উফ্ কি মুস্কিলেই না পড়েছেন আজ মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ। কোথায় তিনি রাজ্য শাসনে মন দেবেন, তা নয়, তাঁর আজকে কাজ কিনা বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দেওয়া!
"কি রে আছিস তো? কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা কেন?" বাথরুমের ভেতর থেকে বদ্দির গলা ভেসে আসে।
ছেনু শিগগির বলে ওঠে,"এই তো ঠায় দাঁড়িয়ে আছি, কোত্থাও যাই নি তো!"
- আমি ভেতর থেকে বুঝব কী করে, তুই আছিস না চলে গেছিস? এক কাজ কর, মাঝে মাঝে দুম দুম করে আওয়াজ কর, তালে বুঝতে পারবো তুই দাঁড়িয়ে আছিস
- দরজায় আওয়াজ করব?
- না, পাগল? দরজায় কেউ মারে, মেঝের মধ্যে আওয়াজ কর পা দিয়ে।
সেই হুকুম শিরোধার্য করে ছেনুকে পা দিয়ে আওয়াজও করতে হচ্ছে এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। কি আর করা যাবে? চমচম আংটির জন্য এটুকু তো করতেই হবে। যেখানে সেই দ্বাপর যুগে স্বয়ং কেষ্ট মহারাজ স্যমন্তক মণির জন্য আকুলি বিকুলি করতেন, কোহিনুর পেতে নাদির শা থেকে রঞ্জিত সিং সবাই হাত বাড়িয়েছেন সেখানে ছেনু তো কোন ছার! ছোট্ট থেকেই ওর চোখ দিদির হাতের নানা কারুকাজময় চমচমের মতো দেখতে চকচকে সোনার আংটিটার দিকে। সোনা কাকে বলে, তার কত দাম বা বদ্দিই বা কোথা থেকে আংটিটা পেয়েছে কিছুই ছেনুর জানা ছিলনা। কিন্তু আংটিটা হাতে পরলে ছেনুর মনে ভারি আনন্দ হতো। বারবার বদ্দির থেকে চমচম আংটিটা (ছেনুরই দেওয়া নাম) নেওয়ার জন্য বায়না করলেও বদ্দি এমনিতে কিছুতেই সেটা হাতে দিত না।
আজ সন্ধের পর দুম করে কারেন্ট চলে গেছিল, আবার বদ্দিরও এদিকে বড় বাইরে পেয়েছে। বদ্দি মুখে বড় বড় কথা বললে কি হবে, আসলে তো রাম ভীতু, ভয়ের চোটে অন্ধকারে বাথরুমে যাওয়ার কথা ভাবলেই, কম্প দিয়ে জ্বর আসে। তাই ছেনু আজ পাহারাদার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাথরুমের দরজার বাইরে, আর মাঝে মাঝে দুম দুম করে মেঝেতে আওয়াজ করছে, একবেলার জন্য চমচম আংটি পরতে পাওয়ার কড়ারে।
এই চমচম আংটির লোভ দেখিয়ে বদ্দি মাঝে মধ্যেই তাই নানান কাজে ছেনুকে রাজি করিয়ে ফেলে। যেমন একবার হরলিক্সের প্যাকেটের মধ্যে টিভির কুপন পাওয়া যাচ্ছিল, টিভির ডানদিক আর বাঁদিকের টুকরোর ছবি হরলিক্সের প্যাকেটের মধ্যে থেকে পেয়ে কেউ যদি জুড়ে ফেলে ওমনি হাতে নাতে পেয়ে যাবে আস্ত একখানা টিভি। পিসিমা ছেনুকে একখানা সেই হরলিক্স কিনে দিয়েছিল যার থেকে একটা টিভির ডানদিকের টুকরোর ছবি ছেনু আবিষ্কার করে। সেই দেখে তো বদ্দি হাঁ! বদ্দি ছেনুকে গিয়ে মিহি করে বললো, ওই তোর হাফ ছবি নিয়ে কি আর করবি, দে আমাকেই দিয়ে দে নয়। ছেনু তার হাফ টিভিতেই খুশি, ও বলে হরলিক থেকে ছবি পেলুম, দেব কেন? এদিকে বদ্দি তো মরিয়া হয়ে পড়ছে, তার চোখে তখন গোটা টিভির স্বপ্ন! যখন বাবা বাছা করেও কিছুতেই কাজ হাসিল করা যাচ্ছেনা, তখন বদ্দি বললো আচ্ছা ঠিক আছে, ভাবছিলাম তোকে চমচম আংটিটা একবেলা পরতে দেবো, আর কি করা যাবে। ছেনু বলে, উঁহু তবুও দেব না।
- আচ্ছা গোটা এক দিন পরতে দেব। তাহলে দিবি তো?
- ওটা পরে ছাদেও ঘুরে আসবো কিন্তু।
- আচ্ছা বাবা তাই, কিন্তু হারায় না যেন একদম!
সেই টিভির ডান টুকরোর ছবি হাতে পেয়ে নেশার চোটে এক এক করে বদ্দি আরো তিন প্যাকেট হরলিক্স কিনে ফেলল, কিন্তু তার দুটোর মধ্যে কুপনই নেই, আর যে একটা কুপনে টিভির ছবি যদি বা পাওয়া গেল, সেটা ডান দিকেরই টুকরো! অবশ্য তাতে মহারাজের লাভই হল, আংটিও পরা হল আবার জমিয়ে ক'দিন ঘন করে গোলা হরলিক্সও খাওয়া গেল।
বদ্দির মাথায় প্রায়ই এরকম নিত্য নতুন ভূত চাপত। একবার কোন বই দেখে নাকি একটা পর্তুগীজ না কোনদেশি এক দুর্দান্ত রান্না শিখেছে - মাংসের জা়কুটি। বাড়িতে সবাইকে ডেকে বললো তোমাদের একদিন এটা করে খাওয়াব, খেয়ে সবাই চমকে যাবে। বড়দা আবার বোনের আবদারে একদিন খানিকটা পাঁঠার মাংস কিনেও আনল সেই পদ বানানোর জন্য। ছেনু তো সেদিন সকাল থেকেই আনন্দে আটখানা, নতুন জিনিস খাওয়া হবে, দিদি বানাবে। কিন্তু বদ্দি মাংস দেখেই বললো, সব হাড় বাদ দিতে হবে প্রথমেই, আমার রান্নাতে হাড় ছাড়া মাংস লাগবে। তাই সই, মা আবার হাড় গুলো বেছে মাংস আলাদা করে দিল। সন্ধে থেকে শুরু হল জা়কুটি রান্না। সে কত রকম তার তোড়জোর - পোস্ত বাটা চাই, নারকেল কোরা চাই, জলে ভেজানো শুকনো লংকা, তিন চার রকম মশলা, সরু সরু ভাজা পেয়াঁজ। রান্নার জোগাড় দেখেই ছেনু অস্থির, উফ্ আজ বাড়িতে একটা রান্নার মতো রান্না হচ্ছে বটে। রান্না আরো এগোতে যা সুন্দর গন্ধ বেরোতে লাগল, তাতেই পুরো বাড়ি মাতোয়ারা। শুধু গন্ধেই খিদে পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এদিকে দিদির রান্না শেষ আর হচ্ছেই না, যতবারই বলা হয়, আর কতক্ষণ? বদ্দি বলে, আহা, ভালো জিনিসে তাড়াহুড়ো করলে চলে! শেষমেশ যখন বদ্দি রান্না শেষে জা়কুটি এনে পেশ করল, তা দেখে সবার চোখে ভ্রুকুটি - পুরো মাংসটা রান্নার পর ছোট্ট একটা বাটিতে এসে ঠেকেছে! ছোড়দা তো ক্ষেপে বোম, "যা, কেউ খাবো না তোর জা়কুটি, তুই একলা খা গিয়ে, আমরা সবাই না খেয়ে থাকবো!" সত্যিই তো এইটুকু খাবার খাওয়া যায় সবাই মিলে? তাই জা়কুটি বয়কট! ছেনুর তো চোখে প্রায় জল চলে এসেছে। শেষমেশ মা চট করে সেই তুলে রাখা হাড়গুলো আর আলু দিয়ে একটা দারুণ মাংসের ঝোল বানিয়ে ফেলতে পরিস্থিতি সামলানো গেল। সেই হাড়ের গায়ে লেগে থাকা টুকরো টাকরা মাংস আর ঝোল, আলু দিয়ে ভাত মেখে বাড়ির সবার চমৎকার খাওয়া হয়ে গেল।
বদ্দির আবার অভ্যেস, সকালে ডিমের মামলেট না হলে চলবেনা। মামলেট আর অমলেটের মধ্যে আসলে যে কি ফারাক সেটা কোনোদিনই ছেনু তার ক্ষুদ্রবুদ্ধিতে খুঁজে পায় নি। সেই মামলেট ভাজার জন্য দিদির আবার একটা আলাদা পুঁচকে মতো কালো ফ্রাইপ্যানও ছিল, যেটা আবার দিদি কাউকে সহজে দিতে চাইতো না। ওটায় আসলে সুবিধা ছিল যে ডিম ভাজতে আর রান্নাঘরের উনুনের দরকার হতো না, ছোটো একটা ইলেকট্রিক হিটারে চট করে করে নেওয়া যেত। যাইহোক একদিন সকালে বাড়িতে একটাই ডিম পড়ে রয়েছে। ছোড়দা সেদিন সকাল সকাল উঠে ঘোষণা করল, ওই ডিম ভেজে খেয়ে সে কলেজ যাবে। বদ্দি বলছে, না ওটা আমি খেয়ে ইস্কুলে যাব। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেছে। ডিম যেহেতু ছোড়দা আগে হাতে তুলে নিয়েছে সেও দখল ছাড়তে নারাজ। গলি ক্রিকেটে যার ব্যাট দিয়ে খেলা হচ্ছে সে আউট হয়ে গেলে যা হয়, এখানেও সেই কাণ্ড হল। বদ্দি ফ্রাইপ্যানটা বগলদাবা করে নিয়ে বললো, দেখি এবার তুই কীসে করে ডিম ভাজিস! ছোড়দাও চ্যাঁচাচ্ছে, ফ্রাইপ্যানটা দিবি কিনা বল! আমি দশ অব্দি গুণব। বদ্দি বলে, দশ কেন, তুই একশো অব্দি গুণলেও দেব না ফ্রাইপ্যান, ওই ডিমভাজা আমিই খাবো।
এরপর যা হলো, দেখার জন্য ছেনু প্ৰস্তুত ছিল না। ছোড়দা ডিমটা দেওয়ালে ঠুকে ভেঙে খপ করে কাঁচাই মুখে পুরে দিল। দেখে বদ্দি আর ঝগড়া করবে কি, মুখ হাঁ হয়ে গেছে।
শেষ ডিমের শোক সামলে উঠে, বদ্দি ছেনুকে হুকুম করলো, শিগগির যা তো, মায়ের থেকে পয়সা নিয়ে ডিম কিনে নিয়ে আয়।
ছেনু মুখ ভেঙচে বলে, আমার এখন ডিম কিনতে যেতে বয়েই গেছে। আমি তো তেতলায় ঘুরতে যাচ্ছি।
বদ্দি দেখল এখন মামলেটের জন্য কিছুটা ত্যাগ স্বীকার করতেই হচ্ছে। তাই ছেনুকে কাছে ডেকে বলল, ভেবে দ্যাখ, চট করে যদি ডিম কিনে আনিস, তাহলে কিন্তু তেতলায় আংটিটা পরেই ঘুরতে যেতে পারবি, আর সাথে মামলেটের ভাগ।
এই প্রস্তাব কি আর ফেরানো যায়! ছেনুকে অগত্যা যেতেই হল ডিম আনতে।
ছেনু খেয়াল করে দেখেছে, ইস্কুলে যাওয়ার সময় ঠিক বদ্দি কোথায় একটা আংটিটা লুকিয়ে ফেলত। কিন্তু কোথায় যে রাখত কোনোদিনও খুঁজে বের করতে পারেনি। তবে শুধু আংটি নয় বদ্দির আরেকটা যে জিনিসের ওপরও ওর খুব লোভ ছিল, সেটা হল আঁকার রং-পেন্সিল-খাতা। এটা আসলে ছিল বড়দার, বড়দা ভারি সুন্দর ছবি আঁকত। যখন এক দু'টানে কি মিষ্টি মিষ্টি মুখ এঁকে ফেলত, সেই দেখে সবার তাক লেগে যেত। তেমনই ছিল ওর জলরঙের জাদু। প্রথমে দেখে বোঝাই যেত না, কিসের ছবি হতে চলেছে, শেষ হওয়ার পর দেখা যেত জঙ্গলের মাঝে কি সুন্দর কাঠের বাড়ি, কিংবা একটা ছেলে সমুদ্রের ধরে দৌড়াচ্ছে, এরকমই সব অদ্ভুত সুন্দর দৃশ্য এসে হাজির হয়েছে চোখের সামনে। কিন্তু অফিসে ঢোকার পর থেকে আর আঁকাআঁকির তেমন সময় পেত না, তাই বড়দার আঁকার সরঞ্জামের জিম্মা চলে গিয়েছিল বদ্দির কাছে। বদ্দির আঁকার হাতও ছিল বেশ সুন্দর। খাতায় নিজের মনেই নানা ছবি আঁকত, ইচ্ছে হলে রঙ করতো আর অন্য সময় খাতা পত্তর ছেনুর হাতের নাগালের বাইরে লুকিয়ে রেখে দিত।
এবার ছেনুর থেকে যদি কিছু লুকানো হয়, তাতে উল্টে সেই জিনিসের প্রতি আগ্রহ তার চারগুণ বেড়ে যেত। মাঝে মাঝে দুপুরে লুকিয়ে লুকিয়ে ছেনু সেই সব আঁকার রং, খাতা পত্তর লুকোনো আস্তানা থেকে টেনে বের করে নিয়ে এসে পেছন দিক থেকে পাতা ছিঁড়ে তাতে পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে বসতো। মা দেখতে পেলেই বলতো, তুই দিদির খাতা নষ্ট করছিস? জানতে পারলে খুব বকবে কিন্তু! ছেনু ফিক করে হেসে বলে, আমিও তো আঁকছি। তবে দিদির বকুনির ভয়ও ছিল, তাই আবার মায়ের কাছে গিয়ে বলে আসত, তুমি একদম বদ্দিকে বলবে না কিন্তু। আঁকা হয়ে গেলে চুপি চুপি গিয়ে পাতাগুলো তেতলার পিসিমার ড্রয়ারে লুকিয়ে রেখে চলে আসত। একদিন এরকম ছেনু বসে বসে আঁকছে, খেয়ালই করেনি কখন বড়দা পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ পেছন থেকে, 'বাঃ, দিব্যি হচ্ছে তো' শুনে মহারাজের তো পিলে চমকে উঠেছে। ছেনু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছে, আর কখখনো আঁকবো না, দিদিকে বোলো না কিন্তু। বড়দা ছেনুর মাথার চুল গুলো খেবলু মেবলু করে দিয়ে বললো আঁকবি না কেন, আলবাত আঁকবি, আমি তোর জন্যও একখানা নতুন পেন্সিল এনে দেব। সেই টুকটুকে নীল রঙের পেন্সিলটা পেয়ে ছেনুর এত আনন্দ হলো পরের দিন ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর যে ছবিটা এঁকেছিল, ওটা লুকাতে ভুলে গেল আর পড়বি তো পড় বদ্দির হাতে। বদ্দি তো দেখেই চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তুলেছে, ছেনু আমার রং,খাতা-টাতা ছিঁড়ে দিয়ে সব নষ্ট করে দিল! সেদিন বাঁচালো ছোদ্দি, বদ্দিকে ডেকে বললো, চেঁচাবি পরে, আগে দ্যাখ বাবলি (মহারাজ ছনেন্দ্রনাথের নামরহস্য দ্রষ্টব্য) কি সুন্দর ছবিটা এঁকেছে। বদ্দিও যে সেইদিন হুম বলে চুপ হয়ে গেল, সেটাই ছিল ছেনুর কাছে অলিখিত লাইসেন্স।
ছেনুর বাবা বেঁচে থাকতে বদ্দি ভারি আদরের মেয়ে ছিল কিনা বাবার কাছে, তাই দিদির সব অবদারই বাবা চেষ্টা করতো পূরণ করার। পুজোয় সবচেয়ে বড় দোকানের জামা কাপড় কেনা হত বদ্দির জন্য। দিদির খিদে পেলে বাবা নিজের দোকান থেকে বড় বড় কাটলেট প্যাক করে পাঠিয়ে দিত ওয়েটারের হাত দিয়ে। ছেনু যে চমচম আংটির কথা ভেবে ভেবে পাগল হতো, সেটাও আসলে দিদির জন্মদিনে বাবা বৌবাজারে নিয়ে গিয়ে কোন এক নামকরা জুয়েলার্স এর দোকান থেকে কিনে দিয়েছিল। এত আদরে আদরে বড় হয়েছে তাই বড় হয়েও সেই অভ্যেস যায়নি। অন্যদের বালিশ টালিশ কেড়ে নিয়ে একাই চার-পাঁচটা বালিশ নিয়ে ঘুমাতো আরাম করে। ছেনু তো শুয়েই ঘুমিয়ে পড়ত, তাই কখন যে বালিশ ডাকাতি হয়ে গেছে ধরতেই পারত না, যত ঝগড়া বাঁধত ছোদ্দির সঙ্গে। বালিশের অভাবে ছোদ্দির মাঝে মধ্যে ঘুম ভেঙে গেলেও বদ্দি বেলা অব্দি আরামসে ঘুমিয়ে থাকত বালিশের পাহাড়ের মধ্যে।
তবে তিমির ওপর যেমন তিমিঙ্গিল থাকে, বদ্দির তেমন ছিল মামা। মামা আসলেই বদ্দি পুরো জব্দ। একদিন বদ্দি ওরকম দিব্যি নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে, মামা সকাল সকাল ঘরে এসে বাটিতে অল্প জল নিয়ে চামচ দিয়ে ডিম ফেটানোর মতো আওয়াজ করে ফেটাতে লাগল। আর সেই শুনেই বদ্দি ধড়মড় করে উঠে পড়ে বলছে, ডিম ভাজছ বুঝি, আমারটায় লংকা কম দেবে। মামা বলল দ্যাখ তো এই ক'টা দিলাম, বেশি হয়ে গেল কিনা, বলে হাতে সেই জলের বাটি ধরিয়ে দিয়েছে। বদ্দিও উৎসাহ নিয়ে দেখতে গিয়ে পুরোই বেকুব। মামা বলল যাক, উঠেই পড়েছিস যেকালে, আর তোর ডিমভাজা খাওয়ার এতই ইচ্ছে যখন সবার জন্যই বানা। তখন আবার দিদি মুখ হাঁড়ি করে ডিম ভাজতে যেত। আবার একদিন রাত্রে কেষ্ট কাফে থেকে সবার জন্য মাংস আর রুটি আনিয়েছে মামা। এনেই বদ্দিকে বলল, নে তুই তো খুব ভালো ভাগ করতে পারিস, মাংসটা সবার জন্য বাটি বাটি করে সমান ভাগ করে ফেল দেখি। বদ্দি তাই শুনে এক গাল হেসে ভাগ করতে বসল। ছেনু অবাক হয়ে সেই ভাগ করা দেখতে থাকে। ভাগ শেষে দেখা গেল বদ্দির বাটিটা যেন হিমালয় পর্বত হয়ে জেগে উঠতে চাইছে আর বাকিরা ছোটনাগপুরের মালভূমি। মামা বলল তুই সবার ভাগ সমান সমান করেছিস তো, তাতে বদ্দি দিব্যি কাঁধ অব্দি ঘাড় বেঁকিয়ে হ্যাঁ বলে দিল। মামা টপ করে বদ্দির বাটিটা তুলতে যেতেই বদ্দি তখন তিড়িং বিড়িং লাফাচ্ছে। মামা হাসছে, কেন তুইই তো বললি সব কটা সমান সমান ভাগ করেছিস, তাহলে বদলে নিলে অসুবিধা কি! এইসব কারণে যখনই ছেনু শুনত মামা আসছে, বাড়ি শুদ্ধু সবার খুব আনন্দ হলেও বদ্দির মুখ চুন হয়ে যেত, ছেনুকে বলতো, এবার বোধহয় মামা বেশিদিন থাকবে না, কি বলিস?ছেনু তখন চুপ করে থাকত আর মামা আসতেই জড়িয়ে ধরে বলে উঠত, কি গো, এবার অনেকদিন থাকবে তো, খুব মজা হবে বলো? পাশ থেকে ছোদ্দি ফুট কাটত, তুমি চলে গেলে কিন্তু বদ্দির খুব দুঃখ হয় মনে। মামা যা বোঝার বুঝে ফেলত, আর মুচকি হেসে বলত, এবার তো অনেএএকদিন থাকব, অফিস থেকে লম্বা ছুটি নিয়ে এসেছি। দিদি আর থাকতে না পেরে বলেই ফেলল, এত লম্বা ছুটি নিলে তোমার অফিস থেকে কিছু বলল না? মামাও মিষ্টি করে উত্তর দিল, কি করে ওরা বারণ করবে, ওদের তো বললাম আমার সব ভাগ্নে ভাগ্নিরা পথ চেয়ে বসে আছে, বিশেষ করে বড় ভাগ্নিটা। সেই শুনে দিদির মুখ হাঁড়ি।
বদ্দি স্কুল-ফাইনাল পাশ করে প্রি-ইউনিভার্সিটিতে উঠে মাকে বলল, এবার কিন্তু খুব কঠিন পড়াশোনা, টিচার লাগবে আমার। বড়দা খুঁজে টুজে কাছেপিঠেরই একজন ভালো টিচারের খোঁজ আনল। ছেলেটা নাকি পড়াশোনায় খুব ভালো, কিসব পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে । প্রথম দিন যেদিন পড়াতে এল বাড়িতে, ছেনু দেখে তার নাকের ডগায় ইয়াব্বড় চশমা ঝোলানো, খুব গম্ভীর ভাবভঙ্গি। অন্য সময় যতই দুষ্টুমি করুক, ছেনুকে সন্ধেবেলা ওই দেড়-দুঘণ্টা একদম চুপটি করে থাকতে হতো।
সত্যি বলতে কি ছেনুদের বাড়িতে এক ছোড়দা ছাড়া কেউই অত গম্ভীর মুখ করে থাকতো না, তাই ছেনু মনে মনে কেমন যেন ভয় পেত সেই দাদাটাকে। এটা বদ্দি টক করে বুঝে ফেলে। তাই ছেনুকে শাসন করতে গিয়ে মাঝে মাঝেই বদ্দি ভয় দেখাতো, দাঁড়া এক্ষুণি ওই দাদাটাকে ডেকে আনছি, তারপর দেখ কি হয়!
ছোটবেলায় ছেনুর মাজনের সঙ্গে দেওয়া নানা রঙের জন্তু জানোয়ার জমানোর খুব শখ ছিল। এমনকি তেতলাতেও মহারাজের কড়া নির্দেশ জারি করা ছিল, ওই মাজনটাই কিনতে হবে কিন্তু। অন্য মাজন কিনলে তাতে তো আর চিড়িয়াখানার সদস্য সংখ্যা বাড়বে না! যেসব জন্তু একাধিক হয়ে যেত তারা মাঝে মধ্যে মহারাজের মেজাজ মর্জি মতো বদ্দি কিংবা ছোদ্দির কাছে আশ্রয় খুঁজে নিত। একদিন সেইসব বারান্দায় সাজিয়ে ছেনু মহারাজ পশু রাজ্যে আইন বিধান করছেন, এমনি সময় বদ্দি হঠাৎ এসে দুখানা উট তুলে নিতে তিনি রেগে কাঁই। বদ্দি বলছে তোর তো তিনখানা উট রয়েছে, আমি দুটো নিলে আমার তাকে দুদিকে দুটো সাজাতে পারবো। কিন্তু ছেনুও নাছোড়বান্দা, বদ্দিকে উল্টে রেগেমেগে বললো, উট কখনো একলা দেখেছিস তুই, সব ছবিতে সার বেঁধে যায়, একলা গেলে হারিয়ে যাবে তো! অকাট্য যুক্তি। হার মেনে বদ্দি ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, ঠিক আছে, দুটো উট চাইলাম দিলি না তো, দ্যাখ আমি বাড়ি ছেড়ে একদিন চলে যাবো, তখন বুঝবি। ছেনুও হাত নেড়ে বলে দিল, হ্যাঁ হ্যাঁ, যা না, আমার বয়েই গেছে।
মুখে ওকথা বললেও, ছেনু মনে মনে ভাবছে, বদ্দি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে বললো কেন? পরে সুযোগ পেয়ে একবার ছোদ্দিকে জিজ্ঞেস করতে, ছোদ্দি বলল, বিয়ের পর তো দিদি চলেই যাবে বাড়ি ছেড়ে, তাই বলেছে। দিদি একদিন চলে যাবে বাড়ি ছেড়ে? ছেনু তো ভেবেই পাচ্ছে না, এরকম কেন হবে! সেই শুনে তো ভীষণ দুঃখে ছেনু দুদিন ধরে গুম হয়ে রয়েছে। বদ্দি, ছোদ্দির লালবাড়িতে খুবই যাতায়াত ছিল। লাল বাড়ির দিদিরা ছেনুকেও খুব ভালোবাসত কিন্তু না ডাকলে ছেনু খুব বেশি যেত না সেখানে। একদিন সন্ধ্যেবেলা গুম হয়ে বসে থাকা ছেনুকে ডেকে বদ্দি বললো চল, আজ আমাদের সঙ্গে লালবাড়িতে যাবি। সবাই বেরোতে যাচ্ছে, এমন সময় বদ্দি বললো তুই যা, আমরা একটা কাজ সেরে যাচ্ছি। ছেনু একা একা সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আর ভাবছে, আজ যেন খুব অন্ধকার অন্ধকার লাগছে লালবাড়িটা। ছেনু দোতলায় উঠে দরজায় টোকা মারতেই দরজাটা অদ্ভুত ভাবে খুলে গেল। ভেতরেও একদম অন্ধকার, হঠাৎ কোত্থেকে একটা লম্ফ জ্বলে উঠতেই ছেনু অবাক হয়ে দেখে এই পাকানো গোঁফ ওলা, মাথায় ফেট্টি বাঁধা, মুখে রংচং মাখা, কেমন জানি একটা জামা গায়ে এক ভয়ানক ডাকাত হাতে ইয়াব্বড় লাঠি নিয়ে হুহাহাহাহা করে শব্দ করে তেড়ে আসছে আর গলাটা ভারী করে বলছে, এই কে আছিস, এই ছেলেটাকে বাঁধ তো। তাই দেখে ভয়ের চোটে ছেনু ভ্যাঁ করে ওখানেই কেঁদে ফেলেছে। তখন আবার তাড়াতাড়ি আলো টালো জ্বেলে দেওয়া হল। ছেনু অবাক হয়ে দেখে ডাকাতটা টপ করে গোঁফ আর পাগড়ি খুলে ফেলল। ততক্ষণে পিছন থেকে বদ্দি আর ছোদ্দিও চলে এসেছে, ছেনু কাঁদছে আর বদ্দিকে হাত ধরে বলছে, এটা কে রে? এখানে ডাকাত কোত্থেকে এল? ডাকাত মুখের রং মুছে, বাঁধা চুল খুলতেও ছেনুর ঘোর কাটছে না, এইতো ডাকাত ছিল, লালবাড়ির গীতাদি কি করে হয়ে গেল! আসলে বদ্দি আর গীতাদি মিলে প্ল্যান বানিয়েছিল ছেনুর সাথে একটু মজা করবে বলে। গীতাদির মাথাতেই আসে এরকম সব অদ্ভুত ফন্দি। ডাকাতের সাজে গীতাদিকে দেখে কে বলবে, সেই এত নামকরা কবি হবে আরো বড় হয়ে! (অবশ্য পরে ছেনু বদ্দির কাছে শুনেছে তখন থেকেই খাতায় জমতে শুরু করেছে অনেক কবিতা)
তো সেইদিন ভয়ে পেয়ে মহারাজের লাভই হয়েছে। গীতাদি ছেনুদের জন্য ওইদিন প্রচুর খাবার দাবার পাঠিয়ে দিয়েছিল রাত্রে। লালবাড়িতে সবাই নিরামিষ খেত, কিন্তু গীতাদির দাদার কি একটা অসুখের জন্য, ডাক্তারের নিদান ছিল বেশি করে প্রোটিন খেতে হবে। তাই আলাদা উনুনে, আলাদা ঠাকুর রেখে মাছ, মাংস, ডিম সব রান্না করানো হত। এটুকু বলতেই হবে, সেদিনের ওরকম একটা অভিজ্ঞতা হয়ে আর দারুণ দারুণ সমস্ত খাবার দাবার খেয়ে মহারাজের মনের মেঘ একদম কেটে গিয়েছিল।
তবে ছেনুর মধ্যেও যে নাটকের ভূত ঢুকে পড়েছিল তা বোঝা গেল খুব শিগগিরই। একদিন বদ্দি কি একটা ফাইফরমাস ছেনুকে দিয়ে করিয়ে নিয়ে এবার আংটি পরতে দেওয়ার বেলা একবার পরিয়েই খুলে নিয়েছে। ছেনু তাতে রেগেমেগে হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। প্রথমটা কেউ গা করেনি, তারপর দেখছে সত্যি তো, খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না! রাস্তায় চলে গেল নাকি! খুঁজে পাবে কি করে, মহারাজ তো তখন আলনা বেয়ে উঠে আলমারির মাথায় যেখানে, চাদর, বালিশ, তোষক রাখা থাকত, সেখানে চাদর মুড়ি দিয়ে লুকিয়ে রয়েছেন। অনেকক্ষণ খুঁজেও যখন কেউ পেল না, বদ্দিকে দেখে তখন চাদরের আড়াল থেকে ছেনু খোনা গলায় বললো, আঁমি ভূঁত, আঁমাকে চঁমচঁম আংটিটা পঁরতে দিঁলে, তঁবে ছেঁনুকে খুঁজে দেঁব। গলা শুনে সকলেই তখন বুঝতে পারল, ছেনু কোথায় লুকিয়ে আছে। মা তখন বদ্দিকে বলল, আহা বেচারাকে একটু দে না আংটিটা পরতে, সেই কখন থেকে না খেয়ে রয়েছে, পুরো শুকিয়ে গিয়েছে মুখটা। সবার সমবেত চাপে তখন আর আংটি পরতে না দিয়ে উপায় কি!
ওদিকে বাড়িতে ধীরে ধীরে একটা গুনগুন ফিসফাস চালু হয়ে যাচ্ছিল, সবার মুখেই বেশ আনন্দের ছোঁয়া। দিদিমাও কৃষ্ণনগর থেকে চলে এসেছে। মা, দিদিমা, বড়দা, ছোড়দা, কাকা, কাকিমা মাঝে মাঝে বসে কিসব আলোচনা চালাচ্ছে। ওপর থেকে পিসিমারাও সেইসব আলোচনায় যোগ দিচ্ছে। বড়রা যে মাঝে মধ্যে কি সব গুরুগম্ভীর আলোচনায় বসে পড়ে, ছেনুর সেসব শুনতে গেলে ঘুম পেয়ে যায়। তাই সে পারতপক্ষে সেসব ধারপাশ মাড়ায় না।
আলোচনার ফলশ্রুতিতে দেখা গেল, তাদের বাড়িটাও বেশ সুন্দর করে সেজে উঠছে, ঘরদোর সব ভালো করে সাফ সুতরো করা হচ্ছে। ছেনু ছোদ্দিকে ডেকে জিজ্ঞেস করে, কি হচ্ছে রে এসব। ছোদ্দি হেসে বলে, বদ্দির বিয়ে তো এসেই গেল প্রায়, তাই তো ঘরদোর পরিষ্কার করা হচ্ছে, কেনাকাটা হচ্ছে, সবাই কত দৌড়াদৌড়ি করছে দেখছিস না। ছেনুও তাই শুনে বীরবিক্রমে ছোড়দার সঙ্গে বাজার অভিযানে যোগ দিল। বেশির ভাগ খরচ খরচার দায়িত্ব বড়দার ওপরেই পড়ল, সাথে মামা, কাকা, তেতলার পিসিমা সবাই যতটা পারবে। মা দেরাজ থেকে বিয়েতে পাওয়া গয়নাগাঁটি সমস্ত নামিয়ে আনল, নতুন তো সবকিছু কেনা সম্ভব নয়।
দেখতে দেখতে সেই দিন সমাগত। মাঝের দিন গুলো যে ছেনুর কিভাবে কেটেছে কি বলব - কখনো মনে দুঃখ হচ্ছে, কখনো আবার দুপাক নেচে নিচ্ছে বাড়িতে একটা হই হই কাণ্ড হবে বলে, কখনো ভাবছে যে বদ্দি এরপর কোথায় চলে যাবে কে জানে - সব মিলিয়ে একদম বাটিচচ্চড়ি অবস্থা। বিয়ের আগের দিন বাড়িতেই ভিয়েন বসেছে, মিষ্টি তৈরি হচ্ছে, ছাদে ম্যারাপ বাঁধা হচ্ছে, হুলুস্থুল কাণ্ড। বিয়ের দিন দেখা গেল মহারাজ ছনেন্দ্রনাথ রাজকীয় মেজাজে বেশ সুন্দর একটা পাঞ্জাবি আর পাজামা পরে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। এক সময়ে দেখা গেল বাড়ির মেয়েরা সব গেটের দিকে দৌড় মেরেছে বরণডালা হাতে, বরের গাড়ি এসে গেছে যে! সেই গাড়ি থেকে সোনালি রঙের পাঞ্জাবি পরে যে নেমে এল তাকে দেখেই তো ছেনুর চক্ষুস্থির! এ তো সেই ইয়াব্বড় চশমা ওয়ালা মুখ-গম্ভীর দাদাটা। অবশ্য আজ দিব্যি হাসছে, আর গম্ভীর হয়ে নেই। এইবার ছেনুর টনক নড়ল, হ্যাঁ ঠিক তো, সেই যে কি একটা চাকরি পেয়েছে বলে মিষ্টির বাক্সও তো নিয়ে এসেছিল একদিন ওদের বাড়িতে আসার সময়, খুব ভালো খেতে ছিল মিষ্টি গুলো। তারপর একদিন একটা জেঠু আর জেঠিমা ওদের বাড়িটা দেখতে এসে দিদিকে নানা প্রশ্ন করছিল, দেখল সেই জেঠুটাও পাঞ্জাবি পরে গাড়ি থেকে নামছে। দেখে ছেনু তো পুরো অবাক!
তারপর আর কি হুটোপাটি, ছোটাছুটি, খাওয়াদাওয়া হল, ছেনু শরবত খেয়ে খেয়েই পেট ভরিয়ে ফেলল কি ফেলল না, পাঞ্জাবিতে দাগ লাগানোর জন্য মায়ের কানমলা খেল কি খেল না সেসব কথা বলে আর লাভ নেই, আমরা ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে পরের দিনের ওই টাইমে চলে যাই, যখন সারা বাড়ির হাওয়া একদম ভারী হয়ে এসেছে। মা, দিদিমা, কাকিমা, ছোদ্দি, তেতলার পিসিমা সবার চোখেই জল, বদ্দিও এক দফা কেঁদে নিয়ে, আবারও কেঁদে ফেলবে ফেলবে অবস্থা। সবাই বিদায় জানাতে নেমে এসেছে। ছেনু, ছোড়দার পাঞ্জাবির কোনাটা ধরে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন জামাইবাবু গাড়িতে উঠে পড়েছে, বদ্দি ধীরে ধীরে গাড়িতে উঠছে। সব জিনিসপত্র ডিকিতে তোলা হয়ে গেছে। ড্রাইভার সামনের কাঁচের ফুলটুল একটু সরিয়ে নিয়ে, ইঞ্জিন স্টার্ট করার জন্য তৈরি। শেষমেশ সবার থেকে বিদায় নিয়ে চোখ মুছে বদ্দি গাড়িতে উঠে বসলে, বড়দা গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।ড্রাইভার চাবি ঘুরিয়ে, গিয়ার বদলে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে, সবাই হাত নাড়ছে পিছন থেকে, ধীরে ধীরে বাড়ির দরজার সাথে দূরত্ব বাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বদ্দিদের গাড়ি। ঠিক এমন সময় সবাই অবাক হয়ে দেখল, পাঞ্জাবির কোনা ছেড়ে ছেনু হঠাৎ গাড়ির পিছনে দৌড় মেরেছে। গাড়ি যত এগোচ্ছে, ছেনু তত জোরে ছুটছে। দেখতে পেয়ে বদ্দি কেঁদে ফেলে, ড্রাইভারকে বললো শিগগিরি গাড়ি থামাও। দরজা খুলে নেমে সেই ছুটন্ত ছনেন্দ্রনাথকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বদ্দি বললো, বল কি হয়েছে, ছুটছিলি কেন?
মহারাজ একটু হাঁপিয়ে নিয়ে চিন্তিত মুখে বললেন, হ্যাঁ রে, তুই তো চলে যাচ্ছিস, কিন্তু তোর সেই চমচম আংটিটাও কি নিয়ে চলে যাচ্ছিস?