গত দু সপ্তাহ একটা খবর ক্রমাগত হেডলাইন হয়ে আসছে। প্রথমে কেরালায় ব্রেনখেকো অ্যামিবার প্রাদুর্ভাব হয়েছে অনেকের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। সাম্প্রতিকতম আতঙ্ক হল কলকাতায় নাকি এই রোগের কয়েকটা কেস "হানা দিয়েছে"।
খবরের কাগজ, বা তাদের টিভি এবং বৈদ্যুতিন চ্যানেলের একটাই কাজ আতঙ্ক ছড়ানো। আজকালকার সাংবাদিকরা তো পড়াশোনাও করে না। সাথে সুগ্রীব দোসর হয়েছে গুগল, এবং চ্যাটজিপিটি ইত্যাদি এআই অ্যাসিস্ট্যান্টরা। তারা খবর তৈরি করে, এবং তারপর তারা যে বাংলায় সে খবর পরিবেশনা করে, তাতে সত্য, তথ্য, বিজ্ঞান খুব কম থাকে, কিন্তু আতঙ্কটা রয়েই যায়। এই আতঙ্ক তাড়ানোর একমাত্র উপায় হল সঠিক বিজ্ঞান সম্মত তথ্য পরিবেশন করা।
ব্রেনখেকো অ্যামিবা জিনিসটা কি ?
নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে, এই ছোঁয়াচে রোগ সৃষ্টিকারী বস্তুটি জীবাণু অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নয়, এক ধরণের অ্যামিবা - যেটি প্রোটোজোয়া অর্থাৎ আদ্যপ্রাণী গোত্রে পড়ে। যে অ্যামিবাটি এই ব্রেন খেকো রোগটি ছড়ায়, তার গালভরা বৈজ্ঞানিক নামটা, অর্থাৎ Naegleria Fowleri (উচ্চারণ নেইগ্লেরিয়া ফাউলেরি /নাইগ্লিরিয়া ফাউলেরাই) সব খবরের কাগজের দৌলতে নিশ্চয়ই নজরে পড়েছে, কিন্তু এই নামটা জেনে তেমন কিছু লাভ হবে না। যেটা বোঝা প্রয়োজন , সেটা হল, আদ্যপ্রাণীরা কিন্তু বিবর্তনের নিরিখে ব্যাকটেরিয়ার চেয়ে মানুষের অনেক কাছাকাছি। কাজেই বেশিরভাগ অ্যান্টিবায়োটিক এদের ওপর কাজ করবে না এবং এদেরকে মারতে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় সেগুলো কিন্তু মানুষের পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।
"ব্রেনখেকো" নাম দেওয়া হয়েছে , কারণ এই অ্যামিবার সংক্রমণে যে রোগটি হয়, তার নাম (Primary Amoebic Meningoencephalitis, PAM) : শেষ শব্দটি অর্থাৎ Meningoencephalitis মানে হল মস্তিষ্কের প্রদাহ। এই রোগ শুরু হয় প্রবল জ্বর ও মাথাব্যথা দিয়ে, সাথে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়, খিঁচুনি থাকতে পারে, বিভ্রমের সাথে সাথে অসংলগ্ন আচরণ দেখা যায়, রোগী অজ্ঞান হয়ে যায় বারে বারে। শেষে কোমায় পৌঁছে মৃত্যু ডেকে আনে। পুরো রোগটাই খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায় - প্রথম লক্ষণ দেখা দেওয়া থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে মৃত্যু হতে পারে।
তাহলে কি চিকিৎসা নেই?
অতটা আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। চিকিৎসা যে কারণে কিছুদিন আগে পর্যন্ত তেমন কিছু ছিল না, তার কারণ এই রোগটি অত্যন্ত বিরল। সব চেয়ে বেশি কেস এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে আমেরিকায়, তাও এত বছর ধরে মাত্র ১৬১। বছরে গড়ে সাত আটটা। এত কম কেস হলে বিশেষ ভাবে এই রোগের চিকিৎসার গবেষণার জন্য কে টাকা ঢালবে ? এই রোগের মৃত্যুহার ছিল ৯৫%, তার একটা কারণ হল তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় করতে না পারা। বেশির ভাগ কেসই বিক্ষিপ্ত, একই হাসপাতালে কখনো দুটো কেস এসেছে কিনা সন্দেহ। কাজেই ডাক্তারদের সাধারণতঃ মাথাতেই আসেনা যে এরকম কোন রোগ নিয়ে রোগী এসেছে। প্রথমেই মনে করা হয় ব্যাক্টেরিয়াল বা ভাইরাল মেনিনজাইটিস হয়েছে। সেই হিসেবে চিকিৎসা শুরু করা হয়। কিন্তু অ্যামিবা তো আর এই সব ওষুধে সাড়া দেবে না !