এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ

  • টঙ্কা নাকি ফক্কা – মেয়েদের হালচাল

    স্বাতী রায়
    আলোচনা | সমাজ | ০৯ মার্চ ২০২৫ | ১৫৮ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)


  • এক পরিচিত বৃদ্ধা। স্বামী জীবিত, কিন্তু শয্যাশায়ী। সংসারের আয় বলতে তাঁর পেনশন। খুব বেশি নয়, তবে টানাটানির মধ্যেও একটু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে চলা যায়। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনার ভার কি তাঁর হাতে? না, বরং তাঁকে নির্ভর করতে হয় পোস্ট অফিসের এজেন্টদের ওপর, যাঁরা নিজেদের সুবিধামতো তাঁকে কম সুদের এনএসসি কিনতে বললেও তিনি বিকল্প খোঁজার কথা ভাবতে পারেন না। কারণ, কখনো এসব কাজ নিজে করেননি, তাই জানেনও না।

    এমন ঘটনা কি খুব বিরল? না, মোটেই নয়। সংসারে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেও অনেক মেয়েই নিজস্ব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, কারণ তাঁদের কখনো সে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কেউ হয়তো সারা জীবন সংসার সামলেছেন, উপার্জন বা অর্থব্যবস্থাপনায় কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। কেউ হয়তো চাকরি করেন, তবে আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে স্বামীর ওপরই নির্ভরশীল। আবার কেউ হয়তো একাকী জীবন যাপন করছেন, তাও অর্থ ব্যবস্থাপনার ভার তুলে দিয়েছেন পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যের হাতে। বাঙালি মধ্যবিত্ত মেয়েদের জীবনের বারোমাস্যা। 

    এই সব দেখে শুনে প্রশ্ন জাগে—মধ্যবিত্ত মেয়েদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা কতটা? সমাজ বদলাচ্ছে, মেয়েদের আয়ের সুযোগও হই হই করে বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কি সমান তালে এগোচ্ছে? সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কি সত্যিই তাঁদের হাতে আসছে, নাকি শুধুই উপার্জনের অঙ্কটুকু বদলাচ্ছে?

    এই পরিবর্তন কতটা বাস্তবিক, তা বোঝার জন্যই একটি সমীক্ষা চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা নিজেদের আর্থিক সিদ্ধান্ত কতটা নিতে পারেন, কতটা সচেতন, সেটাই জানার উদ্দেশ্যে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমে একটি সার্ভে করা হয়। বন্ধুদের উৎসাহে বেশ ভালো সাড়াও পাওয়া গেছে। তাঁদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। 

    সমীক্ষার সীমাবদ্ধতা
    এই সমীক্ষা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হয়েছিল, এবং এর জন্য SurveyMonkey নামের একটি ফ্রি টুল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ফ্রি মেম্বারশিপের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রশ্নের সংখ্যা ১০টির বেশি রাখা সম্ভব হয়নি। তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—যেমন উত্তরদাতাদের বয়স, পারিবারিক আয় ইত্যাদি—বিশ্লেষণ করা যায়নি।

    এছাড়া, সমীক্ষাটি ছড়িয়েছে ব্যক্তিগত পরিচিতির মাধ্যমে, ফলে উত্তরদাতাদের গোষ্ঠী বেশ সংকীর্ণ। মূলত আমার পরিচিত ও তাঁদের পরিচিতরাই অংশ নিয়েছেন, যার ফলে এই তথ্যসেটটি মুলত নাগরিক মেয়েদের মধ্যে সীমিত আর যথেষ্ট একপেশে। এটি বাংলার সব মধ্যবিত্ত মেয়েদের অবস্থার প্রতিনিধি স্থানীয় নয় মোটেই।

    আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো—ভারতীয় মেয়েদের অনেককেই ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়, "বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না"। বিশেষ করে গৃহবধূদের ক্ষেত্রে সামাজিক ও মানসিক চাপ এতটাই বেশি যে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন। অনেকটা না খোঁচালে সাধারণ কথোপকথনে অনেক বাস্তব সত্যই উঠে আসতে পারেনা।
    তবে এত সব সীমাবদ্ধতার পরও, এই সমীক্ষা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া গেছে। পরবর্তী অংশে প্রথমে সেই উত্তর ও পরে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।

    সমীক্ষার উত্তর
    আমাদের সমীক্ষায় মোট ৩৪৯ জন উত্তর দিয়েছেন। তবে, এর মধ্যে ৩২৮ জন (~৯৪%) কখনো না কখনো উপার্জন করেছেন, যা ভারতের মেয়েদের লেবার ফোর্সে অংশগ্রহণের (২২-২৫%) হিসেবের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে, এই সমীক্ষা প্রকৃত গড় জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করছে না এটা মাথায় রেখেই পরের কথাগুলো ধরতে হবে। 
    কারা উপার্জন করেন, কারা করেন না?
    ✦ ৩২৮ জন (৯৪%) বর্তমানে বা আগে কখনো উপার্জন করেছেন।
    ✦ ২০ জন কখনোই উপার্জন করেননি।
    ✦ ১ জন উত্তর দেননি।
     



    Figure 1

    কে কিসে বিনিয়োগ করেন?
    ✦ ৯ জনের কোনো সম্পদ নেই।
    ✦ এর মধ্যে ৩ জন কখনো উপার্জন করেননি—এটা স্বাভাবিক।
    ✦ কিন্তু ৬ জন উপার্জন করেও কোনো সম্পদ তৈরি করেননি! 
    ✦ গৃহসম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রে: ৩০% নারীর একক নামে বাড়ি আছে। কিন্তু ৪৩% মেয়ের বসতবাড়িটি যৌথ মালিকানার ।
    ✦ ফিক্সড ইনকাম (FD, PPF ইত্যাদি) সবচেয়ে জনপ্রিয়: উপার্জন করা মেয়েদের ৮৩% এবং উপার্জন না করা নারীদের ৬৫% এই পথে টাকা রাখেন।
    ✦ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে একক মালিকানাই বেশি:
    ১৭৬ জন একক মালিক। মাত্র ৩৫ জন যৌথ মালিক।

     

    Figure 2

    আর্থিক বিষয়ে আত্মবিশ্বাস কতটা?
    ✦ মাত্র ১৩ জন বলেছেন "Extremely Confident"।
    ✦ ৮৯ জন বলেছেন "Very Confident"।
    ✦ কিন্তু ৭৩ জন (২১%) সরাসরি বলেছেন "Not confident at all" বা "Slightly Confident"।
    এতজন নিজের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে অনিশ্চিত কেন? তাঁরা কি পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছেন না? নাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পান না? 
    এদিকে ভারতের মেয়েদের বেসিক ফিনান্সিয়াল লিটারেসির হার বেশ কম! 



    Figure 3


    নিজের সম্পদের বিষয়ে মেয়েরা কতটা স্বাধীন?
    ✦ ২১.৩% নারী বলেছেন, তাঁরা সম্পূর্ণরূপে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল।
    তাহলে কি "একক মালিকানা" মানেই "স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ" নয়, অনেকটাই শুধু খাতায় কলমে? 

    Figure 4

    যৌথ সম্পদের সিদ্ধান্ত – মতামত দেওয়া নাকি শুধু সই করা?
    ✦ ৭ জন কর্মজীবী নারী বলেছেন, তাঁদের শুধু সই করতে বলা হয়!
    তাহলে কি যৌথ মালিকানা মানেই যৌথ সিদ্ধান্ত নয়? মেয়েদের মতামতের গুরুত্ব কতখানি?

    Figure 5

    আর্থিক সিদ্ধান্তের পিছনে কিসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি?
    ✦ ৪৬.৭% মেয়ে বলেছেন, নিজের জানা-বোঝার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেন।
    ✦ ৪০% পরিবার বা অন্যদের পরামর্শ নেন।
    ✦ মাত্র ২% (৭ জন) সামাজিক প্রত্যাশার প্রভাবের উল্লেখ করেছেন।

     
    Figure 6

    একা একা সিদ্ধান্ত নেওয়া – কতজন সত্যিই করেন?
    ✦ মাত্র ৪৭ জন (১৩.৫%) বলেছেন, তাঁরা সবসময় স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
    অথচ ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে ৬৯ জন বলেছেন, তাঁরা তাঁদের একক মালিকানাধীন সম্পদের সিদ্ধান্ত নিজেই নেন। তাহলে বাকি ১২ জন গেলেন কোথায়?

     

    Figure 7

    আপনার বর্তমান আর্থিক ভূমিকায় আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
    ✦ বেশির ভাগ মেয়েই ( ২৯৮ জন) বলেছেন তাঁরা কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট।
    কিন্তু আগে এক প্রশ্নে ৫৬ জন বলেছেন, তাঁরা একক সম্পদের সিদ্ধান্তও নিজে নেন না বা নিতে পারেন না! তাহলে সন্তুষ্টি মানে স্বাধীনতা নয়? পরিস্থিতি মেনে নিয়েই সুখী? 

     

    Figure 8



    আর্থিক স্বাধীনতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা কী?
    ✦ (৪৭.৫%) মেয়ে বলেছেন— জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার অভাবই সবচেয়ে বড় বাধা। 
    ✦ ৩৪.১% একেবারে স্বাধীন বলে জানিয়েছেন। 
    ✦ ১৩.৭% বলেন, ভুল করার ভয় বা মানসিক অস্বস্তি তাঁদের আটকায়। 
    ✦ পরিবারের সমর্থনের অভাব (৪%) খুব কম সংখ্যকই বাধা হিসেবে দেখেছেন, আর সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বাধা তো প্রায় নেই-ই (মাত্র ২ জন)।
    তাহলে কি আসল সমস্যা হলো শেখার সুযোগ আর ইচ্ছা কম, নয়তো বেশিরভাগই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন? 

     

    Figure 9
     


    শেষ প্রশ্ন: আর্থিক স্বাধীনতা আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ? 
    ✦ ৯২.৫% মহিলা বলেছেন—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!
    ✦ কেউই বলেননি যে এটা একদম দরকার নেই! 
    তাহলে কি সবাই চাই, কিন্তু সবসময় পারি না—এই ফারাকটাই আসল গল্প?
     

    Figure 10

    সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণ
    আমাদের সমাজ মনে করে, পরিবারই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। কিন্তু বাস্তব অন্যরকম। জীবনে যে কোনো সময় ঝড় আসতে পারে, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা সেই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই উপার্জন করুন বা না করুন, প্রতিটি মেয়েরই অর্থ ব্যবস্থাপনা জানা দরকার।

    ### সম্পদের মালিকানা ও সুরক্ষা
    অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ নিজের ও নির্ভরশীলদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৩% কর্মজীবী ও ৬৫% অ-কর্মজীবী মেয়ে একক বা যৌথভাবে বসতবাড়ির মালিক। বাড়ি তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সুরক্ষা না দিলেও এটা মেয়েদের জন্য বড় মানসিক শক্তির উৎস। কেউ কেউ মেডিক্লেম ও জীবনবীমার কথাও বলেছেন, যদিও এগুলো সম্পদ নয়, বরং সুরক্ষার অংশ।

    ### অর্থ ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস
    অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শুধু জানা যথেষ্ট নয়, আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও সুযোগও দরকার। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত ২১% মেয়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বুঝতে আত্মবিশ্বাসী নন। তবে যাঁদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে, তাঁদের মধ্যেও বেশিরভাগ মেয়ে পারিবারিক মতামতের ওপর নির্ভর করেন। অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সত্যিই কতটা স্বাধীন, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।

    কিছু উত্তরে অস্পষ্টতা রয়েছে—যারা নিজেদের কোনো সম্পদের মালিকানার কথা বলেননি, তাদের ৮ জন আবার সম্পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। আবার ৬২ জন যৌথ সম্পদের সিদ্ধান্তে অংশ নেন, কিন্তু মালিকানার কথা বলেননি। সম্পদ বলতে তাঁরা ঠিক যে কী বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।

    ### ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা
    ৫২% মেয়ে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, ৪৮% ঝুঁকি নিতে চান না। কারণ হতে পারে—(১) আর্থিক সামর্থ্যের অভাব, (২) ঝুঁকির প্রতি অনাগ্রহ, (৩) বিনিয়োগ সম্পর্কে কম জানা। ঝুঁকি না নেওয়া ৪৮% মেয়ের মধ্যে ৩৮ জন নিজেদের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী! শুধুই ফিক্সড ইনকামে বা রিয়েল এস্টেটে থাকা সম্পদ দীর্ঘ মেয়াদে ইনফ্লেশন দৈত্যের ঝুঁকি এড়াবে তো? নাকি আত্মবিশ্বাসটির ভিত নড়বড়ে? 

    ### অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে মেয়েদের ভূমিকা
    একক মালিকানাধীন সম্পদের ক্ষেত্রে মাত্র ১৯% মেয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেন। যৌথ সম্পদের ক্ষেত্রে ২২৪ জনের মধ্যে ২৯% সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেন না। অর্থাৎ, মালিক হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত।
    তবে বেশিরভাগ মেয়ে এতে স্বস্তিবোধ করেন—মাত্র ১৭ জন এতে অসন্তুষ্ট। সন্তুষ্টদের সিংহভাগ উপার্জন অভিজ্ঞতা যুক্ত। উপার্জন করলেই যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়বে, এমন নয়, যদি মানসিকতা না বদলায়।

    ### সেলফ-মোটিভেশনের অভাব
    অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ, পারিবারিক প্রভাব ও সামাজিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। ৪০% মেয়ে নিজের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিজে নেন না, অথচ তাঁদের ৭৫% এতে স্বস্তিবোধ করেন। অর্থাৎ, তাঁরা নিজেকে ক্ষমতান্বিত করতে বিশেষ আগ্রহী নন।

    ### সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মনির্ভরশীলতা
    ৪০% মেয়ে পরিবারের পরামর্শেই সিদ্ধান্ত নেন, যা সবসময় ভালো নাও হতে পারে। তবে ৪৭% নিজের জ্ঞান-বুদ্ধির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন, যা ইতিবাচক। মাত্র ৭% মেয়ের প্রধান বাধা মানসিক অস্বস্তি বা ভুল করার ভয়। সুখের কথা, এই ভয় কাটানো সম্ভব—যেমন সাঁতার শেখার পর জলের ভয় কেটে যায়। অর্থ ব্যবস্থাপনাও ঠিক তেমনই। নিজের জ্ঞান বাড়লেই ভয় কমে।

    উপসংহার
    পরিবার নিরাপদ আশ্রয় হলেও, জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন একা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারও নিরাপত্তার ছাতা সরে যেতে পারে, আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবেও একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও ভবিষ্যতে কী হবে বলা যায় না। তাই নিজের টাকা-পয়সার ব্যাপারে নিজে সতর্ক থাকা জরুরি।
    সমীক্ষার ফলাফল বলছে, বেশিরভাগ মেয়ে অর্থ সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী নন। ২১% মেয়ে এখনো বিনিয়োগ বা সঞ্চয় বুঝতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আবার যারা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের অনেকেই পরিবারের ওপর নির্ভর করেন। সেই সঙ্গে 
    ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়ে মেয়েদের দ্বিধা স্পষ্ট। তবে যাঁরা নিজেদের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তাঁদেরও অনেকেই কোন ঝুঁকি নেন না! জ্ঞানটি যথেষ্ট সময়-উপযোগী ও সম্পুর্ণ তো? প্রশ্ন থেকেই যায়।
    অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো—মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া। একক সম্পদের মালিক হয়েও অনেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যৌথ সম্পদের ক্ষেত্রেও তাঁদের ভূমিকা অনেক সময় গৌণ হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ মেয়ে এই পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। 
    একটি ভুল ধারণা হলো—উপার্জন করলেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। আবার উপার্জন না করলেও আর্থিক বিষয়ে সচেতন হওয়া সম্ভব। তাই অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা সবার জন্য জরুরি, শুধু চাকরি বা ব্যবসা করা মেয়েদের জন্য নয়।
    সমীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, মেয়েদের আর্থিক স্বাধীনতার পথে তিনটি প্রধান বাধা রয়েছে:
    1. বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের বিষয়ে কম জানা
    2. পরিবারের ওপর নির্ভরশীলতা
    3. সেলফ-মোটিভেশনের অভাব
    প্রথম দুটি সমস্যার সমাধান সম্ভব—ঠিকঠাক জ্ঞান অর্জন করলে নির্ভরশীলতা কমবে। ইন্টারনেট কিন্তু অনেক জ্ঞানের আধার। হরেক বিজ্ঞাপনী বটিকার ভিড়ে একটু বেছে বুছে নিতে হয় এই যা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও চাইলে অনেক কিছু শেখা যায়। শুধু রাজহাঁসটি হতে হয়, জলটি ফেলে ক্ষীর নিতে শিখতে হবে। সরকারি তরফেও অবশ্য আরও অনেক বেশি সচেতনতা ক্যাম্পেইন কাম্য ছিল। 

    কিন্তু সেলফ মোটিভেশন ? সেটা তো নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে! 
    তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত—নিজের টাকা-পয়সার দায়িত্ব নিজে নিতে শিখলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই যতটুকু সম্ভব শেখা আর প্র্যাকটিস করাই একমাত্র পথ!

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৯ মার্চ ২০২৫ | ১৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ০৯ মার্চ ২০২৫ ১০:২৬541548
  • আচ্ছা এই সার্ভের ফল এরকম এসেছে। আমি তো ভেবেছিলাম আরো কম৯জন পাওয়া যাবে যাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বা ব্যক্তিগত মালিকানায় সম্পদ আছে। তবে কে কী ভেবে উত্তর দিয়েছেন সেটা জানা নেই। 
     
    উদ্যোগটা খুবই ভাল। 
  • স্বাতী রায় | 117.194.***.*** | ০৯ মার্চ ২০২৫ ১৫:০৫541559
  • এমনিতেই  এত জন উত্তর দেবেন আমি তেমন আশা করিনি। আমার ফ্রি মেম্বারশিপে শেষ অবধি কুলায় নি। এত ডেটা দেখার জন্য মেম্বারশিপ নিতে হয়েছে।  

    তবে নেই মামার থেকে কানা মামা যদিও ভাল , তবু এই ডেটা তে আমার স্বস্তি হয় নি। বিশেষত বেশ কিছু ইনকন্সিস্টেন্সি চোখে পড়েছে  সেগুলো আরো বিশদে বোঝার দরকার ছিল .

    তবে সিরিয়াসলি আমার মনে হয় মধ্যবিত্ত মেযেদের নিয়ে বেশ অনেকটা কাজ করার আছে।  এখানে একটা  আনহারনেসড পাওয়ার যেটা সামান্য উৎসাহ পেলেই বেরোবে। খালি একটু ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে. 
  • Ranjan Roy | ০৯ মার্চ ২০২৫ ১৮:০৬541561
  • খুব ভালো উদ্যোগ স্বাতী রায়।
    আমার কাছ থেকে দেখা ইউনিটে মেয়েরা বেশি আর্থিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। 
    তবে আপনি যে বললেন-- আর্থিক বিষয়ক জ্ঞান দরকারি। 
    সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
    কিছু বাড়িতে উপার্জনক্ষম মেয়েরা কারও একজন বিশ্বাসভাজন পুরুষের উপর,  সে পরিবারের বাইরের লোক হতে পারে, চোখ বুঁজে ভরসা করে নিশ্চিন্ত থাকতে চান।
    আর্থিক জ্ঞান ব্যাপারটা খুব জটিল মনে করেন।
    তাই মাথা ঘামাতে চান না।
    অবশ্য অনেক পুরুষও তাই।
  • . | ০৯ মার্চ ২০২৫ ১৮:৪৪541562
  • ঝুঁকি নেবার বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হয় নি।
    শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটানোর ব‍্যাপার কি?
    পুরুষদের মধ‍্যে জুয়া খেলার (এটাও ঝুঁকিপূর্ণ চুড়ান্তভাবে) প্রবণতা খুবই বেশি, এমনকি লটারির টিকিট কেনার নেশাও। 
    আরেকটি বিষয় হচ্ছে স্থাবর সম্পত্তি যে সব মেয়েদের নামে আছে তার মধ্যে কতটা স্বোপার্জিত অর্থে সেটা জানা গেল না। হতে পারে ডাউরি প্রপার্টি। হতে পারে ট‍্যাক্সের সুবিধার জন‍্য পরিবারের নিকট আত্মীয় স্ত্রী/কন‍্যার নামে বাড়ি জমি কিনে রাখেন, কাজেই ঐ সম্পত্তি কাগজে ঐ মেয়েটির হলেও তার কোনও অধিকার নেই সম্পত্তিটির ব‍্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত ( বন্ধক, বিক্রি, কনস্ট্রাকশন, ইত‍‍্যাদি) নেবার।
    বিশেষ করে মারোয়াড়িদের মধ‍্যে এই প্রবণতা খুবই বেশি। কোনও বায়াস থেকে বলা নয়। ঐ মহিলারা এই সব সার্ভে তে আগামি পঞ্চাশ বছরেও অংশ নেবেন না। এরকম প্রচুর মহিলাকে চিনি বলেই বলছি। কোটি কোটি টাকার প্রপার্টি অথচ কোনও অধিকার নেই। এ জিনিস বাঙালিদের মধ‍্যেও কিছু আছে, বিশেষ করে বাড়ি বা ফ্ল‍্যাট কেনার সময় ট‍্যাক্সের ঝামেলা এড়াতে বৌয়ের নামে সেগুলো কেনা। আশেপাশেই প্রচুর উদাহরণ পাবেন। এইসব মহিলারাও নিজের নামে রেজিস্ট্রি হওয়া সম্পত্তির মূল‍্য জানেন না, অধিকারও নেই। জাস্ট ডামি র ভূমিকায়। ব‍্যাঙ্কের টাকার ক্ষেত্রেও তাই।
    ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষেত্রে মেয়েদের মধ‍্যে ঝুঁকি নেবার ইচ্ছেটা কম থাকে আশৈশব নিজের সুরক্ষা(দেহের) নিয়ে অতিসচেতনতার কারণে কিছুটা হতে পারে বলে আমার ব‍্যক্তিগত ধারণা। ঐ একই ব‍্যাপার নিজের অর্জিত অর্থের ব‍্যাপারে সিদ্ধান্ত না নেওয়া, আত্মবিশ্বাসের অভাবে। এই আত্মবিশ্বাসের অভাব সর্বক্ষণ সমাজে যেভাবে মেয়েদের ওপর কম ভরসা করা হয়ে থাকে, তারই ফলাফল।  নিজেকে কম মানুষ, লেসার হিউম‍্যান ভাবতে শিখি নিজেরই অজান্তে। শুধু ফিমেল মেম্বারওয়ালা ফ‍্যামিলির মেয়েরা যেমন প্রায়শই বলে থাকেন — আমাদের কোনও গার্জেন নেই। আমরা সাবধানে থাকি।
    এই মানসিকতার বা এইরকম কথা বলার উদারণও কম নয়। 
    মেয়েরা অঙ্ক করতে ভয় পায়। অঙ্কের মাথা শার্প নয়। বরং বায়োলজি বা বাংলা বা ইতিহাস ওদের সাবজেক্ট, যেগুলোয় বুদ্ধি লাগে না - এরকম মানসিকতা শুধু আমাদের সমাজেই না, সারা দুনিয়ায়। অঙ্ক যে নিজেই জানে না বা কম জানে মনে করে, সে কীকরে টাকা পয়সা সামলাবে? 
     
  • . | ০৯ মার্চ ২০২৫ ১৮:৫১541563
  • আমার স্বামীও আমার টাকা নিয়ে নিতেন নিয়মিত, ভালো জায়গায় ইনভেস্ট করবেন বলতেন। পরে একদিন জানলাম জুয়ায় সব টাকা গেছে। সত‍্য মিথ্যা যাচাই করতে পারি নি। কেন টাকাগুলো দিয়ে দিতাম? পারিবারিক ঝামেলা এড়াতে। সমস‍্যা ঝগড়া চেঁচামেচি চাইতাম না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন