এক পরিচিত বৃদ্ধা। স্বামী জীবিত, কিন্তু শয্যাশায়ী। সংসারের আয় বলতে তাঁর পেনশন। খুব বেশি নয়, তবে টানাটানির মধ্যেও একটু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে চলা যায়। কিন্তু সেই ব্যবস্থাপনার ভার কি তাঁর হাতে? না, বরং তাঁকে নির্ভর করতে হয় পোস্ট অফিসের এজেন্টদের ওপর, যাঁরা নিজেদের সুবিধামতো তাঁকে কম সুদের এনএসসি কিনতে বললেও তিনি বিকল্প খোঁজার কথা ভাবতে পারেন না। কারণ, কখনো এসব কাজ নিজে করেননি, তাই জানেনও না।
এমন ঘটনা কি খুব বিরল? না, মোটেই নয়। সংসারে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেও অনেক মেয়েই নিজস্ব অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, কারণ তাঁদের কখনো সে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। কেউ হয়তো সারা জীবন সংসার সামলেছেন, উপার্জন বা অর্থব্যবস্থাপনায় কোনো সক্রিয় ভূমিকা ছিল না। কেউ হয়তো চাকরি করেন, তবে আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে স্বামীর ওপরই নির্ভরশীল। আবার কেউ হয়তো একাকী জীবন যাপন করছেন, তাও অর্থ ব্যবস্থাপনার ভার তুলে দিয়েছেন পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যের হাতে। বাঙালি মধ্যবিত্ত মেয়েদের জীবনের বারোমাস্যা।
এই সব দেখে শুনে প্রশ্ন জাগে—মধ্যবিত্ত মেয়েদের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা কতটা? সমাজ বদলাচ্ছে, মেয়েদের আয়ের সুযোগও হই হই করে বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কি সমান তালে এগোচ্ছে? সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা কি সত্যিই তাঁদের হাতে আসছে, নাকি শুধুই উপার্জনের অঙ্কটুকু বদলাচ্ছে?
এই পরিবর্তন কতটা বাস্তবিক, তা বোঝার জন্যই একটি সমীক্ষা চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা নিজেদের আর্থিক সিদ্ধান্ত কতটা নিতে পারেন, কতটা সচেতন, সেটাই জানার উদ্দেশ্যে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমে একটি সার্ভে করা হয়। বন্ধুদের উৎসাহে বেশ ভালো সাড়াও পাওয়া গেছে। তাঁদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
সমীক্ষার সীমাবদ্ধতা
এই সমীক্ষা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হয়েছিল, এবং এর জন্য SurveyMonkey নামের একটি ফ্রি টুল ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ফ্রি মেম্বারশিপের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রশ্নের সংখ্যা ১০টির বেশি রাখা সম্ভব হয়নি। তাই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—যেমন উত্তরদাতাদের বয়স, পারিবারিক আয় ইত্যাদি—বিশ্লেষণ করা যায়নি।
এছাড়া, সমীক্ষাটি ছড়িয়েছে ব্যক্তিগত পরিচিতির মাধ্যমে, ফলে উত্তরদাতাদের গোষ্ঠী বেশ সংকীর্ণ। মূলত আমার পরিচিত ও তাঁদের পরিচিতরাই অংশ নিয়েছেন, যার ফলে এই তথ্যসেটটি মুলত নাগরিক মেয়েদের মধ্যে সীমিত আর যথেষ্ট একপেশে। এটি বাংলার সব মধ্যবিত্ত মেয়েদের অবস্থার প্রতিনিধি স্থানীয় নয় মোটেই।
আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো—ভারতীয় মেয়েদের অনেককেই ছোটবেলা থেকে শেখানো হয়, "বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না"। বিশেষ করে গৃহবধূদের ক্ষেত্রে সামাজিক ও মানসিক চাপ এতটাই বেশি যে তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করতে দ্বিধা বোধ করেন। অনেকটা না খোঁচালে সাধারণ কথোপকথনে অনেক বাস্তব সত্যই উঠে আসতে পারেনা।
তবে এত সব সীমাবদ্ধতার পরও, এই সমীক্ষা থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়া গেছে। পরবর্তী অংশে প্রথমে সেই উত্তর ও পরে বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো।
সমীক্ষার উত্তর
আমাদের সমীক্ষায় মোট ৩৪৯ জন উত্তর দিয়েছেন। তবে, এর মধ্যে ৩২৮ জন (~৯৪%) কখনো না কখনো উপার্জন করেছেন, যা ভারতের মেয়েদের লেবার ফোর্সে অংশগ্রহণের (২২-২৫%) হিসেবের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে, এই সমীক্ষা প্রকৃত গড় জনসংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করছে না এটা মাথায় রেখেই পরের কথাগুলো ধরতে হবে।
কারা উপার্জন করেন, কারা করেন না?
✦ ৩২৮ জন (৯৪%) বর্তমানে বা আগে কখনো উপার্জন করেছেন।
✦ ২০ জন কখনোই উপার্জন করেননি।
✦ ১ জন উত্তর দেননি।
Figure 1
কে কিসে বিনিয়োগ করেন?
✦ ৯ জনের কোনো সম্পদ নেই।
✦ এর মধ্যে ৩ জন কখনো উপার্জন করেননি—এটা স্বাভাবিক।
✦ কিন্তু ৬ জন উপার্জন করেও কোনো সম্পদ তৈরি করেননি!
✦ গৃহসম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রে: ৩০% নারীর একক নামে বাড়ি আছে। কিন্তু ৪৩% মেয়ের বসতবাড়িটি যৌথ মালিকানার ।
✦ ফিক্সড ইনকাম (FD, PPF ইত্যাদি) সবচেয়ে জনপ্রিয়: উপার্জন করা মেয়েদের ৮৩% এবং উপার্জন না করা নারীদের ৬৫% এই পথে টাকা রাখেন।
✦ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে একক মালিকানাই বেশি:
১৭৬ জন একক মালিক। মাত্র ৩৫ জন যৌথ মালিক।
Figure 2
আর্থিক বিষয়ে আত্মবিশ্বাস কতটা?
✦ মাত্র ১৩ জন বলেছেন "Extremely Confident"।
✦ ৮৯ জন বলেছেন "Very Confident"।
✦ কিন্তু ৭৩ জন (২১%) সরাসরি বলেছেন "Not confident at all" বা "Slightly Confident"।
এতজন নিজের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে অনিশ্চিত কেন? তাঁরা কি পর্যাপ্ত তথ্য পাচ্ছেন না? নাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পান না?
এদিকে ভারতের মেয়েদের বেসিক ফিনান্সিয়াল লিটারেসির হার বেশ কম!
Figure 3
নিজের সম্পদের বিষয়ে মেয়েরা কতটা স্বাধীন?
✦ ২১.৩% নারী বলেছেন, তাঁরা সম্পূর্ণরূপে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল।
তাহলে কি "একক মালিকানা" মানেই "স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ" নয়, অনেকটাই শুধু খাতায় কলমে?
Figure 4
যৌথ সম্পদের সিদ্ধান্ত – মতামত দেওয়া নাকি শুধু সই করা?
✦ ৭ জন কর্মজীবী নারী বলেছেন, তাঁদের শুধু সই করতে বলা হয়!
তাহলে কি যৌথ মালিকানা মানেই যৌথ সিদ্ধান্ত নয়? মেয়েদের মতামতের গুরুত্ব কতখানি?
Figure 5
আর্থিক সিদ্ধান্তের পিছনে কিসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি?
✦ ৪৬.৭% মেয়ে বলেছেন, নিজের জানা-বোঝার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেন।
✦ ৪০% পরিবার বা অন্যদের পরামর্শ নেন।
✦ মাত্র ২% (৭ জন) সামাজিক প্রত্যাশার প্রভাবের উল্লেখ করেছেন।
Figure 6
একা একা সিদ্ধান্ত নেওয়া – কতজন সত্যিই করেন?
✦ মাত্র ৪৭ জন (১৩.৫%) বলেছেন, তাঁরা সবসময় স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
অথচ ৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তরে ৬৯ জন বলেছেন, তাঁরা তাঁদের একক মালিকানাধীন সম্পদের সিদ্ধান্ত নিজেই নেন। তাহলে বাকি ১২ জন গেলেন কোথায়?
Figure 7
আপনার বর্তমান আর্থিক ভূমিকায় আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
✦ বেশির ভাগ মেয়েই ( ২৯৮ জন) বলেছেন তাঁরা কিছুটা হলেও সন্তুষ্ট।
কিন্তু আগে এক প্রশ্নে ৫৬ জন বলেছেন, তাঁরা একক সম্পদের সিদ্ধান্তও নিজে নেন না বা নিতে পারেন না! তাহলে সন্তুষ্টি মানে স্বাধীনতা নয়? পরিস্থিতি মেনে নিয়েই সুখী?
Figure 8
আর্থিক স্বাধীনতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা কী?
✦ (৪৭.৫%) মেয়ে বলেছেন— জ্ঞান বা অভিজ্ঞতার অভাবই সবচেয়ে বড় বাধা।
✦ ৩৪.১% একেবারে স্বাধীন বলে জানিয়েছেন।
✦ ১৩.৭% বলেন, ভুল করার ভয় বা মানসিক অস্বস্তি তাঁদের আটকায়।
✦ পরিবারের সমর্থনের অভাব (৪%) খুব কম সংখ্যকই বাধা হিসেবে দেখেছেন, আর সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বাধা তো প্রায় নেই-ই (মাত্র ২ জন)।
তাহলে কি আসল সমস্যা হলো শেখার সুযোগ আর ইচ্ছা কম, নয়তো বেশিরভাগই স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন?
Figure 9
শেষ প্রশ্ন: আর্থিক স্বাধীনতা আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
✦ ৯২.৫% মহিলা বলেছেন—অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ!
✦ কেউই বলেননি যে এটা একদম দরকার নেই!
তাহলে কি সবাই চাই, কিন্তু সবসময় পারি না—এই ফারাকটাই আসল গল্প?
Figure 10
সমীক্ষার ফল বিশ্লেষণ
আমাদের সমাজ মনে করে, পরিবারই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। কিন্তু বাস্তব অন্যরকম। জীবনে যে কোনো সময় ঝড় আসতে পারে, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা সেই চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই উপার্জন করুন বা না করুন, প্রতিটি মেয়েরই অর্থ ব্যবস্থাপনা জানা দরকার।
### সম্পদের মালিকানা ও সুরক্ষা
অর্থ ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপ নিজের ও নির্ভরশীলদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৭৩% কর্মজীবী ও ৬৫% অ-কর্মজীবী মেয়ে একক বা যৌথভাবে বসতবাড়ির মালিক। বাড়ি তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সুরক্ষা না দিলেও এটা মেয়েদের জন্য বড় মানসিক শক্তির উৎস। কেউ কেউ মেডিক্লেম ও জীবনবীমার কথাও বলেছেন, যদিও এগুলো সম্পদ নয়, বরং সুরক্ষার অংশ।
### অর্থ ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস
অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য শুধু জানা যথেষ্ট নয়, আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও সুযোগও দরকার। সমীক্ষায় দেখা গেছে, অন্তত ২১% মেয়ে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বুঝতে আত্মবিশ্বাসী নন। তবে যাঁদের যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে, তাঁদের মধ্যেও বেশিরভাগ মেয়ে পারিবারিক মতামতের ওপর নির্ভর করেন। অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা সত্যিই কতটা স্বাধীন, সেটি প্রশ্নসাপেক্ষ।
কিছু উত্তরে অস্পষ্টতা রয়েছে—যারা নিজেদের কোনো সম্পদের মালিকানার কথা বলেননি, তাদের ৮ জন আবার সম্পদ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন। আবার ৬২ জন যৌথ সম্পদের সিদ্ধান্তে অংশ নেন, কিন্তু মালিকানার কথা বলেননি। সম্পদ বলতে তাঁরা ঠিক যে কী বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়।
### ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা
৫২% মেয়ে ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত, ৪৮% ঝুঁকি নিতে চান না। কারণ হতে পারে—(১) আর্থিক সামর্থ্যের অভাব, (২) ঝুঁকির প্রতি অনাগ্রহ, (৩) বিনিয়োগ সম্পর্কে কম জানা। ঝুঁকি না নেওয়া ৪৮% মেয়ের মধ্যে ৩৮ জন নিজেদের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী! শুধুই ফিক্সড ইনকামে বা রিয়েল এস্টেটে থাকা সম্পদ দীর্ঘ মেয়াদে ইনফ্লেশন দৈত্যের ঝুঁকি এড়াবে তো? নাকি আত্মবিশ্বাসটির ভিত নড়বড়ে?
### অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে মেয়েদের ভূমিকা
একক মালিকানাধীন সম্পদের ক্ষেত্রে মাত্র ১৯% মেয়ে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেন। যৌথ সম্পদের ক্ষেত্রে ২২৪ জনের মধ্যে ২৯% সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেন না। অর্থাৎ, মালিক হলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সীমিত।
তবে বেশিরভাগ মেয়ে এতে স্বস্তিবোধ করেন—মাত্র ১৭ জন এতে অসন্তুষ্ট। সন্তুষ্টদের সিংহভাগ উপার্জন অভিজ্ঞতা যুক্ত। উপার্জন করলেই যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়বে, এমন নয়, যদি মানসিকতা না বদলায়।
### সেলফ-মোটিভেশনের অভাব
অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ, পারিবারিক প্রভাব ও সামাজিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। ৪০% মেয়ে নিজের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নিজে নেন না, অথচ তাঁদের ৭৫% এতে স্বস্তিবোধ করেন। অর্থাৎ, তাঁরা নিজেকে ক্ষমতান্বিত করতে বিশেষ আগ্রহী নন।
### সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মনির্ভরশীলতা
৪০% মেয়ে পরিবারের পরামর্শেই সিদ্ধান্ত নেন, যা সবসময় ভালো নাও হতে পারে। তবে ৪৭% নিজের জ্ঞান-বুদ্ধির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেন, যা ইতিবাচক। মাত্র ৭% মেয়ের প্রধান বাধা মানসিক অস্বস্তি বা ভুল করার ভয়। সুখের কথা, এই ভয় কাটানো সম্ভব—যেমন সাঁতার শেখার পর জলের ভয় কেটে যায়। অর্থ ব্যবস্থাপনাও ঠিক তেমনই। নিজের জ্ঞান বাড়লেই ভয় কমে।
উপসংহার
পরিবার নিরাপদ আশ্রয় হলেও, জীবনে এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন একা সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কারও নিরাপত্তার ছাতা সরে যেতে পারে, আবার কেউ ইচ্ছাকৃতভাবেও একা থাকার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আজ পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকলেও ভবিষ্যতে কী হবে বলা যায় না। তাই নিজের টাকা-পয়সার ব্যাপারে নিজে সতর্ক থাকা জরুরি।
সমীক্ষার ফলাফল বলছে, বেশিরভাগ মেয়ে অর্থ সম্পর্কে সচেতন, কিন্তু আত্মবিশ্বাসী নন। ২১% মেয়ে এখনো বিনিয়োগ বা সঞ্চয় বুঝতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। আবার যারা আত্মবিশ্বাসী, তাঁদের অনেকেই পরিবারের ওপর নির্ভর করেন। সেই সঙ্গে
ঝুঁকি নেওয়ার বিষয়ে মেয়েদের দ্বিধা স্পষ্ট। তবে যাঁরা নিজেদের আর্থিক জ্ঞান নিয়ে আত্মবিশ্বাসী, তাঁদেরও অনেকেই কোন ঝুঁকি নেন না! জ্ঞানটি যথেষ্ট সময়-উপযোগী ও সম্পুর্ণ তো? প্রশ্ন থেকেই যায়।
অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো—মেয়েদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া। একক সম্পদের মালিক হয়েও অনেকে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। যৌথ সম্পদের ক্ষেত্রেও তাঁদের ভূমিকা অনেক সময় গৌণ হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ মেয়ে এই পরিস্থিতিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
একটি ভুল ধারণা হলো—উপার্জন করলেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে। আবার উপার্জন না করলেও আর্থিক বিষয়ে সচেতন হওয়া সম্ভব। তাই অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা সবার জন্য জরুরি, শুধু চাকরি বা ব্যবসা করা মেয়েদের জন্য নয়।
সমীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, মেয়েদের আর্থিক স্বাধীনতার পথে তিনটি প্রধান বাধা রয়েছে:
1. বিনিয়োগ ও সঞ্চয়ের বিষয়ে কম জানা
2. পরিবারের ওপর নির্ভরশীলতা
3. সেলফ-মোটিভেশনের অভাব
প্রথম দুটি সমস্যার সমাধান সম্ভব—ঠিকঠাক জ্ঞান অর্জন করলে নির্ভরশীলতা কমবে। ইন্টারনেট কিন্তু অনেক জ্ঞানের আধার। হরেক বিজ্ঞাপনী বটিকার ভিড়ে একটু বেছে বুছে নিতে হয় এই যা। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেও চাইলে অনেক কিছু শেখা যায়। শুধু রাজহাঁসটি হতে হয়, জলটি ফেলে ক্ষীর নিতে শিখতে হবে। সরকারি তরফেও অবশ্য আরও অনেক বেশি সচেতনতা ক্যাম্পেইন কাম্য ছিল।
কিন্তু সেলফ মোটিভেশন ? সেটা তো নিজের ভেতর থেকেই আসতে হবে!
তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত—নিজের টাকা-পয়সার দায়িত্ব নিজে নিতে শিখলে জীবন অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই যতটুকু সম্ভব শেখা আর প্র্যাকটিস করাই একমাত্র পথ!