এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • আজকের ব্রাহ্মণ্যধর্মের চৌপদী - পর্ব ছয়

    রঞ্জন রায়
    আলোচনা | সমাজ | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২০২ বার পঠিত
  • মনুস্মৃতি, মায়াবাদ, ভগবদ্গীতায় যুদ্ধের নৈতিকতা ও হিন্দুত্বের তত্ত্ব



    দণ্ডবিধি ও পদ্ধতি নিয়ে দু’চারটে কথাঃ
    স্কুলে আমার বাংলার মাস্টারমশায় ক্লাসে একটা লিকলিকে বেত এনে দোলাতে দোলাতে শোনাতেনঃ
    ‘বেত্রবিদ্যা বেত্রপাঠ বেত্র চমৎকার,
    ইহার দেখিবে সবে মহিমা অপার’।

    সে মহিমা আমরা যথাসময়ে টের পেতাম।

    দেখা যাচ্ছে মহর্ষি মনু ও আমার সেই মাস্টারমশায় একই গোত্রের। ইনিও দন্ডের মহিমায় বিশ্বাসী। রাজার শাসনের মূল নীতি হিসেবে ওই চারটে মানে সাম-দান-দন্ড-ভেদের কথা বললেও তাঁর বিশেষ ভরসা ছিল ডান্ডা চালানোয়।

    সপ্তম অধ্যায়ের গোড়াতেই আছে রাজশাসনে দন্ডের মহিমা।

    দন্ড সকল লোককে শাসন করে, দন্ডই রক্ষা করে। লোক নিদ্রিত থাকলে দন্ড জাগ্রত থাকে; পন্ডিতগণ দন্ডকে ধর্ম বলেছেন(৭/১৮)।
    বিবেচনাপূর্বক প্রযুক্ত দন্ড সকল প্রজার মনোরঞ্জন করে। কিন্তু অবিবেচনাপূর্বক প্রযুক্ত হলে সব দিক নষ্ট করে(৭/১৯)।
    বিষয়াভিলাষী, ক্রোধপরায়ণ, ছলান্বেষী রাজা দন্ড দ্বারাই নিহত হন(৭/২৭)।
    পৃথিবীতে সকল লোক দন্ডের বশীভূত।শুচি লোক সত্যি দুর্লভ। দন্ডের ভয়েই লোকে সমগ্র জগৎ ভোগ করতে সমর্থ হয়(৭/২২)।

    রাজাদের জন্যে আরও বলা আছেঃ
    রাজা বকের ন্যায় বিষয়সমূহের চিন্তা করবেন, সিংহের ন্যায় পরাক্রম করবেন, নেকড়ে বাঘের মত অপহরণ করবেন এবং বিপরীত পরিস্থিতিতে খরগোসের মত পালিয়ে যাবেন (৭/১০৬)।
    ক্ষাত্রধর্ম বোঝাতে গিয়ে মনু বলছেনঃ রাজা কখনও নিদ্রিত, বর্মহীন, উলঙ্গ, নিরস্ত্র, যে শুধু দর্শক যুদ্ধ করছে না এবং অপরের সঙ্গে যুদ্ধরত ব্যক্তিকে হত্যা করবেন না (৭/৯২)।

    এই জায়গাটায় থমকে দাঁড়াতে হল। নিরস্ত্র বা অপরের সঙ্গে যুদ্ধরত? নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইন্দ্রজিৎ নিরস্ত্র ছিলেন, কিন্তু লক্ষণ তাঁকে ওই অবস্থায় হত্যা করলেন। বালী ও সুগ্রীব দু’ভাই মল্লযুদ্ধ করছিলেন। রাম গাছের আড়াল থেকে বালীকে তিরে বিঁধে বধ করলেন।

    এঁরা কি ক্ষাত্রধর্ম জানতেন না? নাকি মনুস্মৃতি ভুল? মৃত্যুর আগে ইন্দ্রজিৎ এবং বালী এঁদের বিরুদ্ধে ক্ষাত্রধর্মের বিপরীত আচরণের অভিযোগই এনেছিলেন।

    এবার আমরা মনুস্মৃতির দন্ডনীতির কিছু উদাহরণ তথা মহাপাতক আদি বোঝার চেষ্টা করব।

    নারীদের দন্ডঃ
    মনু বলছেনঃ স্ত্রীলোকের মুখ সর্বদা শুদ্ধ,(৫/১৩০)।
    যাক, এতক্ষণে মেয়েদের সম্বন্ধে একটা ভালো কথা শোনা গেল, নইলে হাঁফ ধরে গেছল!

    মুজতবা আলী সায়েব “দেশে বিদেশে”তে লিখেছেন আফগানিস্থানের কোন বিবাহ সভায় স্বর্গীয় এক গান শোনার স্মৃতিঃ ‘সবি আগর, সবি আগর’—। যদি একবার, শুধু একবার প্রিয়ার মুখচুম্বন করতে পেতাম, তাহলে ‘জোয়ান বলম’, আবার নওজোয়ান হতাম।

    তবে স্ত্রীসম্ভোগ করলে পুরুষকে স্নান করতে হবে।(৫/১৪৪)। কি গেরো!

    কিন্তু বেদবিরোধী পাষন্ডধর্মাবলম্বী, স্বৈরিণী, গর্ভপাতকারিণী , পতিঘাতিনী, মদ্যপায়িনী নারীদের পারলৌকিক ক্রিয়া নিষিদ্ধ, মানে তাদের আত্মার সদগতির জন্যে শ্রাদ্ধশান্তি ইত্যাদি করা যাবে না! (৫/৯০)
    কন্যা উচ্চতর বর্ণের পুরুষকে সম্ভোগার্থে ভজনা করলে দন্ডিত হবেনা, কিন্তু নিম্নবর্ণের লোককে ভজনা করলে তাকে ঘরে আটকে রাখতে হবে। (৮/৩৬৫)।
    কোন পুরুষ যদি স্বজাতির কোন কন্যার যোনিতে দর্পভরে অঙ্গুলি প্রক্ষেপ করে তবে তার দুটো আঙ্গুল কেটে ফেলা হবে এবং ৬০০ পণ দণ্ড দিতে হবে(৮/৩৬৭)।
    কিন্তু মেয়েটি ইচ্ছুক হলে আঙুল কাটা যাবেনা, শুধু ২০০ পণ দন্ড হবে(৮/৩৬৮)।
    কিন্তু কন্যাই যদি অন্য কন্যাকে অঙুলিপ্রক্ষেপে দুষিত করে তবে তার ২০০ পণ দন্ড হবে, ৪০০ পণ বাবাকে দেবে এবং দশ ঘা’ বেত খাবে।(৮/৩৬৯)।
    কোন স্ত্রীলোক যদি কন্যাকে অঙ্গুলি প্রক্ষেপ দ্বারা দুষিত করে তবে তার দুই আঙুল কেটে মাথা মুড়িয়ে গাধায় চড়িয়ে ঘোরান হবে(৮/৩৭০)।
    ব্যভিচারিণী স্ত্রীকে স্বামী একটি ঘরে বন্ধ করে রাখবেন এবং পরদারগমনে পুরুষের যা প্রায়শ্চিত্ত তা তাকে করাবেন(১১/১৭৬)।

    মহাপাতক কাকে বলে?
    ব্রাহ্মণহত্যা, (নিষিদ্ধ) সুরাপান, ব্রাহ্মণের সোনাচুরি, গুরুদারগমন (গুরু হওয়ার অধিকার শুধু ব্রাহ্মণের, অতঃ ব্রাহ্মণীগমন) এবং এই চার পাতকের দোষীর সঙ্গে সম্পর্ক (১১/৫৪)।
    ব্রাহ্মণের বেদ ভুলে যাওয়া, বন্ধুকে হত্যা করা, জাল সাক্ষ্য দেয়া, অখাদ্য খাওয়া এসব মদ খাওয়ার মতই মহাপাতক।(১১/৫৬)
    (অগম্যা-গমন) যেমন সহোদরা ভগিনী, কুমারী, চন্ডালী ও বন্ধুপত্নীতে শুক্রনিক্ষেপ গুরুদারগমন তুল্য।(১১/৫৮)।

    গোহত্যা কি মহাপাতক নয়?
    না ; গোহত্যা উপপাতক বা গৌণপাপ যার এক লম্বা লিস্টি রয়েছে। যেমন, পরদারগমন, বিনা মৈথুন কোন কন্যার যোনিতে অঙ্গুলি প্রক্ষেপ, বৌকে বেশ্যাবৃত্তি করিয়ে জীবিকার্জন, সুদের পয়সায় জীবনযাপন, পড়ানোর জন্যে মাইনে নেয়া ও দেয়া, বাপ-মা-বৌ-ছেলেমেয়েকে ত্যাগ করা, নিষিদ্ধ দ্রব্যের ভক্ষণ, চুরি, ঋণ শোধ না করা, গবাদিপশুর অপহরণ, মদ্যপায়ী স্ত্রী অভিগমন, নারী-শূদ্র-বৈশ্য-ক্ষত্রিয় হত্যা, নাস্তিকতা আদি প্রায় ৬০টি(১১/৬৬, ৬৭)।
    এছাড়া ব্রাহ্মণকে লাঠিপেটা, অখাদ্য ও মদের ঘ্রাণ নেয়া এবং পুরুষের সঙ্গে মৈথুন করলে নিজের জাত যায় (১১/৬৭)।

    বোঝাই যাচ্ছে, ধারা ৩৭৭ যখন ক্রিমিনাল অ্যাক্ট রইল না তখন বিভিন্ন চ্যানেলে অনেক গেরুয়াধারী কেন এর নিন্দে করেছিলেন।

    মহাপাতকের প্রায়শ্চিত্তঃ
    অন্য জাতির কেউ ব্রহ্মহত্যা করলে মৃত্যুদন্ড। কিন্তু ব্রাহ্মণ যদি ব্রহ্মহত্যা করে?

    অজ্ঞাতসারে করলে হয় পর্ণকুটির বানিয়ে হত ব্যক্তির বা অন্য কারও করোটি নিয়ে ভিক্ষা করে ১২ বছর বনবাস করবে।(১১/৭২)। অথবা অশ্বমেধ, বিশ্বজিৎ বা আরও অনেকগুলো যজ্ঞ করবে(১১/৭৪), অথবা এই ধরণের নানা কৃচ্ছসাধন করে পাপমুক্ত হবে। যেমন ১২ বছর ধরে স্ত্রীসম্ভোগাদি রহিত হয়ে হবিষ্যান্ন খেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করে পাপ মুক্ত হবে।(১১/৭৭, ৭৮, ৭৯)।
    জ্ঞাত সারে ব্রহ্মহত্যা করলে ব্রাহ্মণকে এর দ্বিগুণ প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে(১১/৮৯)।

    চোরে ব্রাহ্মণের স্বর্ণ এবং সর্বস্ব হরণ করলে সেই ধন উদ্ধারের জন্য দরকার হলে তিনবার যুদ্ধ করে (অকৃতকার্য হলেও) হৃত ধন বা তার সমপরিমাণ ধন ব্রাহ্মণকে দিয়ে রাজা পাপমুক্ত হবেন।(১১/৮০)।
    সুরা হল অন্নের মল এবং মল পাপস্বরূপ, তাই ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য সুরাপান করবেন না। (১১/৯৩)
    সুরাপান করলে দ্বিজের (উক্ত তিনবর্ণের)অন্যতম প্রায়শ্চিত্ত হল জ্বলন্ত সুরাপান করে নিজদেহ দগ্ধ করে পাপমুক্ত হওয়া বা জ্বলন্ত গোমূত্র, জল দুধ, ঘি ও গোময়জল মৃত্যু পর্যন্ত পান করা(১১/৯১)।

    মনে হয়না ব্রাহ্মণ ভিন্ন এই বিধি নিষেধ কেউ মেনে চলতেন। কোন পুরাণে সুরাপান মহাপাতক বা নিষিদ্ধ বলে চোখে পড়েনি।
    গুরু্দারগমন বা গুরুপত্নী গমন হল মহাপাতক।
    দোষী পাপ ঘোষণা করে উত্তপ্ত লৌহশয্যায় শোবে,জ্বলন্ত লৌহনির্মিত স্ত্রী-প্রতিকৃতি জড়িয়ে ধরে মৃত্যুর মধ্যে শুদ্ধ হবে।(১১/১০৩)।
    অথবা নিজ লিঙ্গ ও অন্ডকোষ ছেদন করে অঞ্জলিতে নিয়ে শরীরপাত না হওয়া পর্যন্ত সোজা নৈঋত দিকে গমন করবে(১১/১০৪)।
    পুরাণকথা অনুযায়ী দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রী তারার(গুরুদারা) সঙ্গে ছাত্র চন্দ্রের প্রণয় জন্মিয়াছিল। দুইজনে ইলোপ করিয়াছিলেন। তারপর কি হইল জানে শ্যামলাল!
    (মাইকেল রচিত বীরাঙ্গনা কাব্যে ‘চন্দ্রের প্রতি তারা’ নামক পত্রকবিতা দ্রষ্টব্য)।

    উপপাতক গোহত্যার প্রায়শ্চিত্ত
    গোহত্যাকারী একমাস যবের মাড় খাবে, মাথা মুড়িয়ে দাড়িগোঁফ কামিয়ে নিহত গাইয়ের চামড়ায় গা ঢেকে গোচারণ ভুমিতে বাস করবে(১১/১০৮)।
    দ্বিতীয় মাসে গোমূত্র দ্বারা স্নান করবে, সংযতেন্দ্রিয় হয়ে একদিন উপোস করে দ্বিতীয় সন্ধ্যায় হবিষ্যান্ন খাবে।(১১/১০৯)।
    এভাবে তৃতীয় মাস পর্যন্ত দিনে গাভীদের পেছন পেছন যাবে, দাঁড়িয়ে তাদের খুরের ধূলির স্বাদ নেবে তাদের সেবা করে ও নমস্কার করে রাত্রে বীরাসনে বসবে।
    এভাবে তিনমাসে গোহত্যাজনিত পাপ দূর করে তিনি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে একটি বৃষ ও দশটি গাভী (দক্ষিণাস্বরূপ) দেবে। গাভী না থাকলে ব্রাহ্মণকে সর্বস্ব দেবে(১১/১১৫, ১১৬)।

    উপসংহার
    আমরা দেখলাম মহর্ষি মনু কোথাও গরুকে মাতা বলেননি। গো-হত্যাকে মহাপাতক বলেননি, গোহত্যাকারীকে মৃত্যুদন্ডের বিধান দেননি।আবার বৃহদারণ্যক উপনিষদে দেখছি ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য গরুকে গোধন বলছেন। সর্বত্র দেখছি গরু সম্পত্তির একক। মহাভারতে বিরাট পর্বে ‘উত্তর গোগৃহ’ রণে গরু লুঠেরাদের থেকে বিরাট রাজার কয়েক হাজার গরুকে বাঁচাতে অর্জুন (বৃহন্নলা) গান্ডীব তুলে নিলেন।

    গরু মাতা হলে কি তাকে বিক্রি করা বা দান দেয়া যায়?

    এই রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ‘হিন্দুত্ব’ ধারণার প্রণেতা সাভারকর কখনই গরুকে মাতা বলতে রাজি হননি। বলেছেন চারপেয়ে পশুটি উপকারী, কিন্তু আমার মা হবে কি করে? তাহলে কোন শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে গরু গোমাতা হচ্ছে বা তার বধের জন্যে মানুষের প্রাণ নেয়া হচ্ছে?

    (চলবে)


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ | ২০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বপন সেনগুপ্ত ( ঝানকু ) | 223.185.***.*** | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:১৪736396
  • অসামান্য !
    শেষ স্তবকটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে।
  • অরিন | 122.15.***.*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৩:৪৯736400
  • মনু তাঁর আমলে যে বিধানই দিয়ে থাকুন আজকের ভারতে তিনি তুলনামূলকভাবে (সেই সময়ের তুলনায়) অপ্রাসঙ্গিক। কাজেই তিনি গরু নিয়ে কি লিখেছেন বা লেখেননি তাকে আজকের দিনের ডিবেটে টেনে আনলে একটা anachronism এর সমস‍্যা হয়। এখন rss ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে মনুর নাম করে বিধান তৈরী করছে, রঞ্জনবাবুর লেখা থেকে এবং গবেষণায় এই ব‍্যাপারটি নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই। 
    এখানে যে বিষয়টি উহ‍্য রয়ে যায়, সেটি এই যে, এক বা একাধিক মনু যদি থেকেও থাকেন, তাঁর বিধান তাঁর সমসাময়িক যুগে হয়ত চলত, কারণ মনুর সঙ্গে parliamentary democracy র কোন সংযোগ ছিল না, চতুর্বণ ব‍্যাপারটি মনু ভুলভাবে interpret করেছিলেন, হয়ত উদ্দেশ‍্যও ছিল। চতুর্বর্ণ ও ত্রিগুণ মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবে corrupt করা হয়ে থাকতে পারে। 
    এখন প্রায় দুহাজার বছর পর মনুকে নতুন করে তুলে এনে চর্চা যে করা যাবে না তা নয়, রঞ্জনবাবুই তো করছেন, কিন্তু তার context তুলে রঞ্জনবাবু যদি বলতে চান যে না না মনু একথা বলেননি, তাহলে তাঁর একটা, কিছুটা perverse interpretation হতে পারে যে, মনু যদি বলতেন, তাহলে মেনে নেওয়া যেত। এখানে মনু বলেছেন কিনা, সেটি ইতিহাসের বিষয় হতে পারে, academic চর্চার বিষয় হতে পারে, আধুনিক ভারতে মনুকে নতুন করে জীবনযাপনের উপলক্ষ রূপে পুনরাবিষ্কার করার প্রয়াসের প্রয়োজন নেই।
    কেন নেই, এটা আমরা intuitively জানলেও জানতে পারি, তথাপি এই লেখার সূত্রে আলোচনা করা যেতে পারত। কারণ অন্তত "গোধন" নিয়ে যে কথা‍্য রঞ্জনবাবু তুলে ধরেছেন, তার রেশ ধরেই বলা যায় যে গরুর সে আমলে একটি utility ছিল, যে কারণে "মনু" কোথাও pragmatic, কোথাও অদ্ভুত। 
    তাঁর pragmatism এযুগে অচল। 
  • Prabhas Sen | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০২736407
  • "নবাবী আমলের  টাকা বাদশাহ আমলে চলে না"- শ্রীরামকৃষ্ণ।  
    কাজেই অচল টাকার আলোচনার কি দরকার  আছে? অবশ্য অনেকে ভিন্নমত পোষণ করতেই পারেন। 
  • dc | 2401:4900:915f:de9a:ec9e:cf94:5a8a:***:*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৩৪736408
  • অরিনবাবুর সাথে একটা পয়েন্টে একমত, যে আজকের দিনে মনু অচল। কোন হাজার বছর আগে কি বলে গেছিল, সেসব তখনকার দিনে প্রাসঙ্গিক যদিও বা হয়ে থাকে, আজকের সমাজ ব্যাবস্থা এতোটাই পাল্টে গেছে যে এখন সেসব সম্পূর্ণ বাতিল। কিন্তু তাও বলবো যে রঞ্জনদা যে এগুলো লিখছেন, তার দরকার আছে। তার কারন আরেসেস / বিজেপি নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে মনুকে কবর থেকে খুঁড়ে বার করে এনে নতুন প্যাকেজে হাজির করছে আর মনুর বিধান নাম দিয়ে একগাদা রিগ্রেসিভ নিয়ম চাপাতে চাইছে। আর তার সাথে রামকেষ্ট, বিবুদা, বন্দেমাতরম হ্যান ত্যান জুড়ে দিয়ে একটা খিচুড়ি হিন্দুত্ব তৈরি করছে। এটার কাউন্টার করতে হলে অরিজিনাল মনুর কথা আলোচনা করা উচিত, মনুর নাম দিয়ে ঢপগুলো তুলে ধরা উচিত। তারপর মনুর অপ্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।    
  • Ranjan Roy | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:১২736412
  • আমার দুটো কথাঃ
     এক, আজকের দিনে সংবিধান , সামাজিক নিয়ম কানুন, বিয়ে ইত্যাদি আড়াই তিন হাজার বছর আগের প্রথা, পোশাক, খাদ্যাভ্যাস দিয়ে নির্ধারিত হতে পারে না। হওয়া উচিত আজকের পরিবর্তিত সময় ও পরিবেশের আবশ্যকতা অনুযায়ী। 
     
    দুই, 
    ওরা আজকাল শাস্ত্রের দোহাই দিয়ে যা চালাচ্ছে তার অনেকগুলো ওদের  শাস্ত্রেই নেই। আজকের রাজনৈতিক প্রয়োজনে যা খুশি চালানো হচ্ছে। 
    যেমন জনৈক নিত্যানন্দ স্বামী সোশ্যাল মিডিয়ায় বলছেন-- গীতায় আছে অহিংসা পরমোধর্ম বটে, কিন্তু ধর্মরক্ষার্থে হিংসা আরও বড় ধর্ম! 
    যথারীতি শ্লোক ও অধ্যায়ের নাম দেয়া নেই। অথচ সংস্কৃতে লেখা। ব্যস্‌ পাবলিক খাচ্ছে। 
     
    এরকম কোন শ্লোক গীতায় নেই। এটা তৈরি ওদের রাজনৈতিক হিংসার এজেন্ডাকে বৈধ ঠাওরাতে। সমস্ত মব লিঞ্চিং জাস্টিফাই করতে। 
  • অরিন | 122.15.***.*** | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৩০736415
  • রঞ্জনবাবু, আপনার উদ্দেশ‍্য মহৎ এবং এ বাবদে আপনাকে অকুণ্ঠ প্রশংসা জানাই। কিন্তু আমরা যারা আপনার সমমনস্ক, আমরা জানি এসব। 
    আমাদের বাদ দিলে যাদের "ভুল" শোধরানোর কথা বলছেন, তারাও জানে কোন কথা মনু বলেননি, কোন কথা বলেছেন, কিন্তু তথ্য বিকৃত করে মানুষকে বিভ্রান্ত করাই এদের উদ্দেশ‍্য । এ সমস্যা তথ‍্য ঠিক করে দিয়ে যে শোধরানো যাবে তা মনে হয় না, এক-এক বিকৃত মানসিক মডেল। এদের থিওরির ভিত্তি যতদিন না পর্যন্ত ভেঙে চুরমার হবে, বিকৃতির পর বিকৃতি, মিথ্যার পর মিথ‍্যার অচলায়তন এরা তৈরী করতেই থাকবে। 
    এবার দেখা যাক সেই অচলায়তন আমরা কিভাবে ধ্বংস করতে পারি। আপনার তুলে ধরা তথ‍্য প্রথম তোপ। 
     
    তবে মনু হোক না হোক, গোটা ব‍্যাপারটার absurdity টাকে তুলে ধরে দেখানোর একটা পরিসর চাই। 
  • Ranjan Roy | ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৩৮736416
  • ঠিক
  • পাগলা গণেশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৮736457
  • আমার মতে বলি,মদ থাকলেই যেমন পান করবে মানুষ,সমস্যা হবে। তেমনই ধর্ম থাকলেই ক্যাচাল।যেসব ভালো জিনিস ধর্মে বলে, তা একজন মানুষ সাধারণ বুদ্ধিতে বুঝতে পারবে।বিজ্ঞান চর্চা করুক না,সব ভালো কাজের কারণ পেয়ে যাবে।কিন্তু ধর্ম থাকলে ধর্মান্ধতাও থাকবে,আর তাহলে ধর্মজনিত উন্মত্ততাও থাকবে।তাই ধর্ম হটাও,বিশ্ব বাঁচাও।
     
    আজকের সময়ে ধর্মের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। বিজ্ঞানমনস্কতা দরকার।
  • পাগলা গণেশ | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৪০736458
  • তবে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই,রঞ্জন বাবু অনেক গবেষণা করে,অনেক কষ্ট স্বীকার করে লেখাটা লিখেছেন।এই যেটুকু আমার মনে হল লেখাটা পড়ে,উনি তো এ বিষয়ে একজন অথরিটি।
     
    বাপরে,এত জ্ঞান!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন