জলপথে সোনার ভারতবর্ষে পৌঁছনোর শর্টকাট খুঁজতে কলম্বাস পশ্চিম মুখে জাহাজ ভাসানোর এক দশক আগেই পর্তুগিজরা পালতোলা জাহাজ ও মাঝি মাল্লা নিয়ে সেই একই দেশের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন পুব মুখে; ইতিহাস ও ভূগোল প্রমাণ করেছে সেটাই ছিল সঠিক নিশানা। কলম্বাস তাঁর ভারত অভিযানের ব্যয় বহন করে বিশাল সাম্রাজ্যের মালিক হবার প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন পর্তুগালের রাজা জোয়াওঁর কাছেই – কিন্তু রাজা বললেন,আমরা ভারতে যাব পুব দিয়ে। তবে তাঁরা অঙ্ক কষে এটাও বুঝেছিলেন সিধে যাওয়া যাবে না; এই জলযাত্রার পথে বাধা একটি বিশাল মহাদেশ, আফ্রিকা- ভারতে যেতে গেলে সেই মহাদেশের পশ্চিম উপকূল ধরে জাহাজ বেয়ে ক্রমশ দক্ষিণে যেতে হবে তারপরে উত্তর পূর্বে।
১৪৮২ সালে পর্তুগিজ নাবিক দিয়েগো সাঁও আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল ধরে জাহাজ বেয়ে চলেছেন ভারতের সন্ধানে। লিসবন থেকে ধ্রুবতারা পথ দেখিয়েছে- নৌ চালনায় অভ্রান্ত থেকেছেন দিয়েগো। রাত্রি-দিন বয়ে যায়। আগস্ট মাসের এক সন্ধ্যের আকাশের দিকে তাকিয়ে দিয়েগো খুঁজে পেলেন না সেই উজ্জ্বল তারকা। চিরচেনা আকাশের তারকামণ্ডলীর অবস্থান গেল বদলে। দীর্ঘ নাবিকজীবনের সখাকে হারিয়ে দিয়েগো সাঁও ঈশ্বরকে স্মরণ করলেন। চাইলেন তাঁর করুণা ও নির্দেশ। পাঁচশো বছর আগে ইন্টারনেট বা জি পি এস ছিল না- আলেক্সা অথবা সিরির কাছেও জবাব পাওয়া সম্ভব ছিল না।
কোথায় হারালো সে?
সেই সন্ধ্যায় আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে কঙ্গো নদীর মোহানায় এসে দিয়েগো সাঁও-এর জাহাজ উত্তর গোলার্ধ ছেড়ে দক্ষিণ গোলার্ধে প্রবেশ করল- এই প্রথম ইউরোপীয় অভিযাত্রী এতোটা দক্ষিণে এলেন। ধ্রুবতারা থেকে গেছে উত্তর গোলার্ধে, সপ্তর্ষির স্থান নিয়েছে দক্ষিণের ত্রুশ- সাদার্ন ক্রস।
অন্য গোলার্ধ, অন্য আকাশ, অন্য হিসেব।
গল্পটা জানা ছিল।
১৯৯৫ সাল- ভেঙেছে দুয়ার, খুলেছে ইউরোপের পূর্ব দিগন্ত! পশ্চিম ইউরোপে ব্যবসায়ের অবস্থা কঠিন - সেকালের পর্তুগিজদের মতো বেরিয়ে পড়েছি সেই দিকে, তাঁদের মতো আমরাও খুঁজছি নতুন বাজার। প্রতিটি যাত্রা বাড়িয়ে দেয় আবিষ্কারের নেশা, আরও পুবে চলো যাই।
যাব ব্রাতিস্লাভা। স্লোভাকিয়া দেশটি সবে আপন পতাকা উড়িয়েছে; আগে সে দেশে যাওয়ার পথ ছিল পুরনো চেকোস্লোভাকিয়ার প্রাগ দিয়ে (১৯৭৭ সালে প্রথম ইউরোপে পৌঁছে সেখানে প্লেন বদল করেছি)। রাজধানী হলেও ব্রাতিস্লাভার বিমানবন্দর আকারে অতি ক্ষুদ্র। ১৯৯৬ সালে ব্রাতিস্লাভা এয়ারপোর্টে নেমে কোন ট্যাক্সি পাই নি। আরেকজনের সঙ্গে কোনমতে বাবা বাছা করে ভাগের গাড়ি চড়ে শহরে গিয়েছি। লন্ডন থেকে কোন প্লেন সরাসরি সেখানে যায় না- ইউরোপের কোথাও প্লেন বদলাতে হয়। ভিয়েনা-ব্রাতিস্লাভার ফ্লাইট কিছুকাল চালু ছিল কিন্তু মাত্র দশ মিনিটের এই উড়ানে খরচা পোষায় না বলে সেটি বাতিল হয়ে গেছে। তার চেয়ে সহজ তাদের প্রাক্তন প্রভুর দেশ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা শহরে গিয়ে গাড়ি, নৌকো (স্পিড বোট) বা ট্রেন ধরা। সময় লাগে বড়জোর এক ঘণ্টা। দূরত্ব মেরে কেটে ৮০ কিমি। সীমান্ত খুলে গেছে। ব্রিটিশ পাসপোর্ট দেখালেই অবারিত দ্বার; বড়জোর একটা ছাপ মেরে দেবে।
প্রায় সাড়ে চার দশক পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট দেশগুলির সীমান্ত ছিল কাঁটাতার, ওয়াচ টাওয়ার, বন্দুকধারী পুলিশ দিয়ে সাজানো মানুষ ভরে রাখার এক পেল্লায় কারখানা। এর সঙ্গে প্রাথমিক পরিচয় অস্ট্রিয়া/স্লোভাকিয়া (সে আমলে চেকোস্লোভাকিয়া) সীমান্তে, হোহেনআউ-এর কাছে। সে সব যন্ত্রপাতি সরানো শুরু হয়েছে এখন। তবে বেশ বোঝা যায় কি জটিল ছিল বন্ধনের বেড়াজাল। তবে এই ন’য়ের দশকের ইউরোপের পুবে আইনত যদিও দেশের সীমানা নির্দিষ্ট করা আছে; কাঁটাতার, ওয়াচ টাওয়ার অদৃশ্য। পুলিশ আছে, হাতে অস্ত্র নেই। তাই দেশ পার হওয়াটা ওই খানিকটা বাড়ির দরোজার চৌকাঠ পার হবার মতো। দ্বাররক্ষীকে আপন পরিচিতি এবং সরকারি সম্মতিপত্র দেখালেই ইদিক থেকে উদিকে যাওয়া যায়।
ভিয়েনা ছেড়ে পার হয়ে যাচ্ছি ছোট গ্রাম, শহর। কানে ব্রিটিশ মোবাইল টেলিফোন লাগানো- অফিসের কাজ চলছে ফোনে। এক বাক্যালাপ শেষ হয় তো আরেকটা শুরু হয়! ফোন না এলে মনে হয় আমার প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে? আমাকে ছাড়া তো অফিস চলতে পারে না!
হঠাৎ উটের গ্রীবার মতো এক নৈঃশব্দ্য আমাকে গ্রাস করে! আবার ডায়াল করি, কোন সাড়াশব্দ পাই না। বিভ্রান্তি দেখে ড্রাইভার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “আমরা অস্ট্রিয়ার সীমারেখা পার হলাম। উইর জিনড ইন ডের স্লোভাকাই। আমরা স্লোভাকিয়াতে ঢুকে পড়েছি।”
গাড়ি না হয় ঢুকতে দিলো, কিন্তু পশ্চিমি দূরভাষ এখনো নিষিদ্ধ? অস্ট্রিয়ান ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম – ফোন কেটে গেল কেন? ডাঙ্ক ডেম আইসারনেন ভোরহাঙ? লৌহ যবনিকা কি নেমে এলো আবার?
উত্তরে তিনি মৃদু হেসে বললেন, না, মাইন হের। এ দেশে মোবাইল টেলিফোন ব্যবস্থা সবে হামাগুড়ি দিতে শিখছে, আপনাদের মোবাইল ফোন এখানে অচল। ব্রাতিস্লাভা না পৌঁছুনো অবদি আপনি কোন রকমের সিগনালও হয়তো পাবেন না।
ঠিক এই সময়ে আমি বলতাম কোন বিষয়ে আমেরিকা, ভারত ও রোমানিয়ার মধ্যে একটা ভীষণ মিল? উত্তর – তিনটে দেশেই আমার ব্রিটিশ মোবাইল অচল।
এই মহাকাশে পরিব্যাপ্ত মোবাইল টেলিফোনের তরঙ্গ কি নিখুঁত ভাবে দুই দেশের সীমান্তটি চিনে নেয় – সেই রেখা পেরুনো দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে টুপ করে টেলিফোনের আলাপ থেমে যায়। এই খোলা মাঠের মাঝে এই উন্মুক্ত আকাশে বাতাসে কেমন করে অস্ট্রিয়ান টেলিকমের শব্দ লহরী মেপে নেয় তার আপন সরহদ্দ?
এই কি সেই দিয়েগো সাঁও মুহূর্ত? কঙ্গোর মোহানায় অদৃশ্য ধ্রুবতারা?
তারপর একদিন
সিটি ব্যাঙ্ক ব্রাতিস্লাভা ব্রাঞ্চ খোলার সমারোহে সি ই ও ডেভিড ফ্রান্সিস জনান্তিকে আমাদের বলেন, খাদ্য নয়,বস্ত্র নয়, এ দেশের সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন উন্নত জনসংযোগ মাধ্যম। মাত্র এক বছর আগে ইন্টারনেট দেখা দিয়েছে, তবে সে শুধু সম্পন্ন মানুষদের জন্য। সাইবার কাফে অনেক দূর। পূর্ব ইউরোপ নিয়ে লন্ডনে এক মিটিঙে অস্ট্রিয়ান এরস্তে ব্যাঙ্কের রিচারড ডনেনবেরগ বলেছিলেন, স্লোভাকিয়ার ল্যান্ডলাইন খুব খারাপ; তার চেয়েও বড় সমস্যা চিঠি বা ডকুমেন্ট পাঠানো। ব্রাতিস্লাভা থেকে সাধারণ চিঠি সাত দিনে আশি কিলোমিটার দূরে ভিয়েনা পৌঁছোয়। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ স্লোভাকিয়াতে ভ্রাম্যমাণ অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন তাঁরা যেন পকেটে কিছু অস্ট্রিয়ান ডাকটিকিট রাখেন, জরুরি চিঠি বা ডকুমেন্ট নিকটবর্তী অস্ট্রিয়ান সীমান্ত পার হয়ে সেখানকার পোস্ট অফিস থেকে ভিয়েনা পাঠানোর কাজে লাগবে। দুশো কিলোমিটারের রাউনড ট্রিপ হলেও সময় বাঁচে। টাইম ইজ মানি।
অতএব চাই মোবাইল টেলিফোনি। যুগ বদলেছে, আজ দুশো মিটার অন্তর টেলিফোনের পোস্ট নয়, বেশ কিছু দূরে দূরে টাওয়ার বসাতে হয়! লেট স্টারটারের সুবিধে অনেক, পশ্চিমে টেকনোলজি সুলভ; স্লোভাকিয়াতে বিনিয়োগের অবকাশ বিপুল।
সেই যে ডেভিড আমাদের মাথায় টেলিকম ঢুকিয়ে দিলেন, আমার আমেরিকান/ ইতালিয়ান সহকর্মী উইলিয়াম রোকা (প্রাগে অধিষ্ঠিত/চেক পত্নী) স্লোভাক টেলিকমের দুয়োরে অনেক ঘোরাঘুরি করে, জুতোর সুকতলা ক্ষইয়ে, আরও কিছু ইনভেস্টমেন্ট ব্যাকিং হাঙ্গরের মুখ থেকে বাঁচিয়ে স্লোভাকিয়াতে আমাদের প্রথম বাণিজ্যিক ডিলটি নিয়ে আসে– লন্ডন থেকে আমরা অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে সেটি আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে স্লোভাক টেলিকম ও সিটি ব্যাঙ্কের মুখ উজ্জ্বল করি। এই অর্থবলে বলীয়ান হয়ে অতি দ্রুত স্লোভাক টেলিকম তাদের হাল ফেরায়, পশ্চিম ইউরোপের সভ্য ফোন কোম্পানির সভায় যোগদানের অধিকার অর্জন করে!
এখানে একটু ফাস্ট ফরওয়ার্ড করি –
দেড় বছর বাদে পূর্ব ইউরোপের ট্রেড ফাইনান্স বিভাগের নেত্রী ক্যারোলাইন ম্যাগিন একদিন বললেন স্লোভাক টেলিকম ডিলের কারণে আমাদের বেশ খানিকটা পরিচিতি বেড়েছে। সেটাকে কাজে লাগাতে চাই। তুমি পোল্যান্ডে বিদেশি বাণিজ্য বিষয়ে জ্ঞান বিতরণ করে এসেছো জানি; আমি স্লোভাকিয়া সহ কয়েকটি দেশে একটু বৃহত্তর অনুষ্ঠানের আয়োজন করছি; সেখানে তোমার বক্তিমের স্লট পাবে। এই সঙ্গে আমরা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স বিভাগের অধ্যাপক, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের পদস্থ আধিকারিক, চেম্বার অফ কমার্সের প্রধান এমনি সব লোকেদের নিয়ে সেমিনার করে সিটি ব্যাঙ্কের ঝাণ্ডা ওড়াব!
আমার নিজের বিভাগ থেকে কয়েক দিনের বিরতি পাওয়া শক্ত হয় নি; আসা যাওয়া থাকার খরচা ক্যারোলাইন দেবেন না, সেটা দেবেন আমার অন্নদাতা। তিনি অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে ভাবলেশহীন মুখে বলে দিলেন, 'ও দেশে বিয়ার শুনেছি খুব ভালো (বাৎসরিক বিয়ারপানের তালিকায় চেকরা নাম্বার ওয়ান, স্লোভাক টপ টেনের ভেতরে– মাথা পিছু ৭০ লিটার বছরে) কিন্তু সেই আনন্দ উপভোগের ফাঁকে একটু কাজ কর্মের চেষ্টা কোরো। ট্রাই টু ফাইনড এ ডিল।
আমার দীর্ঘ কর্মজীবনে এমন পোকার ফেস খুব কম দেখেছি!
বাড়ি এসে রোদিকাকে বললাম, বাকসো বাঁধো। এই শনিবার ব্রাতিস্লাভা যাবো, তবে উড়ে নয়, গাড়িতে! তোমাকে দিয়েগো সাঁও স্পট দেখাবো!
- কতক্ষণের ড্রাইভ?
- বারো ঘণ্টা ধরো, মাঝে চারটে দেশ।
- ম্যাপে রাস্তাটা দেখাবে?
- বরং মুখে বলি? ক্যালে থেকে আমরা ডান দিকের রাস্তা ধরি ফ্রান্সের গ্রামে যেতে; এবার বাঁ হাতে যাবো বেলজিয়াম, ব্রাসেলস লিয়েজ হয়ে আখেন, কলোনের পাশ কাটিয়ে ফ্রাঙ্কফুর্ট নুরেমবেরগ মিউনিক; ওয়েলসে ঢুকব অস্ট্রিয়া, দানিউব পেরিয়ে ভিয়েনা হয়ে ব্রাতিস্লাভা।
- বাথরুম ব্রেক বাদে যদি খাওয়ার জন্যে থামতে না চাও, স্যানডউইচ বেঁধে নেবো। মনে করে ট্যাঙ্কে তেল ভরে রেখো, পেট্রোল নয়, আমাদের নিনজায় ডিজেল লাগে।
আমার মতন একজন দিকশূন্য, উদ্ভ্রান্ত, সম্পূর্ণ বিচার বিবেচনাহীন মানুষ, আরব্য রজনীর এই শেষ খলিফার * পাশে তিরিশ বছর সে না দাঁড়িয়ে থাকলে কোথায় যে ভেসে যেতাম।
চারটে দেশ পেরিয়ে লন্ডন থেকে সিধে আমাদের নিনজা লাইসেন্স প্লেট ওলা গাড়িতে দুজনে ব্রাতিস্লাভা যাচ্ছি। আগের বারের গল্পটা তাকে বলেছিলাম। হোহেনআউ পৌঁছুনোর পথে সে নজর রাখছিল ফোনের দিকে। ততদিনে সীমান্তের ভীতি উৎপাদনকারী কল কব্জাগুলি সরানো হয়ে গেছে। কোনখানে যে সীমান্ত ছিল তাই বোঝা শক্ত। রাস্তার ধারে সাইন বোর্ডে লেখা আছে স্লোভেনস্কো। সেটি পার হলেই আমরা স্লোভাকিয়া ঢুকে পড়ি– উইর জিনড ইন ডের স্লোভাকাই! মোবাইলে সিগনাল দেখাচ্ছে! আমি বললাম একটা ফোন করো তোমার মাকে! কিন্তু এবারে মোবাইল টেলিফোনের শব্দ বিচ্ছিন্ন হল না। কোনো মন্ত্রবলে অস্ট্রিয়ান এ ওয়ান মোবাইলের সঙ্গে মিশে গেল স্লোভাক টেলিকমের বেতার তরঙ্গ – কোথায় যে শুরু কোথায় শেষ! পূর্ব পশ্চিমের শেষ অন্তরাল ঘুচে গেছে।
- এইখানে এসেই তোমার ফোনের সিগনাল কেটে গিয়েছিল? দিয়েগো সাঁও যেমন নর্থ স্টার হারিয়ে ফেলেন কঙ্গো নদীর মোহানায়?
- ঠিক তাই! রোমানিয়াতে তোমার মাকে বলো দেশ থেকে দেশান্তরে চলে এলাম, কথা বলতে বলতে অস্ট্রিয়া থেকে স্লোভাকিয়া!
আরেক বিস্ময় অপেক্ষা করছিল ব্রাতিস্লাভা শহরে।
পরের দিন, রোববার এই ক্যাথলিক দেশে প্রায় সর্বত্র দোকানের ঝাঁপ বন্ধ, কিছু কফি হাউস, বার ও ফুলের দোকান বাদে। পুরনো শহরের একটি কাফেতে বসেছি- আমাদের ঠিক উলটো দিকের টেবিলে দুই যুবক যুবতি। তাদের দুজনেরই হাতে মোবাইল ফোন। দুজন দুজনের উপস্থিতিকে যেন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কফির কাপ সামনে নিয়ে বসে কানে টেলিফোন লাগিয়ে আধ ঘণ্টা তারা বাক্যালাপ করে গেলো দূরের কোন দুই মানুষের সঙ্গে।
কতকাল আগে যাযাবর লিখেছিলেন - বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ!
একেই কি বলে সমাপতন? কো-ইনসিডেন্স?
ক্রমশ...