হাটে বাজারে
ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রবাস কালে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার এক প্রণম্য পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছিল। দেবিন্দর কাপুর তখন আমাদের টরন্টো অফিসের অধ্যক্ষ। কাজে এসেছিলেন ফ্রাঙ্কফুর্ট। আমাদের মতো কয়েকজন তরুণ অফিসারের সঙ্গে বাক্যালাপ করে কিছু আদেশ ও উপদেশ দিলেন। তার মধ্যে একটি বেশ মনে আছে।
আজকাল প্রায় শোনা যায় প্ল্যান এ বা প্ল্যান বি। দেবিন্দর কাপুর বলেছিলেন বৎসগণ, সর্বদা জোব্বার ভিতরে একাধিক পরিকল্পনা রাখিও। অবস্থা বুঝিয়া তাহা বাহির করিও। একই পরিকল্পনা একই প্রভুকে বারংবার দেখাইও না – যথাসম্ভব জটিল ভাবে ইহা পেশ করিবে যাহাতে তিনি ইহা কোনোমতে বুঝিয়া না উঠিতে পারেন। কোন সহজ সূত্র দিবে না সেটি পাইলেই তিনি অকারণ প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করিবেন। চলিতে চলিতে পরিকল্পনা পরিবর্তন করিতে থাকিও। কোন বিচক্ষণ ব্যক্তি একটি বিশেষ প্ল্যানকে বলপূর্বক আজীবনের জন্য আলিঙ্গনবদ্ধ করেন না। শেষ করলেন এই বলে- বেটে চলতে রহো, সোচতে রহো, বদলতে রহো! আগে বড়োগে!
সুপরামর্শটি মনের ভেতর উদিত হল উল্কার মত। আমাদের কাজে মানে এই বাজারি লগ্নিদার খোঁজা। সিন্ডিকেশানের কথা উঠলেই কর্তাব্যক্তিরা জানতে চাইবেন আমার সমর কৌশল কি? ঠিক কি ভাবে আমরা ময়দান-এ-জং-এ নামব? কাদের আমরা কমবেশি চিনি? কার কাছে ভিক্ষায় যাবো? কেন যাবো?
একটা কিছু বলতে হয়। তা নাহলে বড়োরা ভাববেন আমাদের কোন প্রকারের জ্ঞানগম্মি নেই, ট্রেনিং না নিয়েই মাঠে নেমে পড়েছি। স্ট্র্যান্ড অফিসের চার তলায় মিটিং রুমে ছোটখাট জমায়েত করে কর্তাদের জানালাম আমাদের রণনীতি– যেটি বহুধা-বিভক্ত মানে তাঁদের যতটা বিভ্রান্ত করা যায়।
হাঙ্গেরির নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা সমর্থন আশা করছি, যেমন জার্মানি এবং অস্ট্রিয়া। হাঙ্গেরি আর অস্ট্রিয়া একই সাম্রাজ্য ছিল এই সেদিন অবধি (সেদিনটা যদিও আশি বছর আগে; তবে ইকনমিকস আর ব্যাবসার সঙ্গে ইতিহাস ভূগোলেরও সংযোগ আছে, যেমন পোল্যান্ড পর্বে তার বিস্তারিত কাহিনি লিখেছি দেখেছি লাটভিয়াতে, দক্ষিণ আফ্রিকাতেও)।
আমরা সমর্থন ও অর্থ আশা করছি কিছু ইউরোপীয় ব্যাঙ্কের কাছে– সে তালিকায় স্পেন, পর্তুগাল, ইতালি এবং স্ক্যানডিনাভিয়া সম্পূর্ণ বাদ। আমরাই একমাত্র আমেরিকান ব্যাঙ্ক। কোনো আমেরিকান ব্যাঙ্কের কাছে সমর্থন আশা করা হয়তো বাতুলতা তবু চেজ, কেমিকাল,ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকা, আমাদের তালিকায় থাকবে।
জাপানি, কোরিয়ান, তাইওয়ানিজ ব্যাঙ্কের লগ্নি আশা করি না, তাঁদের কোনো বাণিজ্যিক কারণ নেই শুধুমাত্র লগ্নি করার জন্য তারা আসবে এই পূর্ব ইউরোপের ঘাটে, অন্যান্য প্রাণীরা জল খেয়ে গেছেন সেটা জানার পরেও! এঁরা কদাচ অগ্রদূত হয়ে নাম বা বদনাম কোনটাই কুড়োতে আগ্রহী নয়।
একই কারণে অর্থবান মধ্যএশীয় ব্যাঙ্কগুলির কাছে গিয়ে লাভ নেই। অর্থ তাদের আছে কিন্তু এই অঞ্চলে ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা নেই। কেন অচেনা মাঠে আছাড় খেতে যাবেন?
এইসব ভাবনা মাথায় রেখে আমরা স্থির করব কার কাছে যাবো।
দেবিন্দর কাপুরের শিক্ষা মেনে তৈরি করা আমাদের রণনীতির, মার্কেটিং স্ট্রাটেজির, এতোগুলো অ্যাংগল যে প্রভুরা কোনটা ধরে টান দেবেন ভেবে পেলেন না।
পাঠক যেন মনে না করেন এমনধারা রণকৌশল অনেক ভেবেচিন্তে করা হয়েছিল। আজ অকপটে বলতে পারি উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য অর্থ সংগ্রহের কালে প্রাথমিক পর্বে (যখন তাদের প্রায় কেউ চেনে না, স্লোভাকিয়া ও স্লোভেনিয়া যে দুটো আলাদা দেশ সেটা মুডি অথবা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর বোঝে না) পড়া, শোনা, খানিক জানা ইতিহাস আর ভূগোলের ওপর ভরসা রেখেছি। আমেরিকান ব্যাঙ্কের মিটিঙে লগ্নিকারক খোঁজার সঙ্গে অস্ট্রো- হাঙ্গেরিয়ান এম্পায়ার, ভিয়েনা থেকে বুদাপেস্টের নৈকট্য, জার্মানিতে হাঙ্গেরিয়ান গুলাশের জনপ্রিয়তা, হিটলারের রাইন মাইন ডানিউব ক্যানাল প্রকল্পের কোন যোগসূত্র স্থাপন করার চেষ্টা যে বৃথা সেটা জানতাম। প্রসঙ্গ তুলে কোনো লাভ নেই। আজকের তরুণ ব্যাঙ্কারদের বলতে পারি, কমনসেন্স ও আপন বুদ্ধি বিবেচনাকে কখনো বন্ধক রাখবেন না।
একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হল- আমরা কি কোনো পথসভা করবো (রোড শো)? এর উত্তর সহজ ও সংক্ষিপ্ত।
না।
কেন? আবার ওই ইতিহাস!
যেসব ব্যাঙ্ক হাঙ্গেরি, পূর্ব ইউরোপ সম্বন্ধে আপাতত একেবারে অজ্ঞ তাদের একটা সভাগৃহে বসিয়ে বুকনি দিয়ে ভোজ খাইয়ে মাত্র তিন সপ্তাহের ভেতরে তাদের লগ্নি জোটানোর কোনো চান্স নেই। তাঁরা আসবেন, চা কফি লাঞ্চ খেয়ে অর্ধেক দিন এই বাহানায় অফিস কেটে গল্পগুজব করে ঘরমুখো হবেন। এই চিত্রনাট্য আমার খুব চেনা। রোডশো’র নাম করে যে আমাদের কর্তারা ফ্রাঙ্কফুর্ট বা প্যারিসে শপিং করতে যাবেন ভাবছিলেন তাঁরা যারপরনাই মনঃক্ষুণ্ণ হলেন। নিজের মনে ঠিক করে রেখেছি, যেখানে যাবার আমি যাবো অথবা অ্যাঞ্জেলা যাবে।
অ্যাঞ্জেলাকে বলেছিলাম ব্যাল্যান্স শিটে দেখানো লাভ লোকসানের হিসেব করে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কে কেউ টাকা ঢালবে না। আমরা এক ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এগুচ্ছি– ড্রিম মার্চেন্টস। আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।
আছাড় খেলাম অবিলম্বে।
সেকালে ঋণে যোগ দেবার আমন্ত্রণ জানানো হতো ফ্যাক্স পাঠিয়ে। আমার দলের সকলে অফিসের যেখানে যেখানে সেই মেশিন আছে (চারটি ছিল সর্ব সাকুল্যে) হাতে ছাপা কাগজ নিয়ে সেদিকে ধাওয়া করতো, আমিও। অ্যাঞ্জেলা বলতো ফ্যাক্স পাঠালেই হবে না, সেটা সঠিক ঠিকানায় পৌঁছুল কিনা তার কনফার্মেশনের জন্য অপেক্ষা করো। দিনের শেষে এক তাড়া ফ্যাক্স কপি নিয়ে প্রার্থনা করেছি– এসো হে খদ্দের!
ফ্রাঙ্কফুর্ট সফর বৃথা হলো। তিন বড়ো জার্মান ব্যাঙ্ক (ডয়চে, ড্রেসনার, কমেরতস) জানালেন তাঁরা বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক চেনেন, আপাতত স্বল্পমেয়াদি দ্বিপাক্ষিক কিছু ঋণ তাদের দিয়ে থাকেন কিন্তু মধ্যমেয়াদি ঋণদানে অরাজি। অ্যাঞ্জেলা বিমর্ষ মুখে জানাল সরকারি মালিকানার প্রাদেশিক ব্যাঙ্কগুলিও (লানডেসব্যাঙ্ক) না বলেছে। আমরা ভাবলাম জার্মান কি কম পড়িয়াছে? এখনো কিছু আঞ্চলিক জার্মান ব্যাঙ্ক বাকি, যারা টপ তালিকায় পড়ে না। তাদের নিত্যি তাড়া দেওয়া শুরু হল।
লোনমেলার আমন্ত্রণ পত্র পেয়ে যারা না বলেন তাঁরা অতি দ্রুত সে বাসনা ব্যক্ত করেন। যারা সময় নেন বা প্রশ্ন করেন তাঁরাই আমাদের ভরসা। হামবুর্গের ফেরাইনস উনড ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক সেরকম একটি। নানান প্রশ্নে জর্জরিত করলে পরে আর কাগজ না পাঠিয়ে নিজেই গেলাম যতদূর সম্ভব সংশয় মোচন করতে। শেষ অবদি দু মিলিয়ন ডলার দিলেন। একদিন টেলিফোন পেলাম বোখুম থেকে, ওয়েস্টফালেন ব্যাঙ্কের পিটার থিল। ট্রেড ফাইনান্স জগতে বিশেষ পরিচয় ছিল, এখানে ওখানে নানান রিসেপশনে দেখা হতো। সম্পূর্ণ আন্দাজে সেখানেও ঢিল ছুঁড়ি, আমার সই করা আবেদনপত্র। সেই পিটার ফোন করে বলল, “আমরা কি একটি ছোট্ট ডলার সংখ্যা দিয়ে তোমাদের ক্লাবে ঢুকতে পারি? দু মিলিয়ন!” ভিক্ষের চাল আবার কাঁড়া না আকাঁড়া! বললাম অবশ্যই পারো, কিন্তু তোমার ব্যাঙ্কের মাতা ড্রেসনার তো না জানিয়েছে। পিটার একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে বলল, তারা আমাদের বড়ো শেয়ারহোল্ডার কিন্তু ক্রেডিট ডিসিশনে সব সময় হস্তক্ষেপ করে না, সেটা জানিয়ে রাখি!
ইতালি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, লুকসেমবুরগের কোনো ব্যাঙ্ক সমর্থন বা অর্থ দিলেন না। বন্ধুবর্গ শুভেচ্ছা জানালেন।
দিন কেটে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। চল্লিশ লক্ষ ডলার মাত্র জুটেছে।
জীবন বিস্ময়ে ভরা। চমকের জুড়ি নেই! নমুনা পেলাম দ্বিতীয় সপ্তাহে।
সেকালে তিনটি বৃহৎ সুইস ব্যাঙ্ক ছিল (এখন দুটি)। সুইস ব্যাঙ্ক কর্পোরেশন ও ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইজারল্যান্ড, দুজনেই নিরাশ করলেন, সে সংবাদ এলো খোদ জুরিখ থেকে। নীতিগত ভাবে আমি কখনো ইউরোপীয় ব্যাঙ্কের লন্ডন শাখায় আমন্ত্রণ পাঠাতাম না, তারা তো পোস্ট অফিস মাত্র, আমাদের কাছ থেকে যা পাবে সেটা পাঠাবে আপন দেশের অফিসে। তাই আমাদের বার্তা যেতো সরাসরি হেড অফিসে, তাঁদের তো নিজেই চিনি! ক্রেদি সুইসের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করেছিলাম, আমাদের আমন্ত্রণ গিয়েছিল তাদের লন্ডন অফিসে, জুরিখে নয়। কারণ আমি সেখানে কাউকে জানতাম। সে যথারীতি তাদের বড়ো অফিসে কাগজ পত্র পাঠিয়ে তদবির তদারক করেছে, কিন্তু শেষ অবধি জুরিখ নিরাশ করল।
একে একে নিভিছে দেউটি।
ক্রেদি সুইসের জুরিখ অফিসে এক দোসর ছিলেন। কোনো ব্যাঙ্ক একবার না বললে পিছনের দরোজা দিয়ে আবার সেখানে উঁকিঝুঁকি দেওয়াটা বেয়াদপি বিবেচিত হয়। তবে বিপাকে পড়লে আদব কায়দা চুলোয় যায়। রেনেকে চিনতাম, পিটার থিলের মতো সেও ট্রেড ফাইনান্সের লোক। লন্ডন এবং জুরিখে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে, উত্তর জার্মানির কীল শহরে লান্দেসবাঙ্ক কীলের সৌজন্যে আয়োজিত বাৎসরিক নৌ সফরে (জাহাজের নাম মেরকুর, তার গল্প আমার এই ইউরোপ এখন বইয়ে ) তার সঙ্গে বেশ খানিক সময় কাটিয়েছিলাম। ফোনে একদিন কিছু আজেবাজে গল্পগুজব করার পরে রেনে নিজেই জানতে চাইল, আমি আর কোন উড়ো ব্যবসা ধরেছি। বললাম হাঙ্গেরি। তোমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম, না বলেছ! রেনে বললে, হাঙ্গেরি? বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক? কে না বলেছে? নাম জানাতে হলো। আমাদের লন্ডনের বন্ধুটির সমর্থনে জানালাম সে হয়ত ক্রেদি সুইসে ঠিক লোকের কাছে পৌঁছুতে পারেনি, তাই মঞ্জুর হয় নি। রেনে জিজ্ঞেস করলে কতটা সময় দিতে পারো?
কি জবাব দেব? সত্যি কথা এই যে কাল অন্তহীন! রেনে প্রতিশ্রুতি দিলো এক সপ্তাহের মধ্যে জবাব পাবে। পেলাম। ক্রেদি সুইস দিলো সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলার।
অস্ট্রিয়ানরা আমার সকল দুঃখের সাথি (পোল্যান্ড অধ্যায় দ্রষ্টব্য)। ভিয়েনার ক্রেডিটআনসটালট বাঙ্কফেরাইনের মিকলস পালফি ফোন করে জানালে, টেলেক্স পরে পাবে, আপাতত জানিয়ে রাখি আমার বস মিখায়েল নয়মায়ার এই মাত্র ক্রেডিট কমিটি থেকে বেরিয়ে জানিয়েছেন, গেনেমিগট (অ্যাপ্রুভড), সাড়ে সাত মিলিয়ন ডলার! অস্ট্রিয়া এবং সে দেশের অনেক ব্যাঙ্কারের কাছে আমি আজীবন কৃতজ্ঞ– সে গল্পের শেষ নেই।
ইতিহাসের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের যোগ খুঁজে পেয়েছি অনেক বার, ভিয়েনার শোয়েখাত বিমান বন্দর হতে গাড়ি করে বেরুলেই চোখে পড়ে অটোবানের সাইন বোর্ড– এইদিকে প্রাগ, ব্রাতিস্লাভা, ওই দিকে বুদাপেস্ট, লুবলিয়ানা, জাগ্রেব; বলকান, হাঙ্গেরি, ইউক্রেন-অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুবা, মনসব। আজ তারা আলাদা স্বাধীন দেশ বটে কিন্তু ভিয়েনা তাদের আপনজন মনে করে। কমিউনিস্ট-উত্তর যুগে পূর্ব ইউরোপে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের ঋণে অংশ নেওয়াটা তাদের প্রথম অভিক্ষেপ ছিল- আজ অস্ট্রিয়ান ব্যাঙ্কের শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে আছে তাদের প্রাচীন সাম্রাজ্যের আনাচে কানাচে, বসনিয়া ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, সার্বিয়া, রোমানিয়া, হাঙ্গেরি। দুর্বিনীত হতে দ্বিধা নেই, অহংকারের সঙ্গে বলতে পারি ওয়াল স্ট্রিটের ডেস্কে বা হোয়ারটনের এম বি এ ক্লাসে এসব পড়ানো হয় না– সেখানে শেখানো হয় মার্কেট রিড, প্রাইস ডিসকভারি, কম্পেয়ারেবল। ভাগ্যে আমি এ সব কিছুই শিখে মাঠে নামি নি।
প্যারিসে বি এফ সি ই (বঁক ফ্রঁসে দু কমেরস দে এক্সতেরিওর, সরকারি মালিকানায়) নামের একটি ব্যাঙ্ক ছিল। অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিলিত হয়ে বর্তমানে নাটেকসিস নামে পরিচিত। সে ব্যাঙ্কে আমার বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল একাধিক অসাধারণ মানুষের সঙ্গে। তাদের মধ্যে বরণীয় নাম মিশেল শাতেলাঁ। আমার চেয়ে বয়েসে অনেকটাই বড়ো। এক সময়ে ব্যাঙ্কের হয়ে দক্ষিণ আমেরিকা পশ্চিম আফ্রিকা এমনকি পূর্ব ইউরোপের তদারক করেছেন। বিদ্বান মানুষ, অসাধারণ পরিশীলিত বাচন, তথ্যের ভাণ্ডারী, তিনি আমার প্যারিসের সিধু জ্যাঠা। সেই জ্ঞানের সাগরে সঞ্চিত মহার্ঘ্য রত্ন বণ্টনে মিশেলের কোন দ্বিধা ছিল না, তাও আবার চোস্ত ইংরেজিতে। প্যারিসে রু সাঁ দমিনিকে তাঁর অফিসে অনেক সময় কেটেছে গল্প গুজবে। প্রচলিত প্রথা মাফিক মিটিং রুমে দেখা দিতেন না। সিধে তাঁর অফিসে নিয়ে গেছেন, বাইরে বসা সহকর্মীদের আলাপ পরিচয় করিয়েছেন নিতান্ত বন্ধুর মতো। প্রতিটি অধিবেশন ছিল আমার ক্লাস রুমের শিক্ষা।
বেশ কয়েকদিন কেটে গেছে। মিশেলের ব্যাঙ্ক লোন মেলার নিমন্ত্রণ পেয়েছে কিন্তু হ্যাঁ বা না কিছুই বলছে না দেখে তাঁকে ফোন করে একদিন প্যারিস গেলাম। আবার সেই রু সাঁ দমিনিক। আঁভালিদের (Invalides) ঠিক পিছনে, তৃতীয় আলেকসান্দ্র সেতু থেকে হাঁটা পথ। ব্যাঙ্কের সঙ্গে লাগোয়া একটা বাড়ি, ফরাসিতে তার নাম আউস পার্টিকুলের। কোনো কালে ধনবানের বাসভবন ছিল। তার সঙ্গে লাগোয়া একটি সবুজ লন, মনে হতো কোনো ব্যারন বা ডিউকের বৈঠকখানার দুয়োরে হাজির হয়েছি।
এবার তাঁর অফিসে নয়, মিশেল নিয়ে গেলেন সেই আউস পার্টিকুলেরের একতলায়। বিশাল কক্ষে আমরা দুজন। সামনে লন। এ কথা সে কথার পরে মিশেল বললেন তিনি বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের ঋণে যোগ দিতে আগ্রহী তবে তাঁর ব্যাঙ্কের জন্য কিছু অতিরিক্ত ব্যবসা চাই। তারা কি তাদের ফরাসি ফ্রাঁ অ্যাকাউন্ট খুলবে বি এফ সি ই তে? দেখব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফিরলাম। চমৎকার রোদ উঠেছে আঁভালিদের সামনে হতে নেপোলিয়নকে শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম পঁ আলেকসান্দ্র (রাশিয়ান জার তৃতীয় আলেকসান্দারের স্মরণে) পার হয়ে প্লাস দে লা কনকর্ড। প্যারিসে হাঁটতে আমার বড়ো ভালো লাগে। মনে হয় যেন একটা ফিল্মের সেটের ভেতরে হাঁটছি! মার্চ এপ্রিলের প্যারিস অপরূপ, গাছে সবে সবুজ পাতা এসেছে, মন ভালো হয়ে যায়।
ইস্তভানের সঙ্গে কাল কথা বলে নেবো।
বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের ফরাসি ফ্রাঁ অ্যাকাউন্ট ছিল সোসিয়েতে জেনেরাল, ক্রেদি লিওনে এবং বি এন পিতে। তারা রাজি হল তিনটে ব্যাঙ্কে ছড়িয়ে ছিটিয়ে না রেখে সেটিকে বি এফ সি ই ব্যাঙ্কে কেন্দ্রীভূত করতে। মিশেল তাঁর কথা রাখলেন। পাঁচ মিলিয়ন ডলার সহ তিনি আমাদের সঙ্গ দিলেন।
বাজারে নেমে ছিলাম তিরিশ মিলিয়ন ডলারের খোঁজে। আমাদের তথাকথিত তিন সপ্তাহের মেয়াদ কবে শেষ হয়ে গেছে- আমাদের ভাঁড়ারে ততদিনে জুটেছে ছত্রিশ মিলিয়ন। আমরা অত্যন্ত হৃষ্ট মনে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের কাছে জানতে চাইলাম তাঁরা এই বাড়তি ডলারটুকু নিয়ে আমাদের কৃতার্থ করবেন কিনা। তাঁরা দু দিন ভাববার সময় নিলেন।
বিস্ময়ের কোনো শেষ নেই।
ঋণের পরিমাণ বাড়াবে কিনা সে বিষয় নিয়ে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের বোর্ড চিন্তন শিবিরে গেছে। এমন সময় লন্ডন ফরফাইটিং কোম্পানি নামে লন্ডনের এক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক (তারা হাঁ বা না কিছুই বলেনি এতদিন) জানতে চাইল আমাদের ডিল কেমন যাচ্ছে। এই প্রকার প্রশ্নের উত্তরে ডাহা মিথ্যে বলাটাই রীতি। ভাঁড়ে মা ভবানী তবু বলতে হয়- আরে দারুণ চলছে। যতটা তুলতে বাজারে নেমেছিলাম তার চেয়ে বেশি এসেছে।। তোমরা বড়ো দেরি করে ফেললে ভাই। এখনো মঞ্জুরি দিলে না! খাতা বন্ধ হলো বলে!
ফোনটা করছিল ক্রিস রজারস। নিতান্ত বন্ধু লোক। পানশালায় কিছু সন্ধ্যা কেটেছে তার সাহচর্যে- এমনকি তাদের দুই মালিক স্টাথিস এবং জ্যাকের সঙ্গেও। স্টাথিসের উইম্বলডনের বাড়ির সুইমিং পুলের পাশে আরাম কেদারায় বসে স্টাথিস ও ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে বিয়ার পান করেছি। একবার একটি কলাম্বিয়ান লোন নিয়ে তাদের ব্যাঙ্ক টাল বাহানা করে চলেছে এমন সময় এক রিসেপশনে স্টাথিসের সঙ্গে দেখা- তিনি বললেন খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না, ইউ হ্যাভ টু টুইস্ট মাই আরম টু গেট অ্যাপ্রুভাল! আমি সবলে তার ডান হাতটা খানিক মুচড়ে দিয়ে বললাম, সি, আই অ্যাম টুইসটিং ইওর আর্ম! ব্যাংকো দে কলুম্বিয়ার ডিলে সে ব্যাঙ্ক দশ মিলিয়ন মঞ্জুর করে।
ক্রিসকে বললাম সত্যি কথা এই যে আমাদের ইনিশিয়াল অফারিং থেকে ছ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত উঠেছে। ক্রিস বললে আমরা দশ মিলিয়নের মঞ্জুরি পেয়ে গেছি। আমি বললাম বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক তাদের প্রাথমিক চাহিদা, সেই তিরিশ মিলিয়নের বেশি নেবে কিনা, তাদের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক রাজি হবে কিনা সেটা জানতে হয়। যদি না নেয় তাহলে সবার অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ কমাতে হবে। ক্রিস পরদিন তাদের মঞ্জুরির চিঠি পাঠাল– দশ মিলিয়ন!
ইস্তভান জানালেন তাঁদের বোর্ড ঋণের পরিমাণ বাড়ানোয় সম্মতি দিয়েছেন।
কত তুলেছি আমরা? বলতেই হল সেটা একটা বেজোড় সংখ্যা– ছেচল্লিশ মিলিয়ন ডলার। তাঁরা সেই মর্মে সই করতে রাজি- আমাদের ভিক্ষের ভাঁড়ে যা জুটেছে সবটাই নেওয়া যেতে পারে। ক্রিসকে জানালাম। ক্রিস বললে তাহলে লোন সাইজ ৪৬ মিলিয়ন (৪ কোটি ৬০ লক্ষ)? সেটা একটা বিশ্রী সংখ্যা। আমরা না হয় আরও ৪ মিলিয়ন (৪০ লক্ষ) ডলার বেশি নেবো। সব সমেত ৫০ মিলিয়ন (পাঁচ কোটি) ডলার করে ফেলো, আর সাইনিং অনুষ্ঠান যেন জব্বর হয়!
কদিন আগে রাতের ঘুম ছিলোনা তিরিশ মিলিয়ন ডলার জুটবে কিনা। এখন ছপ্পর ফাড়কে?
বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের পঞ্চাশ মিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক ঋণ স্বাক্ষরিত হয় ১৩ই মে, শুক্কুরবার। কে বলে ১৩ তারিখ শুক্রবার অশুভ? পূর্ব ইউরোপের প্রথম গোষ্ঠীবদ্ধ আন্তর্জাতিক ঋণ বা সিন্ডিকেটেড লোন স্বাক্ষরিত হল সেদিন। এর পরে অসংখ্য ঋণ দেয়া নেয়া হবে- কমিউনিস্ট আমলে যাদের বিদেশি ঋণ ছিল শূন্য তাদের আমরা ডুবিয়ে দেবো ধারের সাগরে!
সেদিন, সেই শুক্রবার আমরা কেউ কি জানতাম একটা দিগন্ত খুলে গেলো, ইতিহাস সৃষ্টি হলো।
সব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে আসতে পারেন নি। সুন্দর রৌদ্রালোকিত দিন, হাঙ্গেরিয়ান পার্লামেন্ট থেকে এলিসাবেথ ব্রিজ, চেন ব্রিজ, বুদার পাহাড়, রাজপ্রাসাদ ঝলমল করছে। আমরা একটি দ্বিতল বজরা ভাড়া করেছিলাম। বজরা চালককে বলা ছিল এলিসাবেথ সেতু (সম্রাট ফ্রান্তস ইওসেফের পত্নী, সিসি নামে পরিচিত, একাধিক ফিল্ম আছে) আর পার্লামেন্ট ভবনের মধ্যে পরিক্রমা করতে। বজরার দোতলায় লন্ডনের আইনি সংস্থা ক্লিফোরড চান্সের ক্যাজ সাত বান্ডিল ঋণ চুক্তির কাগজ সই করাচ্ছে। কেউ কেউ ঠাট্টা করলেন, নৌকোর দুলুনিতে সই একে বেঁকে গেল বুঝি! অস্ট্রিয়ান ব্যাংকার মিকলস পালফিকে (স্লোভাকিয়ার বিখ্যাত পালফি পরিবারের সন্তান যাঁদের পৈত্রিক বাড়িতে দুশ বছর আগে মোৎসার্ট পিয়ানো বাজিয়েছিলেন, ব্রাতিস্লাভা পর্ব পশ্য!) বলেছিলাম যাই বলো, ভিয়েনার চেয়ে বুদাপেস্ট অনেক সুন্দর। মিকলস হেসে বলে, এ প্রসঙ্গ তুলে তুমি অস্ট্রিয়ানদের রাগাতে পারবে না, এ শহরের বেশির ভাগ আমাদের বানানো!
পরিশিষ্ট
এক
ট্রেড ফাইনান্স ব্যবসার হাঙ্গেরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকটি প্রতিষ্ঠানের দুই কর্তা আত্তিলা বোগারু এবং মারটিন আশারসটের সঙ্গে সম্যক পরিচয় ছিল। তার নাম হাঙ্গেরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (এইচ আই বি)। তাদের পক্ষে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের দশ মিলিয়ন ডলার রিস্ক নেওয়া শক্ত হবে না। আত্তিলা ও মারটিন তৎক্ষণাৎ আমাদের ঋণে যোগ দিতে রাজি কিন্তু আমার লক্ষ্য সেটা নয়, এতো তাড়াতাড়ি নয়! সই সাবুদের দিনে অ্যারেঞ্জার হিসেবে থাকবে সিটি ব্যাঙ্কের নাম, দশ মিলিয়ন ডলার সহ। তবে ঋণ বেচার আগাম একটা চুক্তি করতে চাই, যাকে বলে প্রি পারচেজ কমিটমেনট- লোনের কাগজি কারবাই সম্পূর্ণ হলে সিটি ব্যাঙ্কের দশ মিলিয়ন এইচ আই বি কিনে নেবে, ফি সহ। সই করার দিনে তারা থাকবে গুমনাম, গোপন ব্যাঙ্কটি রবে গোপনে। মহোৎসবের দিনে সিটি ব্যাঙ্কের ডঙ্কা বাজবে। তাঁরা সব শর্ত মেনে নিয়ে এক মাসের মধ্যেই আমাদের ভারমুক্ত করলেন। ক্রেডিট গুরুদের সামনে দারুণ বাহবা নিয়েছি আমরা, “দেখলেন তো? তিন মাস লাগলো না, এক মাসের মধ্যেই বেচে ফেলেছি, যা বলি তাই করি!” এক্ষেত্রে সিটি ব্যাঙ্কের কিছু রিস্ক ফ্রি ইনকাম জুটল– দশ মিলিয়ন ডলারের ওপরে ছ পারসেন্ট সুদ এক মাসে পঞ্চাশ হাজার ডলার।
বিলেত আমেরিকা মুম্বাই সিঙ্গাপুরের কোন ব্যাংকার আমার এ লেখা পড়বেন না জানি। বিবেকের তাড়নায় একটা স্বীকারোক্তি করা প্রয়োজন– কোনা লোন বাজারে আসার আগেই পাবলিককে না জানিয়ে সেটা সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ বেচে দেওয়ার নাম ফ্রন্ট রানিং। এটিকে ভাল চোখে দেখা হয় না, জানাজানি হলে দুর্নাম। আজ সেই গর্হিত কর্মের বয়ানটি করে গেলাম। বিশ বছরে দুটি ব্যাঙ্কের হয়ে একবার মাত্র এমন ঋণের আয়োজন করেছিলাম যেখানে আমাদের ব্যাঙ্ক এক পয়সা ধারের খাতায় রাখেনি। সবটাই আগাম বেচেছি।
দুই
১৯৯৪ সালের শেষে বিখ্যাত ইউরোমানি পত্রিকা বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ককে হাঙ্গেরির ১৯৯৪ সালের শ্রেষ্ঠ ব্যাঙ্কের সম্মান দেয়।
তিন
এক বছর বাদে আমেরিকার প্রখ্যাত জি ই (জেনারেল ইলেকট্রিক) ক্যাপিটাল স্বনামধন্য জ্যাক ওয়েলশের নেতৃত্বে বুদাপেস্ত ব্যাঙ্কের ৩৩% অধিগ্রহণ করে। জ্যাক ওয়েলশের আত্মজীবনী, তাঁর প্রথম লেখা, স্ট্রেট ফ্রম দি গাট বইয়ে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের বিশেষ উল্লেখ করেছেন। কালে কালে জি ই ক্যাপিটাল একটি বিশাল মহীরুহের আকার ধারণ করে– ২০১৪ নাগাদ তাদের ৪০টি দেশে শাখা প্রশাখা এবং ৩৫,০০০ কর্মী, আমেরিকার পঞ্চম বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং সংস্থা! ক্রমশ তাঁদের কর্তা ব্যক্তিদের মাথায় এলো জেনারেল ইলেকট্রিকের মূল ব্যবসা এঞ্জিনিয়ারিং, ব্যাঙ্কিং বা ফাইনান্স নয়। একথা ওয়েলশ নিজেই স্বীকার করেন, যখন আমরা এমন কিছু ধান্দা ধরেছি যা আমি নিজেই বুঝি নি, আমরা সমস্যা সৃষ্টি করেছি (হোয়েন উই গট ইনটু ওয়ান আই ডিড নট আন্ডারস্ট্যান্ড, উই স্ক্রুড ইট আপ)। এই শতকে নতুন সি ই ও জেফ ইমেলট জি ই ক্যাপিটালের অংশগুলি বিক্রি শুরু করেন। ২০১৪ সালে জি ই ক্যাপিটাল বুদাপেস্ট ব্যাঙ্কের শেয়ার বেচে দেয় হাঙ্গেরিয়ান সরকারকে। ২০২২ সালে হাঙ্গেরিয়ান ফরেন ট্রেড ব্যাঙ্কের (এম কে বি) সঙ্গে মিলে যাওয়ার ফলে বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক নিজেই ইতিহাস হয়ে গেছে, সে নামটি অবলুপ্ত। শেষ বার বুদাপেস্ট গিয়ে একটু মন খারাপ হল।
বাবা আমার প্রথম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন পাইকপাড়ার ইউনাইটেড ব্যাঙ্কে (খাতা নম্বর ১৬২০!) বিদেশে কিঞ্চিত শিক্ষা লাভ করেছি জার্মানির ড্রেসনার ব্যাঙ্কে, প্রথম যে বিদেশি ব্যাঙ্কে কর্ম করি তার নাম কন্টিনেন্টাল ব্যাঙ্ক, পূর্ব ইউরোপের প্রথম লোন সিন্ডিকেশন বুদাপেস্ট ব্যাঙ্ক– আজ এই চারটির মধ্যে কারোর নামের বোর্ড দুনিয়ার কোথাও ঝোলে না।
বাহান্ন বছর আগে আমার মতো এক অর্বাচীনকে তাদের ঐতিহ্যমণ্ডিত হর্ম্য শোভিত কর্মশালায় প্রবেশের সুযোগ দিয়েছিল যে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া, আমার আলমা মাটের, তারা আজও স্বনামে স্বমহিমায় বিরাজমান।
সাম থিংস নেভার চেঞ্জ।
Budapest Bank
Three Year Bullet Loan: Initial Offering USD 30,000,000.00
Upped and signed for USD 50,000,000.00
13 May 1994
Final Bank List
Citibank International plc, London, Sole Arranger, Agent$10,000,000
London Forfaiting Company, London $14,000,000
Creditanstalt-Bankverein, Vienna $ 7,500,000
Credit Suisse, Zürich $ 7,500,000
BFCE, Paris $ 5,000,000
Vereins-und-West Bank Hamburg $. 2,000,000
Westfalen Bank, Bochum $ 2,000,000
Deutsch-Ungarische Bank Frankfurt $ 2,000,000
সেদিনের সাথীরা
লন্ডন ফরফেটিঙের মালিকানা বদলেছে, ক্রেডিটআনসটালট বাঙ্কফেরাইন এখন বাঙ্ক অস্ট্রিয়া, ক্রেদি সুইস নাম হারিয়ে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ সুইজারল্যান্ড, বি এফ সি ই এখন নাটেকসিস, ফেরাইন্স উনড ওয়েস্ট এবং ওয়েস্টফালেন ব্যাঙ্ক মিলে গেছে ইতালিয়ান ইউনিক্রেডিটের সঙ্গে, হাঙ্গেরিয়ান ইন্টারন্যাশনাল এবং ডয়েচ- উঙ্গারিশে ব্যাঙ্ক অস্তিত্ববিহীন
অনেক দুর্দশা কাটিয়ে ১৮১২ সালে প্রতিষ্ঠিত সিটিব্যাঙ্ক টিকে আছে।