- একবার আসবেন?
- অবশ্যই। তবে ক্লিয়ারিঙের বান্ডিল নিয়ে হের বাউয়ার পৌঁছুবেন ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই।
- আজ না হয় ফ্রাউ রুফের হাতে সেটার ভার দিয়ে আমার অফিসে চলে আসুন। কথা আছে।
ডাক পড়েছে আমার বস, কারেল সোভার অফিসে।
আমাদের অফিস বাড়িটা হোখটিফ (আক্ষরিক অর্থে উঁচু নিচু) নামের একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানির ফ্রাঙ্কফুর্ট অফিসের বাড়িতে। কনটিনেনটাল ব্যাঙ্ক দুটি তলা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালায়, এক তলায় বাঁ দিকের বিশাল হলে ফরেন এক্সচেঞ্জ, মানি মার্কেট এবং ডান দিকের স্বতন্ত্র তিনটে ঘর – তার প্রথমটিতে বসেন অপারেশনসের সর্বময় কর্তা কারেল সোভা, তাঁর জানলার বাইরে বাগানের লনের শোভা!
কনটিনেনটাল ইলিনয় ব্যাঙ্ক অ্যান্ড ট্রাস্ট কোম্পানি অফ শিকাগোর ফ্রাঙ্কফুর্ট শাখায় যোগ দিয়েছি এক বছর আগে; দ্বিতীয় চাকরি। ঠিকানা বোকেনহাইমার লানডস্ত্রাসে চব্বিশ নম্বর, ফ্রাঙ্কফুর্ট ওয়েস্ট এন্ড। এই শহরে আমার প্রথম আস্তানা শুমানস্ত্রাসের আটচল্লিশ নম্বরের বাড়িটি প্রায় দেখা যায়! সমাপতন কি একেই বলে? চাকরি বদল হলেও ট্রাম স্টপ বদলায় নি -স্পরস্ত্রাসের বাড়ি থেকে বারো নম্বর ট্রাম ধরে নামি ওপার্ন প্লাতসে; একটু পেছনে থেকে যায় স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অফিস, এগিয়ে ডাইনে মুড়লেই সাত মিনিটের হাঁটা পথে কনটিনেনটাল ব্যাঙ্ক, চলতি কথায় শুধু কনটি। কর্মী সংখ্যা চল্লিশ, আমি একমাত্র ভারতীয়।
কারেল সোভা চেকোস্লোভাক। মেদ বিহীন দীর্ঘ দেহী পুরুষ, মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি, বয়েস হয়তো পঞ্চাশের কাছাকাছি। তাঁর জন্ম প্রাগের অদূরে, প্লজেন। কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিভাগে কাজ করতেন প্রাগ শহরে। ১৯৬৮ সালে প্রাগ বসন্তে* (প্রাগ স্প্রিং / প্রাগার ফ্রুইলিং) সপরিবারে সীমানা পেরিয়ে জার্মানি আসতে সক্ষম হন। যতটুকু বলেছিলেন তা থেকে জানি সীমানায় (আবার সেই জার্মান এগার / চেক খেব!) চেক রক্ষী কোন বাধা দেয় নি। সেই দুয়ারটুকু পেরিয়ে জার্মান প্রহরীকে বলেন ফ্রাঙ্কফুর্টে তাঁর আত্মীয় আছেন, তাঁর কাছে যাবেন। প্রাগের বসন্তের খবর ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে; ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিয়ান বিপ্লবের পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের লৌহ শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে এই দ্বিতীয় সশব্দ প্রতিবাদকে পশ্চিম ইউরোপ দেখেছে সমবেদনার চোখে – ঠাণ্ডা লড়াইয়ের আরেক অধ্যায় শুরু। জার্মান প্রহরী পথ ছেড়ে দিয়েছিল।
সাত সকালে ডাক পড়েছে, কি ব্যাপার কে জানে। নতুন চাকরি, বিদেশ বিভূঁই। সব ঠিক আছে তো?
ঘরে ঢুকতেই সোভা বললেন, বসার আগে দরোজাটা বন্ধ করুন, ভেজানো নয়, বন্ধ (আবশ্লিসেন)
সেকি? হাতে বিল্ব পত্র ধরাবেন নাকি?
- আপনার সঙ্গে এখন অবধি পাবে যাই নি তবু কি ধরে নিতে পারি জার্মানির জাতীয় পানীয়ের সঙ্গে আপনার সম্যক পরিচিতি ও তার প্রতি প্রীতি আছে?
কারেল সোভা কথা বলতেন ধীরে, পণ্ডিতি জার্মানে, যেন সংস্কৃতে চুবিয়ে নেওয়া তৎসম শব্দের কাঁটা ভরা বাংলা- তার ছন্দ যতি মিল তিনি শিখেছেন প্রাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী অধ্যাপকদের কাছে, আমার মতন অলিতে গলিতে মদ্যপ মানুষের সঙ্গে গলাগলি করে নয়। কিন্তু এই আলোচনাটা যাচ্ছে কোনদিকে?
- ভালো না বেসে উপায় নেই। বিয়ার বাদে কি ফ্রেসগাসেতে কোন আসর জমে?
- তবে আসুন আপনি আমি মিলে এই প্যাকিংটা খুলি।
এবার লক্ষ করলাম তাঁর টেবিলের তলায় একটা মাঝারি আকারের ব্রাউন কার্ডবোর্ডের বাকসো, কোন পোস্ট অফিসের ছাপ মারা নয়। আমি সেটা শক্ত করে ধরে আছি, তিনি তাঁর ড্রয়ার থেকে কাঁচি বের করে লাইন বরাবর কাটলেন। জিজ্ঞেস করতে পারছি না এর ভেতরে কি আছে। পুরোটা খুলে ফেললে দেখা দিলো দু থাকে সাজানো চব্বিশটা বাদামি রঙের কাঁচের বোতল তার গায়ে লেখা পিলসনার উরকেল (Pilsnar Urquell)!
একটু অবাক হয়ে তাঁর দিকে তাকালে কারেল একটু বিব্রত মুখে বললেন তাঁর কোন বাল্যবন্ধু সদ্য চেকোস্লোভাকিয়া থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট পৌঁছেছে। শুধু তাঁর অফিসের ঠিকানা জানা ছিল, তাই এসেই বাকসোটি কারেলের দফতরে জমা করে নিজের কাজে গেছে, পরে বাড়িতে আসবে। চোদ্দ বছর দেশ ছাড়া, এই পিলসনার বিয়ারের বোতল তাঁকে দেশের স্বাদ গন্ধ এনে দিয়েছে। এই আনন্দ তিনি আমার সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। বোতল খোলার কল কবজা তাঁর অফিসের চাবির মালায় গাঁথা, তাই দিয়ে দুটো খুললেন, বিয়ারের উষ্ণতার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আমার হাতে একটি তুলে দিলেন। এবার তাঁর চেয়ারটি ঘুরিয়ে বাগান মুখো করে এলিয়ে আরাম বসে বললেন, আপনার চেয়ারটাও এখানে আনুন।
কোন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটতে দেখলে ইংল্যান্ডে মানুষকে বলতে শুনেছি, বয়, ইট ইজ আনরিয়াল! ইট ইজ নট হ্যাপেনিং! এ সেই রকম মুহূর্ত। বছর দুয়েক আগে ফ্রান্তিসেক নামের চেকোস্লোভাকিয়ার এক ফুটবল ফ্যান বলেছিলেন একবার আমাদের দেশে বিয়ার টেস্ট করে দেখুন। আজ আমার বস কারেল সোভা তাঁর নিজের দফতরে ডেকে কাজে ফাঁকি দিয়ে আমাকে বসিয়ে চেক বিয়ার খাওয়াচ্ছেন!
ইন্টারকমে ফোন করে সেক্রেটারি ক্রিস্টেলকে বলে দিলেন আমার সঙ্গে তিনি আসন্ন অডিট নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত আছেন, কেউ ফোন করে যেন তাঁকে বিরক্ত না করে।
- আপনারা পাবে যখন বিয়ারের অর্ডার করেন, তখন বলেন না ‘আইন পিলস বিটে'?
- হ্যাঁ, মানে সোনালি রঙের যে বিয়ার সেটাই তো, তাকে পিলস বলে।
- পিলস কথাটা এলো কোথা হতে জানেন কি? আমার দেশের প্লজেন শহরের নাম থেকে! দুনিয়া জোড়া বিয়ারের ব্যবসায় এই শহরের নাম জড়িয়ে আছে!
জলে বার্লি ও খামির গেঁজিয়ে বিয়ার বানানোর পদ্ধতিটা অন্তত দশ হাজার বছর প্রচলিত, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো অ্যালকহলিক পানীয়। বিয়ার জলের বিকল্প। মিশরের পিরামিড কর্মীদের বেতনের অংশ ছিল বিয়ার,চার হাজার বছর আগে বিশ্বের অন্যতম আইন প্রণেতা (ল গিভার) হাম্মুরাবির কোডে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বিয়ারের বিশেষ ভূমিকা নির্দিষ্ট হয়েছে। রাজা এর উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সামাজিক সম্মান অনুযায়ী দৈনিক বিয়ার বিতরিত হবে ; আমলারা পাবেন পাঁচ লিটার, মজুরেরা দু লিটার।
বিয়ারের ইতিহাসে বোহেমিয়ার বিশিষ্ট অবদান আছে। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে, চারটি বিভিন্ন জলধারার সঙ্গমে প্রতিষ্ঠিত ছোট্ট শহর প্লজেনের(জার্মান পিলসেন) আড়াইশো নাগরিককে বিয়ার বানানোর অধিকার দেন বোহেমিয়ান রাজা ওয়েনসেসলাস। প্রাগ শহরের মধ্যমণি আজ ওয়েনসেসলাস চত্বর; তিনি চেকিয়ার রক্ষক সন্ত -প্যাট্রন সেন্ট। কালে কালে নাগরিকরা গড়ে তোলেন আমাদের আমূল দুধের মতন এক বিয়ার সমবায়! কিন্তু সে বিয়ার ক্রমশ মুখে দেওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় মাঝামাঝি একদিন সাড়ে তিন হাজার লিটার বিয়ার প্লজেন শহরের মাঝে এক নর্দমায় ঢেলে দিয়ে নগর পিতারা কোন সুযোগ্য বিয়ার জাদুকরের সন্ধানে গেলেন ব্যাভেরিয়া।
বিয়ার বানানোয় ব্যাভেরিয়ার বিশেষ সুনাম ছিল -তাদের এক রাজা ১৫১৬ সালে শুদ্ধতার আইন প্রচলন করেন-সে মোতাবেক জল বার্লি এবং হপ (এক ধরনের গাছের ফল যা থেকে বিয়ারের তিক্ততা আসে) ছাড়া বিয়ারে কিছুই মেশানো যাবে না, কোন কেমিক্যাল তো নয়ই। ইস্ট অথবা খামির সম্বন্ধে কোন নির্দেশ দেওয়া হয় নি এই বিধানে। ব্যাভেরিয়াতে সন্তরা বিয়ার গ্যাঁজাতেন গোপনে পাহাড়ের গুহায় অর্থাৎ তাঁদের পদ্ধতি ছিল কোল্ড, বটম ফারমেনটেশান যার স্বাদ অতি উত্তম কিন্তু বর্ণ ছিল ঘোলাটে। প্লজেনের বিয়ার গোয়েন্দারা ভুলিয়ে ভালিয়ে অর্থের প্রলোভন দিয়ে উনত্রিশ বছরের ইওসেফ গ্রোল নামের এক ব্যাভেরিয়ান সাধুকে তিন বছরের চুক্তিতে পাকড়াও করে নিয়ে এলেন। সাল ১৮৪২। খানিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ইওসেফ গ্রোল সোনালি রঙের এক অসাধারণ পানীয় প্রস্তুত করলেন – তার নাম দেওয়া হলো প্লজেন্সকি প্রাজদ্রোই। অস্ট্রিয়ান হাবসবুরগ সম্রাটের আমলে প্লজেন শহরের জার্মান নাম অনুযায়ী নগর পিতারা এই বিয়ারের নাম দিলেন পিলসনার উরকেল (পিলসেন আদি উৎস)!
কারেল একটু থেমে বললেন, ঘরের লাইট সুইচ অন করার সময়ে এডিসন বা গাড়ির ইগনিশন অন করার সময়ে কার্ল বেন্তসের কথা মনে করে না কেউ। তেমনি আপনারা সেই ব্যাভেরিয়ান সন্তকে মনে রাখেন নি, আদি উৎসও নয় কিন্তু বিয়ার অর্ডার কালে আপনারা আমার শহরের নাম উচ্চারণ করেন – পিলসেন থেকে পিলসনার! পৃথিবী জুড়ে সমস্ত বারে কাঁচের গ্লাসে যে বিয়ার ঢালা হয় তার ৭৫% সেই সোনালি রঙের পিলসেন বা সংক্ষেপে পিলস
যখনই কোন সোনালি বিয়ারের গ্লাস হাতে নেবেন, মনে করবেন এক ব্যাভেরিয়ান সাধু ও বোহেমিয়ার প্লজেন /পিলসেন শহরকে। সেই আদি উৎস! পিলসেনার উরকেল! আমার একান্ত নিজস্ব বারে সেটি সম্মানের সঙ্গে শোভিত।
কখন ঘণ্টা দুয়েক কেটে গেছে।
কারেল বললেন, গত দু ঘণ্টায় আমাদের সক্রিয় সহায়তা ব্যতিরেকে যখন ব্যাঙ্কটা টিকে আছে আমরা আরও এক ঘণ্টা কাজে বিরতি নিলে এটা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে না। চলুন এবারে জুরনালে (অফিসের উলটো দিকে একটি পাব) যাই। আপনাকে লাঞ্চ খাওয়াব আর আপনি দুটো পিলসনারের অর্ডার দেবেন!
ইতিমধ্যে চেকোস্লোভাকিয়ায় যে যৌবন জলতরঙ্গ বইতে শুরু করেছে তাকে রোধিবে কে? ফেব্রুয়ারি থেকেই চেক বর্ডার পেরিয়ে প্রায় এক লক্ষ মানুষ পশ্চিমে গেলেন, কেউ বাধা দিলো না। কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র – লিতারারনি নোভিনি সকল সেন্সরশিপ ভেঙ্গে এমনি সবাক হলো যে তার বিক্রির সংখ্যা তিন লাখ পেরিয়ে এক ইউরোপিয়ান রেকর্ড সৃষ্টি করে।
ছোট শহর মেলনিকে অরটউইন ঘোরাঘুরি করে, বাবার পুরনো অফিস খোঁজে। খুড়ির বাড়ির চিলেকোঠা থেকেও দেখতে পায় মানুষের মিছিল।
একদিন গভীর রাতে খুড়ি ফ্রাউ রসভিলদে সেই ঘরে কড়া নাড়লেন – পাজামা পরে ঘুম চোখে অরটউইন দরোজা খুলতেই তিনি বললেন, বাবা, এখুনি পালাও। সোভিয়েত রাশিয়ান বাহিনী ঢুকে পড়েছে তাদের সঙ্গে নাকি পোলিশ হাঙ্গেরিয়ানরাও আছে
য পলায়তি স জীবতি!
ভোর তিনটে, আকাশে একটু আলো দেখা দিয়েছে। কি ভাগ্যে গাড়িতে তেল ভর্তি ছিল, মেলনিক পৌঁছুনর পর অরটউইন বিশেষ গাড়ি চালায় নি। চেকোস্লোভাকিয়া থেকে বেরুনোর দুটো রাস্তা - একটা সোজা পশ্চিমে এগার সীমান্ত পানে অন্যটা এলবে নদী পেরিয়ে খাড়া উত্তরে, ড্রেসডেন। কিন্তু সেটা জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র- সেটি নামেই গণতান্ত্রিক। সেখানে ঢুকলে আবার অন্য বিপদ। অগত্যা এগারের পথ। প্রথমেই তার চোখে পড়ল রাস্তার সাইনবোর্ডগুলো কে বা কারা যেন ঘুরিয়ে দিয়েছে, প্রাগের নিশানা পশ্চিম মুখে, প্লজেন পুবদিকে – সোভিয়েত ট্যাঙ্ক ব্রিগেডকে ভুল পথে চালিত করাতে লড়াকু চেক প্রতিবাদীদের শেষ চেষ্টা।
সে আমলে গুগল না থাকলেও অরটউইনের স্কুলে পড়া ভূগোলটা মনে ছিল। তার গাড়িতে সব সময় একটা ছোট্ট কম্পাস রাখা থাকত, তার কাঁটা অনুযায়ী সে গাড়ি চালাল পশ্চিম মুখে, প্লজেন ছাড়িয়ে। পরে অরটউইন আমাকে গাড়িতে কম্পাস রাখার পরামর্শ দিয়েছে। জার্মানিতে নয়ের দশকে খদ্দেরের সন্ধানে পথে পথে ঘোরার সময়ে সেটা আমার খুব কাজে লাগে।
প্রাগের স্বাধীনতা, মুক্তির বসন্ত শেষ হলো ২২শে আগস্ট, ১৯৬৮; সোভিয়েত ইউনিয়ন, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি, বুলগারিয়ার সমবেত পাঁচ লক্ষ সৈন্যের ফৌজ হানা দিলো চেকোস্লোভাকিয়াতে (ব্রেজনেভ পূর্ব জার্মান সৈন্য পাঠান নি -দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বোহেমিয়াতে জার্মান আগ্রাসনের স্মৃতি তখনো তাজা)। যেমন ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে, তেমনই ১৯৬৮ সালে চেকোস্লোভাকিয়াতে গণতান্ত্রিক অভ্যুথানের ধাস্টামোকে ট্যাঙ্কের বিক্রমে শায়েস্তা করতে সাত দিনও লাগে নি। চেকোস্লোভাকিয়ার নতুন নেতৃত্ব সোভিয়েত মার্গ দর্শকের প্রদর্শিত পথে পুনরায় যাত্রা শুরু করে।
বার্লিন দেওয়াল ভাঙতে একুশ বছর।
আলেকসান্দার দুবচেককে ফার্স্ট সেক্রেটারির পদ থেকে সরিয়ে বনবিভাগের তদারকির কাজে বহাল করা হলো; তিনি অন্তত প্রাণে বাঁচলেন। হাঙ্গেরিতে ১৯৫৬ সালের বিপ্লবের নেতা ইমরে নজকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়েছিল; ক্রুশ্চেভ বলেছিলেন হঠকারিদের শিক্ষা হোক।
সোভিয়েত সাম্যবাদী ভাবনার জয়ের মালা গাঁথলো প্রাগের বসন্তের ফুল।
দশ বছর পরে ফ্রাঙ্কফুর্টের ওঙ্কেল মাক্স পাবে বসে যখন অরটউইনের কাছে প্রাগের বসন্তের গল্প শুনি ততদিনে এগার/ খেবের সীমান্ত থেকে প্রাগ অভিযানে ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে এসেছি। অরটউইনের খুড়ি মারা গেছেন, টেলিফোন যোগাযোগ অসম্ভব।
আমরা কেউ কখনো সে দেশে যাবার কথা ভাবি না।
সেদিন কি করে জানব আমার জন্য একটা অন্য চিত্রনাট্য কোথাও লেখা আছে।
*পেরেসত্রইকা (পুনর্গঠন) ও গ্লাসনস্তের (স্বচ্ছতা) হোতা মিখাইল গরবাচেভকে ১৯৮৭ সালে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আলেকসান্দার দুবচেকের কমিউনিজম উইথ এ হিউম্যান ফেসের সঙ্গে এর তফাত কোথায়?
উত্তরে তিনি বলেন,‘উনিশটা বছর।’