এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইদবোশেখি  ইদবোশেখি

  • স্বপ্নের জাদুকর

    হীরেন সিংহরায়
    ইদবোশেখি | ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪৩ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অলংকরণ: রমিত চট্টোপাধ্যায়



    “আর একটা কথা। আমি নিজেকে একান্ত ভাগ্যবান মনে করি এই ভেবে যে এই জীবনে দু জন অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষকে চেনার সৌভাগ্য হয়েছে। একজন আপনি আর দ্বিতীয় ব্যক্তি এই পত্র বাহক” ।

    প্যারিসের কন্টিনেন্টাল এডিসন কোম্পানি অফিসের কর্তা চার্লস ব্যাচেলরের চিঠিটি পড়া শেষ হলে টমাস আলভা এডিসন মানুষটিকে আবার ভালো করে দেখলেন। দীর্ঘকায়, জামা কাপড় ধূলি ধূসরিত, এলিস আইল্যান্ডে জাহাজ থেকে নেমে আমেরিকা প্রবেশের অনুমতি পেয়েই ব্যাচেলরের লেখা পরিচয় পত্র হাতে সিধে চলে এসেছেন এডিসনের কাছে। জানিয়েছেন এই সমুদ্র যাত্রায় তাঁর সর্বস্ব খোয়া গেছে, এখন সম্বল পকেটের চারটি সেন্ট। তাঁর নাম নিকোলা টেসলা। বয়েস আঠাশ।


    নিকোলা টেসলা


    এই কপর্দকশূন্য মানুষটির সঙ্গে তাঁর তুলনা করেছেন চার্লস?

    টমাস আলভা এডিসন কখনো স্কুলের মুখ দেখেননি, বারো বছর বয়েসে ট্রেনে কখনো লজেন্স কখনো খবরের কাগজ বেচে জীবন ধারণ করেছেন কিন্তু এখন এই চল্লিশ পেরুনোর আগেই তিনি আমেরিকার কেন, বিশ্বের এক ডাকসাইটে আবিষ্কারক নামে খ্যাত। মাত্র বছর দশেকের ভেতরে দিয়েছেন ইলেকট্রিক বালব, সে এতো সস্তা ‘যে ভবিষ্যতে কেবল ধনীরা মোমবাতি জ্বালাবেন’, পাওয়ার জেনারেটিং প্লান্ট, ফোনোগ্রাফ, এমন কি মর্স কোডের টেলিগ্রামকে ছেপেছেন কাগজে যাতে সেটি সত্ত্বর প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়। তাঁর পেটেন্টের সংখ্যা অগুনতি। নিউ জার্সিতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত মেনলো পার্কের বিশাল ল্যাবরেটরিতে কয়েকশ নবীন বৈজ্ঞানিক তাঁদের গবেষণায় মগ্ন। দূর দূর থেকে মানুষজন আসেন বিজলি বাতির খেলা দেখতে, বছর গেলে মিলিয়ন ডলার কোম্পানির আয় বাঁধা। হেনরি ফোর্ডের সঙ্গে তাঁর ওঠা বসা। ইনভেস্টররা চেক হাতে নিয়ে তাঁর বসার ঘরে অপেক্ষা করেন।

    বয়েসে তাঁর চেয়ে অন্তত বছর দশেকের ছোট, মুখোমুখি দাঁড়ানো এই মানুষটি হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের দক্ষিণে ক্রোয়েশিয়ায় জন্মেছেন, গ্রাতস টেকনিকাল কলেজে পড়েছেন, ডিগ্রি অর্জন করেননি কিন্তু ক্লাসরুমে প্রফেসরের ইলেকট্রিকাল মডেলের ত্রুটি দেখিয়ে সেটি সংশোধন করে দিয়েছেন। প্যারিসে চাকরিতে যোগ দেবার সময় নিকোলা টেসলা জানিয়েছিলেন তাঁর সিভিতে জেনে শুনেই একটি বিষয়ের উল্লেখ করেননি; হাবসবুর্গ রাজত্বের আইন অনুযায়ী দু বছরের বাধ্যতামূলক মিলিটারি সার্ভিস এড়িয়ে ক্রোয়েশিয়ার পাহাড়ি গ্রামাঞ্চলে অজ্ঞাতবাস করেছেন, জানাজানি হলে তাঁর নামে অস্ট্রিয়ান সরকার হুলিয়া জারি করতে পারে তবে প্যারিসে নয়! বইয়ের পোকা ছিলেন তিনি। সময় কাটাতে মার্ক টোয়েনের সব বই জোগাড় করে পড়েছেন।* সঙ্গে ছিল ভলতেয়ারের সমগ্র রচনাবলী, ছোট হরফে ছাপা একশটা বাঁধানো বই প্রচুর পরিশ্রমে সবটা পড়ে ফেলে লেখেন, ‘এমন দানবীয় কাজ আর কখনো নয়!’

    অবাক হয়ে চার্লস জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনি ফরাসি জানেন, বলেন এমন ভালো যে আপনার সহকর্মীরা আপনাকে ফরাসি মনে করেন। তা, ইংরেজিটাও জানেন? সলজ্জ হেসে টেসলা জানান তাঁর পাঠক্রম ছিল জার্মানে, সেই সঙ্গে ইংরেজি ও ইতালিয়ান শিখে নিয়েছিলেন।

    পোর্ট হিউরন, মিশিগানের টমাস আলভা এডিসন ইংরেজি ছাড়া আর কোন ভাষা জানতেন না –তাঁর এলেম অন্যত্র। চার্লস লিখেছেন নিকোলা টেসলা সে অবধি কোন বিরাট কিছু আবিষ্কার করেননি কিন্তু তাঁর মেধা সাধারণ মানদণ্ডে মাপা যায় না। তিনি ঘুমের ভেতরে ভাবেন, স্বপ্নের ভেতরে একটা মেশিন বানিয়ে ফেলেন, তার ভুল ত্রুটি থাকলে ঘুম ভাঙ্গার আগে সেগুলোকে সারিয়ে কাজের যোগ্য বানিয়ে দেন। দিস্তে দিস্তে ফুলস্ক্যাপ কাগজের পাতায় স্কেচ আঁকা ল্যাবে গিয়ে আঠারোটা এক্সপেরিমেন্ট করে কোন প্রোটোটাইপ বানানো তাঁর কাজ নয়। ল্যাবরেটরিতে যখন যান, স্বপ্নে দেখা মেশিনটি তৈরি করেন, কেবলমাত্র আবিষ্কারের আনন্দে। সেটা শুনে এডিসন খুব খুশি হতে পারেননি; তিনি নিজে কাজ করেন ট্রায়াল অ্যান্ড এরর পদ্ধতিতে, ছবি এঁকে নয়, আঠারো বার বানিয়ে ও ভেঙ্গে তাঁর যন্ত্র পাতিকে ব্যবহারযোগ্য করে তোলেন। তবে সেই যন্ত্র যদি কোন বাণিজ্যিক মুনাফা না আনতে পারে তাহলে এডিসন সেটিকে আস্তাকুঁড়ে পাঠান।

    চার্লসের উচ্চ প্রশংসা কেবল মাত্র নিকোলা টেসলার স্বপ্নের জাদুর ওপরে আধারিত ছিল না ।

    কন্টিনেন্টাল এডিসন একটি ফরাসি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, টমাস এডিসনের সঙ্গে চুক্তি মোতাবেক তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রপাতি বাজারে বিক্রি করে, তাঁর নাম ব্যবহার করে। নিকোলা টেসলা সেখানে কাজে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। ফ্রান্সের আলসাস প্রদেশে (সেটি তখন প্রাশিয়ার অঙ্গরাজ্য, এলসাস) এডিসন কোম্পানির একটি পাওয়ার স্টেশন স্থাপনা সমারোহে বার্লিন থেকে এসেছেন সম্রাট ভিলহেলম; ব্যান্ড বাদ্যির মধ্যে ফিতে কেটে তিনি যেই সুইচ অন করেছেন তৎক্ষণাৎ প্রলয় এবং অগ্নিকাণ্ড! ক্রুদ্ধ সম্রাট কোন মতে আপন প্রাণ বাঁচিয়ে দ্রুতবেগে সভাস্থল পরিত্যাগ করেন, সেই সঙ্গে পাওয়ার স্টেশনের পেটেন্ট বাতিলের নির্দেশ দিয়ে যান। বহু মূল্যের সেই কনট্র্যাক্ট হারালে প্যারিসের দোকান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চার্লস ব্যাচেলর তখন তাঁর নবীনতম কর্মীকে বললেন, এটা সারাতে পারবেন ? আমাদের পেটেন্টটা বাঁচিয়ে যদি পাওয়ার স্টেশনের কাজটা করে দিতে পারেন, আমাদের কোম্পানি যথাযোগ্য পুরস্কার দেবে।

    এক মাস দিন রাত্তির খেটে নিকোলা টেসলা জ্বলে যাওয়া পাওয়ার সিস্টেমের খোল নলচে বদলে সেটিকে চালু করে দিলেন। খুশি হয়ে প্রাশিয়ান সরকারের দফতর হতে এডিসন কোম্পানির পেটেন্টটি পুনর্বহালের আদেশ পাওয়া গেলো। এবার নিকোলা টেসলা ফরাসি মালিকদের কাছে প্রতিশ্রুত সাম্মানিক চাইতে কাজ ফুরলে পাজি এই আপ্তবাক্যের সত্যতা প্রমাণ হল পুনরায়। কর্তৃপক্ষ বললেন, কাজের জন্য তো মাস মাইনে দেওয়া হয়। তার বাড়তি কেন দেওয়া হবে?

    প্যারিসে তাঁর কাজের সম্যক কদর না পেয়ে নিতান্ত ক্ষুণ্ণ হয়ে নতুন ভবিষ্যতের সন্ধানে আটলান্টিক পাড়ি নিউ ইয়র্কে হাজির হয়েছেন। চার্লস খানিকটা অপরাধ বোধ থেকে অথবা হঠাৎ দয়া পরবশ হয়ে একটি পরিচয় পত্র লিখে দিয়েছেন - এখন যদি এডিসন তাঁর কাজের সুযোগ দেন।


    মেনলো পার্কের ল্যাবরেটরি


    টমাস এডিসন প্রায় তৎক্ষণাৎ নিকোলা টেসলাকে তাঁর মেনলো পার্কের ল্যাবরেটরিতে নিয়োগপত্র লিখলে পরে অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের ভাবনা মুক্ত হয়ে নিকোলা মহোৎসাহে কাজে যোগ দিলেন। দু জনের কেউ সেদিন জানতেন না শিগগির এই দুই প্রতিভা এক সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হবেন, পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে যার নাম দুই বিদ্যুৎ তরঙ্গের লড়াই (ওয়ার অফ টু কারেন্টস)।

    ৯ জুলাই ১৮৫৬ সালে ঠিক মধ্যরাতে নিকোলা টেসলার জন্ম হয় এক সার্বিয়ান পরিবারে, ক্রোয়েশিয়ার স্মিলিয়ান গ্রামে। সে রাতে আকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের ঝলক ইঙ্গিত দিয়েছিল এই শিশু একদিন খেলবে বিদ্যুতের খেলা, নিশীথবেলা (যদিও আমার যাওয়া হয় নি, অসম্ভব তুষার ঝরা দিন ছিল কিন্তু জাগ্রেব থেকে গাড়িতে জাদার যাবার পথে দেখেছি নিকোলা টেসলার জন্মস্থান স্মিলিয়ান গ্রামের সাইনবোর্ড)। পিতা মিলুতিন অর্থোডক্স গিরজের ধর্মযাজক, মা জর্জিনা সংসারের কাজে লাগে এমন সব জিনিস বানাতেন। অসাধারণ স্মরণ শক্তি তাঁর, সার্বিয়ান ধর্ম গ্রন্থ ও মহাকাব্য কণ্ঠস্থ ছিল। তিন মেয়ে দুটি ছেলে, নিকোলার সাত বছর বয়েসে বড়ো ভাই ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যায়।

    স্কুলে পড়ার সময়ে তাঁর ফিজিক্স শিক্ষকের কাছে বিদ্যুতের প্রথম পাঠ পড়েই নিকোলার মন চলে গেছে সেদিকে; ইতিমধ্যে কাগজ নয়, মানসাঙ্ক দিয়ে ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের সমাধান করেন। এত দ্রুত কঠিন অঙ্কের উত্তর দেন যে তাঁর শিক্ষকরা সন্দেহ করেন নিকোলা উত্তরগুলো টুকেছে! স্কুল শেষ হলে নিকোলা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যেতে চান; বাবার ইচ্ছে পুত্র অর্থোডক্স গিরজেয় তাঁর পদাঙ্কে ধর্মচর্চায় যোগ দিক। পিতা পুত্রে বিবাদ যখন তুঙ্গে এমন সময় কলেরায় আক্রান্ত হলেননি কোলা। পিতা মিলুতিন গিরজেয় হাঁটু গেড়ে ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন রোগ থেকে সেরে উঠলে নিকোলার ইচ্ছেয় কোন বাধা না দিয়ে তাকে হাবসবুর্গ রাজাদের প্রখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রাতসের টেকনিকাল কলেজে পাঠাবেন। গ্রাতসের পাঠ শেষ হবার আগেই বাবা মিলুতিন মারা গেলেন। শোক সন্তাপের অবসানে তাঁর কাকারা কিছু টাকা জোগাড় করে নিকোলাকে বললেন, তোমার বাবার ইচ্ছে ছিল তুমি আরও লেখাপড়া করো, এবার যাও প্রাগে, চার্লস ফার্দিনান্দ ইউনিভার্সিটি; কিন্তু বিধি বাম, যতদিনে নিকোলা প্রাগ পৌঁছুলেন সেখানে ভর্তির শেষ তারিখ পার হয়ে গেছে। খাতায় নাম উঠবে না। অদম্য নিকোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট বিভাগে কাজ জোগাড় ফেললেন, সেই সুযোগে ফিজিক্সের ক্লাসে পেছনের বেঞ্চে বসে লেকচার শোনেন, বিশ বছর বাদে ফ্রান্তস কাফকা সেই একই সিঁড়ি বেয়ে ক্লাসরুমে যাবেন।


    নিকোলা টেসলার জন্ম ভিটে , ডাইনে মিলুতিন টেসলার গিরজে


    ডিগ্রি জুটবে না জেনে এক বছর বাদে প্রাগ ছাড়া মনস্থ করলেন। স্মিলিয়ানে ফিরবেন না, এবার কাজ খোঁজা শুরু। হাতে হাবসবুর্গের ছাপ মারা পাসপোর্ট, উত্তরে ইউক্রেন থেকে দক্ষিণে দুব্রভনিক অবধি যেখানে খুশি যেতে পারেন, ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের কোন বালাই নেই। প্রথম কাজ জুটল বুদাপেস্টের রাজকীয় টেলিফোন একসচেঞ্জে, যন্ত্রপাতি তদারক ও কলকব্জা সারানো।

    অফিসের ছুটির পরে একদিন পেস্টের পার্কের মাঝ দিয়ে হাঁটছেন, সূর্য ডুবু ডুবু, পাশে দানিউব, ওপারে বুদার পাহাড় – ঘুমে নয়, জাগরণে নিকোলা টেসলা দেখলেন একটি ঘুরন্ত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র, সেখানে বিদ্যুৎ প্রবাহ হবে একমুখী নয়, যার তরঙ্গ বদলাবে গতি ও দূরত্ব –অল্টারনেটিং কারেন্ট (AC)! ডাইনামো, ট্রান্সফরমার দিয়ে, এক পলিফেজ সিস্টেম, একই অঙ্গে অনেক রূপ! সে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া যাবে দূর থেকে দূরে, অল্টারনেটিং কারেন্ট যেন এক মহা শক্তিশালী, উদ্ধত ক্ষিপ্র ঝঞ্ঝা যার রূপ বদলে দেওয়া যায় যেখানে সেখানে, একই সঙ্গে তরঙ্গকে পোষ মানানো যায়-একি মায়া, লুকাও কায়া?

    মেনলো পার্কে বয়ে যায় খোলা হাওয়া, অজস্র যুবক যুবতি বন্ধনহীন সৃষ্টির নেশায় মশগুল, ভাবনার পথভোলার বাধা নেই। ড্রেস কোড নেই, যে যেমন খুশি সেজে আসে, ঝাঁপিয়ে পড়ে এই কর্মযজ্ঞে। নিকোলা লক্ষ করলেন এডিসন ও তাঁর বাহিনী দিবারাত্র কাজ করেন, রাত বিরেতে ডেস্কে খাবার চলে আসে সবার জন্য। সুইগি বা ডেলিভারু অ্যাপ তৈরি হবার একশ বছর আগে মেনলো পার্কে বাইসাইকেল নিয়ে প্রস্তুত থাকত তরুণ কর্মী বাহিনী, আশে পাশের পরিবারের সঙ্গে চুক্তি মতো গরম খাবার হাজির করতো বিজ্ঞানীদের সামনে। এডিসন ডেস্কের নিচে বা অফিসের টেবিলের তলায় ঘুমোন। তাঁর কোন হবি নেই, খেলা ধুলা সঙ্গীত বা থিয়েটার কোন কিছুতেই তাঁর আগ্রহ নেই। শয়নে স্বপনে তাঁর ডিরেক্ট কারেন্ট!

    বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের কাজে টমাস এডিসন প্রভূত অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। তিনি নিকোলা টেসলাকে প্রথম টাস্ক দিলেন- ডিরেক্ট কারেন্ট ডাইনামো দিয়ে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নের। নিকোলা সেটি করতে সক্ষম হলে, পঞ্চাশ হাজার ডলার বোনাস পাবেন। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে নিকোলা ডাইনামোর কার্যক্ষমতা বাড়ালেন। এবার বোনাস?

    তাঁর একটি ক্রুর নির্মম পরিহাসের কারণে টমাস আলভা এডিসন অমর হয়ে আছেন। নিকোলা বোনাস প্রসঙ্গ তুললে তার উত্তরে এডিসন বললেন, “টেসলা, তুমি আমাদের আমেরিকান ঠাট্টাটা বুঝতে পারোনি” (টেসলা ইউ জাস্ট ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড আওয়ার আমেরিকান হিউমর )।

    দু বছরের মধ্যে দুই দেশে দুবার প্রতারিত হয়ে নিকোলা টেসলা দ্বিতীয়বার পদত্যাগ করলেন।

    জীবনের শেষ দিন অবধি টমাস এডিসন স্বীকার করেছেননি কোলা টেসলাকে চলে যেতে দেওয়াটা ছিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল।

    কারখানায় ও রাস্তাঘাটে আরক লাইটিঙের প্রস্তাব নিয়ে নিউ ইয়র্কের কয়েকজন ব্যবসায়ী নিকোলা টেসলাকে অংশীদার করে একটি কোম্পানি খাড়া করলেন, শেয়ার কেনার পয়সা টেসলার নেই তিনি বেতন পাবেন নামমাত্র। তবে শেয়ার সার্টিফিকেট মাফিক আংশিকভাবে কোম্পানির মালিক হবেন। তাঁর নিজের শেয়ার বিক্রি করতে গিয়ে টেসলা জানলেন সেটি একেবারে মূল্যহীন, একটি ধাপ্পা।

    তৃতীয় বার প্রতারিত হলেন টেসলা। রাজ কাপুর অভিনীত বাসু ভট্টাচার্যের তিসরি কসম ছবিটি কারো মনে থাকতে পারে।

    এবার তিনি আক্ষরিক অর্থে পথে নামলেন ।

    পকেট শূন্য। কোথা থেকে সেদিনের অন্ন জুটবে ভাবতে ভাবতে নিউ ইয়র্কের পথে হাঁটছেন, দেখেন রাস্তায় মাটি খোঁড়া হচ্ছে। শারীরিক পরিশ্রমে কখনো কুণ্ঠিত ছিলেন না, এগিয়ে গিয়ে বললেন তিনিও কাজ করতে চান। মজুরদের সর্দার টেসলার পরিচ্ছন্ন পোশাক দেখে অট্টহাসি হাসলেন, তারপর বললেন, ঠিক আছে, সাদা শার্টের হাতটা গুটিয়ে নিয়ে এই গাড্ডায় নেমে কোদাল চালাও। দিনের শেষে দু ডলার মজুরি পেলেন। দিন যায়। মজদুরদের সর্দার তাঁকে ঠিকই চিনেছিলেন। কদিন বাদে দুপুরে একপাশে ডাকলেন, নিজের খাবার ভাগ করে নিয়ে বললেন, ‘ তুমি তো এ কাজ করার জন্য জন্মাও নি। এখানে ভিড়লে কেন? অভাবে? চলো আমার সঙ্গে।’

    ইতিহাস সেই মানুষটির নাম মনে রাখেনি ।

    সর্দার চিনতেন ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের এক বড়ো সায়েবকে, টেসলাকে নিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। সেই মিস্টার ব্রাউনের সামনে হাজির হয়ে দুটো কথা বলতেই তিনি টেসলার হাত ধরে বললেন, ‘ কোথায় ছিলেন এতদিন? আসুন আমরা একসঙ্গে কাজ করি’; আরেকজন পার্টনারকে নিয়ে যার স্থাপনা করলেন সেটি নিকোলা টেসলার নামাঙ্কিত প্রথম প্রতিষ্ঠান, টেসলা ইলেকট্রিক কোম্পানি, সাত দিন আগেও যে রাস্তায় তিনি মাটি কোপাচ্ছিলেন তার অনতিদূরে।

    একশ কুড়ি বছর বাদে দুই ক্যালিফোর্নিয়ান, মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টারপেনিং, টেসলা মোটরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনা করবেন এবং অচিরে এলন মাস্ক নামক এক দক্ষিণ আফ্রিকান তার কর্ণধার হবেন। সেটা আরেক ইতিহাস।

    অল্টারনেটিং কারেন্টের সাফল্যের কাহিনি যতোই ছড়িয়ে পড়ল, টমাস এডিসন ততই তার বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যস্ত হলেন। এ সি অত্যন্ত বিপদজনক, ডি সির লো ভোল্টেজ, তার ছুঁলে প্রাণহানি হবে না কিন্তু এ সির তার ছুঁলেই পঞ্চত্ব প্রাপ্তি সুনিশ্চিত (আমাদের বাল্যকালে উত্তর কলকাতায় ঠিক এই কাহিনি চালু ছিল )। এ সি যে কি ভয়ঙ্কর সেটা প্রমাণ করার জন্য এডিসন প্রকাশ্যে কুকুর বেড়াল এমনকি নিউ ইয়র্কের কোনি আইল্যান্ডে টপসি নামের একটি দুষ্টু হাতিকে বিপুল জনসমক্ষে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মরতে দেখালেন(টপসি হত্যাকাণ্ড ফিল্মে রেকর্ড করা হয় )। কারণটা অন্তত গদ্যময়। এডিসন নিজের এবং নিবেশকদের বিপুল অর্থ লগ্নি করেছেন ডিরেক্ট কারেন্ট ব্যবসাতে, সেটাকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

    ১৮৮৮ সালে আমেরিকান ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিকাল এঞ্জিনিয়ারদের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহারিক উপযোগের বিষয়ে নিকোলা টেসলার বক্তৃতা শুনে চমৎকৃত হয়ে জর্জ ওয়েসটিংহাউস দেখা করতে এলেন ৩৩ নম্বর সাউথ ফিফথ এভেনিউতে টেসলার ল্যাবোরেটরিতে। তিনি বুঝেছিলেন অল্টারনেটিং কারেন্টের পথেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বণ্টনের ভবিষ্যৎ নিহিত। তিনি টেসলার পেটেন্ট ব্যবহারের দক্ষিণা হিসেবে পাঁচ লক্ষ ডলার দিলেন এবং একটি রয়ালটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেন – টেসলা সিস্টেমে উৎপাদিত প্রতি হর্স পাওয়ারের জন্য টেসলার প্রাপ্য হবে এক ডলার।

    টেসলা যেখানে যাবেন কপাল যাবে সঙ্গে।

    একদিকে এডিসনের অপপ্রচার, অন্যদিকে দেশের ব্যবসায়ে মন্দা- ওয়েসটিংহাউসের টাকা ফুরিয়ে আসছে। তিনি বুঝলেন টেসলাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রাখতে পারবেন না। টেসলাকে বললেন এই অবস্থায় আমি হর্সপাওয়ার পিছু এক ডলার রয়ালটি আপাতত দিতে পারবো না আপনি কি অন্য কোন সমাধানে রাজি হবেন?

    তাঁর ফিফথ এভিনিউয়ের অফিসের ডেস্কের ড্রয়ার খুলে টেসলা সেই চুক্তিপত্রটি হাতে নিয়ে টুকরো টুকরো ছিঁড়ে বাতাসে উড়িয়ে দিলেন; বললেন আমি চাই বিশ্বজুড়ে অল্টারনেটিং কারেন্টের ব্যবহার হোক, বিদ্যুতের আলো ছড়িয়ে পড়ুক। স্তব্ধ বিস্ময়ে জর্জ ওয়েসটিংহাউস মনে মনে তাঁকে হয়তো প্রণাম করলেন। সেদিন টেসলা বলতে পারতেন রয়ালটি আমার প্রাপ্য, আপনাকে দিতেই হবে অথবা বলতে পারতেন কম করে দেবেন বা কিছুদিন পর দেবেন। বললেন, না আমি কিছুই চাই না ।

    অঙ্ক কষে পরে দেখানো হয়েছে এক হর্স পাওয়ার উৎপাদনের জন্য এক ডলার কেন পঞ্চাশ সেন্ট পেলেও টেসলা সেই আমলে বিলিওনেয়ার হতে পারতেন।

    খ্যাতি এলো। এডিসনকে বাতিল করে টেসলার টেকনোলজিতে আলো জ্বলল ১৮৯৩ সালের শিকাগো ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে। তিন বছর বাদে তাঁরই পদ্ধতিতে নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে উৎপাদিত জলবিদ্যুতে বাইশ মাইল দূরের বাফেলো শহরও হল আলোকিত।

    মারকোনির অনেক আগেই বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করেছেন টেসলা; মারকোনিকে পেটেন্ট দেওয়ার বিরুদ্ধে তিনি আদালতে মামলা করেছিলেন। বহু বছর বাদে আমেরিকান আদালত তার মান্যতা দেয়। শেষ পর্যন্ত টেসলা বলেন, “মারকোনি লোকটা ভালো,কাজ করে যাক। সে ইতিমধ্যে আমার সতেরোটা পেটেন্টের জোরে রেডিও চালু করেছে।”

    ১৯০৯ সালে মারকোনি পেলেন নোবেল পুরস্কার ।

    ১৯১২ সালে নোবেল কমিটি এডিসন ও টেসলাকে পদার্থ বিদ্যায় নোবেল প্রাইজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানালে টেসলা বলেন এডিসনের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি কোন পুরস্কার গ্রহণ করবেন না।

    বিজ্ঞানে টমাস এডিসনের অবদান, তাঁর ট্রায়াল অ্যান্ড এররের ওপরে আধারিত একাগ্র কর্মনিষ্ঠার বিষয়ে টেসলার গভীর শ্রদ্ধা ছিল, তাঁর কর্ম পদ্ধতির ওপরে নয়। আমেরিকার ইতিহাসে এডিসন অতুলনীয় উদ্ভাবক কিন্তু টেসলা মনে করতেন এডিসনের কাজের পদ্ধতি এমন অদক্ষ যে তাঁকে যদি খড়ের গাদায় একটা ছুঁচ খুঁজতে বলা হয়, তিনি কক্ষনো ভাববার চেষ্টা করবেন না যে ছুঁচটা কোথায় থাকতে পারে। তিনি প্রত্যেকটা খড় উলতে পালটে দেখবেন ।

    “আমি কাছ থেকে তাঁর কাজকর্ম দেখে ভেবেছি তিনি খানিকটা ভেবে চিন্তে কাজ করলে তাঁর পরিশ্রমের ৯০% বাঁচাতে পারতেন”।

    নোবেল কমিটি দু জনকে আলাদা করে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান করবেন না। অতএব টেসলার নামের পাশে ঢ্যাঁড়া কেটে দিলেন। হয়তো মারি কুরি ছাড়া একমাত্র নিকোলা টেসলা দু দুবার নোবেল পুরস্কার পাবার অধিকারী ছিলেন ।

    এই অসামান্য প্রতিভাকে পিছু ধাওয়া করেছে দুর্ভাগ্য। একদিন তাঁর ল্যাবোরেটরি পুড়ে গেলো আগুনে। কতিপয় শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে কেটেছে দিন। জীবনের শেষ নটি বছর তিনি বাস করেছেন ম্যানহাটানের এইটথ এভনিউতে হোটেল নিউ ইয়র্কারের তেত্রিশ তলায়। সাতাশ নম্বর তাঁর বেডরুম, আঠাশ নম্বর বসার ঘর। বিজলি বেচে অগাধ ধনের অধিকারী টেসলার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞ জর্জ ওয়েসটিংহাউস নীরবে সে ব্যয় বহন করেছিলেন।


    হোটেল নিউ ইয়র্কার


    শেষ কয়েক বছর প্রতিদিন আধ মাইল হেঁটে ব্রায়ানট পার্কে গিয়ে পায়রাদের দানা খাওয়াতেন, নিজে যেতে না পারলে হোটেলের কোন কর্মীকে পাঠাতেন ।

    কয়েক বছর আগে ব্রায়ান্ট পার্কে দাঁড়িয়ে মায়াকে বলেছিলাম চোখ বন্ধ করো, ভাবো যে নিকোলা টেসলা আমাদের জীবনে আলো জ্বেলে দিয়েছেন, তিনি ঠিক এইখানে দাঁড়িয়ে আছেন, পায়রাদের মাঝে, তোমারই সামনে কিন্তু তুমি দেখতে পাচ্ছ না।

    একদিন সকাল বেলায় ৩৩২৭ নম্বর ঘরে বেল বাজানো সত্ত্বেও কোন সাড়া না পেয়ে হোটেল পরিচারিকা নিজের চাবি দিয়ে দরোজা খুলে দেখেন নিকোলা টেসলা ঘুমের মধ্যে চলে গেছেন আরেক জগতে ।

    ষাট বছর আগে যেমন একদিন নিউ ইয়র্কে এসেছিলেন, তেমনই কপর্দকশূন্য হয়ে বিদায় নিলেন, রেখে গেলেন সাতশো পেটেন্ট, মাথার ভেতরের ফাইলে হাজার স্কেচ নিয়ে স্বপ্নের যাদুকর মহাকালের কোলে চলে গেলেন।

    বরফ পড়ছে সকাল থেকে, নিউ ইয়র্কের পথ ঘাট সাদা হয়ে আছে।

    সেদিন ৮ ই জানুয়ারি, ১৯৪৩। নিকোলা টেসলার বয়েস হয়েছিল সাতাশি।

    পুনশ্চ

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। আমেরিকান নাগরিক এবং পাসপোর্টধারি হলেও নিকোলা টেসলা জন্মসূত্রে সার্বিয়ান। অতএব তাঁর মৃত্যুর খবর পাওয়া মাত্র এফবিআই ঘরের দরোজা ভেঙ্গে নিকোলা টেসলার যাবতীয় কাগজপত্র বাজেয়াপ্ত করে, আশি বছর বাদেও তার কোন সন্ধান মেলেনি ।

    নিকোলা টেসলা নিজের কথায়

    আমার ভাবনাকে দেখি মনের ভেতরে, সেটাকে গড়ে তুলি, অদল বদল করি, সেই যন্ত্রকে চালাই নিজের ইচ্ছেমত ।

    ঈশ্বর এবং ফিজিক্স এক।

    ভবিষ্যৎ

    বর্তমান তারা দখল করে রেখেছে, ভবিষ্যৎ আমার।

    একদিন আমরা মানুষের প্রতি মানুষের যে নৃশংসতা দেখব সেটা আমাদের আজকের চিন্তার বাইরে।

    দুনিয়ার কোথায় কি ঘটছে তা জানতে মানুষ এতো ব্যস্ত থাকে যে তার আপন মনের গভীরে কি ঘটছে তার খবর রাখে না।

    আজ এই শতাব্দীতে সকল সভ্য দেশ তাদের আয়ের মোটা অংশ খরচা করে রণসজ্জায়,অল্প পরিমাণ শিক্ষায়। আমার আশা এই যে অন্তত একবিংশ শতাব্দীতে উলটোটা হবে ।

    জিনিয়াস একটি পাসপোর্ট। সে নিজেই তার বাসযোগ্য দেশ খুঁজে নেয়।

    বিবাহ

    আবিষ্কারক বা উদ্ভাবকদের বিয়ে করার সময় থাকে না। মনে হয় না ইতিহাসে কিছু বিবাহিত লোকেরা কিছু সম্পন্ন করেছেন

    তুমি যা চাও সেটা ভালোবাসা নয়, ভালোবাসা তাই যা তুমি দিতে পারো ।

    ভাবের ঘরে চুরি

    ওরা আমার আইডিয়া চুরি করেছে করুক, আমার কোন দুঃখ নেই। দুঃখ শুধু এই যে তাদের নিজস্ব কোন আইডিয়া নেই।

    কিছু ক্ষুদ্র বুদ্ধির ঈর্ষা পরায়ণ লোক ভাবতেই পারে তারা আমার পথ আটকেছে, আমার কাছে তারা রোগের বীজাণু মাত্র ।

    মানুষের সকল ঘৃণাকে যদি বিদ্যুতে বদলে দেওয়া যায়, সারা দুনিয়া আলোকিত হবে।

    হয়তো আজকের অর্থনীতিবিদদের কথা মনে রেখে নিকোলা টেসলা বলেছিলেন

    আজকের বৈজ্ঞানিকরা এক্সপেরিমেন্ট নয়, বোর্ডে অঙ্ক কষে এমন সব মডেল খাড়া করেন যার সঙ্গে জীবনের কোন যোগ নেই।

    ****


    দেশ কোথায় গো তোমার বন্ধু

    আথেন্স, ইথাকা থেকে শুরু করে স্মিরনা (আজকের ইজমির ) অবধি সাতটি শহর একদিন ইলিয়াডের হোমারকে আপন সন্তান বলে দাবি করেছিল। নিকোলা টেসলা জন্মসূত্রে সার্বিয়ান, মাতৃভাষা সার্বো -ক্রোয়াট কিন্তু তিনি ছিলেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের প্রজা। সার্বিয়া তখন সম্পূর্ণ আলাদা দেশ। ১৮৯৪ সালে তিনি একবার ট্রেনে বেলগ্রেড যান, গোনা গুনতি ৩১ ঘণ্টা সেখানে ছিলেন! জাগ্রেব ও বেলগ্রেডে নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম দেখেছি , বেলগ্রেডে নিকোলা টেসলা এয়ারপোর্টে নেমেছি, সার্বিয়ার দ্বিতীয় শহর নিস, ওবরেজ, মোরাভিতসায় এবং ক্রোয়েশিয়াতে তাঁর নামে একশ দশটি রাস্তা আছে, নোভি সাদে গ্রীষ্মে টেসলা ফেস্ট হয় ।


    নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম, বেলগ্রেড


    নিকোলা টেসলা মিউজিয়াম, জাগ্রেব


    দুই দেশের একই দাবি - নিকোলা টেসলা আমাদেরই লোক!

    রুম নাম্বার ৩৩২৭

    ম্যানহাটানের এইটথ এভিনিউতে দি নিউ ইয়র্কার হোটেলের ৩৩২৭ নম্বর ঘরে নিকোলা টেসলা মেমরিবিলিয়া পরিবৃত হয়ে রাত্রিবাস করা যায়!



    টেসলার মৃত্যুস্থলে বসানো ফলক


    অপরাধ স্বীকার

    ইকনমিকসের মতো ধোঁয়াটে বিষয় পড়ার বিভ্রান্ত জ্ঞান ও ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে আমাদের যুগ থেকে অনেক এগিয়ে থাকা এই ক্ষণজন্মা কালপুরুষকে সামান্য কিছু শব্দে ধরবার চেষ্টা কেবল ধৃষ্টতা নয়, এটি একটি অপরাধ। তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করি ।

    আগ্রহী পাঠকের পাতা ওলটানোর সুবিধার্থে

    ম্যান আউট অফ টাইম মার্গারেট চেয়নি

    দি ম্যান হু ইনভেনটেড দি
    টুয়েনটিইয়েথ সেঞ্চুরি রবার্ট লোমাস

    মাই ইনভেনশনস নিকোলা টেসলা

    *তাঁর অজ্ঞাতবাসের পঁচিশ বছর বাদে মার্ক টোয়েনের সাক্ষাৎ পরিচয় হলে নিকোলা টেসলার গল্প শুনে “মিস্টার ক্লেমেন্স এতো হেসেছিলেন যে তাঁর চোখে জল এসে যায়”।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইদবোশেখি | ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ১৪৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সমরেশ মুখার্জী | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:১৯542512
  • অত্যন্ত সুলিখিত নিবন্ধ। পড়ে খুব আনন্দ পেলাম। 
     
    ওনার এই  কথাটি  নিদারুণ সত্য - মানুষের সকল ঘৃণাকে যদি বিদ্যুতে বদলে দেওয়া যায়, সারা দুনিয়া আলোকিত হবে। 
  • | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৩৯542513
  •  পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দিল। এমনিতে অনেকটাই জানা, কিন্তু আপনার উপস্থাপনা এত চমৎকার যে পড়তে ভারী ভাল লাগে। আর ওই কোরিলেট করা, যেমন কাফকাকে দিয়েছেন এইটে দারুণ। একটা বড় ছবি চোখে ভাসে। 
  • উত্তম ভট্টাচার্য | 2405:201:8008:b126:43c3:b019:5018:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪০542514
  • অসাধারণ এক গল্প। অসাধারণ এক জীবন ইতিহাস । অত্যন্ত মুন্সিয়ানা র সাক্ষী। এক অজানা গল্প। লেখক ও প্রকাশক সকলে কেই অভিনন্দন।
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০০542515
  • নিকোলা টেসলা, তাঁকে নিয়ে হীরেনদার লেখা, সাথে রমিতের অলংকরণ - অত্যন্ত ভালো লেগেছে। 
  • Debanjan Banerjee | 2409:4060:21e:f3e9:efa2:8442:4366:***:*** | ২১ এপ্রিল ২০২৫ ২১:০১542516
  • অসাধারণ হয়েছে হিরেনদা l আচ্ছা ১৮৯৩ সালে যে শিকাগো মেলার আলো জ্বলেছিলো টেসলার উদ্ভাবনে , এখানেই কি বিবেকানন্দের বক্তৃতা হয়েছিলো ? 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন