ক্ষমতাবলে যুবরাজ তাবৎ অস্ট্রিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক। তাঁকে একদিন সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফ বললেন, এবার একটু কাজকর্ম দেখো। বসনিয়াতে আমাদের ফৌজের তদারকি করে এসো। জুন মাসে ফ্রান্তস ফারদিনান্দ সোফিকে নিয়ে সফরে বেরিয়ে নানান শহরে, গঞ্জে বসনিয়ার সৈন্যবাহিনী পর্যবেক্ষণ আরম্ভ করেছেন। সে বড় সুখের ভ্রমণ—ভিয়েনার রাজ দরবারের কোনো মুরুব্বির বক্রোক্তি করার সুযোগ নেই, বসনিয়ার যেখানেই যাচ্ছেন, দু-জনে একসঙ্গে হাঁটছেন, একই গাড়িতে চড়ছেন – ভিয়েনায় সেটি অসম্ভব ছিল। ২৭শে জুন শনিবার কাটালেন সারায়েভোর অদূরে, ইলিদজায়। সেখানে আছে মাটি ফুঁড়ে আসা গরম জলের ফোয়ারা। এককালের রোমান শহর, জলে সালফারের প্রাচুর্যের জন্য তাদের অতি প্রিয় ছিল। আধুনিক শহরটি অটোমান সম্রাটদের বানানো। ইলিদজা শব্দটি এসেছে তুরকিক ইলিসা (উষ্ণ প্রস্রবণ) থেকে। সফরের শেষ দিনটায় তাঁরা যাবেন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো, একবেলার জন্যে। সফরসূচি দু-মাস আগেই বসনিশে পোস্ট কাগজে ছাপা হয়েছে —
রাজসফর (২৮ | ৬ | ১৯১৪)
০৯.৫০ | ইলিদজা থেকে রেল যোগে সারায়েভো স্টেশনে পদার্পণ – যুবরাজ ও যুবরানিকে নিয়ে সুরক্ষাবল সহ ছটি মোটরগাড়ি যাত্রা করবে পৌরসভা ভবন অভিমুখে |
১০.১০-১০.৩০ | সারায়েভো পৌরসভা পরিদর্শন। সংক্ষিপ্ত ভাষণ। |
১০.৪০-১১.৪০ | নতুন জাদুঘরের উন্মোচন |
দ্বিপ্রহর-১৪.০০ | গভর্নরের গৃহে মধ্যাহ্ন ভোজন। সারায়েভো স্টেশন হতে ভিয়েনার ট্রেন। |
সারায়েভো ট্রেন স্টেশন থেকে টাউন হল মাত্র চার কিলোমিটারের পথ, বিশ মিনিট লাগে (যাত্রাপথের ম্যাপটি দেখুন)। আজ রবিবার, অনেক পুলিশ ছুটিতে। তাই রাজদম্পতির সুরক্ষার জন্য রাস্তার দু-পাশে মোতায়েন হল মাত্র একশো কুড়ি জন পুলিশ। নিকটবর্তী ব্যারাকে সত্তর হাজার সৈন্য, কিন্তু তাদের পথে দাঁড় করালে নাগরিকদের মনে হতে পারে—বিদেশি অস্ট্রিয়ান রাজশক্তি তার পেশি প্রদর্শন করছে। তাই তাদের আর ডাকা হল না।
সেই সকালে অন্যত্র
সারায়েভো শহরে ‘তরুণ বসনিয়া’ নামের একটি সঙ্ঘের ছ-টি বসনিয়ান সার্ব তরুণের* কাছেও সেটি এক গভীর অর্থবহ, পবিত্র দিন—অটোমান শক্তির বিরুদ্ধে কসোভোর লড়াইতে শেষ সারবিয়ান রাজা লাজার নিহত হন—জুন ১৩৮৯। সার্বিয়া তার স্বাধীনতা হারায় পরবর্তী পাঁচশো বছরের জন্য। এই ১৯১৩ সালের বলকান যুদ্ধে অটোমানদের হারিয়ে স্লাভিক দেশ সার্বিয়া আবার একটি সার্বভৌম দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে—এবার সার্বিয়া চায় স্লাভ প্রতিবেশীদের নিয়ে এক বৃহত্তর রাষ্ট্র গড়তে। ২৮শে জুন তাই সারবিয়ান স্বাধীনতার, আশার প্রতীক। সেটি সন্ত ভিতুসের নামেও নামাঙ্কিত পবিত্র দিন। একটি স্লাভ রাষ্ট্র গড়ার পথে যে বাধা, তার নাম অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য—তুরস্কের অটোমান রাজার দাসত্ব কাটিয়ে সার্বিয়া স্বাধীন হয়েছে, বসনিয়ার সার্বরা এখন হাবসবুরগের দৌরাত্ম্য দূর করে সেই সংসারে যোগ দিতে চান। যখন জানা গেল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সম্রাটের প্রতিভূ ফ্রান্তস ফারদিনান্দ সারায়েভো সফরে আসছেন, এই তরুণ দল (পাঁচ জনের বয়েস কুড়ি পেরোয়নি) তাঁকে ধরাধাম ও রাজশক্তিকে বসনিয়া থেকে ফেরত পাঠাবার ছক কষলেন। অবশ্যই এর পিছনে আরও কিছু প্রাপ্তবয়স্ক সার্বিয়ান মানুষের সহায়তা ছিল: ‘কালো হাত’ নামক এক গুপ্ত চক্র বেলগ্রেড থেকে সার্বিয়ান সমর বাহিনীর পিস্তল সরবরাহ করে। কিন্তু মঞ্চে নামলেন এই ক-জন।
মুখোমুখি
ছ-টি মোটর গাড়ির যাত্রা চলল মিলিয়াকা নদীর পার বরাবর আপেল কাই দিয়ে (আজকের ওবানা কুলিনা বানা)। বিভিন্ন জায়গায় ‘তরুণ বসনিয়া’-র ছেলেরা মোতায়েন ছিলেন। মেহমেদবাসিচের হাতে ছিল পিস্তল—মস্তার কাফের সামনে তিনি রাজকীয় বাহন অতিক্রান্ত হতে দেখলেন—গুলি ছোঁড়ার সাহস হল না। চাবরিলোভিচ হাতে অস্ত্র নিয়ে স্ট্যাচু হয়ে রইলেন। চাবরিনোভিচের ওপরে বোমা ছোড়ার দায়িত্ব ছিল—সেটি তিনি ছুঁড়লেন রাজকীয় গাড়ির দিকে। সময় – ১০ : ১০। গাড়িতে নয়, পেছনের হুড দিয়ে সেটি গড়িয়ে পড়ল রাস্তায়, ফাটল পেছনের গাড়ির তলায়। বেশ কয়েকজন আহত হলেন। পুলিস তাঁকে তৎক্ষণাৎ ধরলে। “আমি সারবিয়ান হিরো” বলে মুখে সায়ানাইডের ক্যাপসুল পুরে মিলিয়াকা নদীতে ঝাঁপ দিলেন চাবরিলোভিচ। ক্যাপসুলটা পুরোনো—কাজ করল না। গ্রীষ্মকাল, নদীতে জলও কম (আমি ঠিক তেমনি শীর্ণ নদী দেখেছি)। পুলিশ তাঁকে টেনে তুলে গ্রেপ্তার করল। বোমায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। যুবরাজ ও যুবরানি অক্ষত: মোটরকেড চলল পৌরসভা ভবন অবধি।
পৌরসভায় মেয়র ফাহিম সুরচিচ তাঁর বক্তব্য শুরু করতেই তাঁকে বাধা দিয়ে অপ্রসন্ন যুবরাজ বললেন, “বোমা দিয়ে আপনারা অতিথিদের অভ্যর্থনা করেন!” অতঃপর তাঁর পূর্বলিখিত ভাষণ পাঠ করলেন ফ্রান্তস ফারদিনান্দ – শেষে বললেন, “আততায়ীদের প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে আপনারা সকলেই খুশি”। প্ল্যানমাফিক এবার মিউজিয়ামের দিকে যাওয়ার কথা—কিন্তু যুবরাজ বললেন, আমরা হাসপাতালে গিয়ে বোমায় আহতদের একবার দেখে আসি। যুবরাজের অ্যাডজুটানট বললেন, “সেটা সমীচীন মনে হয় না। যদি যেতেই চান, একটু পরে গেলে হয় না? ছাউনি থেকে সৈন্যদের এনে রাস্তার দু-ধারে দাঁড় করিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাক আগে”। সারায়েভোর অস্ট্রিয়ান গভর্নর পটোইরেক সে কথা উড়িয়ে দিলেন, “আপনি কি মনে করেন শহরটা খুনিতে ভরা?”
আবার সকলে গাড়িতে উঠলেন। যুবরাজের ড্রাইভার চেক, সে তেমন জার্মান বোঝে না। তাকে কেউ বুঝিয়ে বলেনি, রাজকীয় বাহিনির যাত্রাপথ পরিবর্তিত হয়েছে—মিউজিয়াম নয়, যেতে হবে হাসপাতালে। তার সামনের দুটো গাড়ি ল্যাটিন ব্রিজে ডাইনে মোড় নিয়ে ফ্রান্তস য়োসেফ পথে (আজকের জেলেনি বেরেৎকি) ঢুকে গেছে—মিউজিয়াম যাবে, যেমন কথা ছিল। গভর্নর পটোইরেক বললেন, “না, না, ও পথে নয়, গাড়ি ঘোরাও। আমাদের প্ল্যান বদলেছে, আমরা আপেল কাই দিয়ে সোজা হাসপাতালে যাব”। ড্রাইভার এবার ল্যাটিন ব্রিজের কোণায় ফ্রান্তস য়োসেফ পথের দিক থেকে আপেল কাইয়ের দিকে গাড়ির মুখ ঘোরানোর চেষ্টা করলেন। হঠাৎ এঞ্জিন থেমে গেল।
দলের তিনজন তরুণ বসনিয়ান তাঁদের লক্ষ্যে ভ্রষ্ট হয়েছেন—এই চিত্রনাট্যে তাঁর কী ভূমিকা হতে পারে—ল্যাটিন ব্রিজের কোণায় শিলার কাফের দরোজায় দাঁড়িয়ে এই রকম সাত-পাঁচ ভাবছিলেন গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ। হঠাৎ তাঁর সামনে, দু-হাত দূরে, একটি হুড খোলা গাড়ি থামল—সেখানে অধিষ্ঠিত ক্রাউন প্রিন্স ফ্রান্তস ফারদিনান্দ এবং ডাচেস সোফি।
সেই গাড়ির পাদানিতে উঠে পড়ে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ তাঁর এফ এন মডেল ১৯১০ সেমি অটোমেটিক পিস্তল হতে দু-টি গুলি চালান: একটি আঘাত করে ফ্রান্তস ফারদিনান্দের ঘাড়ে, অন্যটি যুবরানির তলপেটে। তৎক্ষণাৎ তাঁদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল গভর্নর পটোইরেকের বাসভবনে। সেখানে পৌঁছুনোর দশ মিনিটের মধ্যে দু-জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ফ্রান্তস ফারদিনান্দের শেষ কথা, “সোফি, যেও না, বেঁচে থাকো আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যে”।
তাঁদের বিয়ে হয়েছিল পয়লা জুলাই ১৯০০ সালে। আর তিনদিন বাদে তাঁদের চতুর্দশ বিবাহ বার্ষিকী। অন্তত জীবনের শেষ যাত্রায় তাঁরা এক বাহনে পাশাপাশি বসেছিলেন।
বেলা ১১.৩০
গ্রহণের পরে
গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ সহ তার সকল সাথী তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার হন। কারোর মৃত্যু দণ্ড হয়নি – অস্ট্রিয়ান আইন অনুযায়ী কুড়ি বছর বয়েস না হলে অপরাধ যাই হোক—তাকে ফাঁসির সাজা দেওয়া যাবে না। মেহমেদ মেহমেদাসচির বয়েস কুড়ির বেশি – সে গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছিল। ‘কালো হাত’ গুপ্তচক্রের কয়েকজন নেতার মৃত্যুদণ্ড হয় (যেমন ডানিলো ইলিচ, মিহালো ইওভানোভিচ—যাঁরা অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন)।
আঠারো বছরের তরুণ ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দিতে সভ্য ইংরেজ দ্বিধাবোধ করেনি।
ভ্রাতুষ্পুত্র ফ্রান্তস ফারদিনান্দের প্রতি তাঁর জ্যাঠা, সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফ কখনোই প্রসন্ন ছিলেন না। জীবৎকালে তো নয়ই, এমনকি তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সম্রাট তাঁর বড় মেয়েকে বলেন, “একটা ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া গেল”। হাবসবুরগ সিংহাসনের নতুন উত্তরাধিকারী মনোনীত হলেন এক নাতি কার্ল। ফ্রান্তস য়োসেফ মরদেহ ত্যাগ করবেন আর দু-বছর বাদে, ৮৬ বছর বয়েসে। ১৯১৮ সালে হাবসবুরগ রাজত্বের শেষ ঘণ্টি বাজল।
ভিয়েনার কাপুচিন গিরজেয় তাদের পিতামাতার অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানে ফ্রান্তস ফারদিনান্দ ও সোফির তিন ছেলেমেয়েকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি – সম্রাটের আদেশ। তিনশো বছর যাবত ভিয়েনার কাপুচিন গিরজের গর্ভে আছে হাবসবুরগ রাজবংশের পারিবারিক সমাধিস্থল। সোফির শরীরে রাজরক্ত ছিল না, তাই সেখানে তাঁর স্থান হয়নি। গিরজের অনুষ্ঠান শেষে আর্চডিউক এবং ডাচেসের কফিন আনা হল ভিয়েনার একশো কিলোমিটার পশ্চিমে আর্টষ্টেটেনের দুর্গে। সেখানে সমাধিস্থ তাঁরা, তবে ঠিক পাশাপাশি নয়। হাবসবুরগ বংশের প্রয়াত সন্তানের সম্মান রক্ষার্থে সোফির শেষশয্যা পাতা হয়েছিল ফ্রান্তসের সমাধির ৫০ সেন্টিমিটার নিচে।
এই বলকানে কোনো একটা নির্বুদ্ধিতার জন্য একদিন একটা ইউরোপীয় যুদ্ধ হবে**
-- অটো ফন বিসমার্ক
ভবিষ্যৎ যে তিনি সঠিক দেখেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল ছাব্বিশ বছর বাদে।
সার্বিয়াকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে দায়ী ঠাউরে অস্ট্রিয়া দিলে এক আলটিমেটাম। সারবিয়ান সরকার তা মানতে রাজি নয়; তারা বললে, এতে সরকারের কোনো হাত ছিল না, জার্মান কাইজার ভিলহেলম সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফকে ব্ল্যাংক চেক দিলেন – ওদের শায়েস্তা করো, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। চিরসাথী রাশিয়ান জার সার্বিয়াকে অভয় দিলেন; ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক মধুর, ব্রিটেন আর দূরে থাকে কেন? যুদ্ধু লেগে গেল। গ্রেট ওয়ার – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। চার বছরের রক্তক্ষয়ের পরে জার্মান, অস্ট্রিয়ান, রাশিয়ান এবং তুর্কী সম্রাটরা বহুদিনের পুরোনো গদি হারালেন। ভারসাইতে যে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হল, তার ভেতরেই রোপিত আরেক মহাযুদ্ধের বীজ। এক অস্ট্রিয়ান কর্পোরাল জার্মানির পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবেন—এমন পণ করলেন। সে যুদ্ধ সাঙ্গ হলে দেখলাম শীতল যুদ্ধ। তারপরে একদিন বলকানের সংগ্রাম—সার্বরা লড়ল বসনিয়াকদের বিরুদ্ধে। সেই লড়াই চলেছে যে মঞ্চে, তার নাম সারায়েভো—প্রায় চার বছর, ১৪২৫ দিনের অবরোধ। সারায়েভোর চারপাশের পাহাড় থেকে নিরন্তর বোমাবর্ষণ করে, নাগরিকদের ভুখা রেখে, তাঁদের আত্মসমর্পণ দাবি করে সারবিয়ান শক্তি – সিজ অফ সারায়েভো ১৯৯২-১৯৯৫। ইউরোপের হাজার বছরের রক্তিম ইতিহাসে দীর্ঘতম অবরোধ (লেনিনগ্রাদ ব্লকেড ছিল ৯০০ দিনের)।
বিংশ শতাব্দীর শুরু ও শেষ এইখানে। সারায়েভোতে।
গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের পিস্তলের গুলি—দুটি নয়, বহু কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। খুন কা বদলা খুনের খেলা শুরু হল — চলবে গোটা শতাব্দী জুড়ে।
পরিণাম
ইতিহাসে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের স্থান বার বার পরিবর্তিত হয়েছে—কারো চোখে তিনি সন্ত্রাসবাদী, কখনো বা জাতীয়তাবাদের পুরোধা। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সহিংস প্রতিবাদ যে ঘটনাচক্রের সূচনা করল, তা হয়তো বদলে দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ভবিষ্যতকে।
গাভ্রিলোর মৃত্যুর এক বছর বাদে, প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হলে, স্লাভ-বসনিয়াক-স্লোভেন-ক্রোয়াটদের নিয়ে উদিত হল এক স্লাভিক রাষ্ট্র, বিশ বছর বাদে য়োসেফ ব্রজ টিটো তাকে দিলেন নতুন চেহারা—নাম হল ইয়ুগোস্লাভিয়া (দক্ষিণ স্লাভেদের দেশ) – যার স্বপ্ন গাভ্রিলো দেখেছিলেন। সারায়েভোতে তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হল। ১৯৯১ সালে ইয়ুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সে মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন বসনিয়াকরা—গাভ্রিলো সেই ক্ষমতালোভী সারবিয়ানদের প্রতিভূ—যারা সারায়েভোকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে চার বছর!
সার্বিয়া এবং বসনিয়ার সার্ব-প্রধান অঞ্চলে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ জাতীয় হিরো। পূর্ব সারায়েভোতে (রেপুবলিকা স্রাপস্কা) তাঁর স্ট্যাচু আছে। ২৮শে জুন ২০১৪ সালে সারায়েভোর সেই দিনটির শতবার্ষিকীতে বেলগ্রেডে তাঁর মূর্তি উন্মোচন করেন সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলেকসানদার ভুচিচ।
বয়েস | সাজা | মৃত্যু | |
(বছর) | সাল | ||
গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ | ১৯ | ২০ | ১৯১৮ (জেলে, টি বি) |
ভাসো চাবরিলোভিচ | ১৯ | ১৬ | ১৯১৬ (জেলে, টি বি) |
সেভেতকো পপোভিচ | ১৮ | ১৩ | ১৯৮০ |
ত্রিফকো গ্রাবেজ | ১৯ | ২০ | ১৯১৬ (জেলে) |
মেহমেদ মেহমেদাসচি | ২৭ | পলাতক | ১৯৪৩ (যুদ্ধে) |
নেদেলিকো চাবরিনোভিচ | ১৯ | ২০ | ১৯১৬ (জেলে) |