।। ১ : চলো চলি ।।
কনাইফফ দ্বীপের (A) সাত সেতুর (a, b, c, d, e, f, g) অবস্থান। এলা ও অয়লা ব্যবহৃত নক্সা।
দু’পাড়ের দুই মূল ভূখণ্ড আর এই দুই দ্বীপের মধ্যে যাতায়াতের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে সাতটা সেতু। এই সাত সেতু দিয়ে, প্রতি রবিবার, কনাইপোফ দ্বীপের ক্যাথিড্রলে প্রার্থনা করতে জমায়েত হন শহরবাসীরা। সকালের প্রার্থনা সেরে, বাড়ি ফেরার পথে, কিম্বা বিকেলে ভ্রমণের সময়ে, মজার এক খেলায় মেতে উঠেন সমবেত জনতা। খেলা মানে অবশ্য প্রচলিত কোনো খেলা নয়। খেলা মানে- হাঁটা। হাঁটার খেলা। হাঁটা মানে আবার যেরকম সেরকম হাঁটা নয়। নির্দিষ্ট শর্ত মেনে হাঁটা। প্রত্যেকটা সেতুকে একবার মাত্র ব্যবহার করে সাতটা সেতুকেই পার হতে হবে- এটাই হল হাঁটার শর্ত। মনে রাখতে হবে, কোনো সেতুকেই কিন্তু দু’বার ব্যবহার করা যাবে না। আবার, এই সাত সেতুর প্রত্যেকটাকে একবার করে ব্যবহার করতেই হবে। কোনোটা যেন বাদ না পড়ে যায়। সকাল কিম্বা বিকেল, সময় পেলেই কনাইপোফের আশেপাশের অধিবাসীরা মেতে উঠতেন এই মজার হাঁটায়। ছোটো ছোটো ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে বুড়ো বুড়ি পর্যন্ত সকলই সেই সাত সেতু পার হওয়ার অভিযানে সানন্দে সামিল হতেন। কিন্তু শর্ত মেনে কেউই আর সেই সাত সেতু পার হতে পারতেন না। কোনো না কোনো সেতু বাদ পড়ে যেত ঠিকই। নয়তো কোনো একটা সেতু দু’বার ব্যবহার করে ফেলতেন। উৎসাহী শহরবাসীদের কেউ কেউ আবার খাতা কলম নিয়ে দ্বীপ আর সেতুর অবস্থানের নক্সা এঁকে ফেলতেন। সেই নক্সার উপর হাত বুলিয়ে সমাধানের চেষ্টায় মগ্ন হয়ে থাকতেন। ঘন্টার পর ঘন্টা ভেবেও কোনো উপায় কিন্তু বার করতে পারলেন না তাঁরা। আর এটা কোনো এক দিনের ঘটনা নয়, বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ ধরে কনাইপোফের সাত সেতু ভাবিয়ে গেছে স্থানীয় মানুষজনকে।
।। ২ : সেতুর সুরতহাল ।।
।। ৩ : নক্সার নবপাঠ ।।
কনাইফফ দ্বীপের সাত সেতু থেকে উৎপন্ন গ্রাফ থিয়রির নক্সা। ১৯৩৬ সালের নিবন্ধে এই ছবিটাই এঁকেছিলেন অয়লা।
‘Solution of a …’ নিবন্ধে খুনিব্যাক ব্রিজ নিয়ে অয়লার ছক ও সিদ্ধান্ত।
কখন এই জাতীয় সমস্যা সমাধান করা সম্ভব ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোকপাত করলেন। তাঁর প্রতিপাদ্যে, প্রথমেই তিনি মোট সেতু সংখ্যার (৭) সাথে ১ যোগ করে ৮ সংখ্যাটা নির্ণয় করে রাখলেন। এবার প্রত্যেকটা দ্বীপের সাথে যুক্ত সেতু সংখ্যা লিপিবদ্ধ করলেন। কনাইপোফ দ্বীপের সাথে যুক্ত সেতুর সংখ্যা হল ৫। এই পাঁচ সেতুকে একবার মাত্র ব্যবহার করে, ঠিক ৩ বার কনাইপোফে ঢোকা (অথবা বেরনো) সম্ভব। পাঠকরা একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, সরাসরি কনাইপোফের সাথে যুক্ত ৫ সেতুকে (বাকি দুই সেতুকে ব্যবহার করা যাবে না) একবার মাত্র ব্যবহার করে কতবার কনাইপোফে ঢোকা যায়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, দ্বীপে ঢোকা বা বেরনো জন্য ৫ সেতুকে ব্যবহার করে গেলেও, শুধুমাত্র দ্বীপে ঢোকার সংখ্যাটাই গণনা করতে হবে, বেরনোর সংখ্যা নয়। আবার বেরনোর জন্য, একই ভাবে ৫ সেতু ব্যবহার করে দ্বীপে ঢোকা বা বেরনো গেলেও শুধুমাত্র দ্বীপ থেকে বেরনোর সংখ্যাটাই গণনা করতে হবে, দ্বীপে ঢোকার সংখ্যা বিবেচনা করা যাবে না। অয়লা ব্যাখ্যা করে চললেন, ফোসস্টাট, আলস্টাট ও লোমসা- এই তিন অঞ্চলের প্রত্যেকটা অঞ্চলের সাথে যুক্ত সেতুর সংখ্যা হল ৩। সুতরাং ফোসস্টাট, আলস্টাট ও লোমসার তিন সেতু একবার মাত্র ব্যবহার করে ঠিক ২ বার ওই অঞ্চলে ঢোকা (অথবা বেরনো) সম্ভব। তাঁর এই পর্যবেক্ষণকে এবার একটা ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করলেন তিনি। ছকের প্রথম স্তম্ভে চারটে স্থানের নাম- A, B, C, D লিখলেন। দ্বিতীয় স্তম্ভে লিখলেন ওই সমস্ত স্থানের সাথে যুক্ত সেতুর সংখ্যা- ৫, ৩, ৩, ৩ এবং তৃতীয় স্তম্ভে লিখলেন হাঁটা সংখ্যা- ৩, ২, ২, ২। ছক অনুসারে মোট হাঁটা সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ৯। যেহেতু মোট হাঁটা সংখ্যা (৯), ইতিপূর্বে ধার্য করা সংখ্যা ৮-এর থেকে বেশি হয়ে যাচ্ছে, তাই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। তিনি সিদ্ধান্ত টানেন ” … hence the required journey cannot be made.”।।। ৪ : সংঘর্ষ ও সৌন্দর্য ।।
হানি ব্রিজ। ফ্রিগে নদীর ওপাড়ে কনাইপোফ (কান্ট) দ্বীপের ক্যাথিড্রল আর হানি ব্রিজের রেলিঙে ঝোলানো লাভলক।