সামান্থা ফুটারম্যান এবং আনাইস বোর্ডিয়ার—দুই মহাদেশের দুই প্রান্তে বেড়ে ওঠা দুই তরুণী, যাদের জীবনকে সংযুক্ত করেছিলো এক বিস্ময়কর ঘটনা। তাদের গল্পটি আধুনিক প্রযুক্তির যুগে যোগাযোগ এবং মানব সম্পর্কের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত। এটি প্রমাণ করে যে, দূরত্ব বা ভৌগোলিক বিভাজন যতই থাকুক না কেন, রক্তের বাঁধন ঠিকই তার পথ খুঁজে নেয়।
তাদের দুজনের জন্ম হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ায়, কিন্তু শৈশবেই তাদের দত্তক নেওয়া হয়। সামান্থাকে দত্তক নেয় আমেরিকার একটি পরিবার, আর আনাইসকে ফ্রান্সের একটি পরিবার।
স্বাভাবিকভাবেই, দুই ভিন্ন সংস্কৃতিতে, দুই ভিন্ন ভাষায় এবং দুই ভিন্ন জীবনযাত্রায় তারা বড় হতে থাকে, একে অপরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ থেকে।
গল্পের মোড় নেয় ২০১১ সালে, যখন আনাইসের এক বন্ধু ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে, যেখানে সামান্থাকে দেখা যাচ্ছিল। আনাইসের বন্ধুটি তাৎক্ষণিকভাবেই বুঝতে পারে যে সামান্থার চেহারা আনাইসের মতোই।
কৌতূহলী হয়ে আনাইস সামান্থার খোঁজ করতে শুরু করে এবং দেখতে পায় যে তারা দুজনেই দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। এই মিলগুলি তাদের মনে সন্দেহ তৈরি করে।
আনন্দের সাথে মিশে থাকা অবিশ্বাস নিয়ে আনাইস সামান্থাকে ফেসবুকে মেসেজ পাঠায়। প্রথমে সামান্থা এটিকে কোনো মজা বা মিথ্যা বলে মনে করলেও, আনাইসের পাঠানো ছবি এবং তথ্যের মিল দেখে তিনি অবাক হন।
এরপর তারা স্কাইপে কথা বলে এবং নিশ্চিত হয় যে তারা শুধু দেখতেই একরকম নয়, তাদের আচরণ, পছন্দ-অপছন্দ এবং জন্ম তারিখও এক। DNA টেস্টের মাধ্যমে অবশেষে নিশ্চিত হয় যে তারা সত্যিই যমজ বোন।
এই ঘটনাটি শুধু তাদের দুজনের জীবনকেই বদলে দেয়নি, বরং এটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাদের এই অসাধারণ গল্প নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়, যার নাম "টুইন সিস্টার্স: আ মেমরিজ ল্যান্ডস্কেপ" (Twin Sisters: A Memories Landscape)।
এই তথ্যচিত্রটি তাদের প্রথম সাক্ষাতের মুহূর্ত এবং একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার সেই আবেগঘন যাত্রা তুলে ধরেছে।
সামান্থা ফুটারম্যান ও আনাইস বোর্ডিয়ারের গল্পটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, পরিবার শুধু রক্তের সম্পর্ক নয়, বরং ভাগ্যের এক সূক্ষ্ম সুতোর বাঁধন।
আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে হারিয়ে যাওয়া সম্পর্কগুলোকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া কতটা সম্ভব, তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ এই দুই যমজ বোন। তাদের গল্পটি আসলে আশা, ভালোবাসা এবং অদম্য মানব সম্পর্কের এক অনন্য গাঁথা।
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।