এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ভ্রমণ  শনিবারবেলা

  • তবিলদারের দুনিয়াদারি - শহর থেকে শহরে - পর্ব ৫ - ডাবলিন

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ভ্রমণ | ০৩ মে ২০২৫ | ১০২ বার পঠিত
  •              

     

    ডবলিন /ডাবলিন 

    বারে বারে কে যেন ডাকে 

    শন(Sean) ও’ ম্যালি বললে, শুধু ট্রেড ফাইনান্স নয়, ডাবলিনে আরও নতুন কিছুর সন্ধান পাবে। ইউরোপের অনেক পাবে চক্কর কেটেছ জানি, কিন্তু আয়ারল্যান্ড যাওনি। কোনো খাঁটি আইরিশ পাব এ অবধি দেখোনি, কারণ আয়ারল্যান্ডের বাইরে তার অস্তিত্বই নেই। চলো, নিয়ে যাবো ম্যাকডাইডে! 

    শনের বাড়ি কর্ক শহরে, আমাদের ডাবলিন অফিসে ট্রেড ফাইনান্সের ভারপ্রাপ্ত অফিসার। তার সঙ্গে নিয়ে যাবে ডাবলিন ও কর্ক; বাণিজ্যের সঙ্গে আরও কিছু? ১৯৯৪, সেই আমার প্রথম আইরিশ সাগর পাড়ি দেওয়া। আয়ারল্যান্ডের প্রথম উল্লেখ শুনি স্কটিশচার্চ কলেজে অর্থনীতির ক্লাসে – দাম বাড়লে চাহিদা কমে এটি সর্বজনবিদিত থিয়োরি কিন্তু ১৮৪৬-১৮৪৮ সালে প্রধান আইরিশ খাদ্য আলু, দুর্ভিক্ষের সময়ে দেখা গিয়েছিল এর দাম বাড়লেও চাহিদা কমেনি, কারণ আলুর কোনও বিকল্প ছিল না। পঞ্চাশের মন্বন্তরের মতন এটি ইংরেজের আরেক কুকীর্তি। 

    কোনো এক গ্রিক দার্শনিক বলেছিলেন, দিবাভাগে আপন পেশার কাজটি সারা হলে, অবসর সময়ে মানুষ যা করে সেটিই তার পরিচয়কে সম্পূর্ণতা দেয়! দাবা খেলে, বই পড়ে, মৌমাছির চাষ করে, না বার বা কফি হাউসে বসে? একেই আমরা অনেককাল বাদে ‘হবি’ আখ্যা দিয়েছি। আপিসের ছুটির পরে সে মুক্তমানুষ, যেখানে বাজেটের বিভীষিকা নেই, বসের চোখ রাঙানো নেই। তাই একটা দেশের মানুষকে পুরো চেনার পয়লা মোকাম হয়তো তাদের কফি হাউস বা পানশালা, যেখানে সন্ধ্যার পর তারা সম্মিলিত হয়ে থাকে। বারে বা পাবে মানুষজনের মেলামেশা হয় সহজে, কৃত্রিম সৌজন্যের বালাই থাকে না, বিয়ার বা শ্নাপসের দৌলতে জিভের আড়টি ভাঙে চট করে, রেখেঢেকে কথা বলার পাট চুকে যায়। যে যার মতন গপ্প করে, আবহাওয়া থেকে আর্সেনাল; নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয় না হলে তার ভেতরে ঢুকে পড়ার কোনো বাধা থাকে না। পাঁচ মিনিটের পরিচিতকে জিগরিদোস্ত মনে হতে থাকে। আজ নির্দ্বিধায় বলতে পারি জার্মান ভাষায় বিন্দুমাত্র অধিকার অর্জনের যে ফুটুনি করে থাকি তার কৃতিত্ব ইজারলোনের গোয়েথে ইনস্টিটিউটের যতটা নয় তার চেয়ে অনেক বেশি ফ্রাঙ্কফুর্ট জাখসেনহাউসেন, বেরগার স্ত্রাসের কিছু পাবের প্রাপ্য। 

    অফিসের কাজে, ব্যবসায়িক আলোচনার সময়ে লোকে আমার বিদেশি চেহারা দেখে বিনয় সহকারে জার্মানটাকে সরল করে বলেছেন। দুটো কথা শুনেই গদগদ: ‘আহা আপনি কি সুন্দর জার্মান বলেন’। এমন সার্টিফিকেট জার্মানরা আকছার দিয়ে থাকেন। শুনতে যতই ভালো লাগুক, সেটা ডাহা মিথ্যেকথা। পাবে কিন্তু কেউ কাউকে রেয়াত করে না, সেখানে বেনিফিট অফ দি ডাউট নেই, আপনি বুঝলেন কি বুঝলেন না তাতে আপনার পাশের মানুষটির কিছু যায় আসে না। বুদাপেস্টের আন্দ্রাসির কাফে, আমস্টারডামের রেমব্রান্ড প্লেইনে ভাষা নয়, স্থানীয় কালচার বিষয়ক জ্ঞান আহরণ করেছি, ভিয়েনার সান্ধ্যতীর্থ গ্রিনসিঙে বন্ধুদের সঙ্গে গিয়ে আরেক জার্মান ভাষায় শিক্ষা হয়, জুরিখের আলট স্টাডের (পুরনো শহর) জার্মান দুরূহ, অবোধ্য, কিছুই বুঝিনি শিখিনি। ইংল্যান্ডে আসার আগে ইংরেজি ভাষাটা জানি বলে যে গর্বটুকু ছিল, লন্ডন অফিসের বাইরে কভেন্ট গার্ডেনের আশপাশের পাবে কিছুদিন ঢুঁ মারার পরে সেটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়।

    যারাই কিঞ্চিৎ ইউরোপ ভ্রমণ করেছেন তাঁরা জানেন এ মহাদেশে, হয়তো সারা বিশ্বে, এমন কোনও শহর নেই যেখানে অন্তত একটি আইরিশ পাব দেখা যায় না, সতত হাস্যময় আইরিশ – দি আইরিশ আইজ আর স্মাইলিং - জনতা সমবেত হন না, প্রতি সন্ধ্যায় আইরিশ লোকসঙ্গীত শোনা যায় না! কিন্তু কোন নূতনের বানী নিয়ে এসেছে শন? 

    - ইউরোপে বহু আইরিশ পাব দেখেছি শন। তোমাদের সবচেয়ে বিখ্যাত এক্সপোর্টের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি ফ্রাঙ্কফুর্টের পাবে। গ্লাসের ভেতরে ঘন কালো বিয়ার দেখে যখন আমি খানিক চিন্তিত, পাশের এক বয়স্ক বিচক্ষণ ব্যক্তি আইরিশ উচ্চারণে বলেছিলেন,, ইউ ডু নট ড্রিংক গিনেস, সন; ইউ ইট গিনেস! এমনকি এস্টোনিয়ার টালিন শহরে আইরিশ পাবের দেওয়ালজোড়া টিভি স্ক্রিনে নিউ কাসল বনাম ওয়েলউইন গার্ডেন সিটির এফ এ কাপের খেলা দেখেছি। 
    - আইরিশ সি পেরুলে আর স্নাগ পাওয়া যায় না! 
    - স্নাগ কি? ব্যাখ্যা করো। এই মূর্খকে জ্ঞানের আলো দাও।
    - সেটার ব্যাখ্যা, বর্ণনা হয় না। নিজে গিয়ে দেখবে। 

    স্নাগ -এর নিদর্শন

    বার বলতে বুঝি টানা লম্বা সরু উঁচু কাঠের টেবিল যার একদিকে সযত্নে সঞ্চিত থাকে জগতের সুধাভাণ্ড, তার অন্য দিকে সম্যক উঁচু চেয়ারে যারা বসেন চক্ষে তাঁদের তৃষ্ণা, তৃষ্ণা তাঁদের বক্ষ জুড়ে। তাঁরা দু পাশের মানুষের, বারকিপারের সঙ্গে দুটো গল্প করেন, ইতিউতি নজর ফেরান সমবেত জুজুতসবের সঙ্গে আসন গ্রহণের তুরীয় আনন্দ উপভোগ করেন চার পাশে ছড়ানো চেয়ার টেবিল তাকে ঘিরে বসেছেন জনতা। বারের উঁচু চেয়ারে অথবা সামনের চেয়ার টেবিলে বসার দুটো আপাত বিড়ম্বনা দৃষ্ট হয়; এই সান্ধ্য মজলিসের বা এই আনন্দমেলায় একেবারে সেন্টার স্টেজটি নিয়ে বসে থাকার ফলে আপনি মঞ্চের মাঝে রইলেন নিভৃতে নয় এবং সন্ধ্যে গড়ালে পাবের সুখী জনতার কলরবের ডেসিবেল উচ্চগ্রামে আরোহণ করে, বাক্যালাপ প্রচেষ্টা হয় দুরূহ। মহিলাদের পক্ষে উঁচু চেয়ারে বসা দুষ্কর কর্ম, দাঁড়িয়ে থাকা যায় এই পর্যন্ত এমন মানুষজনও আছেন যারা পাবে আসতে বসতে চান, কিন্তু সে খবরটা পাবলিক করতে চান না, যেমন লোকাল গির্জার পুরোহিত, থানার দারোগা। তাঁরাও বারের যতটা সম্ভব কাছাকাছি থেকে আনন্দসন্ধ্যা উপভোগ করতে চান।

    শনের সাহচর্যে ডাবলিনে গিয়ে দেখলাম দুশ বছর আগেই প্রখর আইরিশ মেধা এই সঙ্কটের সমাধান করে ফেলেছে; যেমন কোনো পাবের লম্বা বার একাধিক ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত, আপনার সামনে সুধাভাণ্ডের সমারোহ সমেত বারটেন্ডার, কিন্তু আপনার দু পাশে পাতলা কাঠের আবরণ, পেছনে স্বতন্ত্র দ্বার বা পর্দা; আপনাকে বা আপনার সহচর /সহচরীকে তাবৎ জনতা দেখতে পাচ্ছে না, আপনি তাদের কলকণ্ঠ শুনছেন। যে স্নাগের প্রশংসায় শন পঞ্চমুখ, সেটি বার থেকে এক পা দূরের ছোটখাটো কেবিন, যেখানে আপনি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বসে সান্ধ্য আনন্দ উপভোগ করতে পারেন, একপাশে একটি খোপের ভেতর দিয়ে বার টেন্ডার আপনার ইচ্ছা জানতে চাইবে এবং তদনুযায়ী বিয়ার পৌঁছে দেবে, কখনোই পর্দা ঠেলে আপনার আড্ডায় ঢুকে বলবে না, এই যে আর কি চাইলেন?


    আইরিশ স্নাগ



    কলেজস্ট্রিটের সেই ‘পাবলিক রেস্তোরাঁয়’ পর্দা ফেলা কেবিনের দিনগুলি আমার মতন প্রাচীন কারো মনে থাকতে পারে। তবে তার সঙ্গে এর ঠিক তুলনা হয় না; এই কেবিনের দরোজা আপনি ইচ্ছামতন দরোজা তালা বন্ধ করে রাখতে পারেন, এই নিরালা কাঠে ঘেরা পাবের মাঝে শীতল ছায়, এর নাম স্নাগ (Snug)। শব্দটা ইংরেজিতে আগেই পেয়েছি, স্নাগ মানে ঠাণ্ডায় আরাম করে জড়িয়ে নেওয়া গায়ের চাদর, আঃ কি আরাম, এসো দুখিরাম। নিয়মিত অতিথিদের জন্য থাকে স্নাগে ঢোকার আলাদা চাবি, আপনি রাস্তা থেকে চট করে বারের সেই স্নাগে ঢুকে সেই খোপ দিয়ে গিনেস অর্ডার করলেন, কেহ জানিল না! গির্জার সারমন শেষ করে পাদ্রি, রাস্তার রোঁদ শেষে পুলিশ এখানে দুই রাউন্ড পানের পরে টুক করে বেরিয়ে পথ চলতি জনতার সঙ্গে মিশে গেলেন। 

    জেমস জয়েসের সঙ্গে পরিচয় আছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন সিটি ব্যাঙ্ক ডাবলিনের মেজ কর্তা লিয়াম। লজ্জার সঙ্গে স্বীকার করতে হয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রবাসকালে ইউলিসিস পড়তে গিয়ে ঘুম এসে যায়। লিয়াম হেসে বলেন দাম বেশি হলেও ইউলিসিসের চেয়ে ভালো ঘুমের ওষুধ বাজারে মেলা শক্ত! তিনি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ডিউক স্ট্রিটের ডেভি বার্ন্স পাবে যেটি ইউলিসিসে উল্লিখিত। লিয়াম বললেন পারলে জয়েসের পোট্রেট অফ দি আর্টিস্ট অ্যাজ এ ইয়াং ম্যান পড়বেন, ডাবলিনকে চেনার বেস্ট গাইড! 

    লিয়াম দেখিয়েছেন জেমস জয়েসের বসত বাড়ি, সিঞ্জ স্ট্রিটে বার্নার্ড শ’র বাড়ির ঠিকানা দিয়েছেন। 

    ডেভি বার্নস - জেমস জয়েসের প্রিয় পাব ইউলিসিসে উল্লিখিত

     

    বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাজে অনেক দেশ ঘুরেছি, ব্যবসায়িক কারণে নানান মানুষের সঙ্গে মিশেছি, কিন্তু প্রথম আলাপে সাহিত্যচর্চার এমন দৃষ্টান্ত আমার জীবনে দুটো ঘটেনি। ডাবলিনকে সেই দিন থেকে অনেক উঁচুতে স্থান দিয়েছি। আয়ারল্যান্ড, ডাবলিন এবং আইরিশ মানুষ আমার কাছে একেবারে অনন্য, আমার বড়ো কাছের মানুষ। 

    তার গল্প অনেক, ক্রমশ প্রকাশ্য। 

     

    বার্নার্ড শ’র  জন্মভিটা, ৩ আপার সিঞ্জ স্ট্রিট ডাবলিন



    ডাবলিন 
    ভিসা ও ভাষা 

    যে কোনো এয়ারপোর্ট থেকে দেশান্তরি হতে গেলে হাতে থাকা চাই পাসপোর্ট নামক এক জাদুই চাবি (ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে আইডেন্টিটি কার্ড)। ভালগার ল্যাটিনে পাস দি পোর্ট- কোনো কালে জাহাজ থেকে নেমে নাবিকের বন্দর অতিক্রম করার আবশ্যিক পরিচয় পত্র, যা থেকে পাসপোর্ট শব্দটি এসেছে। কিন্তু এমন একটি দেশ আছে যেখানে যেতে গেলে ব্রিটেনের হিথরো বা গ্যাটউইকের সীমান্তরক্ষী আপনার পাসপোর্ট দেখতে চাইবেন না। গ্লাসগো, এডিনবরা, কার্ডিফ বা উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট যেমন ব্রিটেনের অন্তরদেশীয় বিমান বন্দর, তেমনি একশো বছর আগে ছেড়ে আসা পুরনো উপনিবেশ আয়ারল্যান্ড আজও তাদের ‘ঘরোয়া’ অঞ্চল, দুটো আলাদা দেশ হলেও ব্রিটিশ উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ডের মাঝে কোনো সীমানা চিহ্নিত নেই (ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার পরে একটু বাধা-বন্ধ যুক্ত হয়েছে)। লন্ডন থেকে ডাবলিন, লিমেরি, বা শ্যানন যেতে পাসপোর্ট দেখানোর প্রশ্ন নেই, পরিচয়পত্র হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানোই যথেষ্ট; সেটাও আবার ২০০১ সালের পর থেকে। তার আগে ব্রিটেনের আভ্যন্তরীণ বিমান যাত্রায় কোনোরকমের আই ডি দেখাতে হতো না। একবার স্কটল্যান্ডের ইনভারনেস যাব ন্যানি সহ, প্লেনের টিকিট কাটা হয়ে গেছে এমন সময়ে ন্যানি বদল, মিসেস লিজা বার্নেটের জায়গায় যাবে গোল্ডার্স গ্রিনের অষ্টাদশী ইহুদি বালিকা শীরা টেন্ডলার। চেক-ইনের সময়ে কোনো প্রশ্ন উঠল না! 

    নয়ের দশকের মাঝে একবার ছেলের সঙ্গে পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই আয়ারল্যান্ডের শ্যানন এয়ারপোর্টে উপনীত হই, কেউ আটকায়নি। সেটা আরেক গল্প।


    মালিগান জয়েসের আরেক পাব। ডাবলিনারসে উল্লিখিত



    একাদশ শতকে নর্মানরা (আদতে বিজয়ী রাজা উইলিয়াম আগাপাশতলা ফরাসি কিন্তু ব্রিটিশ পাঠ্যপুস্তকে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়াটা মানা হয় না, উইলিয়াম থেকে যান নর্মান, সবাই শেখে ১০৬৬ সালের নর্মান ইনভেশন!) ইংল্যান্ড দখল করার পর থেকেই একাধিকবার আয়ারল্যান্ডে লুটপাট করে। তেমন সুবিধে হয় নি। তবে সপ্তদশ শতাব্দীতে অলিভার ক্রমওয়েলের আমলে পুরো আয়ারল্যান্ডকে কব্জা করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের অধীনে আনা হয়, পরে ইংল্যান্ডের রাজা আয়ারল্যান্ডের রাজা হলেন। ১৮০০ সালের অ্যাকট অফ দি ইউনিয়ন বলে ইংল্যান্ডের রাজা ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস, আয়ারল্যান্ডের রাজা হলেন। ব্রিটেনের পতাকায় এই তিনটি দেশের প্রতীককে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই তার নাম ইউনিয়ন জ্যাক। 

    অনেক রক্তপাতের পরে পাঁচশো বছরের পুরনো উপনিবেশ আয়ারল্যান্ড স্বাধীনতা অর্জন করেছে ১৯২২ সালে, এক কঠিন মুল্যে। আয়ারল্যান্ডের চারটি প্রদেশ – লাইনস্টার, মানস্টার, কন্ট, আলস্টার; ইংরেজ তার স্বভাবসিদ্ধ ছল, বল ও কৌশলে আলস্টার প্রদেশটি কেটে নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে জুড়ে দিল (আজকের নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড); ক্যাথলিক প্রধান আয়ারল্যান্ডের আলস্টারে সাজানো ভোটিং করে ওয়েস্টমিনস্টার দাবি করে আলস্টার প্রটেস্টান্ট, তারা ক্যাথলিকদের সঙ্গে নয়, আলাদা থাকতে চায়। অতএব করুণা করে গ্রেট ব্রিটেন তাদের ভার নেবে, দেশের নতুন নাম হল ইউনাইটেড কিংডম (ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড ওয়েলসকে নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডকে যোগ করে হল ইউনাইটেড কিংডম)। 

    আভ্যন্তরীণ চুক্তি অনুযায়ী (Common Travel Area- CTA) একে অপরের দেশে অবাধে প্রবেশ বসবাস করতে পারেন, চাকরির পারমিট লাগে না। আমরা মনে রাখি না বেনেলুক্স, ইউরোপিয়ান কমন মার্কেট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার বহু আগে এই দু দেশের মধ্যে ফ্রি মুভমেন্ট অফ পিপল নিশ্চিত করা হয়েছিল; কথাটা হয়তো ভালো শোনায় না কিন্তু এই ফ্রি মুভমেন্ট অফ পিপলের পিছনে আসল উদ্দেশ্য ছিল গরিব দেশ থেকে সস্তার শ্রমিক সরবরাহ লাইনটা খোলা রাখা। আইরিশের স্ল্যাং প্যাডি (যেমন স্কটিশের স্ল্যাং জক) – এক সময়ে উইম্পি নামের একটি স্যান্ডউইচ বার্গার চেন চালু ছিল ইংল্যান্ডে ব্যঙ্গ করে বলা হতো WIMPEY stands for We Import More Paddies Every Year. 

    সেই একই ট্র্যাডিশন ইউরোপীয় ইউনিয়নে সমানে চলেছে। আজ লন্ডনের উইম্বলডনে নন পোলিশ কলের মিস্তিরি পাওয়া যায় না, হোটেল রেস্তোরাঁর ডেস্কে বা রান্নাঘরে পূর্ব ইউরোপীয় জনতা একত্রিত হয়েছেন। একই লজিক। 

     

    সিটি ব‍্যাংক  স্টিফেন্স গ্রিন - ১৯৯২



    আমার আইরিশ সহযোগী ক্যারোলাইন ম্যাগিনের একটি গল্প সিটি ব্যাঙ্কে চাউর হয়েছিলো। ডাবলিন ট্রিনিটি কলেজের ডাকসাইটে ছাত্রী, সিটি ব্যাঙ্কে উচ্চপদে আসীন ক্যারোলাইন ব্যাঙ্কের কাজে লন্ডন থেকে লুকসেমবুরগ যাবে; হিথরোতে অফিসার পাসপোর্ট দেখতে চেয়েছে। সে কি? কেন? অন্যদেশে যেতে হলে যে পাসপোর্ট, ভিসা লাগে সেটা সরলা বালা জানতো না বা বেনিফিট অফ ডাউট দিতে গেলে বলা যায় খেয়াল করে নি। তার কারণ সহজবোধ্য, সে অবধি ক্যারোলাইন ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ডের বাইরে কোথাও যায় নি, সে ভ্রমণে পাসপোর্ট নিষ্প্রয়োজন! 

    বাড়ি ফিরে পাসপোর্ট নিয়ে পরের প্লেন ধরে ক্যারোলাইন। 

    দেশ ছাড়ার সময়ে ইউরোপ ফেরত দাদা কানে কামড়ে বলে দিয়েছিলেন, বাড়ি থেকে কোথাও যাবার আগে তিনটে জিনিস বারবার চেক করবি - টিকিট, পাসপোর্ট, টাকা। টিকিট ডিজিটিলাইজড হয়ে মোবাইলে ঢুকে পড়েছে, টাকা আজ প্লাস্টিক কার্ডে আত্মগোপন করেছে কিন্তু পাসপোর্টটি এখনো আবশ্যিক উপবীত; আমেরিকান একপ্রেস ক্রেডিট কার্ডের স্লোগান অনুযায়ী, নেভার লিভ হোম উইথ আউট ইট! 

    আপনাদের সাময়িক ট্রাভেল গাইড হিসেবে জানিয়ে রাখি; আপনার ভারতীয় পাসপোর্টের ইউ কে ভিসায় B I V S (British Irish Visa Scheme) ছাপ থাকলে আয়ারল্যান্ড যেতে আপনার ভিসা লাগবে না। বাকিংহাম রাজবাড়ি, লন্ডন টাওয়ার, ওয়েস্টমিনস্টার দেখা হয়ে গেলে আপনি স্বচ্ছন্দে আয়ারল্যান্ডে যেতে পারেন, ওয়েলসের হলিহেড থেকে ডাবলিন ফেরিতে, ঘণ্টা চারেক লাগে অথবা হাওয়াই জাহাজে সোয়া ঘণ্টায় অসম্ভব সস্তার টিকিটে (রায়ান এয়ারে তিন হাজার টাকাতেও লন্ডন- ডাবলিন রিটার্ন কিনতে পারেন)। 

    তবে মনে রাখবেন পাসপোর্টে B I V S ছাপ আছে বলে আপনি মুম্বাই বা দিল্লি থেকে সিধে ডাবলিনের প্লেন ধরতে পারেন না, যে দেশ আপনাকে ভিসা দিয়েছে অর্থাৎ কোনো ব্রিটিশ এয়ারপোর্ট থেকে উড়তে হবে। এককালে বেনেলুক্স (বেলজিয়াম নেদারল্যান্ড লুক্সেমবার্গ) ভিসার নিয়মও তাই ছিল, যে দেশ আপনাকে সেটি দিয়েছে সেখানে আপনি প্রথম প্রবেশ করবেন। তবে শেনজেন ভিসা এটি দাবি করে না। 

    যাবেন কোথা?

    বিদেশিরা বলি ডাবলিন, আইরিশ বলে ডবলিন বা ডভলিন; এসেছে গেলিক শব্দ, dubh(কালো) -linn (জলা) থেকে। 

    জেনে এসেছি ইউরোপের প্রায় সকল ভাষা আমাদের ইন্দো-ইউরোপীয় মাতার কন্যা, শেকড় খুঁজলেই মায়ের আঁচলের খুঁটটি দেখা যায়, দক্ষিণে অবশ্য তুর্কিক প্রভাব ( যা থেকে আমরা ভারতীয়রা মুক্ত নই)। বেয়াড়া ব্যতিক্রমের নাম হাঙ্গেরি, ফিনল্যান্ড, এস্টোনিয়া, লাপল্যান্ড, বাস্ক অঞ্চল (তারা আছে স্পেন, ফ্রান্সে)। আয়ারল্যান্ডের গেলিক (Gaeilge) তাহলে কার কন্যা? কেতাবি মতে ইটিও সেই ইন্দ-ইউরোপীয় বংশের নাতনি! খটকা লাগে যে পদে পদে। একে তো গেলিক আমাদের নয়, তার নিজের হিসেবে হয়তো ফোনেটিক! গেলিকের উচ্চারণবিধি এনিগমা সুলভ জটিল কোডে লেখা, যা পড়তে, বলতে সক্ষম উত্তর আয়ারল্যান্ড সহ কুল্লে সত্তর লক্ষ মানুষ, সে আমার সাধ্যের বাইরে। 

    আমার পরিচিত এক বঙ্গসন্তানের বান্ধবী বেলফাস্টের মেয়ে, নাম Caoimhe, উচ্চারণ কুইভা! তার চেয়ে শক্ত আমার প্রাক্তন আইরিশ সহকর্মী ডাবলিনের এডির পুত্র Tadhg, তাকে ডাকে টাইগ! যে কোনও ভাষায় সুপ্রভাত, শুভ সন্ধ্যা, ধন্যবাদ ইত্যাদি গোটা দশেক শব্দ শিখে নিয়ে তার জুতসই ব্যবহার করে বাহবা কুড়োনোর উদগ্র বাসনাটি জলাঞ্জলি দিতে হল ডাবলিনে এসেই; এয়ারপোর্টে কেনা আইরিশ /গেলিক ফ্রেজবুক কোনো কাজেই লাগেনি, দু’একটি শব্দ ছাড়া; বিদায় নেওয়ার সময়ে নির্ভয়ে বলেছি স্লন (Slán), পানপাত্র হাতে তুলে বলেছি স্লন চে (Sláinte)। 

    পাঁচশো বছরের শাসনকালে ইংরেজ স্কটল্যান্ডের মতন আয়ারল্যান্ডেও তাদের আপন ভাষাটি প্রায় সম্পূর্ণ উচ্ছেদ করতে সক্ষম হয়েছে; এক বর্ণ গেলিক না জেনেও দিব্যি কাজ চালানো যায়। 

    পুনশ্চ

    অনেকদিন বাদে একদিন লিমেরিকে এক কর্মহীন অবকাশে কফির দোকানে অর্ডার নিয়ে ওয়েট্রেসকে যখন কাউন্টারে জানাতে শুনলাম দো, ত্রি (দুই, তিন) কাফে, তখন মনে হল এরা তাহলে আমাদের ইন্দো-ইউরোপীয় জননীর কোন দূর দেশে বিয়ে হওয়া দুহিতা, মায়ের বাড়ি আসা-যাওয়া কম। 

    শেলবোর্ন হোটেল এবং সংবিধান 

    লিফি নদীর উত্তর ও দক্ষিণে ডাবলিন শহর। আমার ডাবলিন শুরু হয় দক্ষিণে সেন্ট স্টিফেনস গ্রিনে (লোকমুখে সেন্ট বাদ পড়ে যায়, শুধুই স্টিফেন্স গ্রিন) আমার কেন্দ্রবিন্দু। এটি একটি আয়তাকার পরিকল্পিত উদ্যান; ইংরেজ যে দু’চারটে ভালো জিনিস এ শহরে রেখে গেছে তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। ভাগ্যক্রমে আমাদের সিটি ব্যাঙ্কের কর্তারা এই চত্বরে অফিস খুলেছিলেন আর সেই কারণে আমার ডাবলিনের আস্তানা নির্দিষ্ট হয় স্টিফেন্স গ্রিনের উত্তরপূর্ব কোনায়, শেলবোর্ন হোটেলে।
    এই হোটেলের ১২২ নম্বর ঘরে প্রণীত হয়েছিল আইরিশ ফ্রি ষ্টেটের সংবিধান যার একটি ভূমিকা আছে ভারতীয় সংবিধানে। ডক্টর আম্বেদকার নানান দেশের সংবিধান থেকে অনেক কিছু সংগ্রহ করেছেন, যে কারণে ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের দীর্ঘতম আখ্যায় বিভূষিত। সাইমন কলিন্সের নেতৃত্ব রচিত আইরিশ সংবিধান থেকে আমরা নিয়েছি তিনটি অংশ। 

     

    শেলবোর্ন হোটেল, স্টিফেন্স গ্রিন


    স্কুলের সিভিক্স ক্লাসে মুখস্ত করতে ঘাম ছুটে গিয়েছিল কীভাবে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি আনুপাতিক ভোটে নির্বাচিত হন! খুব ইচ্ছে করেছিল শেলবোর্ন হোটেলের ১২২ নম্বর ঘরে গিয়ে মাইকেল কলিনস সহ সকল অশরীরী আত্মাদের কাছে অভিযোগ জানাতে। এখন সে ঘরটির নাম কনস্টিটিউশন রুম।

    মৌলিক অধিকারের আখ্যান ছাড়াও আইরিশ সংবিধান সরকারকে কিছু নির্দেশ দেয় যাকে আমরা ভারতীয় সংবিধানে ডিরেকটিভ প্রিনসিপলস অফ ষ্টেট পলিসি নামে গ্রহণ করেছি, অর্থাৎ যা সরকারের করা উচিত কিন্তু কোন বাধ্য বাধকতা নেই। 

    আইরিশ সংবিধানের একটি বিশেষ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি তাঁর পছদন্দমত শিল্প সংস্কৃতি ক্রীড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তিদের শেনাদ এয়রেনে (আপার হাউস) মনোনীত করতে পারেন, যার সমতুল্য বিধান অন্য কোথাও দেখেছি বলে মনে হয় না। শ্রীমতী জয়া বচ্চন বা শ্রী তেন্ডুলকর হয়তো জানেন না রাজ্যসভায় আসন পাবার জন্য রাষ্ট্রপতি ছাড়াও আয়ারল্যান্ডের কাছে তাঁরা কৃতজ্ঞ! 

     

    কনস্টিটিউশন রুম, শেলবোর্ন হোটেলের ১২২ নম্বর ঘর


    আয়ারল্যান্ড আমেরিকাকে কেবল তার ইংরেজি অ্যাকসেন্ট নয়, আরও অনেক কিছু দিয়েছে যেমন, স্থানীয় লোকেদের মতে আইরিশ লোকসভা ডল এয়রেন ও রাজ্যসভা শেনাদ এয়রেন যেখানে বসে সেই লাইনস্টার হাউসের বৃহত্তর কপির নাম ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউস ! 

    দুয়ারে রঙ্গের ছটা / ডোরস অফ ডাবলিন 

    স্টিফেনস গ্রিনের সিটি ব্যাঙ্ক অফিস যেতে চোখে পড়ল গায়ে গা লাগানো সারি সারি জর্জিয়ান বাড়ি এবং প্রতিটি বাড়ির দরোজার রঙ্গ টক টকে, মা দেখলে বলতেন ক্যাট কেটে। অত্যন্ত বিবর্ণ অন্ধকার কুয়াশাচ্ছন্ন দিনেও তাদের ঔজ্জ্বল্য একই রকম। 

    ডাবলিনের জনতা হঠাৎ একদিন ঘুম থেকে উঠে বা কোন জননেতার ওজস্বিনী ভাষণ শুনেই মুক্তকচ্ছ হয়ে রঙ্গের টিন আর তুলি কিনে নিজের নিজের সদর দরোজার ওপরে পোঁচ দিতে আরম্ভ করেছে এমন ভাবার কোন সঙ্গত কারণ নেই। আইরিশের আলস্য ও অ্যালকোহল প্রীতি প্রবাদ প্রতিম। তাহলে শহরের মাঝখানে এই স্টিফেনস গ্রিনের সব জর্জিয়ান বাড়ির দরোজা এত বর্ণময় কেন? কেবল দরোজাই বা কেন? নরওয়ের বেরগেনে কোপেনহাগেনের নু হাফেনের বাড়িতে ছাত থেকে সামনের দাওয়া অবধি রঙের ছড়াছড়ি; ডাবলিনে সব রঙ কেবল দুয়ারের পাল্লায় লাগানো কেন? জানলায় নয় কেন? 

    আয়ারল্যান্ডে কোনো প্রশ্নের একটা সোজাসাপটা উত্তর মেলে না। রাস্তাটা কোথায় যায় জিজ্ঞেস করলে জবাব পেতে পারেন, কোথাও নয়। রাস্তাটা এখানেই থেকে যায়, আপনি কোথায় যাবেন? গলওয়ে যাবার রাস্তা কোনটা? উত্তর হল, দুটো বা তিনটে, নির্ভর করছে কোন পথে আজ ভেড়ার দল বেরুবে। 

    নানান মানুষ নানান যুক্তি পেশ করেন। 

    অফিসের এডেন বলেছিল, এর ভেতরে কোন সুগভীর চিন্তা নিহিত নেই কখনো ছিল না। পাব থেকে বেরিয়ে মদ্যপ মধু গুপ্ত বাড়ি যাবে, আর সব ভুলে গেছে শুধু মনে আছে তার সদরের রঙ লাল! এর মধ্যে এক আউন্স যুক্তি থাকতে পারে; পাশাপাশি প্রায় কোন দুটি দরোজার রঙ এক নয়। এর নীল তো পাশেরটা সবুজ। তবু গিনেস বিয়ারের সাগরে হাল ভেঙে যে নাবিক হারিয়েছে ঠিকানা, সদর দরোজার রঙ সে কি করে মনে রাখবে? 

    তর্ক করে লাভ নেই, বিশ্বাসে মিলায়ে সদর দরোজা। 

    ডাবলিন এর  বাড়ির  দরজা


    অন্যমতে 

    মহারানি ভিক্টোরিয়া পরলোক গমন করলে ইংরেজ শাসক বললেন এই মহা শোকের সময়ে ডাবলিনের সকল নাগরিকের কর্তব্য নিজের বাড়ির দুয়োরে কালো রঙ্গ লেপে দেওয়া। সাঁকো নাড়ানোর নিষেধাজ্ঞা শোনা মাত্র দীর্ঘ দিনের অত্যাচারিত আইরিশ জনতা সম্ভবত লেগে পড়লে কালো বাদে সবচেয়ে টকটকে রঙের সন্ধানে, অন্তত সেন্ট স্টিফেন্স গ্রিনের চারপাশে কালো রঙের দরোজা চোখে পড়েনি। ভেবেছি আহা আমাদের ব্যাঙ্ক যদি তখন থাকত, বার্জার বা ডিউলাক্স কম্পানির মতন কোন ব্রিটিশ রঙ নির্মাতাকে প্রি-শিপমেনট ফাইনান্স করে নির্ঘাত দুটো পয়সা কামিয়ে নেওয়া যেত। 

    ক্রমশ:


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৩ মে ২০২৫ | ১০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা | 2401:4900:1c64:958e:1124:1c1f:edec:***:*** | ০৩ মে ২০২৫ ১৯:৪৭731048
  • সত্যিই একচোট ঘোরা হয়ে গেল। আপনার লেখার দুটো ব্যাপার চমৎকার লাগে। এক তো,  কাব্যিক একটা সুর থাকে, যা একেবারেই উচ্চকিত নয়, অন্তর্লীন। আর হিউমার।  দরজায় " ক্যাটকেটে " রঙ করবার প্রসঙ্গে যা লিখলেন, যে ভাবে লিখলেন,  এক কথায় সুপার্ব! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন