এটা সত্যি আমি বড় বেশি কাঁদি
আশা মৃত হলে কাঁদি
অন্যের কান্না দেখে কাঁদি
অথচ সেদিন আমার চোখে জল এলো না।
তখন দিনের আলো নেভে নেভে
সূর্য ছিল না
তবু পাঁচ যুবকের চোখে কালো চশমা
কঠিন সাদা মুখে বেপরোয়া বোহেমিয়ানা
পা গুলো জাপটে আছে ময়লা নীল জিন
গায়ে ঢোলা চামড়ার জ্যাকেট
এক হাতে সিগারেট অন্য হাতে বিয়ারের ক্যান
পায়ে মোটা বুট
পদব্রজে অলসগতি প্রায় উদ্দেশ্যহীন।
মাঝে মাঝে বিকট শব্দে পরিবেশ তাচ্ছিল্য করা হাসি,
দর্প নয় দম্ভ নয়
হতাশায় হিংসা মাখানো কোন এক রিপু।।
স্কুলের পর খালেদ কখনো একা ফেরেনি।
আমি ফলের দোকানে তাকিয়ে আছি
কালো আঙুর সাদা আঙ্গুর পাশাপাশি।
ব্রিক লেনের বিকেল আস্তে আস্তে ছিনিয়ে নিচ্ছে আলো
বাসস্টপে খালেদ একা
দূরে একটা বাস
আকাঙ্ক্ষা আর প্রাপ্তির মাঝে বোধহয়
এখনো কয়েক মিনিট ---
গলির বাঁক পেরিয়ে সাদা যুবকেরা
বাস স্টপের সামনাসামনি
শব্দ এল ‘ব্লাডি পাকি’।
হঠাৎ যেন খালেদের গায়ে
উত্তর মেরুর উজাড় করা বরফ ---
সারা শরীর জুড়ে হাজার শীতের কাঁপুনি
বাসের গতি কেন এত মন্থর
যেন এ অনন্তকালের প্রতীক্ষা।
একটা জ্বলন্ত সিগারেট এসে পড়ল খালেদের গায়ে
গালে একটা হাত রেখে সরে দাঁড়ালো সে
সমবেত অট্টহাস্যে ভেঙে চুরমার হল পৃথিবী;
হায়নার পাল হুমড়ে পড়ল শিকারের উপর।
করুন গোঙ্গানি, অশ্লীল চিৎকার।।
আমি সাজানো ফল দেখছি দোকানে
কালো আঙ্গুর সাদা আঙ্গুর পাশাপাশি;
অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে সচকিত বাস্তব,
বাসস্টপে ফুটপাতে লাল লাল ছাপ
স্ট্রেচারে একটা কিশোর শুয়ে।।
এটা সত্যি আমি বড় বেশি কাঁদি
অথচ সেদিন আমার চোখে জল এলো না।।
দম্ভ
আমার কবিতা তোমাকে পড়তেই হবে
আমার কবিতা তোমাকে বন্য আইভির মত
পাকে পাকে জড়িয়ে রাখবে।
হঠাৎ যদি কখনো বালিশে মুখ গুঁজেফুপিয়ে কেঁদে ওঠো
আমার কবিতা তোমার মাথায়
সোহাগের হাত বুলাবে।
আমার কবিতা তোমায় পড়তেই হবে।
সেদিন যখন চন্দ্রপৃষ্ঠে ছায়া দেখে
মনে পড়ল তোমার পুরনো কথা
মুচড়ে উঠলো বুক
একাকী প্রাণে আমার কবিতা তোমাকে দিলো সংগ।
বাকহীন তোমার কণ্ঠে এলো শব্দ
চিৎকার করে পড়লে আমার কবিতা
যেন শরীরে ফিরে এলো প্রাণ
কাঁধ থেকে পাথরটা গেলো নেমে
অভিমন্যু যেন খুঁজে পেলো ব্যুহ ভেদের শক্তি।
তোমাকে পড়তেই হবে আমার কবিতা।।
এই যে তুমি সকালে উঠে উর্ধ্বশ্বাসে ছোটো
এটাকে ডান দিকে রেখে ওটাকে সরাও
আবার ওটাকে বাঁদিকে রেখে সেটাকে সরাও
বোঝাটাকে তোলো, নামাও, দম নাও
আবার তোলো আবার নামাও –চক্রাবর্তে চর্বিত চর্বন।
ক্লান্তি! অবসন্ন শরীর, মস্তিষ্কে ঝিঁঝিঁ পোকার কোলাহল।
একটু অবসর নাও –আমার কবিতা তোমাকে সর্বগ্রাসী নেশার মতো
আপ্লুত করে রাখবে, অবসাদকে করে দেবে বিলাসশয্যা।
তোমাকে পড়তেই হবে আমার কবিতা।
তোমার মনের তো সহস্র গতি, হাজার ঋতুর আনাগোনা
কখনো বর্ষা কখনো বসন্ত , ক্ষণে ক্ষণে মেঘ রৌদ্র
আনন্দ উৎসব কান্না ও শোক।
অথচ সর্বদাই দিশাহারা ভাবের দৈন্যে।
আমার কবিতা বহুরূপী,
তোমার সব রূপেই সে হবে সঙ্গী
যেমন বাঁচতে তোমার জল চাই বায়ু চাই
তেমনি চাই আমার কবিতা।
তোমাকে পড়তেই হবে আমার কবিতা।।