ফরাসের ওপরে বসে তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বড়ো বাবু বললেন, এসো, বোসো হে ছোটো। এ বছরের খরচা পাতির হিসেবটা আমরা দুজনে মিলে দেখে আগামী সনের ব্যয় বরাদ্দ করি। নায়েব মশায় বিশদ ফিরিস্তি লিখে এনেছেন; চাষের জমি জমা ইজারার আয়; গোয়ালের গোরু মোষ, আস্তাবলের ঘোড়া, ফিটন আর কোচওয়ান, পাহারাদার, লাঠি বন্দুক, সরকারের রাজস্ব বাবদ যাবতীয় ব্যয়। আমার মহলগুলি উত্তর আর পুবে, তোমার দক্ষিণে। চাষ আর ইজারার জমি নিয়ে আমার অংশ তোমার দ্বিগুণ তাই আয়ের যেমন ব্যয়ের তেমনি দুই ভাগ আমার, এক ভাগ তোমার।
ছোটো বাবু বললেন, অতি অবশ্য। কিন্তু দাদা কিছু দিন যাবত একটা কথা বলব বলব ভাবছি। আমার একটি আর্জি আছে। সেই কত বছর আগে ব্রিটিশ রাজত্বের শেষে আমরা স্বাধীনতা পেলাম। যদিও আপনার আমার পূর্ব পুরুষের রক্তের সম্পর্ক ছিল না কিন্তু পড়শি সুলভ সৌজন্যের খাতিরে দুই তরফের চাষের, বসতের জমি, পুকুর বাগান, পথ ঘাট আলাদা রেখেও এক বৈঠক খানায় বসে যৌথ আয় ব্যয়ের চর্চা করেছি। আমরা বাস করি এক বড়ো গাঁয়ে, আমাদের দু তরফের মুখের ভাষাটা মেলে অনেকখানি,বছরে ক’বার এই ঘরে বসি। কিন্তু দেখুন আমাদের এজমালি বিষয়, আয় ব্যয়ের হিসেব আর বণ্টন; সেটা বাদে দুই তরফের সেরেস্তা, কাছারি, ইস্কুল, কলেজ সবটাই পৃথক। এখন আমাদের সংসার আলাদা করে নিতে পারি না?
বড়ো বাবু কৌতূহলী চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, এ কথা উঠলো কেন হঠাৎ? এটা কি তোমার ইচ্ছে? আজকাল লোকমত মেনে চলার রেওয়াজ হয়েছে। তোমার রায়তদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছো?
ছোটো বললেন, আমার জমিদারির নায়েব সেরেস্তাদারের এবং আমার মত এই যে আর সব কিছুই যখন আলাদা তখন বাৎসরিক হিসেবটাও আলাদা করে করা হোক আপনার সম্মতি সাপেক্ষে। কোন বাদ বিসম্বাদের স্থান থাকে না। তবে প্রজাদের ডেকে সালিশি করিনি। তাদের বিশেষ আপত্তির কারণ থাকতে পারে বলে মনে হয় না। আমার খুব কম প্রজা আপনার জমিদারিতে বাস করে, আপনার কোন প্রজাকে আমাদের দিকটায় বিশেষ দেখা যায় না। অতএব জমিজমার ভাগ বাঁটোয়ারা হলে কাউকে ঘরছাড়া হতে হবে না। যে যেখানে আছে সে সেখানেই থাকুক, আমার যে প্রজা আপনার মহলে রয়ে গেল সে আপনাকেই খাজনা দেবে।
অবশ্যই এটি একটি কাল্পনিক সংবাদ।
অখণ্ড চেকোস্লোভাকিয়া আমি দেখি নি। টুরিস্ট ভিসা থাকা সত্ত্বেও একদিন (জুন ১৯৭৯ ) ইয়েগার বা চেব নামক জার্মান/চেক সীমান্ত চৌকি থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। বাণিজ্যিক কারণে যতদিনে সে অঞ্চলে আমার আসা যাওয়া শুরু হলো চেক এবং স্লোভাকিয়াকে দুটি স্বতন্ত্র দেশ বলে চিনেছি। পরিচিত জনের গল্প, তৎকালীন মানুষের আঁখো দেখা হাল শুনে মনে করে নিতে অসুবিধে হয় নি বত্রিশ বছর আগের একদিন ব্রাতিস্লাভা দুর্গের একটি সুরম্য কক্ষে বসে চেক রাষ্ট্রপতি ভাতসলাভ হাভেল ও স্লোভাক আঞ্চলিক প্রধান ভ্লাদিমির মেচিয়ারের মধ্যে এমনি বার্তালাপ হয়েছিল। শুধু ওই কাল্পনিক সংলাপে ব্রিটিশের জায়গায় পড়ুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান রাজত্ব!
সার্বিয়ান ও ক্রোয়েশিয়ান জাতিগত পরিচয়ে স্লাভ কিন্তু এক পতাকার তলায় কখনো বাস করেন নি,এক জাতীয় সঙ্গীতে গলা মেলান নি ১৯১৮ সালের আগে। সেই যুক্ত পরিবার সত্তর বছর টিকল না। চেক এবং স্লোভাক পড়শির মতন বাস করেছেন, একই সময়ে ভিয়েনাকে কর দিয়েছেন, গট এরহালটে ফ্রান্তস ডেন কাইজার এই অস্ট্রিয়ান জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছেন।
বার্লিন ওয়ালের পতন এবং পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজমের কেন্দ্রীয় কম্যান্ডের অবসানের পরে পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, রোমানিয়া, বুলগারিয়া বাদে বাকি দেশগুলিতে নেমে আসে গৃহযুদ্ধের করাল ছায়া। ধর্ম, ভাষা, রাজনীতির নামে সোভিয়েত ইউনিয়ন পনেরো ভাগে, ইউগোস্লাভিয়া ছ’ভাগে বিভক্ত হলো। আরও ভাগ হবার সম্ভাবনা যথেষ্ট প্রকট। এই গত গ্রীষ্মে বেলগ্রেড নোভি সাদের দেওয়াল লিখন দেখে এলাম- “কসোভো সার্বিয়ার অংশ”।
সাড়ে তিন দশক কেটে গেছে, তুষের আগুন এখনও সম্পূর্ণ নেভে নি।
ব্রাতিস্লাভায় সিটি ব্যাঙ্কের নবীন কর্মী মারেক পটোমা বলেছিল নিজের দেশ না হলে আইস হকিতে স্লোভাক প্লেয়ারদের জায়গা জুটবে না তাই আমরা আলাদা হয়েছি! দেশ ভাগের এর চেয়ে জোরালো যুক্তি আমি অন্তত খুঁজে পাই নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে উইলসন ডকট্রিন মাফিক ইউরোপে স্বায়ত্ত শাসনের যে দাবি উঠেছিল তার ফলে পুরনো অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ বিশেষ মিলে তৈরি হলো চেকোস্লোভাকিয়া, এই মাত্তর ১৯১৮ সালে। ক্যাথলিক ধর্মের প্রাধান্য দুই অঞ্চলে, চেকের সঙ্গে স্লোভাক ভাষা প্রায় ৮৫% মেলে; আমার প্রাক্তন সহকর্মী ইভেতার (এখন আবু ধাবিতে) কাছে গল্প শুনেছি – অফিসে সে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে এক চেক কলিগের সঙ্গে। আরেক স্থানীয় সহকর্মী জিজ্ঞেস করে, তোমরা কোন ভাষায় কথা বলছ? ইভেতা বলে, নিজের নিজের মতন, আমি স্লোভাক এবং উনি বলছেন চেক! আমাদের হিন্দি/উর্দু সংলাপের মতন।
জনতার কাছে কেউ জানতে চায় নি তাঁরা কি চান। টিভি, সংবাদপত্রের মত অনুযায়ী চেকের ৩৭% ও স্লোভাকিয়ার ৩৩% অধিবাসী আলাদা হতে চান। গণভোট নেওয়া হলে দেশ হয়তো রয়ে যেতো অবিভক্ত।
সার্বিয়া -ক্রোয়েশিয়া-বসনিয়ায় যখন চলছে রক্তাক্ত সংগ্রাম, রাশিয়ান ট্যাঙ্ক ধেয়ে এসেছে সারা বালটিকে, চেকোস্লোভাকিয়ার পার্টিশনে তখন কিন্তু একটিও গুলি চলে নি। রাস্তায় মিছিল, ময়দানে জমায়েত, উষ্ণ বাক্য বিনিময় অবধি নয়। ছ মাস যাবত একাধিক বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার পরে দেশের সীমানা টানা হলো; সেটা নামেই। দুই দেশের মধ্যে আসা যাওয়ার, আপন পাসপোর্ট বেছে নেওয়ার, (স্লোভাকিয়া দ্বৈত নাগরিকতা অনুমোদন করে, চেক নয় ) কাজ করার স্বাধীনতা। ২০০৪ সালে দুই দেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যোগ দিলে পাসপোর্টের প্রলাপটাই বাতিল হলো।
পুরনো বোহেমিয়ার ধাঁচে বানানো লাল নীল সাদা রইল চেকোস্লোভাকিয়ার পতাকা, স্লোভাকিয়া তার সঙ্গে জোড়ে নীল ক্রিস্টিয়ান ডাবল ক্রস আর তার তিন পাহাড়ের নিশান। কিছুদিন আগে দীঘার কাছে পশ্চিম বাংলা-ওড়িশার সীমান্তে দাঁড়িয়ে মনে হয়েছিল পতাকা আর পাসপোর্ট বাদ দিলে, চেক ও স্লোভাক সীমান্তের সঙ্গে তার কোন তফাৎ নেই!
সাত তাড়াতাড়ি নোট ছাপানো যায় না। যতদিন অবধি নিজস্ব কারেন্সি হয় নি, ব্যাঙ্ক নোটের ওপরে চেক বা স্লোভাক ছাপ মেরে কাজ চালানো গেল ( ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্টেট ব্যাঙ্ক যা করেছিল ) – বিনিময় মূল্য ১:১। সংসারের ঘটি-বাটি, বাসন-কোসন, রেলওয়ে ওয়াগন, ট্রলিবাস, প্রতিরক্ষা সামগ্রী ভাগ হলো ২:১ হিসাবে, দুই ভাগ চেক এক ভাগ স্লোভাক। কেউ কোনো রাষ্ট্রের উত্তরাধিকারের দাবি তোলে নি (সাকসেসর স্টেট)। সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র দুই দেশ যোগ দিল রাষ্ট্রসংঘে। আন্তর্জাতিক খেলাধুলায়, বিশ্বকাপ ফুটবলে, অলিম্পিকে খেলল এক সংযুক্ত দল যেমন যুদ্ধের পরে ১৯৬০ অলিম্পিক পর্যন্ত পূর্ব বা পশ্চিম নয়, দেখা গিয়েছিল একটি “জার্মানি“ টিমকে।
২০০২ সালে স্লোভাকিয়া বিশ্ব আইস হকি জেতে, ২০১০ সালে ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপে খেলে।
চেকোস্লোভাকিয়া থেকে কমিউনিজমের বিদায়কে বলা হয়েছিল মখমল বিপ্লব। এবার এই ঘর ভাগকে বলা হল মখমল বিচ্ছেদ! কোনো প্রতিবাদী কণ্ঠ নয়। যার অদৃষ্টে যা জুটেছে সেই আমাদের ভালো। শুধু একজন বিশিষ্ট মানুষ এই বিভাজনকে মেনে নিতে পারেন নি – পয়লা জানুয়ারি ১৯৯৩ সরকারি ভাবে দুটি নতুন দেশ সৃষ্টি হলে রাষ্ট্রীয় কর্তব্যভার পরিত্যাগ করলেন চেকোস্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাতসলাভ হাভেল।
অর্থনীতিকরা সংশয় প্রকাশ করলেন – স্লোভাক স্বায়ত্তশাসন উত্তম প্রস্তাব, কিন্তু বড়ো ভাই চেক রিপাবলিকের সুপরামর্শ, ফেডারাল প্ল্যানিং না থাকলে দেশটা টিঁকবে কি করে? ইজ স্মল বিউটিফুল? একটা ভদ্র গোছের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবধি নেই; ১৯৯৪ সালে ব্রাতিস্লাভা এয়ারপোর্ট থেকে শহরে যাবার জন্য একজনকে বাবা বাছা বলে গাড়ি শেয়ার করেছি।
চেক রিপাবলিকের শিল্পের ইতিহাস দুশো বছরের, তারা গাড়ি বানাচ্ছে একশো বছর। এঞ্জিনিয়ারিং, অস্ত্র (স্মল আর্মস), মোটরসাইকেল, গাড়ি তৈরিতে তাদের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে কোন ভাঙচুর হয় নি – দেশের নাম রৌশন করে রেখেছেন বড়ো ভাই চেক। ছোটো ভাই স্লোভাকিয়ার আছে কি? চাষবাস, লোহা, কসিচের বিশাল ইস্পাতের কারখানা, ব্রাতিস্লাভার উপকণ্ঠে কিছু গাড়ি তৈরি হয়, চমৎকার সব টুরিস্ট স্পট দুর্দান্ত বিয়ার আর অজস্র কাসল।
চেকোস্লোভাক অর্থনীতিক পরিকল্পনায় স্লোভাকিয়ার স্থান ছিল নগণ্য।
পঞ্চাশ লক্ষ মানুষের দেশ স্লোভাকিয়া; কলকাতা শহরে তার তিন গুণ মানুষ বাস করেন। দেশটার আয়তন পশ্চিম বাংলার অর্ধেক। জাতীয় আয় দশ বিলিয়ন, মাথা পিছু আয় দু হাজার ডলার (ভারতে মাথা পিছু আয় তখন ৩৪৭, চিনে ৩১৭; আজ যথাক্রমে ২২০০ এবং ১২০০০)। বড়ো ভাই চেকের মাথা পিছু আয় প্রায় পাঁচ হাজার ডলার, জাতীয় আয় তিরিশ বিলিয়ন।
নতুন স্লোভাক সরকারের ফোকাস গেল ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস সেক্টরে (আজ অর্ধেক নাগরিক সেখানে কর্মরত)। শুরু হলো বেসরকারিকরণ; রাশিয়া, চেক রিপাবলিক সেটি সম্পন্ন করেছে ভাউচার বেচে। ১৯৯২ সালে সকল রাশিয়ান নাগরিক পেলেন দশ হাজার রুবলের ভাউচার যার বদলে তাঁরা কিনতে পারবেন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। ইনফ্লেশন তখন তুঙ্গে, খাওয়া জোটে কষ্টেসৃষ্টে। বেশিরভাগ মানুষ তৎক্ষণাৎ সেই রসিদ অন্য কাউকে বেচে দিয়ে অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করলেন। এনটার দি ড্রাগন – দেশের অবস্থা, এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই; আগাপাশতলা করাপ্ট মাফিয়া সেগুলি করায়ত্ত করে লুটে নিলেন স্টেট অ্যাসেট। এঁরা অবিশ্যি আজকাল অলিগারক নামে পূজিত হয়ে থাকেন, চেলসি, আর্সেনাল ফুটবল দল, অথবা লন্ডন ওয়েস্ট এন্ডে মহার্ঘ্য অট্টালিকা কেনেন। আট বছর বয়েসে অনাথ, সারাতভে দিদিমার আশ্রয়ে পালিত এক ইহুদি বালক রোমান আব্রাহামোভিচ কিমিতি কীভাবে অগাধ সরকারি সম্পত্তির মালিক হলেন সে প্রশ্ন করার হিম্মত লন্ডন, নিউ ইয়র্কের, কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার নেই, অ্যাকাউনট খোলার সময়ে মিখাইল ফ্রিডমানের টেলিফোন বিল দেখতে চায় না লন্ডনের কোনো ব্যাঙ্ক।
চেক রিপাবলিক তার বড়োভাই রাশিয়ার নির্দেশিত পথে চলেছে – সেখানেও আদ্যোপান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত অলিগারক শ্রেণির দর্শন মেলে। নির্দ্বিধায় বলতে পারি রাশিয়ান /চেক রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির মালিকানা বণ্টন পদ্ধতি ছিল 'লাইসেন্স টু লুট', যে মোচ্ছবে মুক্ত অর্থনীতির তাবৎ ব্যাঙ্ক, রেগুলেটরি অথরিটি, উকিল-ব্যারিস্টার মানি লনডারিং নামক বিড়ম্বনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দু’হাত বাড়িয়ে তাদের সহায়তা করেছেন, আইনি পন্থায় ডাকাতির সুরাহা করে দিয়েছেন (কেউ বলেন, লিগালাইজড ক্রাইম)।
স্লোভাকিয়ার মেচিয়ার সরকার চেকোস্লোভাক আমলে চালু ভাউচারের হরিলুট বন্ধ করলেন। বানালেন এক ন্যাশনাল প্রপার্টি ফান্ড: যে পঁয়ত্রিশ লক্ষ স্লোভাকের কাছে ভাউচার ছিল, সেগুলিকে পাঁচ বছরের বন্ডে কনভার্ট করা হলো। সরকার গ্যারান্টি দিলেন সরকারি সম্পত্তি বেসরকারিকরণের মূল্য দিয়ে সেই সব বন্ড হোল্ডারদের প্রাপ্য টাকা মেটানো হবে। এ কাজ সম্পন্ন হলো ক্ষিপ্র গতিতে। আস্থা পেলেন আন্তর্জাতিক নিবেশক; ফলত বিদেশি পুঁজি
(ফরেন ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট) বেড়েছে দ্রুত। এই শতাব্দীর শুরু নাগাদ স্লোভাক ব্যবসা বাণিজ্যের তিন চতুর্থাংশ বেসরকারি মালিকানায় চলে গেছে। তুলনামূলক ভাবে সেই সময়ে পশ্চিমের ফ্রি মার্কেটের পুরোধা জার্মানির ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও শিল্পের বিশাল অংশ থেকে গেছে সরকারি মালিকানায়, ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি বলে ফরাসি এবং অস্ট্রিয়ান সরকার বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বিক্রি করার বৃথা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সুইডেনের ৫৩টি বৃহৎ শিল্পসংস্থা সম্পূর্ণভাবে সরকারি, সেখানে কাজ করেন দু লক্ষ লোক।
তখন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জ্ঞানীগুণীরা অবশ্য নিয়মিত ভাবে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিকে চেতাবনি দিয়ে যাচ্ছেন – ভাইয়োঁ ঔর বেহনোঁ, কমিউনিস্ট ভাবনার দিন চলে গেছে। কোম্পানি বা ব্যাঙ্ক চালানো সরকারের কাজ নয়।
ফাস্ট ফরওয়ার্ড
নতুন রাষ্ট্র গড়ার বারো বছর বাদে স্লোভাকিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ অর্জন করে, তার পাঁচ বছর পরে ইউরো মুদ্রাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়। চেক এখনও আঁকড়ে আছে তার আপন কোরুনা মুদ্রাকে।
স্লোভাকিয়ার মাথা পিছু আয় আজ একুশ হাজার ডলার, জাতীয় আয় একশ পনেরো বিলিয়ন ডলার, তিরিশ বছরে দুটিই বেড়েছে দশগুণ।
কীসের মন্তরে?
ছোট্ট দেশ স্লোভাকিয়ার এই দুরন্ত অর্থনৈতিক সাফল্যের কারণ বহুবিধ। তার সঙ্গে বিশেষ ভাবে জড়িয়ে আছে মোটর গাড়ি আর আছেন এক যুগান্তকারী মানুষ: কার্ল বেন্তস, ওয়াল্টার বেনটলি, এত্তরে বুগাতি, গটলিব ডাইমলার, হেনরি ফোরড, আউগুসট অটো, হেনরি রয়েস ইত্যাদি এক ডজন প্রবাদ প্রতিম নির্মাতাকে টপকে ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে লাস ভেগাসের এক অনুষ্ঠানে তাঁকে মরণোত্তর কার এঞ্জিনিয়ার অফ দি সেঞ্চুরি সম্মানে বিভূষিত করা হয়: তাঁর নাম আপনারা সকলেই জানেন, জন্মসূত্রে জার্মানভাষী অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান পরে চেকোস্লোভাক নাগরিক
ফারদিনান্দ আনতন এরনসট পরশে
ক্রমশ...