• এইটুকুই মাত্র পড়ে থাকে।
বদলাতে না চেয়েও বাসা বদলে ফেলা, সিড়ি থেকে পড়ে মাথা ফাটানো তারপর সেই কাটা দাগ মাথায় করে নিয়ে এগিয়ে চলা। পার্থক্য বলতে আগে কেটে গেলে লোকজনের ভীড় হয়ে যেত। কতটা কাটলো রক্ত পড়ল স্টীচ হবে কি হবে না৷ কিন্তু এখন ডাক্তারখানায় যাওয়ার লোক নেই। নিয়ে যেতে বলছি না, শুধু পাশে বসে দু ঘন্টা গেম খেললেই হবে। গেম- খেলা- ঘুড়ি। ছোটবেলায় ঘুড়ি ওড়াতাম। হাওয়ায় জোর না থাকলে কার সাথে কুস্তি করবে তুমি? ঠক্করে ঘুড়ির কার্নিসে মাথা ঠুকে যায়। আর তোমার... খাটের হেড বোর্ডে। ক্ষত থেকেই যায়। জিজ্ঞাসা করার কোন বন্ধু বা বন্ধুর মত ভীড় আর থাকে না। খাঁ খাঁ করা ফ্রেডরিক নগর। হাওয়া টাওয়ার নাম গন্ধ নেই। ঘুড়ি ছেড়ে, ভয়ানক পিতৃতন্ত্র ছেড়ে তুমি নিজেই উড়ে পালাবার কথা ভাবছ।
সময় ভীড়কে পাতলা করে ফেলতে জানে। তুমিও জানো, কেবলমাত্র 'পড়ে থাকা'টুকুই মেনে নিতে হয়। ঘুড়ি থেকে শিখছিলে, এইটুকুই...
• ছোট থেকে বন্দুক বা খেলনাবাটির মধ্যে তুমি কোনো প্রকারভেদ করনি। ফ্রিজ খুলে একমুঠো বরফ নিয়ে তুমি যার তার জামায় ঢুকিয়ে, তাকে জড়িয়ে ধরতে। যাকে তাকে জড়িয়ে ধরতে নেই। এমন করতে করতে তুমি নিজেই কবে বরফ হয়ে গেলে!
তারপর... আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জামা তুলে নিজের পেট দেখার কথা মনে পড়ে? ইনোসেন্সি একটি বিরল অসুখ। তোমার সেই নরম নিষ্পাপ পেট জানলার ফাঁক থেকে দেখে ফেলেছিল বুবাইদাদা। তোমায় পাগল ভেবেছিল। পরে রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলেই তোমার দিকে তাকিয়ে হাসতো। তারপর তুমি বরফ হতে শুরু করলে। বুবাইদা অপেক্ষা করতে শুরু করল জানলার ধারে বসে। রোগ সেরে গেলে মানুষের মধ্যে একটা শোক শোক আলো ম্ ম্ করে। তুমি বড় হতে হতে বর বর বরফ হয়ে ওঠো। জালনায় বাহারি পর্দা ঝুলিয়ে সারাক্ষণই ঘরে রাত নামিয়ে রাখো। জামা তুলে চর্বির সৌন্দর্য্য দেখো। এসি চালানো থাকে ২৪x২৬। অনেক কিছু না জানার মত শিক্ষে জড়িয়ে ধরতে ধরতে তুমি এইখানে এসে পৌঁছতে পেরেছো।
প্রাণ খুলে হাসো একবার। জল জমেই তো বরফ হয়।
আর বরফের কাছ থেকে ঠিক এরকম থাকার আশাই করা যেতে পারে। এইরকমই...
• আমাদের টিনএজ নষ্ট করা হেমন্তের হাওয়া দিলেই আমরা প্রেমে পড়ি। হেমন্ত না; তোমার একটাই ঋতু- 'ফল (Fall)'। এই সিজনে বাম্পার সেল চলে। তোমার তুতো তুতো আত্মীয় বা সম্পূর্ণ অপরিচিত কোন কেউ বারবার বুঝিয়ে দিয়ে যায়- 'তোমার স্ব-সুখ বেছে নেওয়ার তোমার কোনো অধিকার নেই।' তুমিও মেনে নাও, সকলের জন্যে সরবে বদলাতে থাকো। তুমি কি প্রত্যাখানের ভয় পাও? আশা করতে করতে বড় হতে থাকা বড় ক্লান্তির। সেই না খেলারদিনগুলো পড়ে পড়ে বড় হতে থাকে। তুমি কি সেই দিনগুলোর গায়ে আঙুল রাখবে আর পুটপুট করে ফাটিয়ে ফেলবে ছোটবেলার বাবলর্যাপ। ছোটবেলার অসচেতনতা। আসলে ডিফেন্স মেকানিজম বলে একে৷ যখন তোমার ক্ষত ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকার একজনও লোক থাকে না, তুমি যা পাও আঁকড়ে ধরো। জল থেকে দু সেকেন্ডের জন্যে হলেও মুখ তুলে হাওয়া টেনে নিতে ছাড়ো না। অন্যের ইচ্ছা- বাসনা - অনুরোধ- কামনা- আকাঙ্ক্ষা- অভিলাষ- অভিপ্রায়- সাধ- ক্ষুধা- অভিমত- তৃষ্ণা- প্রবৃত্তি- প্রার্থনা- খাঁই- মিনতি- অভীপ্সা মেটাতে মেটাতে তুমি শুনতেই পাও না, তোমার ভাল মানুষগুলো বলছে- কোন সাহসে নিজের সুখের জন্যে, নিজে ভাল থাকার জন্যে এইরকম কাজ করলি তুই!
ভুল করলে পাপ হয় বোধহয়। আর পাপ থেকে গিল্ট। কেন যে বলতে পারোনি 'আই রিফিউজ টু লেট গিল্ট মাই লিগাসি (I refuse to let guilt be my legacy)?
তুমি কখনো 'না' বলতে পারোনি...
আর এভাবেই... নষ্ট হয়ে গেল আমাদের ছোটবেলা। এইভাবেই…
• দুটো ভাল মানুষ মানেই যে একসাথে থাকবে। বন্ধুত্ব হবে, প্রেম হবে - এটা একটা আইডিয়া মাত্র।
এমিলি ডিকিনসন লেখেন-‘If I can stop one heart from breaking, /I shall not live in vain.’
তোমায়… একটি আইডিয়া হিসাবে ভাবা যেতে পারে। 'তুমি'-র ধারণাটা যেন একটি 'সাজিয়ে রাখার মত', ডুইট উয়োরসেল্ফ ভিডিও। বাস্তবে তার সাথে পরিচিতি ঘটলেই পুরোটা ঘেঁটে যায়।
সব কিছু জেনে গেলেই, মানুষ শ্যাওলাধরা কুচ্ছিত পদার্থের মত পড়ে থাকে। পিচ্ছিল, দগদগে, যে কেউ মাড়ালে হড়কে পড়বে। কিন্তু গাছ মানে উদ্ভিদ… যেভাবে ইচ্ছে বড় হয়। আমাদের পক্ষেই সম্ভব নিজের দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া। তারপরও বন্ধুত্ব বা প্রেমের দাবী করা। আমাদের পক্ষেই সম্ভব নিজের ক্ষতকে সামলাতে না পেরে অন্যের ক্ষতকে আরো গভীর করে তোলা। বিশ্লেষণের উপর বিশ্লেষণ করে করে হাওয়া বিষিয়ে, মৃতপ্রায় শিল্পের মত টিঁকে থাকা। তারপরও বন্ধুত্ব বা প্রেমের দাবী করা। মাবাবাও তোমার এই শ্যাওলার হয়ে ওঠা পুরোনো বাড়ির খাঁজে খাঁজে ছড়িয়ে যাওয়াটিকে 'টেকেন ফর গ্রান্টেড' নিয়ে নেয়। তখন তুমি কি করো? কার কথা ভাবো? কোথায় যেতে চাও? কেউ জানতে চেয়েছে কখনো?
• এই দেখো, দেখতে দেখতে এইটাই তোমার আমার গল্প হয়ে উঠল। এর কোনো ইতিবাচক নেতিবাচক পরিসমাপ্তি নেই। কোনো দুঃখের গান নেই যা প্লে লিস্ট থেকে টুক করে ডিলিট করে দেওয়া যাবে। দেখো; তোমার আমার মধ্যে আর কোনো একাকীত্ব নেই। হয়ত একটা বিশালত্ব আছে। অসীম। যার দিকে তাকালেই পেট খলবল করে ওঠে, অজানা কিসে যেন নিঃশ্বাস আটকে যায়। আমাদের দেখা হবে না কখনো। আমরা হাঁটতে বেরিয়েছি। কিন্তু আলাদা আলাদা। পড়ে থাকার মত কিছুই তো আর পড়ে থাকল না এই গল্পে।
তবে কি পড়ে থাকল আমাদের
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
…এইটুকুই?
বড় মন খারাপ করা লেখা
এই দেখো, দেখতে দেখতে এইটাই তোমার আমার গল্প হয়ে উঠলো।
অনবদ্য গদ্য। মন বিষণ্ণ হলো।
If only I could go back in time
I would stop the pendulum from moving
I would hold on to my childhood
I would also hold you tight.
Onek din por abr sajhbatir lekha porlam. Kobitar moto.
এই prothbar সাঁঝবাতির লেখা গদ্য পড়লাম ।...মনটা ভরে গেল ।...লেখাটায় একতা ইউনিভার্সাল আপীল আছে ; এ যেন আমারই কথা এবং আমার আশেপাশের আরও অনেকের । একটু মন উদাস করা লেখা , তবে ছোটবেলার কথা , বড় হয়ে ওঠার কথা বলতে গেলে , ভাবতে গেলে , সবাই আমরা কোথাও যেন একটু উদাস হয়েই পড়ি ....
আরও চাই .....
valo laglo. Lekha tar suru thekei besh chomok ache.
I'am nobody! Who are you?/ Are you nobody,too?/ then there is a pair of us- don’t tell/They'd banish us, you know (Emily D.) - বাহ... ওয়াহিদ
একদম অন্যরকম লেখা। অন্যরকম মাত্রার গদ্য। ভাল লাগল। তার চেয়েও বেশি বলব, আপনার গদ্য লেখার হাত কবিতার মতই ভাল। সবার চেয়ে ইউনিক, ইউনিসেক্স। কিন্ত আপনার লেখা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না আর।
লেখাটার নামকরণ লক্ষণীয় । সত্যি এক একজন লেখক ,এমন কি এক একটা লেখা আসলে এক একটা গ্লেসিয়ার । হিমবাহের অগ্রভাগ -ই শুধু দেখা যায় , এই লেখাটিও তাই । মূলত ব্যক্তিগত লেখা অথচ একটি সার্বজনীন আবেদনময় লেখা , যা আমাদের বিষণ্ণ করে ।
এ লেখা এই সময়ের মানুষমাত্রেরই-- বিশেষ, 'নাগরিক' (বাসস্থান নয়) মানুষমাত্রেরই কথা। জলে নিজমুখের ছায়াস্মৃতি আঁজলা ভরে তুলে আনার মতই । লিরিক্যাল-- ভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাকে ভাঙাও হয়েছে কখনো কখনো। পাঠক এমন লেখার কাছে বসতে চাইবেন কিছুক্ষণ।
অপূর্ব। অনেকদিন পর লেখা পড়লাম তোমার। সেই ধার, সেই ভালোবাসা, সেই অসন্তুষ্টি থেকে লেখা। যে লেখা পড়লে মন খারাপ গুলোই আদর করে মন ভালো করে দেয়। ঠিক যেন সাঁঝবাতির আলোয় ইমন এর আলাপ। অনেক অনেক ভালোবাসা। আরো অনেক লেখা চাই
মনোমুগ্ধকর