গভীর রাত
অন্ধকারের ভেতর তলিয়ে যাওয়া শহর
রাস্তায় জ্বলতে থাকা আলোগুলো অদ্ভুত ভূতুড়ে
তার মধ্যে ভয়ে কুঁকড়ে
ইতিউতি ইতিহাস ঘাঁটতে ঘাঁটতে
এগিয়ে চলা মেয়ে
আর গভীর একটা মিছিল
মিছিলের ভেতর হাঁটতে হাঁটতে সাধারণ সেই মেয়ে
অতি সাধারণ ঢঙে প্রশ্ন করে বসে যদি...
আমার বাবা আসলে কেমন?
জমানো টাকা, গয়না নিতে চেয়ে
কিংবা আরও ইতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য বিষয়ে
উত্তপ্ত শলাকা ঢুকিয়ে দেন স্ত্রীর পেটে...
পুত্র সন্তান জন্ম দিতে না পারলে
সমস্ত দোষ স্ত্রীর ঘাড়ে চাপিয়ে
করেন দ্বিতীয় বিয়ে
কিংবা একজন পুরুষ, যিনি
একটু দেরি হলে
স্ত্রীর মুখে ছুঁড়ে মারেন গরম ভাতের থালা...
আর রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে
বসিয়ে দেন দু'চার ঘা
স্ত্রী'র পিঠে...
কিংবা এমন একজন
যিনি রচনা করেন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ,
পবিত্রতম মন্ত্র
এবং তিনিই সমাজ সংস্কারক
কিন্তু অবলীলায় বলেন:
নারী হল নরকের দ্বার...
নারীকে যৌনসঙ্গী
ভাবা ছাড়া
সমাজকে নিষেধ করেন
অন্য স্থান দিতে...
অথবা সেই মানুষটি
যে আমার মেয়েজন্ম নিয়ে
খোঁটায় খোঁটায় ভরিয়ে দেন
আমার মায়ের জীবন
পেট চিরে
প্রথমেই জেনে নিতে চান,
গর্ভস্থ ভ্রূণ ছেলে নাকি মেয়ে!
অথবা সেই-ই
যিনি স্ত্রী'র জন্য
নির্বাচন করেন
বাইরে বেরোনো না-বেরোনোর ইস্তেহার...
তিনি কি তেমনই একজন?
নিশ্চয়ই শুক্রাণু
আর ডিম্বানুর
যৌথ উদ্যোগ ছিল আমার জন্মের কারণ...
নিশ্চয়ই মা, তোমার আর তাঁর ইচ্ছে ছিল
এই পৃথিবীতে আমাকে নিয়ে আসার কারণ...
একটা সুন্দর বাসস্থান
একটা ফুলের মতো হালকা জীবন
পরীর মতো মুক্ত দু'টো ডানা...
আর
বেড়িহীন দু'টো পা...
একটা সম্পূর্ণ আকাশ
অথচ...
অথচ...
আমার পিতা কি তবে
মুখোশধারী শয়তান ছিলেন মা?
নাকি শয়তানেরও দেবতা ?
অন্ধকারকে ভাবেন কামোত্তেজনার
যিনি বাড়িতে ফেরেন
অন্য কোনো নারীর স্তনে
নখের আঁচড় বসিয়ে
যার কাছে বোন নয়, মা নয়
নাকি স্ত্রী
স্তন আর যোনিওয়ালা প্রাণী দেখলেই
জ্বলে উঠে যৌন লালসা...?
মা, একটি বার বলো, আমার বাবা কি সেই?
যিনি রাতের অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে নেন
নারীর যোনি
জরায়ুর ভেতর ঢেলে দেন
তপ্ত বীর্য?
যিনি আত্মীয়ের স্বরূপ নিয়ে আসেন আমাদের বাড়ি
আদরের ভঙ্গি করে টিপে দেন গাল
কিশোরী বুক
ক্যাডবেরি ধরিয়ে কোলে বসিয়ে
হাত ঢোকান, আমার প্যান্টির ভেতর
আর হেসে হেসে সবাইকে বলেন
আমার কমজোরিগুলো
আমার অসফলতার গল্প করেন
ইনিয়েবিনিয়ে
যিনি আমাদের মধ্যে বাস করেন
আমাদের সমাজে নাম কেনেন
আর আমাদেরই ভোগ্যপণ্য করে
বিক্রি করে দেন
আর ট্রাক বোঝাই হয়ে
রাতের অন্ধকারে
চলতেই থাকি... চলতেই থাকি...
আমার বাবা তবে তিনিই,
পিংপং বলের মতো
আমার শরীর ছুঁড়ে দেন
এক থেকে
অন্য পুরুষের হাতে...
আমার বাবার নাম কি তাই ?
যা রোজ সংবাদপত্রের শিরোনাম?
টিভির পর্দায় যাঁকে নিয়ে আলোচনা?
অথচ,
টেনে নিয়ে যাওয়ার সময়ও যে
তাকিয়ে দেখছে
মহিলা পুলিশ কর্মীর স্তন?
আমার বাবা কি সেই ভ্রমণ পিপাসু?
যে ভ্রমণের নামে
আদিবাসী গ্রামে
জ্যান্ত মুরগীর মতো
জবাই করতে চান
ঘন কালো চোখের সরল বালিকা
কিংবা হোটেলের ব্যালকনি থেকে
কালো চশমার আড়াল টেনে দেখেন
কাজ করতে থাকা পঞ্চাশোর্ধ প্রৌঢ়-র
বক্ষ-রেখা
আমার বাবা কি সেই চিত্রকর?
পাবলিক টয়লেট থেকে
বেরিয়ে আসার সময়
যিনি কলমের ভাঙা নিবে
এঁকে রাখেন যোনির
নকশা -ডিজাইন?
স্কুলের বাথরুমে
কলেজের ক্যান্টিনে
চরিতার্থ করেন সে আঁকার স্টাইল?
আবার মেট্রো থেকে নেমে আসার সময়
চলন্ত ট্রেনের বগি থেকে
কিংবা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে
বাসের প্রচন্ড ভিড়ে
মুখ থেকে বের করে
নারীর জন্য রচিত গালাগাল...
আমার বাবা কি তিনিই?
প্রৌঢ় বয়েসেও যিনি সেক্সের জন্য
বিয়ে করে আনেন
কোনো কিশোরী বালিকা?
যিনি অফিসের বস হয়ে
চেয়ারের ভয় দেখিয়ে
পাশের রুমে
কিংবা ফাঁকা ফ্ল্যাটে
অধঃস্তন কর্মচারিণীকে
ডেকে নেন রাতের নির্জনে
মুখে পবিত্র ধর্ম
এবং আয়াতের মন্ত্রগুলো
উচ্চারণ করতে করতে
প্রবর্তন করেন "নথ-ভাঙা-প্রথা"!
আমার বাবা কি সেই?
যিনি রাত গভীর হলে
ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে
ফোন করেন কোনো মেয়েবন্ধুকে
লোভের পর লোভ
ফাঁদের পর ফাঁদ
কষ্টের পর কষ্ট
গালির পর গালি
শব্দের পর শব্দ ধ্বংস করে
রচনা করেন বাঞ্চোত...মাদারচোদ...ইত্যাদি শব্দগুলি?
তিনিই আমার বাবা,
যিনি স্কুলে পৌঁছে দেওয়ার জন্য
স্কুল থেকে ঠিকঠাকভাবে
বাড়ি নিয়ে আসার পথে
সাড়ে তিন বছরের
ছোট্ট মেয়েটিকে
মনে করেন লালসার বস্তু
দুমড়েমুচড়ে ভেঙে ফেলেন যোনি
স্তন হীন বুক?
আমার বাবা সেই?
যিনি শ্বাপদের চেয়েও হিংস্র
যিনি রাক্ষসের চেয়েও নিষ্ঠুর
যাঁর শকুনের চেয়েও ধারালো নখ
যে বাঘের চেয়েও দয়ামায়াহীন,
নর্দমার কীটের চেয়েও অধম?
এই আমার পিতা
যে আমার যোনি থেকে জন্ম নিয়ে,
আমাকেই ভোগ্য বস্তু বানিয়েছে
এই আমার বাবা
যে আমাকে জন্ম দিয়ে
বলপ্রয়োগ করে
আমাকেই টেনে নিয়ে যায় শয্যায়...
এই আমার জন্মদাতা
যে আমার কাছ থেকে
ডানা কেড়ে নিয়ে
নিজের জন্য চায়,
বন্ধনহীন দীর্ঘ জীবন
আর আমার মৃত যোনি
ক্ষতবিক্ষত বুক নিয়ে
হা হা করে হাসতে হাসতে খোঁড়ে
লম্বা এক কবর...
আসলে আমার বাবা সেই,
সারা পৃথিবী যাকে
শুধু একটাই নামে চেনে
ধর্ষক..