এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  ইস্পেশাল

  • সোনম ওয়াংচুক: গণতন্ত্র কি শুধুই কাগজে-কলমে?

    বেবী সাউ
    ইস্পেশাল | উৎসব | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৮৪ বার পঠিত
  • অলংকরণ: রমিত 




    লাদাখের শুষ্ক মরুভূমি, বরফঢাকা উপত্যকা আর নীল আকাশের নীচে জন্মেছিলেন এক স্বপ্ন দেখা মানুষ—সোনম ওয়াংচুক। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি শুধু একজন আবিষ্কারক নন; তিনি লাদাখের মাটি ও মানুষের এক আশ্চর্য কণ্ঠস্বর। যিনি নতুন প্রজন্মকে শিখিয়েছেন, শিক্ষা মানে শুধু বইয়ের অক্ষরে সীমাবদ্ধ থাকা নয়; বরং মাটি, জল, সূর্যের আলো ও সমাজের সঙ্গে মিলেমিশে টিকে থাকার বিদ্যা। অথচ আজ এই মানুষটিই কারাগারে। সোনম একটি স্পষ্ট প্রশ্ন তুলেছেন— লাদাখের পরিবেশ কেবল ‘নির্মল সৌন্দর্য’ নয়—এটি স্থানীয় সমাজের অস্তিত্বেরও উৎস। পাহাড়ি জলাধার, বরফ-স্থল ও স্থানীয় কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী যদি শিল্পায়ন ও খনিজ সম্পদের পুঁজিপতিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে লাদাখের সামাজিক-সংস্কৃতিক ধ্বংস অনিবার্য।

    লাদাখের ভূ-প্রকৃতি উচ্চ হিমালয় অঞ্চলের একটি শুষ্ক, ঠান্ডা অঞ্চল। এখানকার পরিবেশ অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং ভঙ্গুর। হিমবাহ, নদী, এবং বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এই অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের প্রধান উপাদান। লাদাখের জনসংখ্যা মাত্র ৩ লাখের কিছু বেশি, তবে এর ভৌগোলিক আয়তন জম্মু ও কাশ্মীরের মিলিত অঞ্চলের দ্বিগুণেরও বেশি। এই অঞ্চলের মাটির নিচে রয়েছে বিরল মৌল (যেমন, লিথিয়াম), যা আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে স্মার্টফোন ও ব্যাটারি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এই সম্পদের প্রতি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহ লাদাখের পরিবেশ ও স্থানীয় সংস্কৃতিকে ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর সে সবে মদত দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার।

    ২০২৫ সালের, ২৬ সেপ্টেম্বর। সোনম ওয়াংচুককে NSA (National Security Act)-এর অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর অপরাধ কী? তিনি প্রকৃতির জন্য, জনগণের জন্য, আর তাঁর প্রিয় লাদাখের জন্য লড়ছেন। লাদাখকে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো সরকারকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন। তিনি শান্তিপূর্ণভাবে তার মাতৃভূমির অধিকারের কথা বলেছেন। এই গ্রেপ্তার শুধু একজন মানুষের উপর অবিচার নয়, এটি সত্য ও ন্যায়ের উপর এক নির্মম আঘাতও বটে!

    আজ যখন ঝাড়খণ্ডের শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোর দিকে তাকাই গা শিউরে ওঠে। তেমনি বস্তারের ধ্বংসপ্রাপ্ত জঙ্গল, অযোধ্যা পাহাড়ের নিঃশব্দ কান্না, মধ্যপ্রদেশের জনজাতি আর লাদাখের বিপন্ন প্রকৃতি—এই সব ধ্বংসের জন্য দায়ী কে?

    লাদাখ জুড়ে তখন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের বিক্ষোভ। দাবি একটাই—লাদাখকে ভারতের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের আওতায় আনা হোক— যাতে এখানকার ভূমি, বন ও জলসম্পদ বাইরের কর্পোরেট আগ্রাসন থেকে রক্ষা পাবে লাদাখ। কেননা, লাদাখের সৌন্দর্যকে রক্ষা করার দায়িত্ব তারই ভূমিপুত্রদের। লাদাখ তাদের কাছে পবিত্র মাতৃভূমি। সোনম ওয়াংচুক এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে উঠছিলেন। তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেন, তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেন। দীর্ঘদিন ধরে অনশনে বসেন। কিন্তু প্রশাসনের চোখে এই শান্ত কণ্ঠস্বর হয়ে উঠল আশঙ্কার প্রতীক। অভিযোগ আনা হল, তাঁর বক্তব্য নাকি লাদাখের জনগণের মধ্যে হিংসার উদ্রেক করছে। লাদাখ হাঁটছে অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর (নেপাল, বাংলাদেশ) দেখানো পথে। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, এবং জাতীয় নিরাপত্তা আইন NSA ( National Security Act) প্রয়োগ করে। অভিযোগ সত্য-মিথ্যা যাই হোক, এই গ্রেপ্তার স্পষ্ট করল— লাদাখের মানুষ তাঁদের অধিকার চাইলে রাষ্ট্র সেটিকে কোনমতেই ভালোভাবে নেবে না।

    সোনমকে যখন দাবি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তিনি জানান— আমাদের কোনও দাবি নেই, শুধু লাদাখকে যে প্রতিশ্রুতিগুলো, যে আশাগুলো দেওয়া হয়েছিল তা যেন সরকার পালন করে। সরকারের দেওয়া সেই প্রতিশ্রুতিগুলো আমরা সরকারকে শুধু স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছি।

    তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পাহাড়ের পরিবেশ, জনজাতিদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার যে কথা সরকার দিয়েছিল সেই সরকার আজ পুঁজির লোভে সমস্ত লাদাখকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এই পাঁচ-ছয় বছরেও লাদাখে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিল না সরকার। এত এত ভ্যাকান্সি তাও যুব সম্প্রদায়ের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

    এখন একটু পেছনে ফেরা যাক, দেখে নেওয়া যাক ইতিহাসের কয়েকটি পৃষ্ঠা। ১৯৮৮ সালে মাত্র কুড়ি বছরের এক তরুণ লাদাখের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপ্লবের স্বপ্ন দেখলেন। তথাকথিত শিক্ষাধারায় পিছিয়ে পড়া ছাত্রদের দেখালেন জীবনের স্বপ্ন। এগিয়ে চলার স্বপ্ন। গড়ে ওঠে SECMOL (Students’ Educational and Cultural Movement of Ladakh) — শেখানো হয় জীবনমুখী পাঠ— কীভাবে বরফে ঘেরা উপত্যকায় কম খরচে উষ্ণ ঘর বানানো যায়, কীভাবে সূর্যের আলোকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা যায়, কীভাবে স্থানীয় ভাষা, সংস্কৃতি ও জ্ঞানকেও সমান মর্যাদা দেওয়া যায়, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান করলে বাচ্চারা কত তাড়াতাড়ি শিখতে পারে — সোনম ওয়াংচুক সেসব বাস্তবে রূপ দিয়ে দেখালেন। এবং সফল হলেন।

    লাদাখের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো জল। শীতে বরফ জমে থাকে, কিন্তু গ্রীষ্মে কৃষিজমি ফেটে যায় তৃষ্ণায়। এই সমস্যার অভিনব সমাধান দিলেন সোনম ওয়াংচুক—আইস স্তুপ। শীতকালের অতিরিক্ত জলকে পাইপের মাধ্যমে নিচে এনে বরফের মতো স্তূপ বানানো হয়। এই বরফ ধীরে ধীরে গলে যায় গ্রীষ্মকালে এবং কৃষকরা চাষের জন্য জলের সমস্যা মেটান। দেখতে যেন বিশাল এক সাদা স্তূপ, যেন পাহাড়ের কোলে জন্ম নেওয়া কৃত্রিম গ্লেসিয়ার। এই উদ্ভাবন কেবল লাদাখ নয়, বিশ্বের জলসঙ্কটগ্রস্ত অঞ্চলগুলোকেও আশার আলো দেখিয়েছে।

    সোনম ওয়াংচুক বারবার প্রমাণ করেছেন, উন্নয়ন মানেই প্রকৃতিকে ধ্বংস করা নয়। স্থানীয় মাটি দিয়ে তৈরি ঘর, সূর্যের তাপকে কাজে লাগিয়ে উষ্ণ শ্রেণিকক্ষ— কীভাবে বিজ্ঞান, প্রকৃতি আর সমাজ একসঙ্গে টিকে থাকতে পারে, তিনি করে দেখিয়েছেন। তাঁর নকশা করা ভবনগুলো শীতে গরম, গ্রীষ্মে ঠান্ডা, আর খরচ প্রায় শূন্য। সোনম, তাঁর কাজের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বহুবার। রেমন ম্যাগসেসে পুরস্কারে পুরস্কৃত হন ২০১৮ সালে। তার আগে ২০১৬ সালে পান রোলেক্স অ্যাওয়ার্ড ফর এন্টারপ্রাইজ এবং টেরা অ্যাওয়ার্ড। এই পুরস্কারগুলো প্রমাণ করে লাদাখের মতো ছোট এক অঞ্চলের বাসিন্দা সোনম ওয়াংচুক সারা বিশ্বকে পথ দেখিয়েছেন! ওয়াংচুকের কাছে লাদাখ মানে কেবল পর্যটকের চোখে ‘অতুলনীয় সৌন্দর্য’ নয়। তাঁর চোখে লাদাখ হলো মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামেরও ক্ষেত্র। তাঁর কাছে বরফঢাকা পাহাড় মানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং বন-জঙ্গল, নদী-নালা মানে এক জীবন্ত সভ্যতা। তিনি তাঁর কথায় স্পষ্ট করে বলেন, যদি উন্নয়নের নামে নির্বিচারে শিল্পায়ন আর খনিজ আহরণ করা হয় , তবে লাদাখ ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই তিনি নিজের দায়িত্ব কর্তব্য হিসেবে মনে করেন লাদাখের সৌন্দর্যকে, এই সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইকে। আর এই লড়াই করতে হবে স্থানীয় মানুষজনকেই। সোনম ওয়াংচুকের গ্রেপ্তার আসলে দুটি দৃষ্টিভঙ্গির সংঘর্ষ। একদিকে রাষ্ট্র চায় উন্নয়নের মানে রাস্তা,পর্যটন, খনিজ আহরণ এবং বিপুল ভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস। যেটা ক্রমাগত ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিসগড়, মধ্যপ্রদেশে করে চলেছে। আর সোনম ওয়াংচুক মনে করেন উন্নয়ন মানে স্থানীয় অধিকার, পরিবেশের ভারসাম্য, টেকসই ভবিষ্যৎ।

    যাঁকে অনুকরণ করে কয়েক বছর আগে বানানো হয়েছিল 'থ্রি ইডিয়ট'-এর র‍্যাঞ্চো চরিত্র নির্মিত হয়েছিল, সারাদেশ উত্তাল হয়েছিল সেই চরিত্রে আর আজ যখন নিজের ভূমির জন্য, পরিবেশের জন্য, জনজাতির জন্য দাবি তুললেন, তিনি হয়ে গেলেন দেশদ্রোহী? সোনমের স্বরে তাই আজ বলতে ইচ্ছে করে— গণতন্ত্র তবে কী শুধুমাত্র কাগজে-কলমে?

    আজ সোনম ওয়াংচুক কারাগারে। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন, তাঁর দর্শন, তাঁর আন্দোলন—এসবকে কারাগারের দেওয়ালে আটকে রাখা যাবে কি?একজন ব্যক্তি যখন গোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতীক হয়ে ওঠেন, তখন তিনি আর শুধুই ব্যক্তি থাকেন না। হয়ে ওঠেন সমষ্টির একজন। তাই একজনকে বন্দি করার অর্থ আন্দোলনকে আরও অনেক বেশি উস্কে দেওয়া। মৃদুল দাশগুপ্তর কবিতার লাইন ধরে বলতে ইচ্ছে করে—"একটি মশাল ঘুরতে ঘুরতে জ্বালিয়ে দিচ্ছে সহস্রকে।" আজ সোনম ওয়াংচুককে গ্রেফতার করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ, তারা চায় তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত কণ্ঠস্বরকেই দমন করতে।
    কিন্তু যখন ‘কথা’ একটি বিশেষ কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে হাজার হাজার মানুষের সমবেত কণ্ঠে পরিণত হয়, তখন তাকে কীভাবে দমিয়ে রাখবেন? লাদাখের মানুষ তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের পরিবেশপ্রেমীরা তাঁর হয়ে কথা তুলছেন।

    লাদাখের পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন শুধু পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য নয়, এটি স্থানীয় জনগণের অধিকার, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার সুরক্ষার লড়াই। সোনম ওয়াংচুকের নেতৃত্বে এই আন্দোলন বিশ্বব্যাপী উপেক্ষিত মানুষের, জনজাতির কথা হয়ে উঠেছে। তবে, তাঁর গ্রেফতারি এবং হিংসার ঘটনা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। বলপ্রয়োগের পরিবর্তে সংলাপ, স্বচ্ছতা এবং টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে লাদাখের শান্তি ও পরিবেশ রক্ষা সম্ভব। সরকারকে অবশ্যই জনগণের উদ্বেগের প্রতি গভীর মনোযোগ দিতে হবে, যাতে এই ভূস্বর্গ তার প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে।

    বর্তমানে সোনম ওয়াংচুক লাদাখের জন্য সংবিধানের ষষ্ঠ সূচিতে অন্তর্ভুক্তি, রাজ্যসদৃশ মর্যাদা, স্থানীয়দের জন্য চাকরিতে সংরক্ষণ এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় স্বশাসনের দাবিতে আন্দোলন করছেন। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি লেহ-তে অনশন শুরু করেন। কিন্তু আন্দোলনের মধ্যে দুই আন্দোলনকারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরিস্থিতি ২৪-২৫ সেপ্টেম্বর হিংসাত্মক রূপ নেয়। পুলিশের লাঠিচার্জ, টিয়ারগ্যাস ও গুলিবর্ষণে কমপক্ষে চারজন নিহত এবং অনেকে আহত হন। এই হিংসা থামাতে ওয়াংচুক অনশন স্থগিত করেন এবং শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান।

    কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁকে National Security Act (NSA)-এর আওতায় গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, তিনি রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে জড়িত এবং বিদেশি অর্থ তাঁর NGO-তে প্রবেশ করেছে। সরকার তাঁর প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করেছে এবং CBI তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ওয়াংচুক অবশ্য আগেই বলেছিলেন, “একজন সোনম ওয়াংচুক জেলে গেলেও লাদাখের আন্দোলন থামবে না।”

    লাদাখের আন্দোলন এখন একটি জটিল পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষের মূল কারণ হল প্রশাসনের উদাসীনতা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ। লাদাখের কম জনঘনত্ব (৩ লাখের সামান্য বেশি) এবং বিশাল ভূখণ্ডে বিরল মৌলের উপস্থিতি বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আগ্রহের কারণ। এই সম্পদ উত্তোলনের ফলে স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিবেশের ক্ষতির আশঙ্কায় জনগণ উদ্বিগ্ন। আন্দোলন এখন শান্তিপূর্ণ দাবি থেকে হিংসার দিকে মোড় নিয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।

    সোনম ওয়াংচুকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা এবং বিদেশি শক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ গুরুতর। তবে এই অভিযোগের পক্ষে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। তাঁর আন্তর্জাতিক খ্যাতি এবং পরিবেশ ও শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান বিবেচনা করলে, এই অভিযোগ সন্দেহের জন্ম দেয়। লাদাখের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান অত্যন্ত স্পর্শকাতর—একদিকে পাকিস্তান, অন্যদিকে চীন। এই পরিস্থিতিতে ‘ডিপ স্টেট’-এর সম্ভাব্য প্রভাবের কথা উঠলেও, এটি তদন্ত ছাড়া নিশ্চিত করা যায় না। ওয়াংচুকের গ্রেফতারি এবং NSA-এর মতো কঠোর আইনের প্রয়োগ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে হয়, বিশেষত যখন পর্যাপ্ত প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

    লাদাখের সমস্যা সমাধানে বলপ্রয়োগের পরিবর্তে সংলাপ অপরিহার্য। কেন্দ্রীয় সরকারকে অবশ্যই স্থানীয় জনগণের অসন্তোষের মূল কারণ—প্রশাসনিক উদাসীনতা, পরিবেশ ধ্বংস এবং কর্পোরেট আধিপত্য—বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সোনম ওয়াংচুকের মুক্তি এবং তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ তদন্তও এই মুহূর্তে খুব জরুরি। যদি তিনি সত্যিই অপরাধে জড়িত হন, তবে আইনানুগ পদ্ধতিতে শাস্তি দেওয়া হোক। কিন্তু তার আগে তাঁর মতো একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে বিনা প্রমাণে গ্রেফতার করা শুধু লাদাখের জনগণের মধ্যে নয় এবং বিশ্বের সুবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের ক্ষোভ বাড়াবে। মণিপুরের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারকে বুঝতে হবে, বলপ্রয়োগ দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। আলোচনা, স্বচ্ছতা এবং স্থানীয় জনগণের চাহিদার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে এই সমস্যার সমাধান পারে। হতে পারে লাদাখের শান্তি ফিরিয়ে আনার পথ।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ২৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৩৪734520
  • লেখাটায় অনেক কিছুই আছে, কিন্তু কেমন ভাসা ভাসা। তবুও এই মুহূর্তে লেখার জন্য ধন্যবাদ। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন