মহাকাব্যের বিস্তীর্ণ হরিৎ ক্ষেত্রে ক্লান্ত দুই গোপালক বসে আছেন। দুজনেই জরাগ্রস্ত, প্রায় অথর্ব; যত না বয়সের ভারে, তার চেয়ে বেশি মনোবেদনায়। তাদের একান্ত গোরু-বাছুরগুলি দীর্ঘ রাখালি যাত্রায় যে যার পথ ধরে চলে গেছে গোধূলি উড়িয়ে। সেই হাম্বাপরিব্রাজকদের নিয়ন্তা হওয়ার ক্ষমতা আর নেই নিজভূমে পরবাসী দুই বৃদ্ধের। একই মাথার দুই বিনুনি যেমন দুই স্তনালপথের উথালপাথাল বেয়ে সমান্তরাল দুটি রাস্তা খুঁজে নেয়,তেমনি দুই স্নেহান্ধ পিতা তাদের নিজস্ব রাস্তায় পা ছড়িয়ে বসে শুরু করেছেন বিদায় বেলার বিলাপ। ধৃতরাষ্ট্র এবং দশরথ।
পিতা স্নেহান্ধ হলে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র হয় দুর্যোধন আর দশরথের পুত্র হয় রাম। যারা এই বাক্যনিহিত বিসদৃশ তুলনাটি পাঠ করেই প্রাবন্ধিককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন তাদের উদ্দেশে ‘এই কি গো শেষ গান, বিরহ দিয়ে গেলে…’র সুর-ফিতেটুকু আকাশে ভাসিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কারণ মোর আরো কথা,আরো কথা বাকি আছে যে!
সত্যিই, কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রপ্রীতিগর্বে মত্ত হয়েই দুর্যোধন পাণ্ডবদের বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী দানের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেলেন আমৃত্যু আর রাম দশরথের প্রিয়পুত্র হওয়ার সুবাদে পিতৃসত্য রক্ষায় বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনীরও মায়া না করে চোদ্দ বছরের জন্য বনবাসে যেতে সম্মত হলেন। উভয় ক্ষেত্রেই পিতৃস্নেহ এবং পিতার প্রতি প্রিয়ত্ব সম্পাদনের উদাহরণটুকু কারোর চোখেই ঝাপসা ঠেকে না। দুই পুত্রকেই আমরা দেখি, পিতার মনকে বহুপঠিত পুস্তকটির মতো পড়ে ফেলতে। ধৃতরাষ্ট্র বহুবার বকাঝকা করেছেন দুর্যোধনকে কিন্তু সে অম্রতাঞ্জননিভ বকার ঝাঁঝে ভর্তসনা যতটা ছিল, তার চেয়ে যে ঢের বেশি ছিল স্বস্তিদায়ক প্রশ্রয়মধুরতা, বিশ্বস্ত সারমেয়’র মতোই দুর্যোধন সেই খাঁটি মাধুরিমাটুকু শুঁকে নিতে পারতেন, বুঝতেন, মুখের কথা যা-ই হোক না কেন,পিতার মনের কথা মনে হয় দ্বেষ। তাই দুর্যোধনের যেটুকু ঔদ্ধত্য, এমনকী সময়ে সময়ে কুরুবৃদ্ধদের, এমনকী স্বয়ং ধৃতরাষ্ট্রকেও অতিক্রম করার যে স্পর্ধা,সে-ও স্নেহান্ধ পিতৃ প্ররোচনায়।
আবার মহাকালের রথে চেপে আমরা যদি অতীততর ধূসরতায় প্রবেশ করি, তাহলে সেই পাশা উলটে যাওয়ার দিনে কৈকেয়ীর কাছে নির্মম সত্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দশরথ যতই ঘন ঘন জ্ঞান হারান, বুকে করাঘাত করে বিলাপ করুন, কৈকেয়ীকে অভিসম্পাত দিন,কৌশল্যার প্রতি হঠাৎ উদবেলে হাহাকার করে উঠুনএমনকী তাঁকে বন্ধন করে রাজ্যভার গ্রহণ করতে রামকে পরামর্শ দিন না কেন, রাম যদি পিতৃসত্য না রক্ষা করতেন, তাহলেই কি দশরথের মান থাকত? অত দুঃখের মধ্যেও দশরথের দার্শনিক সত্ত্বাটির নাগাল রাম নিশ্চিত পেয়েছিলেন। দুই পিতার চোখের মণি দুই পুত্র দুই মহাকাব্যের পথ ধরে গিয়েছেন দুই সম্পূর্ণ বিপরীত রাস্তায়। কার শেষে আলো, কার শেষে অন্ধকার, সে জানে রসিক – হৃদয়; পাঠক-সত্ত্বা।
ধৃতরাষ্ট্র ও দশরথ – দুজনের কেউই সন্তানলাভ করেননি বিনা আয়াসে। ঘৃতপূর্ণ কলসের বা যজ্ঞপুরুষের পরমান্নের অলৌকিক নেপথ্যে তাদের সন্তানলাভের আকাঙ্খা ও ক্রম বিফলতা এবং বহু সাধ্য সাধনার শেষে বুক জুড়ানো ধনদের বুকে করার তৃপ্তি বর্ণনা করতে করতেই মহাকবিদের কলম অনেকখানি ক্ষয়িত হয়েছে।
দুর্যোধনের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে কাক শিয়াল ডেকে উঠবেই। যুধিষ্ঠিরের জন্মসংবাদ পেয়ে যার মা গর্ভপাত করেন, যার জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই তার পিতা বয়োবৃদ্ধদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠির তো রাজা হবেই, কিন্তু যুধিষ্ঠিরের পর তার ছেলে রাজা হবে তো- সেই হিংসাপিণ্ড ও সাম্রাজ্যলালসা থেকে উদ্গত দুর্যোধনের জন্মের সময়ে যে কাক শিয়াল ডেকে উঠে ভবিষ্যতের বিনষ্টি ঘোষণা করবে তাতে আর আশ্চর্য কী!
না। রামের জন্মের সময়ে কাক শিয়াল ডেকে ওঠেনি কিন্তু দশরথের পক্ষপাত পরমান্নের ভাগেই সুস্পষ্ট। যজ্ঞের পায়েসের অর্ধেক কিন্তু দশরথ তাঁর প্রাণাধিক প্রিয়া কৈকেয়ীকে দেননি, দিয়েছিলেন কৌশল্যা রাজমহিষীকে, যাতে তাঁর গর্ভস্থ জ্যেষ্ঠপুত্রই অধিক বলবান ও গুণবন্ত হয়। পরমান্নের মিষ্ট পক্ষপাত দিয়ে যে কাহিনীর আরম্ভ হল, তার মধ্যেই আগামীর নিমকটু আভাস রাজর্ষি দশরথ দেখতে কি পাননি?
খুব ভালো করেই ভবিষ্যতের চিত্রনাট্য দেখতে পেয়েছিলেন দশরথ। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রস্নহের অবাধ অনর্গলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে শতশৃঙ্গ পর্বত থেকে নেমে এসেছিল সদ্যপিতৃহারা বিধবা মায়ের আঁচল ধরা তাঁর আশ্রয়প্রার্থী পাঁচটি বালক। তার ভাই পাণ্ডুর সন্তান। কিন্তু দশরথের খেলাঘর তাঁর নিজের রক্তমাংসেই গড়া। ছোটবেলা থেকেই রামের দেহরক্ষী লক্ষণ, ভরতের দোসর শত্রুঘ্ন। শক্তির একটা সুস্পষ্ট বিভাজন প্রথম থেকেই প্রতীয়মান।
এবার আমরা চলে যাব মিথিলায় জনক - রাজগৃহে। হরধনু ভঙ্গ করার পুরস্কার হিসেবে রাম পেতে চলেছেন জনক নন্দিনী সীতা এবং লক্ষ্মণ ঊর্মিলাকে। সেই সঙ্গে বিশ্বামিত্র এ-ও প্রস্তাব করলেন জনকের ভাই সাংকাশ্যার রাজা কুশধ্বজের কন্যাদ্বয় মাণ্ডবী এবং শ্রুতকীর্তির সঙ্গে ভরত ও শত্রুঘ্নের বিবাহ দেওয়া হোক। এখানেও শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করার একটা চেষ্টা স্পষ্টতই দৃশ্যমান। অর্থাৎ ভরত ও রাম উভয়পক্ষেই ইক্ষ্বাকু এবং বিদেহ রাজযোটকের সুষম বিন্ন্যাস বহাল রইল। এ যে কপোলকল্পিত কল্পনা নয় তার প্রমাণ কেকয়রাজপুত্র ভরতের মাতুল যুধাজিৎ এর মধ্যেই পৌঁছে গেছেন অযোধ্যায় এবং সেখানে কাউকে না পেয়ে (দশরথ বশিষ্ঠ, জাবালি প্রমুখ মুনিদের সঙ্গে বিবাহোপলক্ষ্যে মিথিলায় পা রেখেছেন ইতিমধ্যে) মিথিলায় চলে গিয়েছেন ঠিক সেই সময়ে। কেকয়রাজ দৌহিত্র ভরতকে শুধুমাত্র দেখতে চান এই উপলক্ষ্যে যুধাজিতের এই দীর্ঘ এবং সময়োচিত অভিযান আমাদের বিস্মিত করে। শকুনি হোন বা যুধাজিৎ, ভাগ্নেদের স্বার্থ সংরক্ষণে রণে বনে জলে জঙ্গলে সর্বত্র বিরাজিত হতে তাদের জুড়ি নেই।
চ্যালেঞ্জ যতো কঠিন থেকে কঠিনতর হয়, তত বলিরেখার সংখ্যা বাড়ে আগামীর ললাটে। প্রতিপক্ষের বুকে প্রথমেই লৌহছুরিকাবিদ্ধ করার দরকারই পড়ে না যদি মিছরির ছুরিতেই কার্য্যসিদ্ধ হয়। বিরোধীদের রাজধানী থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সিংহাসন নিষ্কন্টক করার প্রয়াস অতি পুরনো কূটকৌশল। তাই পঞ্চপাণ্ডবদের বারণাবতে পাড়ি দিতে হয় একসময়। ভরতকেও বিবাহের অনতিকাল পরেই যাত্রা করতে হয় মাতুলালয়ে। ভরত বা পাণ্ডবদের অনুপস্থিতি রাম বা দুর্যোধনের পক্ষে জনগণেশের চিত্ত জয় করায় বিশেষ সহায়ক হয়ে উঠবে কালে কালে। ওদিকে বারণাবত; এদিকে অযোধ্যার রাজগৃহ- দুই স্থান কাল পাত্রের গভীরেই লকলকিয়ে উঠতে থাকে জৌগৃহের ধূম।
দশরথ চার পুত্রকে নিজের চার বাহুর ন্যায় মনে করতেন কিন্তু রাম ছিলেন তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয়। তাছাড়া রাম অত্যন্ত সুপুরুষ, গুণবান, প্রিয়ভাষী,চরিত্রবান, অপরাজেয় ও জনগণের প্রিয়পাত্র। তাই রামচন্দ্রকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করতে তৎপর হয়ে উঠলেন দশরথ। এতখানি যে… ভরত এবং শত্রুঘ্ন’র (শত্রুঘ্ন এই যাত্রায় ভরতের সঙ্গী ছিলেন) অযোধ্যায় প্রত্যাবর্তন অবধি তাঁর তর সইল না।
চার পুত্র যখন অযোধ্যায় অবস্থান করছিলেন, তখন তিনি নিজের জরাগ্রস্ত দেহের সম্বন্ধে চিন্তান্বিত বোধ করলেন না অথচ ভরত এবং শত্রুঘ্নের মাতুলালয় থাকাকালীনই রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার মাহেন্দ্রক্ষণ বলে মনে হল তাঁর। এ ব্যাপারে লক্ষ্যণীয় যে যখন দশরথ রামের যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার অভিলাষ ব্যক্ত করছেন তখন তিনি যে নিজের জরাগ্রস্ততাকেই দায়ী করছেন তা না , তিনি এ-ও জানাচ্ছেন আকাশে অন্তরীক্ষে ও ভূতলে ঘোর উৎপাতের অশুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এই ঘোর উৎপাত ও অশুভ লক্ষণ আসলে বিপর্যয়ের মহাকাব্যিক দ্যোতনা যা দশরথের শঙ্কিত মনে রণিত হয়ে চলেছে আসন্ন দুর্যোগের সম্ভাবনায়।
মজার কথা হল, এই প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর বিভিন্ন নগর ও জনপদ থেকে প্রধান প্রধান লোকদের আনানো হল কিন্তু দশরথ কেকয়রাজকে এবং রাজা জনককে কিছুই জানালেন না কারণ এই প্রিয় সমাচার তারা পরে শুনবেন। কেন এই লুকোচুরি খেলা? এদের জানালে কি রামকে অভিষেক করার ব্যাপারে তিনি এদের কাছ থেকে বাধা পেতেন? রাজা জনক জানলেই তার ভাই কুশধ্বজ জানতেন, কুশধ্বজ ছিলেন মাণ্ডবীর পিতা অর্থাৎ ভরতের শ্বশুর, এই দুই পক্ষকে ঘাঁটাতে চাননি দশরথ। সচিবদের সানন্দ সম্মতির পর দশরথ রাজসভায় সকলকে জানালেন তাঁর অভিপ্রায়ের কথা। উপস্থিত রাজন্যবর্গ এবং পৌরজানপদ মহানন্দে প্রস্তাবে রাজি হল।
অভিষেকের তোড়জোড় শুরু হল। দশরথ রামচন্দ্রকে রাজসভায় ডেকে আনন্দসংবাদ জানালেন। কৌশল্যাও এ সংবাদ অবগত হয়ে আনন্দে আত্মহারা হলেন। ‘দিকে দিকে বার্তা রটি গেল ক্রমে’। এরপর দশরথ অন্তঃপুরে গিয়ে রামকে আবার ডেকে পাঠালেন। জলের গভীর থেকে বোয়াল যেমন ঘাই মেরে ওঠে, এই সাক্ষাতে রাজা দশরথের গভীর থেকে আমরা পিতা দশরথকে আবিষ্কৃত হতে দেখছি। দশরথ রামকে জানাচ্ছেন ‘আজ আমি অশুভ স্বপ্ন দেখেছি, যেন দিবসে বজ্রনির্ঘোষ সহ উল্কাপাত হচ্ছে। দৈবজ্ঞেরা বলেছেন, সূর্য, মঙ্গল ও রাহু এই তিন দারুণ গ্রহে আমার জন্মনক্ষত্র আক্রান্ত হয়েছে। এইপ্রকার দুর্লক্ষণ প্রায় রাজার ঘোর বিপদ ও মৃত্যুসূচনা করে।’ ভূমিকার পরবর্তী কথাগুলিতেই দশরথের হৃদয়ের মুল অভিব্যক্তিটা ধরা পড়েছে। তিনি বলছেন, ‘আমার বর্তমান সংকল্প থাকতে থাকতেই তুমি অভিষিক্ত হও, কারণ মানুষের মতির স্থিরতা নেই। তুমি আজ রাত্রিতে বধূর সঙ্গে নিয়ম পালন ক’রে উপবাসী থাক এবং কুশশয্যায় শয়ন কর। সুহৃদগণ তোমাকে সাবধানে রক্ষা করুন, এইপ্রকার কার্যে বহু বিঘ্ন হয়ে থাকে।–’ এত কীসের আশঙ্কা,দুশ্চিন্তা ? তার মানে দশরথ কী আঁচ করতে পেরেছিলেন তাঁর মতির স্থিরতা বজায় না থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
দশরথ নিজের মনের ভাব আয়না – অনাবিলে মেলে ধরলেন ‘যে সময়ে ভরত এই রাজধানী ছেড়ে প্রবাসে আছে সেই সময়ই অভিষেকের উপযুক্ত, এই আমার মত। সত্য বটে তোমার ভ্রাতা ভরত সৎস্বভাব, জ্যেষ্ঠের অনুগত, ধর্মাত্মা, স্নেহশীল ও জিতেন্দ্রিয়, কিন্তু আমি মনে করি যে মানুষের চিত্ত অস্থির, সাধু ও ধার্মিকদের মনও কারণ উপস্থিত হলে বিকারযুক্ত হয়।’
দশরথ ছাড়া অযোধ্যার অন্তঃপুরের অন্তর্নিহিত সমীকরণটি পরিস্ফুট হয় যখন রাম পিতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পুত্রের কল্যাণ কামনায় পূজারত কৌশল্যার কাছে গেলেন। সেখানে সুমিত্রা, সীতা এবং লক্ষ্মণও রয়েছেন। কৌশল্যা আনন্দিত মনে বাষ্পাকুল কন্ঠে রামকে যখন আশীর্বাদ করছেন, তখন ঐ অতি আনন্দের মধ্যেও আমরা দেখি, গৃহবিবাদের ছায়া কেমন ঝড়ের মুখে থম মেরে থাকা ঘনকৃষ্ণ মেঘের মতোই নিকষ…
কৌশল্যা রামকে চিরজীবী হওয়ার আশীর্বাদ করে বলছেন, ‘…তোমার শত্রু দূর হ’ক, তুমি রাজশ্রী লাভ করে আমার আর সুমিত্রার আত্মীয়জনকে আনন্দিত কর।’ এখানে কৈকেয়ীর নাম উচ্চারিত অবধি হল না। লক্ষ্মণকে রাম বলছেন, ‘তুমিও আমার সঙ্গে এই রাজ্যভার বহন করবে, তুমি আমার দ্বিতীয় অন্তরাত্মা’। সুতরাং একদিকে কৈকেয়ী এবং অপরদিকে কৌশল্যা-সুমিত্রা প্রতিগোষ্ঠীর অস্তিত্ব অন্তঃপুরে পূর্ণ রূপে বিরাজমান ছিল।
এবার আসা যাক কৈকেয়ীর কথায়। তিনি নিঃসন্দেহে দশরথের প্রিয়া পত্নী ছিলেন। ‘রাজা ভবতি ভূয়িষ্ঠমিহাম্বায়া নিবেশনে।’ অর্থাৎ মহারাজা বেশির ভাগ সময় আমার মায়ের গৃহেই থাকেন- ভরতের এই উক্তিই প্রমাণ করে যে বর্তমান পঞ্জাবের বিপাশা আর শতদ্রুর মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত কেকয় রাজ্যের অধিপতি অশ্বপতি’র কন্যা কৈকেয়ী বৃদ্ধ রাজার হৃদি সম্যক অধিকার করে রেখেছিলেন অথচ প্রাণাধিক প্রিয়া পত্নীকে তিনি জানানোর প্রয়োজনবোধ করলেন না রামকে যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত করার মতো অত বড় একটি খবর। কেন করলেন না? তার উত্তর আমরা পাই আরো একটু পরে। ক্রোধাগারে কুপিতা কৈকেয়ী যখন দশরথকে জানালেন যে তার একটি বাসনা আছে, দশরথ যদি প্রতিজ্ঞা করেন সে বাসনা পূরণ করবেন, তাহলেই তিনি সে বাসনার কথা ব্যক্ত করবেন। উত্তরে কৈকেয়ীকে আশ্বস্ত করেছিলেন দশরথ এই বলে যে তার চেয়ে প্রিয়তর রাম ছাড়া আর কেউ নেই দশরথের। সেই রামের নামে শপথ করেই তিনি কৈকেয়ীর বাসনাপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেন। এভাবেই ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে কখনোসখনো রোদসুতো যেমন আমাদের চোখ ধাঁধিঁয়ে দেয়, রাজর্ষির হৃদয়ের ফাঁকফোকর দিয়ে রামের প্রতি তাঁর স্নেহফল্গুধারাও তেমনিভাবে ছলছলিয়ে ওঠে।
যাই হোক, আমরা ফিরে যাই রাজ্যাভিষেকের প্রাতঃকালে। কৈকেয়ীর কুব্জা দাসী মন্থরা প্রাসাদের উপর থেকে দেখল, রাজপথ চন্দন জলে সিক্ত, দেবালয়ে বাদ্যধ্বনি ও বেদপাঠ হচ্ছে। সারা অযোধ্যা নগরী জুড়ে উৎসব মুখর পরিবেশ। এক ধাত্রীকে প্রশ্ন করে সে জানতে পারে আসল ঘটনা সম্পর্কে এবং বলাই বাহুল্য, কালবিলম্ব না করে কৈকেয়ীকে জানায়।
প্রথমে কিন্তু কৈকেয়ী রামের যৌবরাজ্যের সংবাদে আনন্দিতই হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তিনি রাম আর ভরতের মধ্যে কোন তফাৎ করেন না। রাম তাকে কৌশল্যার চেয়েও অধিক সেবা করেন। একথাও তার মুখে শুনি আমরা। কিন্তু মন্থরার কূটবুদ্ধি ও দূরদর্শীতার সামনে তিনি যেন দীঘিসলিলে নিজের বর্তমান অবস্থা ও আগামী অনিশ্চয়তার একটি স্থির প্রতিবিম্ব দেখতে পেলেন। সপত্নীর পুত্র মৃত্যুর মতো-সপত্নীপুত্রস্য বৃদ্ধিং মৃত্যোরিবাগতাম – এমনকী তার বৃদ্ধি বা উন্নতিও তাই। লক্ষ্মণ রামের অনুগত, শত্রুঘ্ন ভরতের অনুগত, তাই তাদের থেকে রামের ভয় নেই। তার পরে ভরত সিংহাসনের ন্যায্য অধিকারী। তাই তাকে বৃদ্ধ রাজা মাতুলালয়ে পাঠিয়ে রামের রাজা হওয়ার পথ নিষ্কন্টক করতে চেয়েছেন। এতদিন দশরথের প্রাণাধিকা হয়ে তিনি যে মর্যাদায় কালাতিপাত করেছেন, রাম রাজা হলে সেই মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হবেন রামের মা কৌশল্যা এবং কৈকেয়ীকে নিতান্তই তাঁর দাসী হয়ে থাকতে হবে। এতদিন ধরে নিজের সৌভাগ্যমদে গর্বিতা হয়ে কৈকেয়ী যে কৌশল্যাকে উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করেননি, সেই কৌশল্যা কি এবার তার প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠবেন না?
এই কটি অমোঘ স্ফুলিঙ্গেই অযোধ্যার রাজপ্রাসাদ দাবানলের দাউদাউতে ছারখার হয়ে গেল। সেই মুহুর্ত থেকেই তাঁর হাত ধরে মহাকাব্যের স্রোত চলল অন্য কোথাও; অন্য কোনখানে।
আগুনের লেলিহান পেরিয়ে মহাভারতেও অনেক জল বয়ে গেছে। পাণ্ডবদের বনযাত্রার পর ধৃতরাষ্ট্র বিদুরকে বললেন যাতে কুরুপাণ্ডবদের হিত হয় এমন বাক্য বলতে। অন্যায় পাশাখেলা, কুলবধূর বস্ত্রহরণ ইত্যাদি নিন্দনীয় ঘটনায়,পাপিষ্ঠ পুত্রদের অনাচারে ধৃতরাষ্ট্রের বিচলিত অপরাধী মন তখন বিদুরের কাছেই বুঝি বা শ্যামলছায়া খুঁজে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যে পিতৃহৃদয়ের দাড়িপাল্লা সবসময়ে পুত্রের দিকে হেলে থাকে, তার কাছে তাই হিতকর, যা তার সন্তানের স্বার্থরক্ষায় তৎপর। বিদুর পরামর্শ দিলেন পাণ্ডবদের সমস্ত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে এবং কৌরব আর পাণ্ডবদের একসঙ্গে রাজ্যভোগ করতে, নচেৎ দুর্যোধনকে নিগৃহীত করে যুধিষ্ঠিরকে রাজাধিপত্য দিন ধৃতরাষ্ট্র। দুঃশাসন ভীম এবং দ্রৌপদীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিক। তাতেই কুরুপাণ্ডবের মঙ্গল। তা কি ধৃতরাষ্ট্র জানেন না? তার প্রজ্ঞাচক্ষুবিশিষ্ট মন তো সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল, সেই মনটাই তো বিদুরের মতো ব্যক্তির কাছে হিতকর কথা শোনবার জন্য উৎকণ্ঠিত হয়ে থাকে, কিন্তু সেই মনকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে যখন জেগে ওঠেন পিতা- তখন তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে- যা পাণ্ডবদের পক্ষে হিতকর, তা কৌরবদের পক্ষে অহিতকর। পাণ্ডবদের জন্য নিজের পুত্রকে কি করে তিনি ত্যাগ করবেন? পাণ্ডবরাও তাঁর পুত্র বটে কিন্তু দুর্যোধন তাঁর দেহ থেকে উৎপন্ন। ধৃতরাষ্ট্র বিদুরকে তিরস্কার করে চলে যেতে বললেন। বিদুর হতাশ হয়ে পাণ্ডবদের উদ্দেশে যাত্রা করলেন।
এক্ষণে আমরা যাত্রা করি চিত্রকূট পর্বতে। পুত্রশোকে দশরথ গত হয়েছেন। রাম- লক্ষ্মণ-ভরতের মিলন হয়েছে। রাম ফিরলেন না। তাঁর পাদুকা মাথায় করে অযোধ্যায় ফিরে গেছেন ভরত। কিন্তু এই ক্ষণিক মিলনের সীমিত কথোপকথনে একটি সত্য উঠে এসেছে রামের মুখে।
‘পুরা ভ্রাতঃ পিতা নঃ স মাতরং তে সমুদবহন।
মাতামহে সমশ্রৌষিদ রাজ্যশুল্কমনুত্তমম।।’
অর্থাৎ কৈকেয়ীর সঙ্গে বিবাহকালে দশরথ কৈকেয়ীর পিতা কেকয়রাজকে কথা দিয়েছিলেন যে ভবিষ্যতে কৈকেয়ীর পুত্রই রাজা হবে। রামের এই উক্তি থেকে মনে হয়, দশরথ এই শর্তেই কৈকেয়ীকে বিয়ে করেছিলেন। অবশ্য কৈকেয়ী বা দশরথ – কাউকেই কখনো এমন কোনো শর্তের কথা উল্লেখ করতে দেখা যায় না কিন্তু সত্যসন্ধ বংশের জ্যেষ্ঠসন্তান রাম কেনই বা অযাচিতভাবে এই কথার অবতারণা করতে যাবেন? তাহলে প্রশ্ন ওঠে কুপিতা কৈকেয়ী দশরথকে পরিচর্যা করে যে দুটি বর প্রাপ্তির অধিকারিণী হয়েছিলেন, সেই কথা দশরথকে কুন্ঠাহীনভাবে যখন মনে করাতে পারলেন, তার পিতাকে দেওয়া এই প্রতিশ্রুতির কথা মনে করাতে ভুলে গেলেন কেন? কৈকেয়ী নিজেই বা ভুলে গেলেন কি করে তার পক্ষে এতবড় একটা সৌভাগ্যজনক শর্তের কথা? আর সত্যানুসারী রামচন্দ্রই বা কি বলে এই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে অবগত হওয়া সত্ত্বেও যৌবরাজ্যে অভিষিক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র আপত্তি জানালেন না? মহাকাব্যের নরচন্দ্রমা এবং তার রাজর্ষি পিতাকে ষড়যন্ত্রকারীর কলঙ্কলেপন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই কি কৈকেয়ীর এই বিস্ময়কর বিস্মরণ!
অথচ যে পুত্রদের প্রতি অন্ধ মোহে দুই পিতা এতখানি প্রাণপাত করলেন তাদের বিনষ্টির জন্য তাদের শুনতে হয়েছে গঞ্জনা একেবারে নিজের নিভৃত কক্ষটি থেকে। দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের নারকীয় সংবাদ পেয়ে ছুটে এসে গান্ধারী পাশা খেলা বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন রাজার কাছে। রাজা তা মেনেও নিয়েছেন। দ্বিতীয়বার পাশাখেলার ষড়যন্ত্র ঘনিয়ে এলে গান্ধারী নির্দ্বিধায় রাজাকে বলেছেন - নিজের দোষে এই দুঃখসমুদ্রে ডুবিয়ো না নিজেকে, অশিষ্ট পুত্রেরা তোমাকে যা বলছে তাই করছো। আমি চাই, তোমার ছেলেদের চলার পথে তুমি তাদের প্রকৃত চক্ষু হয়ে ওঠো। তা নইলে বিপক্ষের আঘাতে তারা একদিন ধ্বংস করে ফেলবে নিজেকে।
দশরথকেও পুত্রের বিনষ্টির জন্য দোষারোপ করতে ছাড়েননি কৌশল্যা। সুমন্ত্র যখন অযোধ্যায় ফিরে এসে রাম -লক্ষ্মণ-সীতার কুশলসংবাদ জানালেন, তখন কৌশল্যার দুঃখ কিছুমাত্র প্রশমিত হল না। তিনি দশরথকে বললেন, রাম ফিরে এলে ভরতও তাকে রাজ্য ফিরিয়ে দেবে বলে মনে হয় না আর কনিষ্ঠের উপভুক্ত রাজ্য রামও গ্রহণ করবে বলে মনে করছেন না কৌশল্যা। দশরথ কৈকেয়ী আর তার পুত্রকে হৃষ্ট করার জন্য রাজ্য, মন্ত্রীগণ, পৌরজন, সমস্তই নষ্ট করলেন, পুত্র সহ কৌশল্যাকেও নষ্ট করে দিয়েছেন। এরপর মুনিকুমারবধের ইতিহাস ব্যক্ত করে বিলাপ করতে করতেই দেখি দশরথ শব্দ স্পর্শরহিত হয়ে পড়ছেন। অর্ধরাত্রের পর তিনি বিলাপ করতে করতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।
ধৃতরাষ্ট্র অবশ্য এত সহজে নিষ্কৃতি পাননি। লোহার ভীম চূর্ণ করেও তার শোকের কিছুমাত্র অপনোদন হয়নি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর পনেরো বছর কেটে গেছে। শোকের সঙ্গে ঘর করা শুরু হয়েছে তার এবং গান্ধারীর। যুধিষ্ঠির জ্যেষ্ঠতাতের স্নেহচ্ছায়াতেই রাজত্ব করেন। গান্ধারী তাঁর ছায়াসঙ্গী। কুন্তী, দ্রৌপদী ও অন্যান্য কুলবধূরা সকলেই তাঁর সেবায় নিয়োজিত। পুত্রহারা ধৃতরাষ্ট্র যেন কোন কিছুতেই দুঃখ না পান, এই ঘোষণা সকলের কাছে আদেশ। কিন্তু এত প্রচেষ্টাতেও ভীম শোকাতুর বৃদ্ধকে মনে করিয়ে দিতে ছাড়লেন না কত নিষ্ঠুর উপায়ে তিনি তাঁর প্রিয় পুত্রদের বধ করেছেন। আর সহ্য হল না ধৃতরাষ্ট্রের। তিনি তো এমনিই মৃগশয্যায় শয়ন করেন, সংযত আহারে জপে তপে নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করে চলেছেন, তবু ভীমের এত কঠোরতা। তিনি বনবাসী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন।
কিন্তু বনবাসী হয়েওতাঁর পিতৃহৃদয়ের তাপ কিছুমাত্র প্রশমিত হয়নি। এক বছর কেটে গেল। তারপর এল সেই আকাঙ্খিত দিন। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন মহাভারতকার স্বয়ং। ব্যাসদেবের বরে দিব্যদৃষ্টির প্রভায় ভাগীরথীর বুক থেকে উঠে আসতে দেখলেন তাঁর অন্তরের ধন দিব্যকান্ত দুর্যোধনকে। যে ছেলেকে কোনদিন চর্মচক্ষে দেখেননি সেই ছেলের মুখ দিব্যচক্ষে দর্শন করে এক রাত্রির জন্য সেই নীলমণি সবেধনকে কাছে পেয়ে তিনি কি বলেছিলেন, সে ব্যাসদেব উহ্যই রেখেছেন। পরের দিন যখন সেই দিব্য যোদ্ধারা প্রেতলোকে প্রস্থান করলেন কারোর আর শোকতাপ অযশ কিছুই রইল না।
তারপরে আরো ছমাস বেঁচেছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। গঙ্গাদ্বারে দিনের পর দিন মৌনী ও বায়ভুক হয়ে অস্থিচর্মসার হয়ে পড়লেন ধৃতরাষ্ট্র। অরণ্যে প্রবেশ করলেন। বনপ্রবেশের পূর্বে তাঁর যাজকগণ যজ্ঞাগ্নি যে বনে নিক্ষেপ করেছিল সেই অগ্নিই ব্যাপ্ত হয়েছিল সারা বনে। দাবানলে ছাই হয়ে যাওয়া অরণ্যের মাঝে গান্ধারী ও কুন্তীর সঙ্গে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল তাঁর। নিজের যজ্ঞাগ্নিতে নিজেকেই আহুতি দিলেন ধৃতরাষ্ট্র।
দশরথের পুত্রস্নেহও মরলোকের সীমা অতিক্রম করে অমর্ত্যসুষমায় নন্দিত হয়েছে। অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ সীতাকে পুনর্বার গ্রহণ করার পর দশরথ ইন্দ্রলোক থেকে রথারোহণে নেমে এসেছেন মর্ত্যে। রামকে আলিঙ্গন করে বলেছেন রামের বিরহে স্বর্গও তাঁর পক্ষে সুখকর হয়নি। কৈকেয়ীর অন্যায় আচরণ তাঁর হৃদয়ে এতদিন বিদ্ধ হয়েছিল। এক্ষণে রাম এবং লক্ষ্মণকে দেখে তাঁর দুঃখ দূর হয়েছে। তিনি অযোধ্যায় রামকে অভিষিক্ত হওয়ার আদেশ দিয়ে দীর্ঘায়ু কামনা করে লক্ষ্মণ ও সীতাকে আশীর্বাদ করে সুরলোকে প্রস্থান করেন।
দুই পিতা আজও বসে আছেন মহাকাব্যের প্লাবিত হরিৎ ক্ষেত্রে। ধৃতরাষ্ট্র যদি শুধু প্রজ্ঞাচক্ষু হতেন এবং দশরথ রাজর্ষি হতেন তাহলে হয়তো আজ মন্দিরে মন্দিরে তাঁদের মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হোত, সকাল সন্ধ্যায় ভোগারতিতে পূজিত হতেন তারা কিন্তু ঐ যে সন্তান-স্নেহের ফল্গুধারায় তাঁদের প্রজ্ঞাচক্ষু আর ঋষিসত্ত্বা অবলুপ্ত হয়ে যায় সেই ধারাই তাদের ভাসিয়ে নামিয়ে নিয়ে এসেছে পাঠক-হৃদয়ের একেবারে মাঝখানটিতে, যেখানে তারা হয়ে উঠেছেন আমাদেরই লোক।