এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • হিংসার ছক : ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে মুর্শিদাবাদ ক্ষত -বিক্ষত আর বিভক্ত

    স্নিগ্ধেন্দু ভট্টাচার্য
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৯ মে ২০২৫ | ১১৬ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • অলঙ্করণ: রমিত



    সরু গলির পাশে শঙ্কর পালের আটপৌরে বাড়িটা ভেঙেচুরে পড়ে। পোড়ানো ভেঙে দেওয়া জিনিসপত্র বাইরে ডাঁই করে রাখা -টিভির টুকরো টাকরা ,একটা ফ্রিজের দরজা। বাড়িটার দরজা হাট করে খোলা। জানলার গ্রিল ভাঙা। ভেতরে ভাঙা কাঠের তাক আর ওয়ার্ডরোব টুকরো টুকরো করে ছড়ানো । বাড়ির লাগোয়া নিত্য পাল আর নারায়ণ পালের দোকান পুড়ে খাক। বাইরের খটখটে শুখনো আর নোংরা ডোবায় টান মেরে ফেলা বাসনপত্রের চকচকে গা পিছলে আলো আসছে।

    বেশির ভাগ এক তলা বাড়িতে ভরা দিঘড়ি পাল পাড়া আর আগের মতো স্বাভাবিক নয়। এই অঞ্চলটায় আর্থিক অসাচ্ছল্যের চিন্হ চারপাশে। পাল পরিবার বারোই এপ্রিল সন্ধে বেলা বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে , বাড়ি চড়াও হবার ঘটনার ঘন্টা পাঁচেক বাদে বি এস এফের লোকজন তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ফাঁকা বাড়িগুলোর জন্যেই যেন এলাকায় থমথমে ভাব। লোকে ভয়ে ফিসফিসিয়ে কথা বলছে।
    জেলাটার নাম মুর্শিদাবাদ , জেলাওয়ারি মুসলিম জনসংখ্যায় দেশে বৃহত্তম - দুহাজার এগারোর জনগণনা অনুযায়ী সাতচল্লিশ লক্ষ। এই সংখ্যাটা জেলার মোট জনসংখ্যার দুইতৃতীয়াংশ। মুসলিম জনগোষ্ঠীর লোকে ওয়াকফ ( সংশোধনী ) বিল ২০২৫ পাশ করে পাঁচই এপ্রিল রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সই দেওয়ার পরই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিল। প্রতিবাদীরা পথে - রাজপথে পুলিশের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ায় আর সরকারী সম্পত্তির ক্ষতি করে। আগের দিন সন্ধেতে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুলিশের গুলিতে দুজন মুসলিম যুবক মারাত্মক আহত হয়।

    তা বলে দিঘড়ি , জাফরাবাদ, রানিপুল আর বেদবনাতে কেউ স্বপ্নেও ভাবেনি যে বাড়ি আক্রমণ হতে পারে । এখানে , হিন্দু আর মুসলিম এতো গা ঘেষাঘেষি করে থাকে যে না জানা থাকলে বাইরে থেকে দেখে বোঝা মুশকিল কোন বাড়ি হিন্দুর আর কোনটা মুসলিমের । সবাই শান্তিতে বসবাস করে। কিন্তু এই সব বসতিতে বারোই এপ্রিল উন্মত্ত জনতা এসে বেছেবেছে হিন্দু বাড়িগুলোতেই চড়াও হলো।

    যতই ‘বহিরাগত' তত্ত্ব আওড়ানো হোক মিশ্র জনবসতিতে বেছেবেছে হিন্দু সম্পত্তিতে চড়াও হওয়া স্থানীয় লোকেদের যোগসাজশেরই ইঙ্গিত দেয়

    সে দিন সকালে মধ্য বাংলার দিঘড়ি , জাফরাবাদ , রানিপুল আর বেদনার মতো গরিব , মফস্সলি পাড়াগুলো যখন ঘরে বাইরে নিত্য দিনের কাজে ব্যস্ত ছিল , কয়েক ডজন মুসলিম যুবকের দঙ্গল সকাল নটা থেকে দশটার মধ্যে ওইসব পাড়ায় সর্বনাশী হামলা চালাতে ঢুকে পড়লো , হাতে তাদের ধারালো অস্ত্র , পেট্রল বোমা আর ছোটখাটো আগ্নেয়াস্ত্র । এর পরের কয়েক ঘন্টায় যা হয় তার অভিঘাতে, ওইসব বসতিগুলো যে এলাকায় সেই ধুলিয়ান পৌর শহর ভয়ে কাঁপতে থাকে -এমনই এক ভয় যা কাটতে অনেক সময় আর কাটাতে মেহনত লাগবে অনেক । ওই শহরের পাঁচ ভাগের চার ভাগই মুসলিম আর বাকিরা হিন্দু। ধুলিয়ানের অনেক এলাকায় তো হাতেগোনা হিন্দু বাড়িগুলো ঘিরে আছে মুসলিম বসতি। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে তৈরি পারস্পরিক ধর্মীয় আস্থার মনোভাব হয়ে গেছে ধূলিসাৎ। যার কুপ্রভাব ওই এলাকা ছাড়িয়ে অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে।

    বারোই এপ্রিল দশটা নাগাদ মুসলিম কিশোর আর যুবকের দল , সংখ্যায় পনেরো ষোলো জন আর বয়সে পনেরো ষোলো থেকে কুড়ি বাইশ হবে , ওই সব পাড়ায় হাতে ধারালো অস্ত্র , ছোটখাটো আগ্নেয়াস্ত্র আর কাচের বোতল নিয়ে ঢুকে পড়ল। তাদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। উন্মত্ত জনতা কোন স্লোগান দিচ্ছিল না। ওরা হিন্দুদের বাড়িগুলোতে ঢুকে পড়ে ভাঙচুর চালায় , টাকাকড়ি গয়নাগাঁটি লুট করে কিছু বাড়ি আর দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর মধ্যে জাফরাবাদের এক বাড়ি থেকে , ওরা বাবা -ছেলে হরগোবিন্দ (৭১) আর চন্দন দাসকে (৪১) বাড়ি থেকে টেনে বার করে কুপিয়ে মেরে ফেলল।

    এই খুনের ঘটনার খবরে আর পুলিশের গুলিতে আহত মুসলিম যুবকদের একজন এজাজ আহমেদের মৃত্যুর পর, সরকার আধাসামরিক মোতায়েন করা সত্বেও সংঘর্ষ আরো বাড়ে তেরোই এপ্রিল। দু ডজন নিরাপত্তা কর্মী আহত হলো পরের চার পাঁচ দিন ধরে মুর্শিদাবাদ জেলার সামশেরগঞ্জ , সুতি আর জঙ্গিপুর থানা এলাকাগুলোতে আর সংলগ্ন মালদা জেলায় চলতে থাকা বিক্ষোভের ফলে।

    তিনশোর বেশি হিন্দু পরিবার বারোই আর তেরোই এপ্রিলের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে গেছে। তাদের কেউ কেউ গঙ্গার অপর পাড়ে মালদা জেলার পার লালপুরের এক হাই স্কুলে শিবিরে রয়েছে। কেউ বা রয়েছে আত্মীয় স্বজনের বাড়ি।পালিয়ে যাওয়া লোকজনের কয়েকজন এপ্রিলের ষোলো থেকে সতেরোর মধ্যে ঘরে ফিরেছে কিন্তু কিছু পরিবার বাড়ির মেয়ে আর বাচ্চাদের রেখেই এসেছে। অনেক মুসলিমরাও পুলিশ আর আধা সামরিক বাহিনীর নির্বিচারে ধরপাকড়ের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। তাদের কিছু বাড়ি আর দোকান পুড়েছে।

    ''ওরা ঝামেলা শুরুর সময় , আমরা , স্থানীয়রা , আটকানোর চেষ্টা করি। ওরা আমাদেরও শাসালো। ওদের সবার হাতে অস্ত্র ছিল। আমাদের ভয় ধরে গেল। '' বললেন দিঘড়ির এক বাসিন্দা আব্দুল হালিম। দিঘড়ি পালপাড়ার আনোয়ারা বিবি ওঁর কথায় সায় দিলেন। হিন্দু প্রতিবেশীদের বাঁচাতে না পেরে ওনারা লজ্জিত।

    ধুলিয়ান ভারত -বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকা আর পশ্চিম বাংলা আর বিহার অথবা ঝাড়খণ্ডের সীমান্তেও বটে। এই ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য 'বহিরাগতদের ' জড়িয়ে নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বাতাসে ভেসে বেড়ায়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নানা শাখা সংগঠন আর প্রধান বিরোধী দল বিজেপির অভিযোগ যে বাংলাদেশী ইসলামী মৌলবাদী বা সন্ত্রাসবাদীরা এতে যুক্ত। রাজ্যের শাসক দলের আর বাম সংগঠনগুলোর অভিযোগ বিজেপি বিহার আর ঝাড়খণ্ড থেকে 'বহিরাগতদের ' এনেছে।

    ঘটনার আকস্মিকতার জন্য লোকে নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে বিশ্বাস করছে। রাম নবমী আর হনুমান জয়ন্তীর দিনের উত্তেজক বক্তৃতার কথা শোনা গেল। কেউ কেউ বিশ্বাস করছে এতে নীরবে কাজ করে চলা মুসলিম কট্টরপন্থীদের হাত আছে । অন্যরা ওয়াকফ বিল বিরোধী আন্দোলনে সমাজবিরোধীদের অনুপ্রবেশের কথা বলছে। এই সব নানা 'বহিরাগত ' তত্ত্ব নিরপেক্ষভাবে বলা যায় , মিশ্র জনবসতির এলাকায় বেছে বেছে হিন্দু সম্পত্তিকে আক্রমণের লক্ষবস্তু করাতে স্থানীয়দের যোগসাজশ পরিষ্কার ।

    এ এক উল্টোযাত্রা

    মুসলিম আর ধর্মনিরপেক্ষ সংগঠনগুলো নানা রাজ্যে নয়া ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করছে। কংগ্রেস , তৃণমূল কংগ্রেস (টি এম সি ) , ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ( মার্ক্সবাদী) , দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজহাগম ( ডি এম কে ) আর সারা ভারত মজলিস ইত্তেহাদ এ মুসলিমিন ( এ আই এম আই এম ) এই আইনকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছে। যদিও কিছু হিংসাত্মক ঘটনা উত্তরপূর্ব ভারতের বি জে পি শাসিত রাজ্য আসাম আর ত্রিপুরাতে দেখা গেছে -সেসব রাস্তার গোলমাল আর নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে সীমাবদ্ধ ছিল।

    বাংলায় , প্রতিবেশীদের সঙ্গে হিংসাত্মক আচরণ আর তাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার লক্ষ্যবস্তু বানানোর জন্য আঙ্গুল উঠছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে , যারা নিজেরা বি জে পি সরকারের সাম্প্রদায়িক বিভাজনের শিকার বলে দাবি করা হয় । উত্তরপ্রদেশের বি জে পি মুখ্যমন্ত্রী 'যোগী' আদিত্যনাথ বিরোধী দলগুলোর মুর্শিদাবাদ হিংসার ব্যাপারে নীরবতাকে প্রশ্ন করেছেন। সুপ্রিম কোর্টও বিচারাধীন আইনি জটিলতা নিয়ে এই ধারাবাহিক হিংসার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

    ধুলিয়ানের ঘটনা বড় আকারে বিভাজন সৃষ্টি করলো , মেরুকরণ তীব্র হলো এমন এক রাজ্যে যেখানে মুসলিমরা জনসংখ্যার একচতুর্থাংশ , যে রাজ্যটাকে বহু মুসলিম ওয়াকফ বিল বিরোধী আন্দোলনের ঘাঁটি হিসেবে দেখে , যে রাজ্যটা হলো বিরাট সংখ্যক মুসলিম জনবসতির একমাত্র বিরোধীশাসিত রাজ্য। যে রাজ্যে ৮০,৪৮০ টা ওয়াকফ সম্পত্তি আছে -যা সংখ্যায় উত্তর প্রদেশের ২,২ লক্ষ-'র পরেই দ্বিতীয়। কিন্তু এইসব ঘটনার ফলে বাংলার পুরোনো সাম্প্রদায়িক ক্ষতে আবার ঘা পড়েছে , বেড়েছে রাজনৈতিকভাবে মেরুকৃত সামাজিক বিভাজন।
    যেহেতু রাজ্যের শাসক দল , মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস (টি এম সি ) , সংসদে ওই বিলের বিরোধিতা করেছে , এই হিংসার ঘটনা অনেকটাই অভাবিত । টি এম সি সাংসদ মহুয়া মৈত্রই প্রথম নতুন ওই আইনের বিরোধিতা করেন তারপর সি পি এম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও সামিল হলেন বিরোধিতায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেছিলেন যে তাঁর সরকার রাজ্যে ওই আইনের প্রয়োগ করবে না। তৎসত্ত্বেও , টি এম সি মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধূরী , যিনি আবার জামিয়াত উলেমা -এ -হিন্দের রাজ্য প্রধানও বটে , এক শো অবরোধ সৃষ্টি করে কলকাতাকে অচল করার হুমকি দিলেন।

    ধুলিয়ান ছাড়াও , রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার রাস্তায় রাস্তায় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে দেখা গেল। জাতীয় সড়ক জুড়ে প্রতিবাদ হয় দক্ষিণ বঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা আর উত্তর বঙ্গের মালদা জেলায় -জেলা দুটো মুসলিম জনবসতির নিরিখে যথাক্রমে দ্বিতীয় বৃহত্তম ( ২৯ লক্ষ ) আর চতুর্থ বৃহত্তম ( ২০ লক্ষ ) -সেসব প্রতিবাদের ফলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আর গাড়ি আর রাস্তার ধারে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়।

    বাংলার এইসব প্রতিবাদের ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্রতিবাদীদের বড় অংশই ঠিক কী যে তাদের প্রতিবাদের বিষয় সেটাই জানে না

    এইসব ঘটনার ফলে নতুন ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ওই সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ আন্দোলনই মার খেয়েছে। কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ডাকা সংগঠিত কেন্দ্রীয় সমাবেশ বাতিল করে দিতে হয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের প্রচার হাওয়া পেল যে পশ্চিম বাংলা ক্রমে 'পশ্চিম বাংলাদেশ ' হয়ে যাচ্ছে -এই বলে তারা বোঝায় যে সব এলাকায় মুসলিমরা সংখ্যাগুরু সেখানে হিন্দুরা কখনো নিরাপদ নয়। টিভির খবর , সোস্যাল মিডিয়ার প্রচার , ইউটিউব ভাষ্য আর চায়ের দোকানের আড্ডায় মুসলিম বিদ্বেষের ঢক্কানিনাদ হতে থাকে ধুলিয়ানের ঘটনাকে বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদীদের উত্থানের সঙ্গে জুড়ে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখাতে থাকে আক্রান্ত হিন্দুরা আদিত্যনাথ স্টাইলের প্রশাসন চাইছে।

    "ভেবে দেখুন যোগীর উত্তর প্রদেশে মুসলিমরা ঝামেলা পাকাতেই পারে না আর আসামও কেমন করে সব জলদি ঠাণ্ডা করেছে। কিন্তু এখানে , এই টি এম সি সরকারের ভোট ব্যাঙ্ক রাজনীতির ফলে মুসলিমরা প্রশাসনের মাথায় চড়ে বসেছে। '' বলেন গোবিন্দ ঘোষ , হিংসা পীড়িত এক অঞ্চল ধুলিয়ান ঘোষপাড়ার বাসিন্দা।

    সব মিলিয়ে , বলা চলে হিন্দু বাড়িতে আক্রমণ আর দুজনকে হত্যার ঘটনা বিজেপির সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করার আর হিন্দু ভোটারদের তাতিয়ে সাত থেকে আট শতাংশ বেশি প্রার্থিত ভোট শেয়ার বাড়িয়ে মমতা ব্যানার্জির সরকারকে সামনের বছরের বিধানসভার ভোটে উল্টে দেওয়ার রণনীতিকে গতি প্রদান করেছে।

    যদি মুসলিমদের প্রতিবাদকে ঘিরে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করাটাই বিজেপির উদ্দেশ্য হয় , যেমনটা বিরোধীরা দাবি করছে , তবে বিহারে সেটা করার তাগিদ তাদের আরো বেশি থাকবে। এ বছরের শেষেই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন। পূর্ব বিহারের সীমাঞ্চল এলাকায় , যা পশ্চিম বাংলার মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ , মালদা আর উত্তর দিনাজপুরের লাগোয়া , মুসলিম জনঘনত্ব বিপুল সংখ্যায় ।

    ওই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলগুলো , রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আর জে ডি ) , কংগ্রেস আর বাম দলেরা ওয়াকফ আইন বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে , সেখানে বি জে পি তাদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করছে মুর্শিদাবাদের হিংসার উদাহরণ টেনে। যখন আর জে ডি নেতা তেজস্বী যাদব প্রতিশ্রুতি দেন যে তাঁরা ক্ষমতায় এলে ওয়াকফ আইন কার্যকরী হবে না , বি জে পি নেতা আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা কি বিহারকে বাংলা বানাতে চাইছেন।

    "মুর্শিদাবাদের ঘটনাকে সামনে রেখে বি জে পি দেশ জুড়ে এই বার্তাই দিচ্ছে , যে একমাত্র বি জে পির শাসনেই হিন্দুরা নিরাপদ।'' বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলার এক কংগ্রেস নেতা।
    বাংলার এইসব প্রতিবাদের ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে প্রতিবাদীদের বড় অংশই ঠিক কী যে তাদের প্রতিবাদের বিষয় সেটাই জানে না । কলকাতা কেন্দ্রিক প্রতীচী ট্রাস্টের বরিষ্ঠ গবেষণা সমন্বয়ক সাবির আহমেদ মনে করেন , ওয়াকফ বিল বিল বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সামাজিক -রাজনৈতিক মেরুকরণের অন্যতম কারণ হলো রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা মুসলিম সংগঠন কারুর তরফেই এই নতুন আইন সম্পর্কে মুসলিম আর হিন্দুদের মধ্যে সংসদে বিল পাশের আগের মাসগুলো থেকেই গণসচেতনতা গড়ে না তোলা।
    উনি বললেন ,'' এর ফলে এমন একটা অবস্থা তৈরি হয় যে বেশির ভাগ হিন্দুর কাছেই এ টা পরিষ্কার নয় যে এই আইনে মুসলিমদের কী ক্ষতি হতে চলেছে আর প্রতিবাদের উদ্দেশ্যই বা কী। একইভাবে , মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যেই এ বিষয়ে জানা বোঝায় ব্যাপক ঘাটতি আছে , যার ফলে তাদের বেশির ভাগই জানে না কিসের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ। ''





    আউট লুক পত্রিকায় লেখকের নিবন্ধ The Script Of Violence এর অনুবাদ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৯ মে ২০২৫ | ১১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:1985:94b:378:5634:1232:***:*** | ০৯ মে ২০২৫ ১৩:৩০731185
  • "আমরা খুব দুঃখের মধ্যে এসেছি এখানে। আমাদের বাড়ি নেই, ঘর নেই। সংসারের যা জিনিস ছিল সব আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পেট্রোল লাগিয়ে দিয়েছে। বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। জলের ট্যাঙ্কে বিষ দিয়ে দিয়েছে। আমরা কী খাব?"

    "ট্যাঙ্ক ভেঙে দিয়েছে। জলও খেতে দেয় না। চাল পাক মেরে দিয়েছে, মুড়ি পাক মেরে দিয়েছে, মুড়ি-বিস্কুট সব পাক মেরে দিয়েছে। সকাল থেকে তিনটে বাচ্চা না খেয়ে আছে। পরিবারের সবাই আমরা না খেয়ে আছি। এখানে এসে আহার পড়ল। ভয়ে পালিয়ে এসেছি। আমাদের ওখানে যত বাড়ি ছিল সব পুড়িয়ে দিয়েছে।"

    -এবিপি আনন্দ, ১৩ই এপ্রিল ২০২৫
    --------------------------------------------------------------------

    সোজা কথা সোজাভাবে বলা প্রয়োজন।
    মুর্শিদাবাদে ইসলামী মৌলবাদী শক্তি সাধারণ মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে! ধর্মনিরপেক্ষ দেশে গরীব হিন্দুরা নিরাপত্তার জন্য মুর্শিদাবাদ থেকে মালদায় আশ্রয় নিয়েছে! রাজ্য সরকার ও পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি! তারা নীরব দর্শক হয়ে দেখেছে!

    মৌলবাদকে তোষণ করে শান্ত করা যায়না। হাসিনা বাংলাদেশে এদের তোষণ করে শান্ত করতে গেছিলেন, এরা হাসিনাকেই দেশ থেকে তাড়িয়েছে!  এখন বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।
    কামাল পাশা এই সত্য খুব ভালোভাবে বুঝেছিলেন! সেজন্যই একশো বছর আগে তুরস্কে এদের চাবকে সিধে করেছিলেন।

    এটাই একমাত্র পথ, এছাড়া আর অন্য কোনো পথ নেই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন