দেখুন, ঢেকে-চেপে লাভ নেই, কলাগাছকে কলাগাছ, আর বেগুনকে বেগুন বলেই ডাকা যাক। পশ্চিমবঙ্গে বহু মানুষ আছেন, আমিও তাঁদের একজন, যাঁরা মনে করেন, তৃণমূল-বিজেপি বাইনারিটা খুবই অকাজের। তৃতীয় কোনো শক্তি বিজেপির জায়গাটা নিলে ভালো হত। সেই পরিসরটা এমনিই ক্ষীণ ছিল, কিন্তু এই আরজিকর পর্বে চূড়ান্ত ভাবে ধ্বসে গেছে। সারা বাংলায় সার্ভে করে দেখিনি, আমি আমার কথা বলতে পারি, যে, হোক-কলরব থেকে কামদুনি যাই হোক, বাম ঘরানার আন্দোলনের একটা নৈতিক জোর ছিল এতদিন। সরকারি একটা হাসপাতালে একজন ডাক্তার মর্মান্তিক ভাবে খুন হয়ে গেলেন, অধ্যক্ষ তার নৈতিক দায়িত্ব নিতে চাইলেও মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে প্রাইজ পোস্টিং দিলেন, এই যখন ঘটনাবলী, তখন এই আন্দোলনেরও একটা তীব্র নৈতিক জোর ছিল। গুজব শুরু থেকেই রটছিল, কিন্তু নৈতিক জোরটাও ছিল। কিন্তু তারপর যেটা শুরু হল, স্রেফ গুজব আর মিথ্যের চাষবাস। দেড়শো গ্রাম, ভাঙা পেলভিক, গণধর্ষণ, জোর করে দেহ পোড়ানো, ময়নাতদন্তে গাফিলতি, বাথরুম ভেঙে ফেলা, সবকটা ডাহা মিথ্যে, এবং এগুলোই হয়ে দাঁড়াল কেন্দ্রবিন্দু। এগুলো কেউ রটালেন, মিডিয়া নিজেও রটাল, দায়িত্ব নিয়ে আন্দোলনের দিশা দেখানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিল। ওখানেই আন্দোলন গতি হারাল, নীতি ফিতি ভোগে চলে গেল। ... ...
এই চাট্টি অনুগল্প এইমাত্র এমনি-এমনি লেখা। কোনো বইয়ে নেই। কিন্তু এই স্যাম্পল দেওয়া হল, কারণ, গুরুচণ্ডালির গোডাউনে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট এবং উৎপটাংতর গপ্পের অভাব নেই। আমার বাছাই কিছু আছে। কিন্তু সে দেবনা। বইমেলা এল বলে। নেড়েচেড়ে বেছে নিন, কোন বইটা বেশি গোলমেলে। গত কয়েক বছরের কটা গল্পসংকলনের নাম দিলাম। অবশ্যই নেড়ে দেখুন, আর পড়া হয়ে গেলে প্রতিক্রিয়া দিন। গুরু স্রেফ বই ছাপেনা, গুরু গদ্যলেখার আন্দোলন, গুরু এক বোতল, যা খুললেই বেরিয়ে আসবে দৈত্য। ... ...
আমেরিকা নির্বাচনে একটা জিনিস সবাই জানে, কিন্তু কক্ষনো গভীরে ঢোকেনা, সেটা হল গ্রাম-শহরের বিভাজন। বস্তুত ভারতের থেকে বিভাজনটা অনেক বেশি। যদি কাউন্টি ধরে লাল আর নীল ম্যাপ দেখেন তো পিলে চমকে যাবে। প্রায় পুরোটাই লাল, অর্থাৎ রিপাবলিকান। খুচরো-খুচরো কিছু জায়গায় নীলের ছিটে । অঙ্কের হিসেবে মোটামুটি ২৫০০ রিপাবলিকানদের দখলে। আর ডেমোক্রাটরা তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। ২০%। তাহলে নির্বাচনে কমবেশি ৫০-৫০ হয় কীকরে? কারণ, রিপাবলিকানরা যে কাউন্টিগুলো পায়, তার প্রায় সবটাই গ্রামে এবং কিছুটা শহরতলীতে। সেখানে লোক কম। আর বড় শহরে থাকে একটা বিপুল জনসংখ্যা। সেটা ডেমোক্রাটদের ঘাঁটি। এই দুই এলাকার বিভাজনটা কিন্তু বিপুল। এবার বড় শহরে, এক্সিট পোল অনুযায়ী ডেমোক্রাটরা জিতেছেন মোটামুটি ৬০-৪০ ব্যবধানে। আর গ্রামে ঠিক উল্টো। ট্রাম্প জিতেছেন মোটামুটি ৬৫-৩৫ ব্যবধানে। বিশ্বের আর কোথাও এত প্রকট ব্যবধান দেখা যায় কিনা সন্দেহ। শহরতলীতে একটু মিশ্র। ট্রাম্পই একটু এগিয়ে (৫১-৪৭)। এই বিভাজনটা তিরিশ বছর আগেও এত প্রকট ছিলনা। ক্রমশ প্রকট হচ্ছে, এবং গত তিনটে নির্বাচনে একদম লাইন কেটে দেখিয়ে দেওয়া যায়। ... ...
এটা ২০২৪ এর নভেম্বর। গত আট বছরে ট্রাম্প তাঁর কিছু অবস্থানে মূলত অনড় থেকেছেন। তার মধ্যে কিছু আমেরিকান রক্ষণশীল পুঁজির পুরোনো অবস্থান। এক, তিনি আমেরিকায় জনতার হাতে বন্দুক থাকার পক্ষে। দুই, গর্ভপাতের সার্বজনীন অধিকারের বিরুদ্ধে, ওটা তিনি রাজ্যগুলোর হাতে ছেড়ে দিতে চান। তিন, শিক্ষা-স্বাস্থ্যতে যে কোনো রকম 'সমাজতান্ত্রিক' ভরতুকির বিরুদ্ধে। চার, করব্যবস্থা একদম সোজা-সাপ্টা করে দিতে চান। অর্থাৎ প্রগ্রেসিভ ট্যাক্সেশন চলবেনা। এই চারটেই বিশেষ নতুন কিছু না। দুটো ব্যক্তিপুঁজির চূড়ান্ত অধিকারের পক্ষে এবং বাকিদুটো রিপাবলিকানদের পুরোনো অ্যাজেন্ডা। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন কিছুও দাবী আছে, যা ঠিক চিরপুরাতন রিপাবলিকানদের সঙ্গে মেলেনা। সেগুলো কী? এক, তিনি বড় আকারে অভিবাসনের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে। দুই, আমেরিকার বাজার বাইরের পুঁজিকে খুলে দেবার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ একরকম করে খোলা অর্থনীতি আর নয়, অবাধ ভুবনীকরণ আর নয়। তিন, যুদ্ধের একদম বিপক্ষে। আমেরিকা বাইরে গিয়ে যুদ্ধ করবেনা, এ কথা শুধু ঘোষণা করেননি, রাশিয়ার সঙ্গে ভাবসাব করে ফেলেছিলেন। ন্যাটো প্রায় তুলে দেবেন বলেছিলেন। রাশিয়া, উত্তর কোরিয়ার নেতাদের প্রশংসাও করেছেন একাধিকবার। কেবল চিনের খুবই নিন্দে করেছেন। চার, সন্ত্রাসবাদ বিরোধিতা, যেটা অন্যদের থেকে একদম আলাদা। একদিকে সেটা মুসলিম বিদ্বেষে পৌঁছে যায়, অন্যদিকে আরব দেশগুলোকে তোল্লাই দেবার বিপক্ষেও, যেটা আমেরিকার এতদিনকার নীতির পুরো উল্টোদিকে। ... ...
দুদিন আগে অবশেষে জুনিয়ার-ডাক্তাররা সিবিআইকে কিছু প্রশ্ন করতে পেরেছেন। আশি দিন পেরিয়ে যাবার পর। সেটা অভিনন্দনযোগ্য। সাংবাদিকে বৈঠক করে জানিয়েছেন। সিবিআইয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন, তাঁদের বলেননি কেন, নিয়মিত আপডেটের দাবী করেননি কেন, বা বললে কী উত্তর পেয়েছেন, জানা নেই। মিডিয়াতেও যা করেছেন, তাতেও হোমওয়ার্কের এত অভাব কেন বোঝা দুষ্কর। তাহলেও পুরো প্রশ্নগুলো এক এক করে দেখা জরুরি। পুরো সাংবাদিক সম্মেলনের অডিও ভিশুয়াল পাইনি। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে দেবাশিস হালদারের উদ্ধৃতি দেওয়া পুরো বক্তব্যটা পেয়েছি এবিপি আনন্দে। সেগুলো টুকরো করে নিয়ে দেখা যাক। উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে দেবাশিসের বক্তব্য, নিচে আমার মন্তব্য। ... ...
আমেরিকার নির্বাচনে সবসময়েই একটু বেশি নাটক হয়। বিশ্বের উপর দাদাগিরি বজায় রাখার ব্যাপার, ইয়ার্কি না। কিন্তু এবার একটু বেশিই হচ্ছে। বিশ্বের কোনো নির্বাচনে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট কানের লতিতে গুলি খেয়েছেন বলে জানিনা, কিন্তু এবার আমেরিকায় খেলেন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাঝখানেই প্রার্থী কাম প্রেসিডেন্ট অবসর নিয়ে নিলেন বলে সাম্প্রতিক কালে শুনিনি। এবার নিলেন। তাতে অবশ্য নিজের দলের লোকেরাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে। বাইডেন থাকলে ট্রাম্প এমনি এমনিই জিততেন, গুলি টুলি লাগতনা। তাঁর জায়গায় এলেন কমলা। গত চার বছরে তামিলনাড়ুতে গিয়ে নারকেল গাছ লাগালো ছাড়া আর কী করেছেন, সেটা অবশ্য এর আগে কেউ জানতনা। কিন্তু প্রচুর হইচই হবার পর জানা গেল, উনি আরও নানা জায়গায় ছাপ রেখেছেন। সেটা ভালো না মন্দ বলা অবশ্য কঠিন। বাইডেন আমলে দ্রব্যমূল্য, যাকে বলে, আকাশ ছোঁয়া। নতুন দুখানা যুদ্ধ শুরু হয়েছে, আমেরিকা সেখানে যথারীতি যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে। ভালর মধ্যে বেকারিত্বের হার খুব কমে এসেছে। কিন্তু সেটাও একটা রহস্যজনক ব্যাপার। কোভিডের সময় হঠাৎ বেকারিত্ব প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল, তারপরই হুহু করে কমে গেল। দোকান-বাজারে কাজ করার লোক নেই। সংস্থাগুলো নাকি লোক পাচ্ছেনা। সেটা এখনও চলছে। অনেক রকম স্পেকুলেশন পড়েছি, কিন্তু এত লোকে একসঙ্গে হুট করে উবে গেল কীকরে জানা যায়নি। ... ...
কাল ছিল সেই বহুপ্রতীক্ষিত সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান। খুবই ভালো ব্যাপার, ডাক্তাররা অবশেষে সিবিআইকে পাকড়েছেন। কিন্তু দাবীটা কী, সেটা পরিষ্কার করে জানা গেলনা। জুনিয়ার ডাক্তারদের পেজে একটা ভিডিও আছে, যেখানে খুব ভালো স্টুডিও রেকর্ডিং এবং মিক্সিং করা একটা গান পাওয়া গেল, সঙ্গে নানা দৃশ্যের কোলাজ। কিন্তু কোনো বক্তব্য পাওয়া গেলনা। লাইভ স্ট্রিমিং হয়নি, তেমন দাবীও ছিলনা। টিভিতেও কভারেজ অল্প হয়েছে। বিশদ কিছু নেই। এছাড়াও স্মারকলিপির কোনো প্রতিলিপি নেই, আদৌ কিছু দেওয়া হয়েছে কিনা তাও বোঝা যায়নি। ডাক্তারবাবুরা এবং অধুনা এই অভয়া মঞ্চ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে যা করেন, তা খুবই খোলাখুলি, যেটা দাবী করেন, সেটা হল সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা, দুটোই খুবই প্রশংসনীয়। কিন্তু রাজ্যপাল বা সিবিআই দপ্তরে গিয়ে কী করেন, সে ব্যাপারে তাঁদেরই ন্যূনতম স্বচ্ছতা না রাখার একটা ধারাবাহিকতা আছে। ছোটোরা এবং বড়োরা মিলে তিনবার সিজিও কমপ্লেক্স গেছেন। কিন্তু সেখানে কী হল, দাবীগুলো কী, তাঁরা ধমক খেয়ে ফিরে এলেন, নাকি সিবিআই সব দাবী মেনে নিল, জানার উপায়। রাজ্যপালের কাছেও সেই একই ব্যাপার। সেখানে অবশ্য স্মারকলিপিটা 'ফাঁস' হয়েছে। কিন্তু সে নিয়ে তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিনি। ... ...
নির্বাচন না সার্কাস বোঝা মুশকিল। বাংলা আর নিজের মেয়েকেই চায় কিনা, তার অগ্নিপরীক্ষা হবার কথা ছিল, কিন্তু কোনো এক হরেরাম সিং হাজির করছিলেন পবন সিং কে, যাঁর স্লোগানই হল ভোজপুর বাংলার মেয়েদের চায়। গরগরে কামনা এবং কোনো লুকোছাপা নেই। বাঙালি বুদ্ধিজীবী হিন্দি বা ভোজপুরি গানে অবশ্য সেক্সিজম খুঁজে পায়না, "আমি তন্দুরি মুর্গি, আমায় অ্যালকোহলে চুবিয়ে গিলে ফেল" জাতীয় জিনিস জিভ বার করে দেখে, যেমন গাঁয়ের অপু-দুগ্গা দেখতো রেলগাড়ি। ফলে তারা আপত্তি করে উঠতে পারেনি। কিন্তু যা হোক, সেই আপদ বিদেয় হয়েছে। কিন্তু দেখিয়ে দিয়ে গেছে, জাস্টিস, আরজিকর ওসব ততটা জরুরি জিনিস না, আসল কথা হল ভোজপুরি নৃত্য। ... ...
সরকার- জুডা আলোচনার পুরোটা শুনলাম। আগেই লিখেছিলাম, এই দাবী-টাবীগুলো মোটের উপর মিটে গেছে, একটা বাদে। স্বাস্থ্যসচিবের পদত্যাগ। সেটা বেশিদূর যাবেনা, সেটাও বলেছিলাম। সেটা নিয়ে চারটি কথা হল। ওঁকে আদৌ অভিযুক্ত বলা যায় কিনা, আইনগতভাবে। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, বলা যায়না। ওঁরা বললেন যায়। এবার অভিযোগ কোন পর্যায়ে গেলে সেটা ফর্মাল হয়, আইনত আমি বলতে পারবনা। তবে ওটা এক্তিয়ারের বাইরে, বললেন মুখ্যমন্ত্রী। এবং সেখানেই কথা শেষ। ডাক্তাররা মেনে নিয়েছেন, অনশনও তুলে নিয়েছেন, ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ঠিকই বলেছিলাম, ওটা বড় কোনো ব্যাপার ছিলনা। ... ...
সুবর্ণ গোস্বামী এখনও ইন্টারভিউ দিচ্ছেন দেখে একটু আশ্চর্য হলাম। কাল কলকাতা টিভিতে দেখলাম, বেশ ক খানা কথা বলেছেন। গোটা তিনেক পয়েন্ট বেশ ইন্টারেস্টিং। এক, ওঁর বিরুদ্ধে ( ২০০১ সালের) অভিযোগ প্রসঙ্গে বললেন, "...আমাদের খবরের কাগজগুলোর কোয়ালিটির কথা বলছি। তারা ভেরিফাই করেনা, লিখে দেয়..." এইটা শুনে বেশ ভালো লাগল। খানিকটা একমতও। কেবল না-যাচাই করা 'সূত্র' এর 'খবর' গুলো নিজের পক্ষে গেলে সুবিধাজনকভাবে চুপ থাকেন কেন, আর বিপক্ষে গেলেই কেন গর্জে ওঠেন, এইটা বোঝা গেলনা। ... ...