শিল্প চলে গেলে শিল্পনগরীরা ভুতুড়ে পোড়োবাড়ি হয়ে যায়। যেমন ডেট্রয়েট। যেমন হুগলি নদীর দুপাড়ের সারি সারি চটকল। মাংস কাটার কারখানা ভেঙে স্টারবাকসের কফিশপ তৈরী হয়। যারা মাংস কাটত তারা সেখানে কাজ পাবে না। কারণ ধোপদুরস্ত পরিষেবা দিতে পারবে না। অপরাধ বাড়ে। উদাহরণ হিসেবে মার্গারেট থ্যাচারের 'বিগ ব্যাং' , যার ফলে যুক্তরাজ্যে অবশিল্পায়ন শুরু হয়। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ... ...
ভারতে মুঘল আমল থেকেই জায়গীরদাররা প্রজাদের থেকে খাজনা তুলে শাসকদের জমা দিত। মীরজাফর মারা যাবার পর ক্লাইভ চালু করেন দ্বৈত শাসন। যেখানে কোম্পানির ছিল দায়িত্ত্বহীন ক্ষমতা আর নবাবের ছিল ক্ষমতাহীন দায়িত্ত্ব। নবাবের দেওয়া দেওয়ানি সনদের শর্ত মোতাবেক নাজিম-উদ-দৌলা তাঁর বাবা মীর জাফরের মত ইংরেজদের বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করার সুযোগ দেবেন এবং দেশীয় বণিকদের অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা বাতিল করবেন। কোম্পানি সমস্ত টাকাপয়সা , খাজনা নিয়ন্ত্ৰণ করবে অথচ খাজনা যারা দেয় তাদের নিরাপত্তা দেবার জন্য বাধ্য থাকবে না। দ্বৈত শাসনের পরিণতি হিসেবে দেখা দিয়েছিল ভয়াবহ ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। যার ফলে অচিরেই ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈত শাসন ব্যবস্থা চিরতরে বাতিল বলে ঘোষণা করেন। ... ...
কিছুদিন আগে নেপালের প্রকৃতি লামসাল, যে ওড়িশার এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল, হোস্টেলে মারা যায়। সমস্ত জায়গার মত এখানেও প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের পক্ষ থেকে মৃত্যুকে প্রেমঘটিত আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রকৃতির সহপড়ুয়ারা বেঁকে বসে ও দাবি করে প্রেমঘটিত নয়, নেপালি হবার জন্য প্রকৃতির প্রাক্তন প্রেমিক [ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র] তার ওপর অত্যাচার করত। আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেবার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার ও তদন্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপিকা তাদের সঙ্গে সরাসরি তর্কে জড়িয়ে পড়েন। নিরাপত্তারক্ষীরা পড়ুয়াদের মোমবাতি মিছিল করতে বাধা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় অবিলম্বে সমস্ত নেপালি পড়ুয়াদের হোস্টেল খালি করার ফরমান জারি করে ও তাদের অনেককে অল্প কয়েক ঘন্টার নোটিশে বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ইত্যাদি জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়েরই বাসে করে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়। ... ...
সেসময় কলকাতা থেকে নদীপথে কাশী যেতে লাগত ~৭৫ দিন। ঢাকা ৩৭ দিন। মুর্শিদাবাদ প্রায় এক মাস। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চাকুরে ক্লাইভ তখন ক্যালক্যাটা ঘুরে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে। যুবক রবার্ট ক্লাইভ বাবাকে চিঠিতে অভিযোগ করছেন , কোম্পানির মাসিক ৩ পাউন্ড স্টাইপেন্ডে টানাটানির সংসার। সেজন্য ক্লাইভ দুবার পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিলেন। ক্যালকাটা পুনরুদ্ধারে তাকেই ফের মাদ্রাজ থেকে পাঠানো হল। কোম্পানীর আরেক নতুন কর্মচারী ওয়ারেন হেস্টিংস , তিনিও মাসে ৫ পাউন্ড বেতনে মহাকরণে টানাটানির সংসার। সিরাজের পতন এবং ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের দু বছর বাদে হেস্টিংসেরও বাংলায় ফেরা। চাঁদপাল ঘাটের দক্ষিণে তখন ঘন জঙ্গল। উইলিয়াম দুর্গর কড়ি বর্গা খসে পড়ছে। সেখানে কামানের গোলার দাগ। ... ...
আদলাজ থেকে ফেরার পথে গান্ধীনগর - আহমেদাবাদ এয়ারপোর্টের রাস্তায়। রাস্তার ধারে ন্যায়ারা এনার্জি , আদানি সিএনজির পাম্প। গুজরাতের রাজধানী আহমেদাবাদ থেকে কুড়ি কিলোমিটার উত্তরে গান্ধীনগর। মণিভূষণ ভট্টাচার্যের 'গান্ধীনগরে এক রাত্রি' মনে পড়তে পারে। ১৯৭৪ সালে এই অঞ্চল নবনির্মাণ ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। কম করে একশো জনের মৃত্যু এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের চিমনভাই প্যাটেলের ইস্তফা। স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের একমাত্র আন্দোলন যা একটি নির্বাচিত সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছিল। বাংলার নকশালবাড়ি আর গুজরাটের এই ছাত্র আন্দোলনের অজুহাতেই জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ... ...
এই কেল্লার ভেতর একখানা নতুন গির্জা , স্কুল , খেলার মাঠ এইসব আছে। শনিবার বলে সবই বন্ধ। সেখান থেকে আবার দেবকা সৈকতে এসে টানা পাঁচিলের ওপর বসে আরব সাগরের হাওয়া খাওয়া গেল। সাবুর পাঁপড় , ঝালমুড়ি , টকঝাল চানাচুর এইসব ফেরিওয়ালারা ঘোরাঘুরি করছে। এই সৈকত রোজ পরিষ্কার করা হয় বলে মনে হল , প্লাস্টিক বা অন্যন্য নোংরা নেই। একজায়গায় ধাপ ধাপ করা আছে সৈকতে নামার জন্য। সেখানে দুখানা চৌকো বারান্দাওলা ঘরের মধ্যে কিছু জলখাবারের কাউন্টার, এছাড়া কোনো স্থায়ী খাবারের দোকান নেই। একটু আগে যে নির্মীয়মাণ রাস্তা দিয়ে দেবকা সৈকতে এসেছি, সেখানেই ফেরত যেতে হল তন্দুরি পমফ্রেট ইত্যাদি খাবার জন্য। এই রাস্তার দুধারে যাবতীয় হোটেল , খাবার জায়গা , ট্যাটু পার্লার ইত্যাদি। রাস্তাতেও ট্যাটু করানোর জন্য কেউ কেউ বাক্স নিয়ে বসে আছে। ... ...
চার্চ গেট থেকে ছেড়ে মেরিন লাইন্স, চারনি রোড, গ্র্যান্ট রোড, মুম্বাই সেন্ট্রাল। থামতে থামতে যাচ্ছে। বান্দ্রা, খার রোড পেরিয়ে সান্তা ক্রুজে নেমে উবের অটো। জুহু তারা রাস্তা ধরে যাবার সময়েই বোঝা গেল এই এক দামি এলাকা। লোকজনের পোশাক, গাড়ি, দুপাশের খাবার জায়গা, হোটেল দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে। অথচ জুহুর সৈকত এত নোংরা যে সন্ধ্যেবেলা কিছুক্ষন পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে পায়ে প্লাস্টিক এসে ঠোকরাচ্ছে। কালো লম্বা প্লাস্টিক জড়িয়ে যাচ্ছে পায়ে। সেসব দেখে আর আরো উত্তরে ভারসোভা সৈকত যাবার প্রবৃত্তি হল না। কিছুক্ষণ বাদে বাদেই মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে আরব সাগরের দিগন্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। ... ...
গাড়িগুলো ইউনিয়নের। এরা চালান। ইউনিয়নকে কিছু দিতে হয়। কুমায়ুনের স্থানীয় মানুষদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাতায়াতের জন্য বড় বলভরসা এই সব শেয়ার ট্যাক্সি। সমস্ত শেয়ার গাড়িগুলোতে ড্যাশবোর্ডের ওপর নকল ঘাসের সবুজ চাদর। চালকরা সমস্ত খুচরো নোট ড্যাশবোর্ডের ওপর অথবা চাদরের নিচে ছড়িয়ে রেখেছে। বেগুনি কমলা সবুজ। খুচরো ফেরত দিতে সুবিধা হয়। একহাতে বাঁকে গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে অন্যহাতে রিমোট দিয়ে তারা গাড়ির স্পিকারের গান বদলায় , আওয়াজ কমায় বাড়ায়। এছাড়াও পাহাড়ি রাস্তায় বাঁক নেবার সময় টুং টুং করে বেজে ওঠে পিছনে দেখার আয়নাতে লাগানো পিতলের ঘণ্টা। ... ...
ওই হ্রদে যাবার জন্যই মান্ডিতে আগমন। হ্রদের তীরে ব্যাসদেবের পিতা পরাশর ঋষি ধ্যান করতেন বলে ~ছশো বছর আগে এক মন্দির বানিয়ে দেন মান্ডির রাজা। ঋষির নামেই সমস্ত উপত্যকা , হ্রদ , মন্দিরের নাম হয়ে যায়। ... ...
বাইরের ঘরের এই সবুজ রঙের সোফাটা এমনিতে দেখলে মনে হয় একবারে কালচে শ্যাওলামাখা একটা পাথরের স্ল্যাব। হাত রাখলেও মনে হয়, ওপরে চাদর পাতা কঠিন কাঠের বেঞ্চ। কিন্তু জিনিসটার ওপর শুলেই কাঠিন্য আর বোঝা যায় না, আচ্ছাদনটা ধীরে ধীরে নরম হতে থাকে। তারপর একসময় নিলয় ডুবে যায় সোফার ভেতর। আর শুয়ে মোবাইল ঘাঁটতে শুরু করলে এই পুরো ডুবে যাওয়াটা এত তাড়াতাড়ি হয় যে নিলয় ইদানীং আলাদা করে কিছু বুঝতেও পারে না। ... ...