রাজনৈতিক দলদের পক্ষ থেকে প্রায়ই কোটি কোটি অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগ ওঠে। কিন্তু এ বিষয়ে সংসদে দুই কক্ষেই নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে , তার উত্তরে কেন্দ্রীয় সরকার যে তথ্য দিয়েছে , তার সংখ্যা এত বেশি নয়। শুধু বাংলাদেশ পাকিস্তানের মত প্রতিবেশী দেশ ছাড়াও অন্য বহু দেশের নাগরিক , যারা ভিসার সময়ের পরেও থেকে গেছেন ও ধরা পড়েছেন , তাদের তথ্যও সরকার এসব প্রশ্নোত্তরে নানাসময়ে দিয়েছে। সরকার এও জানিয়েছে ভিসা ছাড়া অবৈধ যাতায়াতের ক্ষেত্রে সরকারের কাছে স্পষ্ট তথ্য নেই।
আপাতদৃষ্টিতে এবিষয়ে প্রথমে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে রাজ্যসভায় প্রথম প্রশ্ন উঠেছিল
[১] প্রশ্ন করা হয়েছিল রাজাকার এবং আল বদররা ভারতে পালিয়ে এসেছে কিনা এবং কতজনকে ধরা হয়েছে।
এর উত্তরে সরকার নিচের সারণীটি দিয়েছিল যাদেরকে ধরা হয়েছিল , এদের কাউকে ফেরত পাঠানো হয়নি
[২] -
এর পরে ২০১০ সালে আসা যেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে রাজ্যওয়াড়ি অনুপ্রবেশের প্রশ্নে সরকার বলেছিল - "ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে উঁচুনিচু জমি , নদী , জঙ্গল এবং শূন্যরেখা পর্যন্ত ঘন জনবসতির সুবিধা নিয়ে গোপনে এবং লুকিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ হচ্ছে , কাজেই ভারতের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা সংখ্যা সঠিক সংখ্যা দেওয়া সম্ভব না।"
[৩] সরকার সীমান্তে আটক হওয়ার পরিসংখ্যান দিয়েছিল -
বছর | আটকের সংখ্যা
২০০৭ | ৪৫৫৩
২০০৮ | ৩১৭৫
২০০৯ | ২৪৬০
২০১০ | ১৩৮৬ [ অকটোবর পর্যন্ত]
২০১২ সালে একটি প্রশ্নের উত্তরে সরকার জানিয়েছিল গত ৩ বছরে ২৩৬৫৩ জন বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠানো হয়েছে
[৪] -
বছর | ফেরত পাঠানোর সংখ্যা
২০০৯ | ১০৬০২
২০১০ | ৬২৯০
২০১১ | ৬৭৬১
এছাড়াও , ৩১ ডিসেম্বর ২০১১ র হিসেবে কতজন বিদেশী নাগরিক ভিসা শেষের পরেও দেশে থাকছিলেন , সরকার তার দেশভিত্তিক তালিকা দিয়েছিল
[৫] - সেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ২১২৭৪ , আফগানিস্তান থেকে ১৩৭৪৪ , পাকিস্তান থেকে ৮০৩৭। ২০১৪ সালে আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে
[৬] সরকার জানায় , ৩১ ডিসেম্বর ২০১২র হিসেবে ১৬৫৩০ জন বাংলাদেশী নাগরিক যারা বৈধ ভিসায় ভারতে এসেছিলেন , ভিসা শেষ হয়ে যাবার পরেও ভারতে থেকেছিলেন।
এর পর ২০১৬ সালে সরকার একটি মারাত্ত্বক রাজ্যভিত্তিক পরিসংখ্যান দেয়
[7]। সেখানে দেখা যাবে প্রতিটি প্রতিবেশী সীমান্তে ২০১৩-২০১৬ সালে কতজনকে আটক করা হয়েছিল ও কতজন মারা গেছিলেন। দেখা যাচ্ছে সবথেকে বেশি মৃত্যু জম্মু কাশ্মীর সীমান্তে , তারপরেই পাঞ্জাব এবং পশ্চিমবঙ্গ। তারপর অরুণাচল প্রদেশ ও মণিপুর -
২০১৭ সালে সরকার আরেকটি একইরকম প্রশ্নের উত্তরে
[৮] সরকার জানায় গত চারবছরে ১৫০০০ জনকে ধরা হয়েছে , যার মধ্যে ১৭৫০ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে ১০০ জনকে ধরা হয়েছে এবং পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে ৫০ জনকে। রাজ্যওয়াড়ি পরিসংখ্যান রাখা হয়নি।
এর পর ২০২০ সালে সরকার
[৯] ২০১৫-২০১৯ ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের হাতে আটকদের সংখ্যা দেয় -
যার মধ্যে ফেরত পাঠানো হয়েছিল -
২০২০ সালেই আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে
[১০] সরকার বিদেশী নাগরিকদের নথিভুক্তকরণের অফিস কোন দেশের কতজনকে ফেরত পাঠিয়েছে [সম্ভবত যারা বৈধ ভিসায় ভারতে এসে মেয়াদের পরেও থাকছিলেন] তার সংখ্যা দেয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে সবথেকে বেশি ফেরত পাঠানো হয়েছে নাইজেরিয়ায়। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে এই ধারায় ফেরত পাঠানো হয়েছে ২৯৯ জনকে।
২০২৫ সালের একটি সরকারী সংবাদ
[১১] অনুযায়ী রেল পুলিশ ২০২১ সাল থেকে ৫৮৬ জন বাংলাদেশের নাগরিক ও ৩১৮ জন রোহিঙ্গাকে ট্রেন থেকে আটক করেছে। ২০২৪ সালের জুন ও জুলাই মাসে উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলে ৮৮ জনকে আটক করা হয়েছে। সংখ্যাগুলি যথারীতি হোয়া বিবির ধারেকাছেও না।
২০২৫ সালের জাতিসংঘের প্রতিবেদনের
[১২] তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ভারতের আন্তর্জাতিক পরিযায়ীর[সম্ভবত বৈধ] সংখ্যা ২৫ লক্ষ কমেছে , পাকিস্তান থেকে কমেছে ২১ লক্ষ , বাংলাদেশে থেকে অভিবাসন বেড়েছে ২১ লক্ষ -
পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।