পূর্ব আফ্রিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো মারা নদী, যা কেনিয়া ও তানজানিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। এই নদীটি শুধুমাত্র একটি জলধারা নয়, এটি এই অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র, বন্যপ্রাণী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কেনিয়ার উচ্চভূমি মাউ ঢাল থেকে উৎপন্ন হয়েছে নদীটি। সেখান থেকে এটি দক্ষিণ পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে তানজানিয়ার সেরেনগেটি ন্যাশনাল পার্ক এবং কেনিয়ার মাসাই মারা ন্যাশনাল রিজার্ভের মধ্য দিয়ে বয়ে যায়। এর পর এটি অবশেষে তানজানিয়ার ভিক্টোরিয়া হ্রদে গিয়ে মিশেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯৫ কিলোমিটার।
এই নদীর অববাহিকা অসংখ্য বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল। প্রতি বছর, বিশেষ করে জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত, এখানে ঘটে এক অসাধারণ ঘটনা যাকে বলা হয় গ্রেট মাইগ্রেশন।
প্রায় ২০ লক্ষ ওয়াইল্ডবিস্ট এবং কয়েক লক্ষ জেব্রা খাবারের খোঁজে মাসাই মারা থেকে সেরেনগেটির দিকে যাত্রা করে। এই নদী পার হওয়ার সময় তারা শিকারি প্রাণীদের যেমন কুমির, সিংহ এবং চিতাবাঘের আক্রমণের শিকার হয়। এটি পৃথিবীর অন্যতম রোমাঞ্চকর বন্যপ্রাণী প্রদর্শনী।
মারা নদীর জল আশেপাশের কৃষিজমির জন্য সেচের প্রধান উৎস। এর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকরা ফসল ফলাতে পারেন, যা তাদের জীবিকা নির্বাহে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই নদী মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল।
নদীর অববাহিকায় বসবাসকারী মাসাইদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এই নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তারা নদীকে শ্রদ্ধার চোখে দেখে এবং এর ওপর তাদের জীবনযাত্রা বহুলাংশে নির্ভরশীল। তবে, বর্তমানে এই নদী নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তন, বনাঞ্চল ধ্বংস, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার এবং নদীর উজানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কারণে নদীর বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে। এর ফলে নদীর জল দূষিত হচ্ছে এবং এর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় কেনিয়া ও তানজানিয়া উভয় সরকার এবং পরিবেশবিদরা একসঙ্গে কাজ করছেন।
মারা নদী কেবল একটি ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নয়, এটি কেনিয়া ও তানজানিয়ার প্রকৃতি ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। এর সংরক্ষণ এই অঞ্চলের বন্যপ্রাণী এবং মানুষের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।