এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  শনিবারবেলা

  • পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং রেপুবলিকা স্রাপসকা ৩

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ২১৭৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • ল্যাটিন ব্রিজ



    সারায়েভোর একদিন : রবিবার ২৮শে জুন ১৯১৪


    সকাল
    বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো শহরে আজ মহা উত্তেজনা। হাবসবুরগ রাজবংশের কুলতিলক, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সিংহাসনের ভাবি অধিকারী যুবরাজ আর্কডিউক ফ্রান্তস ফারদিনান্দ এবং তাঁর পত্নী হোহেনবেরগের ডাচেস সোফি প্রথমবার সারায়েভো আসছেন। আজকের দিনটি যুবরাজ ও যুবরানির কাছেও বিশেষভাবে স্মরণীয়। বর্তমান অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফ তাঁদের ভালবাসাকে সমর্থন করেননি—কারণ, সোফির ধমনিতে রাজরক্ত নেই, তিনি এক বড় জমিদারের কন্যা মাত্র। একমাত্র পুত্র—ক্রাউন প্রিন্স রুডলফ—তিরিশ বছর বয়েসে আত্মহত্যা করেছে (১৮৮৯), স্ত্রী এলিজাবেথ—সিসি—আততায়ীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন, এক ভাই—মেক্সিকোর রাজা মাক্সিমিলিয়ান—বিপ্লবী প্রজাদের হাতে নিহত হয়েছেন। সে সব শোক কাটানো শক্ত। তার ওপরে ফ্রান্তস য়োসেফের আরেক ভাই—কার্ল লুডভিগ—একেবারে কাজের অযোগ্য। ১৮৯৮ সালে সে ভাই মারা গেলে, ভ্রাতুষ্পুত্র ফ্রান্তস ফারদিনান্দকে অস্ট্রিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করলেন—অগতির গতি—যদিও সম্রাট তাঁকে একেবারেই পছন্দ করেন না। সোফিকে বিয়ে করার কঠোর পণ দেখে সম্রাট ফ্রান্তস ফারদিনান্দকে বললেন, তোমাদের এ বিবাহে আমি সম্মতি দিতে পারি, যদি তুমি কাগজে কলমে এবং আমার দরবারের সকল রাজপুরুষের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা কর—যে, সোফি ও তার কোনো পুত্র-কন্যা কখনো অস্ট্রিয়ান সিংহাসনের দাবিদার হবে না। ফ্রান্তস ফারদিনান্দ হয়তো বলেছিলেন, সিংহাসনে পদাঘাত করতে রাজি আছি কিন্তু এই নারী আমার প্রাণপ্রিয়া, যেমন অষ্টম এডওয়ার্ড একদিন বলেছিলেন। ২৮শে জুন ১৮৯৯ সালে সেই বিবাহ মঞ্জুর হল—যদিও সম্রাট তার সঙ্গে আরও কিছু শর্ত জুড়ে দিলেন—যেমন, সোফি কোনো অনুষ্ঠানে রাজ পরিবারের সঙ্গে একাসনে বসতে বা স্বামীর সঙ্গে একই গাড়িতে ভ্রমণ করতে পারবেন না।



    সোফি ও ফ্রানতস ফারদিনানদ সারায়েভো স্টেশনে


    ক্ষমতাবলে যুবরাজ তাবৎ অস্ট্রিয়ান প্রতিরক্ষা বাহিনীর তত্ত্বাবধায়ক। তাঁকে একদিন সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফ বললেন, এবার একটু কাজকর্ম দেখো। বসনিয়াতে আমাদের ফৌজের তদারকি করে এসো। জুন মাসে ফ্রান্তস ফারদিনান্দ সোফিকে নিয়ে সফরে বেরিয়ে নানান শহরে, গঞ্জে বসনিয়ার সৈন্যবাহিনী পর্যবেক্ষণ আরম্ভ করেছেন। সে বড় সুখের ভ্রমণ—ভিয়েনার রাজ দরবারের কোনো মুরুব্বির বক্রোক্তি করার সুযোগ নেই, বসনিয়ার যেখানেই যাচ্ছেন, দু-জনে একসঙ্গে হাঁটছেন, একই গাড়িতে চড়ছেন – ভিয়েনায় সেটি অসম্ভব ছিল। ২৭শে জুন শনিবার কাটালেন সারায়েভোর অদূরে, ইলিদজায়। সেখানে আছে মাটি ফুঁড়ে আসা গরম জলের ফোয়ারা। এককালের রোমান শহর, জলে সালফারের প্রাচুর্যের জন্য তাদের অতি প্রিয় ছিল। আধুনিক শহরটি অটোমান সম্রাটদের বানানো। ইলিদজা শব্দটি এসেছে তুরকিক ইলিসা (উষ্ণ প্রস্রবণ) থেকে। সফরের শেষ দিনটায় তাঁরা যাবেন বসনিয়ার রাজধানী সারায়েভো, একবেলার জন্যে। সফরসূচি দু-মাস আগেই বসনিশে পোস্ট কাগজে ছাপা হয়েছে —
    রাজসফর (২৮ | ৬ | ১৯১৪)





    ০৯.৫০ ইলিদজা থেকে রেল যোগে সারায়েভো স্টেশনে পদার্পণ – যুবরাজ ও যুবরানিকে নিয়ে সুরক্ষাবল সহ ছটি মোটরগাড়ি যাত্রা করবে পৌরসভা ভবন অভিমুখে
    ১০.১০-১০.৩০সারায়েভো পৌরসভা পরিদর্শন। সংক্ষিপ্ত ভাষণ।
    ১০.৪০-১১.৪০নতুন জাদুঘরের উন্মোচন
    দ্বিপ্রহর-১৪.০০গভর্নরের গৃহে মধ্যাহ্ন ভোজন। সারায়েভো স্টেশন হতে ভিয়েনার ট্রেন।

    সারায়েভো ট্রেন স্টেশন থেকে টাউন হল মাত্র চার কিলোমিটারের পথ, বিশ মিনিট লাগে (যাত্রাপথের ম্যাপটি দেখুন)। আজ রবিবার, অনেক পুলিশ ছুটিতে। তাই রাজদম্পতির সুরক্ষার জন্য রাস্তার দু-পাশে মোতায়েন হল মাত্র একশো কুড়ি জন পুলিশ। নিকটবর্তী ব্যারাকে সত্তর হাজার সৈন্য, কিন্তু তাদের পথে দাঁড় করালে নাগরিকদের মনে হতে পারে—বিদেশি অস্ট্রিয়ান রাজশক্তি তার পেশি প্রদর্শন করছে। তাই তাদের আর ডাকা হল না।



    যাত্রাপথ



    সেই সকালে অন্যত্র
    সারায়েভো শহরে ‘তরুণ বসনিয়া’ নামের একটি সঙ্ঘের ছ-টি বসনিয়ান সার্ব তরুণের* কাছেও সেটি এক গভীর অর্থবহ, পবিত্র দিন—অটোমান শক্তির বিরুদ্ধে কসোভোর লড়াইতে শেষ সারবিয়ান রাজা লাজার নিহত হন—জুন ১৩৮৯। সার্বিয়া তার স্বাধীনতা হারায় পরবর্তী পাঁচশো বছরের জন্য। এই ১৯১৩ সালের বলকান যুদ্ধে অটোমানদের হারিয়ে স্লাভিক দেশ সার্বিয়া আবার একটি সার্বভৌম দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে—এবার সার্বিয়া চায় স্লাভ প্রতিবেশীদের নিয়ে এক বৃহত্তর রাষ্ট্র গড়তে। ২৮শে জুন তাই সারবিয়ান স্বাধীনতার, আশার প্রতীক। সেটি সন্ত ভিতুসের নামেও নামাঙ্কিত পবিত্র দিন। একটি স্লাভ রাষ্ট্র গড়ার পথে যে বাধা, তার নাম অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য—তুরস্কের অটোমান রাজার দাসত্ব কাটিয়ে সার্বিয়া স্বাধীন হয়েছে, বসনিয়ার সার্বরা এখন হাবসবুরগের দৌরাত্ম্য দূর করে সেই সংসারে যোগ দিতে চান। যখন জানা গেল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সম্রাটের প্রতিভূ ফ্রান্তস ফারদিনান্দ সারায়েভো সফরে আসছেন, এই তরুণ দল (পাঁচ জনের বয়েস কুড়ি পেরোয়নি) তাঁকে ধরাধাম ও রাজশক্তিকে বসনিয়া থেকে ফেরত পাঠাবার ছক কষলেন। অবশ্যই এর পিছনে আরও কিছু প্রাপ্তবয়স্ক সার্বিয়ান মানুষের সহায়তা ছিল: ‘কালো হাত’ নামক এক গুপ্ত চক্র বেলগ্রেড থেকে সার্বিয়ান সমর বাহিনীর পিস্তল সরবরাহ করে। কিন্তু মঞ্চে নামলেন এই ক-জন।

    মুখোমুখি



    সারায়েভো টাউন হল


    ছ-টি মোটর গাড়ির যাত্রা চলল মিলিয়াকা নদীর পার বরাবর আপেল কাই দিয়ে (আজকের ওবানা কুলিনা বানা)। বিভিন্ন জায়গায় ‘তরুণ বসনিয়া’-র ছেলেরা মোতায়েন ছিলেন। মেহমেদবাসিচের হাতে ছিল পিস্তল—মস্তার কাফের সামনে তিনি রাজকীয় বাহন অতিক্রান্ত হতে দেখলেন—গুলি ছোঁড়ার সাহস হল না। চাবরিলোভিচ হাতে অস্ত্র নিয়ে স্ট্যাচু হয়ে রইলেন। চাবরিনোভিচের ওপরে বোমা ছোড়ার দায়িত্ব ছিল—সেটি তিনি ছুঁড়লেন রাজকীয় গাড়ির দিকে। সময় – ১০ : ১০। গাড়িতে নয়, পেছনের হুড দিয়ে সেটি গড়িয়ে পড়ল রাস্তায়, ফাটল পেছনের গাড়ির তলায়। বেশ কয়েকজন আহত হলেন। পুলিস তাঁকে তৎক্ষণাৎ ধরলে। “আমি সারবিয়ান হিরো” বলে মুখে সায়ানাইডের ক্যাপসুল পুরে মিলিয়াকা নদীতে ঝাঁপ দিলেন চাবরিলোভিচ। ক্যাপসুলটা পুরোনো—কাজ করল না। গ্রীষ্মকাল, নদীতে জলও কম (আমি ঠিক তেমনি শীর্ণ নদী দেখেছি)। পুলিশ তাঁকে টেনে তুলে গ্রেপ্তার করল। বোমায় আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। যুবরাজ ও যুবরানি অক্ষত: মোটরকেড চলল পৌরসভা ভবন অবধি।

    পৌরসভায় মেয়র ফাহিম সুরচিচ তাঁর বক্তব্য শুরু করতেই তাঁকে বাধা দিয়ে অপ্রসন্ন যুবরাজ বললেন, “বোমা দিয়ে আপনারা অতিথিদের অভ্যর্থনা করেন!” অতঃপর তাঁর পূর্বলিখিত ভাষণ পাঠ করলেন ফ্রান্তস ফারদিনান্দ – শেষে বললেন, “আততায়ীদের প্রচেষ্টা বিফল হয়েছে দেখে মনে হচ্ছে আপনারা সকলেই খুশি”। প্ল্যানমাফিক এবার মিউজিয়ামের দিকে যাওয়ার কথা—কিন্তু যুবরাজ বললেন, আমরা হাসপাতালে গিয়ে বোমায় আহতদের একবার দেখে আসি। যুবরাজের অ্যাডজুটানট বললেন, “সেটা সমীচীন মনে হয় না। যদি যেতেই চান, একটু পরে গেলে হয় না? ছাউনি থেকে সৈন্যদের এনে রাস্তার দু-ধারে দাঁড় করিয়ে সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাক আগে”। সারায়েভোর অস্ট্রিয়ান গভর্নর পটোইরেক সে কথা উড়িয়ে দিলেন, “আপনি কি মনে করেন শহরটা খুনিতে ভরা?”



    সোফি ও ফারদিনানদ শেষ যাত্রা - টাউন হল থেকে


    আবার সকলে গাড়িতে উঠলেন। যুবরাজের ড্রাইভার চেক, সে তেমন জার্মান বোঝে না। তাকে কেউ বুঝিয়ে বলেনি, রাজকীয় বাহিনির যাত্রাপথ পরিবর্তিত হয়েছে—মিউজিয়াম নয়, যেতে হবে হাসপাতালে। তার সামনের দুটো গাড়ি ল্যাটিন ব্রিজে ডাইনে মোড় নিয়ে ফ্রান্তস য়োসেফ পথে (আজকের জেলেনি বেরেৎকি) ঢুকে গেছে—মিউজিয়াম যাবে, যেমন কথা ছিল। গভর্নর পটোইরেক বললেন, “না, না, ও পথে নয়, গাড়ি ঘোরাও। আমাদের প্ল্যান বদলেছে, আমরা আপেল কাই দিয়ে সোজা হাসপাতালে যাব”। ড্রাইভার এবার ল্যাটিন ব্রিজের কোণায় ফ্রান্তস য়োসেফ পথের দিক থেকে আপেল কাইয়ের দিকে গাড়ির মুখ ঘোরানোর চেষ্টা করলেন। হঠাৎ এঞ্জিন থেমে গেল।

    দলের তিনজন তরুণ বসনিয়ান তাঁদের লক্ষ্যে ভ্রষ্ট হয়েছেন—এই চিত্রনাট্যে তাঁর কী ভূমিকা হতে পারে—ল্যাটিন ব্রিজের কোণায় শিলার কাফের দরোজায় দাঁড়িয়ে এই রকম সাত-পাঁচ ভাবছিলেন গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ। হঠাৎ তাঁর সামনে, দু-হাত দূরে, একটি হুড খোলা গাড়ি থামল—সেখানে অধিষ্ঠিত ক্রাউন প্রিন্স ফ্রান্তস ফারদিনান্দ এবং ডাচেস সোফি।

    সেই গাড়ির পাদানিতে উঠে পড়ে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ তাঁর এফ এন মডেল ১৯১০ সেমি অটোমেটিক পিস্তল হতে দু-টি গুলি চালান: একটি আঘাত করে ফ্রান্তস ফারদিনান্দের ঘাড়ে, অন্যটি যুবরানির তলপেটে। তৎক্ষণাৎ তাঁদের চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হল গভর্নর পটোইরেকের বাসভবনে। সেখানে পৌঁছুনোর দশ মিনিটের মধ্যে দু-জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ফ্রান্তস ফারদিনান্দের শেষ কথা, “সোফি, যেও না, বেঁচে থাকো আমাদের ছেলেমেয়েদের জন্যে”।




    তাঁদের বিয়ে হয়েছিল পয়লা জুলাই ১৯০০ সালে। আর তিনদিন বাদে তাঁদের চতুর্দশ বিবাহ বার্ষিকী। অন্তত জীবনের শেষ যাত্রায় তাঁরা এক বাহনে পাশাপাশি বসেছিলেন।

    বেলা ১১.৩০
    গ্রহণের পরে

    গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ সহ তার সকল সাথী তৎক্ষণাৎ গ্রেপ্তার হন। কারোর মৃত্যু দণ্ড হয়নি – অস্ট্রিয়ান আইন অনুযায়ী কুড়ি বছর বয়েস না হলে অপরাধ যাই হোক—তাকে ফাঁসির সাজা দেওয়া যাবে না। মেহমেদ মেহমেদাসচির বয়েস কুড়ির বেশি – সে গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছিল। ‘কালো হাত’ গুপ্তচক্রের কয়েকজন নেতার মৃত্যুদণ্ড হয় (যেমন ডানিলো ইলিচ, মিহালো ইওভানোভিচ—যাঁরা অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন)।

    আঠারো বছরের তরুণ ক্ষুদিরাম বসুকে ফাঁসি দিতে সভ্য ইংরেজ দ্বিধাবোধ করেনি।

    ভ্রাতুষ্পুত্র ফ্রান্তস ফারদিনান্দের প্রতি তাঁর জ্যাঠা, সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফ কখনোই প্রসন্ন ছিলেন না। জীবৎকালে তো নয়ই, এমনকি তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে সম্রাট তাঁর বড় মেয়েকে বলেন, “একটা ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া গেল”। হাবসবুরগ সিংহাসনের নতুন উত্তরাধিকারী মনোনীত হলেন এক নাতি কার্ল। ফ্রান্তস য়োসেফ মরদেহ ত্যাগ করবেন আর দু-বছর বাদে, ৮৬ বছর বয়েসে। ১৯১৮ সালে হাবসবুরগ রাজত্বের শেষ ঘণ্টি বাজল।

    ভিয়েনার কাপুচিন গিরজেয় তাদের পিতামাতার অন্ত্যেষ্টি অনুষ্ঠানে ফ্রান্তস ফারদিনান্দ ও সোফির তিন ছেলেমেয়েকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি – সম্রাটের আদেশ। তিনশো বছর যাবত ভিয়েনার কাপুচিন গিরজের গর্ভে আছে হাবসবুরগ রাজবংশের পারিবারিক সমাধিস্থল। সোফির শরীরে রাজরক্ত ছিল না, তাই সেখানে তাঁর স্থান হয়নি। গিরজের অনুষ্ঠান শেষে আর্চডিউক এবং ডাচেসের কফিন আনা হল ভিয়েনার একশো কিলোমিটার পশ্চিমে আর্টষ্টেটেনের দুর্গে। সেখানে সমাধিস্থ তাঁরা, তবে ঠিক পাশাপাশি নয়। হাবসবুরগ বংশের প্রয়াত সন্তানের সম্মান রক্ষার্থে সোফির শেষশয্যা পাতা হয়েছিল ফ্রান্তসের সমাধির ৫০ সেন্টিমিটার নিচে।


    এই বলকানে কোনো একটা নির্বুদ্ধিতার জন্য একদিন একটা ইউরোপীয় যুদ্ধ হবে**
    -- অটো ফন বিসমার্ক

    ভবিষ্যৎ যে তিনি সঠিক দেখেছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গেল ছাব্বিশ বছর বাদে।

    সার্বিয়াকে এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে দায়ী ঠাউরে অস্ট্রিয়া দিলে এক আলটিমেটাম। সারবিয়ান সরকার তা মানতে রাজি নয়; তারা বললে, এতে সরকারের কোনো হাত ছিল না, জার্মান কাইজার ভিলহেলম সম্রাট ফ্রান্তস য়োসেফকে ব্ল্যাংক চেক দিলেন – ওদের শায়েস্তা করো, আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। চিরসাথী রাশিয়ান জার সার্বিয়াকে অভয় দিলেন; ফ্রান্সের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক মধুর, ব্রিটেন আর দূরে থাকে কেন? যুদ্ধু লেগে গেল। গ্রেট ওয়ার – প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। চার বছরের রক্তক্ষয়ের পরে জার্মান, অস্ট্রিয়ান, রাশিয়ান এবং তুর্কী সম্রাটরা বহুদিনের পুরোনো গদি হারালেন। ভারসাইতে যে সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হল, তার ভেতরেই রোপিত আরেক মহাযুদ্ধের বীজ। এক অস্ট্রিয়ান কর্পোরাল জার্মানির পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবেন—এমন পণ করলেন। সে যুদ্ধ সাঙ্গ হলে দেখলাম শীতল যুদ্ধ। তারপরে একদিন বলকানের সংগ্রাম—সার্বরা লড়ল বসনিয়াকদের বিরুদ্ধে। সেই লড়াই চলেছে যে মঞ্চে, তার নাম সারায়েভো—প্রায় চার বছর, ১৪২৫ দিনের অবরোধ। সারায়েভোর চারপাশের পাহাড় থেকে নিরন্তর বোমাবর্ষণ করে, নাগরিকদের ভুখা রেখে, তাঁদের আত্মসমর্পণ দাবি করে সারবিয়ান শক্তি – সিজ অফ সারায়েভো ১৯৯২-১৯৯৫। ইউরোপের হাজার বছরের রক্তিম ইতিহাসে দীর্ঘতম অবরোধ (লেনিনগ্রাদ ব্লকেড ছিল ৯০০ দিনের)।

    বিংশ শতাব্দীর শুরু ও শেষ এইখানে। সারায়েভোতে।

    গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের পিস্তলের গুলি—দুটি নয়, বহু কোটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। খুন কা বদলা খুনের খেলা শুরু হল — চলবে গোটা শতাব্দী জুড়ে।

    পরিণাম



    গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের বাড়ি


    ইতিহাসে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপের স্থান বার বার পরিবর্তিত হয়েছে—কারো চোখে তিনি সন্ত্রাসবাদী, কখনো বা জাতীয়তাবাদের পুরোধা। বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই সহিংস প্রতিবাদ যে ঘটনাচক্রের সূচনা করল, তা হয়তো বদলে দিয়েছে বিংশ শতাব্দীর ইউরোপের ভবিষ্যতকে।

    গাভ্রিলোর মৃত্যুর এক বছর বাদে, প্রথম মহাযুদ্ধ শেষ হলে, স্লাভ-বসনিয়াক-স্লোভেন-ক্রোয়াটদের নিয়ে উদিত হল এক স্লাভিক রাষ্ট্র, বিশ বছর বাদে য়োসেফ ব্রজ টিটো তাকে দিলেন নতুন চেহারা—নাম হল ইয়ুগোস্লাভিয়া (দক্ষিণ স্লাভেদের দেশ) – যার স্বপ্ন গাভ্রিলো দেখেছিলেন। সারায়েভোতে তাঁর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হল। ১৯৯১ সালে ইয়ুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সে মূর্তি ভেঙ্গে ফেলেন বসনিয়াকরা—গাভ্রিলো সেই ক্ষমতালোভী সারবিয়ানদের প্রতিভূ—যারা সারায়েভোকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে চার বছর!



    বেলগ্রেডে শতবার্ষিকী


    সার্বিয়া এবং বসনিয়ার সার্ব-প্রধান অঞ্চলে গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ জাতীয় হিরো। পূর্ব সারায়েভোতে (রেপুবলিকা স্রাপস্কা) তাঁর স্ট্যাচু আছে। ২৮শে জুন ২০১৪ সালে সারায়েভোর সেই দিনটির শতবার্ষিকীতে বেলগ্রেডে তাঁর মূর্তি উন্মোচন করেন সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলেকসানদার ভুচিচ।




    পু: একটি প্রতিবেদন
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার তিন দশক বাদে প্রথমবার বার্লিন পৌঁছুই। আমাকে একজন বলেছিলেন, বার্লিনে ইতিহাস খুঁজতে হয় না, এই শহরে আপনি ইতিহাসের মধ্যেই হাঁটেন। সারায়েভোর টাউন হল থেকে ল্যাটিন ব্রিজ, আপেল কাই আর ফ্রান্তস য়োসেফ পথের মোড়, কাফের (আজ মিউজিয়াম) দেওয়াল আর সেই কোণ আমাকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে। আপেল কাই, আজকের অবানা কুলিনা বানায় গাড়ি চালিয়েছি, টাউন হল থেকে হেঁটেছি ল্যাটিন ব্রিজ অবধি। জুলাই মাসের উজ্জ্বল দিনে একা সেখানে দাঁড়িয়ে একশো বছর আগের জুন মাসের সেই দিনটির কথা ভেবেছি। এই লেখার সময়ে বার বার সে ছবি ভেসে উঠছে মনের ভেতরে।

    আপনাদের সকলকে আমার সেই অনুভূতির অংশীদার করে নেবার বাসনায় আজ ডায়েরি নয়, লিখলাম এই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত দুর্বল আখ্যান।***


    *



    বয়েস সাজা মৃত্যু
    (বছর) সাল
    গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ১৯২০১৯১৮ (জেলে, টি বি)
    ভাসো চাবরিলোভিচ১৯১৬১৯১৬ (জেলে, টি বি)
    সেভেতকো পপোভিচ১৮১৩১৯৮০
    ত্রিফকো গ্রাবেজ১৯২০১৯১৬ (জেলে)
    মেহমেদ মেহমেদাসচি২৭পলাতক১৯৪৩ (যুদ্ধে)
    নেদেলিকো চাবরিনোভিচ১৯২০১৯১৬ (জেলে)


    ** ইরগেনডআইনে ফেরডামট ডুমে জাখে আউফ ডেম বালকান ভুরডে পাসিয়েরেন ডি আইনেন অয়রোপিশেন
    ক্রিগ জুর ফলগে হাবেন ভুরডে — অটো ফন বিসমার্ক, প্রথম জার্মান চ্যান্সেলর (১৮৬২-১৮৯০)

    *** এই ঐতিহাসিক দিনটির ওপরে অজস্র বই, খবর কাগজের কাটিং, রেকর্ডিং পাওয়া যায় নানান ভাষায়।
    আমার মেয়ে মায়া সারবিয়ান সিরিলিক পড়তে বুঝতে পারে – তার সূত্রে কিছু অজানা তথ্য পেয়েছি।
    সময় কম থাকলে ডেভিড জেমস স্মিথের ‘ওয়ান মর্নিং ইন সারায়েভো’ পড়তে পারেন। একটি দুর্বার গতি থ্রিলার।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০১ এপ্রিল ২০২৩ | ২১৭৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Asish kumar Sinharay | ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:০৯518121
  • অজানা ভাষায় স্থান পাত্রের নাম ।পড়তে খটমট লাগে।চমৎকার লেখা। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১৬:১৮518122
  • দারুন লাগলো। ঐতিহাসিক চরিত্র গুলোকে যেন বাস্তবে ছুঁয়ে ফেললাম, আপনার হাত ধরে। বিসমার্কের মন্তব্যটি সত্যিই প্রফেটিক।
  • Ranjan Roy | ০১ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৩৭518135
  • অসাধারণ এই  'সংক্ষিপ্ত আখ্যান'। কিন্তু সব যুদ্ধেই দেখছি পোঁতা থাকে আগামী যুদ্ধের বীজ। এই চক্রমণ থেকে কি মুক্তি পাব কোনদিন? 
  • Tapan Kumar SenGupta | ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:০৭518232
  • অসাধারণ।... প্রায় এক নিঃশ্বাসে শেষ করতে হয়।
  • dc | 2401:4900:2312:fa72:65e5:dac4:5d57:***:*** | ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:২৮518233
  • হীরেনবাবুর প্রতিটা লেখাই অসাধারন। আরও বেশী ইন্টারেস্টিং লাগে কারন ইউরোপের ইতিহাস, পলিটিক্স, ইকোনমি ইত্যাদি নিয়ে এতো যে সিনেমা দেখেছি বা দেখি, আর এতো যে গল্প ইত্যাদি পড়ি, সেগুলো হীরেনবাবুর লেখা পড়তে পড়তে একদম চোখের সামনে ভেসে ওঠে। মার্ক ফেল্টন প্রোডাকশানস বা অপারেশানস রুমের ভিডিওগুলোর কথা বারবার মনে আসে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৪ এপ্রিল ২০২৩ ২২:২৫518270
  • আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আমার পূর্ব ইউরোপের ডায়েরীতে সারায়েভোর ইতিহাসের ব্যাখ্যান করাটা নিতান্ত জরুরী ছিল। এবার ডায়েরী আবার। 
     
    ডি সি - আমি মার্ক ফেলটনের ফ্যান । তবে সময় পেলে 
    Ruiter Productions এ Spartacus Olson এর WW2 দেখবেন! আরেকটা অসাধারন সূত্র Vor Vierzig Jahren বা Deustche Wochenschau
  • aranya | 2601:84:4600:5410:f97d:c09e:15a7:***:*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ০২:০৭518288
  • দারুণ। পড়তে শুরু করে শেষ না করে থামা গেল না 
  • Kishore Ghosal | ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৫৬518300
  • অসাধারণ বর্ণনা ও আপনার সঙ্গেই যেন ঘুরে ঘুরে দেখছি - এমনই  অনুভব। 
     
    @ রঞ্জনদা, 
     
    "কিন্তু সব যুদ্ধেই দেখছি পোঁতা থাকে আগামী যুদ্ধের বীজ"। একথাটা ভয়ংকর এক সত্যের মুখে আমাদের দাঁড় করায়।
     
    আমাদের বাংলার স্বাধীনতা -বিপ্লবীদের সশস্ত্র আন্দোলন নিয়ে আমরা যতই রোমাঞ্চিত হই না কেন, আজকে বাংলার ঘরে ঘরে "পেটো" শিল্পের সূত্রপাত কিন্তু ওই সময়েই। আজও ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যেই নানান কারণে প্রচুর খুনোখুনি হয় কিন্তু কথায় কথায় বোমাবাজিতে আমাদের রাজ্য অনন্য। আমাদের শৈশব থেকেই আমরা এই দৃশ্য দেখেই বড়ো হয়েছি - সে নকশাল হোক, সিদ্ধার্থ রায়ের কংগ্রেস হোক, কিংবা সিপিএম বা বিজেপি এবং তৃণমূলই হোক  - একই ট্র্যাডিশন চলছে।
  • শু | 103.232.***.*** | ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:০৪518304
  • হীরেনবাবুর লেখা নিয়মিত পড়ি। বলা বাহুল্য, খুব ভালো লাগে বলেই। তা ফেল্টনের কথা যখন উঠলো, এই সুযোগে বলেই ফেলি, ইউটিউবে রেয়ার আর্থ চ্যানেলে এই অঞ্চলের উপরে একটা ডকু (আসলে সিরিজ অফ শর্ট ফিল্মস, পরে একসাথে জুড়ে দেওয়া হয়) ভালো লেগেছিলো। হীরেনবাবু বা অন্য কেউ, যাঁদের এখানে ঘোরাঘুরির অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা কেউ দেখেছেন কি? ফ্যাক্টস ঠিকঠাক আছে?
  • হীরেন সিংহরায় | ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ২১:৫৪518309
  • কিশোর

    সম্পূর্ণ সহমত ।  পোস্ট কলোনিয়াল আফ্রিকায় যে নির্মম হত্যালীলা দেখা গেল সেটি  ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের উপহার ! তাঁরা শুধু মানুষ মারার কায়দা নয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র শস্ত্র দিয়ে গেলেন। একটি উদাহরণ যথেষ্ট – করনেল মোবুতু বেলজিয়ানদের বিদ্যালয়ে যে শিক্ষা পেয়েছিলেন সেটাই কাজে লাগিয়ে তিরিশ বছর গদি আঁকড়ে রইলেন।   একই ট্র্যাডিশন।

    পুঃ আমার আফ্রিকায় কঙ্গো পর্ব দেখুন
     
  • হীরেন সিংহরায় | ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ২২:০৩518310
  • শ্রী শু

    রেয়ার আর্থের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ । পুরোটা দেখলাম । ভালো সামারি সন্দেহ নেই তবে এতো বড়ো সময়কাল ও তার জটিলতাকে এই পরিসরে ধরে রাখা হয়তো শক্ত  । নিঃসন্দেহে  ইউরোপে বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গাভ্রিলোর গুলি প্রথম সহিংস প্রতিবাদ।   সামগ্রিকভাবে ফ্যাক্ট নিয়ে বিতর্ক হয় না , একটু সরলীকরণ আছে এবং ভাষায় আবেগ। যদিও কিছু তথ্য যোগ  করলে  ভালো হতো ( গাভ্রিলো প্রিঞ্চিপ বসনিয়ান সার্ব –ক্রোয়াট  নন, তিনি সার্বিয়ার রাজ্য বিস্তার করতে চেয়েছিলেন ;  জানান উচিত ছিল টিটোর মা স্লোভেন, বাবা ক্রোয়াট শাসন করেছেন সারবিয়ান রাজধানী থেকে ; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বসনিয়ান মুসলিম, ক্যাথলিক ক্রোয়াট একত্রে সার্ব বাঁচিয়েছেন উস্তাসের হাত থেকে আবার মেজুগরিইয়েতে ক্যাথলিক ক্রোয়াট সার্ব নারী পুরুষকে খাদে ঠেলেছেন; বসনিয়াতে অর্থোডক্স বনাম ক্যাথলিকের মারপিট লেগেছিল ১৩০০ সাল অবধি  তাঁরা এমনিতেই ক্ষিপ্ত ছিলেন, – অটোমানদের তাঁদের দলে বলে মুসলিম করতে হয় নি ; কসোভো এবং ভয়ভোদিনার গল্পটা দিলে ইয়ুগোস্লাভিয়ার পতন বোঝানো যেত )।  মিশা গ্লেনির ফল অফ ইয়ুগোস্লাভিয়া এবং দি বলকানস অতি প্রামাণ্য ঐতিহাসিক গ্রন্থ ।  ডেরভলা মারফির থ্রু দি এম্বারস অফ ক্যাওস – বলকান জারনিস  অসাধারণ লেখা – নয়ের দশকে এই মহিলা নিজে ঘুরেছেন।  

    ডায়েরিতে খুব বেশি তথ্য ঠুসে দিতে চাই না   কখনো মনে হয়েছে অর্থনীতি ব্যাঙ্কিং নিয়ে প্রভূত কচকচি চালাচ্ছি এর সঙ্গে ইতিহাস জুড়লে আমার লেখা কেউ  পড়তে চাইবেন না! আপনারা যে এত আগ্রহ  পড়ছেন, মন্তব্য করছেন তাতে আমার পরিশ্রম সার্থক বলে মনে হয় ।
     
  • Amit | 120.16.***.*** | ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:৩৩518332
  • হিরেনবাবুর এই লেখা গুলো পড়ে পড়ে একটা যেন সম্পূর্ণ অচেনা জায়গার সাথে আস্তে আস্তে পরিচিতি হচ্চ্ছে। ওনার "উত্তরের আলোয় অচেনা ইউরোপ" বইটা আর একটা আস্ত সোনার খনি। রিসেন্টলি অনলাইন ইবুক পড়ার সৌভাগ্য হলো। 
     
    ইউরোপ বলতে আমার এদ্দিন জানা বলতে ছিল বৃটেন , ফ্রান্স জার্মানি ইতালি - ব্যাস এইটুকুই। তাও কাজের সুবাদে একটু আধটু খুব অল্প ঘোরাঘুরি আর একটু আধটু বই পত্তর সিনেমা অব্দিই আমার দৌড়। এই লেখাগুলো বা বই গুলো পড়তে পড়তে লিটারালি মনেহয় যেন এইসব জায়গা গুলোয় এসব ঘটার সময়ে ঘুরেবেড়াচ্ছি। 
  • শু | 117.246.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৩518381
  • হীরেনবাবু, অনেক ধন্যবাদ, অজানা তথ্য আর বিশেষ করে মান্য সোর্সগুলোর জন্য। আপনি হয়তো দেখেছেন, তবুও আরো গোটা তিনেক চ্যানেলের লিংক দিয়ে রাখি: (ক্রনোলজিক্যালি) গ্রেট ওয়র, ওয়ার্ল্ড ওযর টু আর কোল্ড ওযর। ঠিক বলকান সেন্ট্রিক নাহলেও বিক্ষিপ্ত ভাবে এই অঞ্চলের মোটামুটি শেষ শখানেক বছরের গোলমালের ইতিহাস নিয়ে অনেকগুলো ভিডিও আছে। টিটোর উত্থান, পার্টিশান প্রতিরোধ আর তারপর উনার শাসনকাল, এসবের উপর প্রাইমার জাতীয়। তবে এসবই নৈর্ব্যক্তিক ইতিহাস বর্ণনা। এই লেখাগুলো ইতিহাস আর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার অপূর্ব মিশেল - তথ্য আর গল্পের অনুপাতে আপনার পরিমিতিবোধ ইর্ষনীয়। আগেও অনেকে বলেছেন, মুজতবা আলীর তুলনা এসেই যায়।
  • bhabuk | 108.7.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩১518383
  • @Amit হীরেন বাবুর বইগুলোর অনলাইন ই -বুক কোথায়  কিনতে পাওয়া যাচ্ছে? 
  • dc | 27.62.***.*** | ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৯:১৯518387
  • মার্ক ফেল্টন আর রেয়ার আর্থ সিরিজ প্রসঙ্গেঃ য়ুটুবে বেশ কিছু ভালো চ্যানেল আছে, ওয়ার্ল্ড ওয়ার আর কোল্ড ওয়ার পিরিয়ডের ওপর। যেমন আর্মচেয়ার হিস্টোরিয়ান, অপারেশান্স রুম, রিয়েল টাইম হিস্টরি ইত্যাদি। তবে আমার বিশেষ আগ্রহ লজিস্টিক্স আর ওভারল মিলিটারি স্ট্র‌্যাটেজি নিয়ে, সেইজন্য ওইধরনের ভিডিওগুলো আমার প্রথম প্রেফারেন্স। যেমন ধরুন, ব্লিটসক্রিগ প্রথম দিকে সাফল্য পেলেও পরের দিকে একেবারে থেমে গেছিল কারন জার্মান সাপ্লাই লাইন ওভারস্ট্রেচড হয়ে গেছিল। আবার উল্টোদিকে ব্রিটিশ ফিল্ড ম্যানুয়াল এর গুরুত্ত্বপূর্ণ অংশ ছিল মোবাইল কিচেন, অর্থাত একেবারে ফ্রন্টলাইন সৈন্যদের কাছেও হট মিল পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। এই কনট্রাস্টিং অপারেশনাল ​​​​​​​স্ট্র‌্যাটেজির ​​​​​​​ফলে ​​​​​​​এই দুই ​​​​​​​পক্ষের ​​​​​​​সৈন্যদের ​​​​​​​মরাল ​​​​​​​কিভাবে ​​​​​​​অ্যাফেক্টেড ​​​​​​​হতো, ​​​​​​​জানতে ​​​​​​​ইন্টারেস্টিং ​​​​​​​লাগে। ​​​​​​​
     
    আমার আরেকটা ইন্টারেস্ট হলো জার্মান দের আর অ্যালায়েড আর্মিদের কোড ব্রেকিং অপারেশান। এনিগমা কোড, পার্পল কোড ইত্যাদি কিভাবে ব্রেক করা হয়েছিল, কিভাবে সিগিন্ট ডিসট্রিবিউট করা হতো ইত্যাদি। এসব নিয়েও য়ুটুবে বেশ কিছু ভালো চ্যানেল আছে। 
  • Ahsan ullah | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ০০:৪৬519207
  • পড়ে খুবই ভাল লাগল। হ্যাপসবুর্গ সাম্রাজ্যের শেষ উত্তরাধিকারী আর্চ ডিউক ফারডিনেন্ডের প্রতি আপনি যে নীরব সহানুভূতিশীল লেখা লিখেছেন তা আমারও হৃদয়ের কোনা ছুঁয়ে গিয়েছে। অটো হান বিসমার্কের কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে, এটা আপনিও উল্লেখ করেছেন। অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান ও ওসমানীয়া সাম্রাজ্যের পতনের কারণে বিংশ শতাব্দীর পরিচয় হলো মানসিক যন্ত্রণার যুগ হিসাবেই, কত প্রতিভা যে অকালে ঝরে মুখ থুবড়ে পড়েছে তার হিসেব নেই। 
  • হীরেন সিংহরায় | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ০১:৪৫519212
  • অশেষ ধন্যবাদ । সম্পুর্ণ সহমত।
     
    আর্ক ডিউক ফারদিনানদ জীবনের শেষের দু দিন তাঁর স্ত্রী সোফির সংগে একত্রে গাড়ি চড়েছেন - এটা বড বেদনার মতো বেজেছে আমার মনে। রক্ত মাংসের নর নারী রাজা সাজার মূল্য দিয়েছেন। আরো অবাক হয়েছি ( অস্ট্রিয়ান সূত্র অনুযায়ী ) জেনে যে ফারদিনানদ সারবিয়ান স্বতন্ত্রতার প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন- কাকা ফ্রানতস য়োসেফের বিরোধী মত পোষণ করতেন। নিহত হলেন সারবিয়ান গাভরিলোর গুলিতে। ভবিতব্য ।  
  • আহমেদ আতিফ আবরার | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১০:২২519217
  • আপনি কি ডয়েচ থেকে কিছু অনুবাদ করছেন বা করেছেন?
  • হীরেন সিংহরায় | ৩০ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০২519219
  • সরাসরি কোন লেখার অনুবাদ করি নি আপাতত তথ্যের খাতিরে যা কিছু পাই সেটার ব্যবহার করি। তবে ইচ্ছে আছে -আমার প্রিয় বিষয় ১৯১৪-১৯৪৯ এই সময়টা বিষয়ে কিছু অল্প বা অজানা বইয়ে অনুবাদ করার। কত কম যে জানি প্রতি পদে আবিষকার করছি। যেমন জারমানিতে আমাদের ছোটো গ্রামের দোকানে একান্ত বিরল বই পেয়েছি - দেখি কবে করা যায় 
  • আহমেদ আতিফ আবরার | ০৯ মে ২০২৩ ১৫:২৯519625
  • মুখিয়ে রইলাম, কত ধ্রপদী বইয়েরই এখনো অনুবাদ হয় নি! বাঙালি তো এক ইংরেজি ভায়া হয়ে পড়তে পড়তেই রাত কাবার করল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন