কাঁটাগাছের পাশে বসেছিল একটা মোরগ। মোরগের সঙ্গে ন্যাকড়ার পুঁটলির মধ্যে বাঁধা ছিল কয়েকটা প্রবাল বা পলা। মোরগ পুঁটলিটা খুলতেই হঠাৎ একটা পলা টুপ করে কাঁটাগাছের মধ্যে পড়ে গেল। মোরগ গলা তুলে বলল, ‘এই কাঁটাগাছ, আমার পলাটা দে’। কাঁটাগাছ জবাব দিল, ‘আমার ভারি বয়ে গেছে’। মোরগ রেগে গিয়ে বলল, ‘দাঁড়া, আমি তোকে পুড়িয়ে ফেলব!’ কাঁটাগাছ বলল, ‘বেশ! ঠিক আছে’।
মোরগ তখন আগুনকে বলল, ‘কাঁটাগাছটা পুড়িয়ে দাও তো!’ আগুন বলল, ‘কেন? খামোকা একটা রোগাপোটকা কাঁটাগাছটাকে কেন পোড়াতে যাব?’
মোরগ তখন ভীষণ রেগে গিয়ে জলের কাছে গিয়ে বলল, ‘জল, ও জল, আগুন নিভিয়ে দাও তো, দোহাই তোমার’।
জল বলল, ‘আগুনের সঙ্গে কি আমার শত্রুতা আছে? কেন ওকে শুধু শুধু নেভাবো?’ মোরগ তখন বলে কি, ‘দাঁড়াও, একটা না খেতে পাওয়া গোরুকে তোমার সামনে ছেড়ে দেব। সব জল চোঁ চোঁ করে সাবাড় করে দেবে’। জল বলল, ‘বেশ। তাই হোক’।
গোরুটা কিন্তু রাজি হল না। এত দুবলা-পাতলা, যে চলতেই পারে না। মোরগ রেগে গিয়ে গোরুটাকে বলল, ‘দাঁড়া, নেকড়ে এসে তোকে খাবে এবার’।
নেকড়ে এবারে বলল, ‘ধুর! একটা মোটসোটা ভেড়া হলে তবে জমিয়ে খেতাম’। মোরগ তখন রাগে আগুন হয়ে বলল, ‘আচ্ছা, একটা ব্যাধকে বলছি তোকে এসে মারবে এবারে’।
ব্যাধ বলল, ‘আরে না না, নেকড়ে মেরে কী করব? খাওয়া তো যাবে না। মাংস, চামড়া কোনো কাজেই লাগবে না’। মোরগ এবারে ভয়ানক রেগে গিয়ে বলল, ‘ইঁদুর লেলিয়ে দেব, দেখবি মজা!’ ব্যাধ বলল, ‘বেশ বেশ!’
ইঁদুর বলল, ‘এহে! আমি তো ব্যাধের বাড়িতে বাদাম আর অনেক ভালো ভালো জিনিস খেতে পাই। ব্যাধের শিকার করা চামড়া কেটে আমার কী হবে?’ মোরগ বলল, ‘তবে রে! বেড়ালকে গিয়ে বলছি – তোকে ধরে খাবে’।
ইঁদুর বলল, ‘বেড়াল আমার শত্রু বটে। দেখলেই ধরে খায়। কাজেই তাকে আলাদা করে বলেই বা কী হবে?’
বেড়াল বলল, ‘হ্যাঁ করতে পারি। তবে খিদে পেলেই করব! এখন আমার ইঁদুর মারার ইচ্ছে নেই’।
এইবারে মোরগ অগ্নিশর্মা হয়ে বলল, ‘ছোট বাচ্চাগুলোকে তোর পেছনে লেলিয়ে দেব এবার!’
বেড়াল বলল, ‘যাও, তাই কর গে যাও’।
ছেলেগুলো মোরগের কথা কানেই তুলল না। ওরা খেলা নিয়েই মশগুল!
মোরগ এবারে চটে কাঁই হয়ে বলল, ‘বুড়ো দাদুকে দিয়ে তোদের পিটুনি খাওয়াবো এবারে’।
ছেলেগুলো পাত্তাই দিল না।
বুড়োদাদু পশম বোনে। প্রচুর পশম তার উঠোনে ছড়ানো।
বুড়ো কিন্তু ছেলেগুলোকে পেটাতে একদম রাজি হল না। ‘আহা! বাচ্চাগুলো খেলছে, খেলুক না! তুই তো একেবারেই বুদ্ধু রে!’
মোরগ এবারে বলল, ‘আমি বাতাসকে বলছি তোমার সব পশম উড়িয়ে নিয়ে যাবে’। বুড়ো বলল, ‘ছোঃ! পালা এখান থেকে’।
এবারে হল কী, সত্যি সত্যি দমকা হাওয়া এসে বুড়োর সব পশম উড়িয়ে নিয়ে গেল। তখন বুড়ো ছেলেগুলোকে দমদ্দম পিটতে লাগল। ছেলেগুলোও বেড়ালটাকে জ্বালিয়ে মারল। বেড়াল ইঁদুরকে তাড়া করল। ইঁদুর ছুটে গিয়ে ব্যাধের কোমরে দাঁত বসিয়ে দিল, ব্যাধ নেকড়ের পেছনে ধাওয়া করল, নেকড়ে গোরুকে ঘ্যাঁক করে কামড়ে দিল। কামড় খেয়ে গোরুটা সব জল চোঁ চোঁ করে খেয়ে ফেলল আর জল নেমে এসে আগুন নিভিয়ে দিল। আগুন, কাঁটাগাছ পুড়িয়ে ছাই করে দিল। আর পোড়া কাঁটাগাছের ছাই থেকে পলা কুড়িয়ে নিল মোরগ।
১
চমৎকার একটি লোককথা। সব ঠিকঠাক থাকে। কিন্তু একটা দমকা হাওয়ার মত এসে যায় বেমক্কা উস্কানি। আর তাতেই যা ঘটার তা ঘটে যায়! এই লোককথাগুলো পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে লুকিয়ে আছে। এক প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠীর মুখে মুখে বয়ে চলা গল্পগুলো হল দারদিস্তানের লোককথা। কাশ্মীরে উত্তরে, পাকিস্তানের উত্তরে এক প্রাচীন ভাষাগোষ্ঠী বাস করে। তারা হল দারদ। তারা কথা বলে শিনা ভাষায়। কত প্রাচীন জাতি তারা? মহাভারতে এঁদের উল্লেখ আছে। দারাদা উপজাতি। রাজতরঙ্গিণীতে আছে। তারও আগে হেরোদোতাস এবং অন্যান্যরা। সেই দীর্ঘ তথ্যে আর যাচ্ছি না। এই শিনা ভাষার উপজাতিরা কাশ্মীরের দ্রাস ও গুরেজ উপত্যকায় বসবাস করে। দারদিস্তানের তিরিশ শতাংশ ভারতে। বাকি সবটাই পাকিস্তানে। আলপাইন বনভূমি আর কিসেনগঙ্গার স্রোতের ঘেরাটপে গুরেজ উপত্যকা। কিসেনগঙ্গা সীমানা পেরোলে নীলম নদী হয়ে যায়। চেকপোস্টের দুই কিলোমিটারের মধ্যেই প্রতিবেশী দেশ। দূরবীনে দেখা যায় ওধারের গ্রাম। গোরু ছাগল চরে বেড়াচ্ছে। আমাদের এপাশে অতন্দ্র সেনা। বছরের ছয়মাস বরফের তলায় ঘুমিয়ে থাকে গুরেজ।
গুরেজে পূর্ণিমার রাত দেখার মত। মস্ত বড় জ্বলজ্বলে চাঁদ যেন টুপ করে ধরে ফেলা যাবে।
চাঁদ উঠেছে পাহাড়ের একেবারে মাথায়। কাশ্মীরে চাঁদকে বলে জুন। উপত্যকার চাঁদের বড় শোভা! চাঁদ দেখার জন্য কাশ্মীরের পুরোনো বাড়িগুলোতে থাকতো জুন দুব। মানে, চাঁদ দেখার বারান্দা। ঝুল বারান্দার মত দোতলা বাড়ি থেকে একটা অংশ বেরিয়ে এসেছে। নরম দেওদার কাঠের পিঞ্জারাকারির ঘেরাটোপে ছিলিবিলি জোছনায় স্বপ্নজমিন বোনা হত। কিসেনগঙ্গার কুলকুল শব্দ আর মস্ত জ্বলজ্বলে চাঁদ উঠেছে ‘হাব্বা খাতুন’ পাহাড়ের মাথায়। চাঁদ যেন নড়ছে না। পাহাড়ের মাথায় সে স্থির। হাব্বা তাঁর এলানো চুলে চাঁদের আলো মেখে নিচ্ছে। কিন্তু চন্দনশীতল মোমজ্যোৎস্না হাব্বার বিরহকে শান্ত করতে পারেনি। পূর্ণিমার রাতে হাব্বা খাতুন পাহাড়ের মাথার ওপরে চাঁদ ওর বুকের গুমগুমে যন্ত্রণাকে নিংড়ে বের করে কিসেন গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয় অবিশ্রান্ত ধারায়।
কবির নামে পাহাড়। ভারতের সীমান্তে নির্জন চরাচরে এক স্বপ্নালোকের সাক্ষী তখন আমি!
আহা, হাব্বা খাতুনের আসল নাম যে জুন। কারণ সে ছিল চাঁদবদনী।
রজনীকান্ত লিখেছিলেন হরি, প্রেমগগনে চির রাকা!
২
পুলোয়ামার পথে পড়বে পাঁপর গ্রাম। জাফরান খেতের এই গ্রামের কাছেই চন্দহার গ্রামে জুন ছিল এক চাষির মেয়ে। কোয়েলের মত মিঠে তার গলা। খেটে খাওয়া কৃষক পরিবারে এমন মেয়ে! গান গায়, সে গান আবার সে নিজেই বাঁধে। চারপাশের সবাই তাজ্জব হয়ে গেলে কী হবে! জুন ছিল জাতকবি বা জন্মকবি। গাঁয়ের পাঠশালায় যেতে শুরু করে সে। পারস্যের কবি সাদি শিরাজির গোলেস্তান ও বোস্তান মানে ফুলের বাগান, তার খুব প্রিয় বই। নিখুঁত কবিতা লেখার প্রেরণা কি এই বই? জানি না। তবে ষোড়শ শতকে গ্রামের চাষি বাড়ির মেয়ের এমন অবস্থা তো ঐতিহাসিকভাবে সত্য! তার পাশাপাশি বাংলায় একই সময়ে মেয়েদের পরিস্থিতি একবার ভেবে দেখুন! তবে কী জানেন, কাশ্মীরের ইতিহাস একটু অন্যরকম। নীলমতপুরাণ, রাজতরঙ্গিণী ও অন্যান্য তথ্য থেকে জানা যায় কাশ্মীরের সমাজে মেয়েদের কথা – যা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশ আলাদা। প্রসঙ্গান্তরে যাব না। কথা হচ্ছিল জুনকে নিয়ে। জুন যেমন সুন্দর, তেমন তার গানের গলা, তেমন ভালো কবিতা লেখে। গ্রামের সকলে অবাক হয়ে যায়। ঠিক গল্পে যেমন ঘটে, জুনের জীবনেও তাই-ই ঘটল। এক আকাট চাষা হাব্বার সাথে বিয়ে গেল জুনের। জুন এখন হাব্বা খাতুন। হাব্বার বউ। হাব্বা ও তার পরিবার চাইত, জুন যেন ঘরের বৌ-এর মতোই থাকে। হেঁশেল, মাঠের কাজ, ঘরের কাজ, স্বামী-সেবা, বাচ্চাকাচ্চা। কিন্তু জাফরান খেতের সুবাস সে মেয়ের চুলে বিলি কাটে, আকাশের চাঁদ ঝুঁকে পড়ে কপালে চুমো খায়, রাতের শিশির তার পায়ে নূপুর হয়ে জড়িয়ে থাকে। হাব্বার বউ হাব্বা খাতুনের গলায় পাপিয়া তখন সুর ঢেলে দেয় দরাজ হাতে। ছি ছি ছি, লোকে বলবে কী! হাব্বা ও তার মা ঝামটা দিয়ে ওঠে। হাব্বা খাতুন তো শুধু সুন্দর নয়। তার আছে একটি প্রেমমাধুরী মাখা হৃদয়। শাণিত মেধা!
“খেলব বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম।
দিন পশ্চিমে ডুবে গেলেও, তখনো ফিরিনি আমি।
ভালো বাপ-মায়ের মেয়ে আমি, হাব্বা খাতুন নাম।
ভিড়ের মধ্যে আঁটো করে ঘোমটা ঢেকে চলি।
তবু লোকে ভিড় জমায় আমায় দেখবে বলে!
দেখো, বনের ভেতর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তপস্বী দ্রুত পায়ে,
তখন দিন ডুবে যায় পশ্চিমে।”
জাতকবিকে বাঁধতে পারে না সংসারের শেকল। বর গঞ্জনা দেয়, শাশুড়ি মারতে আসে, আর ওদিকে বেগুনি জাফরান খেত তাকে পাগলের মত ডাকতে থাকে। একদিন এমনই হল। হাব্বা খাতুন–চাষা হাব্বার বউ–জাফরান রঙে ডুবে গিয়ে একটা নতুন গান ধরল। সূর্য ডুবছে জাফরানি আকাশে। শিকার থেকে ফিরছেন কাশ্মীরের যুবরাজ ইউসুফ খান চাক। তারপর গল্পে যা হয়, ঠিক তাই হল। অপরূপ সেই গোধুলিবেলায় যুবরাজ প্রেমে পড়লেন ঘুঁটেকুড়ুনির–মানে চাষির বউ-এর। অবশ্য কাজটা খুব সহজ ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খড়কুটো, কাদা-মাটি মাখা জুন গিয়ে উঠলো রাজপ্রাসাদে। ইউসুফ চাকের সঙ্গে হাব্বা খাতুনের দিনগুলো স্বপ্নের নীল মেঘের মত হু হু করে উড়ে যাচ্ছিল। একের পর এক প্রেমের কবিতা লিখে চলছিল হাব্বা খাতুন। তার সৌন্দর্য ও মেধা, দুই এর প্রেমেই ইউসুফ চাক তখন শরবিদ্ধ। ইউসুফ চাক। কাশ্মীরের সীমান্তের ওপার থেকে এসেছিলেন। হ্যাঁ, দারদ গোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন তিনি। আজ যেখানে গুরেজ উপত্যকা তিনি সেই অঞ্চলের বাসিন্দা।
প্রেমে আকুল হাব্বা খাতুনের হাতে তখন জন্ম নিচ্ছিল লোল বা গীতিকবিতা। হাব্বা খাতুনের আগে এবং পরেও লাল দেদ বা আরনিমল প্রমুখ প্রসিদ্ধ মহিলা কবিরা তাদের উচ্চমানের সৃষ্টিকে অতীন্দ্রিয় ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন। কিন্তু গাঢ় প্রেমের সংরাগ ও তীব্র মিলনের আকুতি নিয়ে হাব্বা খাতুনের কবিতায় বড় হয়ে উঠেছে রক্তমাংসের মানুষের প্রেম!
ততদিনে সিংহাসনে বসেছেন ইউসুফ চাক। গল্প উঠছে ক্লাইম্যাক্সে!
এরকম সিনেমার মত গল্পে অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স থাকবেই। খলনায়ক থাকবে। এই সময় হিন্দোস্তানের রাজনীতিতে বাদশা আকবর জাঁকিয়ে বসছেন। কাশ্মীরের ওপর আকবর নজর দিলেন এবারে।
প্রথমেই ঘাঁটি গাড়তে পারলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাশ্মীর জিতে নিলেন আকবর। শেষ স্বাধীন সুলতান ইউসুফ চাক–হাব্বা খাতুনের প্রেমিক স্বামী–বন্দি হলেন মোঘলদের হাতে। শুধু তাই নয়, ইউসুফ চাককে পাঠিয়ে দেওয়া হল সুদূর বিহারে। এরপর থেকে হাব্বা খাতুনের সঙ্গে ইউসুফ চাকের আর কোনোদিন দেখা হয়নি। তাই হাব্বা খাতুন চিরবিরহী এক অস্থির প্রাণ! হাব্বা খাতুন দুঃখে পাগলের মত হয়ে গেল। রাজপ্রাসাদ ছেড়ে কাশ্মীরের উপত্যকায়, চিনারের পাতায় পাতায়, জঙ্গলে, নদীতে, ঝর্নায় মুক্তোর মত চোখের জল ঝরিয়েছে সে। আর লিখে গেছে প্রেমিক পুরুষটির জন্য তার হৃদয় খোঁড়া কবিতা।
“প্রেম আমাকে ভেতর থেকে কুরে কুরে খেয়েছে।
আমাকে একটা তপ্ত উনুনে ফেলে দিয়েছে সে।
আধপোড়া কাঠে ধিকিধিকি জ্বলছি আমি।
বরফের মতো আমাকে গলিয়ে দিয়েছে প্রেম।
পাহাড়ি ঝর্নার মত বইয়ে দিয়েছে আমাকে।
অশান্ত ঝোরার মত গড়িয়ে পড়ছি আমি।”
গুরেজ উপত্যকার দারদিস্তানে সে নাকি ঘুরে বেড়াত। এ-কথার সত্যতা জানা নেই। কিন্তু তাঁর প্রিয়তম স্বামীর অঞ্চলে একটি পাহাড়ের নাম হাব্বা খাতুন।
উপত্যকার দিকে তাকিয়ে বেবাক পাহাড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কবি। মাথার ওপর যখন চাঁদ ওঠে তখন হাব্বা খাতুন পাহাড়ের বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা সেই মেয়ে, জুন বা জুনি যার নাম ছিল, হঠাৎ কেঁদে ওঠে সে। সেই কান্না অথৈ জল হয়ে কিসেনগঙ্গার রূপ নিয়ে বয়ে চলে যায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কত রঙে সেজে ওঠে সেই পাহাড়। এখনও অপেক্ষায় আছে সে!
যদি কান পাতো, শুনতে পাবে পাহাড় হয়ে থাকা কবি গাইছে:
“স্বপ্নমায়ায় পথ হারিয়ে
লায়লা জ্বালে আঁধার বাতি
আমি পতঙ্গ তুমি আলো
ডালিমফুলের রূপে মাতি”
হাব্বা খাতুন বা জুনি, সুফি সন্তদের স্পর্শে এসেছিল। দুঃখকে দর্শনে উন্নীত করে শান্ত হয়েছিল কি না জানিনা।
জুনি যেমন হাওয়ার কাঁপনে এসেছিল, তেমনি প্রাণের পরে বসন্ত হাওয়ায় মত উবে গেল। জুনি একটা প্যাশনের নাম, জুনুনের নাম। মাদকতার নাম। আগেই বলেছি, জুনির আগে বা পরে যারা কবিতা লিখেছেন, তাঁদের কবিতা অতীন্দ্রিয়তার ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন, আবছা ও ধূসর। কিন্তু জুনির লোল বা গীতিকবিতায় তীব্র মানুষী প্রেমের বর্ণিল সংরাগ। দগদগে প্রেমের আঁচ। নিঃশ্বাসের উত্তাপ। হ্যাঁ, সেই ষোড়শ শতকের ইতিহাসে!
“দরজা দিয়ে চেয়ে রইলে মুখে
ভাবি মনে কে দেখাল তোমাকে এই ঘর
প্রতি অঙ্গে প্রেম আমায় ব্যথাকাতর রাখে
চিরনবীন হয়ে থাকি কামনা জর্জর”