এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • অপরাধ না করেও শাস্তির বিধান

    শুভজিৎ সিংহ
    আলোচনা | সমাজ | ১৫ মে ২০২৫ | ২৯ বার পঠিত
  • ছবি: রমিত ও ai


    নিরপরাধীদের জীবনের অধিকার হরণের দায় কার?

    It is better ten guilty persons escape, than one innocent suffers
    – English Jurist William Blackstone, 1760


    একমাস পেরিয়ে গেছে, ৩ এপ্রিল (২০২৫) শীর্ষ আদালতের এক সিদ্ধান্ত বয়ে এনেছে গভীর সামাজিক অভিঘাত। বিপুল প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির জন্য বাতিল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনকৃত (এসএসসি) ২০১৬-র পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই। পাঁচ বছরেরও বেশি চাকরি করার পর রাতারাতি চাকরিচ্যুত হতে চলেছেন ২৫৭৩৫ জন শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী। জালিয়াতিতে অভিযুক্ত রাজ্য সরকারের অতি উচ্চতর পদাধিকারীরা। সংশ্লিষ্ট (সাবেক) মন্ত্রীসহ তাঁরা জেলে বন্দি রয়েছেন। নানান সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের নির্যাস– এসএসসি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বিপুল দুর্নীতির কারণে এবং কমিশনের অসহযোগিতায় জালিয়াত বা দোষী এবং নির্দোষী নিয়োগপ্রাপ্তদের বাছাই করার তথ্যপ্রমাণ ছিল না, তাই সমগ্র প্যানেল বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে আদালত। সম্প্রতি রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে রায়টি ফের পর্যালোচনার জন্য আবেদন জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতে।

    • ‘সমগ্র শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া যদি এমন ভয়ানক কলুষিত হয়ে যায় যাতে স্পষ্ট সিদ্ধান্তে আসার মতো তথ্যই পাওয়া না যায়– তবে গত্যন্তর কোথায়’, অপরাধী (সম্পাদকীয়), আনন্দবাজার পত্রিকা, ৫ এপ্রিল ২০২৫ 
    • ‘যেহেতু যোগ্য ও অযোগ্য শিক্ষকদের আলাদা করে দেখার গ্রহণযোগ্য কোনও তথ্যপ্রমাণ ছিল না। তাই যোগ্যদেরও চাকরি গেল এবং তাঁদের জীবনে বিরম্বনা নেমে এল’, পথে শিক্ষক শিক্ষিকারা (সম্পাদকীয়), দৈনিক স্টেটসম্যান, ৭ এপ্রিল ২০২৫


    উল্লেখ্য, আদালত ওই প্যানেল থেকে চাকরি পাওয়া শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের দুই ভাগে চিহ্নিত করেছে– দোষী বা জালিয়াতি করে নিয়োগপ্রাপ্তরা কলঙ্কিত (Tainted) এবং সুস্থ প্রতিযোগিতা করে নিযুক্তরা বা নির্দোষীরা অকলঙ্কিত (Untainted)। ক্যালকাটা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত বছর ২২ এপ্রিলে (২০২৪) সমস্ত প্যানেলটি বাতিল করেছিল, তার বিরুদ্ধে, সমস্ত নিযুক্ত প্রার্থীরা (কলঙ্কিত এবং অকলঙ্কিত) এবং রাজ্য সরকার আপিল করে শীর্ষ আদালতে। সমস্ত প্যানেল বাতিল না করে, শুধুমাত্র দোষীদেরই শাস্তির আওতায় আনা হোক, এই ছিল রাজ্য সরকার এবং অকলঙ্কিত প্রার্থীদের আবেদন (page: 3, SC Judgement)। 

    হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিমকোর্ট, মামলাটির বিচার করতে গিয়ে, নানান তথ্য-প্রমাণ থেকে তাদের পর্যবেক্ষণে কি জানিয়েছে, কেন এই আদেশ, কেনইবা দোষীদের সঙ্গে নির্দোষীদেরও জীবিকার অধিকার হরণ করা হলো, সে ব্যাপারে কথা বলা যেতে পারে। 

    প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়ার ঘটনাক্রম: 

    • বিধিবদ্ধ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন, ২০১৬ সালে, সংশ্লিষ্ট আইন-বিধি অনুযায়ী, ১৮৬১৭ জন সহ-শিক্ষক (IX-X এবং XI-XII), ৬০২৩ জন শিক্ষাকর্মী (Gr C, Gr D) নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে (Para 6, Page 4, SC Judgement)। 
    • ফলাফল ঘোষণার আগেই, কলকাতা হাইকোর্টে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বৈশাখী ভট্টাচার্য প্রথম মামলাটি দায়ের করেন, তবে সেটি ছিল বয়স শৈথিল্যকরণের আবেদন না মানার জন্য (Para 6, page: 5 SC Judgement)। 
    • ২০১৭ -এর মে, জুন, জুলাইতে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল বেরোয়, কাউন্সেলিং-এর পর, চূড়ান্ত সফল তালিকা প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও ২০১৮ সালের আগস্টে, এরপর নিয়োগ দেওয়া হতে থাকে। (Gr D এর তালিকা পরে আবার বেরোয়)। 
    • ২০২১ সাল থেকে ব্যক্তিগত নিয়োগ দাবি করে ও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় জালিয়াতির অভিযোগ এনে, অন্যান্য মামলা দায়ের হয় (Para 6, page: 5)।
    • সমগ্র প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি কাজকর্ম ও বেআইনি অর্থ লেনদেনের অভিযোগে হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ ২১ নভেম্বর ২০২১ (এবং অ্যাপিল কোর্ট ৬ ডিসেম্বর ২০২১) CBI তদন্তের আদেশ দেয়। 
    • জালিয়াতির অভিযোগে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বে চার সদস্যের অনুসন্ধান কমিটিকে শিক্ষাকর্মী (Gr. C ও Gr. D) নিয়োগ তদন্তের আদেশ দেয়।


    প্রার্থী নির্বাচন ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে জালিয়াতি (Para 20-42, SC Judgement):

    জাস্টিস আর কে বাগ কমিটি এবং CBI -এর তদন্তে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গভীর দুর্নীতির হদিস এবং প্রমাণ পায় আদালত,

    বাগ কমিটির সুপারিশ: (অব:) জাস্টিস আর কে বাগ কমিটি তদন্তে জানিয়েছেন, শিক্ষাকর্মী (Gr.C এবং Gr.D) নিয়োগে কমিশনকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী একটি উপদেষ্টা কমিটি গড়তে আদেশ দেন, যা নিয়ম বিরুদ্ধ ছিল। মনোনয়নের কাউন্সেলিং এবং সুপারিশের জন্য কেন্দ্রীয় এসএসসির (কমিশনের) তদানীন্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, নিয়ম ভেঙে, এসএসসির আঞ্চলিক কমিটিগুলোর সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করে সামগ্রিক পরিকাঠামো তছনছ করেছিলেন। তদন্ত কমিটি, সুবীরেশ ভট্টাচার্য এবং আঞ্চলিক কমিটিগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ডঃ শর্মীলা মিত্র, ডঃ মহুয়া বিশ্বাস, শুভজিত চট্টোপাধ্যায়, শেখ সিরাজুদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনানুগ দায়িত্ব পালন না করার জন্য বিভাগীয় তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে এবং কেন্দ্রীয় এসএসসির প্রোগ্রাম অফিসার সমরজিৎ আচার্য এবং (তদানীন্তন) উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, অধ্যাপক সৌমিত্র সরকার, অশোক কুমার সাহা, কল্যাণময় গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ড বিধির 465/417/468/34 অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতেও সুপারিশ করেছেন (Para 21, page: 20-23)। 

    তদন্ত সংস্থার রিপোর্ট: তাদের বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্টে CBI জানিয়েছে, প্রার্থীদের উত্তরপত্র বা OMR শিটের স্ক্যানিং এবং মূল্যায়নের জন্য M/s. Nysa Communications Pvt. Ltd.কে দায়িত্ব দেয় এসএসসি (কমিশন)। এই কাজের বরাত দেওয়া নিয়মানুগ ছিল না। এই কোম্পানি আবার কাজটি করতে নয়ডার M/s Data Scantech Solutions-কে দায়িত্ব দেয় (Sub-contract)। এ বিষয়ে কমিশন অজ্ঞাত ছিল বলে জানিয়েছে। নিযুক্ত সংস্থা, OMR শিটের স্ক্যানিং করে ও কমিশনের দেওয়া মূল্যায়ন মানদণ্ডের (Answer Key) ভিত্তিতে তার মূল্যায়ন করে। Data Scantech এবং এসএসসির অফিসের সার্ভারে থাকা তথ্য এবং Nysa-র প্রাক্তন কর্মী পঙ্কজ বনসলের গাজিয়াবাদের বাড়ি থেকে তথ্য-সমৃদ্ধ হার্ড-ডিস্ক উদ্ধার করা হয়। বনসলের হার্ড-ডিস্কে OMR শিটের (স্ক্যানিং করা) তথ্য এবং মূল্যায়নের ফলাফলের তথ্য পাওয়া যায়। এর সঙ্গে Data Scantech -এর অফিস থেকে উদ্ধার করা (ফলাফলের) তথ্য মিলে যায়। অথচ, তা এসএসসির অফিস থেকে উদ্ধার করা (ফলাফলের) তথ্যের হেরফের (অর্থাৎ প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরে গোলমাল) ধরা পড়ে। জালিয়াতি কমিশনের অফিসে করা হয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। CBI-এর মতে, জালিয়াতি লুকানোর উদ্দেশ্যে, কমিশন আসল OMR শিট নষ্ট করে ফেলে এবং তাদের সার্ভার থেকে OMR শিটের স্ক্যানিং করা তথ্যও মুছে দেয় (Page: 23 – 26)। তদন্তে প্রার্থীদের পরিচয় (Roll No, Venue Code, Booklet Serial Number, Subject Code, Category, Gender, Medium and Response Code) পাওয়া গেছে এবং নিশ্চিতভাবে নম্বর জালিয়াতি করা অযোগ্য প্রার্থীদের চিহ্নিত করা গেছে [Para 22(12), page: 25]। এসএসসির কিছু কর্মী এবং Nysa-র মধ্যে ইমেল আদানপ্রদানে জালিয়াতির পরিকল্পনাও জানা গেছে। যে ধরণের দুর্নীতি প্রমাণ পাওয়া গেছে তা হলো, র‍্যাঙ্ক জাম্পিং (নিচের প্রার্থীকে উপরে তুলে আনা), নম্বর হেরফের করে যোগ্য প্রার্থীকে নামিয়ে দেওয়া, কোনও প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া সত্ত্বেও (সাদা OMR) কিছু প্রার্থীকে নম্বর পাইয়ে দিয়ে নিয়োগ দেওয়া, কমিশনের সুপারিশ তালিকার বাইরে থাকা কয়েকজনকে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃক স্বেচ্ছাচারী অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া, প্যানেলের মেয়াদকাল পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নিয়োগ দেওয়া। 

    প্রাপ্ত তথ্য থেকে, CBI নম্বর জালিয়াতি করা সমস্ত কলঙ্কিত প্রার্থীদের নির্দিষ্ট তালিকা পেশ করেছে– (ক) ৯৫২ জন শিক্ষক (IX-X), (খ) ৯০৭ জন শিক্ষক (XI-XII), (গ) ৩৪৮১ জন Gr C শিক্ষাকর্মী, (ঘ) ২৮২৩ জন Gr D শিক্ষাকর্মী অর্থাৎ মোট ৮১৬৩ জনের নম্বরে হেরফের ঘটানো হয়েছে [Para 22(12), page: 25 এবং 22(18) (a), (d) & (e), page: 27] এবং কমিশনের সুপারিশ ছাড়া অতিরিক্ত নিয়োগের সংখ্যাও নিশ্চিতভাবে জানানো হয়েছে– কমিশনের সুপারিশ ছিল, মোট ২২৯৩০ জনের, অথচ নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ২৫৭৩৫ জনকে অর্থাৎ মোট ২৩৫৫ জন সুপারিশ ছাড়াই নিযুক্তি দিয়েছে পর্ষদ [১০৭১ (রায়ে উল্লিখিত) জন শিক্ষক (IX-X), ১৯৯ জন শিক্ষক (XI-XII), ৪১৬ জন এবং ৬৬৯ জন শিক্ষাকর্মী (Gr C ও Gr D)] । [Para 37, page: 35]। 

    ২০১৬-র নিয়োগ মামলার সমস্ত তদন্ত শেষ হয়েছে বলে CBI তাদের ০৫/০২/২০২৪ তারিখের চূড়ান্ত রিপোর্টে জানিয়েছে (“disposed – off from investigation”, Para 22(21), page: 28)। 

    আদালতে স্পষ্ট হয়েছে: 

    তদন্ত সংস্থা আদালতকে জালিয়াতি নিয়োগের চিত্র তুলে ধরেছে– নম্বর জালিয়াতি করা হয়েছে ৮১৬৩ জনের (যাদের মধ্যে সবাই নিয়োগ পেয়েছে কিনা তা কমিশন নির্ধারণ করতে পারবে) আর সুপারিশ ছাড়া অতিরিক্ত নিয়োগ হয়েছে ২৩৫৫ জনের। এসএসসি অকপটে স্বীকার করেছে সমস্ত অভিযোগ। ৬৫১৫ জন প্রার্থীর বেআইনি নিয়োগ হয়েছে মেনে নিয়ে তারা জানিয়েছে ৬২৭৬ জনকে শনাক্ত করতে পেরেছে। যদিও, হাইকোর্টে তাদের হলফনামায় বারবার তথ্য সংশোধন করেছে। সাম্প্রতিককালেও ফের পালটেছে সংখ্যাগুলো (Para 23-27, page: 28-31, SC Judgement)। সুতরাং, এটুকু বলা যেতেই পারে, তথ্য অনুযায়ী মোট নিয়োগের ২৫৭৩৫ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নিয়োগপ্রাপ্তরা নির্দোষ। মনে রাখতে হবে, ডিভিশন বেঞ্চ মেনে নিয়েছেন, শিক্ষক ও গ্রুপ-সি শিক্ষাকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সংখ্যক যোগ্য প্রার্থী ছিলেন, সৎভাবেই চাকরি পেয়েছিলেন (Para 329, Div. Bench Judgement)। 

    তবে, দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, কমিশনের এবং পর্ষদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সুগভীর এবং এর ফলে সামগ্রিকভাবে প্রায় ২২ লক্ষ পরীক্ষার্থীই প্রতারিত হয়েছেন বলা যায়। যেসব উচ্চতম পদাধিকারীরা এই দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের আইনানুগ শাস্তি বাঞ্ছনীয়। পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি, পরিচালনা বিধি অনুসারে হলেও, সফল প্রার্থীদের তালিকা তৈরির সময় থেকেই মূলত জালিয়াতি শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আলিপুর ট্রায়াল কোর্টে মামলা চলছে। অতএব, যোগ্য এবং অযোগ্য আদৌ আলাদা করা যায় নি– এই ব্যাখ্যাটি নেহাতই সরলীকরণ বলা যেতে পারে। 

    বারংবার বলা হলেও আদালতে সত্য তথ্য পেশে স্বেচ্ছাকৃত অনিহার ফলে বেআইনি নিয়োগের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণে বিভ্রান্তি বাড়িয়ে সমস্ত চিত্রটিই ধূসর করেছে কমিশন। অসদ্দুশ্যেই, আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও (বাজেয়াপ্ত হার্ড-ডিস্ক থেকে) স্ক্যানিং করা OMR শিটের তথ্য কমিশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়েছে, রাজ্য সরকার, কমিশন এবং বোর্ডের ক্রমাগত অসহযোগিতার জন্যই এই জটিল সঙ্কটের সুরাহা মেলেনি। যদি চিহ্নিতকরণ সম্ভব নাই হয়, তাহলে কিসের ভিত্তিতে, আদালতের আদেশ অনুযায়ী, দোষীদের চিহ্নিত করে এখনই চাকরি বাতিলসহ তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ উদ্ধার করা হবে? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিলে (২০২৫), পঠনপাঠন চালানোর জন্য, শুধুমাত্র যোগ্য শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত বাড়িয়েছে সুপ্রিমকোর্ট। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, পর্ষদ ১৭ এপ্রিলে সুপ্রিমকোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, মোট ১৭২০৬ জন শিক্ষক যোগ্য, যদিও, ২২ এপ্রিল (২০২৫) কমিশন যোগ্য (শিক্ষক) হিসেবে ১৫৪০৩ জনের তালিকা প্রকাশ করেছে। আশ্চর্যজনকভাবে, নির্দোষী শিক্ষাকর্মীদের জন্য কোনও আবেদনই জানানো হয় নি। কেন, তার ব্যাখ্যা নেই।

    উপরোক্ত তথ্যপ্রমানের ভিত্তিতে শীর্ষ আদালত কি নির্দেশ দিলেন (Conclusions, page: 39 – 41, SC Judgement): 

    • কলঙ্কিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখা হয়েছে অর্থাৎ চাকরি বাতিল এবং তাদের প্রাপ্ত বেতন ও অন্যান্য অর্থ, ১২% সুদসহ, চার সপ্তাহের মধ্যে ফেরত দিতে হবে, ফৌজদারি মামলাও চলবে তাঁদের বিরুদ্ধে (Para 45, page: 39)।
    • যেসব প্রার্থীদের সুনির্দিষ্টভাবে কলঙ্কিত বলে প্রমাণ করা যায় নি, তাদের (অর্থাৎ নির্দোষীদের) নিয়োগেরও অবসান (Termination) করা হয়েছে (For candidates not specifically found to be tainted, the entire selection process has been rightly declared null and void due to the egregious violations and illegalities, which violated Articles 14 and 16 of the Constitution. As such, the appointments of these candidates are cancelled)। তবে, ইতিমধ্যেই নিযুক্ত প্রার্থীদের প্রাপ্ত কোনও অর্থ (বেতন) ফেরত দিতে হবে না। আর কোনও নিয়োগও হবে না উক্ত তালিকা থেকে (Para 46, page: 39)।
    • আদালত অবশ্য, নির্দোষীদের (অর্থাৎ অকলঙ্কিত) কিঞ্চিৎ অনুগ্রহ করছেন। তাঁদের মধ্যে যাঁরা আগে রাজ্য সরকারের কোনও দফতরে বা স্বশাসিত সংস্থায় কাজ করতেন, তাঁরা তাঁদের পূর্ববর্তী দফতরে / সংস্থাগুলিতে যোগ দিতে পারবেন। তবে, শিক্ষক / শিক্ষাকর্মী হিসেবে স্কুলে কাজ করার সময়কালের জন্য তাঁরা মাইনে পাবেন না (Para 47, page: 40)। এছাড়া তাঁরা বয়স ছাড়সহ পরবর্তী নতুন পরীক্ষায় বসতে পারবেন (Para 49, page: 41)। 
    • একমাত্র ক্যান্সার আক্রান্ত সোমা দাসকে মানবিক কারণে চাকরি চালিয়ে যেতে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। নির্দোষ প্রতিবন্ধীরাও একই ভিত্তিতে আবেদন করলেও সে সুযোগ তাঁদের দেওয়া হয় নি, আইনী নীতি ও আইনের শাসন বজায় রাখতে। তাঁদের ক্ষেত্রে নিয়ম খানিক শিথিল করা হয়েছে– নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নিয়োগ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বেতন পাবেন (Para 48, page: 40)। তাঁরাও বয়সের ছাড় এবং অন্যান্য ছাড় সহ নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। 


    লক্ষণীয়, ডিভিশন বেঞ্চ তাঁদের রায়ে (Para 329) স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, ‘কমিশন, পর্ষদ (বোর্ড) এবং রাজ্য সরকারের ক্রমাগত অসহযোগিতার জন্য, চেষ্টা করা সত্ত্বেও, নির্দোষ এবং জালিয়াতের সঠিক সংখ্যা নিরুপণ করা সম্ভব হয় নি, সে প্রচেষ্টা পণ্ডশ্রম হয়েছে এবং যন্ত্রণা বাড়িয়েছে। তবে, আদালত মেনে নিয়েছে কিছু শনাক্ত করা গেছে, গ্রুপ ডি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে, ৪৮% কারসাজি/অবৈধতার মাধ্যমে প্রাপ্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। অন্য তিনটি বিভাগে অবৈধভাবে নিযুক্ত ব্যক্তিদের শতাংশ গ্রুপ-ডি-র তুলনায় কিছুটা কম’।

    সারা দেশে বিভিন্ন পরীক্ষা দুর্নীতির মামলায় মহামান্য আদালতের ন্যায় প্রদানের বিভিন্ন মানদণ্ড:

    এমন একটি সংবেদনশীল মামলায় রায় দিতে গিয়ে, সুপ্রিমকোর্ট, ১২টি মামলা পর্যালোচনা করেছে। হুবহু একই ধরণের নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় (Inderpreet Singh Kahlon and Others v. State of Punjab and Others, 2006) দেখা গেছে, পাঞ্জাব পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে, ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সময়কালে, বিপুল দুর্নীতির মাধ্যমে বহু নিয়োগ হয়েছিল। তদন্তে (তদানীন্তন) চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে বিপুল অর্থও উদ্ধার হয়। পাঞ্জাব হাইকোর্ট সমগ্র পরীক্ষা প্রক্রিয়াটিই বাতিল করে। ততদিনে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের ৩-৪ বছরের বেশি চাকরি করা হয়ে গেছে প্রশাসনে। কেউ কেউ উচ্চতর পদে প্রমোশনও পেয়েছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সমগ্র প্যানেল বাতিলের (হাইকোর্টের) রায়টিকে খারিজ করে সুপ্রিমকোর্ট। উচ্চতম আদলতের ব্যাখ্যা ছিল, ‘গণ হারে চাকরিচ্যুতি এক অভূতপূর্ব ঘটনা, যার তীব্র প্রভাব এবং পরিণতি রয়েছে ..... সেইসব ক্ষেত্রেই সমগ্র চাকরিচ্যুতির আদেশ জারি করা উচিত, যেখানে কলঙ্কিতদের অকলঙ্কিত প্রার্থীদের থেকে আলাদা করা অসম্ভব বা প্রায় অসম্ভব ‘(‘The en masse termination order setting aside several selections spread over 3-4 years was reversed. This was an unprecedented case of mass termination, with a walloping impact and consequences. Applying the threefold factual and legal test, en masse termination was set aside. In this context, it was observed that termination orders should only be issued in cases where it is found to be impossible or highly improbable to separate the tainted cases from the non-tainted ones’, Para 13, page: 14-15). দোষী, নির্দোষী আলাদা করতে, হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে দুটি নিরপেক্ষ স্ক্রুটিনি কমিটি গড়ার আদেশ দেওয়া হয়। 

    আর একটি সমগোত্রীয় মামলায় (Sachin Kumar and Others v. Delhi Subordinate Service Selection Board and Others, 2021), শীর্ষ আদালতের অভিমত ছিল, ‘অন্যায়কারীদের কৃতকর্মের জন্য নিরপরাধদের কষ্ট ভোগ করা উচিত নয়।, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া বাতিল করলে, যাতে দোষীদের সঙ্গে, নির্দোষীরাও অন্যায়ভাবে শাস্তির সম্মুখীন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। নির্দোষী এবং অপরাধীদের সঙ্গে সমান আচরণ করলে সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন হবে’ (‘there are cases where only some participants have committed irregularities. The innocent should not suffer for the actions of the wrongdoers. ...... Care must be taken to ensure that the innocents are not unfairly penalized alongside the wrongdoers by cancelling the entire process. To treat the innocent and the wrongdoers equally would violate Article 14 of the Constitution, as it would involve treating unequals equally’– Para 7, page: 11). 

    অথচ, আর একটি গভীর পরীক্ষা-দুর্নীতির মামলায় (Vanshika Yadav v. Union of India and Others, 2024), সুপ্রিমকোর্টের অবস্থান একেবারেই আশ্চর্যজনক ছিল। সর্বভারতীয় NEET (UG) পরীক্ষায় (০৫ মে ২০২৪) ব্যাপক দুর্নীতির যথেষ্ট উদাহরণ পাওয়া সত্ত্বেও, পরীক্ষা বাতিলের আবেদনে সাড়া দেয় নি সুপ্রিমকোর্ট। জালিয়াতির অভিযোগে, ৪০টি আবেদন জমা পড়ে ১০ই জুনের মধ্যেই। হাজারিবাগ এবং পাটনায় পরীক্ষার আগেই প্রচুর অর্থে প্রশ্নপত্র বিক্রি হয়েছিল (বিক্রির চক্র এবং ১৫৫ জন পরীক্ষার্থী চিহ্নিত হয়)। এছাড়া দিল্লী, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গুজরাতে FIR দায়ের করা হয়। CBI তদন্ত সদ্য শুরু হয়েছিল। হরিয়ানার ঝজ্জরের ১২টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ভুল প্রশ্নপত্র (২য় সেটের প্রশ্নপত্র) বিতরণ করা হয়। ই-রিক্সাতে প্রাইভেট ক্যুরিয়ার সংস্থাকে দিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানোর উদাহরণ পাওয়া গেছে। রাজস্থানের কোটা এবং সিকর শহরের সমস্ত কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ফলাফল দেখা যায়। গুজরাতের গোধরা থেকে ১০০০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে কর্ণাটকের বেলগাভির (বেলগাঁও) কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসেছে প্রার্থীরা, যেখানকার ফলাফল হয়েছিল অস্বাভাবিক। বিতর্কিত প্রশ্ন দেওয়া হয়েছিল এবং সেজন্য গ্রেস নম্বরও দেওয়া হয়। ৬৭ জন পরীক্ষার্থী ১০০% নম্বর পেয়েছিল (অথচ, আগের চার বছরে যা ছিল যথাক্রমে ২, ১, ৩, ও ১ জন) ইত্যাদি অজস্র অভিযোগের উদাহরণ পেশ করা সত্ত্বেও, শীর্ষ আদালত ২৩ জুলাই (২০২৪), তদন্ত শেষের অনেক আগেই, তাঁদের রায়ে জানায়, ব্যাপক দুর্নীতির প্রমাণ মেলেনি, প্রশ্নপত্র ফাঁস পদ্ধতিগত নয়, কলেজের সেমেস্টার শুরু করতে দেরি হয়ে যাবে, দেশের মেডিক্যাল শিক্ষার অসুবিধা হবে– এই সমস্ত গুরুতর (!) কারণে পরীক্ষা বাতিল করা যাবে না। যদিও প্রবল দুর্নীতির প্রশ্ন ওঠায় কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী, মামলা চলাকালীনই, ২২ জুন (২০২৪) তড়িঘড়ি NTA-র ডিরেক্টর জেনারেল সুবোধ সিংকে বদলি করেন এবং প্রাক্তন ISRO প্রধান রাধাকৃষ্ণনের নেতৃত্বে সাত জনের কমিটিকে সামগ্রিক পরীক্ষা ব্যবস্থার পর্যালোচনা ও সংস্কারের আদেশ দেন (NEET-UGC NET Row: NTA Chief Replaced After Government Forms Probe Panel, NDTV Profit, 22/06/2024)। 

    রায়ের সামাজিক অভিঘাত: 

    এক লহমায় চাকরি কেড়ে নেওয়া হয়েছে ২৫৭৩৫ জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীর। জালিয়াতদের সঙ্গে, বিনা দোষে নির্দোষীদেরও কেড়ে নেওয়া হয়েছে জীবিকার অধিকার, আর জীবিকা নির্বাহের অধিকার হল সংবিধান স্বীকৃত অন্যতম মৌলিক অধিকার (Art.21)। বিভিন্ন মামলায় বারংবার উচ্চতম আদালতে ব্যক্ত হয়েছে এই চির সত্যটি। বিখ্যাত Olga Tellies and others v. Bombay Municipal Corporation (1985) মামলায় বলা হয়েছে, ‘..... অনুচ্ছেদ ২১ দ্বারা নিশ্চিত করা জীবনের অধিকারের মধ্যেই রয়েছে জীবিকা নির্বাহের অধিকার’ (“...that the right to life which is guaranteed by Art. 21 includes the right to livelihood and since, they will be deprived livelihood if they are evicted from their slum and pavement dwellings, their eviction is tantamount to deprivation of their life and is hence unconstitutional”)। আর একটি মামলায় ফের উচ্চারিত হয়েছে, ‘জীবনের অধিকারের মধ্যেই নিহিত রয়েছে জীবিকা নির্বাহের অধিকার। আয় অনেক মৌলিক অধিকারের ভিত্তি এবং যখন কাজই আয়ের একমাত্র উৎস হয়, তখন কাজের অধিকার ততটাই মৌলিক হয়ে ওঠে’ (“The right to life includes right to livelihood. Income is the foundation of many fundamental rights and when work is the sole source of income, the right to work becomes as much fundamental.”, Delhi Transport Corporation v. Mazdoor Congress, 1990)। বহুকাল আগে মার্কিন সুপ্রিমকোর্টে জাস্টিস ডগলাস বলেছিলেন, ‘কাজের অধিকার হলো মানুষের সবচেয়ে মূল্যবান স্বাধীনতা’ (‘The right to work, I had assumed, was the most precious liberty that man possesses. Man has indeed as much right to work as he has to live, to be free, to own property)’ [Barsky v. Board of Regents, 347 U.S. 442 (1954)]। 

    এই রায়ে দোষী-নির্দোষীদের একই মাপকাঠিতে শাস্তির ব্যবস্থা হয়েছে। নির্দোষ অথচ চাকরিচ্যুত হওয়ায় তাঁরাও সমাজে অহরহ অসম্মানের সম্মুখীন হবেন। কি করে বোঝাবেন, তাঁরা চাকরি হারিয়েছেন বটে, তবে নির্দোষ ছিলেন। ‘সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকারও’ সংবিধানসম্মত মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত হয়েছিল বিখ্যাত Maneka Gandhi vs. Union of India (1978) মামলায়। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছিল, ‘the right to life, more fundamental than any other forming part of personal liberty and paramount to the happiness, dignity and worth of the individual’। একথা তো চিরকালীন সত্য, ‘প্রতিটি সভ্যতা শিক্ষকদের শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছে’ (হাইকোর্টও একই কথা বলেছেন তাঁদের রায়ে, Para 349)। মহামহিম বিচারপতিরা, নির্দোষ শিক্ষকদের (শিক্ষাকর্মীদেরও), শুধু আয়ের অধিকারই নয়, সেই সাথে সমাজে তাঁদের সম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকারটুকুও কেড়ে নিয়েছেন। ধ্বস্ত হয়েছে তাঁদের (এবং সেই সাথে তাঁদের উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদেরও) বেঁচে থাকার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারটুকু। ঠেলে দেওয়া হয়েছে নিশ্চিত অনাহারের মুখে। তাঁদের পক্ষে, এই তীব্র বেকারত্বের সময়ে, এই বয়সে, কায়িক শ্রম ছাড়া, নতুন করে (সম-মানের) কাজ জোটানো প্রায় অসম্ভব। 

    মনে রাখতে হবে, ‘আইন-বিধির গুরুতর লঙ্ঘন এবং অবৈধতার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪ এবং অনুচ্ছেদ ১৬ উল্লঙ্ঘন হয়েছে’ বলে সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করেছেন মহামান্য আদালত। এরফলে, দোষীদের সঙ্গে নির্দোষীরাও যে একই মাপের শাস্তি পেয়েছেন কিন্তু তাতেও কি অনুচ্ছেদ ১৪ উল্লঙ্ঘন করা হল না? শীর্ষ আদালত তো আগেই বলেছিলেন, ‘To treat the innocent and the wrongdoers equally would violate Article 14 of the Constitution, as it would involve treating unequals equally’ (পূর্বোল্লিখিত Sachin Kumar মামলা)। 

    উল্লিখিত Inderpreet Singh Kahlon মামলায় দেখা গেছে, নির্দোষীদের ন্যায়বিচার দেওয়ার স্বার্থে, সুনির্দিষ্টভাবে দোষী ও নির্দোষীদের চিহ্নিত করতে, শীর্ষ আদালত নিরপেক্ষ স্ক্রুটিনি কমিটি গঠন করার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে, সমস্ত তথ্য থেকে বাছাই করবে দোষী এবং নির্দোষী। এর ফলে, নির্দোষীরা অবাঞ্ছিত শাস্তির হাত থেকে মুক্তি পাবে। এক্ষেত্রেও আদালত কি তেমনই একটি নিরপেক্ষ কমিটি তৈরি করে সঠিকভাবে দোষী / নির্দোষী চিহ্নিত করার আদেশ দিতে পারতেন না? তাতে হয় তো দোষ না থাকা সত্ত্বেও এতজন মানুষের জীবিকা, সম্মান খোয়াতে হতো না। 

    একজনমাত্র আইনজীবী (বিকাশ ভট্টাচার্য) ছাড়া, কোনও আইনজীবীই সমগ্র নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিলের আবেদন জানান নি (তবে, বিকাশবাবু CBI-এর উদ্ধার করা OMR শিটের ছবি থেকে নতুন মেরিট লিস্টের ভিত্তিতে নতুন করে নিয়োগ দেওয়ার আবেদনও করেন)। একজন আইনজীবী (শঙ্করপ্রসাদ দলপতি) সমগ্র প্রক্রিয়া বাতিল করলে, সমস্ত নির্দোষী প্রার্থীকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলেছিলেন। 

    আদালতের দেওয়া যোগ্যদের প্রতি অনুগ্রহের বাস্তবতা: 

    নিয়োগের বৃহদাংশ নির্দোষ মেনে নিলেও, গণহারে সকলকেই জীবিকাচ্যুত করলেও, আদালত, নির্দোষীদের অবশ্য কিঞ্চিৎ অনুগ্রহ করেছেন। প্রথমত, চাকরিকালীন প্রাপ্ত বেতন তাঁদের ফেরত দিতে হবে না এবং পরবর্তী পরীক্ষায় প্রতিযোগিতা করতে বয়সের ছাড় দেওয়া হবে। ভেবে দেখুন, যে পরীক্ষায় পাশ করে অকলঙ্কিত শিক্ষক / শিক্ষাকর্মীরা ২০১৭-১৮-১৯ নাগাদ চাকরি পেয়েছিলেন, আজ প্রায় ছয়-সাত বছর পর সকলেরই বয়স ৩৫ – ৪০ বা তারও বেশি। বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী, সরকারী স্থায়ী চাকরি পাওয়ার পরে, প্রত্যেকেই তাঁদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসারী হয়েছেন, হোম-লোনের সুদ মেটাচ্ছেন, সন্তানের শিক্ষায়, কেউ পিতামাতার চিকিৎসায় ব্যয় করছেন। পরীক্ষা প্রস্তুতির পড়াশুনো বহুদিনই অপ্রয়োজনীয় তাঁদের কাছে। অপরপক্ষে, এই সময়কালে, কয়েক লক্ষ শিক্ষার্থী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন। আগামী পরীক্ষায় (যা হবে open competition) পরীক্ষা দেবেন তাঁরাও। খুব অবাস্তব চিন্তা না করলে, নিঃসন্দেহে বলা যায়, বর্তমান চাকুরিহারা নির্দোষীদের সে পরীক্ষায় (যদি বসেন) কৃতকার্যের সম্ভাবনা সুদূর পরাহত। প্রতিবন্ধীদেরও জন্যেও একই নিদান। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, নির্দোষীদের জন্য আদালতের দেওয়া অনুগ্রহের ন্যূনতম বাস্তবতা নেই। এই সুবিধা বোধহয় তাঁদের কাছে তামাশারই নামান্তর। 

    ন্যায়বিচারের নীতি (Principle of Natural Justice) এবং তার মর্যাদা: 

    সময় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, পরীক্ষার ফল বেরনোর সাড়ে ৩ বছর পর এবং সফল তালিকার মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ বছর ৮ মাস বাদে জালিয়াতির প্রথম মামলাটি হয় (Para 48, Div Bench Judgement)। তারপর মামলা গড়িয়েছে আরও পাঁচ বছর। ইতিপূর্বে, উচ্চতর আদালত একাধিক মামলায় জানিয়েছে, যেখানে বিষয়ের সুরাহা (Relief) চাইতে অনাবশ্যক দেরি করা হয়েছে (Doctrine of Laches), সেক্ষেত্রে আদালত, Principle of Denying Relief এর ভিত্তিতে আবেদনকারীকে সুরাহা দিতে অস্বীকার করবে। এই নীতির মূল কথা হল, ‘ন্যায়বিচার সচেতনদের সাহায্য করে, যারা তাদের অধিকার নিয়ে ঘুমিয়ে থাকে তাদের নয়’ (equity aids the vigilant, not those who slumber on their rights – Courts will not help people who sleep over their rights)। অথচ, বর্তমান মামলায় Delay (দেরী), Laches (অযথা বিলম্ব) বিবেচিত নয় বলে আদালত জানিয়েছে, ‘এই নিষেধাজ্ঞা (অর্থাৎ Principle of Denying Relief) এখানে প্রযোজ্য নয়, কারণ জালিয়াতি এবং অবৈধতাগুলি কেবল ২০২১ এবং ২০২২ সালেই উন্মোচিত হয়েছিল’ (Para 43, 44, page: 38 & 39)। 

    কাল তার ফাঁসি হবে, কেন হবে, তা সে জানে না .... :

    অষ্টাদশ শতকে ইংলণ্ডের স্বনামধন্য বিচারপতি উইলিয়াম ব্ল্যাকস্টোন তাঁর বিখ্যাত আইন গ্রন্থ Commentaries on the Laws of England (1760) -এ লিখেছিলেন, “It is better ten guilty persons escape, than one innocent suffers” (দশজন অপরাধী ছাড়া পেয়ে গেলেও, একজন নির্দোষীও যেন শাস্তি না পায়)। যেটি সারা পৃথিবীতেই নিরপেক্ষ ন্যায়বিচারের প্রাথমিক নীতি বলে গৃহীত। এদেশের সুপ্রিমকোর্টও বারংবার একই কথা ব্যক্ত করেছে– ‘the acquittal of a guilty person constitutes a miscarriage of justice just as much as the conviction of the innocent’, (Vikash Ranjan Singh @ Golu, Son of Sri Devendra Kumar Singh vs State of Bihar, 2022, Dev Lal Sonwani @ Dukhiram, S/o Dayali vs State of Chhattisgarh, 2022) । যদিও বর্তমান মামলায়, মহামান্য আদালতের নির্দেশ, এক মুহূর্তে, পরিবারসহ নিরপরাধীদের আক্ষরিক অর্থেই পথে বসিয়েছে, অনাহারের পথ দেখিয়েছে, আগামীদিনগুলো কি করে চলবে তার উত্তর জানা নেই তাঁদের কাছে। শামসুর রহমানকে থেকে উদ্ধৃত করে তাই বলা যায়, “কাল তার ফাঁসি হবে, কেন হবে, তা সে জানে না ....” (ফাঁসি)। 

    বিচারব্যবস্থার উপর জন-আস্থা ও নির্ভরতার দায় বিচারবিভাগের:

    ১০০ বছর আগে, ইংল্যান্ডের প্রধান বিচারপতি লর্ড হেওয়ার্ট একটি মামলার বলেছিলেন,‘শুধু ন্যায়বিচার দেওয়া নয়, বরং তা যেন স্পষ্টভাবে এবং সন্দেহাতীতভাবে দেখাও (বোঝাও) যায়’ (Justice should not only be done, but should manifestly and undoubtedly be seen to be done)। ১৯৯৭ সালে ভারতের শীর্ষ আদালতে, স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, ন্যায়বিচারের স্বার্থে, বিচারপতিদেরদের অবশ্য পালনীয় ১৬টি কোড গৃহীত হয়েছিল (“রিস্টেটমেন্ট অফ ভাল্যুজ অফ জুডিশিয়াল লাইফ”)। এই বিধিসমূহের প্রথমটিতেই লর্ড হেওয়ার্টের বক্তব্যটি প্রতিধ্বনিত হয়েছে: “Justice must not merely be done but it must also to be seen to be done. The behaviour and conduct of members of the higher judiciary must reaffirm the people’s faith in the impartiality of the judiciary”। পরবর্তীকালে, ২০০৬ সালে জাতিসঙ্ঘের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদও স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, ন্যায়বিচারের দায়বদ্ধতা, বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের মর্যাদা, আস্থা, বজায় রাখতে গ্রহণ করেছিল “ব্যাঙ্গালোর প্রিন্সিপল অব জুডিসিয়াল কন্ডাক্ট”। এদেশও ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ শরিক। যেখানে স্পষ্ট উল্লিখিত রয়েছে, ‘A judge shall exhibit and promote high standards of judicial conduct in order to reinforce public confidence in the judiciary, which is fundamental to the maintenance of judicial independence’ (Para 1.6). ‘A judge shall, as far as is reasonable, so conduct himself or herself as to minimize the occasions on which it will be necessary for the judge to be disqualified from hearing or deciding cases’ (Para 2.3)। এই মামলায় স্মরণযোগ্য, হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চের (তদানীন্তন) বিচারপতি তো তদন্তের আগেই, বিচার চলাকালীন, কোড অফ কন্ডাক্ট লঙ্ঘন করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, ‘ঢাকি শুদ্ধু সব বিসর্জন দেবেন’ বলে মামলার এক পক্ষকে হুমকি দিয়েছিলেন, নিরপেক্ষতার পবিত্রতা ক্ষুন্ন করে মামলাটি নিয়ে, সাংবাদ মাধ্যমে, একপেশে মন্তব্যও করেছিলেন। অবশ্য ক’দিন বাদেই, আবার, তিনি পদত্যাগ করে, দুর্নীতির সাগরে ঝাঁপ দিয়ে একটি রাজনৈতিক দলের সাংসদ হয়েছেন। গত বছর অক্টোবরে, এক বক্তৃতায়, তদানীন্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়, “বিচারকদের, 'জনগণের আস্থা' বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন” (CJI DY Chandrachud underlines the need for judges to sustain 'public trust', The Telegraph, 11/10/2024)। আগামী প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাইও সতর্ক করেছিলেন, বিচারব্যবস্থার উপর সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার পরিণামের কথা বলে (Trust deficit in judiciary might push people to resort to mob justice: Justice BR Gavai, Bar & Bench, 19/10/2024)। আর আইনের বিকাশের জন্য সুপ্রিমকোর্টের রায়ের উপর জনসাধারণের আলোচনা এবং গঠনমূলক সমালোচনাও গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছিলেন বিচারপতি সি টি রবিকুমার (Public discussion, constructive criticism of SC verdicts key for the development of law: Justice Ravikumar, The Hindu, 05/01/2025)। 

    বিশ্বকবি বলেছিলেন, দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার .... (গান্ধারীর আবেদন)। সংবিধান রক্ষার, ন্যায়বিচার দেওয়ার সুমহান দায়িত্বে নিষ্ঠ মহামহিম বিচারপতিদের কানে কি পৌঁছয় অগণিত মানুষের ক্রন্দনের আওয়াজ?





    লেখক মানবাধিকার আন্দোলনে যুক্ত


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৫ মে ২০২৫ | ২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন