ছবি: ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক
১. সপ্তমী রাত
এ কদিন আমি আর তেমন কিছুই করব না
কেবল অফিস আর ঘর।
সকালে উঠব একটু বেলা করে
প্রথম মিটিং আমাকে ছাড়াও চলে
টেলিফোনে কথা হবে—
তোমাদের পূজায় দারুণ বৃষ্টি
তবু রেনকোট পরে ঠাকুর দেখতে গিয়ে
ধুয়ে যাওয়া প্রসাধন
এ কদিন আমি প্রতিদিন একটি করে কবিতা লিখব
কিছু ইমেলের জবাব লিখতে ভুল হবে
কথা বলতে বলতে অনেক দূরে অষ্টমীর ভোর
আমার সপ্তমীর রাত
দেবী যতটা ওখানে, ঠিক ততটাই এখন এখানে
২. অষ্টমীর সকাল
আমি যা বলি তা করি—এ আমার ছোটোবেলার অভ্যাস
আজ অষ্টমী, বস ফোন করল, মিটিং-এর নোটিশ এল
তবু আমি আগেই বলেছি এ কদিন দেরি করে উঠব
ফোন বাজে—
প্রথমে উদরা, পরে মুদারা হয়ে তারায়
এত সুর ঝরে পড়ে বাতাসে বাতাসে
পুজো এখন এখানে ফুরিয়ে গিয়েছে
তবু ব্যাকইয়ার্ডের সকাল বাতাসে
হঠাৎ শরতে শিউলির ঘ্রাণ
জানি, সেই ফুল এখানে ফোটে না;
এমনকি তার ঘ্রাণ ছিল কি না
আমার এখন মনেও পড়ে না
সেদিন দুপুরে, সাদা শাড়ি আর লালপাড় পরে
কে গিয়েছিল একা অঞ্জলি দিতে
এখন আমার মনেও পড়ে না
মনেও পড়ে না
শুধু একখানি কুচো সাদা ফুল
বাগানে ফুটেছে—
যেন কারো মুখ,
আমার স্মৃতিতে ফিরিয়ে আনার
অক্ষমতায়
দাঁড়িয়ে থেকেছে
৩. নবমীর দুপুর
নবমী মাংসের দিন
সকাল থেকেই দোকানের সামনে লাইন
মানুষ ও পাঁঠা দুজনেই
একে একে লাইন কমেছে
সাইকেলে ঘণ্টি বাজিয়ে অভিজিৎ চলে যায়
তার বাজারের থলির নীচেই কালচে রক্তের ছাপ
এতবার কেচেছে মোনালি, তবু দাগ কখনও ওঠে না
প্রেসার কুকার থেকে
বুগ-বুগ ফেনা ওঠে, হালকা হলুদের দাগ
আঠা আঠা শুকিয়ে রয়েছে
নবমী মাংসের দিন—
দুপুরে দরজা বন্ধ হলে,
কালোবাজারের ব্যাগের ভিতর
দুটি অসহায় চোখ।
৪. দশমীর রাত
গহন আঁধার রাত এলো কি সে
কিংবা ফিরে গেল?
আলতা পায়ের ছাপ কেবলই দূরে দূরে
যেন সে হারানো সুর
মাথার ভেতরে ঘুরে
পুরনো রেডিও বাজে
অচেনা স্টেশন থেকে
পূর্বাভাসে ঝড়—
নদীতে যেয়ো না
প্রদীপ একলা জ্বলে
জলের ভিতর দোলে।
আলো ও ছায়ার মাঝে
দেবীর মুখ
গহন আঁধার রাত—
এলো কি সে?