এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  শনিবারবেলা

  • পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ম্যাসিডোনিয়া ১

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৩৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • ফর্মার রিপাবলিক অফ মাসিদোনিয়া। বর্তমান নর্দার্ন মাসিদোনিয়া 


    নামের আমি নামের তুমি


    ছেলেমেয়ের চোখ যেমন হোক না কেন, পদ্মলোচন অথবা বিশালাক্ষী নাম দেওয়ার বাধা আমাদের দেশে নেই। এক নেপোলিওনিক কানুনের দরুন ফরাসি দেশে নাম বিচার করার অধিকার ছিল সরকারের হাতে। অচেনা, অজানা অনেক কেতাদুরুস্ত নাম ফরাসিদের আঁতে লাগতে পারে—যেমন ধরুন ওয়েলিংটন, বারট্রাম—তাঁরা নির্মম হস্তে সে সব বাতিল করেছেন। আধুনিক, চমকপ্রদ জীবনচেতনার পরিচয় দিতে অপারগ পিতামাতা বৈচিত্র্যের সন্ধানে জোড়া নামের বন্যা বইয়ে দিলেন, যেমন – জঁ-মিশেল, পিয়ের-অঁরি, জঁ-ক্রিস্তফ, আনে-লিসে ইত্যাদি। গত বিশ বছর যাবত সে আইন অবশ্য উঠে গেছে। উটকো বিদেশি নাম জার্মানিতেও জলচল ছিল না। তবে সে দেশেও কিছু পরিবর্তন দেখলাম। সাতের দশকে কেভিন কীগান নামক এক ব্রিটিশ ফুটবলার (পরপর দু-বার ইউরোপিয়ান ফুটবলার অফ দি ইয়ার নির্বাচিত হন) হামবুর্গে বুন্দেসলিগায় খেলতেন—তাঁর সাফল্যের কল্যাণে কেভিন নামটা প্রথমে হামবুর্গে ও পরে সে দেশে প্রচলিত হয়ে গেছে!

    এ তো না হয় মানুষের নাম। একটা দেশের নামকরণ নিয়েও কি বিতণ্ডা হয়? করে কে?
    কিন্তু তাই তো হল!

    ইউগোস্লাভিয়ার একটি রিপাবলিকের নাম ছিল মাসিদোনিয়া (আসলে মাকিদোনিয়া কিন্তু আমি বেশি চলতি নামটাই ব্যবহার করি)। এককালে পারসিক পরে রোমান রাজা তার প্রভু ছিলেন। তারপরে বুলগারিয়া, দীর্ঘদিন তুরস্কের অটোমান সুলতান সেখানে তরবারি ঘুরিয়ে কর আদায় করেছেন। ‘এতদিন বিদেশি রাজার অধীনে ছিলাম কিন্তু আমরা মূলত স্লাভ’ এই বলে অন্য স্লাভিক ভাইয়েদের সঙ্গে একত্র হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মাসিদোনিয়া যোগ দিল স্লোভেন ক্রোয়াট সার্ব রাজত্বে, পরে (১৯২৯) যার নাম হল ইউগোস্লাভিয়া বা দক্ষিণ স্লাভের দেশ। তাদের ভাষাটা সার্বো ক্রোয়াটের সঙ্গে মেলে—যদিও লেখা হয় সিরিলিক অক্ষরে। ধর্মে অর্থোডক্স ক্রিস্টিয়ান। এ অবধি ঠিকঠাক ছিল।

    ১৯৯১ সালে ইউগোস্লাভিয়ার বিভিন্ন শরিক তাদের পতাকা থেকে আরম্ভ করে হেঁসেল অবধি আলাদা করে নিলেন: প্রতিটি রিপাবলিকের নাম নতুন দেশ হিসেবে রাষ্ট্রসঙ্ঘে রেজিস্ট্রি হলো। মুশকিল হল মাসিদোনিয়ার। প্রতিবেশী দেশ গ্রিস বললে খবরদার, তোমরা মাসিদোনিয়া নামটা নেবে না। ওই নামের ওপরে আমাদের একমাত্র আমাদের হক আছে। মাসিদোনিয়ার উত্তর দিকটা তোমাদের ভাগে পড়েছে, কিন্তু দক্ষিণ দিকটা গ্রিসের। সেখানে আমাদের হিরো আলেকজান্দার জন্মেছিলেন - গ্রিসে আছে আসলি মাসিদন, তোমরা দু-নম্বরি। মাসিদোনিয়া নাম দিলে লোকে ভাববে আলেকজান্দার হয়তো তোমাদের দেশের লোক। মাসিদনের পেলা শহরে জন্মে সেই মানুষ এশিয়া মাইনর, পারস্য জয় করে ভারতের দুয়োরে অবধি গিয়ে কড়া নেড়ে এসেছেন। এখন তোমরা নিজেদের মাসিদোনিয়া বলবে কোন অধিকারে? তোমরা কি এবারে একটা কোনো ধ্বংসস্তূপ দেখিয়ে আলেকজান্দারের আদি বাসভূমি বলে টুরিস্টদের ঠকিয়ে পয়সা আদায় করবে?

    আগে এ ফ্যাঁকড়া ওঠেনি। কারণ দেশটার নাম ছিল ইউগোস্লাভিয়া। বুকিং ডট কম বা এক্সপিডিয়া আপনার হোটেল বুক করেছে স্কপয়ে, ইউগোস্লাভিয়াতে মাসিদোনিয়াতে নয়! এছাড়া সে আমলে বলকানের জ্যাঠামশায় টিটোর সামনে এই গুগলি ফেলার হিম্মত গ্রিসের ছিল না। এবার মউকা—এই ছোটো দেশকে এত খাতির করতে রাজি নয় গ্রিস। তারা যে আসল মাসিদোনিয়া নয়, সেটা ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করতে হবে। নতুন দেশের জন্মলগ্নে এই ফ্যাচাং-এর মুখোমুখি হল মাসিদোনিয়া। আমাদের দেশভাগের সময় দুটো পাঞ্জাব, দুটো বাংলা হয়েছে। আর যে বিবাদ-বিসংবাদ হয়ে থাকুক না কেন, নাম নিয়ে কোনো গোলমাল বাধেনি—পূর্ব-পশ্চিম জুড়ে কাজ চলেছে, পশ্চিম পাঞ্জাব একদিন নিঃশব্দে পাঞ্জাব বনে গেছে—লাহোর থেকে তার বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ শোনা যায়নি।

    গ্রিসের পাল্লা এখন ভারি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য, হালে দেউলে হয়ে গেলে কী হবে, আলেকজান্দার রাজার বংশধর বলে কথা। তাদের প্রখর প্রতিবাদের মোকাবিলা করতে গিয়ে সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে—এমন একটা সমাধান খুঁজে বের করা হলো—নতুন দেশের নাম ফরমার ইউগোস্লাভিয়ান রিপাবলিক অফ মাসিদোনিয়া (FYROM), সংক্ষেপে ফাইরোম। একটা দেশের এমন বিচিত্র নামকরণ রাষ্ট্রসংঘের খাতায় কখনও দেখা যায়নি। তাদের পতাকার মাঝে সূর্য উঠছে। লাল হলুদের (ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের রং!) ছড়াছড়ি, কিন্তু দেশের নামটি কিম্ভুত।

    আমাদের কিছু যায় আসে না—যে নামেই ডাকো—আমার এসেছি বাণিজ্যের সন্ধানে। তবে লাঞ্চ ডিনারের আলোচনায় এই নামটি বেশ কৌতূহলের উদ্রেক করতো—গ্রিক বা ম্যাসিদোনিয়ানরা কেউই খুশি ছিলেন না। *

    সালটা ১৯৯৫।
    স্কপয়ে শহরে কমারসিয়ালনা ব্যাঙ্কের আন্দ্রেস আমাকে এই গল্পটি শুনিয়ে বললেন, আমরা যতদিন অবধি ইউগোস্লাভিয়ার অংশ ছিলাম, গ্রিসের কোনো আপত্তি ছিল না। যদিও আমরা ম্যাসিদোনিয়ানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেছি গ্রিস বুলগারিয়াতেও, আমরা স্লাভ জাতি, গ্রিক নই। আলেকজান্দারের স্ট্যাচু আছে শহরের মাঝে নিশ্চয় দেখেছেন, কিন্তু তিনি স্লাভ নন, গ্রিক। আমাদের প্রপিতামহ বোধে তাঁর মূর্তিতে আমরা ফুল চড়াই না।



    আলেকজান্দারের মূর্তি, যদিও এদেশে তিনি জন্মাননি!


    কুড়ি লক্ষ মানুষের এক স্বাধীন দেশের জন্ম হল নাম সমস্যা নিয়ে।

    স্কপয়ে

    ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে স্কপয়ে শহরে একটি বিধ্বংসী ভূমিকম্পে হাজার মানুষ প্রাণ হারান, চার হাজার আহত, আশি শতাংশ বাড়ি মাটিতে মিশে যায়, সত্তর শতাংশ মানুষ গৃহহীন।। সমীরবাবু ক্লাস টেনের ভূগোলের ক্লাসে দেওয়ালে টাঙানো ম্যাপে লাঠি দিয়ে দেখান—সে জায়গাটা আসলে কোথায়। সেদিন ভালো করে বুঝতে পারিনি।

    সেই ভূমিকম্পের কল্যাণে সুযোগ এসেছিল নতুন করে একটা শহর বানানোর। অবশ্যই বিপজ্জনক সম্ভাবনা ছিল কমিউনিস্ট স্টাইলে এক ছাঁচে গোটা শহর তৈরি করার। ভাগ্যে সেটি হয়নি। তাহলে আজকের স্কপয়ে শহর ভরে থাকত আট-দশতলা উঁচু দেশলাই বাক্সতে। বরং সৃষ্টি হয়েছে এক খাপছাড়া শহর। কমিউনিস্ট আমলের কংক্রিট ব্লকের পাশে গড়ে উঠেছে গথিক কায়দার বাড়ি। এমন কোনো পাড়া পাবেন না, যেখানে দুটো বাড়িঘরের কোনো রকমের সামঞ্জস্য আছে। কোনো বাড়ির বয়েস ষাটের বেশি নয়!

    বেলা-অবেলা-কালবেলা—যাই হোক না কেন, পুরোনো স্টেশনের (এখন শহরের জাদুঘর) বিশাল ঘড়িতে একটাই সময় দেখবেন – ৫:১৭। ছাব্বিশে জুলাই ১৯৬৩-তে ঐ সময় ভূমিকম্প শুরু হয়। ঘড়ি থেমে যায়। থেমে আছে।



    সকাল ৫:১৭, ২৬শে জুলাই, ১৯৬৩


    পরের দুই দশকে ডিজনিল্যান্ডরূপী একটি শহরের সৃষ্টি হয়েছ। ছবিতেও দেখি—প্রকাণ্ড স্কোয়ার, অজস্র মূর্তি। একটি ব্রিজের ওপরেই নাকি চল্লিশটি স্ট্যাচু। এখানে-সেখানে কেউ বসে আছেন, কেউ বা খবরের কাগজ পড়ছেন। আমার দেখা স্কপয়ের সঙ্গে একেবারেই মেলে না।

    উত্তরে এস্টোনিয়া থেকে দক্ষিণে আলবানিয়া অবধি সাবেক পূর্ব ইউরোপের বাড়িঘরের চেহারা একেবারে এক—সারি সারি ছয়, আট বা দশতলা বাড়ি, বাইরে সিমেন্টের পলেস্তারা দেওয়া। তার ওপরে রঙের এক পোঁচ লাগানোটা কেউ আবশ্যিক বা আকর্ষক বিবেচনা করেননি। তাই যা দেখেছি—তাকে বিবর্ণ বলা যায় না, কারণ এদের কোনো বর্ণ কোনদিন প্রলেপ করা হয়নি। সবার একটা ধূসর চেহারা। মনে আছে বহু বছর আগে (১৯৮৭), লন্ডনের চেক দূতাবাসে এক অনুষ্ঠানে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন জার্মান বায়ার কোম্পানির সি.এফ.ও অ্যান ট্রেন্ট। সেখানে আলোচনা প্রসঙ্গে এক চেক আর্কিটেক্ট বলেন, পূর্ব ইউরোপের স্থাপত্যে কোনো নতুন ভাবনার ও সৃষ্টির স্থান নেই। বিবেচ্য বিষয় উচ্চতা — ছয়, আট না দশতলা হবে কিনা, সিঁড়ি বা লিফটের অবস্থিতি ঢোকার ডাইনে হবে, না বাঁয়ে অথবা জানলার সংখ্যা। একেবারে রোবোটের মতন।

    সেই আর্কিটেক্ট মনে করিয়ে দিয়েছিলেন রোবোট শব্দটা চেক!

    আমার দীর্ঘদিনের পূর্ব ইউরোপ ভ্রমণে নানানজনের বাড়িতে বসবাসের দরুন দেখেছি—সেন্ট পিটারসবুর্গ, জবযে (পোল্যান্ড), রিগা, কাউনাস, তিরানা, বুখারেস্ট—সর্বত্র একই শিল্পকলার সমাবেশ—একঘেয়ে কিন্তু কার্যকরী। মানুষের বাসের সুরাহা হয়েছে। অন্তত দশটা দেশের স্থাপত্যকে একটা সমতায় পৌঁছে দেয়।

    ব্যতিক্রম ছিল। কোনো কোনো দেশে দেখা গেছে প্রকাণ্ড হোটেল। সেটি বানানোর সময়ে স্থপতিকে মুক্ত হস্তে ব্যয় করার স্বাধীনতা দেওয়া না হলেও, তার ড্রয়িংবোর্ডে অন্তত কোথাও হারিয়ে যাবার মানা হয়তো ছিল না, শেষ অবধি বাজেটে কুলোলে অবিশ্যি। উদ্দেশ্যটা সহজেই অনুমেয় – টুরিস্টরা কোনো বোরিং কমিউনিস্ট হস্টেল নয়, দেখতে চাইবেন পশ্চিমি কায়দার হোটেল। প্রকাণ্ড লবি, তার দেয়ালে বিশাল মুরাল উঁচু সিলিং। হোটেলের ঘরের ভেতরে অবশ্যই হস্টেলের ছায়া দৃশ্যমান—কাজাখস্তানে একবার এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

    রজার ও আমি গেছি স্কপয়ের গ্র্যান্ড হোটেলে। ফুটবল মাঠের মতো লবি, দেওয়ালে সংগ্রামী সৈনিকের খোদিত মূর্তি। রিসেপশানে গিয়ে জানা গেল—আমাদের আগমনের বিষয়ে তাঁরা অবহিত আছেন। ঘর আছে, তবে ক্রেডিট কার্ড নিতে তাঁরা অপারগ। আমরা বিদেশি, অতএব স্থানীয় মুদ্রা মাসিদোনিয়ান দেনার নয়, রাত্রিবাসের দক্ষিণা আমেরিকান ডলার অথবা জার্মান মার্কে প্রদেয়। নগদে। এ কী আবদার? সিটি ব্যাঙ্কে কাজ করি, আমাদের কি কোনো সম্মান নেই? পালিয়ে যাচ্ছি না। গেলে নিউ ইয়র্কের ৩৯৯ পার্ক এভিনিউ বা লন্ডনের ৩৩৬ স্ট্র্যান্ডে এত্তেলা দিলেই টাকা পাবেন!

    আমরা সবে দুর্গম পূর্ব ইউরোপে আসা-যাওয়া শুরু করেছি। বিধি-বিধান ততটা জানি না। মনে করি দুনিয়াটা লন্ডন, নিউ ইয়র্ক, ফ্রাঙ্কফুর্টের কায়দায় চলে – হোটেলে ক্রেডিট কার্ড, অলিতে গলিতে এটিএম! ইতিমধ্যে আফ্রিকার অনেক দেশেও প্লাস্টিক কার্ডের ব্যবহার দেখে এসেছি। রজার বললে, ‘এ তো মহা ঝামেলা। কাজে লাগতে পারে ভেবে পাউন্ড এনেছি, সেটাও তো এরা নেবে না!’ বললাম, ‘এতদিনে বুঝলে তো—ব্রিটিশ সাম্রাজ্য অস্তমিত হয়েছে!’ ‘ফাইনালি সান হ্যাজ সেট অন দি ব্রিটিশ এম্পায়ার!

    রিসেপশানের মহিলা জানালেন—একশো মার্ক অথবা সমতুল্য ডলার অগ্রিম জমা দিলে এক রাতের শয্যা পাওয়া যাবে। এখন একশো মার্ক কোথায় পাই? পকেটে তো আছে রানির ছবিওলা নোট, সেটি এঁরা নেবেন না।। তিনি জানালেন, মুদ্রা পরিবর্তনের অনেক এজেন্সি সদর রাস্তায় পাওয়া যাবে। সেখানে আমরা আমাদের দুর্বল পাউন্ডকে গ্রহণযোগ্য মুদ্রায় বদলে নিতে পারি, যেমন ডলার বা মার্ক। ব্যাগ জমা রেখে পথে নামলাম। সে আমলে বুখারেস্ট থেকে বেলগ্রেড সর্বত্র ‘ওয়েক্সেল / কাম্বিও / এক্সচেঞ্জ’ বোর্ড লেখা ছোটো ছোটো ঝাঁপের মতন দোকান দেখা যেত। সত্যিকারের ঝাঁপ! একটা খাঁচার ভেতরে একজন বসে আছেন সামনে কালো ক্যাশ বাক্স, একটা ক্যালকুলেটর। ডাকাত পড়লে চট করে সে ঝাঁপ বন্ধ করা যায়। এখনও কিছু চোখে পড়ে। টিরানা, বেলগ্রেডে হালে দেখেছি। এটিএম না পেলে সঙ্গে আনা পাউন্ডকে স্থানীয় মুদ্রায় বদলানোর জন্য তার ব্যবহার আমরা করেছি। এখানে আরেক প্যাঁচ। বিদেশি মুদ্রাকে স্থানীয় মুদ্রায় নয়, আরেক বিদেশি মুদ্রায় পরিবর্তিত করতে হবে – পাউন্ডকে ডয়েচ মার্কে (যাকে আমাদের ভাষায় ক্রস কারেন্সি বলি)। রজার বললে, এক্সচেঞ্জ রেটে আমাদের কোতল করবে! তাকে আশ্বাস দিলাম, ‘চিন্তা নেই, তোমার ট্রাভেল বিল আমি সই করব। আমার বিল যিনি অ্যাপ্রুভ করবেন, তাঁকে নিয়ে আমার চিন্তা! আবার কোন ফ্যাঁকড়া তুলবেন কে জানে! কেন ডয়েচ মার্ক নিয়ে যাওনি ? প্লেনে ওঠার আগে এসব জেনেশুনে নেওয়া উচিত ছিল। আমাদের ট্রাভেল এজেন্সিকে জিজ্ঞেস করোনি?’ তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করা বৃথা – সে অফিসের বালিকারা ভূগোলটাই বোঝে না, মাসিদোনিয়ান ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বিষয়ক জ্ঞান তাদের কাছে আশা করা যায় না।

    রজারের অনুমান সত্য। গলা-কাটা কিনা জানি না, তাদের পকেট-কাটা রেট নিঃসন্দেহে। গৌরি সেন রূপী সিটি ব্যাঙ্ক এ বোঝা বহন করছে যখন, আমাদের মনে খুব একটা দুঃখ কষ্ট হল না! এক মুঠো মার্ক নিয়ে বীরদর্পে রিসেপশানে ফিরেছি। ফেকলু লোক নই, পকেটে মার্ক আছে।
    ‘কতদিন থাকবেন?’
    ‘হয়তো দু-রাত্তির। চেক আউট করার সময়ে আপনাদের মার্ক দিয়ে দেব, নগদ’।
    ‘মাথা পিছু দু-শো মার্ক এখনই দেবেন। যদি একদিন বেশি থাকতে চান, পরশু সকালে একশো মার্ক এই কাউনটারে জমা করে যাবেন’।

    আজ নগদ, কাল উধার কথাটা শোনা ছিল। এক বছর আগে সেন্ট পিটার্সবুর্গের পেট্রোল পাম্পে অগ্রিম রুবল জমা করলে তবেই পাইপে তেল আসতে দেখেছি। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকার গ্যাস স্টেশনেও (আমার আমেরিকান শব্দ চয়ন লক্ষ করুন!)। তবে হোটেল রাত্রিবাস করার জন্য অগ্রিম নগদ প্রদান ইউরোপে কম দেখেছি।

    আমার সময়ে পাইকপাড়ায় মশার বড় উপদ্রব ছিল। সযত্নে টাঙানো গোঁজা মশারির ভেতরে কোনো অলৌকিক কৌশলে সেঁধিয়ে গিয়ে মধ্যরাত্রি নাগাদ তারা আক্রমণ শুরু করতো। অগত্যা ঘরের আলো জ্বেলে আততায়ীর সন্ধান। তারা বড়োই সেয়ানা—ধরা পড়ে না, কিন্তু তাদের মুঠোয় আনতে পেরেছি মনে করে দুটি হাত একত্র করে শুধু একটি হাততালি বেজে ওঠে। আমি একা নই, আশেপাশের বাড়িতেও তাই। আমি বলতাম মধ্যরাতের করতালি!

    গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ ইউরোপে মশা পেয়েছি, মশারি পাইনি। তবে তাদের আক্রমণাত্মক মনে হয়নি। এখানেও কিছু গুঞ্জন শুনে ঘুমিয়ে পড়ি। পরের দিন ব্রেকফাস্টের সময়ে রজার বললে রাতে সে কিছু আরশোলার সম্মুখীন হয়েছিল। রিসেপশনে ফোন করে সঙ্কটের কারণ জানালে দু-জন মুশকো প্রহরীর আবির্ভাব হয়। তাকে খাটের ওপরে পা তুলে বসে থাকার আদেশ দিয়ে ঘরের এমুড়ো থেকে ওমুড়ো একটা ছোটো চাপ জালের মতো বস্তু নিয়ে তাঁরা সেই প্রাণীদের পিছনে ধাওয়া করে তাদের গ্রেপ্তার করেন। অতঃপর প্রহরীদ্বয় বিজয়ীর হাসি হেসে ইঙ্গিতে দুয়োর বন্ধ করতে বলে বিদায় নিয়েছেন।

    স্কপয়ের পথে পথে

    তুর্কি শাসনকালে স্কপয়ে (তুর্কিতে উশকুপ) শহরের একশো নম্বর মাসিদনিয়া এভিনিউর বাড়িতে এক আলবানিয়ান পরিবারে ১৯১০ সালের ছাব্বিশে আগস্ট আনিএজ গণ্ডজে বোয়াজিউ নামে এক শিশুকন্যা জন্মগ্রহণ করে। তাঁকে আমরা জানি মাদার তেরেসা নামে। বারো বছর বয়েসে তিনি সন্ন্যাসিনী হবার স্বপ্ন দেখেন। আঠারো বছর বয়েসে স্কপয়ে ছেড়ে আয়ারল্যান্ডের রাথফার্নহামের লরেটো কনভেন্টে চলে যান। আর কখনো স্কপয়ে ফেরেননি। তাঁর পরিবার কিছুকাল বাদে তিরানা চলে যান। ভূমিকম্পে সেই বাড়িটি বিধ্বস্ত হয়। আমি একটি স্মারক ফলক মাত্র দেখেছি। তবে ২০০৯ সালে মাসিদোনিয়ান সরকার সেই বাড়িটির আদলে একটি স্মৃতিসৌধ প্রতিষ্ঠা করেছেন। সামনে মাদার তেরেসার মূর্তি।

    পাঁচশো বছরের তুর্কি শাসন অনেক স্মৃতি রেখে গেছে সারা বলকানে – মসজিদ, পাথরে বাঁধানো পথ, বাজার, অনেক মিনার। স্কপয়ের দুটি প্রতীক অটোমান সুলতানদের দান – তার দুর্গ এবং ভারদার নদীর ওপরে বানানো পঞ্চদশ শতাব্দীর পাথরের সেতু (কামেন মস্ত)। মস্তারের চেয়েও একশ বছরের পুরোনো, তার বয়েস এখন ৫৭০। আজও অটুট। এখন স্কপয়েতে দেখবেন অনেক আধুনিক সেতু, কিন্তু গত শতাব্দীর প্রথমদিকে এই কামেন মস্ত ছিল নদী পার হওয়ার একমাত্র উপায়।



    কামেন মস্ত ১৯৪০


    নাৎসি সেনাদের তাড়িয়ে দেশের দখল নিতে টিটো এবং মাসিদোনিয়ার পার্টিজান বাহিনী যখন প্রায় স্কপয়ের দোরগোড়ায় হাজির, শত্রু সেনাকে ঠেকাতে জার্মানরা এই একমাত্র ব্রিজটি উড়িয়ে দেওয়ার সদিচ্ছা নিয়ে প্রতিটি আর্চের তলায় বারুদ বাঁধে। খবর পেয়ে নগরীর বহু গণ্যমান্য মানুষ জার্মান সেনাধ্যক্ষের কাছে সেতুটি রক্ষা করার আবেদন জানান। এক হৃদয়বান ভেরমাখট অফিসার সেই করুণ আহ্বানে সাড়া দিয়ে আগুন লাগানোর সিদ্ধান্ত বাতিল করলে বেঁচে যায় পাঁচশো বছরের স্মৃতি। তেরোই নভেম্বর পার্টিজানরা স্কপয়ে পুনরুদ্ধার করেন।



    কামেন মস্ত আজ


    সন্ধ্যের স্বল্প আলোয় সেতুর দৃশ্যটি অতি মনোরম।
    ইজ প্যারিস বারনিং ছবিটি যারা দেখেছেন বা ল্যারি কলিন্স / দমিনিক ল্যপিয়েরের বইটি পড়েছেন—তাঁরা জানেন প্যারিসের পতন আসন্ন জেনে হিটলারের আদেশে ২৩শে আগস্ট ১৯৪৪ নাৎসি বাহিনী শহরের প্রতিটি ঐতিহাসিক অট্টালিকার তলায় বারুদের স্টিক লাগায়—হুকুম দিলেই অগ্নিসংযোগ! এতোয়াল, এলিসে প্রাসাদ, নাপোলওঁর সমাধি, আইফেল টাওয়ার, ল্যুভর ধূলায় হবে ধূলি। হিটলার বলেছিলেন – প্যারিসের পতন যদি হয়, শত্রু পাবে এক ধ্বংসস্তূপ (আইন ত্রুমারফেলড)। ২৫শে আগস্ট যখন ফ্রি ফ্রেঞ্চ বাহিনী প্যারিসের উপপ্রান্ত থেকে বোয়া দে বুলয়েন ধরে এগিয়ে আসছে দুর্বার বেগে, প্যারিসের আত্মসমর্পণ মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যাপার। জার্মান মিলিটারি গভর্নর প্রাশিয়ান জেনারাল ফন খোলটিতস কোনো আদেশ দিলেন না। বিকেলবেলা ২২৮ নম্বর রু রিভোলির হোটেল মরিসে তিনি আত্মসমর্পণ করলেন, তারপর মপারানাসে ফরাসি জেনেরাল ল্য ক্লার্কের কাছে জার্মান বাহিনীর সারেন্ডার পত্রে সই করেন।

    ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেল প্যারিস। যে প্যারিস দেখে আমরা নিয়ত অভিভূত হই, চাকরি বা প্রাণের তোয়াক্কা না করে সেটিকে বাঁচিয়ে রাখলেন ফন খোলটিতস। মনে করুন ছবির শেষ দৃশ্য – ক্র্যাডল হতে টেলিফোন রিসিভার ঝুলছে আর শোনা যাচ্ছে হিটলারের ক্রুদ্ধ কণ্ঠস্বর ‘ব্রেনট পারিস?’ – ইজ প্যারিস বার্নিং?



    হিটলারের আদেশ উপেক্ষা করে ফ্লোরেন্সের পনতে ভেকিওকে (পুরোনো ব্রিজ) নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন গ্যারহার্ড ওলফ। পরাজয় এবং আত্মসমর্পণ অবধারিত জেনেও কিছু জার্মান জেনেরাল মনুষ্যত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন।

    ১৯৯৩ সালে ক্রোয়াটরা দ্বিধা করেনি তাদের দেশের এক অসাধারণ ঐতিহ্যকে চুরমার করতে—বসনিয়ার মস্তারে অটোমান সুলতানদের তৈরি পাঁচশো বছরের পুরোনো সেতু ক্রোয়াট বোমাবর্ষণে ধুলোয় মিশে যায় ৯ই নভেম্বর।




    *অনেক কথা কাটাকাটির পরে দু-পক্ষ মিলে রাজি হলেন—দেশের নাম দেওয়া যেতে পারে উত্তর মাসিদোনিয়া। ভূগোলের হিসেবে দক্ষিণটা গ্রিসের ভাগে তো আছেই। নামের আগে ‘উত্তর’ বসানোর অনুমতি চেয়ে মাসিদোনিয়ার মানুষের যে গণভোট নেওয়া হল, সেটি ৯৪% মানুষ সমর্থন করলেন, কিন্তু ভোট দিতে গেলেন মাত্র ৩৭% নাগরিক! ৫০% বা তার বেশি ভোট না দিলে কোনো গণভোট গ্রাহ্য হয় না। তবে মাসিদোনিয়ার সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত বিধায়কের দুই তৃতীয়াংশ কোনো বিষয়ে সম্মতি দিলে তা কার্যকরী হবে। তাই হল। এই নব নামায়ন গ্রিসেও অসম্ভব প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিল। শেষ অবধি ২০১৮ সালে রাষ্ট্রসংঘে যে দেশের নাম রেজিস্ট্রি হল, তার নাম উত্তর মাসিদোনিয়া।

    দারুণ ফুটবল টিম—জার্মানিকে মাঝেমধ্যে হারিয়ে দেয়!



    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩৩৭ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    অদ-ভূত!.. - Kasturi Das
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:৪১524579
  • দারুন লাগলো ম্যাসিডোনিয়া অভিযানের সূচনা। বাকি অংশের জন্য অপেক্ষা করছি। 
     
    তবে জার্মানির ফুটবল দল বেশ খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
  • হীরেন সিংহরায় | ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৯:৪৩524583
  • ধন্যবাদ 
     
    ঠিক বলেছেন । জারমানি যাক তার কাছে হেরে যাচ্ছে । জাপানের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচ হেরে কোচের কাজ গেল ( ফ্লিক)। তারচেয়ে মজার কথা এই যে জারমানিতে রেজসটারড ফুটবল খেলোয়াডের সংখ্যা মাসিদোনিয়ার জনসংখ্যার চেয়ে বেশি! তবে ফ্রান্স কে সেদিন হারিয়েছে! 
  • Amit | 163.116.***.*** | ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৭524602
  • এই ফর্মার যুগোস্লাভিয়া র আজকের পরিণতি দেখে কেমন যেন মনে হয় অনেক দেশে সবসময়েই দুটো অপোজিং ফোর্স কাজ করতে থাকে। একটা ভিতরমুখী সেন্ট্রিপিটাল ​​​​​​​ফোর্স ​​​​​​​যেটা ​​​​​​​একটা ​​​​​​​লার্জার ​​​​​​​স্কেল ন্যাশনাল আইডেন্টিটি ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​দেশটাকে এক করে ​​​​​​​ধরে ​​​​​​​রাখার চেষ্টা ​​​​​​​করে যেটা ধর্ম হতে পারে- জাতি হতে পারে , উল্টোদিকে বহির্মুখী সেন্ট্রিফিউগাল ​​​​​​​ফোর্স ​​​​​​​যেটা প্যান ন্যাশনাল আইডেন্টিটি তে সাবস্ক্রাইব না করে লোকাল ​​​​​​​লেভেলের ​​​​​​​কালচার ​​​​​​​ভাষা ​​​​​​​বা ​​​​​​​ধর্ম ​​​​​​​সব ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​সেটাকে ​​​​​​​ভাঙার ​​​​​​​চেষ্টা ​​​​​​​করে ​​​​​​​যায়। ​​​​​​​সময় ​​​​​​​পাল্টানোর সাথে ​​​​​​​সাথে ​​​​​​​ফোর্স ​​​​​​​গুলোর ​​​​​​​ইকুইলিব্রিয়াম ​​​​​​​ও ​​​​​​​চেঞ্জ ​​​​​​​হতে ​​​​​​​থাকে। ​​​​​​​বাইরের ফোর্স ​​​​​​​টা ​​​​​​​বেশি ​​​​​​​হয়ে গেলে ​​​​​​​দেশ ​​​​​​​ও ​​​​​​​ভেঙে ​​​​​​​যায়। ​​​​​​​এবার ​​​​​​​তার ​​​​​​​মধ্যে ​​​​​​​নানা ​​​​​​​ফ্যাক্টর ​​​​​​​কাজ ​​​​​​​করে ​​​​​​​যায়। ​​​​​​​ইন্টারনাল ​​​​​​​বা ​​​​​​​এক্সটার্নাল পলিটিকাল ​​​​​​​সিচুয়েশন, মেজর ​​​​​​​সিভিল ​​​​​​​ওয়ার , যুদ্ধ ​​​​​​​সবকিছুই দুটো ফোর্স এর ​​​​​​​ইকুইলিব্রিয়াম বদলে দেওয়ার মেজর প্যারামিটারস। 
     
    এতো ভাষা এতো ডিফারেন্ট কালচার  এতো ডিফারেন্ট সোসাইটি এতো হিউজ পপুলেশন সব নিয়ে ইন্ডিয়া ও হয়তো এক সময় অনেকগুলো দেশে ভেঙে যেতে পারে। নিজে নিজে ভেতর থেকে সেই ইনারসিয়া আসতে হয়ত অনেক সময় লাগবে। বাইরে থেকে ধাক্কা এলে সেটা অন্য কথা- মেজর গেম চেঞ্জার যেমনঃ ১৯৪৭ বা ১৯৭১। আবার বাইরের ফোর্স জোর করে দেশ ভাঙলেও ভেতরের ফোর্স বেশি থাকলে কখনো  জুড়েও যেতে পারে যেমন পোস্ট বার্লিন ওয়াল জার্মানি। 
     
    হিরেন দা কে প্রশ্ন: 
     
    এই যে ফর্মার যুগোস্লাভিয়া এতগুলো দেশে ভেঙে গেলো - সেখানেও নিশ্চয় একটা লেভেলে মাইগ্রেশন হয়েছিল  সবগুলোর মধ্যে ভাঙার পরে ? মানে এদের পপুলেশন তো ইন্ডিয়ার ভগ্নাংশ মাত্তর- সংখ্যাটা কোনো তুলনাতেই আনছিনা। কিন্তু সেটা এডজাস্ট করলেও ইন্ডিয়া পাকিস্তান ৪৭ বা বাংলাদেশ ৭১ এর সময়কার মতো কোনো ম্যাস রায়ট বা মাস্যাকের হয়েছিল কি ? 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:১৭524625
  • অমিত

    অসাধারণ । অশেষ ধন্যবাদ । আপনি এক খোঁচায় এক প্রচণ্ড বিবাদী বিষয়ের ব্যাখ্যা দিয়েছেন- অন্তর্মুখী সেন্ট্রিপিটাল ফোরস ধরে রাখে । উদাহরণ ফ্রান্স , ইউরোপের বৃহত্তম মুসলিম এবং  ইহুদি নাগরিক নিয়ে( যুবা নেপোলিয়ন করসিকার স্বাধীনতা চেয়েছিলেন)  -কেবলমাত্র ভাষা ও জাতীয়তাবাদের ধ্বজা তুলে।   উলটোদিকে সেন্ট্রিফিউগাল ফোরস বিচ্ছিন্ন করে যেমন বেলজিয়াম কেবলমাত্র ভাষার কারণে । আগামী দিনে লক্ষ্য রাখুন স্কটল্যান্ড,  কাতালুনিয়া বাস্ক দেশের ওপরে।  

    বলকান নিয়ে লিখতে গিয়ে বারবার মনে হয়েছে এ মিনি ভারতবর্ষের ইতিহাস -বিদেশি রাজা লাইন টেনে বলেছিল এটা একটা দেশ । সেই রাজারা বিদেয় হলে দেশটা এক হল কিন্তু জাতি ধর্ম মাথা তুলল । ভারত কোন নিশানায় যাবে ? টিটো বললেন আমার একটা দেশ দুটো হরফ তিনটে ধর্ম চারটে ভাষা পাঁচটা জাতি ছটা রিপাবলিক । ভারতের ক্ষেত্রে ওই হিসেবটাকে একশ দিয়ে গুণ করা যায় !  

    আরেকটা দারুণ কথা বললেন – ১৯৪৭ সালের ভারতের জনসংখ্যার সঙ্গে  অ্যাডজাস্ট করে ( by factor of 1:14) হিসেব দেখলে বলা যায় – গৃহহারা হয়েছেন  তিন কোটি মানুষ , প্রাণ হারিয়েছেন দেড় কোটি ( স্রেবেনিতসায় লাইন করে ৮০০০ মুসলিম পুরুষ যুবক শিশুকে হত্যা করা হয় দু দিনে ), ২১ লক্ষ হেকটার জমিতে ল্যান্ড মাইন পোঁতা হয়েছিল , ১৫ লক্ষ বাড়ি বাসের অযোগ্য,  দু হাজার শহর গ্রাম ধ্বংস হয়- জাতি ভাষা ধর্মের ভিত্তিতে।

    বই  হয়ে বেরুলে একটা দীর্ঘ পরিশিষ্ট লেখার বাসনা আছে -সেটা ডায়েরির অংশ হতে পারে না সে সমসাময়িক ইতিহাসের দলিল।  ডায়েরিতে লিখলে বোঝা বাড়ে!
     
  • | ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:২৭524661
  • হীরেনদা 
    আমি মোটামুটি আপনার প্রায় সব লেখাই পড়েছি পড়ছি। যেগুলো গুরুচন্ডা৯র বাইরে যেমন আমার জার্মানি বা আফ্রিকা ইত্যাদি, সেগুলোও মোটামুটি কিনে পড়ে ফেলেছি। তো আমার মনে হয় একজন কৌতুহলী, অনুসন্ধিৎসু মানুষ একটা প্রচন্ড বর্ণময় জীবন কাটাতে কাটাতে পেছন ফিরে দেখছেন। এক একটা বড় ছোট ঝলমলে টুকরো হতে উঠে আসছে আর একটা নরম কাপড়ে মুছে তাকে সামনের লোকের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন। আসলে একটাই লেখা লিখে চলেছেন, যেটা ঐ জীবনের ক্যারাভানে চড়ে পথ চলার গল্প। 
     
    (তবে আমার ১) HDFC merger এর ফলাফল বা ব্যখ্যার দাবী আর এই ২) পাহাড়ে প্রাকৃতিক কারণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ীঘরের লোন ইত্যাদির কী ইমপ্যাক্ট হয় সাধারণ মানুষের উপরে যে হয়ত একটা লোন নিয়ে দোতলা করেছিল বাড়িটাকে হোমস্টে করে একটু স্বচ্ছন্দে দিন কাটাবে বলে,  সেই লেখাগুলোর দাবী আপনার কাছে বহাল আছে। ) 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৭ অক্টোবর ২০২৩ ১৫:২৬524699


  • মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ । ব্যাংকিং ও অর্থসংক্রান্ত একটা কলাম লেখার প্রস্তুতি চলছে, পুজোর  পরে খুব সম্ভব । আপাতত ডায়েরি লিখে যাচ্ছি দুর্বার বেগে- স্মৃতি কতদিন সঙ্গ দেয় কে জানে । তাত্ত্বিক লেখার জন্য মেমারি ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হতে হবে না ! শিগগির !
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ০০:১৪524762
  • " আমাদের কিছু যায় আসে না—যে নামেই ডাকো—আমার এসেছি বাণিজ্যের সন্ধানে। " এই হচ্ছে আসল কথা, যুগে যুগে দেশে দেশে। 
    কামেন মস্ত গুঁড়িয়ে দিতে পারেনি কারণ আগ্রাসী দলেও হৃদয়বান ছিল। কিন্তু পাথরের সেতু থেকে গেলেও আফগানিস্তানের পাথরের মূর্তিকে রক্ষায় কেউ এগিয়ে আসেনি। এখানেই শিক্ষার কথাটা চলে আসে  সংস্কৃতির ভিন্নতা সইয়ে নেয় শ্রদ্ধা। 
    মাদার তেরেসাকে নিয়ে যে স্মৃতিসৌধ,তার ছবি নেই হীরেনদা? 
    লেখা ভাল লাগল খুব। 
  • হীরেন সিংহরায় | ১৯ অক্টোবর ২০২৩ ১৬:২৪524784
  • মামুন
     
    স্মারক মূর্তি স্থাপিত হয়েছে বছর দশেক আগে। আমার ভ্রমন তার আগেই শেষ হয়ে গেছে। একটি পাবলিক লাইব্রেরির ছবি পাঠালাম 
     
     
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : guruchandali@gmail.com ।


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক প্রতিক্রিয়া দিন