- আপনার গাড়ির দাম ডবল করতে চান?
- কি করে?
- পুরো ট্যাঙ্ক তেল ভরে।
যে গাড়ি নিয়ে এমনিধারা অজস্র কৌতুক সাতের দশকে জার্মানিতে এবং ইংল্যান্ডে শোনা যেতো তার নাম শ্কোডা, তৈরি হতো সে আমলের চেকোস্লোভাকিয়াতে। তৎকালীন পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশের কিছু গাড়ির নাম জানা ছিল কিন্তু আমাদের রাস্তায় তাদের দেখি নি ; যেমন পূর্ব জার্মানির ত্রাবান্ত, ওয়ারটবুরগ অথবা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভোলগা বা লাদা। কোনো অসীম দুঃসাহসে একদিন শ্কোডা পশ্চিমে দেখা দিয়েই নির্মম পরিহাসের বস্তু হয়ে পড়ে।
হালে আমাদের সংসারে স্বল্প ব্যবহারের মানে দোকান বাজার করার জন্য ছোট আকারের গাড়ি খুঁজছিলাম; নিকটবর্তী শহর অলডারশটে বেশ কয়েকটি শো রুম ঘুরে যে গাড়িটি পছন্দ হলো সেটি শ্কোডা ফাবিয়া। রোদিকার নিতান্ত বিরাগভাজন হবো জেনেও জশ নামের যুবক সেলসম্যানকে ওই জোকটি শোনানোর লোভ এড়াতে পারলাম না। জশ হেসে বললে, সার, শ্কোডা গাড়ি কিন্তু অনেক বদলে গেছে, এখন জার্মান এঞ্জিনিয়ারিং ! নির্ভয়ে কিনতে পারেন। তবে এই গাড়ি নিয়ে আরও কিছু ঠাট্টা আমারও জানা আছে, এই ধরুন, শ্কোডা গাড়িকে স্পিডে কে হারাতে পারে? উত্তর হলো, আপনি, দৌড়ে !
স্টুটগারট শহরের রাজকীয় জার্মান টেকনিকাল অফিস থেকে যেদিন মানহাইমের এঞ্জিনিয়ার কার্ল বেন্তস তাঁর গ্যাস এঞ্জিন চালিত তিন চাকার কোচের পেটেন্ট পেলেন সেই দিনটিকে, বুধবার ২৯শে জানুয়ারি ১৮৮৬, মোটর গাড়ির জন্ম তারিখ বলে মানা হয়। তার জন্মকুণ্ডলি বা পেটেন্ট নম্বর ৩৪৭৩৫। সেই একই সময়ে স্টুটগারটের কানস্টাটে গটলিব ডাইমলার ও ভিলহেলম মাইবাখ ইন্টারনাল কমবাশচন মোটর দিয়ে প্রথম অশ্ব বিহীন ঘোড়া গাড়ি চালিয়েছেন। তবে মোটর গাড়ির পেটেন্ট নেবার ক্রেডিট কার্ল ফ্রিডরিখ বেন্তসের।
খবরটা ছড়িয়ে গেল। হাবসবুরগ সাম্রাজ্যের বোহেমিয়ায় ( বোয়মেন ) ভেলভারি শহরের ভাতস্লাভ ক্লিমেন্তের বয়েস তখন সতেরো, পেনসিনের ভাতস্লাভ লাউরিনের বয়েস একুশ। কয়েক বছর বাদে এই দুই ভাতস্লাভ প্রথমে সাইকেল ও তার পরে বেন্তসের প্রদর্শিত পথে এঞ্জিন জুড়ে মোটর সাইকেল বানাবেন প্রাগ থেকে ষাট কিলোমিটার উত্তরে, ম্লাদা বোলেস্লাভ শহরে। একদিন বেন্তস, মাইবাখ, ডাইমলারের মতন তাঁরাও বানাবেন চার চাকার গাড়ি। রেলপথ, অস্ত্র শস্ত্র, বন্দুক বানিয়ে প্রভূত ধন অর্জন করার পরে চেক শিল্পপতি এমিল শ্কোডা দুই ভাতস্লাভের কোম্পানি কিনে নিয়ে তাঁর নিজের নামটি জুড়ে দিলেন। সে নাম রয়ে যাবে ( যদিও শ্কোডার অর্থ ‘বেজায় মন্দ ‘) ! যে গাড়ি আমরা সেদিন অলডারশটের শো রুমে দেখলাম, সেটি চেক রিপাবলিকের ম্লাদা বোলেস্লাভ শহরের কারখানায় তৈরি, যদিও এই কোম্পানির পূর্ণ মালিকানা এখন জার্মান ফোলকসভাগেনের। আজ শ্কোডার ট্যাগ লাইন – সিম্পলি ক্লেভার।
প্রসঙ্গত শ্কোডা মোটর তাদের টপ রেঞ্জ গাড়ির নাম দিয়েছে সেই দুজনের সম্মানে, ক্লেমেন্ত লাউরিন ; মার্সিডিজ বেন্তসের সেরা গাড়ি তাদের প্রথম ডিজাইনারের নামে, মাইবাখ।
ঠিক সেই সময়ে ম্লাদা বোলেস্লাভের অনতিদূরে, বোহেমিয়ার মাফারসডরফ গ্রামে ( অধুনা ভ্রাতিস্লাভিসে নাদ নিসো)এগারো বছর বয়েসের বালক ফারদিনান্দ তার বাবার কামারশালায় বসে শুনলো কার্ল বেন্তস নামের এক জার্মান এঞ্জিনিয়ার মোটর গাড়ি বানিয়েছেন – ঘোড়ার গাড়ি ও গাধা থেকে পরিবহনের পরবর্তী ধাপ! সেদিন থেকেই তার মাথার ভেতরে ঢুকে গেল গাড়ির মায়া, গতির কাব্য। আই ফোন বা ফেসবুকে সময় নষ্ট করার সুযোগ ছিল না, ফারদিনান্দের সময় কাটে যন্ত্রপাতি নিয়ে। প্রাইমারি স্কুলের অ আ ক খ শেখা শেষ হতেই ছেলের মতি গতি দেখে পিতা আন্তন পরশে তাঁকে পাঠালেন তিন মাইল দূরে রাইখেনবেরগের (বর্তমানে চেক শহর লিবেরেস -‘আমার জার্মানি’ বইতে সে অঞ্চলের গল্প বলেছি) অস্ট্রিয়ান সরকারি সান্ধ্য টেকনিকাল স্কুলে- দিনটা কাটে কামারশালায় ! বাপের চেনা জানার সূত্রে মাত্র আঠারো বছর বয়েসে ফারদিনান্দ গেলেন ভিয়েনা, বেলা এগার গাড়ি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে। মাঝে মধ্যে ঢুঁ মারেন ভিয়েনা পলিটেকনিক স্কুলে, যেখান থেকে কোনো ডিগ্রি ডিপ্লোমা অর্জন করেন নি ফারদিনান্দ- বিশ বছর বাদে ভিয়েনা টেকনিকাল বিশ্ববিদ্যালয় এই অনন্য এঞ্জিনিয়ারকে অনারারি ডক্টর উপাধি প্রদান করেন। যদিও এটি নিতান্ত সাম্মানিক, ফারদিনান্দ পরবর্তীকালে নিজের নামের আগে ডক্টর লিখতেন- ডক্টর ইনগেনিউর এইচ (অনরিস) সি (কাউসা) ফারদিনান্দ পরশে।
ডাইমলারের অস্ট্রিয়ান শাখায় সতেরো বছর কাজ করে গেলেন তাদের স্টুটগারটের হেড অফিসে। নিরন্তর পরীক্ষা নিরীক্ষায় ক্লান্তিহীন ফারদিনান্দ পরশে বদলে দিলেন সে যাবত পরিচিত গাড়ির চেহারা। ডাইমলার ও বেন্তসের স্বতশ্চলশকটের মডেল ছিল অশ্ববিহীন ঘোড়ার গাড়ি। পরশের ডিজাইন স্বতন্ত্র, দুঃসাহসী এবং গাড়ি দ্রুতগামী। তিনি দিলেন লো লাইন বডি, ফ্ল্যাট এঞ্জিন, অ্যারো ডাইনামিক, এমনকি বাতানুকুলিত এঞ্জিন- ডাইমলার মডেল এস এস কে ১৯০ যা ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার বেগে ধাবিত হতে পারতো। বহু রেসে জিতল তাঁর গাড়ি। পরশের ক্ষিপ্রগতি ভাবনার সঙ্গে তাল দিয়ে উঠতে অক্ষম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি একে একে তাঁকে বিদায় দেন (বেলা এগার, লোনার, ডাইমলার) অথবা ফারদিনান্দ তাদের ত্যাগ করেন – কোন এক অবসর সময়ে তিনি অস্ট্রিয়ান ক্রাউন প্রিন্স আর্কডিউক ফ্রান্তস ফারদিনান্দকে জেপেলিনে ভিয়েনার আকাশে পর্যন্ত উড়িয়েছেন! শেষ মেষ আপন জীবন বিমা বন্ধক রেখে ও জামাইয়ের অর্থ সাহায্যে নিজের কনসালটিং কোম্পানি স্থাপনা করেন যার নাম হলো ‘পরশে’। ফারদিনান্দ পরশে চাইলেন এমন গাড়ি বানাতে যার গতি হবে দ্রুত, ওজনে হালকা, দামেও কম। এমন সময়ে এগিয়ে এলেন বারন ফন অরতজেন – একছাতার তলায় আনলেন আউডি সহ আরও কয়েকটি খুঁড়িয়ে চলা গাড়ি নির্মাতাদের, তার নাম আউটো ইউনিয়ন। ফারদিনান্দ পরশেকে হয়তো বারন বললেন এবার আপনি এবং আপনার হাত যশ!
১৯৩৪ সালের বার্লিন মোটর শোতে পরশে আনলেন নতুন নতুন গাড়ি যা অনায়াসে জয় করলো রেসিং পদক। স্বয়ং হিটলার পরশের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। ফারদিনান্দ পরশেকে বললেন আপনি এমন একটি গাড়ি বানান যা কিনতে পারবে প্রতিটি জার্মান পরিবার। সেটি হবে জনতার গাড়ি। পরশের এই প্রয়াসে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ করলেন আড়াই লক্ষ রাইখসমার্ক (আরও আড়াই লক্ষ গেল মার্সিডিজ বেন্তসের জন্য, তাঁরা বানাতে থাকবেন ধনাঢ্য মানুষের বাহন! হিটলার নিজে মার্সিডিজ চড়তেন)।
এই সঙ্গে হিটলার বললেন সাম্প্রতিক কালে চেকোস্লোভাকিয়া ভ্রমণের সময়ে তাতরা নামের একটি গাড়ি চড়ে ( হিটলারের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না) তিনি সাতিশয় আনন্দিত হয়েছেন। গাড়ি ভালবাসেন কিন্তু তিনি এঞ্জিনিয়ারিং বোঝেন না। তবে সেই তাতরা গাড়ির গড়ন, গতি ও দাম সবটাই তাঁর মনের মতন। সে গাড়ির অস্ট্রিয়ান নির্মাতার সঙ্গেও তাঁর আলাপ হয়েছে, তিনি ওই তাতরা গাড়িতেই প্রাণ মন সমর্পণ করেছেন। হিটলার মনে করেন তাতরা টাইপের গাড়ি জার্মানির পথে পথে, বিশেষত সদ্য নির্মিত অটোবানে চলুক, প্রতি জার্মান দুয়োরে শোভা পাক। নাম হবে হবে জনতার গাড়ি ফোলকসভাগেন ( ফোলক- জনতা ; ভাগেন-বাহন)! উত্তর জার্মানির ফালারসলেবেন শহরের কাছে অনেকটা জমিও তিনি দেবেন - সেখানে পরশে গড়ে তুলুন তাঁর কারখানা, পুরো প্রকল্পের নাম সানন্দ শক্তি (ক্রাফট দুরখ ফ্রয়ডে)।
শেষে হিটলার বললেন, ‘আমার একটা শর্ত আছে। স্লাভ জাতি, বিশেষ করে চেকোস্লোভাকরা ঊনটার মেনশেন, মানুষের থেকে নিচু স্তরের। আপনি যদি এই প্রকল্পের ভার নিতে ইচ্ছুক হন, আপনাকে জার্মান নাগরিকত্ব নিতে হবে।’
বার্লিন থেকে বাড়ি ফিরে ফারদিনান্দ পরশে স্টুটগারটের চেকোস্লোভাক কনসুলেটে নিজের হাতে তাঁর পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে সে দেশের সঙ্গে তাঁর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করলেন।
১৯৩৬/৩৭ সালে পরশের নতুন গাড়ির ( তখন নাম ছিল কে ডি এফ - ক্রাফট দুরখ ফ্রয়ডে ) বিষয়টা চাউর হলে তাতরা কোম্পানি পেটেন্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনে পরশের বিরুদ্ধে। ফারদিনান্দ পুরোটা অস্বীকার করেন নি ; বলেছিলেন আমরা দুজনেই একে অপরের কারখানায় উঁকি দিয়েছি মাত্র, তাকে ঠিক টোকা বলা যায় না! মামলা বেশিদূর এগোনোর আগেই হিটলার অবশ্য অন্য সমাধান করলেন – চেকোস্লোভাকিয়া দখল করে তাতরার টুঁটি চেপে ধরলেন, টি ৯৭ গাড়ির প্রোডাকশন নিষিদ্ধ হলো। ফোলকসভাগেনের পথ খুলে গেল - অটোবানের মতো উন্মুক্ত, প্রশস্ত। কিন্তু সে গাড়ি বানানোর পথে বাধা দিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পরশে তাঁর কারখানায় জনতার গাড়ি নয়, ট্যাঙ্ক বানানোয় মন দিলেন। অনন্য দক্ষতার সঙ্গে বানালেন নানান ট্যাঙ্ক (তার মধ্যে বিশেষ খ্যাত ট্যাঙ্ক শিকারি -পান্তসারইয়েগার), ভি টু রকেটের সরঞ্জাম – ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূল থেকে সে রকেট নিক্ষিপ্ত হতো লন্ডনের উদ্দেশ্যে। আমাদের ফ্রান্সের গ্রামের বাড়ির কাছে বনের মাঝে সেই রকেটের কিছু লঞ্চ প্যাডের অবশেষ দেখেছি।
হিটলারের আমলে পরশের বানানো জনতার গাড়ি বাজারে আসে নি। যুদ্ধের পরে তার প্রোডাকশন শুরু হলো- সস্তেকা আউর টিকাউ বিটল গাড়ি বিক্রি হতে থাকে লাখে লাখে - এই ব্র্যান্ড আজ অবধি দুনিয়ার গাড়ির ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় মডেল। ১৯৭৯ সালে শেষ বিটল গাড়িটি মেক্সিকোর কারখানা থেকে যেদিন বেরিয়ে এলো ততদিনে প্রায় আড়াই কোটি বিক্রি হয়েছে।
হিটলারের চেকোস্লোভাকিয়া দখলের পরে তাতরা কোম্পানির ব্যবসা প্রায় বন্ধ। নতুন গাড়ি ডিজাইন করাটাই অর্থহীন। হান্স লেদভিঙ্কার দিন কেমন করে কেটেছে তার কাহিনি জানা যায় না। তবে তিনি কোনদিন তাঁর আপন দেশ অস্ট্রিয়া ফিরে যান নি। যুদ্ধের শেষে চেকোস্লোভাক কমিউনিস্ট সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় - অভিযোগ তিনি নাৎসি সরকারের সমর্থক ছিলেন ! তাঁর মুক্তি হলো ফারদিনান্দ পরশের মৃত্যুর কয়েকদিন বাদে ! তখন লেদভিঙ্কার বয়েস ৭৩। বন্দিদশা শেষ হওয়া মাত্র ফোলকসভাগেন ফারদিনান্দ পরশেকে অফিসের দুয়োর খুলে দিয়েছিলেন ; লেদভিঙ্কার কারামুক্তির সঙ্গে সঙ্গে হয়তো তাঁর গুণ বিচারি চেকোস্লোভাক সরকার তাঁকে তাতরা কোম্পানিতে যোগ দেবার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানালেন। ধন্যবাদ সহকারে সে প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দেন। অস্ট্রিয়া ছেড়ে যে দেশকে তিনি আপন করে নিয়েছিলেন, তিন দশক বাদে সেই চেকোস্লোভাকিয়া ত্যাগ করে চলে গেলেন মিউনিক। অবসর সময়ে হয়তো কার ম্যাগাজিন দেখেছেন, স্কেচ প্যাডে ড্রইং করেছেন কিন্তু তাঁকে আর কখনো কোন গাড়ি কোম্পানির অফিসে বা কারখানায় দেখা যায় নি।
ভাগ্যের পরিহাসটুকু বাকি ছিল।
১৯৬৫ সালে পেটেন্ট চুরির বিবাদ মেটাতে অপরাধ স্বীকার না করে ফোলকসভাগেন দশ লক্ষ ডয়েচে মার্ক ক্ষতিপূরণ দেয় চেকোস্লোভাক সরকারকে। ফারদিনান্দ পরশে তখন অন্য জগতে। সাতাশি বছরের হান্স লেদভিঙ্কা তাঁর মিউনিকের বাড়ির নিরালায় বসে কি ভেবেছিলেন, সুবিচার তাহলে হলো, শেষ পর্যন্ত?
ফারদিনান্দ পরশে ও হান্স লেদভিঙ্কা ইতিহাসে বাঁধা থাকবেন একই সূত্রে।
সেই বন্ধনের রঙ্গমঞ্চ এককালের বোহেমিয়া মোরাভিয়া নয়, পুরনো চেকোস্লোভাকিয়ার এক অংশ, তার নাম স্লোভাকিয়া
তাতরায় লেদভিঙ্কার কারখানা থেকে দু ঘণ্টার দূরত্বে, ব্রাতিস্লাভা শহরের প্রান্তে একুশ লক্ষ বর্গ মিটার জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে ফোলকসভাগেন গাড়ির এক বিশাল ফ্যাক্টরি, মোটর সিটি; পৃথিবীর একমাত্র কারখানা যেখানে এক ছাউনির তলায় তৈরি হয় চারটে বিভিন্ন মডেলের গাড়ি - আউডি (কুয়াত্র), পরশে (কায়েন), শ্কোডা (সুপারব), ফোলকসভাগেন (তুয়ারেগ)।
সেখান থেকে আরেকটু পুবে, ঘণ্টা দুয়েকের দূরত্বে, মারটিন শহরে প্রায় এক লক্ষ বর্গ মিটার কারখানায় ফোলকসভাগেন বানায় মোটর গাড়ির আবশ্যিক যন্ত্রপাতি।
ফোলকসভাগেন স্লোভাকিয়ায় বিশ হাজার মানুষ কাজ করেন, বছরে কুড়ি বিলিয়ন ডলারের গাড়ি রপ্তানি হয়, সেটি স্লোভাকিয়ার জাতীয় আয়ের সিংহভাগ।
ডেট্রয়েট বা ডিয়ারবর্ণ দেখি নি কিন্তু কমারতসব্যাঙ্কের আমন্ত্রণে দেখেছি ভলফসবুরগের আউটোস্টাড, সিটি ব্যাঙ্কের কারণে ব্রাতিস্লাভার মোটর সিটি। তারা বহন করে শুধু গত শতাব্দীর নয়, ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ গাড়ি নির্মাতা ফারদিনান্দ পরশের অমর স্মৃতি।
হান্স লেদভিঙ্কার তাতরার ষাট কিলোমিটার দূরে জিলিনায় তৈরি হচ্ছে কিয়া মোটর গাড়ি। তার পাশা পাশি এসেছে জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার, ফ্রান্সের পিউজো ; সব মিলিয়ে পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের দেশ স্লোভাকিয়া বছরে বানায় বারো লক্ষ গাড়ি, মাথা পিছু হিসেবে দুনিয়ায় এক নম্বর কার মেকার।
ফারদিনান্দ পরশে চেকোস্লোভাকিয়া ছেড়ে গেলেন জার্মানি, নিজের হাতে লিখলেন মোটর গাড়ির ভবিষ্যৎ। হান্স লেদভিঙ্কা অস্ট্রিয়া ছেড়ে গেলেন চেকোস্লোভাকিয়া, বিঘ্নিত হলো তাঁর সাধনা। পঞ্চাশ বছর কেটে গেলে এই দুই অসাধারণ এঞ্জিনিয়ারের যুগ্ম সাফল্যের আশীর্বাদ কি নেমে এলো সেই একই দেশে?
ডিভাইন জাস্টিস?