"ও কাকিমা, ওরা আমায় কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না, তুমি একটু বলে দাও না।"
ছেনুর মা ভেতরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন কথা বলছিলেন, হঠাৎ পিছন থেকে এরকম ডাক শুনে অবাক হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখেন কাঁদো কাঁদো মুখে হাফপ্যান্ট পরা একটা বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে, কোঁকড়া কোঁকড়া চুল, ছেনুর মতো একই বয়স বা এক দু বছর বড় হবে হয়তো।
ছেনুর মা, তাকে ডেকে বললেন, কি হয়েছে? তোমার নাম কি?
সে আরো কাঁদো কাঁদো মুখে জানাল, তার নাম চন্দন।
তার কথা থেকে জানা গেল প্যান্ডেলের সামনে হুটোপাটি করে খেলাধুলোর সময় ছেনু নাকি তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে, এবং সে টাল সামলাতে না পেরে পড়বি তো পড় প্যান্ডেলের ওপর গিয়ে পড়েছে। এবং সেই পতনের ফলে প্যান্ডেলের এক জায়গার কাগজের সাজসজ্জা ফর ফর করে ছিঁড়ে যায়। প্যান্ডেলের লোকজন সেই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চেপে ধরে বকাবকি করে, কিন্তু চন্দন পেছনে মুখ ঘুরিয়ে দেখে আসল অপরাধী পগারপার। ফলে এক তরফা সব বকুনি তাকেই শুনতে হয় আর প্যান্ডেলের ডেকোরেশন নষ্ট করার জন্য প্যান্ডেলের কাছে খেলাও বারণ হয়ে যায়। আজ যেই সে ওখানে খেলতে গেছিল, ওমনি ডেকরেটরের লোকজন হাতুড়ি নিয়ে তাড়া করেছে। যেহেতু ছেনুদের বাড়ির লাগোয়া প্যান্ডেল, এবং ধাক্কাটা ছেনুই দিয়েছে, তাই তার দৃঢ় বিশ্বাস ছেনুর মাকে বললে নিশ্চয়ই এর একটা বিহিত হবে।
ব্যাপারটা মিথ্যে নয়। পুজোর বেশ অনেকদিন আগে থাকতেই, প্রায় বিশ্বকর্মা পুজোর পর পরই ছেনুদের বাড়ির সামনে প্যান্ডেলের বাঁশ পড়া শুরু হয়ে যায়। আর সেই বাঁশ যেদিন থেকে পড়বে সেদিন থেকেই শুরু লাফঝাঁপ। এটাই ওর কাছে পুজোর শুরু হয়ে যাওয়া। এবার সেই বাঁশ গুলোকে ঘিরে শুরু হয়ে যায় দৌড় ঝাঁপ, কুমির ডাঙা, চোর পুলিশ। আর বাঁশ গুলো জুড়ে জুড়ে যখন প্যান্ডেলের কাঠামো তৈরি হয়ে যায়, তখন সেই বাঁশের কেল্লা ওর কাছে এক অদ্ভুত জাদুমহল হয়ে দাঁড়ায়, যেন মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের দ্বিতীয় দুর্গ। ওই বাঁশের কেল্লা ঘিরেই ওর যত আনন্দ।
ওদের এলাকায় দুটো বড় পুজো হয়, একটা বৌবাজারের কাছে আটচল্লিশের পল্লী আর একটা শেয়ালদার জাতীয় যুব সংঘ। এছাড়া আরো দূরে লেবুতলা পার্ক, কলেজ স্কোয়ার এগুলো তো ছিলই। কাছে হায়াৎ খাঁ লেন আর নূর মহম্মদ লেনেও একটা করে পুজো হতো। এই জাতীয় যুব সংঘের যে প্যান্ডেল, ওটাই ছেনুদের বাড়ির একদম গা ঘেঁষে, প্রায় পুরো রাস্তাটা জুড়ে তৈরি হত। লোকজনের যাওয়া আসা সব প্যান্ডেলের মাঝখান দিয়ে। এমনিতেই ওই রাস্তায় সকাল আর সন্ধ্যের দিকে প্রচুর লোকের যাতায়াত আর প্যান্ডেলের জন্য রাস্তাটা যখন এইটুকু সরু হয়ে যেত তখন জ্যামজট বেঁধে এক বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড! আমাদের মহারাজ যখন এত্তটুকু পুঁচকে ছিলেন, তিনি পুজোর ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারতেন না, কিন্তু মায়ের কোলে চেপে বারান্দা থেকে নিচের ঝলমলে লাইটিং আর থিকথিকে ভিড়ের দিকে তাকিয়ে কি ঘটছে বুঝতে না পেরে আতঙ্কিত হয়ে পড়তেন। একটুকুনি বড় হতে, ধীরে ধীরে পুজোর হাওয়া ওনার গায়েও এসে লাগল। কয়েকদিনের জন্য যখন পাড়াটার পুরো ভোলবদল হয়ে যেত তখন মহারাজের আনন্দ দেখে কে! সেরকমই এমন একদিন, যখন পুজো এসে এসে গেছে প্রায়, পাড়ার বাচ্চারা সবাই মিলে দুর্গ ওরফে প্যান্ডেল জুড়ে চোর-পুলিশ খেলছে, সেখানেই ছেনু দেখতে পেল চন্দনকে। আগে হয়তো দু একবার ওদের সাথে খেলেছে, কিন্তু তেমন আলাপ নেই। আজকে বেশি করে চোখে পড়ার কারণ, সে একদম নতুন একটা সবুজ রঙের জামা পরে এসেছে, আর অন্যদের তুলনায় একটু গম্ভীর গম্ভীর হাবভাব। খেলায় ঘুরে ফিরে সবাই ধরা পড়ছে, কিন্তু এই চন্দন এমন এমন খাঁজে টুক করে লুকিয়ে পড়ছে, কিছুতেই ধরা পড়ছে না। যেই ছেনুর পালা এসেছে ও মোটামুটি ঠিক করেই ফেলেছে, যাই হোক সবার আগে একেই পাকড়াতে হবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, সবাইকে ছেড়ে চন্দনকেই তাড়া করেছে ছেনু, বুধন সামনে পড়ে গিয়েও বেঁচে যাওয়ায় রীতিমতো অবাক। আর চন্দনও কিছুতেই ধরা দিতে রাজি না, প্যান্ডেলের খাঁজ দিয়ে, দোকানের পাশ দিয়ে, এক ফলওলার ঝুড়িকে কাটিয়ে সমানে পিছলে বেরিয়ে যাচ্ছে। কালই প্যান্ডেলের গায়ে কাগজ কেটে কেটে কিসব সাজসজ্জা লাগানোর কাজ চলছিল। এখনো আঠার কাঁচা গন্ধ নাকে এসে লাগছে। কাছাকাছি আরো কিছু বাঁশ, দড়িদড়া, কাপড়, পেরেকের কৌটো এসব রাখা ছিল। এবার দৌড়াতে দৌড়াতে পেরেকের কৌটোটাকে এড়াতে ছেনু যেই না পা টা আরো লম্বা করে ফেলেছে, সেটা পড়ল গিয়ে একটা বাঁশের ওপর, ব্যস আর কোনো কষ্ট করতে হলো না, বাঁশটাই পিছলে গিয়ে ছেনুকে দিব্যি এগিয়ে দিলো আরো, এবার চন্দন হাতের নাগালে, কিন্তু ততক্ষণে ওর পা হড়কিয়ে প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার মতো ব্যাপার, তাই যে হাত খপাত করে গিয়ে ধরতে যাচ্ছিল চন্দনের জামা, টাল সামলাতে না পেরে সেটাই হয়ে গেল এক রামধাক্কা। সেই ধাক্কার চোটে চন্দন প্যান্ডেলের পাশ ঘেঁষে পালানোর বদলে সোজা প্যান্ডেলের সাথে ধাক্কা খেল, আর টাল সামলাতে গিয়ে সেই কাগজের সাজ নিচ অব্দি ফরফর করে ছিঁড়ে একশা। মুহূর্তের মধ্যে, যতজন বাচ্ছা সেখানে খেলছিল সবাই হাওয়া, ছেনু সমেত। আর প্যান্ডেলের লোকজন বেরিয়ে এসে কালপ্রিট কে হাতে নাতে ধরে ফেলে এমন বকুনি, চন্দনের কাঁচুমাচু মুখ শুকিয়ে আমসি। সাথে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হলো, তাকে যেন সপ্তমীর আগে আর প্যান্ডেলের ধারে কাছেও দেখতে না পাওয়া যায়, দেখলেই গাঁট্টা। সেই ব্যানিত ও দুঃখিত অবস্থাতেও চন্দন খেয়াল করেছিল, ছেনু কোন বাড়িতে পালালো।
এই জাতীয় যুব সংঘের পুজোয় তেতলার পিসিমার ছোটোছেলে বেশ ভালো রকম জড়িয়ে ছিল। বাকিদের সাথে মিলে পুজোর জন্য সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে আর আশপাশের দোকান থেকে চাঁদা তুলতো। তাই চন্দনের সেই কান্নার কোনোমতে বিহিত করা গেছিল লোকজনকে বলেকয়ে। প্যান্ডেলের আর যেন কোনো ক্ষতিটতি না হয় এই কড়ারে ওকে আবার খেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে নালিশ করতে এসেছে দেখে মহারাজ বেজায় চটে গেছিলেন কিন্তু তার পর থেকে ধীরে ধীরে চন্দনের সাথে ওনার মোটামুটি ভাব হয়ে যায়। পুজোর আর যে ক'টা দিন বাকি ছিল, বেশ ভালোই খেলাধুলো জমেছিল।
পরের বছর পুজোর আগে দেখা গেল, ছেনু এখন ঘুড়ি ওড়ানোও অনেকটা শিখে ফেলেছে, তবে ঘুড়ি ওড়ানোর থেকেও কাটা ঘুড়ি খুঁজে আনার দিকেই ওর বেশি আগ্রহ। বিশ্বকর্মা পুজোর আগে থেকে শুরু হয়ে প্রায় পুজোর আগে অব্দি শেয়ালদা জুড়ে ঘুড়ি ওড়ানো চলে। চন্দন খুব ভালো ঘুড়ি ওড়াতে পারত, সেটা জেনে মহারাজের খুব আনন্দ। দুজন মিলে ছাদে উঠে ঘুড়ি ওড়ানো চলত। আর কোনো ঘুড়ি কেটে আশেপাশের ছাদে এসে পড়লেই হলো, ছেনু ওমনি ছুট লাগবে সেটা আনতে। এবার পুজোর সময় যেটা হতো, অনেক কাটা ঘুড়ি এসে প্যান্ডেলের ওপর আটকে যেত। যেহেতু একদম ওদের বাড়ির গা ঘেঁষেই প্যান্ডেলটা, তাই প্রথমে ছোট অবস্থায় ওদের বারান্দার সোজাসুজি চলে আসত, আর তারপর আরও বাঁশ টাশ জুড়ে যখন পুরো দৈর্ঘ্যে পৌঁছতো তখন একেবারে ওদের ছাদের সমান সমান হয়ে যেত। একদিন একটা ঘুড়ি এসে ঠিক বাঁশের খাঁজে আটকে ছিল। হাত বাড়ালে পাওয়া যাচ্ছে না, আরেকটু দূরে। প্রথমটা ও সাহস করেনি, বুক দুরদুর করছিল, তারপর যা থাকে কপালে ভেবে ছাদের পাঁচিল টপকে আস্তে আস্তে বাঁশ বেয়ে গিয়ে আটকে থাকা ঘুড়িটা টপ করে নিয়ে চলে এল। তারপর চারপাশ ঘাড় ঘুরিয়ে দেকে নিলো, যাক কেউ দেখতে পায় নি! এমনি করে ছাদ থেকে ও পাঁচিল টপকে প্যান্ডেলের ওপর চড়ে গিয়ে ঘুড়ি পেড়ে নিয়ে চলে আসত মাঝে মধ্যে। ভেবে দেখলে সত্যিই খুব বিপদজনক ছিল কিন্তু সে কথা তাকে বোঝায় কে। কিন্তু চিরদিন কি আর সমান যায়, ঠিক একদিন কে একটা নিচ থেকে দেখে ফেলেছে ছেনুকে ছাদ থেকে টপকে প্যান্ডেলের ওপর উঠতে আর সোজা বলে দিয়েছে গিয়ে ছোড়দাকে। আর কোনো ছোট ছেলেও ওদের বাড়িতে নেই যে দেখার ভুল হয়েছে বলে চালানো যাবে। ব্যস আর যায় কোথায়, ছোড়দা তো রেগে আগুন তেলে বেগুন! সাথে সাথে ছেনুকে পাকড়ে ধরে গাঁট্টা কান মলা বকুনি! সেদিন বোধহয় কলেজে কিছু একটা ঝামেলাও হয়েছিল, সেই রাগটাও এসে পড়ল ছেনুর ওপর। তাই সেদিনের ডোজটা ছেনুর জন্য একটু বেশিই হয়ে গেল। ছোড়দি পাশ থেকে আবার ফুট কাটছে, ও তো হনুমান হয়েই গেছে, এবার আমার ফিতে দিয়ে ওকে একটা ল্যাজ বানিয়ে দে তাহলেই বেশ ভালো মানাবে। এর ফলে ছেনুর ছাদে ওঠা বন্ধ হয়ে গেল ক'দিনের জন্য।
ছাদে যাওয়া নয় বারণ হলো, কিন্তু বাড়ির সামনেই যে বাঁশের কেল্লা তাতে তো ততক্ষণে কাপড় চড়ে গেছে, সাজগোজ প্রায় শেষের দিকে। এবার ঠাকুর আসার অপেক্ষা। ওই পুজোর ঠাকুর বানাতেন কুমোরটুলির নামকরা শিল্পী গোরাচাঁদ পাল। খুব সুন্দর ঠাকুর হতো, দেখলেই মন ভরে যায় যাকে বলে। জাতীয় যুব সংঘ সত্যিই নামকরা পুজো ছিল তখনকার। পিসীমার ছোট ছেলে বাবুনদা তো কত দৌড়াদৌড়ি করত পুজো নিয়ে। বড়দাও কিছুটা জড়িয়ে ছিল পুজোর সাথে। বড়দার চেনা এক ফটোগ্রাফার ছিলেন তারাপদ ব্যানার্জি, ষষ্ঠীর দিন চলে আসতেন ব্যাগ পত্তর নিয়ে। তার থেকে ক্যামেরা বের করে নানারকম লেন্স টেন্স লাগিয়ে ঠাকুরের ছবি তোলা হতো। সাথে ছিল আবার লাইটের ব্যবস্থা, সেসব আরেকজনকে হাতে করে ধরে থাকতে হতো। ছেনু প্যান্ডেলের কোণে দাঁড়িয়ে সেই ভদ্রলোকের কাণ্ড কারখানা অবাক হয়ে দেখত, আর লাইট হাতে দাঁড়িয়ে থাকত বড়দা, বড়দা না ধরলে, অন্যের ধরা লাইট ওনার পছন্দ হতো না। সেই ছবি আবার প্রত্যেক বছর আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় সপ্তমীর দিন ফলাও করে ছাপা হতো, সেই দেখে সবার কি আনন্দ! পুজোকে ঘিরে এতসব হইচই দেখে মহারাজও মনস্থির করে ফেললেন, নাঃ বাবুন দার মতো ব্যাজ তাঁরও একখানা চাই, পাড়ার পুজোয় তাঁরও একটা অবদান রাখা দরকার, পুজোর সময় পাড়া জুড়ে এই ব্যাজওলাদেরই ভারি খাতির। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, সোওজা তেতলায় চলে গিয়ে বাবুনদাকে ধরলেন, আমাকেও একটা ব্যাজ দাও না, তোমার মতো জমায় লাগিয়ে ঘুরব। বাবুনদা হাসতে হাসতে অস্থির, এটা তো স্পেশাল ভলান্টিয়ার ব্যাজ, তুই কি পুজোয় ভলান্টিয়ার হবি? ছেনু বলে হ্যাঁ, আমিও তোমার মতো ভলান্টিয়ার হব, পুজোর প্যান্ডেলে ঘুরব। বাবুনদা বলে এইটুকু বাচ্চা ভলান্টিয়ার কেউ কখনো দেখেছে?
-আমাকে একবার ব্যাজ দিয়েই দেখো না, আমি ঠিক পারব।
পিসিমা পাশ থেকে শুনে বললেন, আহা ও হতে চাইছে হোক না, ভালো তো, পুজোতে সাহায্য করতে পারবে।
শেষমেষ পিসীমার মধ্যস্থতায় ও মায়ের অনুমতিক্রমে ঠিক হলো মহারাজও পাড়ার পুজোর ভলান্টিয়ার হবেন। কিন্তু ব্যাজ দেওয়ার সময় দেখা গেল, সেই ব্যাজ মহারাজকে দেওয়া হল না, ওনার জন্য ছোট কাগজের ব্যাজ, তাতে সুন্দর করে লেখা - স্বেচ্ছাসেবক। সেটাই সেফটি পিন দিয়ে জামায় আটকে নিতে হবে। বড় ব্যাজের দাবি জানালে বাবুনদা বললো, তুমি তো এখন জুনিয়র ভলান্টিয়ার, তাই ছোট ব্যাজ, পরে বড় হয়ে গেলে বড় ব্যাজ পাবে। মহারাজ চিন্তায় পড়ে গেলেন, এই পুজোর মধ্যে কি তিনি পট করে বড় হতে পারবেন? ঠাকুরকে বলে দেখলে হয় না?
তিনি ভলান্টিয়ার হয়েছেন, এত বড় খবর কি আর মহারাজ চেপে থাকতে পারেন, চন্দনকেও বলেছেন খুব বুক ফুলিয়ে। আর সেই শুনে তারও জোর আবদার, সেও ভলান্টিয়ার হবে। আবার বাবুনদাকে ধরে চন্দনকেও জুনিয়র ভলান্টিয়ার উপাধিতে ভূষিত করা গেল।
পুজোর ভিড় সামলাতে লাইন দুটো ভাগে ভাগ করা থাকত, একটা মেয়েদের আর একটা ছেলেদের। এমন ঠাসাঠাসি ভিড় হত যে ভিড়ের ঠ্যালায় কেউ কেউ ছেনুদের বাড়িতে অব্দি ঢুকে পড়ত। মোট তিনবার দড়ি ধরা হতো। এখন অনেক পুজোয় যেমন অল্প কিছু লোকের ভিড়কে দড়ি ধরে ধরে লম্বা করা হয়, সেই রকম না, ওই পুজোয় দড়ি না ধরলে বড়দা বলতো, নাকি প্যান্ডেলটাই ভেঙে বেরিয়ে যাবে এমন। যাই হোক, ছেনু আর চন্দনের দায়িত্ব পড়ল মেয়েদের লাইনে দড়ি ধরার, কারণ সেটাই তুলনামূলক সুশৃঙ্খল। তবু তার মধ্যেই কারও ছাতা হারিয়ে যাচ্ছে, কারও পায়ে কেউ পা তুলে দিচ্ছে, কারও চটি ছিড়ে যাচ্ছে, কারুর আবার ব্যাগের ফিতে ছিঁড়ে ফর্দাফাঁই! সব মিলিয়ে সে এক বিতিকিচ্ছিরি কাণ্ড! বাবুনদা যখন বলেছিল, দড়ি ধরতে পারবি তো? তখন তো ছেনু জোরসে ঘাড় নেড়ে দিয়েছে, এখন বুঝতে পারছে লাইন ম্যানেজ করা কি জিনিস! চন্দন না থাকলে ভারি মুশকিল হতো, দু'জন আছে বলে কোনোমতে প্রাণপনে ম্যানেজ করছে। এরকম লাইন ধরা ছাড়া চলছে, প্রথম আর তৃতীয় দড়ি থেকে নির্দেশ আসছে, কখন দড়ি ফেলতে হবে আর কখন লাইন ছাড়তে হবে। মোটামুটি ঠিকঠাক সব চলছিল, ওরা শক্ত করে ধরে রেখেছে দড়ি, হঠাৎ এক বিশালবপু ভদ্রমহিলা এগিয়ে এসে জোর গলায় বলে উঠলেন, আমার বর ওই লাইন দিয়ে প্যান্ডেলে ঢুকে গেল, আমাকেও যেতে দিতে হবে। বলে ছেনুদের মতামতের আর তোয়াক্কা না করে এক ধাক্কায় ওদেরকে দড়িশুদ্ধু উড়িয়ে দিয়ে বীর বিক্রমে এগিয়ে গেলেন আর সেই ছত্রভঙ্গ অবস্থার সুযোগে লাইনের সবাই বাঁধ ভেঙে সামনের দিকে ছুট লাগিয়েছে। সেই জনস্রোতকে আর কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না। আর সেদিকে তাকিয়ে হাঁ করে অসহায় অবস্থায় দু'পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুই পুঁচকে ভলান্টিয়ার।
পরদিন সকালে দেখা গেল বাড়ির নিচে চটি জুতোর পাহাড় জমে গেছে। লাল, সবুজ, হলুদ, নীল নানান রঙের চটি, কিছু ছেঁড়া ফাটা, কিছু নতুন। একটা খোঁচাখোঁচা দাড়িওলা লোক এসে মহানন্দে সেইসব পড়ে থাকা চটি কুড়িয়ে একটা ময়লা মতো বস্তায় পুরছে। দাদার থেকে জানা গেল হাতব্যাগ, ছাতা, চশমাও পড়েছিল কিছু কিছু, সেসব নাকি কুড়িয়ে পুজোর ক্যাশিয়ার নেড়োদার (পক্ষীরাজ পর্ব পশ্য) কাছে জমা করা হয়েছে। পুজোর মধ্যে এসে মালিকরা যদি খোঁজ করে ভালো নইলে ক্লাবের লোকেদের মধ্যেই বিলি বন্দোবস্ত হয়ে যাবে পুজোর পর। অষ্টমীর দিন সকাল সকাল চান করে নিয়ে মহারাজ পিসিমার দেওয়া একটা হলুদ রঙের জামা আর খয়েরি হাফপ্যান্ট পরে চুলটুল আঁচড়ে তৈরি। সবাই আজ মায়ের কড়া নজরে রয়েছে, টপ করে যেন কেউ কিছু খেয়ে টেয়ে না ফেলে। ছোড়দার আবার পুজোয় না খেয়ে অঞ্জলি দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ আছে, তার বক্তব্য এসব যত ভুলভাল নিয়ম, নটা-দশটা অব্দি খালি পেটে থাকলে কি কি অসুখ বাঁধতে পারে, ও সেসবও বোঝাতে যাচ্ছিল ছেনুকে। ছোড়দার এইসব কথায় মায়ের আবার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু মহারাজ এখন পুজোর ভলান্টিয়ার বলে কথা, তাঁর কি এসব খুচরো অভিযোগে কান দিলে এখন চলবে? অগত্যা ছোড়দার বাড়ানো বিস্কুটের টিনকে উপেক্ষা করেই তিনি প্যান্ডেলের উদ্দেশে রওনা দিলেন। এখন তো আর ফাঁস করে দিতে পারেন না যে সাতসকালেই তিনি ও ছোদ্দি দুটো করে বিস্কুট ইতিমধ্যে পেটে পুরে ফেলেছেন। ছোদ্দি পইপই করে বারণ করে দিয়েছে যে। তা যাই হোক, ছেনু ওদিন এসে দেখে যে চন্দন আগেই প্যান্ডেলে হাজির, ও ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে একটা ঝুড়ি থেকে কুচো ফুল সবার হাতে হাতে দিয়ে দিচ্ছে। দেখে ছেনুর মনে পড়ল, এমা! আজ তো কাগজের ব্যাজটা জামায় আঁটতেই ভুলে গেছে। ও আবার ওপরে যাচ্ছিল দৌড়ে গিয়ে ব্যাজটা জামায় লাগিয়ে আসতে, বাবুনদা আটকাল, ব্যাজ লাগবে না, সবাই জানে তুই ভলান্টিয়ার, আমি ঘোষণা করে দিতে বলব, এখন সবাই অঞ্জলি দিতে আসছে, হাতে হাতে ফুল দিয়ে দে। বেশ ভিড় হয়েছে অঞ্জলিতেও, এখানে তো সব পাড়ার লোকেরাই এসেছে, তবুও একবারে তো সবার হবে না, পরের ব্যাচে যারা অঞ্জলি দেবে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মাইকে ঘোষণাও চলছে যাঁরা যাঁরা অঞ্জলি দিতে চান, শিগগিরই আসুন এই মর্মে। বেনা একদম ফার্স্ট ব্যাচে এসে অঞ্জলি দিয়ে গেল। তারপর মা, ছোদ্দি আর বড়দা। ছোড়দা তো অঞ্জলি দেবে না। তারপর দেখা গেল পকাই, গোপু, নেড়োকাকা, পকাইয়ের মা সবাই এসে হাজির অঞ্জলি দিতে। নেড়োকাকা তো ছেনুকে দেখেই "কি রে", বলে মাথায় পটাং করে আলতো গাঁট্টা বসিয়ে দিয়েছে অভ্যাসবশত। সবাইকে ফুল দেওয়ার সময় গোপু আবার ওকে যথেষ্ট ফুল দেওয়া হয়নি, পকাই বেশি পেয়েছে, এই অভিযোগে সোজা ধাক্কা মেরে দিয়েছে ফুলের ঝুড়িতে, ফলে আর কি, ফুল টুল চারদিকে ছড়িয়ে একশা, ভাগ্যিস বেশি ফুল আর বাকি ছিল না ঝুড়িতে! পিসিমা, কাকিমা, কাকা, সবাই একে একে অঞ্জলি দিয়ে নিল, ছেনু আর চন্দনের আবার স্পেশাল সিট, ওরা ঠাকুরের একেবারে কাছে দাঁড়িয়েই অঞ্জলি দিচ্ছে। বাবুনদার বন্ধু পল্টুদা আর বুলিদা সেসব সামলাচ্ছে। সব মোটামুটি প্রায় ঠিকঠাক মিটে টিটে গেছে, এই নিয়ে চতুর্থ বার অঞ্জলির শেষ ব্যাচ চলছে, কারণ প্রত্যেকবারই আরও লোক এসে কাকুতি মিনতি করে ঢুকে পড়ছে অঞ্জলি দিতে। এমন সময় প্যান্ডেলের বাইরে থেকে কিসের একটা হল্লা কানে এল। ছেনু প্যান্ডেলের বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখে, মোটা চশমা পরা লম্বা চেহারার একটা লোক খালি গায়ে স্টেজের ওপর উঠে পৈতে তুলে কিসব বলছে। কথা গুলো কেমন জড়িয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে, তবু শুনে তো পুজোর মন্ত্রের মতোই লাগল ছেনুর কানে। পৈতেটা উঁচু করে ধরে রেখেছে, কিন্তু নিজেই টাল খেয়ে খেয়ে যাচ্ছে বারবার। পাশ দাঁড়ানো কান্তিজেঠু কান্ড দেখে অবাক, আরে এতো সমর, দেখো দেখি সকাল সকাল কি বিপত্তি। ছেনু বাবুনদাকে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে গো? বাবুনদা বলে, আরে স্বপনকুমার আছে না, কিসব গোয়েন্দা বই লেখে, যার গোয়েন্দা দীপক কুমার, দু হাতে বন্দুক, আরেক হাতে টর্চ, কালনাগিনীর নিশ্বাস, ড্রাগনের প্রতিশোধ আরো কিসব আছে, এটা সেই লোকটা। আজ সকাল সকাল শুরু হয়ে গেছে।
- এখানে থাকে নাকি?
- কি জানি কোথায় বাড়ি, এই তো এখানে দে'জ ক্যাফেতে বসে টানা লিখে যায়।
ততক্ষণে ভোম্বলদা এসে কোনোক্রমে বেসামাল স্বপনকুমার ওরফে সমরেন্দ্রনাথ পাণ্ডেকে ধরেটরে স্টেজ থেকে নামানোর ব্যবস্থা করে। নামতেও নামতেও সিঁড়ির ধাপ ফস্কে যাচ্ছে, হুঙ্কার ছাড়লেন, আমি সব মন্ত্র জানি, যে ভুল মন্ত্র পড়বে, পিছনে ড্রাগনকে লেলিয়ে দেব!
এর বহুদিন পর একবার ধানবাদ গিয়ে মহারাজ ওনার বহুমুখী প্রতিভা সম্মন্ধে জানতে পেরেছিলেন। মামার অফিসের এক বন্ধুর স্ত্রীর গলায় স্বপনকুমারের ছবিওলা লকেট ঝুলতে দেখে তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, আপনি স্বপনকুমারের গল্প পড়েন নাকি, গলায় তো ওঁর ছবি দেখছি? সেই ভদ্রমহিলা আকাশ থেকে পড়ে বললেন, স্বপনকুমার আবার কে, ইনি তো আমাদের গুরুদেব, শ্রী ভৃগু! বলেই মাথায় হাত ঠেকিয়ে লম্বা একটা প্রণাম ঠুকলেন। এর পর শ্রী ভৃগুর আসল পরিচয় জেনে তাঁর কি অবস্থা হয়েছিল, সেসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে আমাদের আর ভেবে লাভ নেই।
সন্ধেবেলা ঠাকুর দেখার পাশাপাশি আরেকটা কাজ ছিল দুর্গা ঠাকুরের ছবি বিক্রি। প্রতি কপি তিরিশ পয়সা করে বিক্রি হতো। এক সেই তারাপদ ব্যানার্জি আর পুজো কমিটির ভাড়া করা ফটোগ্রাফার ছাড়া আর কাউকেই ঠাকুরের ছবি তুলতে দেওয়া হতো না। দর্শকদের কেউ ছোট ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে গেলেই দায়িত্বে থাকা ভলান্টিয়াররা রে রে করে উঠত। তখন তো আর এখনকার মতো পটাপট করে মোবাইলে ছবি তুলতে পারার সুযোগ ছিল না, অনেকেই ঠাকুরের ছবি কিনে ঘরে সাজিয়ে রাখত। প্যান্ডেলের মাঝখানে ছিল চন্নমেত্যর কাউন্টার। সেটা পেয়ে অনেকেই আবার পাশে রাখা থালায় প্রণামি দিয়ে যেত। আগের দিনের দড়ি ধরার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে চন্দন আর ছেনুর এবার ডিউটি পড়েছে চন্নমেত্যর টেবিলে। একটা বড়ো পেতলের গামলায় চন্নমেত্য রাখা থাকত, তার থেকে কোশাকুশির কুশি দিয়ে তুলে বাড়িয়ে থাকা অগুনতি হাতে বিলি করা। চন্দনের হাতে প্রণামি সামলানোর ভার দিয়ে ছেনু চন্নমেত্য বিলি শুরু করল। প্রণামির থালা ভরে গেলে সেটা আবার ক্যাশিয়ার নেড়োকাকার কাছে জমা করে আসতে হতো, নইলে একবার সেটা উল্টে মাটিতে পড়ে গেলে আরেক কাণ্ড হবে।
তখনো আজকের মতো শারদ সম্মান, বিচারক, পুজো নিয়ে সরকারি বেসরকারি পুরস্কারে ছড়াছড়ি চালু হয়নি। কিন্তু তাতে কী! অষ্টমীর দিন সন্ধ্যেবেলা, ঠাকুর দেখার ভিড় যখন তুঙ্গে, তখন ক্লাবের একজন মেম্বার মঞ্চে উঠে মাইকে ঘোষণা শুরু করত, " দর্শনার্থীদের জন্য আনন্দসংবাদ, এইমাত্র আমাদের কাছে খবর এসেছে, আমাদের জাতীয় যুব সংঘের দুর্গা প্রতিমা এবার সমগ্র কলকাতার মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে! আপনারা একে একে লাইন করে এসে প্রতিমা দর্শন করুন ও অন্যদেরও দেখার সুযোগ করে দিন।" এসব খবর কে দিত, কোথা থেকে আসত, সেসব কথা কেউ জানত না। তবে শুনলে ছেনুর সত্যি সত্যি খুব গর্ব হতো। একবছর কলেজ স্কোয়ারের পুজো নাকি তেমন জমেনি, আর জাতীয় যুব সংঘের ঠাকুর খুব ভালো হয়েছিল, ভিড়ও হয়েছিল তেমন, সেবার কি জানি কোত্থেকে খবর পেয়ে ঘোষণা করে দেওয়া হল, সমগ্র কলকাতার মধ্যে আমাদের প্রতিমা প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সেই শুনে আবার পাশের হায়াৎ খাঁ লেনের পুজো কমিটি ঘোষণা করে দিল, "খুবই গর্বের ব্যাপার, এবার প্রথমবারের জন্য আমাদের প্রতিমা সমগ্র কলকাতার মধ্যে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে!"
পাড়ার ছোটদের তীক্ষ্ণ নজর থাকত এনাউন্সমেন্টের মাইকটার দিকে দুপুরের দিকে মাইকটা একটু খালি পেলেই হলো যে যা খুশি একটা কিছু ঘোষণা শুরু করে দেবে ছনেন্দ্রনাথ যেমন মাইকটি হাতে পেলেই বাচিক শিল্পীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে যেতেন কুমোরপাড়ার গরুর গাড়ি বার বার শুনতে শুনতে পারার লোকেদের মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
বেশিরভাগ বছরই সন্ধিপুজো শুরু হতো বেশ রাত্তিরে। ১০৮টা পদ্ম এনে, সাথে আরো যা যা উপকরণ, সবকিছু দিয়ে খুব নিয়ম মেনে ঘটা করে পূজা করা হতো, তাই সবার সন্ধিপুজো দেখার খুব আগ্রহ ছিল পড়ার কাকিমা, পিসিমাদের। কিন্তু অত রাতে পাড়ার মহিলারা প্যান্ডেলে বসে থাকবে? তাই ছেনুদের বারান্দায় পর পর চেয়ার পাতা হতো সেখানেই পাড়ার মহিলারা এসে পর পর বসে পড়তেন। পিসেমশাই বারান্দারর সামনের প্যান্ডেলের কাপড় কিছুটা ফাঁক মতো করে দিতেন, সেখান দিয়েই দিব্যি সন্ধিপুজো দেখতে পাওয়া যেত। মা, পিসিমা আর পাড়ার অন্যদের গল্পগুজব শুনতে শুনতে কখন যে মহারাজের চোখ জুড়িয়ে এসে তিনি ঘুমের দেশে পাড়ি দিতেন, পরে সেসব আর কিচ্ছুটি মনে থাকত না। এই করে কিছুতেই আর তাঁর সন্ধিপুজো শেষ অবধি দেখা হয়ে উঠত না।
নবমীর দিন দারুণ ভোগের বন্দোবস্ত ছিল, যেসব বাড়ি থেকে চাঁদা দিয়েছে, খ্যাপাদা, ভোম্বলদা, বাবলুদারা সব বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোগ দিয়ে আসত। সেই ভোগে ছিল ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি আর লাবড়া, সঙ্গে চাটনি। খিচুড়িটা আসলেই মহারাজ হাত ধুয়ে রেডি। এমন অদ্ভুত রকম একটা স্বাদ হতো, বলে বোঝানো মুশকিল। অবশ্য বাড়ি বাড়ি দেওয়ার পাশাপাশি, প্যান্ডেলের বাইরে একটা টেবিলের ওপর দুটো বড় বড় ডেকচি রেখে সেখান থেকে পথচলতি লোকেদেরও শালপাতার ছোট ছোট বাটি করে ভোগ দেওয়া হত। ওদিন রাত্রে স্টেজে দারুন সব ফাংশানের ব্যবস্থা ছিল। অন্যদিনও ছোটখাটো পোগ্রাম হলেও নবমীর দিন আলাদাই জৌলুস। সেদিন বড় করে নাচ গানের আসর বসত। কিন্তু ক্লাবের আসল ফাংশান হতো পুজোর কিছুদিন পর। সেখানে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নির্মলা মিশ্র, দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায় অমৃক সিং অরোরা, বনশ্রী সেনগুপ্ত আরো সব বড় বড় শিল্পীরা গান গাইতে আসতেন। ছেনু তো এদের কারোর নাম তখন জানত না, বড়রা বলে দিত, কিন্তু গান শুনে ভীষণ ভালো লাগত। ওইদিনের পোগ্রামে ভিড়ও হতো খুব।
নবমীর দিন সন্ধে বেলা বড়দা, ছেনু আর চন্দনকে সাথে করে বেরিয়ে পড়ল ঠাকুর দেখতে। হায়াৎ খাঁ লেন, নূর মোহাম্মদ লেন দেখে, আটচল্লিশের পল্লী, লেবুতলা হয়ে কলেজ স্কোয়ার। ওই প্যান্ডেলটাই ট্যুরের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ। অন্ধকারে কালো জলের ওপর প্যান্ডেলের আলোটা পড়ে ঝিলমিল করে উঠছে, দেখেই মহারাজের মনে ভরে গেল, তিনি ভাবতে বসলেন আহা আমাদের প্যান্ডেলটার সামনে যদি এরম একটা পুকুর থাকত, কি ভালোই না হতো! ওইসময় ভিড় ঠেলে ঠাকুর দেখার জন্য বড়দা, তেতলার বাবুনদার থেকে একটা ভলান্টিয়ার ব্যাজ সঙ্গে করে এনেছিল। ওটাই তখনকার পুজোর ভিআইপি পাস।
দশমীর দিন সকাল থেকেই বাড়িতে হইহই কাণ্ড। মা ছোদ্দিকে সাথে নিয়ে জিবেগজা আর নিমকি বানানো শুরু করে দিয়েছে। বাড়িতে বিজয়ার জন্য পরপর লোকজন আসা শুরু হবে, তারই প্রস্তুতি। সাথে দারুণ দারুণ সব রান্নাও হচ্ছে আজ। দশমী নিয়ে ছোড়দার তাই খুব উৎসাহ। ছেনুরও উৎসাহে কমতি নেই, তবে মাঝে মাঝে একটু মন খারাপও হয়ে যাচ্ছে। সকালে উঠেই ছোড়দা তাকে একগাল হেসে বলেছে, আজই তো ঠাকুর ভাসান হয়ে যাবে, এবার তাহলে কি নিয়ে লাফাবি? শুনেই ছেনুর মুখটা সাথে সাথে আলকাতরা! বুকেও যেন একটা চিনচিনে ব্যথা। সত্যিই তো, আজই তো ভাসান, বেশ কি সুন্দর একটা ঘোর লাগা আনন্দের মধ্যে ডুবে ছিল, আবার সব যে কে সেই। এই ঝলমলে লাইট নিভিয়ে দেবে, প্যান্ডেল খুলে বাঁশ আবার ভ্যানে চাপিয়ে নিয়ে চলে যাবে, রাস্তাটা পুরো আবার আগের মতো হয়ে যাবে, যাঃ কি হবে তাহলে। এইসব ভাবতে ভাবতে মাঝখানে যেই মায়ের ডাক এসেছে জিবেগজা টেস্ট করার জন্য, অমনি ছেনু তিন লাফে রান্নাঘরে। জিবেগজা খেয়ে মনে ফের উৎসাহ ফিরে পেয়ে ছেনু একছুট্টে প্যান্ডেলে চলে গেল, নিচে কি হচ্ছে না হচ্ছে দেখার জন্য।
গিয়ে দেখে সবাই আজ খুব ব্যস্ত, ঠাকুরের বেদীর ওপর আশপাশটা গোছগাছ চলছে। ছেনু আজ খুব মন দিয়ে সিংহটাকে দেখছিল, কিরকম করে দাঁত বের করে ভয় দেখাচ্ছে অসুরকে। অসুরটার হাতে আবার খাঁড়া, সেও ভয় দেখাচ্ছে, কিন্তু দেখালে কি হবে, তার তো অবস্থা খারাপ, বুকের মধ্যে ত্রিশূল বিঁধে টপ টপ করে রক্ত পড়ছে। সবচে অদ্ভুত লাগে মা দুর্গাকে দেখে, দশখানা হাতে কত রকম জিনিস ধরে রয়েছে, আর তার মধ্যেই কিরকম টুপ করে ত্রিশূল দিয়ে অসুর কেও খোঁচা মারছে। বাকি সবার দুটো করেই চোখ, কিন্তু মা দুর্গার তিনখানা। আজ ঢাকের বোলটাও বদলে গেছে, শুনেই বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ইশশ্ আজকেই তো বিসর্জন। আরেকটু যদি রেখে দেওয়া যেত।
ততক্ষণে বাকিদের দৌড়াদৌড়ি দেখে ছেনু আবার সম্বিৎ ফিরে পেল, দেখে চন্দন এসে তাকে ডাকছে, ওঠ ওঠ, কি রে বসে পড়লি কেন? ছেনু ওকে দেখে বলে, আচ্ছা বাবুনদাকে বলে ঠাকুর আজ রেখে দেওয়া যায় না? চন্দনও রাজি। কিন্তু তাদের প্রস্তাব শুনেই বাবুনদা ক্ষেপে উঠল, আজ রাখা হলে কাল শনিবার ভাসান হবে না, রাত্তির জেগে আরো দুদিন পাহারা দেবে কে? এটা তো ছেনু ভেবেই দেখে নি, ও তো দিব্যি শুয়ে পড়ত বিছানায় গিয়ে, কিন্তু বাবুন দা, খ্যাপাদা, কান্তি জেঠু এদের সব রাত জেগে প্যান্ডেল পাহারা দিতে হত, তখনো তো সিকিউরিটি গার্ডের ব্যাপার স্যাপার চালু হয়নি।
দুপুরের দিকে বরণ শুরু হল, পাড়ার প্রচুর মহিলাদের ভিড় প্যান্ডেল জুড়ে, সবাই সিঁদুর, আলতা, পান, সন্দেশ সবকিছু নিয়ে বরণ করতে এসেছে। ছেনু তিনবার গিয়ে মাকে ডেকে আসল, কিন্তু কি আশ্চর্য, তবু ভুলে গেল মা আসতে? পিসিমা কিন্তু ঠিক মনে করে ঠাকুরকে বরণ করে গেল প্যান্ডেলে এসে। সন্দেশ খাওয়ানোর বহর থেকে চন্দন বেজায় ব্যথিত বলে, আজ টুক করে কিছুক্ষণের জন্যে অসুর হতে পারলে বেশ লাভ ছিল, কত কত সন্দেশ যে মুখে ঢুকতো। আসলে মা দুর্গাকে বরণের জন্য একটা উঁচু টুল রাখা হয়েছে, অনেকেই অত উঁচুতে না উঠে, পা ছুঁয়ে বরণ করে অসুরকেই মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে বেশি বেশি করে। বাকি সবার জন্য ঠিক আছে, কিন্তু গণেশ দাদার কাছে গিয়ে মিষ্টিটা যে কোথায় খাওয়াবে অনেকে বুঝতেই পারছে না, তাই শুঁড়ের ওপর রেখে দিচ্ছে, ছেনু ভাবে, এক্ষুণি গণেশ দাদা একটা জোরসে হ্যাঁচ্চো দিলে কি হবে!
বিকেল থেকেই প্যান্ডেলের পরিবেশ বদলে গেছে, ফুল, মালা সব সরিয়ে আলাদা করা হচ্ছে। প্যান্ডেলের সামনে অনেকে জড়ো হচ্ছে, পথচলতি মানুষ বিসর্জনের আগে শেষবারের মতো উঁকি দিয়ে ঠাকুর দর্শন করে নিচ্ছে। ঢাকিরা জোর জোরে ঢাক বাজিয়েই চলেছে, প্যান্ডেলের মধ্যে চেনা অচেনা নানান লোকের ভিড়। অনেকে আবার টুক করে চোখের কোনটা মুছে নিচ্ছে। মাইকেও ঘোষণা হচ্ছে যারা যারা বিসর্জন শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করতে চান তারা মণ্ডপ প্রাঙ্গণে চলে আসুন। বিসর্জনে পাড়ার অনেক বাচ্ছাই চলে আসত, সবাই মিলে হইচই, মজা, হুল্লোড় জমত খুব। কিন্তু বড়দের বেলায় এক নিয়ম আর ছোটদের বেলায় আরেক রকম। ছোট, বড়ো সবাইকেই বিসর্জনের লরিতে তোলা হত। তারপর তিনটে লরি করে ঢাক আর গান বাজাতে বাজাতে পুরো এলাকা জুড়ে বেশ খানিকটা রাস্তা চক্কর মেরে এসে সব বাচ্ছাদের প্যান্ডেলের সামনে নামিয়ে লরি চলে যেত সোজা বাবুঘাট। অন্ধকারে গঙ্গায় কোথা থেকে কি হয়ে যাবে, তাই ছোটদের নদীতে নিয়ে যাওয়ায় ভালোই রিস্ক ছিল। একটা লরি যেটা সামনে যাচ্ছে তাতে সিংহ অসুর সহ মা দুর্গা, তার পেছনের লরিতে লক্ষ্মী-গণেশ, তার পিছনে সরস্বতী-কার্তিক। প্রতিমা লরিতে তোলাও এক কান্ড! লরি প্যান্ডেলের মধ্যে ঢুকিয়ে ঠাকুরের সামনে দাঁড় করিয়ে, ভাড়া করা কুলি এনে হেঁইও বলে জোরসে ধরে তুলে পাটাতনের ওপর দিয়ে লরিতে তোলা হতো কোনোমতে। ছেনু আবার সেখানে হাত লাগাতে যাচ্ছিল, বড়রা দেখতে পেয়েই হাঁ হাঁ করে উঠেছে। ছোড়দা তো ছেনুকে বিসর্জনের লরিতেই প্রথমে উঠতে দিচ্ছিল না। তাও জোরজার করে ও উঠে পড়েছে। বাবুনদার ভরসাতেই ওকে ছাড়া, কারণ বিসর্জনের সময় কে কি অবস্থায় থাকবে তার ঠিক নেই, তার ওপর পাড়ায় ঘোরানোর সময় লরির সাইডগুলো আবার নামানো থাকে, সবাই পা ঝুলিয়ে বসে থাকে, তাই খুব ধীরে ধীরে, প্রায় হাঁটার গতিতে লরিগুলো নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো পাড়া ঘোরানোর শেষে সব বাচ্ছারা একে একে প্যান্ডেলের সামনে নেমে গেল, অনেক মহিলাও আর যাবে না, সবাই নেমে গেল পাড়ায়। এরপর বড়ো রাস্তা ধরে লরি রওনা দেবে বাবুঘাট। পর পর আরো বিসর্জনের লরি যাচ্ছে গঙ্গার দিকে। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে আমাদের মহারাজ কোথায় গেলেন? সব বাচ্চাই তো লরি থেকে নেমে গেল ওনার তো টিকির নাগাল পাওয়া গেল না! চন্দনও নেমে বাড়ি চলে গেছে টুক করে। ছোড়দা দাঁড়িয়ে ছিল প্যান্ডেলের সামনে ছেনুকে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে, কোত্থাও খুঁজে পাওয়া গেল না তাকে। প্রথমে অতটা পাত্তা দেয়নি, পাড়াতেই কোথাও আগে নেমে পড়েছে হয়তো, এক্ষুণি চলে আসবে। কিন্তু ধীরে ধীরে অনেকক্ষণ কেটে গেল তবুও আসছে না, প্যান্ডেলে আবার খুঁজে আসা হল, বাড়িতেও তন্ন তন্ন করে খোঁজা হল, ছেনুর দেখা নেই। কেউ যদি ঠিক তখনই মা দুর্গার লরির ড্রাইভারের সিটের নিচে একবার উঁকি মেরে দেখত, ঠিক দেখতে পেত মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ সেখানে কোনোমতে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রয়েছেন। লরিতে ওঠার আগেই চন্দন আর ছেনুর মধ্যে জোর আলোচনা চলছিল, বিসর্জনে যাওয়ার ব্যাপারে। ছেনুর অভিমত, আমরা ভলান্টিয়ার বলে কথা, না গেলে চলবে? চন্দন মুখ কাঁচুমাচু করে বললো, কিন্তু পাড়ায় এসে গেলেই তো সবাই ধরে নামিয়ে দেবে, যাবো কি করে? তাই শুনে ছেনু তখনই একটা দুষ্টু হাসি দিয়েছিল। কি আশ্চর্য, চন্দন তার পর থেকে আর ছেনুকে দেখতেই পায় নি। ও ভেবেছে ছেনুর ছোড়দা বোধহয় লরি করে যেতে দেবে না বলে বাড়ি নিয়ে চলে গেছে, ওর ছোড়দা যা রাগী, পুজোর সবকিছু নিয়েই যেন ক্ষেপে থাকে। কিন্তু সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে মহারাজ কখন যে সুড়ুৎ করে ড্রাইভারের সিটের পিছনে লুকিয়ে পড়েছেন কেউ বুঝতে পারেনি। ও কিন্তু ঠিক কান খাড়া করে রয়েছে, পাড়া ছাড়িয়ে লরি যখন আবার চলতে শুরু করল, গোলযোগ কমে কমে আসছে, বড় রাস্তায় পড়ার পর ধীরে ধীরে লরি স্পিড তুলছে, ধীরে ধীরে মাথাটা উঁচু করে চারপাশটা একটু দেখে নিল। ড্রাইভারের পাশে একটা রোগা মতো খালাসি বসে ছিল, সে তো ছেনুকে দেখতে পেয়েই চমকে উঠেছে। তারপর ছেনু বের হয়ে এসে একগাল হেসে ওর পাশেই সিট ভাগাভাগি করে বসে পড়ল। বাবুঘাটে গিয়ে যেই লরি থামল, তখন ছেনুকে ড্রাইভারের সিটের দিক থেকে নামতে দেখে বাবুনদার তো মাথায় হাত - একি করেছিস? তুই চলে এলি কি করে? আমি তো পাড়ায় এসে সব বাচ্চাদের নামানোর সময় কত করে খুঁজলাম, দেখতে পাইনি তো!
তারপর আর কি, বাবুনদার দায়িত্ব বেড়ে গেল, বিসর্জনের জন্য ওরা ওখানে যতক্ষণ ছিল ততক্ষণ শক্ত করে ছেনুর হাতটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল। প্রচুর ভিড় হয়েছে, পরপর অনেক পুজোর ভাসান তো। ঠাকুরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে সবাই জলে নামল, তারপর জলের মধ্যে তিনপাক ঘুরিয়ে - ঝুপ্পুস! ঠাকুরকে ওরম চিৎ হয়ে জলে পড়ে যেতে ছেনুর বুকটা কেমন একটা করে উঠল। যাইহোক বিসর্জনের পর গঙ্গার জল মাথায় ছিটিয়ে নিয়ে সবাই বাবুঘাটে দাঁড়িয়ে রসগোল্লা খেলো, শিয়ালদা থেকে লরি ছাড়ার সময়ই কমলা থেকে দুটো ভাঁড় কিনে রাখা হয়েছিল। সেই রসগোল্লা দু'খানা খেয়েই ছেনুর যত দুঃখ নিমেষে হাপিস।
তারপর লরি আবার পাড়ায় ফিরে আসতে দেখা গেল আমাদের মহারাজ সদর্পে লাফিয়ে নামলেন, দু হাতে দুটো খাঁড়া, একটা মা দুগ্গার আরেকটা অসুরের, জামার ওপরে পিন দিয়ে লাগানো একখানা বড় ব্যাজ তার ল্যাজ সমেত ঝুলছে (পুজো মিটে গেছে, তাই বাবুনদার ব্যাজখানা এখন মহারাজের দখলে) আর মুখে দিগ্বিজয়ের হাসি। সেই দুটো খাঁড়া ঘোরাতে ঘোরাতে যখন তিনি বাড়ির দরজার সামনে পৌঁছলেন, ওপরে তাকিয়েই তো ওনার বুক ধড়াস করে উঠল। তেতলার বারান্দায় পিসিমা শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে, নিচে দোতলার বারান্দা থেকে বড়দা আর মা কটমট করে তাকিয়ে আছে, পাশে ছোদ্দি হাতের ইঙ্গিতে বোঝাচ্ছে আজ ফিরলেই উত্তম মধ্যম আছে কপালে। সিঁড়ি বেয়ে পা টিপে টিপে উঠতে উঠতেই ছেনুর কানে আসছে ছোড়দার চিল চিৎকার- ও ভেবেছেটা কি, লায়েক হয়ে গেছে নাকি? না বলে সোজা বিসর্জনে চলে গেল! আজ পর্যন্ত এ পড়ার কোনো বাচ্ছা কি বিসর্জনে গেছে ও ফিরুক শুধু আজ!
ছোড়দা ভিতরের বারান্দায় পায়চারি করছিল, ছেনু দোতলায় পা রাখতেই ছোড়দার মুখোমুখি। আর ছেনুকে দেখতে পেয়েই ছোড়দা মুখ লাল করে বাজখাঁই গলায়, তোর এত বড় সাহস! বলে যে চিৎকারটা ছাড়ল তাতে গোটা বাড়ি কেঁপে উঠল, সেটা পুরো শেয়ালদার লোক তো বটেই, সেসব ছাড়িয়ে বাবুঘাটের গঙ্গার নিচে মা দুর্গার কানে অব্দি পৌঁছে গিয়েছিল বোধহয়।
কিন্তু যার ওপর চিৎকার তিনি আর সেখানে থাকলে তবে তো! মহারাজ ততক্ষণে তিন লাফে তেতলায় উঠে পিসিমার ঘরে ঢুকে দরজা টেনে দিয়েছেন। কে আছে, পিসিমাকে হটিয়ে দুর্গে আক্রমণ করে মহারাজকে অপহরণ করবে!
খানিকক্ষণ পর বিপদ রাতের মতো খানিকটা হলেও কাটানো গেছে বুঝতে পারার পর বুকে কিঞ্চিৎ গর্বও অনুভব করলেন, ঐ যে ছোড়দা তো বলল, এর আগে পাড়ার কোনো বাচ্চা কি বিসর্জনে গেছে!
মানে পাড়ার মধ্যে ওই প্রথম, উরিব্বাস! মানে ওর আগে কেউ নেই, চন্দনও না, ভাবা যায়!
পুনশ্চ: চিন্তা নেই মহারাজ আবার ফিরবেন, তবে আপাতত কিছুটা বিরতি। এবারের বইমেলায় বাদবাকি গল্প বই হয়ে আসার কথা রয়েছে। কিন্তু তাতে শুধু ফার্স্ট সিজন ফুরোল, পরের সিজনের গল্প নিয়ে আবার ফেরত আসবেন সাইটে, তবে সেটা কবে, সেই রহস্য এক্ষুণি ভাঙছি না। :-)