এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি

  • মন্দির প্রতিযোগিতায় নেমে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষতি হলো না তো?

    সুমন সেনগুপ্ত
    আলোচনা | রাজনীতি | ০৩ মে ২০২৫ | ১২৬ বার পঠিত


  • ফারাকটা এক বছরের একটু বেশী। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ঢাক ঢোল পিটিয়ে ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে দেশের প্রধানমন্ত্রী অযোধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন রাম মন্দির আর ২০২৫ সালে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করলেন জগন্নাথ মন্দির, দীঘাতে। রামমন্দির উদ্বোধনের সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল, কোনও নির্বাচিত সরকার কি সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য এইরকম মন্দির স্থাপন করতে পারে? সেই সময়ে উত্তর ছিল, রামমন্দির তো কোনও সরকার করেনি, রামমন্দির ট্রাস্ট এই কাজটি করেছে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে। এবারও একই প্রশ্ন উঠেছে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও কি তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠেরই মুখ্যমন্ত্রী? তিনিই বা কী করে দীঘাতে এই মন্দির উদ্বোধন করলেন? তাঁর কাছেও অবশ্য উত্তর আছে যে এই বিশালাকায় বিগ্রহ সমেত মন্দিরসম বিষয়টি তো মন্দির নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, আর সরকার তো এই ধরনের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়তেই পারে।

    আসল কথাটা হলো দৃশ্যগতভাবে রাজনৈতিক ভাবে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী দু’টি দল ঠিক এক ভঙ্গিতে ধর্মনিরপেক্ষ প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা লঙ্ঘন করে মেতে উঠল সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের মন্দির নির্মাণে। অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রী, আর দীঘায় মুখ্যমন্ত্রী— কেউ নিজের হাতে পুজো করে, আর কেউ যজ্ঞে আহুতি দিয়ে শঙ্খ বাজিয়ে— নিজের হিন্দুত্বের প্রমাণ পেশ করলেন। কে কত বড় হিন্দু এ যেন তার প্রমাণ দেওয়ার প্রতিযোগিতা। ভারতের সংবিধান যে রাষ্ট্রকে এইরকম কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার অনুমতি দেয় না, দেখা গেল যে, সে কথাটি মনে রাখার দায় কোনও তরফেরই নেই। কেউ ব্যক্তিগতভাবে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মাচারণ করতেই পারেন, কিন্তু সেটা কী প্রকাশ্যে করতে পারেন? অবশ্য এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলতেই পারেন, তিনি শুধু অনুকরণ করেছেন মাত্র। দেশের প্রধানমন্ত্রী বা প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যদি করতে পারেন, একই ধরনের কাজ, তিনি তো চুনোপুঁটি মাত্র। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সমস্ত ধর্ম-বর্ণের মানুষ যোগ দিয়েছেন জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে। যদি সেটাও সত্যি হয়, তাহলেও কিছু বদল হয় কি? অনুষ্ঠানটির ধর্মীয় চরিত্র তাতে পাল্টায় কি? হিন্দু ধর্মের মন্দির কোনও মন্ত্রবলে ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে না। বিশেষ করে এই সময়ে, যখন পহেলগাঁও তে ধর্ম দেখে দেখে সন্ত্রাসবাদীরা মানুষকে মেরেছে, যখন তার পরবর্তীতে পুরো দেশ জুড়েই নতুন করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষ তীব্র হয়ে উঠছে, যখন ওয়াকফ আইন নিয়ে বিরোধিতা এবং তারপরে মুর্শিদাবাদে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে মুসলমানরা অতি বিপন্ন বোধ করছেন, ঠিক সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মন্দির উদ্বোধন করে কী বার্তা প্রেরণ করলেন, তা বোঝার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা তাঁর নিশ্চিত ভাবেই আছে। যে মুসলমানরা এতদিন তাঁকে উজাড় করে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের কী মনে হয়েছে, তা একবারও তিনি কি ভেবেছেন?

    এরপর ঠিক যেমনটা রামমন্দির উদ্বোধনের সময়ে বাড়ি-বাড়ি প্রসাদ পাঠানোর ব্যবস্থা হয়েছিল ঠিক তেমনভাবে মুখ্যমন্ত্রী বললেন বাড়ি-বাড়ি প্রসাদ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্যের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রককে। রামমন্দিরের ক্ষেত্রে তাও এই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছিল বিজেপি এবং আরএসএসের কর্মীদের, এক্ষেত্রে তো সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব দেওয়া হলো, যেন ঐ মন্ত্রকের এটাই কাজ।

    আমরা সকলেই যখন দেখেছিলাম প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রামমন্দির উদ্বোধনের পুজো করছেন এবং জাতীয় সমস্ত মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করছে, তখন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে তাতে আমরা সকলেই হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়েছি। নিস্ফল আক্রোশে হাত মুঠো করেছি, কিন্তু খুব বেশী আশ্চর্য হইনি। তিনি খোলাখুলিই হিন্দুত্ববাদের রাজনীতি অনুশীলন করেন এটা আমরা জানি। সংবিধান-বর্ণিত ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিজেপি কোনোদিনই খুব বেশী আমল দেয়নি এবং এখন তো আরো দেয়না। প্রধানমন্ত্রীও কখনও নিজেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন বলে আমাদের জানা নেই। তিনি সরাসরিই সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের পাশে এবং সাথে আছেন তা বলেই থাকেন। নির্বাচনী সভা থেকে শুরু করে নানান সভায় দাঁড়িয়ে তিনি সংখ্যালঘুদের আক্রমণ করেছেন কদর্য সেই উদাহরণও অজস্র। উল্টোদিকে আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তত মৌখিক ভাবে ধর্মনিরপেক্ষতারই রাজনীতি করেন বলে জেনে এসেছি। অনেকে বলে থাকেন, ভারতে বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের মুখে তিনিই নাকি শেষ এবং কঠিনতম প্রতিরোধ। অনেকেই মনে করেন তিনি সরাসরি বিজেপিকে সমালোচনা করেন এবং সেটাই তাঁর ইউএসপি। কিন্তু মন্দিরের উদ্বোধনে তাঁর সক্রিয় উপস্থিতি সেই জায়গাটাতেই প্রশ্ন তুলে দেয়। কেউ কেউ বলছেন, তিনি এবার একটা মসজিদ উদ্বোধন করবেন, কিন্তু সেটা হবার নয়। অনেকে বলছেন যে, প্রতি বছর ইদের জমায়েতে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই আপত্তি ওঠে না কেন? অবশ্যই এই প্রশ্ন ওঠা উচিৎ। সংবিধানের শপথ নেওয়া কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীরই কোনও ধর্মীয় জমায়েতে থাকা বাঞ্ছনীয় নয়। আরো একটা কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া জরুরি। সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মের সঙ্গে শাসকের যোগাযোগ সংখ্যালঘুকে বিপন্নতার বার্তা দেয়। সংখ্যালঘুর প্রতি শাসকের নৈতিক কর্তব্য যদি কিছু থাকে তা হলো, কখনোই যেন এটা প্রতিভাত না হয় আসলে তিনিও সংখ্যাগুরুর প্রতিনিধি।

    আমাদের বন্ধু দ্বৈপায়ন ব্যানার্জী একটি অত্যন্ত দামী কথা লিখেছেন। সেই কথাগুলো এখানে হুবহু না লিখে দিলে বিষয়টা পরিষ্কার বোঝানো সম্ভব নয়। “সাভারকর চেয়েছিলেন রাজনীতির হিন্দু-করণ ও হিন্দু সমাজের সামরিকীকরণ করতে। রাজনীতির হিন্দু-করণ মানে কিন্তু রাজনীতির অঙ্গনে হিন্দুত্বের রাজনীতি করা নয়। রাজনীতির অঙ্গনটিরই হিন্দু-করণ ঘটানো। তাই সংঘ খুশিই হয় যখন তাদের রাজনৈতিক শাখা সংগঠন ভারতীয় জনতা পার্টির বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলও হিন্দুত্বের ভাষায় কথা বলে। তুচ্ছ ভোটের রাজনীতির উর্দ্ধে উঠে এই দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ্যে তারা এগিয়ে চলেছে। তাতে যদি অন্য রাজনৈতিক দল ভোটের রাজনীতিতে একটু এগিয়েও যায় তবুও সেটা আসলে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের পথে উপলখণ্ড নয় বরং তা হিন্দু রাষ্ট্রের পথটিকে আরো প্রশস্তই করে।

    বস্তুত, যখন যখন তারা তাঁদের রাজনৈতিক শাখা সংগঠন অর্থাৎ জন সংঘ বা ভাজপা-র বাইরে অন্যদের ও তাঁদের মতে চলতে বাধ্য করতে পেরেছেন তখনই তাঁদের শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে। তাঁদের সংঘাধিপতি সুদর্শন একবার বলেছিলেন যে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিই তাদের চোখে সমান যদি তারা হিন্দু জাগরণ, স্বদেশী ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী হন।

    ১৯৮৪ সালের ভোটের একমাস আগে সংঘের বিখ্যাত বুদ্ধিজীবী নানাজী দেশমুখ রাজীব গান্ধীকে ভোট দেওয়ার কথা বলেন। এবং, এটা একদমই লুকোনো ব্যাপার নয় যে ১৯৮৪ সালের ভোটে আর-এস-এস সার্বিক ভাবে রাজীব গান্ধীকে সরকারে আনার জন্য সংঘ শক্তিকে ব্যবহার করে। শুধু তাই নয় ১৯৮৪ এর ঐতিহাসিক জয়ের পর জগজীবন রাম মন্তব্য করেছিলেন যে এই জয় হল - ভোট ফর হিন্দু ইন্ডিয়া। মোটের ওপর সেকুলার জহরলালের ঐতিহ্যকে কীভাবে ১৯৬৬ সাল থেকেই ইন্দিরা গান্ধী তরল করার চেষ্টা করেছিলেন তার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। সেই ইতিহাস আলোচনার জায়গা এই প্রতিবেদন নয়। কিন্তু, এর ফলে কংগ্রেসের কী লাভ হয়েছিল? আমরা সবাই এর উত্তর জানি।

    রাম জন্মভূমির তালা খোলা ও শাহ বানু মামলায় মুসলিম মৌলবাদী শক্তিকে তোল্লাই এই জোড়া ভুলের ফলে যে পতনের সূত্রপাত শুরু হয়েছিল তা থেকে কংগ্রেস আর মাথা তুলতে পারেনি। তাই ১৯৮৪ এর ঐতিহাসিক জয়ের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল কংগ্রেসের ক্রমবর্ধমান পতনের শুরু।

    সাম্প্রতিক কালে কেজরিওয়ালের কথাই ভাবুন না কেন। তাঁর হিন্দু তাস খেলা তাকে একটা দুটো নির্বাচনে সুবিধা দিলেও শেষ পর্যন্ত শ্রী হনুমান তাঁকে বাঁচালেন না। আজ আমাদের রাজ্যে কোটি কোটি সরকারি টাকা ব্যয়ে যে সংখ্যাগুরু ধর্মের উপসনাগৃহ নির্মাণ হল তার দীর্ঘমেয়াদী ফল ফলবে। হয়তো এর ফলে ২০২৬ এর ভোটে মমতা ব্যানার্জীর জয় আরো সুগম হল। কিন্তু, উনি ভেবে দেখেছেন কি যে মুসলিম সমাজ বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে আসতে না দিতে চেয়ে ওঁকে প্রায় প্রত্যেকটি নির্বাচনে জিতিয়ে আনছে তাঁদের মনে মনে কেমন লাগল? কেমন লাগল সরকারি টাকায় সংখ্যাগুরু ধর্মের উদযাপন। কেন মন্দিরের মূল অংশে অন্য ধর্মের মানুষের প্রবেশ নিষেধ? কোন যুক্তিতে অন্য রাজ্যের ব্রাহ্মণ এসে তাঁদের ব্রাহ্মণ্যবাদী আচার বিচার চাপাচ্ছে? ব্যক্তি মমতা দেবী হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী হতেই পারেন। তিনি নিজের ব্যক্তিগত টাকায় বা কোনো বেসরকারি ট্রাস্ট স্থাপন করে মন্দির বানাতেই পারেন। সেটা তার ব্যক্তিগত ধর্মাচরণের অধিকারের মধ্যেই পরে। কিন্তু, সেকুলার ভারতবর্ষের সেকুলার সংবিধানে শপথ নিয়ে সংখ্যাগুরু ধর্মের জন্য সরকারি টাকায় মন্দির স্থাপন সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে আসে না। শুভেন্দুর থেকে সংঘের ঢের বেশি ঘনিষ্ঠ দিলীপ সেটা জানেন আর জানেন বলেই এটাকে হিন্দু জাগরণ-এর অংশ হিসেবে দেখছেন। এবং, সঠিক ভাবেই দেখছেন।

    সেদিনের ঐ জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা নিয়ে বিজেপিতে নানান দলীয় কোন্দল হয়তো সামনে দেখা যাচ্ছে, কিন্তু সেটাই সব নয়, এর পিছনে আরো কিছু কথা আছে, যা দিলীপ ঘোষ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় বলে দিয়েছেন অনুষ্ঠান পরবর্তী কিছু সাক্ষাৎকারে। তাঁর কথা অনুযায়ী এই রাজ্যটা বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল, বিবেকানন্দের কথা বলতো, সেই রাজ্যে আজকে রামনবমীর মিছিল হয় এবং তাতে তৃণমূল থাকে, অংশ নেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্দিরের রাজনীতি করতে বিজেপি এবং আরএসএস বাধ্য করেছে। এখানেই আসলে আরএসএসের জিত। অনেকে ভাবছেন এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপির ওপর ফেলা অ্যাটম বম্ব। ইতিমধ্যেই উড়িষ্যা থেকে এই মন্দির সংক্রান্ত নানান বিরোধিতা শুরু হয়েছে, কিন্তু সমস্ত আলোচনাই হচ্ছে সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় উপাসনাস্থল কেন্দ্রিক, সেখানেই বিজেপি-আরএসএস জিতে যাচ্ছে।

    সামনের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিততে পারবেন কি পারবেন না, তা বলার এখনো সময় আসেনি। আরো বেশ কিছু ঘটনা ঘটবে। ইতিমধ্যেই জাতিগত জনগণনার কথা ঘোষণা হয়ে গেছে, যা নিয়েও বেশ কিছু সমস্যা হবে বোঝাই যাচ্ছে। এই মন্দিরে কি খুব দ্রুত বিজেপির কিছু লাভ হবে? সেটা হয়তো নাও হতে পারে। কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদি ভাবে রাজ্যের শাসক দলের সবাইকে নামিয়ে রাম নবমী পালন, গঙ্গা আরতি করা ইত্যাদির মাধ্যমে বাঙালি সমাজের হিন্দু-করনের দীর্ঘমেয়াদি লাভ নেবে সংঘ পরিবার এবং বিজেপি। সামাজিক পরিমণ্ডলটা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে আর বাকিটাও যাবে। দীঘার মন্দির থেকে তাঁর রাজনৈতিক লাভ কী, তিনি জানেন। ক্ষতি অবশ্যই হল। এরপর নিজেকে বিজেপির হিন্দুত্ব রাজনীতির বিরোধী হিসাবে দেখাতে গেলে তা জোলো ঠেকবে না তো?

    বাংলা সংস্কৃতির উদার অসাম্প্রদায়িকতার খোলা পথে হাটার পথও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কাছে খোলা ছিল। চৈতন্য, লালনের বাংলায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বা উত্তর ভারতীয় নিরামিশাষী সংস্কৃতির জায়গা নেই বললে, তিনি আরো বেশী সমর্থন পেতেন। তিনি নিজের দলের সমর্থকদের সামনে এক নির্দিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনীতির রুপরেখাও দিতে পারতেন, যা তামিলনাডুর স্টালিন করছেন। তিনি ভাষার লড়াইয়ের ওপরেও জোর দিতে পারতেন। ২০২১ সালের নির্বাচনে খানিকটা সেই পথ নিয়ে তিনি সাফল্যও পেয়েছিলেন। কিন্তু, এখানেই আর-এস-এস'র সাফল্য যে তাদের কাজের মাধ্যমে তারা রাজনীতির হিন্দুকরণে সক্ষম হয়েছে এবং শুধু বিজেপি নয় অন্য আঞ্চলিক দলকেও নিজেদের ভাবধারায় প্রভাবিত করতে পেরেছে। এই সময়েই দরকার ছিল বাংলার অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে উপরে তুলে ধরার এবং বর্তমানে ঘৃণিত 'সেকুলারিজম'-এর পথকে বেছে নেওয়ার। সেখানেই তিনি জিততে পারতেন, কিন্তু তিনি যেটা করলেন, তাতে লাভের থেকে ক্ষতির পরিমাণই বোধহয় বেশী হলো।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৩ মে ২০২৫ | ১২৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন