আমাদের পদুমা গ্রাম থেকে বাসে মাত্র দেড় ঘণ্টার দূরত্বে বক্রেশ্বরে মাটি ফুঁড়ে আসা গরম জলের কুণ্ড দেখেছি বাল্যকালে, শুনেছি রাজগিরের কথা। জার্মানি এসে দেখলাম অজস্র জনস্থান-মধ্যবর্তী উষ্ণ প্রস্রবণের ধারা, নিদেনপক্ষে দু-শো, যদিও দুনিয়ার লিগ টেবিলে জাপান, কানাডা, নিউজিল্যান্ডের স্থান আরও অনেক উঁচুতে।
রাজগির বা বক্রেশ্বরে সেই জল দিয়ে রোগ আরোগ্যের প্রথা আছে কিনা জানি না। মনে আছে—আমরা কুণ্ডে স্নান করেছি। জার্মানিসহ বহু দেশে সেই জলের গুণ ও উপকারিতা অনুযায়ী তৈরি হয়েছে সানাটোরিয়াম. কোনো জলপানে পেটের আরোগ্য, কোনো জলে হাড় বা পেশীর উপকারিতা। সেইমতো ঝরনার পাশে শহর বা গ্রাম গড়ে উঠেছে (ক্যুর অর্ট), যার নাম শুরু হয় বাদ (Bad) শব্দ দিয়ে। দুটি মাত্র ব্যতিক্রম চিনি – Wiesbaden এবং Baden Baden (দুই বার স্নান!)। রোমানরা এই ব্যপারটা বুঝেছিলেন সবার আগে—জল থেকে রোগমুক্তি: ল্যাটিনে সালুস পের আকুয়াম, `SPA! সেকালে একমাত্র রাজারাজড়াদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে এই জল সেবন করা। ফ্রাঙ্কফুর্টের অনতিদূরে বাদ হোমবুর্গ—সেখানে রাশিয়ান রাজপরিবার ঘোড়ার গাড়ি চড়ে আসতেন সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে। একটি অর্থোডক্স গিরজে আজও তাঁদের স্মৃতি বহন করে।
কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো প্রকাশের চল্লিশ বছর বাদে সংযুক্ত জার্মানির প্রথম চ্যান্সেলর অটো ফন বিসমার্ক তাঁর সম্রাটকে বোঝালেন—শ্রমিক কেবল মাত্র উৎপাদনের উপাদান নয়। তাকে সুস্থ, সমর্থ, কর্মক্ষম রাখা এবং তার অবসর জীবনকে সুনিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন দুর্ঘটনা বীমা, স্বাস্থ্য বীমা এবং পেনশন। শিল্প-বিপ্লবের বহু বছর কেটে গেলে এই প্রথম শ্রমিকের স্বার্থে এই আইন পাশ হল, প্রায় দেড়শো বছর আগে।
আজকের জার্মান বাদ বা সানাটোরিয়ামে সকল নাগরিকের প্রবেশের দ্বার উন্মুক্ত। আপনার ডাক্তার লিখে দিলে এই চিকিৎসা পাওয়া যায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সেখানে থাকা ও আসা যাওয়ার সমস্ত খরচ দেবেন সরকার। সাধারণত এক মাস সেখানে বসবাসের ব্যবস্থা – সানাটোরিয়াম শুধু হাসপাতাল নয়; দৈনন্দিন জীবনের ঘূর্ণিপাক থেকে বের হয়ে শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে থেকে শুধু শরীর নয়, মনেরও বিশ্রাম হয়।
জার্মান সানাটোরিয়ামের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় হয়েছিল আমার বন্ধু অর্টউইনের কারণে। হাড়জনিত রোগের চিকিৎসার জন্য সে গেছে বিভিন্ন ক্যুর অর্টে। আমিও সময়-সুবিধেমাফিক সেখানে ঢুঁ মেরেছি। সেখানে গিয়ে মনে হয়েছে, যেন সামার ক্যাম্প চলছে – কে ব্যাঙ্কার, কে ছুতোর মিস্ত্রি বা কে কোন কোম্পানির মালিক বোঝবার কোনো উপায় নেই। এখানে সবাই সমান। অর্টউইনের সঙ্গে আড্ডা মারার সময় এই গুষ্টির কে কখন আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে, কে বিয়ারের দাম দিচ্ছে—বুঝে ওঠার উপায় ছিল না। বিকেল পাঁচটার পরে গ্রামের সব বার ভর্তি। আপন শহর, গ্রাম, পরিজন থেকে অনেক দূরে এসেছেন সবাই, তাঁরা অন্তত মধ্যবয়েসি। সানাটোরিয়ামের জীবন অন্যরকম—সকাল-বিকেল চিকিৎসা নির্দিষ্ট। বিকেল থেকে ছুটি, যে যার খুশিমতো মানুষের সঙ্গে মেশেন, আড্ডা দেন, সে তার বিষয়। এই মুক্ত মেলার আবহাওয়ায় নারী-পুরুষের অন্যরকমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সম্মতিক্রমে, যদিও দু-পক্ষই হয়তো মনে রাখেন এটি সাময়িক—আসা যাওয়ার পথের ধারে।
আমার আর অর্টউইনের সঙ্গে ফেরাইন্স ব্যাঙ্কের ইয়েন্স বুখফিঙ্কের আলাপ জমে উঠেছিল। আমাদের চেয়ে বছর দশেকের বড়ো। কর্পোরেটদের সেবা করে, মিউনিক/ব্যাভেরিয়ার পথে পথে ব্যাবসা খোঁজে, আমি আর অর্টউইন সেই একই কর্ম করি অন্য শহরে দেশে—একই দুঃখে দুঃখী। এই ক্যুরে আবাসকালে সাময়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠা নিয়ে গল্প হচ্ছিল। ইয়েন্স বললে, ‘কেন নয়, এই তো সুযোগ, সামাজিক বাধাবন্ধন নেই, আরেক মানুষ সেজে এক কল্পনার মঞ্চে অভিনয় করতে বাধা কী? তারপর যে যার চলে যাবে আপন ঠিকানায়। এই ক-দিন বৈ তো নয়! তারপরে তো সেই বাঁধাধরা গৎমাফিক জীবন, অফিস, ছেলে মেয়ের স্কুল। তবে আপন শখ মেটানোর খেলা আমি দেখেছি, এই ক্যুর অর্টের মতো ঠিক নয়, তবু সে যেন নিজের সাজানো নাটকের চরিত্রে অভিনয়!’
একটা গল্পের গন্ধ পাওয়া গেল! ইয়েন্সকে আর ছাড়া নেই! পুরো কাহিনি শুনি, লাস উন্স আলে হোইয়েরেন! সবে হ্যাপি আওয়ার শুরু হয়েছে, এক মার্কে হাফ লিটার সোনালি ক্রোমবাখার বিয়ার মিলবে পরের দু-ঘণ্টা।
ইয়েন্স ও আনেলিজের বাস মিউনিকের দক্ষিণে, উনটারহাখিং-এ। ছেলে বাড়ি ছাড়া, কাজ করে বামবের্গে। আটের দশক থেকে পতি-পত্নী নিয়মিত ইয়ুগোস্লাভিয়া গেছে গরমকালে, সেটা আর স্কুলছুটির সময় দিয়ে বাঁধা নয়। আগস্টের শেষ নাগাদ, ভিড়ভাট্টা কম। টিটোর আমল থেকে ইয়ুগোস্লাভিয়া আসা-যাওয়ায় কোনো বাধা নেই, ভিসা অবধি লাগে না। সেখানে হোটেলের খরচা, জিনিসপত্রের দাম জার্মানির অর্ধেক। একবার গিয়েই ভালো লেগে গিয়েছিল ক্রোয়েশিয়ার ডালমেশিয়ান উপকূল, বিশেষ করে মাকারস্কা, জার্মানরা খুব যায় তখন সেখানে। মিউনিক থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে ক্লাগেনফুর্ট পেরিয়ে স্লোভেনিয়া। টানা গাড়ি চালিয়ে আট-ন ঘণ্টায় মাকারাস্কা পৌঁছেছে একই দিনে। প্রায় প্রতি বছর সেই একই রেসর্টে। পথে জাদারের ত্রয়োদশ শতাব্দীর অট্টালিকা, দ্বিতীয় শতাব্দীর রোমান আর্চ দেখার কোনো বাসনা ছিল না তাদের। সিধে মাকারাস্কা – প্রতি দিন ঝকঝকে রোদ্দুর, গভীর নীল সমুদ্র, সোনালি বালুকা বেলা, সস্তার বিয়ার! আর কী চাই!
একদিন খাবার টেবিলে আলাপ হল পেটার এবং ডাগমারের সঙ্গে, তারা হামবুর্গ থেকে এসেছে। এমনি ছুটিতে কতজনের সঙ্গেই তো পরিচয় হয়, কিন্তু এরা একটু অন্যরকম। ডিনারে পেটার আসে স্যুট পরে, ডাগমার ককটেল ড্রেসে। পরে দেখা গেলো, বিচেও তারা রীতিমত ব্রানডেড পোশাক পরে। যুদ্ধের পরে ইয়েন্সের বাবা-মা প্রায় একবস্ত্রে লাইপজিগ থেকে মিউনিক আসেন, অনেক কষ্টেসৃষ্টে একমাত্র ছেলেকে পালন-পোষণ করেছেন। ইয়েন্স আঠার বছর বয়েসে ব্যাঙ্কে শিক্ষানবিশি (আউসবিলদুং), তারপর ব্যাঙ্কে কাজ। ইয়েন্স কাজের বাইরে কদাচিৎ স্যুট পরে; মনে প্রশ্ন জাগল—এখানে এই ক্রোয়েশিয়ার রেসর্টে পেটার স্যুট পরে কেন? আনেলিজে লক্ষ্য করেছে—তাদের কথাবার্তার স্টাইল উঁচু মাপের, কেতাদুরস্ত। সকলকে আপনি বলে, করমর্দন করার কালে ঠিকমত মাথাটি ঝুঁকিয়ে দেয়। মহিলাদের হস্ত চুম্বন করে আইন মেনে অর্থাৎ তাঁদের হাতটি মুখের কাছ অবধি নিয়ে যাবে কিন্তু মুখ স্পর্শ করবে না। ইয়েন্স বউকে বলেছে—হামবুর্গের মানুষ তো, ওরা যে প্রাশিয়ান (ব্যাভেরিয়ানদের কাছে উত্তর জার্মানির সবাই প্রাশিয়ান!) আর ওরা অন্য উচ্চারণে জার্মান বলে, সেটা স্বাভাবিক।
একদিন পাবে বসে কথাপ্রসঙ্গে ইয়েন্স বলেছে, সে ব্যাঙ্কে কাজ করে। বলেই পড়েছে বিপদে। পেটার জানায় সে হামবুর্গিশে স্পারকাসের (সেভিংস ব্যাঙ্ক) এক ডিরেক্টর, সুপারভাইসরি বোর্ডকে সরাসরি রিপোর্ট করে। যদিও সে আউদি গাড়ি চালিয়ে মাকারাস্কা এসেছে, অফিস থেকে বাড়ি আসা-যাওয়া এবং কাজেকর্মে তার জন্য বরাদ্দ ড্রাইভার সহ ব্যাঙ্কের মারসিদিস গাড়ি। তার নিবাস আলসটার নদীর উত্তরে, ব্ল্যাংকেনেজে (সেখানকার জমি-বাড়ির মূল্য আকাশ ছোঁয়া)।
ইয়েন্স বললে, সে জার্মান কর্পোরেট খদ্দেরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, প্রচুর ঘোরাঘুরি করে। যদিও মূলত ব্যাভেরিয়ায় তার কাজ, কিন্তু কখনও-সখনও হামবুর্গ যেতে হয়। পেটার অত্যন্ত অলসভাবে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, তা হামবুর্গ গেলে কোন হোটেলে ওঠেন?” এই প্রশ্নে ইয়েন্স একটু অবাক হল, “এ ব্যপারে আমার ব্যাঙ্ক একটু উদার। আমি এলিসে প্যালেস হোটেলে উঠি; সেটা আমার নিজের আরামের জন্যে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি ব্যাঙ্কের মাননীয় অতিথিদের আপ্যায়নের কথা মাথায় রেখে”। পেটার বললে, “এবার হামবুর্গ এলে আমাকে অবশ্যই ফোন করবেন”।
এরপরেও মাঝে সাঝে কথাবার্তা হয়; দেখা গেল—পেটার দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যাপারে অনেক খবরাখবর রাখে – ডে মার্কের ওঠানামা, হামবুর্গ বাজারে খনিজ তেলের স্পট/ফরওয়ার্ড – সব কিছুই তার নখদর্পণে। এবার টেলিফোন নম্বর বিনিময়ের পালা। পেটার বললে, আমি ছুটিতে বিজনেস কার্ড আনি না। একটা কাগজে লিখে দিচ্ছি। ইয়েন্স বললে, আমিও তাই, আমার কাছে কার্ড নেই! লিখে নিন আমার নম্বর।
দু সপ্তাহ বাদে ফেরার পালা। ইয়েন্স ও আনে লিজে বিদায় নিল পেটার ও ডাগমারের কাছ থেকে – হয় হামবুর্গে দেখা হবে, নইলে আবার এই মাকারাস্কার সুবর্ণ সমুদ্রতীরে! আবার আসিব ফিরে!
ঘটনাচক্রে সে বছর অক্টোবর মাসে এদেকা (কফি) গ্রুপের সঙ্গে একটা মিটিঙ ঠিক হয়েছে হামবুর্গে। পেটারের কথা মনে ছিল, যাবার আগে দু-দিন আগে ইয়েন্স ফোন করে জানিয়েছে। অমুক দিন সন্ধ্যেয় এলিসে চলে আসুন, ডিনার হবে একসঙ্গে। পেটার জানালো—আসবে ঠিকই, তবে অন্তত সাড়ে সাতটা বাজবে। সারাদিনের কাজকর্ম সেরে ইয়েন্স এলিসের লবিতে বসে আছে পেটারের অপেক্ষায়—সেখান থেকে আসা যাওয়ার ঘোরানো দরোজাটা দেখা যায়। হঠাৎ মনে হল সেখানে পেটারের মুখ যেন দেখা দিয়েই অদৃশ্য হয়ে গেল। এ কি চোখের ভুল? এবার ইয়েন্স উঠে দাঁড়াতে দেখে, না সত্যি, পেটার আসছে সেই ঘোরানো দরোজা ঠেলে। একটু বিভ্রান্ত মুখ তার। ইয়েন্স বললে, চলুন একটু বারে বসি, ডিনারের টেবিল বুক করা আছে আটটায় একটু দূরে আলসটারের জলরাশি দেখা যায়। বারে বসতেই পেটার বলল, “দেখুন আমার আমার কিছু ব্যক্তিগত কথা বলার আছে”। ইয়েন্স হেসে বললে, “আরে বলুন না, তাই তো আমরা বউদের বাড়িতে রেখে এই দুই পুরুষ এখানে দু-পাত্তর নিয়ে বসেছি”।
পেটারের মুখ তেমনি বিভ্রান্ত, একটু বিষণ্ণ।
“আমার একটি স্বীকারোক্তি আছে (ইখ মুস হোয়াস গেস্টেহেন )”।
বিয়ারের গেলাসে চুমুক দিয়ে সে শুরু করল।
পেটার হামবুর্গিশে স্পারকাসের ডিরেক্টর নয়, সে আলটোনা ব্রাঞ্চে দু-নম্বর ক্যাশ কাউন্টারের খাজাঞ্চি। যুবা বয়েসে তার স্বপ্ন ছিল ব্যাঙ্কে কোনো বড় কাজ করার, কিন্তু লেখাপড়ার তেমন সুযোগ পায়নি। একুশ বছর বয়েসে ব্যাঙ্কে ঢুকেছে, উন্নতির সম্ভাবনা কম। দিন কাটে টাকা গুণে, গেঁথে। বছরের জমানো টাকা দিয়ে ক্রোয়েশিয়ায় ছুটি কাটায় দু-সপ্তাহ। সেখানে সে তার ইচ্ছামূর্তি ধারণ করে। মঞ্চে নামে, ব্রেকফাস্ট টেবিল, বিচ ডিনারে সে আপন সাধ পূরণ করে হামবুর্গের এক বিরাট ব্যাঙ্কারের ভূমিকায় অভিনইয় করে সাধ মিটিয়ে। আজ অবধি কেউ তার আসল রূপ আবিষ্কার করতে পারেনি, যদিও সে নির্ভয়ে সকলকে ফোন নম্বর দিয়েছে। কেউ হামবুর্গে এসে তার খোঁজ খবর করেনি। ছুটির আলাপ ছুটির সঙ্গে সঙ্গে শেষ।
ইয়েন্স অবাক - “তাহলে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন কেন?”
পেটার বললে, “এসেছিলাম কৌতূহল মেটাতে। মাকারস্কার বিচে বসে যখন বললেন, আপনি প্রচুর ঘোরাঘুরি করেন, এমনকি মিউনিক থেকে সাতশ কিলোমিটার দূরে হামবুর্গ আসেন, এলিসে প্যালেসে ওঠেন, ভেবেছি আপনি আমারই মতন অলীক জগতের স্থায়ী বাসিন্দা। আপনিও নকল ব্যাংকার। রিভলভিং দরোজা থেকে আপনাকে প্রথম দেখে ভাবলাম ফিরে যাই, তারপর মনে হল হোটেল লবিতে তো যে কেউ বসে থাকতে পারে। আরেকটু দেখে যাই”।
ইয়েন্স বলেছে, “আসুন না আপনাকে আমার হোটেলের ঘরটা দেখিয়ে আনি?”
“তার আর দরকার হবে না। আমি বুঝেছি আপনি মিথ্যে কথা বলছেন না (জি জিনড কাইন আনগেবার)।”
ইয়েন্সের ঘোর কাটেনি।
“আচ্ছা, আপনি তো ব্যাঙ্কিঙের, শেয়ার বাজারের, ফরেন এক্সচেঞ্জের ব্যাপারে এত ওয়াকিবহাল। অথচ কাজ করেন ক্যাশ কাউন্টারে?”
“দেখুন, কাজের পরে যতটুকু সময় পাই, পড়াশোনা করি। ব্যাঙ্কে কিছু ফ্রি ম্যাগাজিন আসে, সিটি লাইব্রেরিতে যাই, টেলিভিশনে ফাইনান্সিয়াল নিউজ দেখি। নিজে যে কাজ করার সুযোগ পাইনি, সেটা কী—তা বোঝার চেষ্টা করি, ক্রোয়েশিয়ার বিচে বসে কারলোভাচকা বিয়ারের আড্ডায় সেই সব তত্ত্ব বিতরণ করি। সেখানে সবাই মজা করতে গেছে, আমার বিদ্যেবুদ্ধি যাচাই করবে কে? সবাই যে খুব মন দিয়ে শোনে, তাও মনে হয় না। কেউ কেউ শোনে, আমার জ্ঞান-বুদ্ধির তারিফ করে। আমিও আনন্দ পাই, তবে একটা শঙ্কা থেকে যায়। আমার ব্যাঙ্কের কেউ সেখানে হাজির থাকলে, চিনে ফেললে, ধরা পড়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়, তবে ভাগ্যবলে সেটা হয়নি। একই জায়গায় বার বার যাই না”।
ইয়েন্স নিশ্চুপ।
পেটার বলে চলে, “আলটোনায় ছোটো দু-ঘরের অ্যাপার্টমেন্টে থাকি, ছেলেমেয়ে নেই। যা হতে পারিনি জীবনে—সেই ভূমিকায় আশ মিটিয়ে অভিনয় করি বছরে দুটি সপ্তাহ। কারো তো কোনো ক্ষতি হচ্ছে না”। ডাগমার খুব আনন্দ পায়। জানেন, দুটো মাত্র দামি ককটেল ড্রেস কিনে দিতে পেরেছি, হামবুর্গ আলটোনায় পরার সুযোগ নেই। মাকারাস্কায় সে খুব খুশি হয়ে ক-দিন কাটায়। আসবেন আমাদের অ্যাপার্টমেন্টে? “
ইয়েন্স বললে, “কাল চলে যাচ্ছি যে, দেখি পরের বার যদি পারি। এখন চলুন ডিনারে যাই”
আমাদের টেবিলের গভীর নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল পাবের মালিকের ঘোষণায়—বন্ধুগণ আপনাদের সুখের ঘণ্টা এবং সময় অতিক্রান্ত হয়েছে। এবার বিয়ারের দাম তিন মার্ক।
.