এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি  ইদবোশেখি

  • পুণ্য টু পুঁজি ভায়া লোভ

    স্বাতী রায়
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ৮৯২ বার পঠিত | রেটিং ৪.৯ (৭ জন)
  • ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    ২০০২ সালে মুম্বাইতে একটি জমি হাতবদল হয়। এরকম তো নিত্য হচ্ছে। কাজেই এতে আর নতুন কথা কি? তিনটি কারণে এই হাতবদল গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমতঃ জমিটির ইতিহাস। দ্বিতীয়ত, তৎকালীন বাজারদরের প্রায় ১০% মুল্যে এই জমির হাতবদল হয়। তৃতীয়ত জমির ক্রেতা। 

    জমির ইতিহাস ইন্টারেস্টিং। স্যার ফজলভাই করিমভাই ইব্রাহিম (১৮৪০ থেকে ১৯২৪) ছিলেন গুজরাটি খোজা মুসলমান সম্প্রদায়ের। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি ব্যবসায় হাত পাকান, কালে দিনে এক বিশাল বাণিজ্যসাম্রাজ্যের অধীশ্বর হয়ে ওঠেন। আফিম তুলো সিল্ক চা কিসের লেনদেনেই না হাত লাগিয়েছেন! সেই সঙ্গে ছিল কাপড়ের কল। আজকের দিনে যাঁকে আমরা 'বিজনেস ম্যাগনেট' বলি, তখনকার দিনে তিনি ছিলেন তারই পূর্বসূরি। ফলে ধনীর চেয়েও ধনী হয়ে উঠতে সময় লাগেনি। তবে শুধু অর্থ উপার্জনই নয়, তিনি প্রচুর অর্থ সমাজকল্যাণে দানও করেন। পিছিয়ে পড়া কচ্ছের মান্ডভীতে (তাঁর মাতৃভূমি) সেই আমলে জাত ধর্ম বাদ দিয়ে সকল মেয়েদের জন্য একটা স্কুল খুলেছিলেন। এরকম স্কুল সেখানে ওই প্রথম। সেই তিনিই ১৮৯৪ সালে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে তৈরি করেন করিমভাই ইব্রাহিম খোজা এতিমখানা। বোম্বের অল্টামাউন্ট রোড থেকে পেডার রোড অবধি ছড়ানো জমি দিলেন বন্ধু গোয়ালিয়রের মহারাজা মাধবরাও সিন্ধিয়া। উদ্দেশ্য খোজা সম্প্রদায়ের অনাথ-দরিদ্র বাচ্চাদের কল্যাণসাধন। [1] শুধুই খাদ্য বস্ত্র আশ্রয় নয়, যারা পড়াশোনায় আগ্রহী তাঁদের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা  করা হত, যাদের ব্যবসা বা কোন বিশেষ দিকে ঝোঁক থাকত, তাদের করিমভাই এর বিশাল বাণিজ্যজগতে সুযোগ করে দেওয়া হত।[2] এই কাজ পরিচালনার দায়িত্ব ছিল এক ট্রাস্টের হাতে। স্বাধীনতার পরে সেই ট্রাস্ট বোম্বে পাবলিক ট্রাস্ট অ্যাক্ট ১৯৫০ র আওতায় ফের রেজিস্টার্ড হয়। সেই ট্রাস্ট ২০০২ সালে এই জমি হস্তান্তর করেন। সেই মূল উদ্দেশ্য অর্থাৎ দরিদ্র-অনাথদের কল্যাণসাধন, তার কি হল? জমি কিনল আন্টিলিয়া কমার্শিয়াল প্রাইভেট লিমিটেড। ক্যারাভান পত্রিকার মতে ২০০২ সালে এই জমির বাজারদর ছিল ২০০ কোটি টাকা[3] অথচ বিক্রি হয়েছে ২১ কোটি পাঁচ লাখ টাকায়। [4] এই জমিতে এখন দাঁড়িয়ে আছে মুকেশ আম্বানির বসতবাড়ি আন্টিলিয়া। তার তৈরির খরচ ৬০০০ কোটি টাকার বেশি। 

    ভালোই বিজনেস ডিল, কি বলেন? তবে দুর্ভাগ্য এই যে এটা নিয়ে বিভিন্ন জটিলতা দেখা যায়। প্রথমত ১৯৯৫ র ওয়াকফ আইন অনুসারে এই জমি ওয়াকফ বোর্ডের অধীনে, তাদের কোন অনুমতি না নিয়েই এই জমি বিক্রি হয়েছিল। এই নিয়ে প্রথম মামলা হয়। অবশেষে ২০০৫ সালে ট্রাস্টের সঙ্গে ওয়াকফ বোর্ডের একটা সমঝোতা হয় আর মাত্র ১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে ওয়াকফ বোর্ড একরকমের বিক্রিতে সম্মতি দেয়। পরবর্তীকালে জানা যায়, এই সম্মতিদান আসলে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য। এই কোর্ট যুদ্ধ এখনও চলছে। যদিও মনে হয় না, তাতে আম্বানিদের কিছু এসে যায়।[5] [6][7] [8]

    এইবার এই আলোতে দেখুন নতুন ওয়াকফ সংশোধনী বিলের এই অংশটি, যেখানে ওয়াকফ আইন কোথায় কোথায় প্রয়োজ্য তার আগের ব্যাখ্যার সঙ্গে জোড়া হল – 

    “Provided further that nothing in this Act shall, notwithstanding any judgement, decree or order of any court, apply to a trust (by whatever name called) established before or after the commencement of this Act or statutorily regulated by any statutory provision pertaining to public charities, by a Muslim for purpose similar to a waqf under any law for the time being in force.”

    কি বুঝলেন? এই যুদ্ধতে যদিও প্রকাশ্যে উঠে এসেছে ওয়াকফ বনাম পাবলিক চ্যারিটির সীমানার ধোঁয়াশা আর ওয়াকফ কর্তাদের সীমাহীন অপদার্থতা ও দুর্নীতি, তবু আসল লাভ আম্বানির। আর আসল ক্ষতি কার? গরীব খোজা মুসলমান বাচ্চাদের। 

    এই ইতিহাসটা জানা ছিল বলেই নিতান্ত আইন-অনভিজ্ঞ হয়েও ওয়াকফ আইনের সংশোধনী পড়তে বসেছিলাম। সেই পাঠের থেকেই পাওয়া তথ্যগুলো লিখে রাখার দরকার মনে হল। তবে মনে রাখতে হবে, এই দেখা সাধারণ হিন্দু নাগরিকের দেখা। মুসলমান পার্সোনাল আইনে বিশেষজ্ঞদের দেখার সূক্ষ্মতা এখানে অনুপস্থিত।

    ওয়াকফ কাকে বলে?

    মুসলিম ধর্মীয় আইন অনুসারে ধর্মীয় কারণে (মসজিদ ইত্যাদি তৈরির জন্য) বা জনহিতকর কাজে (স্কুল, হাসপাতাল তৈরি বা দরিদ্র আতুরের সেবার জন্য )  দান করা সম্পত্তিই হল ওয়াকফ। লিখিত ওয়াকফনামার মারফৎ তো সম্পত্তি দান করাই যায়, এছাড়াও দীর্ঘকাল ব্যবহারের দরুণ ওয়াকফ (বা ওয়াকফ বাই ইউজেস) এবং ওয়াকফ-আলাল-আউলাদ (যা কিনা প্রাইভেট ওয়াকফ যার থেকে অর্জিত অর্থ বংশধরদের কাজে লাগবে এবং বংশলোপ পেলে সেই সম্পত্তি ওয়াকফের হাতে চলে যাবে।) ও মান্য হত। যিনি সম্পত্তি দান করতেন তিনি হলেই ওয়াকিফ। ওয়াকফ ছিল চিরস্থায়ী ব্যবস্থা, তার মালিক হলেন আল্লাহ স্বয়ং। বোঝার সুবিধার জন্য ধরা যায়, এটা অনেকটা আমাদের দেবোত্তর সম্পত্তির অনুরূপ। দেবোত্তর সম্পত্তির ক্ষেত্রে যেমন সেবাইত থাকেন ওয়াকফ সম্পত্তি পরিচালনা করেন মুতওয়ালি। খালি বিবাদ বিসম্বাদ উপস্থিত হলে দুই আলাদা আলাদা আইনের মাধ্যমে দেবোত্তর ও ওয়াকফ সম্পত্তির মীমাংসা হয়। ওয়াকফ সম্পত্তির পঞ্জীকরণ ও পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের। এটা মুসলমান পার্সোনাল আইনের অংশ।  

    ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন[9] আর নতুন ২০২৫ সালের সংশোধনী[10] পাশাপাশি রেখে পড়লে বেশি কিছু বদল চোখে পড়ে। যেমন এতদিন পর্যন্ত ধর্ম নির্বিশেষে যে কেউ ওয়াকফ করতে পারতেন। নতুন সংশোধনী অনুসারে, অন্তত পাঁচ বছর ধরে মুসলমান ধর্ম পালন করা কোন মানুষ, যিনি সরাসরি সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির মালিক এবং দান বা হস্তান্তর করার উপযুক্ত, তিনিই একমাত্র ওয়াকফ করতে পারবেন। আর দীর্ঘকাল ব্যবহারের ভিত্তিতে ওয়াকফ সংক্রান্ত ধারাটিই তুলে দেওয়া হয়েছে। তুলে দেওয়া হয়েছে এই উপধারাও যে এমনকি যে কারণে সেই সম্পত্তি দেওয়া, সম্পত্তি যদি আর সেই কারণে ব্যবহার নাও হয়, তাহলেও একবার ওয়াকফ করা সম্পত্তি ওয়াকফই থেকে যাবে। অর্থাৎ ওয়াকফের চিরস্থায়িত্ব ব্যাপারটা আর রইল না। এই বদল আপাতদৃষ্টিতে ঠিক বলেই মনে হয়, সত্যিই তো আমি দান করলাম স্কুল হবে বলে, আর তুমি কিনা স্কুল তুলে দিয়ে মসজিদ বানাবে তা হবে না বাপু। তবে এই বদল বিশ্বাসীদের ধর্মীয় অনুভূতির পরিপন্থী হয়ে উঠতে পারে। অবশ্য হিন্দু রিলিজিয়াস ও চ্যারিটেবল এন্ডাওমেন্ট এক্টও দেবোত্তর সম্পত্তিকে চিরকালীন বলেই ধরে, যতদূর জানি। সেখানেও কি তাহলে সংশোধন হবে? 

    ওয়াকফনামা বাধ্যতামূলক হওয়া ও কিছু সংশ্লিষ্ট সমস্যা

    নয়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, On and from the commencement of the Waqf (Amendment) Act, 2025, no waqf shall be created without execution of a waqf deed.” আর সেই সঙ্গে দীর্ঘ ব্যবহারের ভিত্তিতে ওয়াকফ সংক্রান্ত উপধারাটিকেই ( ১৯৯৫ এর আইনের সেকশন ৩ আর (১)) বাতিল করে দিয়েছে। তবে এই ছাড়টুকুও দেওয়া আছে যে “that the existing waqf by user properties registered on or before the commencement of the Waqf (Amendment) Act, 2025 as waqf by user will remain as waqf properties”  নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভাল আধুনীকিকরণ। কোন দ্বিমত নেই যে ২০২৫ সালে বসে কেউ মৌখিক কথার ভিত্তিতে বা দীর্ঘকালীন ব্যবহারের ভিত্তিতে কোন সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশন হতে দেওয়া মানে দুর্নীতির সিংহদুয়ার খুলে রাখা। 

    কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। সাচার কমিটির রিপোর্টসহ বহু বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতা বলছে যে বাস্তবে গ্রামেগঞ্জের বেশ কিছু মসজিদ, কবরখানা ইত্যাদির কৌমের কাজে ব্যবহৃত জমিই আইনগত ভাবে রেজিস্টার্ড নয়। কিছুটা অজ্ঞতার দরুণ, কিছুটা লাল ফিতের ফাঁদে পড়ার দরুণ, আবার কিছুটা আরও বিভিন্ন কারণে। এই যেমন আমার পরিচিত একজনের মেদিনীপুরের গ্রামে এক ৩-৪ বিঘা জমির উপর বহু বছরের পুরোন (আনুমানিক ৩০০ বছরের বেশি) কবরখানা আর মসজিদ রয়েছে। আর সেটা রেজিস্টার্ড ও না। অনুমান করা যায় তার কোন ডিড ইত্যাদিও কেউ দেখাতে পারবেন না। কমিউনিটির সম্পদের মালিকানা ২০০-৩০০ বছর আগে থেকে কিভাবে হাতবদল হয়েছে এ বার করা অসম্ভব কাজ।  বিগত বহু বহু বছর ধরে সেই জমিতে মসজিদ আছে, আর সেই জমির একাংশ স্থানীয় মুসলমানেরা করবখানা হিসেবে ব্যবহার করছেন। আজকের দিনের আবহে তাহলে কি যে কোন দিন সেই পিতৃপুরুষের স্মৃতি-বিজড়িত সম্পত্তি বেহাত হয়ে যেতে পারে? 

    নয়া সংশোধনীতে বলা হয়েছে, “Provided that the existing waqf by user properties registered on or before the commencement of the Waqf (Amendment) Act, 2025 as waqf by user will remain as waqf properties except that the property, wholly or in part, is in dispute or is a government property;”. তাছাড়া “Any Government property identified or declared as waqf property, before or after the commencement of this Act, shall not be deemed to be a waqf property. ” বলা হয়েছে ওয়াকফ না সরকারী সম্পত্তি তাই নিয়ে কোন বিবাদ উপস্থিত হলে রাজ্য নির্ধারিত কালেক্টর স্তরের কোন একজন সেই নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। আগে অবশ্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার একক ক্ষমতা ছিল ওয়াকফ বোর্ডের, সেটি এখন বদল করা হয়েছে। আর তাঁর সিদ্ধান্ত সরকারের পক্ষে গেলে ওয়াকফ আর সেই সম্পত্তিকে কোনভাবে রেজিস্টার করতে পারবে না। সুসংবাদ। শুনতে নিরপেক্ষ মনে হলেও, এর মধ্যে একটা বিপজ্জনক ছায়া রয়েছে—শতাব্দীপ্রাচীন ধর্মীয় ব্যবহার, বিশেষ করে দরিদ্র মুসলমান সম্প্রদায়ের জন্য ব্যবহৃত জমিগুলি যদি সরকারের খাতায় ‘অবৈধ’ বলে চিহ্নিত হয়, তবে তা খুব সহজেই তাদের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, এই ব্যবস্থায় সরকারের নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে, অথচ দুর্বলের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে খুব একটা দিশা দিতে পারেনি এই বদল। আরও সমস্যা হচ্ছে আইনের ছায়ায় ছায়ায় কোথায় কি অধিকার/ হাতবদল করা হবে তার কতটাই বা বৃহত্তর দেশবাসীর নজরে আসবে?

    ২০০৬ সালের সাচার কমিটির রিপোর্ট[11] যারা পড়েছেন, তাঁরা জানেন কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ওয়াকফ সম্পত্তি জবরদখলকারীদের মধ্যে অন্যতম। এবং কোর্টের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্দেশ থাকা স্বত্বেও সেই স্টেটাসের কোন হেরফের হয় না। আমাদের কলকাতার পার্ক কোর্টেও পুলিশ বাহিনী কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে জবরদখল করে বসে আছে।[12]  সাচার কমিটির মতে শুধুমাত্র দিল্লিতেই এইরকম জবরদখল ওয়াকফ সম্পত্তির বাজারদর ২০০৫-০৬ সালে ছিল ৬০০০ কোটি টাকা। গত বিশ বছরে সেটা আরও কতগুণ বেড়েছে? সেই সব সম্পত্তির উপর এই বদলের কি ধরণের প্রভাব পড়বে? রাজনৈতিক পক্ষপাত, কর্পোরেট স্বার্থরক্ষার কারণে সংখ্যালঘু সম্পত্তি অধিকার হরণের ঘটনা বাড়বে না তো?

    এই প্রসঙ্গে বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের লাগোয়া জ্ঞানব্যাপী মসজিদের কথাও মনে করা যেতে পারে। এই সংক্রান্ত বিবাদে একাধিক ধারা-উপধারা জড়ানো। এই মামলায় মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল “Gyanwapi Mosque cannot be said to be a Waqf property because it was not dedicated by any legal Waqif after the demolition of the Kashi Vishwanath temple in 1669”। [13] ঔরংজেব যদি জানতেন যে এমনটা হতে পারে! প্রত্যুত্তরে অবশ্য ১৯৪৪ সালের গেজেট নোটিফিকেশন দেখিয়ে উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড দাবি করেছিলেন যে এটা ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত। [14] যদিও সেই গেজেট নোটিফিকেশন আদতে লিখিত ডকুমেন্ট ছাড়াই, ব্যবহারের ভিত্তিতে। আর সেখান থেকেই সমস্যার সুত্রপাত। বর্তমানে অফিসিয়াল সূত্র অনুসারে সেখানে হিন্দু মুসলমান দুই দলই পুজো প্রার্থনা করতে পারেন। আর কোর্টে কেস চলছে। মনে রাখতে হবে, ১৯৯১ সালের দ্য প্লেস অফ ওয়ারশিপ (স্পেশাল প্রভিশন) এক্ট জ্ঞানব্যাপী মসজিদকে এই টানা হেঁচড়ার থেকে বাঁচাতে পারেনি। 

    বর্তমানে এটি ওয়াকফ সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত। কিন্তু সেই নথিভুক্তিকরণেও বিপুল গণ্ডগোল। একেই তো বারাণসী মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন এলাকার মধ্যের এই মসজিদ হলেও এর নথিভুক্তি হয়েছে বারাণসী জেলা -> বারাণসী উপজেলা – মান্ডুয়াডিহ এলাকায়, WAMSI ওয়েবসাইটের নথির নম্বর UP710100 , প্রপার্টি আইডি MQ001। একমাত্র বিশ্বেশ্বরদেবের সঙ্গে মোকদ্দমার রেফারেন্স দেখেই একে চিহ্নিত করা সম্ভব। তার উপর রেভেনিউ রেকর্ডে একে কবরস্থান বলে দেখানো ছিল। সেই সব ভুল দেখিয়েও একে নথিভুক্তিকরণ বেআইনি বলে কথা উঠেছে।[15]  এখনও কোর্টের হাতে এই কেস ঝুলে আছে। [16] ভবিষ্যতে কি হতে পারে তা অনুমান করা কঠিন।  এই ধরণের নথিভুক্তকরণের সমস্যা কিন্তু অজস্র। কলকাতা শহরের সম্পত্তির তালিকায় নদীয়ার শান্তিপুরের সম্পত্তি রেজিস্টার্ড হয়েছে। কোথাওই প্রায় সম্পূর্ণ তথ্য নেই। এদিকে খাস কলকাতা শহরের মধ্যে ২৬৭ টা কৃষিজমি রয়েছে নাকি ওয়াকফের হাতে, তার মধ্যে আপার সার্কুলার রোড বা বিধান সরণীর ঠিকানাও আছে।  সত্যিই কি সেই সব জমির ক্লাসিফিকেশন কৃষিজমি হিসেবেই নাকি এরও কিছুটা ভুল কে জানে! এই সব তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের বিবাদের সমাধান হবে তো? এই সমস্যা অবশ্যই স্টেট ওয়াকফ বোর্ডের চরম অদক্ষতার প্রকাশ। কিন্তু তার ফল আসলে ভুগবে কে সেটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। 

    ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতা হ্রাস

    নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের কর্তাদের ক্ষমতা বিভিন্নভাবে খর্ব করা হয়েছে। গত কয়েকদিনে সোশ্যাল মাধ্যমের বিভিন্ন পোস্টে বারে বারে উঠে এসেছে যে ওয়াকফ বোর্ডের ক্ষমতায় থাকেন ধনী, প্রভাবশালীরা। তাদের ক্ষমতা বাড়ল কি কমল তাতে সাধারণ মুসলমানের কিচ্ছু এসে যায় না। একদম হক কথা। ২০০৫-০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে ১৬০ কোটি টাকা বাজারদরের ওয়াকফ সম্পত্তি নথিভুক্ত ছিল। আজকে এর বাজারদর নাহক কয়েকগুণ বেড়েছে, আর এই সব সম্পত্তি যারা কন্ট্রোল করেন তাদের প্রতিপত্তি বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হতে লাগে না। একে অর্থ তায় টাকায় রাজনীতি আনে। কাজেই তাঁরা মহামহিম তো বটেই। সাধারণভাবে তাঁদের দুর্নীতিরও অবধি নেই। ২০১২ সালের কর্ণাটক ওয়াকফ বোর্ডের দু লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি সহ অজস্র অজস্র উদাহরণ আছে। আমাদের রাজ্যে গত শতকের শেষ দুই দশকে যখন প্রোমোটাররাজ মাথা চারা দিয়েছে তখন থিয়েটার রোড থেকে আলিমুদ্দিন স্ট্রীট অবধি অজস্র ওয়াকফ সম্পত্তি জলের দরে হাতবদল হয়েছে। এমনকি সেই আমলে আজকের মুখ্যমন্ত্রী সেদিনের বিরোধী নেত্রী তাই নিয়ে মামলাও ঠুকেছেন। যদিও তিনি ক্ষমতায় এসে সেদিনের দুর্নীতি নিয়ে আর সরব হননি। এমনকি এই রাজ্যে যথেষ্ট সম্পত্তির মালিক হওয়া স্বত্বেও সেই সব সম্পত্তি এমনই নয় ছয় হয়েছে যে আজকের দিনে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড তার ইমাম মুয়াজ্জিমদের ভাতা দিতে রাজ্য সরকারের দ্বারস্থ হয়। এত দুর্নীতি করেন যারা তাঁরা মহামানব। তাঁরাই ওয়াকফ ব্যবস্থাকে লাটে তুলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই তাঁদের ভাবনা আমাদের না ভাবলেও চলবে। তাই ওয়াকফ বোর্ডের প্রাপ্য আগেকার সম্পত্তির আয়ের ৭% এর জায়গায় ৫% হওয়া কোন সমস্যার না। আগে কোন সম্পত্তি ওয়াকফ কিনা তা নির্ধারণের দায়িত্ব ছিল ওয়াকফ বোর্ডের হাতে, বিবাদের নিষ্পত্তি হত ওয়াকফ ট্রাইবুনালের কাছে। বর্তমানে সেই ধারাটি তুলেই দেওয়া হয়েছে। এতে ওয়াকফ বোর্ডের একচ্ছত্র ক্ষমতায় আঘাত পড়ল। এসব বদলই অত্যন্ত স্বাগত।

    তবে একটাই সন্দেহ থেকে যায় যে যেসব রাজ্যে সরকার নিজেই সংখ্যালঘুর প্রতি প্রতিহিংসায় মত্ত, সেইসব রাজ্যে এই বদল কতটা শুভ হবে এখনই বলা মুশকিল। 

    বোর্ডে বাধ্যতামূলক অমুসলমান সদর

    তবু যখন দেখি যে সেন্ট্রাল ওয়াকফ কাউন্সিল আর রাজ্যগুলির ও দিল্লির ওয়াকফ বোর্ডে গঠন সংক্রান্ত নিয়মের মধ্যে সংশোধনী জুড়ে যায় যে এক্স-অফিসিও মেম্বার বাদে অন্য সব মেম্বারের মধ্যে অন্তত দু জন অমুসলমান থাকা বাধ্যতামূলক, তখন মনে প্রশ্ন জাগে। সরকারি আলোচনায় বলা হয়েছে যে এখন চাইলে বোর্ডের বেশিরভাগ সদস্যই অমুসলমান হতে পারে – কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে ১২ জন আর রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে ৭ জনই এখন অমুসলমান হতে পারে।[17] অথচ আমাদের সংবিধান অনুসারে সকল ধর্মীয় গোষ্ঠীর নিজেদের মতন করে নিজেদের কাজকর্ম পরিচালনা করার অধিকার আছে। সেই অধিকার কি কোথাও এই নতুন নিয়মে লঙ্ঘিত হচ্ছে? সরকারের তরফে বলা হচ্ছে এটা সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা। অথচ হিন্দুদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্যের আইন অনুসারে ধর্মীয় ট্রাস্টের সদস্যদের হিন্দু হওয়া বাধ্যতামূলক। তাহলে কি এই যুক্তিতে হিন্দু মন্দিরগুলির ট্রাস্টেও বাধ্যতামূলকভাবে অহিন্দু সদস্য রাখার আইন হবে অনতিভবিষ্যতে, আর হিন্দুরা সেটা বিনা প্রশ্নে মেনে নেবে? হিন্দুদের সব মন্দিরে সকল জাতের, সকল লিঙ্গের হিন্দুরই ভক্ত হিসেবে প্রবেশ এই ২০২৫ সালেও সুনিশ্চিত করা যায়নি, আর ট্রাস্টে কিনা অহিন্দুর প্রবেশ! সম্ভব! অথচ বদল যদি শুধু একপাক্ষিক হয়, তাহলে সেটা কতটা নায্য? 

    মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি

    তবে অবশ্যই ভালো লেগেছে ওয়াকফ বোর্ডগুলিতে বাধ্যতামূলক ভাবে মুসলমান মেয়েদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি। যদিও জানি যে মুর্শিদাবাদের চাষিবাড়ির বিবি হাসনুহানার তাতে কোন উপকার হবে না, তবু অন্তত একস্তরের মেয়েদের ক্ষমতায়নের সাহায্য তো হবে। এবং সেই সঙ্গে কেউ যদি ওয়াকফ-আলা-আওলাদ করেন তাহলেও তার নারী উত্তরাধিকারীদের অধিকার যেন ঠিকমত রক্ষা করা যায়। মুসলিম মেয়েরা তাঁদের ধর্মীয় আইনে মেয়েদের সমানাধিকার নিয়ে অনেকদিন ধরে লড়াই করছেন। তাঁদের পালে হয়ত কিছুটা হাওয়া দেবে। এছাড়াও ওয়াকফ আলা আওলাদের সম্পদ বংশ লোপ পাওয়ার পরে যে সব কাজে তাঁর সম্পদ ব্যবহার করা যাবে, তার মধ্যে ওয়াকিফ চাইলে পরে বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত মেয়ে ও অনাথদের কল্যাণের ব্যবস্থাও করে যেতে পারেন। এই বদল অবশ্যই ইতিবাচক।

    ওয়াকফ সম্পত্তির বাধ্যতামূলক পঞ্জীকরণ

    সেই সঙ্গে সরকার বলেছেন এই আইন জারি হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে সমস্থ ওয়াকফ সম্পত্তি, সরকারের বলে দেওয়া সব তথ্য সহ পোর্টালে  নথিভুক্ত করতে হবে। এটাও তথ্যের স্বচ্ছতার জন্য অতীব প্রশংসনীয়। এই স্বচ্ছতা অন্য সকল ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। হিন্দুদের ক্ষেত্রে সামান্য কয়েকটি রাজ্যেই এই তথ্য আংশিকভাবে দেখা যায়। এছাড়াও পাবলিক ট্রাস্টের তথ্যও পাওয়ার জন্য না আছে কোন কেন্দ্রীয় আইন না আছে সকল রাজ্যের তরফে তথ্য উন্মুক্ত করার ইচ্ছা। আমাদের রাজ্যেই এরকম কোন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। জনগণের মনে এরকম ধারণাও আছে যে হিন্দু মন্দিরে যত না স্থাবর সম্পদ, তার তুলনায় বহুগুণ বেশি অস্থাবর সম্পদ। সেই স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসেবও  আর তার থেকে যথেষ্ট আয় হচ্ছে নাকি এও তো জনগণের জানার কথা। তাহলে সেগুলোই বা নথিভুক্ত হবে না? অবশ্য লিখিত নথিই একমাত্র প্রমাণ হলে, আমাদের এখানে ওখানে গজিয়ে ওঠা কটা মন্দিরের আদৌ পঞ্জীকরণ করা যাবে তা জানা নেই। তখন কি সেই সব মন্দির বুলডোজার দিয়ে গুঁডিয়ে দেওয়া হবে? 

    ওয়াকফ পঞ্জীকরণের প্রশ্নে এও বলা আছে যে “No suit, appeal or other legal proceeding for the enforcement of any right on behalf of any waqf which have not been registered in accordance with the provisions of this Act, shall be instituted or commenced or heard, tried or decided by any court after expiry of a period of six months from the commencement of the Waqf (Amendment) Act, 2025:” একমাত্র যে ক্ষেত্রে আবেদনকারী কোর্টকে বোঝাতে সক্ষম হবেন যে তাঁর তরফে ছয় মাসের মধ্যে মামলা দায়ের না করতে পারার যথেষ্ট কারণ ছিল, তার ক্ষেত্রেই শুধু এই নিয়ম শিথিল হবে। দেবোত্তর ট্রাস্টের রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রেও অনুরূপ একটি রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা সংক্রান্ত ধারা আছে, তাই সকল ধর্মে সমদৃষ্টির দিক দিয়ে এখানে কিছু বলার নেই। তবে ‘এই আইন জারি হওয়ার ছয় মাস পরে আর কোন ওয়াকফ অধিকার সংক্রান্ত মামলা/ আবেদন দায়ের করা যাবে না’ এই ধারা বর্তমানে যেসব অনথিভুক্ত ওয়াকফ সম্পত্তির দলিল নেই বা যেগুলো বিতর্কিত, সেই সব সম্পত্তির ক্ষেত্রে গভীরতর সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। 

    নতুন সংশোধনী পড়তে বসলে এইরকম অনেক প্রশ্ন জাগে। অলমিতি বিস্তারেণ। কথায় বলে, অন্যের সঙ্গে তেমন ব্যবহারই কর, ঠিক যেমন ব্যবহার তুমি নিজে পেতে পছন্দ কর। কে জানে এই সংশোধনী তৈরি করার সময় এই কথাগুলো কেউ মাথায় রেখেছিলেন কিনা। সমস্যা হচ্ছে আজকের দিনে নয় নয় করেও ওয়াকফ বোর্ডের হাতে প্রায় প্রতিটি বড় শহরেই অনেক বাড়ি-জমি রয়েছে, যার বাজারদর আকাশছোঁয়া। এই বিপুল পুঁজির উপর ভাগ পাওয়ার লোভ কি সামলানো সহজ? এই সংশোধনী কি সত্যিই ধর্মীয় সম্পত্তি ও স্বার্থ রক্ষার জন্য, নাকি আসলে সরকার এর মাধ্যমে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত করতে চাইছে? অমুসলমান সদস্যের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তির আসল উদ্দেশ্য কি? এই সকল বদল কতটাই বা আমাদের সংবিধানের মূলসুরের অনুসারী? এক কলমেরর খোঁচায় দীর্ঘ ব্যবহারের ভিত্তিতে ওয়াকফকে (waqf by user) বাতিল করে দেওয়ার পিছনে কি শুধুই আইনের আধুনিকীকরণের প্রয়োজন নাকি এর পিছনে অন্য কোন গভীর খেলা আছে? হয়ত এই দেশে যদি প্রবল বিশ্বাসের পরিবেশ থাকত তাহলে অনেক কথাই উঠত না। কিন্তু আজকের রাজনৈতিক অবিশ্বাসের পরিবেশে সেই প্রশ্নগুলো জোরভাবে উঠে আসছে। অবশ্য যতই সৎ বা অসৎ উদ্দেশ্যে এই সব বদল করা হয়ে থাকুক, আসল কথাটা যে কতজন মানুষের হাতে ঠিক কোন ধরণের সাহায্য কত টাকা ব্যয়ে গিয়ে পৌছাল আর কত জন সাহায্য-ভিক্ষু মানুষের হাত সার্বিক চেষ্টার পরেও ছোঁয়া গেল না এই কথাটা সবকিছুর পরেও অজানাই থেকে যাবে। 

    আমাদের রাজ্য অস্থাবর ওয়াকফ সম্পত্তির বাবদে উত্তর প্রদেশের পরেই। উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিক জনহিতকর সার্বিক মনোভার সেই সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ভরসা হয়ে উঠতে পারত। অথচ তা হল কই? পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের দীর্ঘকালীন দুর্নীতির ইতিহাস রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতা তথা অক্ষমতারই নিদর্শন।[18]  সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের ভূমিকা, প্রয়োজনের সময় নিষ্ক্রিয়তা ও পরিস্থিতিবিশেষে বালখিল্যসুলভ আস্ফালনও বিশেষ ভরসা জোগাতে পারে না। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের দিশাহারা দশা। তবু পার্লামেন্টে আইন পাস হয়ে গেছে। নাগরিক তর্ক-বিতর্কের পরিসর ছেড়ে বর্তমানে এটা সাংবিধানিক লড়াই এর চেহারা নিয়েছে। এই লড়াই জেতার চেষ্টাই এখন একমাত্র চেষ্টা হওয়া দরকার। অবশ্যই সেই লড়াই হোক অহিংসার পথে।   



    সূত্র নির্দেশ

    [1] https://www.mcgm.gov.in/irj/go/km/docs/documents/D%20Ward/Heritage-Sites/60_Legacy%20of%20D%20Ward_Article_Sir%20Fazalbhoy%20Currimbhoy%20Ebrahim%2C%20Baronet%2C%20CBE.pdf?utm_source=chatgpt.com

    [2] https://khojawiki.org/Currimbhoy_Ebrahim

    [3] https://caravanmagazine.in/vantage/bombay-high-court-cbi-probe-ambani-land-antilia 

    [4] https://www.thehindu.com/news/cities/mumbai/hc-notice-to-wakf-board-over-antilia-land/article19327442.ece/amp

    [5] https://www.newindianexpress.com/nation/2017/Nov/28/mukesh-ambani-built-antilia-on-orphanage-land-illegally-sold-in-2005-maharashtra-state-board-of-wak-1712977.html 

    [6] https://ummid.com/news/2017/Novembr/29.11.2017/mukesh-ambani-illegal-aqcuired-wakf-land.html

    [7] https://www.indiatoday.in/india/story/antilia-land-sale-case-bombay-high-court-dismisses-petition-against-mukesh-ambani-331533-2016-07-26

    [8] https://kbssidhu.substack.com/p/orphanage-to-opulence-the-contentious

    [9] https://www.indiacode.nic.in/handle/123456789/1984

    [10] https://prsindia.org/files/bills_acts/bills_parliament/2024/The_Waqf_(Amendment)_Bill,_2024.pdf

    [11] https://www.minorityaffairs.gov.in/WriteReadData/RTF1984/7830578798.pdf

    [12] https://enewsroom.in/waqf-amendment-bill-2024-muslim-property-rights/?utm_source=chatgpt.com

    [13] https://www.thehindu.com/news/national/other-states/gyanvapi-mosque-near-kashi-vishwanath-temple-not-a-waqf-property-counsel-for-temple/article65366132.ece

    [14] https://timesofindia.indiatimes.com/city/allahabad/gyanvapi-registered-in-gazette-as-waqf-property-on-december-26-1944/articleshow/93335767.cms

    [15] https://www.hindustantimes.com/india-news/registering-the-mosque-as-waqf-property-fraud-hindu-side-in-gyanvapi-case-101657910225299.html

    [16] https://www.scobserver.in/cases/gyanvapi-mosque-dispute/

    [17] https://prsindia.org/billtrack/the-waqf-amendment-bill-2024


    [18] https://www.milligazette.com/Archives/01102002/0110200270.htm


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | ৮৯২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • PRABIRJIT SARKAR | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৪৪542421
  • খুব কাজের আলোচনা। আগ্রহী সকলের পড়া উচিৎ।
  • | ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ২১:১৮542422
  • এই লেখাটার অপেক্ষায়ইছিলাম। 
     
    অ্যান্টিলিয়া নিয়ে সেই কুনাল কামরা বলেছিল ভার্টিকাল ভিকাস খাড়া কর দিয়া।   তা আম্বানিদের তো এসব চাইই আর সরকার সেখানে দালালের কাজ করে। 
     
    এই যে কলকাতায়  থিয়েটার রোড থেকে আলিমুদ্দিন পর্যন্ত ওয়াকফ সম্পত্তি সব জলের দরে হাতবদল হয়েছে এগুলোর মধ্যে ববি হাকিমের ভাল শেয়ার আছে  শুনেছিলাম। সেটা সম্ভব হয়েছে সরকারে থাকার জন্য। 
     
    মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি ভাল বটে তবে খুব বেশী আশা না করাই ভাল। রাজারহাটের ওদিকে খড়িবাড়ি পর্যন্ত প্রচুর জমিতে মেয়েদের মালিকানা আছে। কিন্তু সে অধিকাংশই খাতায় কলমেই।  বিক্রির সময় সই বা টিপছাপ দিতে হয়, ব্যাসস। 
     
    ওবাবা এই তো কদিন আগেই খবরে পড়লাম কাটোয়ার এক মন্দিরে অব্রাহ্মণদের  গর্ভগৃহে ঢুকে পুজো করতে দেয় না বলে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। তো সেই সূত্রে মন্দির কমিটি জানিয়েছিল এটা তাদের সাড়ে তিনশো বছরের 'ঐতিহ্য'।  এই এত তো শুনি পশ্চিমবঙ্গে জাতপাত নেই হ্যানো ত্যানো - তা এই হল নমুনা। দেবোত্তর সম্পত্তির ব্যবস্থাপনার অহিন্দুদের রাখার কথা বললেই দেখো না মাথায় গেরুয়াফেট্টি বাঁধা খুনীর দল বাড়িতে হাজির হয়ে যাবে। 
     
    এই দাঙ্গাগুলো হয় বা করানো হয় ছোটখাট সেটেলমেন্টের জন্য। দাঙ্গা একটা ভয়ঙ্কর স্মৃতি তৈরী করে, ইন্ডিভিজ্যুয়াল এবং কালেকটিভ। সেই সুযোগে বেশ কিছু জমি নির্বিচারে হাতবদল হয়ে যায়।  
  • Asim Bhattacharyya | ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৫২542426
  • অসাধারণ তথ্য নির্ভর লেখা...
  • প্রতিভা | 2401:4900:1c64:ec2f:81a:8b77:1072:***:*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৫৮542428
  • খুব তথ্যবহুল লেখা। যথেষ্ট প্রাঞ্জল। কিন্তু হরিয়ানায় সৎসঙ্গের বিশাল প্রপার্টি দেখার পর, পাঞ্জাবেও ইষ্টভৃতি বিপুল চালু আছে দেখে, এই পরিবর্তনের পেছনে সদিচ্ছা আছে বলে আশা নেই। ওয়াকফ সম্পত্তি যতটা বিপুল বলে মনে হচ্ছে, হিন্দু ধর্মগুরুদের সম্পত্তির যোগফল তাকে ছাড়িয়ে বহুগুণ হবে। চার্চের সম্পত্তিও বিশাল। যদি এমন আইন হত যাতে সমস্ত ধর্মীয় সম্পত্তির সুষ্ঠু প্রক্রিয়াকরণ হবে, তাহলে অবশ্যই সমর্থন করতাম।
    আর একটা কথা, এই যে ওয়াকফের সম্পত্তি নিয়ে দুর্নীতি, এটার কথা প্রথম পড়ি শিক্ষিত মুসলমানদের লেখায়। কেউ চিকিৎসক,  কেউ অধ্যাপক। 
    আইন যদি চোরাগোপ্তা মতলবে না হয়ে থাকে, তাহলে মানুষ সমর্থন করে।
    সুপ্রিম কোর্ট বোধহয় স্টে অর্ডার দেবে। আজকের কাগজ দেখে তাই মনে হল। তাদের যুক্তগুলো খুঁটিয়ে পড়তে হবে।
     
    কিন্তু এই ওয়াকফ আইনকে সামনে রেখে যে বা যারা দাঙ্গার আগুন জ্বেলেছে তাদের সর্বনাশ হোক! 
  • প্রতিভা | 2401:4900:1c64:ec2f:81a:8b77:1072:***:*** | ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৫৯542429
  • রেটিং দিতে জানি না। নাহলে ৫ ই দিতাম।
  • PRABIRJIT SARKAR | ১৭ এপ্রিল ২০২৫ ১৪:০৪542430
  • পছন্দ তে চাপ দিয়ে পানের মত লাভ সাইনে চাপ দিন 5 দেওয়া হবে।
  • Rouhin Banerjee | ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০১:৪৩542438
  • পুরোবিষয়টা সহজ করে বুঝিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ স্বাতীদি।
     
    এই সরকারের কোনোরকম সদিচ্ছা আছে এটা এক ফোঁটাও বিশ্বাস করিনা। স্রেফ অ্যান্টিলিয়াকে ঝামেলামুক্ত করতেই এটা করা হয়েছে,এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে। আর বাকি সব পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া।
  • চিত্রগুপ্ত | 207.244.***.*** | ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৪:৫১542439
  • আরে রৌহিন যে! অনেকদিন পর। তা বেশ বেশ।
  • Ranjan Roy | ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:১৯542440
  • এই পরিশ্রমসাধ্য তথ্যনিষ্ঠ বিশ্লেষণ লেখার জন্য কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।
     
    তবে এই আইন নিয়ে আমার ব্যক্তিগত মত প্রতিভা ম্যামের মত।
  • স্বাতী রায় | 2001:4490:4051:cd83:6549:12c0:ea0:***:*** | ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ১০:২৯542441
  • যাঁরা পড়লেন তাঁদের অনেক ধন্যবাদ। 
     
    আজকের কাগজের খবর , সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিতে পারে জেনে সরকার পক্ষ থেকে নাকি যে তিনটি ধারা নিয়ে অবজেকশন সেগুলো বাদ দিয়ে নাকি কার্যকর করার কথা ভাবছে। কোর্টের আপত্তি করা তিনটি ধারা হল, দীর্ঘ কাল ধরে ব্যবহারের ভিত্তিতে ওয়াকফ বলে ইতিপূর্বেই ঘোষিত হওয়া সম্পত্তিকে নাকচ করা , সরকারের সম্পত্তি হলে ওয়াকফ গণ্য করা যাবে না এই বিধান, আর ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের ঢোকানো। 
     
    ইতিমধ্যে আমার এক বন্ধু জানিয়েছেন অমুসলমান হলে কোন সম্পত্তি ওয়াকফ করা যাবে না এও আশ্চর্য কথা। তাহলে কি  পার্সোনাল সম্পত্তি আমি যে ভাবে চাই সেভাবেই দিয়ে যেতে পারব না? এও কি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়? মুসলিম না হলে মসজিদ বানানোর  জন্য জমি দেওয়া মানা ? তাহলে কি কোন অহিন্দু ও আর  মন্দির তৈরি করতে পারবেন না ? এন্টনি ফিরিঙ্গির দেশে ?  ভাবতে গিয়ে মনে হল এও হয়ত সেই antilia কে বাঁচানোর জন্যও। যেহেতু সেই জমি আদতে গোয়ালিয়রের রাজার দেওয়া। কে জানে! ব্যক্তিগত ভাবে আমি মন্দির মসজিদের চেয়ে জাত ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্য স্কুল, হাসপাতাল এসব দেশে বহুগুণ বেশি দরকার বলে মনে করি, তবু এই নিজের সম্পত্তি যা খুশি করতে পারব না এটাও খুব স্বস্তি দিল না। এই পয়েন্ট নিয়ে অবশ্য আদালত কোন আপত্তি তোলে নি। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন