত আর আলুর দম। তিনদিনের মাথায় উনি বাসন ধুতে , আমি যেখানে বসে ছবি তুলেছিলাম , সেখানে গেলেন , মাওবাদীদের বোম পোঁতা ছিল ফেটে ছিটকে পড়লেন -একটা পা চলে গেছে। তবু করে যাচ্ছি। হতে পারতো আমি ওখানে গেলাম আর আমার পাই গিয়ে পড়ল -একহাত দূরে বোম পোঁতা ছিল , জলের ধারে যাবার দরকার নেই তাই যাইনি , উনি গিয়েছিলেন। এইভাবে আমাকে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তো এইসব চ্যালেঞ্জ -কে বলেছে তোমায় করতে ?
সঞ্চালিকা - এসব যদি চ্যালেঞ্জ হয় তবে করো না।
রানু তেওয়ারি - করো না।
সঞ্চালিকা - ঠিক।
পনি –কোন টা করার কথা বলছিলেন ?
সঞ্চালিকা – মানে ?
পনি – না আমি ঠিক বুঝতে পারিনি ।
সঞ্চালিকা – কোনটা ?
পনি –চ্যালেঞ্জের কথা । তারপর ধরুন বোমের ব্যাপারটা ।
সঞ্চালিকা – ওকে আই ই ডি বলে ।
পনি - ইন্ডিজেনাস এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস।
সঞ্চালিকা - মাওবাদীরা ওয়ার জোনে পুঁতে রাখে।
পনি - আমরা কি ওয়ার জোনে ?
রাণু তেওয়ারি - কেউ একজন বলছিল ,''বস্তারে মাওবাদ শেষ হয়ে যাবে , বস্তারের মূলবাসীদের জীবনে নতুন সকাল আসবে। '' আমি বললাম,'' এখনো ওদের দিন হচ্ছে , রাতও হচ্ছে আপনার ঘরে যখন হয় , ওদের রাত বড় প্রশান্তির রাত। '' উত্তর পেলাম ,'' আপনি ভুল করছেন। মূলবাসী ছেলেপিলেরা পড়াশোনা শিখবে , জীবনে উন্নতি করবে। '' আমি বললাম ,'' যারা বিএড পাস করে বেরোচ্ছে আগে তাদের চাকরি দিয়ে দিন। ''
সঞ্চালিকা - ঠিক কথা।
রাণু তেওয়ারি - এতো শিক্ষিত যুব প্রজন্ম, যারা আন্দোলন করছে , আপনার হাতে যদি এতোই চাকরি যা আপনি এই মূলবাসীদের দেওয়ার জন্য রেখে দিয়েছেন - তাদের দিয়ে দিন । আগে ওদের দিয়ে দিন না। কাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন যে পড়াশোনা করলে চাকরি পাবে ? যারা করেছে তাদের তো দিতেই পারছেন না ! উন্নয়ন হবে , উন্নয়ন হবে - তো একটা কথা শুনে রাখুন কোভিডের সময় আপনাদের বড় বড় হাসপাতালে যখন পয়সাওলা লোক একমুঠো অক্সিজেনের জন্য শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মরে যাচ্ছিল, তখন অবুঝমাড়ের মূলবাসীরা টেরও পায়নি কোভিড বলে কোনো রোগ আছে যার জন্য অক্সিজেনের দরকার পড়ে !
পনি আর রাণু তেওয়ারি
সকলে বলে একবার যদি মিডিয়ার খোঁজে পড়েন তো মুক্তি নেই ।পনি, যে ঠিকই করেছে অফিস যাবে , যাবার বা ফেরার পথে সে যে কেন এমন জায়গায় চলে আসে যেখানে ফাঁকা । যেখানে প্রশ্ন করলে উত্তর দেওয়ার কেউ থাকেনি আশপাশে অথচ সেখানে গিয়েই কেমন ভাবে সে সঞ্চালিকার সামনে পড়ে যায় কে জানে বাবা । আর স্বভাবতই সঞ্চালিকাতে ব্যাপারটা আটকে থাকেনি । রাণু তেওয়ারি এগিয়ে আসে , উত্তরদাতা এবার পনিকে প্রশ্ন করবে বলে ঠিক করেছে কেন কে জানে ?
রাণু তেওয়ারি – আপনি ?
পনি – আমি পনি ।
রাণু তেওয়ারি – আপনি কোথায় এসেছেন জানেন ?
পনি – ঠিক বুঝতে পারছি না ।ঠাণ্ডা , প্রচুর হাওয়া দিচ্ছে ।গাড়িতে করে আর যাওয়া যাবে না ।
রাণু তেওয়ারি – বাইকে করে কিছু দূর যেতে পারেন ।
পনি – কত দূর ?
রাণু তেওয়ারি – তাহলে বলি ?
পনি – আপনি কিন্তু আমাকে জিজ্ঞেস করতেই এসেছিলেন ।
রাণু তেওয়ারি – কিন্তু যা দেখছি আপনি……
পনি – আমি পুরো ঘেঁটে গেছি ।আপনি বলতে পারেন ।
রাণু তেওয়ারি – অবুঝমাড়ের অনেক ভেতরে এক খুব সুন্দর গ্রাম আছে। গ্রামের নাম গুন্ডেকোট , গুগুল করবেন না , গুগুল দেখাতে পারবে না। অবুঝমাড়ের ভেতরে এমন অনেক গ্রাম ই আছে যা গুগুলে পাওয়া যায় না। যখন আপনি এখানে আসবেন কিছু জ্যান্ত মানুষকে দেখতে পাবেন যা থেকে বোঝা যাবে এখানে সত্যি সত্যি একটা গ্রাম আছে।
পনি -জ্যান্ত মানুষ ?
রাণু তেওয়ারি -হ্যাঁ জ্যান্ত এবং মানুষ যাদের দেখে বোঝা যাবে এটা একটা গ্রাম।
পনি - এটা ভাবিনি তো। আসলে এতো লোক দেখি - গিজগিজ করছে লোক যে লোকের অভাব বুঝি না। লোক দিয়ে জায়গাটা চেনা ……
রাণু তেওয়ারি -জ্যান্ত লোকেদের কথা বলছিলাম।যারা হাঁটে মাইলের পর মাইল স্রেফ বেঁচে থাকতে চায় হাতে –পায়ের সঙ্গে মাথা দিয়ে , জঙ্গল দিয়ে , জমি দিয়ে ।
পনি –ও ।
রাণু তেওয়ারি - গ্রামটা খুবই সুন্দর। এখানে যারা থাকে তারা বহু যুগ ধরে একইরকম ভাবেই আছে। গ্রাউন্ড রিপোর্ট করতে এসেছিলাম মনে হলো গ্রামটা আপনাদের ঘুরে দেখাই। মারিয়া মূলবাসীরাই এখানে থাকে। এই গ্রামে পৌঁছতে আমাকে অনেকটা হেঁটে আসতে হলো। আপনি আসতে চাইলেও আপনাকে অনেক হেঁটে আসতে হবে।
পনি - বাহ্। দারুণ।
রাণু তেওয়ারি - হ্যাঁ দারুণ। প্রথমে আমরা নারায়ণপুরের অনেকটা ভেতরে ওরচা এলাম আমদই উপত্যকা পার হয়ে , যেখানে খনি হয়েছে , রাস্তার মা বাপ নেই -তবু ওই অবধি গাড়িতে যেতে পারবেন। ওরচা থেকে মোটর বাইকে করে হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড় করে কুর্মেল অবধি এলাম। সেখান থেকে আরো ভয়ানক এক রাস্তা ধরে কোনক্রমে বোটের এলাম। এমনই রাস্তা বাইকের ফুট রেস্ট গেলো ভেঙে। বোটের থেকে গুন্ডেকোট হেঁটে আসতে হবে। আমরা বোটের থেকে সকাল দশটার সময় বেরিয়ে তিনটের সময় গুন্ডেকোট পৌঁছেছিলাম। এবার বুঝুন।
পনি- কী ?
রাণু তেওয়ারি - পথে আসতে অনেক খাড়াই পাহাড় ডিঙোতে হয়েছে আর এসে পৌঁছলাম গুন্ডেকোটে যা এক গ্রাম। এ গ্রামের কথা কেউ জানত না -এখন এর কথা সবাই জেনে গেছে। এর সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে যে এর পাশেই এক বড় এনকাউন্টার হয়ে গেল।
পনি -কী ?
রাণু তেওয়ারি -এনকাউন্টার হয়ে গেল যাতে মাওবাদীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় মাওবাদী নেতা……
পনি - কে ?
রাণু তেওয়ারি - বসবারাজু , উনি মারা গেলেন।
পনি - মারা গেলেন ?
রাণু তেওয়ারি - আরো কিছু মাওবাদী -সব মিলিয়ে সাতাশজন মারা গেলেন। এখানে রিপোর্ট করতে এসে এ গ্রামের সন্ধান পাই। আর পেয়ে গেছি মানকুকে , যে এ গ্রামের লোক। আচ্ছা মানকু এখানে , এই দূরে তোমরা চাল ডাল কেনো কোত্থেকে ?
মানকু -চাল ডাল আমরা ওরচা থেকেই আনি ?
রাণু তেওয়ারি -ওরচা থেকে ?
পনি - অনেকটা।
রাণু তেওয়ারি - কত সময় লাগে।
মানকু - সে -এই ধরুন না সোমবার বেরিয়েছে -আজ বৃহস্পতিবার।
রাণু তেওয়ারি - আজ বুধবার।
মানকু -আজ আসতে পারবে না।
পনি -কবে আসবে ?
মানকু -সোমবার আদের পৌঁছেছে। মঙ্গলবার ওরচা পৌঁছবে। আজ ফিরতে আরম্ভ করে কাল পৌঁছে যাবে।
রাণু তেওয়ারি - প্রত্যেক মাসে এই করতে হয় ?
মানকু -প্রত্যেক মাসেই।
পনি - প্রতি মাসে।
মানকু –পুরোটা হেঁটে ।
পনি – শুধু হেঁটে ?
রাণু তেওয়ারি - হেঁটে হেঁটে প্রত্যেক মাসে চার দিন করে লাগে চাল ডাল আনাজপাতি আনতে। আর কী কী আনো তোমরা ?
মানকু - কাপড় চোপড় ,লঙ্কা -মশলা ,নুন , বাচ্চাদের জন্য বিস্কুট।
রানু তেওয়ারি - একবারই।
মানকু -একবারই।
পনি -মাত্র একবার ? আর কিছু লাগে না ?
মানকু -কী ?
রাণু তেওয়ারি -নারায়ণপুর টাউনে যাও ?
মানকু - খুব দরকার হলে।
রাণু তেওয়ারি - গোটা গ্রামের কজন গেছে ?
মানকু - হাসপাতাল যাবার দরকার হলে গেছে , আধার কার্ড বানানোর জন্য গিয়েছিল।
রাণুর ড্রোন অনেক ওপর থেকে গুন্ডেকোটের বাঁশের বেড়া দিয়ে বানানো গুটি কয় ঘর দেখতে থাকে। পনিও দেখছিল , সে গ্রামটার ঘরের ভেতরও দেখেছে। সেখানে দেওয়াল মাটি দিয়ে লেপা , ভেতর থেকে লেপা ফলে ভেতরে কী হয় বাইরে থেকে দেখা না মুমকিন তেমনি বাইরেরটাও দেখা যাবে না । এইভাবে সব দেওয়ালের মতো এখানেও লোকে দেওয়াল দিয়েছে। তার নিজের বাড়ির কথা এবার মনে পড়ে গেল। সে কি এজন্য যে কিছুক্ষণ ভুলে থাকা যায় যায় , তারপর নিজের নিজের বাড়ির কথা মনে পড়ে যায় ? আর সেজন্যই গুন্ডে কোটের লোকেরা চারদিন হেঁটে হেঁটে চাল ডাল নিয়ে আবার ঘরে আসে প্রতি মাসে। তারা বাড়ি থেকে রওনা হয়ে অনেক ঘাঁটি পাহাড় আর জঙ্গল টপকে অথবা জঙ্গল কাটা দেখতে দেখতে , খনি খাদান সব দেখতে দেখতে যখন ফিরে আসতে থাকে তখন তাদের তীব্র ভাবে বাড়ির কথা মনে পড়তে থাকে এটা পনি বুঝতে পারছিল।
রাণু তেওয়ারি -কেউ হাসপাতালে গেলে কী ভাবে নিয়ে যাও ?
মানকু -একবার একজন মেয়েকে বাঁশে করে বেঁধে অন্য রাস্তা দিয়ে বৈরামগড় নিয়ে গিয়েছিলাম।
রাণু তেওয়ারি - বৈরামগড় কীভাবে গেলে ওটা তো বিজাপুর জেলায় আর এ জায়গাটা তো নারায়ণপুর জেলা।
মানকু -ওখানে রাস্তা ভালো। অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে কিছুটা ।কিছুদূর গিয়ে নেটওয়ার্কও আছে , ফোন করা যায় ।
রাণু তেওয়ারি -ওদিকে যেতে নদী পার হতে হয় না ?
মানকু - কী ?
পনি - নদীর কথা বলছে বোধহয়।
মানকু -হ্যাঁ , ছোট ছোট নদী পার হতে হয়।
এরপর কথার শেষ হয় না গুন্ডেকোটের অনেক কথা হয়। ক্রমে চোখের সামনে গুন্ডেকোট বলে কিছু হতে থাকে। যা হয় সেটা থেকে যাবে যা পনি দেখবে। সেখানের জলের কথা উঠবে , ঝিরঝিরে পাহাড়ি নর্দমার মতো স্রোতের জল যা খাওয়া হয় , সেখানের খাবার খাওয়ার কথা উঠবে , পুলিশের মারের কথা। মাওবাদীরা সে গ্রামে এসেছিল তার কথা পুলিশ , দলছুট মাওবাদীদের নিয়ে তৈরি বস্তার রিজার্ভ ফোর্স না শুনে ছাড়বে কেন তাই গুন্ডেকোটকে বলতে হবে। সে কী বলবে ? এটা পরের পরের পর চলতে থাকে আর রাণু সেসব গ্রাউন্ড রিপোর্ট করে চলে। সব কিছুর মধ্যে পনিও কি জড়িয়ে যাচ্ছে ? সে কিছুটা , বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গার সন্ধানে ছিল , এক ঘোরের মধ্যে এখানে এসে পড়েছে। এর বাইরে পনি বেরোতে পারবে কী করে ? সে কী ক্রমশ আটকে পড়েছে কিন্তু বাড়ির কথা তার মনে পড়তে শুরু করেছে । সেখানে এক দেওয়ালের কথাও তার ক্রমে মনে পড়তে শুরু করলো যেখানে কী কী যেন আছে ?
পনি - আপনি কী করছেন ?
রাণু তেওয়ারি -আমি বস্তারকে দেখাচ্ছি তাই গুন্ডেকোটকে দেখাচ্ছি।
পনি - এরমধ্যে কী তৈরি নেই - বানানো ?
রাণু তেওয়ারি - তা আছে। যেমন আছে সে রকম তৈরি করছি বলতে পারেন- বানাচ্ছি ।
পনি - আপনি পার্টির কথা বলছেন।
রাণু তেওয়ারি - কোন পার্টির ?
পানি -তা জানি না। এখানের কিছুই জানি কি ?
রাণু তেওয়ারি - তবে আপনি কী বলছেন ?
পানি - আমি ঘেঁটে গিয়েছিলাম।
রাণু তেওয়ারি - আপনার বলার মতো কোন বস্তার নেই ?
পনি - না।
রাণু তেওয়ারি -তবে কী আছে ?
পনি - আপনি কিন্তু এবার জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করেছেন।
রাণু তেওয়ারি -আমার কাজই তো তাই। সে করতেই এসেছি।
পনি -এসেছেন।
রাণু তেওয়ারি - তাই তো , দেখতে পাচ্ছেন না ?
পনি দেখলো সে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়িতে ।সেখানে বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে একটা শ্যাওলা ধরা দেওয়াল ঢুকে পড়েছে কবে , একসময় যা বাইরে ছিল। এখন গ্যারেজের ছাদের তলায় বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে বেশ নিশ্চিন্তে আছে , রোদ বৃষ্টি লাগে না শুধু সরু জলের ধারা ছুঁয়ে যায় । তবে দেয়ালটা অদ্ভুত রকমের ডাঁটো , আরো ডাঁটো হলো তার ওপর লেখা পার্টির কথা যা সেখানে ভোটের প্রতীক সহ লেখা আছে। কবে সে ভোট চলে গেছে , দিন দিনে লেখারা প্রাচীনত্ব অর্জন করেছে। এখানে পনি আবার খানিক ঘেঁটে যায় । তার আবার কিছু মনে পড়তে পড়তে পড়ে না। কোনটা বেশি প্রাচীন দেয়ালটা না ওপরে লেখা পার্টির কথাগুলো ? গুন্ডেকোটে বাঁশের দেওয়ালের ভেতর এমন দেওয়াল কি চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে এসেছে ? তার কি কোন সম্ভবনা আছে ? সেখানে পার্টির কথা লিখে রাখার কোন সম্ভবনা আছে প্রতীক সহ ? এমন দেওয়াল লিখন যে নিজেকে প্রাচীন থেকে আরো প্রাচীনতর দেখাবে ? এসবের কোন উত্তর আর যাই হোক রাণু তেওয়ারি র থেকে পাওয়া যায় কি ? সে গিয়ে গিয়ে আর জিজ্ঞেস করে করে তার বস্তারই দেখিয়ে চলে , সঙ্গে বলতে থাকে নিজের কথাও, যা মোটের ওপর নির্মাণই বলা যায় কিনা কে জানে ।
কৃতজ্ঞতা - বস্তারের বস্তার টকিজ আর ইয়ুথ উইংস হিন্দি ইউটিউব চ্যানেল যারা সাহসের সঙ্গে সত্যি খবর করে চলে । ওই ইয়ুথ উইংস চ্যানেলে বস্তার টকিজ চ্যানেলের বিকাশ ( রাণু ) তেওয়ারির সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ হুবহু ইটালিক্সে আছে। বাকি নানা অংশ সত্যি আর কল্পনা মিশিয়ে রাখা হয়েছে । বাংলা লিখন আমার ।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।