ক্লাস শেষ হলে
তোমাদের ছাদে কত রঙ
প্রথম বর্ষার যত আলো
বিকেলের আনত আনন
মরা রোদে কী মায়া মাখালো
মাঠে ছিলো কত খেলাধুলো
প্রবল হুল্লোড় ও হইচই
এদিকে সে বৃষ্টি যাকে ছুঁলো
তুমি তার ঘুমেতে আসছই
যখন ভেঙেছে ঘুম জানো
দেখি যে আকাশ-ছোঁয়া বাড়ি
কাশফুলে উঠোন সাজানো
চাঁদোয়া টাঙিয়ে বেলোয়ারি
দুপুরের স্বপ্নে মেঘ থেমে
তুলি উপচে জল নামে ধারা
কখনও তোমাকে পাবো ফ্রেমে
থমকে যাবে বৃষ্টিভেজা পাড়া
তোমার বাড়ির-ই ছাদ বলে
তুমি আসবে তাই তো প্রত্যাশা
ঋতুর এমন কোলাহলে
সেই ভরোসাতে যাওয়া আসা
ছাদে ছাদে মিটেছে বিকেলে
নিদাঘ শীতল করা দিন
ধারাপাতে সবই মুছে দিলে
দিবাস্বপ্ন, প্রয়াসী রঙিন
তখনও তোমারই মুখ খুঁজে
উঁকি মারছি আকাশের কোণে
পা হড়কায় শেওলাসবুজে,
আরে! তুমি মেঘের আসনে-
ছাদের পাঁচিলে পিড়ি করে
গ্যালারির মুখ সারি সারি
জানিনা জ্বরের কোন ঘোরে
গেছিলাম তোমাদের বাড়ি!
বর্ষার পদ
সে-কবিতা কেন লিখে যাচ্ছি আজও এতদিন ধরে তাই ভাবি
অনর্থক কেন আহ্বান করছি ধারাপাত শব্দ এযাবৎ
অথচ অবাক আমি বুঝিইনি আকাশের দাবি সে-বিকেলে
রাস্তার আলস্যে ছাউনির নিচে অপেক্ষা করেছে সাইকেল
বৃষ্টি থেমে গেলে বাগান উপচে পথে উঠে আসে কলরব
কে কে সঙ্গে ছিল? কোনো জলকণা কোনো গাছ তারা কেউ ছোঁবে?
রোদ ঠিকরেছে তক্ষুনি বিকেল অবনত হয় এককোণে
পুরোনো পাঁচিলে শ্যাওলার রেখা সেই বাড়িটিই টিউশনি
ভিজে ওঠা বাড়ি দেওয়ালের ধারে জোনাকির আলো পরিসর
সন্ধ্যে ছোঁয়া চাঁদ টান টান হয় ইঁটভেজা গলি পথ ধরে
আরেকটুক্ষণ থামে সাইকেল, পিছু ফিরে দেখে, ফের চলে
সিক্ত সেই পথে দেখছি অবাক প্রতিবছরের পদাবলী-
রথযাত্রা
সংসার অরণ্যস্বরূপিণী
যুদ্ধে জেতা যাবে না যেহেতু
পক্ষজোড়া খাবে রাহু কেতু
পুণ্য খাবে রাজার কাহিনি
মাটি খাবে চাকার পরিধি
আকাশে বিষাদ ঢালা রোদ
ভ্রাতৃহত্যা চড়াবে পারদ
গতিসূত্রে সেরকমই বিধি
ভিড় জমে ধর্মতলা মোড়ে
সারি সারি ঢেকে যাচ্ছে মাথা
ত্রিপলে আটকে গেছে ছাতা
বাস ছুটে যায় আরও জোরে
কল নড়ে ঝরে কারখানা
মন্দিরে মাজারে ধূপকাঠি
গুঁজে গুঁজে বৃথা হাঁটাহাঁটি
শুধু পাল্টে গিয়েছে ঠিকানা
রাতে ফিরে অপরের ঘরে
টাকার বটুয়া খুলে দেখা
পাপের বেতনখানি একা
চুকিয়েছ অচেনা নগরে
দরবারে অনুরূপ ভিড়
আয়নার বহুল প্রসার
মুখে মুখে বসানো সবার
হাতি ঘোড়া খেলনা মাটির
মেলার প্রাঙ্গনে বাজে গান
এত বাজে কান চেপে ধরি
চেপে রেখে কান্নার লহরী
ভেঙেছি খেলনা খানখান
শুকনো আকাশে রাখা চোখে
কতবার খুঁজে মুখ তার
পুন: সে বিবরে বারবার
ফিরে যাওয়া ঝাঁকবাঁধা ঝোঁকে
ফের সেখানেই ফিরে আসি
একই চেনা মানুষের ভিড়
মাথা মেপে উঠেছে প্রাচীর
পশুসঙ্গ মেনে বনবাসী
তবু এ ফুলেরই মরসুম
স্তব্ধ করে দিয়ে রাজপথ
বনে ভাসে করুণার স্রোত
তারপর,- বৃষ্টি নামে ঝুম!
পূর্বে আসো মেঘ
যক্ষবেদনার বিষাদশিলাভার এখনও বুকে চেপে সে সংবেগ
অথচ ভুল গ্রহে ভুল বাতাসে বয়ে পূর্ব উপকূলে এসেছ মেঘ
আকাশে ঢেকে তারা সকালে মুছে রোদ ভরানো জলে ঐ গভীর চোখ
এ পথে নদী যত ভুলেছে সংযম তোমার বাসনায় আজ চাতক
কোথায় রেবানদী পাথুরে পথে চলে খিন্নসলিলিনী শীর্ণকায়
এখানে দামোদর দুকূল হিল্লোলে দুকূল ভাসানোর অপেক্ষায়
কোথায় চলেছিলে ঊষর হিমানীতে কোন কুবেরপুরী সন্ধানে
স্বয়ং লক্ষ্মীর আপন ঝাঁপিখানি উজাড় করা ধান এইখানে
সেখানে কাকে পেতে কেবল দয়িতের অদর্শনে এক শ্রান্তপ্রাণ
এখানে ঘাসে ঘাসে হাওয়ার দোলনাতে ঝুলন মিলনের অধিষ্ঠান
এই তো সব ছবি সবুজে মিশে গেছে রঙের অভিলাষ আকিঞ্চন
সুভাগা মেঘ তুমি এদেশে এসো এসো আকাশ ভরে দাও বজ্রস্বন
এখানে মাটি দেশে শ্যামল সমারোহে শ্যামের বাঁশি আর সে রাঙা পদ
তাকিয়ে নিচে দেখ কত নিবিড় আভা নদীর তীরে ঘাসে কী সম্পদ
তোমার অবকাশে পাতায় পড়ে রোদ সোনার জলে মোড়ে সবুজ রঙ
গাছের চূড়াখানি মেঘের ধোঁয়া মাখে তমালশীর্ষটি শ্বেতবরণ
নারিকেলের পাতা বাজালো ঝমঝম যখন পেলো তালে ঝড়ের দিক
বৃষ্টি থেমে গেলে শেওলাকুচি থেকে কার্নিশের গায়ে তার স্ফটিক
আমের ডালে ডালে পাতার আবডালে বাসনা জমে ওঠে বর্ণচোর
জামগাছের নিচে কালোসবুজে পাতা আষাঢ়সন্ধ্যার আলসঘোর
কী পেতে নগরীর পিপাসী গৃহে গৃহে সাজানো দীপমালা চকমিলান
এখানে বকুলের আলোআঁধারি মাখা পাতায় মিশে থাকে ঘুমের ঘ্রাণ
দেখেছ মায়া লাগে কদমতরু শাখে সবুজ ফুল জাগে প্রতীক্ষায়
আওয়ে ভাদর মাহ রাধিকাপ্রণয়ীর প্রণয়ে রেণু যদি পরাগ পায়
এখানে প্রেমিকের নিবিড় বাহুভরে সন্তানের মুখে দুধের ভাত
এখানে শ্রমে ভিজে পুরোনো সোঁদাঘরে মায়ের আঁচলেতে মুছছে হাত
এখানে রূপকথা দিঘিতে ঘাই মারে পিতামহীর দেওয়া মাছের নথ
পুকুরপাড়ে পথ সবুজ মাটিরঙে কচুপাতায় রোদ দণ্ডবৎ
দেখোনি প্রান্তরে লালমাটির ঢেউ ঘাসেতে মিশে গেছে ফুলবাসর
দেখোনি মহানিম ডালেতে সাজিয়েছে ঘাসের মত উড়ো পাতার ঘর
দেখোনি ডুমুরের ছাতায় নামে রাত দেখোনি দুপুরের সে নিশিসুখ
কলার বেষ্টনী ঘোমটা নিচু করে ভেজা মাটির বুকে রাখছে মুখ
কাঁঠালবিচি থেকে সবুজ কচি হাত শূন্যে মুঠি খুলে দরদিয়া
অপার রহমতে সমাধি ঘুমে আছে হাজার উপাসক আউলিয়া
মেঘনা ভাগীরথী পলিমাটিতে মেশে যেমন আজানেতে মিশছে শাঁখ
মাঠে ও জলতলে যেমন মিশে আছে লক্ষ কৃষকের হুলের ডাক
রুক্ষ ঐ দেশ ভুলেই যেও সেই বিগতজন্মের বিষাদরাত
আজ ঝড়ের মুখে পূর্ব অভিমুখে এসেছ এইখানে অকস্মাৎ
এদেশে এসে গেলে মিশেই যেতে হবে এই মাটিতে জলে নিরুদ্বেগ
তুমি সবুজ হও আমার বাংলায় বৃষ্টি হয়ে যাও কাজলমেঘ