এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • দেখে শেখা ঠেকে শেখা ঠকে শেখা 

    কালের নৌকা লেখকের গ্রাহক হোন
    ০৯ আগস্ট ২০২৫ | ৫৭ বার পঠিত
  • কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা দেখে শেখেন। কিছু আছেন, যাঁরা ঠেকে শেখেন। আর কিছু কিছু মানুষ কিন্তু ঠকে শেখেন। এখন কোন মানুষ, কে কিভাবে শিখবেন। সেটি অবশ্যই তাঁর বা তাঁদের ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। সেখানে বাইরে থেকে কারুর নাক গলানো শোভা পায় না। এখন প্রশ্ন একটাই। হঠাৎ এই দেখে শেখা, ঠেকে শেখা আর ঠকে শেখার প্রসঙ্গ উঠলো কেন। আজ থেকে আঠারো বছর আগে তৎকালীন বামফ্রন্টের আমলেও আমরা দেখেছিলাম রিজওয়ানুর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে সরকারি পুলিশ কিভাবে আত্মহত্যার কাণ্ড বলে চালিয়ে দিয়েছিল। কিভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা রাজ্য, রিজওয়ানুরের হত্যাকারীর বিচার চেয়ে। সেদিন কিন্তু রাজ্যবাসী হত্যাকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছিল। কিন্তু তারপরেও তৎকালীন সরকার এবং সরকারি পুলিশ বিষয়টিকে নিছক আত্মহত্যার ঘটনা বলেই চালিয়ে দিয়েছিল। যার বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীর একটা বড়ো অংশই সেদিন রাজপথের দখল নিয়ে গর্জে উঠেছিল। আর সেদিন রিজকাণ্ডকে হাতিয়ার করে ‘ওরা ৩৫’ থেকে রাজ্যবাসীর আবেগের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল তৎকালীন বিধানসভার প্রধান বিরোধী দলটি। যে দলের তৎকালীন বিরোধী দলনেতা বর্তমান সময়ে কারান্তরালে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও কেউ কেউ কানাকানি করে থাকে, বর্তমানে তিনি কোন ফাইভস্টার বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অজুহাতে হাত পা খেলিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সে কাটান, তবু ভালো, কুখ্যাত সেই উডবার্ণ ওয়ার্ডের বদনাম তো আর বাড়িয়ে তোলেননি নতুন করে। সে যাই হোক, সেই আঠারো বছর আগে রিজওয়ানুরের বিধবা মা এবং বড় ভাই কিন্তু সেদিন তৎকালীন বিরোধী দলটির দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে ভরসা করতে শুরু করেছিল, পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে সরকার বদল হলে নতুন সরকার সকলের আগে রিজওয়ানুরের হত্যাকারীকে ন্যায় বিচারের কাঠগড়ায় টেনে এনে হাজির করাবে। কথায় বলে বিশ্বাসে মেলে বস্তু তর্কে বহুদূর। ২০১১ সালের সেই মহা পরিবর্তনের নবগঠিত সরকার আজকে একটানা ১৪ বছর ক্ষমতায় আসীন। রিজওয়ানুরের হত্যাকারী আজও আঠারো বছরের আগের মতোই সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবন যাপন করে চলেছেন। আর পাঁচজন নিরাপরাধ সাধারণ নাগরিকের মতো। এবং বছর বছর ভোট দিয়ে সরকার গঠনে ভুমিকাও রেখে চলেছেন বাকি রাজ্যবাসীর মতোই। তাঁর কোন বিচারও হয়নি। শাস্তিও হয়নি। ভোটাধিকারও কাটা যায়নি।

    এবং এইসবই হয়েছে, আর জি কর কাণ্ডের নিহত সেই জুনিয়র চিকিৎসকের পিতামাতার চোখের সামনেই। আজ যাঁর হত্যাবার্ষিকী। কিন্তু কি দেখলাম আমরা? আমরা দেখলাম নিহত জুনিয়র চিকিৎসকের পিতামাতাকে বর্তমান বিধানসভার প্রধান বিরোধী দলটির ‘ দলীয় পতাকা ছাড়া নবান্ন অভিযানে’ সামিল হতে। যদিও রাজনৈতিকভাবে বিরোধী দলনেতার ঘোষণায় তিনি ও তাঁর দল অভয়ার পিতামাতার ডাকে নবান্ন অভিযানে সামিল হয়েছেন মাত্র। কে কার ডাকে সামিল হয়েছেন। সেটি ভবিষ্যতেই পরিস্কার হতে পারে। নাও হতে পারে। তবে এটি জলের মতো পরিস্কার। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যদি পাশা উল্টিয়েও যায়। তাহলেও আর জি কর কাণ্ডের নিহত জুনিয়র চিকিৎসকের হত্যাকারীরা সেদিনও ঠিক আজকের মতোই সেদিনের শাসকদলের হাওয়া গায়ে লাগিয়ে আর পাঁচজন নিরপরাধ সাধারণ নাগরিকের মতোই স্বাভাবিক জীবন যাপন করবেন। পুলিশ সিবিআই আদালত ন্যায়বিচার এবং শাস্তির হাত এড়িয়ে। কারণ আজকে দিল্লীতে যে রাজনৈতিক দলটি ভারত শাসন করছে, সেই দলটিই পরবর্তীতে রাজ্য শাসন করলেও তাঁদেরই অধীনস্ত সিবিআই অত্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মেই সেদিনও ঠিক আজকের মতোই বর্তমান সরকারের রাজ্য পুলিশের তদন্তেই শীলমোহর লাগিয়ে রেখে দেবে। আর আজকের প্রধান বিরোধী দলটিও ঠিক পূর্বের বিরোধী দলটির মতোই নবান্নে গিয়ে গোটা বিষয়টিকেই শাসনদণ্ডের তলায় চাপা দিয়ে রাখবে। আসলে বিষয়টি দেখে শেখার। আগেই বলা হয়েছে, কে দেখে শিখবেন। কে ঠেকে শিখবেন। আর কে ঠকে শিখবেন। সেটি একান্তভাবেই তাঁর ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। এখন দেখার বিষয় এইটাই যে, আমাদের এই রাজ্যের অধিকাংশ রাজ্যবাসী ঠিক কিভাবে শিখে নিতে আগ্রহী। দেখে, ঠেকে না ঠকে?

    (০৯-০৮-২০২৫)
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন