

যুদ্ধ শব্দটার সাথে পরিচয় দূর শৈশবে। সন ১৯৬৫। রাস্তায় বাতিতে ঠুলি পড়েছিল। ঘরের জানালায় ভারি পর্দা, একটি আলোর রশ্মিও যেন বাইরে না যায়। সাইরেন বাজলেই ছুটে ঢুকে যেতে হবে কাছাকাছি বাড়ির ভিতরে। সাবধানে মুখ খুলো, কে জানে কোথায় শুনে নেবে কোন গুপ্তচর। যুদ্ধের আরেক নাম আতঙ্ক।
বয়স বাড়তে বাড়তে জানলাম, এমন জীবন আছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রেই যাপিত হচ্ছে, না পারলে মরে যাচ্ছে কিন্তু যতক্ষণ পারছে, যুদ্ধক্ষেত্রেই বাঁচছে, কারণ তার আর কোথাও যাওয়ার যায়গা নেই। সে জীবনের কথা ভাবলেও আমার দম বন্ধ হয়ে আসে, কিন্তু ঐ মানুষগুলো সেই জীবনেই চলতে থাকেন শেষ মুহূর্তটি আসা পর্যন্ত।
একসময় ভাবতাম এমন যুদ্ধক্ষেত্র ক্রমাগত কমে আসবে। সেই জন্যই যুদ্ধ চলছে। এমনও শুনেছি - যুদ্ধই কমাবে ভবিষ্যতের যুদ্ধের সম্ভাবনা। বয়সের বেলা ঢলে এসে দেখতে পাচ্ছি বিপরীত ছবিটিকেই। জেনেছি এখন, কোথাও যুদ্ধ থামলে আবার অন্য কোথাও যুদ্ধ শুরু হবে। যুদ্ধ দরকার, নানা জনের – নানা কারণে। সেই সব কারণের কথা বিস্তারিত শোনা যায়, দেখা যায়, এমনকি বিশেষ কোন চেষ্টা ছাড়াই। আলোচনা হলেই দেখি, সকলেই জানেন সে’সব।
শৈশবে পড়া একটা শব্দকে দেখি, বসেছে সে আসর জাঁকিয়ে, উৎস-পরিচয় ছাপিয়ে, পরিবার থেকে বের হয়ে দেশ-কালের সীমানা পার করে, ভেনডেটা, প্রতিশোধ চাই, প্রত্যাঘাত। তুমুল উচ্ছাসে, উদ্দীপনায় আসর জাঁকিয়ে চলে যুদ্ধের উন্মাদনা। আমাদের ভিতরের হিংস্র হায়েনারা বেরিয়ে আসে। দলে, দলে। সমাজমাধ্যমে সতর্ক করে দেওয়া হয় - এখন যুদ্ধের কাল। এ সময় যারা যুদ্ধের বিপক্ষে কথা বলবে তারা হয় মূর্খ, না হয় ধান্দাবাজ, খুব বেশি সম্ভাবনা যে তারা এই দুটোই। আবেগের তারতম্যে দেশদ্রোহী বলেও তাকে দেগে দেওয়া যেতে পারে।
আমরা কি আসলেই বসে থাকি এমন দিনের জন্য? যুদ্ধের নির্ঘোষে বোধ হয়, সেই কোন দূর অতীত আমাদের রক্তে ঢেউ তোলে। ভালো লাগে, বড়ো ভালো লাগে! দলবদ্ধ শিকারের তুমুল আনন্দ - আহা! নির্দ্বিধায়, বিবেকের প্রবল অনুমতিতে।
হয়তবা, প্রতিটি যুদ্ধের খবর আমাদের তৃপ্তি দেয়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, খুঁজে খুঁজে আমরা পড়ি সে-সব, দেখি, আলোচনা করি, গালি দেই, আমাদের দুর্বল হৃদয়গুলো তেতে ওঠে, আমাদের নিজের নিজের রায়ে ঘোষিত অপরাধীদের ধ্বংস কামনায় আমরা একাত্ম হই। প্রাগৈতিহাসিক সমবেত আক্রমণের উল্লাস-ধ্বনি আমাদের ফিরিয়ে দেয় - যুদ্ধ, আহা যুদ্ধ!
যুদ্ধ এসে গেলে, যুদ্ধের সাথে যুক্ত হয়ে যেতে পারলে আমরা আর একা, বিপন্ন বোধ করি না। আমাদের ব্যর্থতাগুলো মুছে ফেলার একটা অব্যর্থ সুযোগ এসে যায়। অব্যর্থ - কারণ আমরা জানি, যুদ্ধে আমাদের জয় অনিবার্য। আমরা অবশ্যই জানতে পারব যে আমরাই যুদ্ধ জিতেছি। শুধু আমার একান্ত আত্মজন যেন আহত-নিহত না হয়, তা হলেই হবে।
আমরা বলতে ভালোবাসি, যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করতে ভালোবাসি - যুদ্ধ ছাড়া আমাদের শান্তি নেই, শান্তি আসবে না। আর সবচেয়ে বেশি ভালবাসি বলতে - এ যুদ্ধ আমরা চাইনি, আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবুও আশা করি, মূর্খের মতনই হয়ত, উন্মত্ততা শেষ না হলেও, কমবে, যুদ্ধ শেষ না হলেও কমে আসবে, অনেক, অনেক কমে আসবে। চূড়ান্ত যুদ্ধবিরোধী সেই মানুষটির জন্মদিনে অন্তত এই আশাটুকুর কথা আমায় বলতেই হবে, এই প্রবল যুদ্ধপিয়াসী পৃথিবীতে!
বৈশাখ ২৫, ১৪৩২
চৈতালী লাহিড়ী | 103.17.***.*** | ০৯ মে ২০২৫ ২২:০২731193
প্রতিভা | 2401:4900:1c22:60f7:f96c:1d0c:8e40:***:*** | ১০ মে ২০২৫ ০০:২৩731202
b | 117.238.***.*** | ১১ মে ২০২৫ ২১:৫২731277
m | 2a12:a800:2:1:185:241:208:***:*** | ১২ মে ২০২৫ ১৬:৪৩731296
অভিজিৎ। | 103.87.***.*** | ১৮ মে ২০২৫ ১৮:৫০731460
অপু | 2402:3a80:1983:fb89:278:5634:1232:***:*** | ১৯ মে ২০২৫ ০০:৫৭731473
Neil Ghosh | 2600:387:c:6e19::***:*** | ১৪ জুন ২০২৫ ২৩:২১732010