এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  ইস্পেশাল

  • এ অবধি আঠারো

    নরেশ জানা
    গপ্পো | ০৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৩৩ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত 



    (এক)

    লম্বা ধাতব বস্তুটা কাঁধ থেকে নামিয়ে ডান হাতে শক্ত করে ধরল বিরজু। এবার রাস্তা মোটামুটি সমান। আয়েসে হেঁটে যাওয়া যায় এবং এভাবে আর তাকে হাঁটতে হবে বড় জোর দেড় কিলোমিটার। আগের আড়াই কিলোমিটার রাস্তা তাকে হাঁটতে হয়েছে উঁচু নিচু পথে। আল জমিন হিঁড় গজকান টপকছে সে। সে সময় বস্তুটা কাঁধে রাখাই দস্তুর ছিল। এখন রাস্তা মোরাম বেছানো, এখন দোর আঁইটে নিদাচ্ছে সবাই। চৈতের শুরু! জঙ্গলের শরীরে, গাছের গঢ়ায় দম মেরে বসে আছে হিম। ই সময়ে ঘুম গাঢ়হ হয়। আরও আধ মাইল টাক গিয়ে বাঁয়ে মুড়বে সে। ইটের ধাঁই কাঠামোটাকে ডানহাতি রেখে উঠে আসবে পাকা সড়কে। জায়গাটার নাম ইন্দিরা চক। রাস্তার ওপাশেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়। ওখানে টানটান হয়ে শুয়ে থাকার কথা লোকটার। অথবা আশেপাশে কোথাও। কোনো দোকানের আগু দাওয়ায়, গৃহস্থের সামু দুয়ারে।‌ সেটা হলে একটু বাগড়ার। আঁধারে মিশে ঠাওর করতে হবে তার ঠাঁই। আধ ক্রোশ ঢ্যাঙা এই বাজার। মইধ্যে আবার থানা গড়া। গতিক বেগড় হবে যদি লোকটা থানা গড়ার কাছাকাছি কুনো জায়গায় থাকে। অবশ্য খুব একটা বেগড়ের কিছু নাই। থানায় ইখন মস্ত পাঁচিল। তার উপর গছ করে কাঁটা তারের বেড়া। থানার গেটে ভিতর থেকে কুলুপ। গুলির শব্দ হলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই। পুশাক আশাক আর বুলেটপ্রুফে সাইজগোজ করে, অস্তর শস্তর হাতে লুইয়ে গেট খুলে পুলিশের বাইরে আসতে সময় লাগবে অন্ততঃ চল্লিশ মিনিট। তাছাড়া একটা আধটা ফটাস ফুটাস আওয়াজে পুলিশ না বেরুতেও পারে। হয়ত তারা দু তিনটা আওয়াজের জন্য অপেক্ষা করবে, হয়ত ঘুম চোখে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবে শব্দটা ঠিক গুলিরই ছিল কি না! ততক্ষণে বিরজু মিলিয়ে যাবে অন্ধকারে। ফেরা পথে রওনা দেবে সরিষা বাসার জঙ্গলে। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে চাতন ডুংরি। যেখান থেকে রওনা দিয়েছিল সে।

    বস্তুটা হাতে ঝুলিয়ে দুলকি চালে হাঁটা। জিনিসটা খুবই হালকা মনে হয় তার কাছে। চার কিলোরও কম ওজন। আগের জিনিসটা ছিল গদাই মার্কা, একটা ইম্প্রোভাইজ থ্রি ফিফটিন। মুঙ্গেরের মাল, কান্ট্রি মেড। একটা গুলি চালানোর পরই গরম হয়ে যেত নলটা। অন্ততঃ দশ মিনিট সেটাকে জুত হতে দিয়ে দ্বিতীয় গুলি ভরতে হত। নইলে নল ফেটে তারই মরার সম্ভাবনা। এই থ্রি নট থ্রি তার হাতে এসেছে মাত্র মাস খানেক আগে। অপারেশন শিলদায় অংশ নেওয়ার পুরস্কার হিসেবে। শিলদায় চব্বিশ জওয়ান খতম করেছিল তারা। লুট করেছিল পঞ্চাশটার মত আ্যসল্ট রাইফেল আর চার হাজার রাউন্ড কার্তুজ। না, এ রাইফেল অবশ্য সেই অটোমেটিক আ্যসল্টগুলোর মধ্যে পড়ে না। সেই সব এলএমজি, কারবাইন,একে ফরটি সেভেন বিতরণ করা হয়েছে কমান্ডার আর স্কোয়াড লিডারদের মধ্যে। আর তাদের ব্যবহৃত পুরানো অস্ত্র এসেছে বিরজুদের হাতে। যেমন তাদের স্কোয়াড লিডার একটা কারবাইন পেয়েছে আর তার থ্রি নট থ্রি এসেছে বিরজুর হাতে। সেটাই দোলাতে দোলাতে বিরজু চলেছে একটা সোলো অপারেশনে। বিরজু ভাবে, ই অস্তরটা জব্বর। পর পর দশটা ফায়ার করা যায় তবে প্রতিবারই বোল্ট করতে হয় এটাই যা ঝক্কির। একটা কারবাইন পেলে ভালো হত। বারবার বোল্টের ধকল ছিল না। আন্ধা ধুম পঁচিশ তিরিশটা ফায়ার করা যায়। অবশ্য এখানে একটাই গুলি খরচ করতে হবে তাকে। একটাই ফায়ার। একদমই একা করতে হবে কাজটা। একটা পাগলকে মেরে আসতে হবে তাকে।

    -ওটা যে পাগল সেটা তোমাকে কে বলেছে? তুমি নিশ্চিত জান? বলেছিল ওদের কমান্ডেন্ট।

    - সবাই জানে। গটা বেলপাহাড়ী জানে।

    - বাজে কথা বলিস না। দিন পনেরো হল ওটা এ তল্লাটে জুটেছে। আমরা খবর নিয়েছি, ভুলাভেদা, বাঁশপাহাড়ি, ঝিলিমিলি, শিলদা, কোথাও এই লোকটাকে আগে দেখা যায়নি। তোর কী মনে হয় ওটা আকাশ থেকে পড়েছে? সরাসরি তুই-এ নেমেছিল কমান্ডার। তুই কী জানিস, স্টেট পুলিশের মত সেন্ট্রাল ফোর্সও নিজেদের সোর্স তৈরি করে? ওরা এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করে। ওই ইন্টেলিজেন্সের কেউ কেউ মোতায়েন পাগল সেজেও থাকে। আমার তো মনে হয় রাতের অন্ধকারে সিআরপিএফের গাড়ি নামিয়ে দিয়ে গেছে ওকে।

    - আমার কিন্তু মনে হচ্ছে এই পাগলটা এখানে আসার আগে ওকে দহিজুড়ি বাজারে দেখা যেত। আমি নিজে দেখেছি। বেশিদিন আগের কথা নয়। এক নেতার বাড়ি আক্রমণের পরিকল্পনা হয়েছিল আমাদের। আমরা তিনজন রেকি করতে গেছিলাম। তখনই ওকে একটা খাবার দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখেছি।

    - কী দেখেছিস? এই পাগলটাই সেই পাগল তুই গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবি? সব পাগলের দাড়ি গোঁফ এক রকম। আর সব পাগলই খাবার দোকানের সামনে দাঁড়ায়। তা থেকে কী প্রমাণিত হয়? বিরজু চুপ করে যায়।

    - শোন বিরজু। যদি ধরেই নি ওটা পাগল তাও কিছু করার নেই। আমরা ক্রিকেট খেলতে আসিনি যে বেনিফিট অব ডাউট গ্রাউন্ডে কাউকে ছেড়ে দিতে হবে। সন্দেহ নিরসনের কোন জায়গা আমাদের নেই। টিকে থাকতে হলে আমাদের সন্দেহ মিটিয়ে দিতে হবে। আর এটা নতুন কোনো বিষয় নয়। এর আগেও...

    এর আগেও এমন হয়েছে বিরজু জানে। ওরা প্রথম পাগলটাকে গুলি করে মেরেছিল ওদোলচুয়ার হাটে। পরেরটা মরেছিল ওড়গোদায়, গিধনি বাজারে মারা হয়েছিল একটা ভবঘুরেকে। তবুও মরীয়া হয়ে বিরজু বলেছিল, কিন্তু ও আছে বেলপাহাড়ী টাউনে আর আমরা আছি এই চাতনডুংরির পাহাড় জঙ্গলে। আমাদের চাল চলনের ওপর ও কী করে নজর রাখবে?

    - বোকার মত কথা বলিস না। আমাদের চাল ডাল টাকা পয়সা জঙ্গলে আসে কী করে? কার হাত দিয়ে কলকাতার কমরেডরা আমাদের কাছে টাকা পৌঁছায়? সেই লোকগুলো তো ওই বেলপাহাড়ী, শিলদা,দহিজুড়ি, ঝাড়গ্রামে বসবাস করে। যৌথ বাহিনী শুরুতেই এই লিঙ্কটা কাটতে চাইবে। ধরে ধরে জেলে পুরবে লিঙ্কম্যানদের।

    (দুই)

    বিরজু এখন আর তর্ক করে না। তর্ক করে লাভ নেই। সিদ্ধান্ত মানেই সিদ্ধান্ত। পাগলটাকে মারতেই হবে। তবুও তো তার ভাগ্য ভালো একটা পাগলকে মারবে সে। চাঁদুর ভাগ্য তার চাইতেও খারাপ ছিল। তাকে মারতে হয়েছিল ক্লাস টেনে পড়া ফুলকুমার মান্ডিকে। যখন মাওবাদীদের ভয়ে গ্রামের পর গ্রাম ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত তখন সে ব্যাটা সাইকেল চালিয়ে একা একা জঙ্গল পথে স্কুলে আসত। কমান্ডার বলেছিল। ও ব্যাটা নির্ঘাৎ পুলিশের চর। স্কুলে আসার নাম করে বেলপাহাড়ী আসে আমাদের গতিবিধির খবর দিতে। শালার কী ভয় ডর নাই? একজন সাহস দেখালেই অন্যরা সাহস পাবে। মাধ্যমিক সামনেই ছিল কিন্তু তার আগেই চাঁদু তাকে শুইয়ে দিল জঙ্গল ঘেরা পিচ ঢালা রাস্তায়। তারপর চাঁদু তিনদিন ঘুমায়নি। এক রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে বিরজু দেখল, চাঁদু চাটাইয়ে উঠে বসে রয়েছে। সে ফিসফিস করে বলেছিল, কী হয়েছে চাঁদু? চাঁদু উদভ্রান্তের মত তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমি রাস্তার মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে ছিলাম। ছেলেটা আমাকে দেখে সাইকেল থামিয়ে নামল। তারপর জিজ্ঞেস করল, বাবা! চাঁদু কাকা কত্তদিন পরে দেখলাম গো। গাঁয়ে যাবে বুঝি। লও লও সাইকেলটো তুমহি চালাও। আমি তুমাকে বইতে পারব লাই।

    তরল জোৎস্নায় ইটের কাঠামোটা দেখতে পেল বিরজু। এবার সে বাঁ দিকে মোড় নেবে। এই কাঠামোটা তার খুব চেনা। দিনের বেলাতেও সে এটা দেখেছে। এই কিছু দিন আগে অবধি এখানটা রাজ করে গেছে তারা। প্রায় এক কাটা জায়গা জুড়ে ধাপে ধাপে নেমে প্রকান্ড সব ইটের চৌবাচ্চা। ওপরে নীল গোলা জল নেমে আসত খোঁদলগুলোর ভিতর দিয়ে। একবারে ওপরের ধাপে জমাট বাঁধত নীল।নরম অবস্থায় চাকে চাকে কেটে রোদে শুকিয়ে তৈরি হত নীলের বড়ি। না, এসব সে দেখেনি, দেখার কথাও নয়। সে খালি দেখেছে খোপ খোপ চৌবাচ্চা, শ্যাওলা জমা ইটের গায়ে গজিয়ে ওঠা ভুতরাজ, ভুঁই চাঁড়ালের ঝোপ। তাদের স্কোয়াড লিডার যাকে বলে ফার্ন। সে দেখেছে রাস্তার ওপারে লাল রঙের বিডিও অফিস। যার ভেতরে আগুন জ্বালিয়ে রাখার ব্যবস্থা ছিল, ছিল ধোঁয়া বের হয়ে যাওয়ার ইটের চিমনি। ওটা নাকি নীল সাহেবের কুঠি ছিল। বিরজু এসব শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে। তার বাবা শুনেছে ঠাকুর্দার কাছ থেকে আর ঠাকুর্দা নাকি শুনেছে তার বাবার কাছ থেকে। তারা কেউই নিজের চোখে দেখেছে কিনা তা নিয়ে বিরজুর বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নেই। এখান থেকে দশ বারো কিলোমিটার দূরে তার গ্রাম। এ সব নিয়ে তার মাথা ব্যাথা থাকবে কেন? মাথা ব্যাথা শুরু হল আজ থেকে বছর খানেক আগে যখন তারা বেলপাহাড়ির দখল নিল। যখন দিনের বেলাতেও সুউচ্চ প্রাচীরে ঘেরা বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ নিজেদের তালা বন্ধ করে রাখতে শুরু করল। গদা মার্কা থ্রি ফিফটিন ইম্প্রোভাইজ রাইফেলটা নিয়ে সে পাহারায় থাকত এদিকটাতে। বসে থাকত এই কাঠামোটার ওপর। শিলদা অপারেশনের পর জয়েন্ট ফোর্স ঢুকল এখানে। আর তাদের সরে যেতে হল চাতনডুংরির জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ে।

    ইন্দিরা চক টপকে ওপাশে গেল বিরজু। শুনশান ছোট্ট জনপদ। টিম টিম করে জ্বলছে রাস্তার আলো। ব্লক অফিস আর থানার চত্বর অবশ্য ঝলমল করছে নিওন আলোয়। ও পাশে রাস্তার ধারে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া কিছু লরি,টেম্পো। মাস খানেক আগে ওদের ডাকা বনধে রাস্তায় নামার মাশুল দিয়েছে ওই অকেজো গাড়িগুলো। হাতের রাইফেলটা ডান দিক শরীর বরাবর লম্ব করে মিশিয়ে নিয়েছে বিরজু। বিরজু প্রসাদ মুর্মু। কানাইসর পাহাড়ের তলায় ডাকাই গ্রামের বিরজু প্রসাদ। বাপ কালীপদ মুর্মু নিরুদ্দেশ বহুকাল। দুই দিদি আর তাকে মানুষ করছিল তার মা টগরমণি। সতেরো বছর বয়সে বিরজু ভিড়ে গেল এই বনপার্টির দলে। খাওয়া পরা আর মাস গেলে হাজার টাকা বাড়িতে পৌঁছে যাবে। এখন অবশ্য মাসে মাসে পৌছায় আড়াই হাজার। সে শুনেছে দুই দিদি গুরুবারি আর সন্ধ্যামণির বিয়ের তোড়জোড় চলছে। বাবাকে দেখতে কেমন ছিল মনে পড়ে না বিরজু প্রসাদের। না কি আবছা কোনো স্মৃতি আছে মনে? দেওয়াল ঘেসে প্রতীক্ষালয়ে উঠে আসে সে। অপারেশনের সময় কোনো হুড়োহুড়ি নয়, হুড়োহুড়ি অপারেশনের পর। এখান থেকে বেরিয়ে দেড় কিলোমিটার গেলে সে অপেক্ষমান স্কোয়াড সদস্যের দেখা পাবে। সেই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ডেরায় অথবা বিপদ দেখলে সে নির্দেশ পাঠাবে ব্যাক আপ চেয়ে। অবশ্য একটা পাগলকে মারায় কী এমন বিপদ হতে পারে! আর যদি পাগল না হয়? বিরজু হিসাব করে, বেলপাহাড়ি থেকে ঝাড়গ্রাম, পড়িহাটি থেকে গিধনি সতেরোটা পাগল মরেছে। সত্যি কথা বলতে কী এ তল্লাটে এখন পাগলই মেলে না। এবার আঠারো নম্বর।

    (তিন)

    না। দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। পাগলটা প্রতীক্ষালয়েই ঘুমিয়ে আছে। পাগল ঘুমাচ্ছে! অদ্ভুত একটা দৃশ্য। তার বুক উঠছে নামছে। নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে পাগলটা। নলটা সে কোথায় ঠেকাবে? বুকে, কপালে নাকি মুখে ঢুকিয়ে দেবে। একটা গুলি, স্রেফ একটা। গুলিই সবচেয়ে মহার্ঘ্য। বন্দুক তৈরি করা যায় কিন্তু গুলি তৈরি হয় একমাত্র সরকারি ফ্যাক্টরিতে। গুলি জোগাড় করাই হ্যাপার সুতরাং একটাও বাজে খরচ নয়। রাইফেল তুলে আনে বিরজু, নলটা তাক করে ঘুমন্ত শরীর বরাবর। ঘুমের ঘোরে দাড়ি চুলকায় পাগলটা। কোথাও একটা ঝিঁঝিঁ পোকা ডেকে যাচ্ছিল একটানা, হঠাৎই মনে হল ঝিঁঝিঁ পোকা নয় একটা কিশোর যেন দূর থেকে ডাকছে তাকে। বিরজু ফিরে যায় তার শৈশবে। সেই যে এক কিশোর ছুটতে ছুটতে এসেছিল তাকে ডাকতে। হাঁফাতে হাঁফাতে কিশোর বলেছিল, বিঁজায় অবাক কাণ্ড ঘটছে রে বিরজু! তোর বাবা ফিরে এসেছে। লম্বা হয়ে শুয়ে আছে ডাকাই সিনির থানে। ছুটে চ।

    বিরজু গাদি খেলছিল। সে দৌড়ায় মা ডাকাইসিনির থানের দিকে। ডাকাইসিনি থানের মুখেই জট পাকানো মস্ত গাছটার তলায় শুয়ে আছে একটা মানুষ। দাড়ি গোঁফ ভর্তি মুখ। মা বসে আছে পাশে। তাকে দেখে মা বলছে, গড় কর বিরজু, তোর বাপ বটে। মা ডাকাই সিনি ফিরায় আনছে। আমি যে ছলন মানছিলাম মায়ের কাছে। বিরজু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মানুষটার দিকে। খুব ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায় বিরজুর। তাকে কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে একটা মানুষ। পথ ঘাট খাল বিল পেরিয়ে হাঁটছে। লোকটা ছড়া কাটছে, “ দিনমানে খর সূয্যি/রাইতে মিঠা চাঁদ/ আমার কাঁধ জুড়ে থাকে/ বিরজি প্রসাদ/”

    অবশ্য শেষ অবধি তার মায়ের মানত পুরা হয়নি। কথা রাখেনি মা ডাকাইসিনি। পরের দিনই ফের হাপিস হয়ে গেল তার বাপ। তার বাপ কী পাগল হয়ে গেছিল? একটা কুকুর যেন কঁকিয়ে উঠল কোথাও, ক্যাঁ ক্যাঁ করে উঠলো রাত চরা পাখির দল। বিরজু সে সব কিচ্ছু শুনতে পায় না। সে তাকিয়ে থাকে পাগলটার দিকে, তাকিয়েই থাকে। মনে মনে ছড়া কাটে, ‘দিন মানে খর সূয্যি…রাইতে মিঠা…রাইফেলটা ঠায় ধরা থাকে তার হাতে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ০৪ অক্টোবর ২০২৫ | ৩৩ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    জুবিন  - Rajat Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন