ভুয়ো এপিক নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, নির্বাচন কমিশন তখন তাঁদের গাফিলতি ঢাকার উদ্দেশ্যে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে ডেকে মিটিং করে ঘোষণা করলো, তাঁরা আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ করিয়ে এই ভুয়ো ভোটার কার্ড সমস্যার সমাধান করতে চায়। প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সমাজ মাধ্যমে এই বিষয়টিকে স্বাগত জানানো হলো। সংসদের বিরোধী দলনেতা নিজে টুইট করে লিখলেন, অবশেষে নির্বাচন কমিশন তাঁদের অভিযোগকে মান্যতা দিল এবং আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযোগ ঘটানোর মধ্যে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয়। সঙ্গে অবশ্য তিনি আরও একটা কথা যুক্ত করলেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে কোনও ভোটার যেন বাদ না পড়েন, তা দেখতে হবে এবং সাধারণ মানুষের এই সংযোগ প্রক্রিয়ায় কোনও অসুবিধার সম্মুখীন না হন, সেদিকে নজর দিতে হবে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বাংলার বেশ কিছু মানুষের আধার নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল। তখন তৃণমুল এবং বিজেপির মধ্যে বেশ কিছু বাক্য বিনিময় হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, যাঁরা এই অসুবিধায় পড়েছেন, তাঁরা মূলত মতুয়া সম্প্রদায়ের পিছিয়ে পড়া মানুষ। সেই সময়ে আধার কতৃপক্ষ কোনও কারণ দেখাতে পারেনি, কেন এই আধার নিস্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল। কারা এই অসুবিধার জন্য দায়ী তা কিন্তু বোঝা যায় নি। সেটা কিন্তু একটা বড় অশনি সংকেত ছিল, যা অনেকেই বুঝতে পারেননি। এই সমস্যায় কিন্তু যে কোনও মানুষ যে কোনও দিন পড়তে পারেন। আধার কিন্তু যে কোনও সময়ে নিস্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে, যেহেতু এটা কোনও পরিচয়পত্র নয়। তাই আজকে যখন দেশের প্রধান বিরোধী দলনেতা ঐ আধার দিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজকে সমর্থন করেন, তখন বেশ কিছু কথা আবার বলতে হয়। প্রশ্ন উঠছে আধার নিয়েই যখন এত সমস্যা, সেই আধার দিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন আরও বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না তো?
২০০৯ সালে ইউপিএ সরকার একটি প্রকল্প আনে, যে মানুষদের কোনও পরিচয়পত্র নেই, সেই মানুষদের জন্য আনা হয়- আধার। দেখা গিয়েছিল সেই সময়ে ০.০৩ শতাংশ মানুষদের জন্য এই প্রকল্প আনা জরুরী। তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, এই আধার নামক বিষয়টির কোনও গুরুত্ব নেই। তারপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে, সেই নরেন্দ্র মোদীই যেকোনো সরকারি প্রকল্প পাওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে আধার সংযোগ বাধ্যতামূলক করেন। ধীরে ধীরে আধার প্রায় সমস্ত নাগরিকের সবরকম পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়, এমনকি যেসব ক্ষেত্রে সরকারী সুবিধা যুক্তও নয়, যেমন ব্যক্তিগত ট্যাক্স জমা দেওয়ার জন্য প্যান বা ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনেও আধারকে চাপ দিয়ে যুক্ত করা হয়। সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের রায়ে যদিও বলেছেন, যে শুধুমাত্র সরকারি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্র ছাড়া আর অন্য কোনও কিছুতে আধারকে যুক্ত করা যাবে না, তা সত্ত্বেও এই সংযুক্তির কাজ করা হয়। এই মূহুর্তে আইন করে আধার এবং ভোটার কার্ডের সংযোগের কথা বলা হয়েছে। সংসদের দু কক্ষে, প্রায় কোনও আলোচনা ছাড়াই এই আইনকে পাশ করানো হয়েছে আগেই। এই সময়ে যাঁরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন, তাঁদের বেশীরভাগ মানুষই তাঁদের ব্যক্তিগত ফোন থেকে তা ব্যবহার করেন। সেখানে অনেকেই সরকারের সমালোচনা করে থাকেন। ফলে ফোনের সঙ্গে যদি আধার যুক্ত করা থাকে, এবং সেই মানুষটির বাসস্থানও যেহেতু আধারের ডেমোগ্রাফিক তথ্য ভান্ডারে সংরক্ষিত আছে, তাই একজন মানুষকে চিহ্নিত করা এখন অত্যন্ত সোজা কাজ। তাঁদের উদ্দেশ্য অত্যন্ত পরিষ্কার, আধার দিয়ে একটি কেন্দ্রীভূত তথ্য ভাণ্ডার তৈরী করা, এবং ভোটের কার্ডকে তার সঙ্গে যুক্ত করে যাঁরা সরকার বিরোধী, বা যে সমস্ত মানুষ এই সরকারকে ভোট নাও দিতে পারে, তাঁদের বাদ দেওয়া।
বেশ কিছু বছর আগে আরটিআই করা হয়েছিল ইউআইডিএআইকে, তাতে দুটি প্রশ্ন করা হয়।