ছবি: ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক
সত্যবাবু মারা গেছেন। এই শিরোনামে একটা বই লিখেছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ।
যুদ্ধে প্রথম নিহত হয় সত্য। আর আজকের দুনিয়ায় মানুষকে যখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক সংকীর্ণমনা আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর বিদ্বেষ পরায়ণ হিংসুটে ক্ষণক্রোধী দলকানা বা দল দাস কিংবা গ্রুপবাজ বলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, তখন ৩৫০ জন মানব মানবী অসমসাহসী মন নিয়ে মাসাধিক কাল ভেসে রয়েছেন সমুদ্রে। লক্ষ্য একটাই, অনাহারে মরতে থাকা প্যালেস্টাইন বা গাজার মানুষের পাশে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।
তাঁদের অধিকাংশকেই আটক করেছে ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী। কিন্তু এই ত্রাণ অভিযাত্রী দলের অন্যতম নেতা গ্রেটা থুনবার্গ বুঝিয়ে দিয়েছেন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যায়। সত্যকে আটকানো যায় না।
মাসখানেক আগে গ্রেটা থুনবার্গ এসেছিলেন। তাঁকে সেবারও ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাতেও থামেননি। আবার যাত্রা শুরু করেন। এবার ৩৫০ জন। সঙ্গে ৪৪ টি জাহাজ।
তবে এর মধ্যে কিছু ঘটনা ঘটেছে, যা পৃথিবীর বিক্রি হয়ে যাওয়া অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম দেখায়নি। ইজরায়েলের সন্ত্রাসী খলনায়ক যিনি গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছেন, আদালতের মুখোমুখি এড়াতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, রাষ্ট্র সঙ্ঘে ভাষণ দিতে যাওয়ার সময় আক্ষরিক অর্থে মার খেয়েছেন। তার বক্তব্য শুরুর আগেই হল ছেড়ে বের হয়ে গেছেন অধিকাংশ প্রতিনিধি। ইংল্যান্ড ফ্রান্সের মতো দেশ প্যালেস্টাইনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে রাজি হয়েছে। এতদিন হয়নি কেন, সেটাই প্রশ্ন। ১৪৪ টার বেশি দেশের সমর্থন প্যালেস্টাইনের পক্ষে।
আজ আমরা কথা বলবো ফ্লোটিলা সামুদ অভিযান নিয়ে।
'দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট' অনুসারে আমাদের পর্যবেক্ষণ জানানো দরকার পাঠকদের।
কারণ অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যম বোবা কালা কুম্ভকর্ণ। বিবেকহীন।
সাত লাখের মতো মানুষ মারা গেছেন। প্রায় সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস। হাসপাতালগুলো প্রায় সব ধ্বংস। ৩৫ হাজারের বেশি শিশু নিহত।
জীবিতদের অন্নাভাবে হাড় জিরজিরে চেহারা।
অন্য দিকে মানুষ থেমে নেই। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা ইসরাইলের নৌ-অবরোধ ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক
টম ওয়াটলিং, নিকোল উটন-কেন।
বৃহস্পতিবার ০২ অক্টোবর বেলা সাড়ে দশটা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুসারে,
ইসরাইল বলেছে 'গ্রেটা থুনবার্গ নিরাপদ', গাজা ফ্লোটিলার যাত্রীদের 'একটি ইসরাইলি বন্দরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে'।
জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ-কে নিয়ে গাজায় সাহায্য মিশনে থাকা ফ্লোটিলাকে বুধবার রাতে ইসরাইলি বাহিনী আটক করেছে বলে ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা (জিএসএফ)-এর 'ফ্যামিলি বোট', যেটিতে গ্রেটা এবং আরও প্রায় ৩৫০ জন কর্মী ছিলেন, গাজা উপত্যকার উপকূল থেকে ইসরাইলি সৈন্যদের দ্বারা আটক করা হচ্ছে।
ফ্লোটিলার অন্তত ১৩টি নৌকা অবরুদ্ধ এলাকায় তাদের যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই সাহায্য মিশনে অংশগ্রহণকারী সকলকে নির্বাসন দেওয়ার অপচেষ্টা করছে ইজরায়েল।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা প্রকাশিত একটি ভিডিওতে একটি জাহাজের উপর ইজরাইলি নৌসেনার সৈন্যদের দেখা গেছে।
ইসরাইলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণায় এক্স (টুইটার)-এ বলেছে, "সুমুদ ফ্লোটিলার বেশ কয়েকটি জাহাজ নিরাপদে থামানো হয়েছে এবং তাদের যাত্রীদের একটি ইসরাইলি বন্দরে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে। গ্রেটা এবং তার বন্ধুরা নিরাপদ ও সুস্থ।"
জিএসএফ গঠন করেছে ৪৪টি দেশের ৪৪টিরও বেশি জাহাজ, যারা তাদের উদ্দেশ্যকে "শান্তিপূর্ণ মিশন" বলে বর্ণনা করে গাজা উপত্যকার উপর ইজরায়েলের নৌ-অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে রওনা হয়েছিল। মিস থুনবার্গ-এর সঙ্গে জাহাজে আছেন বহু জলবায়ু কর্মী ও সাহায্যকর্মী, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক ইউসুফ ওমর এবং মানবাধিকার কর্মী ইয়াসেমিন অ্যাকার।
এছাড়াও 'ফ্যামিলিয়া মাদেইরা' বা 'ফ্যামিলি বোট'-এ ছিলেন মিস থুনবার্গ এবং ব্রাজিলিয়ান কর্মী থিয়াগো আভিলা। ইজরায়েলের হানাদার বাহিনী এটা আটক করেছে। ফ্লোটিলা সামুদ একটা ট্রাকার রেখেছে আন্তর্জালে।
ট্র্যাকার অনুযায়ী, ২ অক্টোবর জিএমটি সময় সকাল ৯:৩৬-এর মধ্যে মোট ২১টি নৌকা আটক করা হয়েছে। তবে, ১৩টি গাজার দিকে যাত্রা চালিয়ে যাচ্ছে।
জিএসএফ টেলিগ্রামে বেশ কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করেছে যেখানে বিভিন্ন ব্যক্তি তাদের পাসপোর্ট আকাশে তুলে ধরে বার্তা দিচ্ছেন, তাঁদের জোরপূর্বক অপহরণ করে ইসরাইলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁদের সাফ দাবি: আমাদের মিশন একটি অহিংস মানবিক উদ্যোগ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মিস থুনবার্গ ২০১৮ সালে খ্যাতি অর্জন করেন যখন ১৫ বছর বয়সে তিনি সুইডিশ সংসদকে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রাজি করানোর জন্য স্কুল ধর্মঘট ডাকেন।
থুনবার্গের জাহাজ একটি তিউনিসিয়ান বন্দর থেকে ছাড়ার আগে গত মাসে মিস থুনবার্গ বলেছিলেন, "আমরা সবাই জানি আমরা এখানে কেন আছি। ঠিক জলের ওপারে একটি গণহত্যা চলছে, ইসরাইলের হত্যাযন্ত্র দ্বারা চলছে গণঅনাহার -- গণহত্যা।"
ফ্লোটিলা সামুদের জাহাজের অন্যান্য সমাজকর্মীরা হলেন: মিস অ্যাকার (জার্মানি), ক্লেওনিকি অ্যালেক্সোপুলু (গ্রিস), মি. আভিলা (ব্রাজিল), মেলানি শোয়াইজার (জার্মানি), ক্যারেন ময়নিহান (আয়ারল্যান্ড), মারিয়া এলেনা ডেলিয়া (ইতালি), সাইফ আবুকেশেক (ফিলিস্তিন ও স্পেন), মুহাম্মদ নাদির আল-নুরি (মালয়েশিয়া), মারওয়ান বেন গুয়েতাইয়া (আলজেরিয়া), ওয়ায়েল নাওয়ার (তিউনিসিয়া), হাইফা মানসুরি (তিউনিসিয়া), এবং তোরকিয়া চাইবি (তিউনিসিয়া)।
'দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট' জানিয়েছে:
জিএসএফ দাবি করে যে তারা "গাজায় ইসরাইলের অবৈধ অবরোধ ভাঙ্গার জন্য সংগঠিত বৃহত্তম বেসামরিক সামুদ্রিক মিশন"। তাঁরা প্রথমে ৩১ আগস্ট ২০২৫ বার্সেলোনা থেকে খাদ্য, জল ও ওষুধ নিয়ে যাত্রা শুরু করে, কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ফিরে যেতে বাধ্য হয়।
২ সেপ্টেম্বর তাদের যাত্রা পুনরায় শুরু হয়, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। গত মাসে ফ্লোটিলাটি তিউনিসিয়ায় পৌঁছায়, যেখানে শত শত সমর্থক তাঁদের অভ্যর্থনা জানায়।
জাহাজটি বার্সেলোনায় নোঙর করলে থুনবার্গ জাহাজে ওঠার জন্য প্রস্তুত হন।
তিউনিসিয়া ছাড়ার এক সপ্তাহ পরে, জিএসএফ বলেছিল যে তিউনিসিয়ান জলসীমায় একটি ড্রোন তাদের একটি নৌকায় হামলা চালায়। তবে, তিউনিসিয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছে যে জাহাজের আগুন সিগারেটের কারণেও হতে পারে।
ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির চেষ্টা করছেন, সব জাহাজগুলোর দখল নিয়ে ওষুধ খাবার ও জল ডুবিয়ে দেওয়ার।
এর আগে জুন মাসে চেষ্টা হয় গাজায় যাওয়ার। কিন্তু ইজরায়েল তা থামায়।
গাজায় পৌঁছানোর পূর্ববর্তী সাহায্য জাহাজকে ইসরাইল কীভাবে থামিয়েছিল?
ইজরায়েল গাজায় যাওয়ার পূর্ববর্তী ফ্লোটিলাগুলোর প্রতি সদয় ব্যবহার করেনি। জুন মাসে, বেশ কয়েকজন কর্মী (মিস থুনবার্গ-সহ) বহনকারী একটি নৌকা গাজার উপকূল থেকে প্রায় ১৮৫ কিমি দূরে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দ্বারা দখল করা হয় এবং ইজরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়, এর অনেক যাত্রীকে আটক রাখা হয় এবং শেষ পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়।
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি)-এর এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা মিস থুনবার্গ-এর একটি পূর্ব-রেকর্ডকৃত ভিডিওতে অভিযোগ করা হয়েছিল, সহায়তাকর্মীদের "বাধাপ্রদান ও অপহরণ" করা হয়েছে। তিনি তাঁর সমর্থকদের কাছে আবেদন করেছিলেন "আমাকে এবং অন্যদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্তি দিতে সুইডিশ সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ" করার জন্য।
এবারও হয়তো পুরোপুরি সফল হবেন না।
কিন্তু থামবেন না গ্রেটা থুনবার্গ ও তাঁর সহযোদ্ধারা।
তবে বেদনার কথা মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ধ্বজাধারী সৌদি আরবের একজন প্রতিনিধিও নেই।
একটা পয়সাও দেননি।
গ্রেটা থুনবার্গ রা গেছেন মানবতার জন্য। মনুষ্যত্বের জন্য। ধর্মের অপধর্ম বন্ধ করার জন্য।
কিন্তু তাতে ভারতের একজনও নেই।
পরের অভিযানে আমরা কি পারি না কোনও ভাবে অংশ নিতে?
পুনশ্চ:
অর্ক ভাদুড়ির লেখা থেকে জানা গেল,
গাজা এবং ফ্লোটিলার সমর্থনে বুধবার রাত ইউরোপের শ্রমিক এবং ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমেছেন। ইতালি সৃষ্টি করছে নতুন ইতিহাস রোম, মিলান, নেপলস, জেনোয়াসহ সব জায়গায় চলছে মিছিল অবরোধ। ইতালিতে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি।
'গতকাল রাত থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল প্যারিস, আথেন্স, বার্লিন, আমস্টার্ডাম, ইস্তানবুল, ডাবলিন, ব্রাসেলস। লন্ডনেও গতকাল রাতে বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে৷ আজ বিকেলে পার্লামেন্ট স্কোয়্যারে বড় জমায়েত।
এর পাশাপাশি গতকাল গোটা গ্রিস স্তব্ধ ছিল ধর্মঘটে। গ্রিসের ডানপন্থী সরকার ৮ ঘণ্টার শ্রমদিবসকে বাড়িয়ে ১৩ ঘণ্টা করার চেষ্টা করছে। সপ্তাহে দুদিন ছুটির নিয়ম পাল্টে একদিন ছুটি চালু করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে গতকালের ধর্মঘটে সরকারি ক্ষেত্রের ট্রেড ইউনিয়নগুলির পাশাপাশি অংশ নিয়েছে বেসরকারি ক্ষেত্রের ইউনিয়নগুলিও। সর্বাত্মক সফল ধর্মঘটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন গ্রিক কমিউনিস্টরা৷ বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি রাস্তায় নেমে ধর্মঘটীদের সমর্থন করেছেন।' এর পাশাপাশি
নিউইয়র্কে হানাদার নেতানিয়াহু এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে তাঁর বক্তৃতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশে গণহত্যা বিরোধী ইহুদিরা যোগ দিয়েছেন। প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁরাও তীব্রভাবে। সে ছবি ও ভিডিও সমাজ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে।
ভারত পশ্চিমবঙ্গ কেবল রাজ্য রাজনীতিতেই ডুবিয়ে রাখবেন সব চিন্তা?
নাকি সবকিছুই ইভেন্ট।
প্রয়োজন হলে তবে ইভেন্টে সামিল?
আরও একটু:
৪৪ দেশ। ৩৫০ জন মানব মানবী। মরতে পারেন জেনেও গেছেন। সবচাইতে বেশি তুর্কি থেকে ৫৬ জন , স্পেন থেকে ৪৯ এবং ইটালি থেকে ৪৮ জন।
ভারত থেকে কেউ নেই।
ভারত সরকারের বন্ধু সৌদি আরব থেকেও কেউ নেই।
আমরাও যদি যেতে পারতাম, মারের সাগর পাড়ি দিয়ে...