

ছবি: রমিত
বিগত কয়েক দশকে নিউ ইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট ও তার সুযোগ্য সাগরেদ সিটি অফ লন্ডন নবীন হতে নবীনতর অর্থনৈতিক গণবিধ্বংসী মারণাস্ত্র* আবিষ্কার ও তার ব্যাপক প্রয়োগের পরাকাষ্ঠা স্থাপন করেছে। অস্ত্রের নাম বদলে গেছে বারেবারে – সি ডি ও, রিভার্স সোয়াপ, ইয়াঙ্কি, সামুরাই বন্ড। তাদের অর্থ উদ্ধার করতে আমাদের মত সামান্য মানুষের ঘাম ছুটে যাবার জোগাড়। দুর্জনে বলে ব্যাপারটা সহজে কেউ বুঝে ফেললে সেই সব অস্ত্র নির্মাতাদের বাজার থাকে না।
ক্রমশ নতুন মারণ যজ্ঞে পুরনো উপচারের পূজা প্রচলিত হতে দেখলাম।
দৈনন্দিন বিক্রি বাটা, আমদানি রপ্তানির ব্যবসা, ট্রেড ফাইনান্সের স্থান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কিঙ্গের জেল্লা হতে অনেক দূরে, ব্যাঙ্কের পেছনের দেউড়িতে। সেখানে নিতান্ত সামান্য বেতনের কিছু মানুষ কলম বা কি বোর্ড পেষেন, খদ্দেরের আমদানি রপ্তানির কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। এইখান থেকেই আমার ইউরোপীয় ব্যাঙ্কিং জীবন শুরু হয়েছিল ষ্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার ফ্রাঙ্কফুর্ট ব্রাঞ্চে। লন্ডনে এসে দেখলাম ট্রেড ফাইনান্সকে একটু নিচু নজরে দেখা হয়; এ হল নন সেক্সি বিজনেস, ছোট অ্যামাউনট, স্বল্প মেয়াদি। প্রতিবাদে বলেছি যাই বলো এ রিয়াল ব্যবসা বাবা। জাহাজঘাটে, রেল স্টেশনে, ট্রাকের আড্ডায় মাল গম রুটি তেল ওঠানো নামানো হয়। সেটি না এলে খেতে পাবে না, গাড়ি চড়তেও নয়। এ ব্যবসা চোখে দেখা যায়, কেবল কাগজে লেখা কোন ইকুয়েশন নয়।
কেমন করে সব যেন বদলে গেলো গত পনেরো বছরে। সংবাদপত্রে, টেলিভিশনে ইন্টারনেটে এখন বহু চর্চিত, নিন্দিত গ্রিনসিল ব্যাংক (ক্রমশ প্রকাশ্য), ফার্স্ট ব্র্যান্ডস, ট্রি বা ট্রাইকলর, কারিওক্স এই চারটি প্রতিষ্ঠানের উত্থান এবং পতনের নাটকের মূল গায়েন সাপ্লায়ার ফাইনান্স এবং ইনভয়েস ডিসকাউনটিং কোন না কোন অবতারে দেখা গেছে অনেক বছর আগেই। ইউরোপে আসার পর প্রথমে ফ্রাঙ্কফুর্টে পরে লন্ডনে দেখলাম কোন সামগ্রীর বিক্রির প্রমাণ দেখাতে পারলে সেই প্রাপ্য অর্থের বিল জার্মান বুন্দেসবাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডে বাজারের তুলনায় কম সুদে একশো আশি দিনের জন্য ধার পাওয়া যায় নিউ ইয়র্ক ফেডারাল রিজার্ভেও ছিল ডিসকাউনটিং উইন্ডো। সুরাত বা আমেদাবাদের মণ্ডিতে ক্রেতার হুন্ডি দেখিয়ে আগাম টাকা আদায়ের প্রথা কয়েকশ বছরের পুরনো। তবে এবারে কি তার নিয়োজন পদ্ধতি আলাদা? তাদের বিলের বান্ডিল বাজারে বেচা হবে? বেচা যায়?
দিস টাইম ইজ ডিফারেন্ট?
ইজমিরের দিন **
১৯৯৯
খানিকক্ষণ এবড়ো খেবড়ো টিলার পাশ কাটিয়ে হঠাৎ গাড়িটা ডানদিকে ঘুরতেই চোখে পড়লো সকালের আলোয় উদ্ভাসিত ঘন নীল ইজিয়ান উপসাগর – নিচে ইজমির, ইতিহাসে অজস্রবার উল্লিখিত ঐতিহাসিক গ্রিক শহর স্মিরনা। মাত্র ১৯৩০ সালে সেটি পেয়েছে তার তুর্কি নাম। অনেক ভোরে উঠে ইস্তানবুল থেকে প্লেন ধরেছি, এখন একটা দমকা হাওয়ার ঝলকে ক্লান্তি কেটে গেল, জেগে উঠলাম!
‘ল্যুতফেন’ বলে সুসজ্জিত ড্রাইভার গাড়ির দরোজা খুলে দিলে এক সুরম্য হর্ম্য শোভিত দ্বিতল ভিলার সামনে দাঁড়িয়ে সন্দেহ হলো - সঠিক পাতায় এনেছে তো? তেশেক্কুর (ধন্যবাদ), গুনায় দিন (সুপ্রভাত), দিক্কত এমনি মাত্র গোটা কয়েক তুর্কি শব্দ জানি। কি বলব ভাবছি, ড্রাইভার বললেন, ‘তুর্ক এক্সিম বাঙ্ক, হোশগেলদিনিজ (স্বাগতম)’। তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত পায়ে পাঁচটা সিঁড়ি উঠে রিসেপশনে গিয়ে দেওয়ালে ব্যাঙ্কের নাম লেখা দেখে আশ্বস্ত হলাম। আত্মপরিচয় দিতেই মহিলা আমাকে নিয়ে গেলেন দোতলায়, স্থানীয় ব্যাঙ্ক অধ্যক্ষ রাফায়েলের অফিসে। বিশাল হল ঘর, উঁচু সিলিং; রাফায়েলের জানলা থেকে ইজিয়ান উপসাগর দেখা যায়। আমার বিস্ময়ের ঘোর তখনো কাটেনি, এ কোথায় এলাম? সুস্মিত হেসে রাফায়েল বললেন, জানেন হয়তো আশি বছর আগে ইজমির ছিল গ্রিক স্মিরনা, আপন এমবাসির জন্যে ইতালিয়ানরা এই বাড়ি বা ভিলা বানিয়েছিল তাদের নিজেদের স্টাইলে। এ পাড়ায় হাঁটাহাঁটি করে দেখুন, অষ্টাদশ শতকের ইতালিয়ান আর্কিটেকচারের দারুণ নমুনার কাছে দাঁড়াতে পারে না কোন ম্যানশন।
আগাম বলে রাখি এটি আমার তবিলদারের দুনিয়াদারির তুরস্ক পর্ব নয়। সে পরে হবে। আমার স্মিরনা/ইজমির ভ্রমণের কারণটি অত্যন্ত গদ্যময়। সিটি ব্যাঙ্ক তুরস্কে একটি ব্যাঙ্ক অধিগ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছে অনেকদিন যাবত, কিছুই কেনা হয় নি।এক একটা নাম আসে, তাদের খাতাপত্র দফতর দেখা হয়, তারপর কোন না কোন কারণে সেটা চলে যায় বাতিলের ঝুড়িতে। আপাতত আমাদের রাডারে তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের নাম উজ্জ্বল, তাদের সম্যক সুনাম আছে ইস্তানবুল আঙ্কারার বাজারে। ফলে যা হয়, আবার পুরো দু সপ্তাহের জন্য চল্লিশ জনের সিটি ব্যাঙ্ক বাহিনী ইস্তানবুল অভিযান করে আস্তানা গেড়েছে সুইস ওটেলে। তার জানলা বা ব্যালকনি থেকে দেখা যায় বসপোরাস প্রণালী, পাঁচটি দেশের সঙ্গে বাহির বিশ্বের যোগাযোগের একমাত্র জলধারা।
সেখান থেকে আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন দলে ছড়িয়ে পড়ি তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায়, তাদের বিজনেস বুঝতে। কেউ ক্রেডিট, কেউ ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট, ফরেন এক্সচেঞ্জ -আমার ভাগে ট্রেড ফাইনান্স। একদিন আমার ওপরে আদেশ এলো – ইস্তানবুলের কাল শেষ। এবার যাও আনাতোলিয়া প্রদেশের ইজমিরে তাদের ইজিয়ান ব্যবসার খবরাখবর নিতে। পরস্মৈপদী নিখরচার ভ্রমণে আমার অরুচি নেই কিন্তু মনে হলো ইজমিরে এমন কি করে তারা যা ইস্তানবুলের হেড অফিসে বসে জানা যায় না?
রাফায়েলের সঙ্গে দিন কাটিয়ে বুঝলাম কেন। দুনিয়ার যে কোন বৃহৎ সংস্থা চলে কমান্ড সেন্টারের আদেশে। তাদের সংবিধান, আচার সংহিতা, প্রোডাক্ট প্রোগ্রামে লেখা থাকে কে কোন কাজ করবে, কোনটা ডান হাতে, কোনটা সোমবারে, রিজিড আয়রন ফ্রেম। আই বি এমের সর্বময় কর্তা কমরেড ওয়াটসন কখনো কখনো ৫৯০ ম্যাডিসন অ্যাভেনিউ অফিসের রিসেপশনে দাঁড়িয়ে লক্ষ রাখতেন সকল পুরুষ কর্মী সাদা শার্ট, ছুঁচলো জুতো, ডার্ক সুট পরে এসেছেন কিনা।
আমাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছিল; রাফায়েল এক বিদ্রোহী চরিত্র। ইস্তানবুল অফিসের সব আদেশ মাথায় করে নয়, চলেন নিজের নিয়মমত। তাঁর ব্যবসা এতোই প্রফিটেবল যে হেড অফিসের বড়ো বাবুরা তাঁকে মোটে ঘাঁটান না।
রাফায়েল জানালেন, তুর্ক এক্সিম ইজমিরের ব্যবসা মূলত কর্পোরেট এবং কিছু রিটেল, কিন্তু দুটো ব্যবসা সব সময়ে পৃথক ভাবে নয়, চলে একতালে। যেমন?
যেমন জার্মানির রুজেলশহাইমের তাগড়া গাড়ির কোম্পানি, ওপেল। ইজমিরে তাঁদের ফ্যাক্টরিতে ওপেল রেকর্ড, সেনাটোর, করসা গাড়ি বানানো হয়, এখানে প্রোডাকশন কস্ট কম। কারখানা তৈরি হয়েছে হেড অফিসের অর্থে, দৈনন্দিন ব্যবসা, কর্মচারীদের মাস মাইনে দিতে তাদের প্রয়োজন তুরকি লিরা। তার জন্য নিত্য রুজেলশহাইম থেকে ডয়েচ মার্ক পাঠানো হবে না। এ ছাড়াও প্রয়োজন ফরেন এক্সচেঞ্জ, মানি ট্রান্সফার। আপনি জানেন, অনুমান করতে পারেন ওপেলের ক্রেডিট কোয়ালিটি এমনই উচ্চস্তরের তারা ফি দেবে নামমাত্র, সুদ দেবে সামান্য। এতো সস্তা দরে ধার দিয়ে তো ব্যাঙ্কের সংসার চলতে পারে না? কিন্তু আমার সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা এই ওপেল রিলেশনশিপ!
কী করে?
দেখুন ওপেল যে গাড়ি বানায় তার কল কবজা, জার্মানি থেকে আসে, কিছু এখানে তৈরি হয়। এছাড়াও তাদের প্রয়োজন অনেক আনুষঙ্গিক সামগ্রী, যেমন গাড়ির হাতল, ফুয়েল ক্যাপ, ওয়াইপার, সিটের গদি! জার্মানি থেকে আমদানি করতে গেলে গাড়ির দাম বেড়ে যাবে। তাই ব্রেক প্যাড ফুট ম্যাট দরজার হাতল এঁরা কেনেন নির্দিষ্ট কিছু ছোট, মাঝারি তুর্কি মিস্তিরির কাছে, যাদের আপনারা বলেন ব্যাক স্ট্রিট শপস। তাঁরা ফুটপাথে টুলের ওপরে বসেন, পরদার পিছনে লোহা পেটাই চলে। দিন আনেন দিন খান। ওপেল তাদের মাল কেনে নিজেদের টার্মে, ঠিক করে কেনা সামগ্রীর দাম কবে চোকাবে ৩০ ৬০ না ১৮০ দিন বাদে। গরিব মিস্ত্রি তাই মেনে নিয়ে ওপেলের দরোজায় গাড়ির সামগ্রী পৌঁছে দেবার পরে দিন গোনে, কবে তার বেচা দামের টাকা ঘরে আসবে। আমার লোক এবার ওপেলের অফিসে গিয়ে এই সব মিস্ত্রীর, দোকানের নাম ঠিকানা জোগাড় করে। সেখানে হাজির হয়ে বলে ওপেলকে কি বেচেছো, কতো, তোমাদের পাওনা দেখাও, ৩০/৬০/১৮০ দিন অপেক্ষা করতে হবে না; আজই তার দাম পাবে; তবে পুরোটা নয় আমাদের খরচ খরচা বাদে।
ইজমিরের গলির টিন পেটানো ওয়ার্কশপে (রাফায়েলের বর্ণনা শুনে আমার সময়ে দমদম রোডে রেডিও গলির প্রায় মুখোমুখি বম্বে সাইকেল স্টোর মনে পড়ে গেল, স্কুলে পড়ি তখন, পঁচিশ পয়সা দিয়ে সাইকেলের লিক সারাতাম সেখানে) তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের সুট পরা অফিসারের আবির্ভাব একটা সেনসেশন। চারপাশে ভিড় জমে গেছে, তাঁকে কোথায় যে বসতে দেবে, কোন পাত্রে কফি খাওয়াবে! হেড মিস্ত্রী মাথা চুলকান, এদিক ওদিক তাকান। তাঁর বিশ্বাস হয় না ছেঁটে কেটেও ইনভয়েসের দাম আজই পেয়ে যেতে পারেন, মাস, ছ মাস অপেক্ষা করতে হবে না।
রাফায়েল মৃদু হেসে বললেন, দেখুন আপনি জানেন আমিও জানি আমাদের ব্যাঙ্কিং ব্যবসাটা চলে যথা সম্ভব সঠিক রিস্ক নেওয়ার ওপরে। ইজমিরের এই মিস্ত্রীর রিস্ক আমি নিচ্ছি না, কারণ ওপেল কোম্পানি সেটা ঠিক চুকিয়ে দেবে। তবে আমি ট্র্যাক রেকর্ড দেখে নেবো, কতদিন এরা ফুয়েল ক্যাপ, সিটের গদি সাপ্লাই করছে, রিজেকশনের রেট কেমন- একেই আপনারা সাপ্লায়ার ফাইনান্স বলেন তো?
স্বীকার করতে হলো - মাত্র দু মাস আগে সিটি ব্যাঙ্ক বোম্বাইতে অত্যন্ত ছোট মাপে এই প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, গৌরাঙ্গ হাতিঙ্গাদি নামের আমাদের সহকর্মীর তত্ত্বাবধানে।
রাফায়েল বললেন, গাড়ি তৈরি হয়েছে, এবার বিক্রি। এবার আমার লোক যাবে ওপেল গাড়ির ডিলারদের অফিসে, খোঁজ নেবে গাড়ি কেনে কারা? তাদের ক্রেডিট হিস্টরি কি রকম, কত ক্যাশ ডাউন? অবশ্যই এবার আর আমার পিছনে ওপেলের অভয় হস্তটি নেই। ওপেল গাড়ি ওয়ার্ল্ড ক্লাস কিন্তু কেনে কোন ক্লাসের লোক? আমাদের ব্যাঙ্ক আনাতোলিয়াতে ব্যবসা করছে অনেক বছর, আমার লোকজন ইজমিরে তাদের পাড়া পড়শির খবর রাখে- ক্রেডিট চেকিং কি আর শুধু কাগজে কলমে হয়? মুখের কথা, গলির মোড়ের কানাঘুষো আমার কাছে সমান মূল্যবান। তবে এটা কর্পোরেট নয়, কনজিউমার ব্যাঙ্কিং টেরিটরি! গাড়িটি বন্ধক রইল বটে, তার মালিক কোন কর্ম করে, কতদিন যাবত করে, মোহল্লায় (তুর্কিতে মাহাল্লে) তার সুনাম দুর্নাম কি রকম? সেই বিচার বিবেচনা মাফিক আমরা ক্রেতার সঙ্গে চুক্তি করে সুদ ও ফি বাবদ কিছু কেটে নিয়ে ওপেল ডিলারকে তাদের প্রাপ্য টাকাটি দেবো।
বললাম, তাহলে সার্কল ক্লোজড?
নট কোয়াইট!
নাউ এন্টারস মাই রিটেল ব্যাঙ্কার – ওপেলের সি ই ওকে গিয়ে বলে, সার এই নিন আপনার নাম এমবস করা তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের গোল্ড ক্রেডিট কার্ড! নো ফি, ওনলি বেনিফিটস!
রাফায়েলের ব্যাঙ্কিং লেসন মনে রেখেছি; মোদ্দা কথা, বুঝে শুনে ধার দেওয়া ব্যাঙ্কের ব্যবসা, স্টেপ বাই স্টেপ! প্রথম দফায় বিখ্যাত কোম্পানি ওপেলকে, পরের দফায় সেই ওপেলের ভরসায় তাদের মালপত্র সরবরাহকারিদের, শেষে তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে,,নিজেদের এলেমে ওপেল গাড়ির ক্রেতাকে। সমস্ত ঝুঁকি রইল তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের ঘরে, তারা চেনে তাদের খদ্দেরকে – ব্যাঙ্কার কাস্টমার রিলেশনশিপ। এম বি এর ক্লাসে এসব পড়ানো হয় না।
দু বছর বাদে হামবুর্গে গিয়ে দেখলাম আরেক পূজার আয়োজন – যে ঝুঁকি গুলি নিচ্ছিল তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্ক, সেগুলোকে একটা তারে বা সুতোয় বেঁধে খোলা বাজারে ফিরি করা, অর্থাৎ আজ আমরা ওপেলের সরবরাহকারী বা গাড়ির খদ্দেরকে ধার দিলাম, পরশু সেগুলোকে বেচে দিলাম বাজারে। সেটা হয়? হতে পারে?
হামবুর্গের একদিন
২০০১
সারা বছরে যে সব ব্যাঙ্ক তাদের সিনডিকেটেড লোন দফতরের সহযোগিতা করেছে করেছে, জার্মানির ড্রেসনার ব্যাঙ্কে তাদের আপ্যায়ন হতো একটি বার্ষিক মোচ্ছবে, বিভিন্ন শহরে, কখনো হাইডেলবেরগ, ভলফসবুর্গ, কলোন। রুটিনটি একই প্রকারের; প্রথম দিন ড্রেসনার ব্যাঙ্কের বর্ষীয়ান সিনিয়র ব্যক্তির সভাপতিত্বে একটি বিজনেস সেমিনার। সেখানে ব্যাঙ্কিঙ্গের কোন নির্বাচিত বিষয়ে বলতেন আমন্ত্রিত এক বা একাধিক কেষ্ট বিষ্টু; মুফতে জ্ঞান অর্জন করার মউকা আমাদের। যদিও আমরা অপেক্ষা করে থাকতাম কতক্ষণে এই যন্ত্রণা শেষে সবাই মিলে স্থানীয় পাব পরিক্রমা শুরু করবো। পরের দিনটি থাকত সাইট সিইংএর জন্য নির্দিষ্ট – পার্টি টাইম।
সেবার হামবুর্গের অনুষ্ঠানে মূল বক্তা ছিলেন জুরিখের ক্রেদি সুইসের এক বন্ড গুরু; একটু অবাক লাগল; সিনডিকেটেড লোনের সঙ্গে বন্ড বাবুদের একটু বিরোধ লেগেই থাকে। আরও অবাক হলাম যখন ইনি ট্রেড ফাইনান্স নিয়ে শুরু করলেন। আমার আগ্রহ ততক্ষণে তুঙ্গে উঠেছে - চির অবহেলিত লেটার অফ ক্রেডিট, কালেকশন, বিল ডিসকাউনটিং বেশ বোরিং বিষয়। আজ কি ভাবে তারা সভ্য সমাজে স্থান পেলো? কেন না তিনি আবিষ্কার করেছেন ট্রেড ফাইনান্স অত্যন্ত ষ্টেবল, সুরক্ষিত ব্যবসা। অয়েল ইমপোর্টের বিল সর্বদা মেটানো হয় কারণ একবার বকেয়া রাখলে তেল আর আসবে না, গাড়ি আর চলবে না। তিনি চান এই সমস্ত ইন্সট্রুমেনটকে জুড়ে বন্ড বানিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে।
প্রশ্ন করতেই হলো।
দুটো কথা, গুরুদেব। বন্ড বানাতে গেলে তার ইসু প্রাইস অন্তত পঞ্চাশ কি একশো মিলিয়ন ডলার বা মার্ক হতে হবে এবং আয়ু পাঁচ থেকে দশ বছর। এখন ট্রেড ফাইনান্সের যাবতীয় প্রমাণ পত্র, বিল, ইনভয়েস অত্যন্ত স্বল্প মেয়াদি, টেনে টুনে ছ মাস, কেনা বেচার মূল্যও তুলনামুলকভাবে কম। পঞ্চাশ মিলিয়নের বন্ড বানাতে লাগবে কয়েক হাজার বিল, ইনভয়েস এবং সেটির আয়ু বড়জোর ছ মাস। যতদূর জানি আপনাদের ব্যবসায়ে ছ মাসের কোন বন্ড হতে পারে না।
অবশ্যই খানিকটা পড়াশুনো করে এসেছেন, মেনে নিলেন। তিনি এবারে পালটা তীর ছুঁড়লেন।
স্বল্প মেয়াদি কিন্তু ধারা বাহিক, কেন না সে ব্যবসাটা তো একদিনের নয়, সেটা একটা স্রোতের মতো (কনটিনিউয়াস স্ট্রিম)। কেনা বেচা চলতেই থাকে যেমন যেমন বিল পেমেন্ট হয়ে যাচ্ছে, আমরা আরেকটা সমান বা বেশি মূল্যের বিল যোগ করতেই পারি। মনে করুন এটা একটা সুটকেস, সেখান থেকে কিছু বের করা হচ্ছে, কিছু যোগ হচ্ছে, কিন্তু তার ওজনটা এয়ারলাইন্সের চেকড ইন লাগেজের মত সব সময় ২৩ কিলো।
সমবেত হাস্যরোল।
ততক্ষণে এটুকু বুঝেছি এই বন্ড গুরুর স্ট্র্যাটেজির নাম অ্যাসেট বেসড সিকিউরিটি। সলোমন ব্রাদার্সের লু রানিয়েরি (আগের পর্ব পশ্য) বাজারে তখন হাজার হাজার মর্টগেজ অ্যাসেট জুড়ে বন্ড বানিয়ে, বেচে বাজার কাঁপাচ্ছেন। সেখানে আমার প্রশ্ন ছিল – বিভিন্ন মর্টগেজের আয়ু, ই এম আই আলাদা। আজ কেউ বাড়ি কিনল আরেকজন বেচল, ইতিমধ্যে মর্টগেজ সুদের হার, ই এ এম আইয়ের পরিমাণ বদলে গেছে; তবু বাজার যখন এটাকেই ‘সিকিউরিটি ‘বলে মাথায় চড়িয়েছে, সেখানে আমি কোথাকার হরিদাস পাল যে এই মহান উদ্যোগে সংশয় জানিয়ে আমার বরানগরী নির্বুদ্ধিতা জাহির করবো? কিন্তু এই ট্রেড, বিলস, কালেকশানের বিষয়টা বোঝার অহংকার আমার আছে সঙ্গত কারণেই। ১৯৭৭ সালে এই দিয়েই ষ্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফ্রাঙ্কফুর্টে আমার হাতেখড়ি, তার পর কনটিনেনটাল ব্যাঙ্ক, সিটি ব্যাঙ্কের প্রথম দু বছরের কার্যকলাপ।
আমার ওভার শেষ হয় নি; পরের বলটা পাঠাতে হলো।
দেখুন, যে কোন ব্যাঙ্কের বিলস দফতরে প্রত্যহ হাজারটা পেমেন্ট হয়, দু হাজার কালেকশনে পাঠানো হয়, আয় হয় কিছুটা সুদ থেকে বাকিটা ফি থেকে। দুটোরই পরিমাণ বিল অন্তরে আলাদা। আপনার সুটকেসের ওজন অপরিবর্তিত রাখতে হলে এই যোগ বিয়োগের মেশিনটা চালাতে হবে দিবারাত্র, একজন কাস্টমার নয় হাজার কাস্টমারের লক্ষ লক্ষ বেচা কেনার হিসেব জুড়ে। তাতেও কাজটা সম্ভব হবে কিনা বলা শক্ত এবং সেটা শ্রম ও সময় সাপেক্ষ (তখনো এ আই কিছুটা দূরে)। এটাও মনে রাখা দরকার সুটকেস ভরার অহেতুক তাড়া কিছু ইচ্ছাকৃত কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুল ভ্রান্তির পথ খুলে দিতে পারে (করাপশন কথাটা ব্যবহার করা গেল না); ডিউ ডিলিজেন্স লাগে।
আমার ওভারের শেষ বল ছোঁড়বার আগেই লন্ডন আমস্টারডামের কয়েকজন ব্যাঙ্কার কলিগ আমার সমর্থনে এই চাপান উতোরে যোগ দিলেন। বন্ড গুরু তাঁর প্রেজেনটেশনের পাঁচ পাতা অবধি হয়তো পৌঁছেছিলেন; তাঁকে এবার বিভ্রান্ত দেখাল। তিনি ততক্ষণে অনারেবল এগজিট খুঁজছেন, ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, আমাদের সকলের মূল্যবান ইনপুটের ভিত্তিতে বিষয়টি তিনি আরও তলিয়ে দেখবেন। এত বলি তিনি ল্যাপটপ বন্ধ করলেন। তার আগেই আমি জানলার বাইরে বিনেন আলস্টারের মাঝের ফোয়ারার উচ্ছ্বসিত জলধারার অপরূপ শোভায় মনোনিবেশ করেছি।
ড্রেসনার ব্যাঙ্কের সিনডিকেশনের কর্তা বিল ফিশ ছিলেন সিটি ব্যাঙ্কে আমার প্রাক্তন সহকর্মী। সেই সুবাদে লাঞ্চের সময়ে আমাকে বললেন, যা বলছে শুনে গেলেই কি হতো না? এমন দল বেঁধে আক্রমণ করাটা কি উচিত হলো? আমি তাঁরই অতিথি হেথায়; কি আর করি মাফি চেয়ে নিলাম।
তবু মাথার ভেতরে খটকাটা রয়ে গেল।
দুবাই/লন্ডন
২০০১
স্যানডি ওয়াইলের নেতৃত্বে নিউ ইয়র্কের সলোমন ভ্রাতৃবৃন্দ নামক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক সিটি দখল করেছেন, জেমি ডাইমন দি গ্রিক তাঁর রাইট হ্যান্ড ম্যান। আমাদের মতন পুরনো সিটি ব্যাঙ্কাররা বুঝতে শুরু করেছি বন্দরের বন্ধনকাল শেষ হবার মুখে, শুধু নোঙ্গর তুলতেই যা বাকি।
৩৩৬ স্ট্র্যানড অফিসের ছ তলায় একজন দেখা করতে এলেন। নাম হাসান, সিটি ব্যাঙ্ক দুবাইতে ক্রেডিট অফিসার। তিনি বললেন আপনি ট্রেড ও সিনডিকেশনের বাজারে সুপরিচিত বলে শুনেছি। একটা ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই। দুবাইতে আমাদের এক কাস্টমার, সোলো ইন্ডাস্ট্রিজ, স্টিল প্রোডাক্ট বেচে অনেক ইউরোপিয়ান খদ্দেরকে। আমরা সেই এক্সপোর্টের ইনভয়েস ফাইনান্স করি সিটি ব্যাঙ্ক দুবাইতে। তিন, ছয় মাস বাদে পেমেন্ট চলে আসে সরাসরি আমাদের অ্যাকাউনটে। অর্থাৎ লোনটা নিচ্ছে সোলো ইন্ডাস্ট্রি কিন্তু শোধের দায় তাদের ক্রেতার। প্রোমোটার মাধভ প্যাটেলের সঙ্গে আমাদের দশ বছরের বেশি পুরনো সম্পর্ক। আমি কিছু ইউরোপিয়ান কাস্টমারের একটা লিস্ট আপনাকে দেবো; আপনি তো বাজারে অনেককে চেনেন, এদের বিষয়ে একটু খোঁজ খবর নিতে পারেন? তাদের ক্রেডিট রেটিং, মার্কেট রেপুটেশন ইত্যাদি?
হাসান আমাকে সেই আমলের প্রচলিত ডট মেট্রিক্স প্রিন্টারে সবুজ রঙের কাগজে ছাপা একটি লিস্টি দিলেন। তাতে চব্বিশটা নাম, বেশির ভাগ ক্রেতার ঠিকানা রটারডাম। গুগলের সার্চ এঞ্জিন তখনো তার আত্মসমীক্ষায় মগ্ন, আমাকে সাহায্য করাটা তার সাধ্যে কুলোয় না।
সে সময় ডান অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিট নামের একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্পিওনাজ সংস্থা (কয়েক হাত ঘুরে অধুনা ক্লিয়ারলেক নামের একটি প্রাইভেট ইকুইটির অধীনস্থ) মতান্তরে ডাটা রিসার্চ ডিরেক্টরির চাঁদা দেওয়া সদস্য ছিল সিটি ব্যাঙ্ক। ডিজিটালি না হোক, তদন্তের রেজাল্ট পাওয়া যেতো দিন দুয়েকের ভেতরে। সেখানে পুরো লিস্ট পাঠালাম। ডাটা প্রোটেকশনের কণ্টক তখন এতোটা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠেনি, তাঁরাও আমাদের জিজ্ঞাসার গোপনীয়তা সযত্নে রক্ষা করতেন। শুধু তাদের ওপরে ভরসা না রেখে আমস্টারডামের ব্যাঙ্কিং বন্ধুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করলাম, যদি তাঁরা কেউ এদের চেনেন; অবশ্যই অন এ নো নেম বেসিস। কেন জানতে চাই সেটা প্রকাশ করা যাবে না। ট্রেড ফাইনান্স জগতে ব্যবসার জন্যে আমরা যতোই একে অপরের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করি না কেন, কোন এক জায়গায় আমরা সকলের শুভানুধ্যায়ী, সাধ্যমত সাহায্য করি।
একটা কথা মনে হলো। মাধভ প্যাটেলের সোলো ইন্ডাস্ট্রিজ সিটি ব্যাঙ্কের খুবই পরিচিত খরিদ্দার, তাদের ইনভয়েস ডিসকাউনটিং অনেকদিনের ধান্দা, তবে আজ ক্রেতাদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে কেন।
উত্তর পেতে পুরো দু দিন লাগে নি। ডান অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিট তাদের রিপোর্ট দেবার আগেই আই এন জি ব্যাঙ্কের জন দে লাঙ্গে আমাকে ফোন করেছে একটু উদ্বিগ্ন হয়ে।
হীরেন, এদের সঙ্গে কি বিজনেস করতে চাও নাকি? সমস্যায় পড়তে পারো।
কী সমস্যা জন?
রটারডামের যে পনেরোটা নাম পাঠিয়েছ সেগুলো লেটার বক্স কোম্পানি। তুমি পোর্ট এরিয়া চেনো, এখানে নানা রকমের খেলা চলে। এটুকু জেনে রাখো, এরা কেউ স্টিল ট্রেডার নয়, এগুলো সুবিধের ঠিকানা মাত্র (অ্যাড্রেসেস অফ কনভিনিয়েন্স) এদের থেকে মাইল দশেক দূরে থেকো।
ডান অ্যান্ড ব্র্যাডস্ট্রিটের রিপোর্ট সেই একই মাত্রার।
হাসান এই তথ্য পেয়ে কি ভাবলেন জানি না তবে অতি দ্রুত দুবাই ফিরে গেলেন।
ক্রমশ এই বার্তা রটি গেল – শ্রী মাধভ প্যাটেল কিছু ভুয়ো কোম্পানির নামে এক্সপোর্ট করতেন। বরাবর জেনে এসেছি মাল জাহাজে তোলার প্রমাণের নাম বিল অফ লেডিঙ (Bill of Lading) তার মাত্র তিনটে অরিজিনাল হয়, একটি থাকে জাহাজের ক্যাপ্টেনের জিম্মায়, একটি পায় প্রেরক তৃতীয়টি যায় প্রাপকের কাছে এর কোন চতুর্থ চেহারা হয় না, একেবারে পবিত্র সার্টিফিকেট। কিন্তু দুবাই পোর্টে কুমিরের ছানা দেখানোর মতো মাধভ ভাই একটি শিপমেনটের অন্তত চারটে প্রমাণ পত্র বের করে চারটে ব্যাঙ্ককে পাঠিয়ে ফাইনান্সিং জোগাড় করতেন।
মনে রাখতে হবে এই ঋনের দায়ভাগ সোলো ইন্ডাস্ট্রিজের নয়, এই অর্থ উদ্ধার হবে কল্পিত ক্রেতার ইসু করা ইনভয়েসের মূল্য থেকে। নিজের প্রয়োজন মতো এক ইনভয়েস চারটে ব্যাঙ্ককে দেখিয়ে টাকা তুলেছেন, এর টাকা ওকে তার টাকা একে দিয়ে অনেকদিন ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন মাধভ ভাই। তবে ঐ যা হয় কোথাও গাছের ডালে বা কোন মাঞ্জা দেওয়া সুতোয় ঘুড়ি আটকে যায়। ভোঁ চাক্কা আমাদের টাকা আর ঘরে ফিরবে না।
এখানে কোন লোনের পুঁটুলি বেঁধে বন্ডের বাসর বসানো হয় নি। আমাদের মতন আরও পনেরোটি ব্যাঙ্ক তাদের নিজেদের বিচার বিবেচনায় সোলো ইন্ডাস্ট্রিজের এক্সপোর্ট সামগ্রীর অগ্রিম দাম মাধভ প্যাটেলকে দিয়েছে; তিন মাস ছ মাস বাদে সে টাকা আসবে ইউরোপিয়ান স্টিল ক্রেতাদের ঘর হতে। তাহলে সমস্যা কোথায়?
তুর্ক এক্সিম ব্যাঙ্কের রাফায়েল ও তাঁর লোকজন খদ্দেরকে চিনতেন যার ভিত্তিতে আমাদের চেনা ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা চলে।
সোলো ইন্ডাস্ট্রিজে সেই খোঁজ খবরের ব্যাপারটা ছিল উপেক্ষিত; যদি নো ইয়োর কাস্টমারের কথা ওঠে, মাধভ ভাইকে তো ব্যাঙ্ক ভালোই চেনে। তাহলে আবার ডিউ ডিলিজেন্সের কি প্রয়োজন? কোন স্টিলের রোল কখন কোন জাহাজে উঠছে সেটা দেখার জন্য লোক লাগাতে হবে কেন?
পরের পর্বে দেখব এই পথে আলো জ্বেলে আরও অনেক সর্বনাশের সূচনা।
* “In my view, derivatives are financial weapons of mass destruction, carrying dangers that, while latent now, are potentially lethal”
Warren Buffet
Annual letter to Berkshire Hathaway Investors, 2003
** আমার ব্যাঙ্কিং জীবন নিয়ে লেখা বইতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখেছি।
হীরেন সিংহরায় | ২২ নভেম্বর ২০২৫ ২২:৫৬736036
হীরেন সিংহরায় | ২২ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:০২736037